মেরিল্যান্ডে ট্রেনের ব্রেক ফেল
![](https://hakkatha.com/wp-content/uploads/2024/05/hakkathafav.png)
- প্রকাশের সময় : ০১:৫২:৪৪ পূর্বাহ্ন, শুক্রবার, ১৬ জানুয়ারী ২০১৫
- / ৮৯৮ বার পঠিত
মেরীল্যান্ড: আশ্চর্য্য শোনালেও সত্য। আজ যে ট্রেনে চড়ে সকালে অফিসে আসছিলাম তার ব্রেক ফেল হয়েছিল। নতুন আশ্চর্য্য এক অভিজ্ঞতা অর্জন করেছি। সাবওয়ে ট্রেনের ব্রেক ফেল হওয়া প্রত্যক্ষ করলাম। সহস্রাধিক যাত্রীর মধ্যে আমিও ট্রেনটির একজন যাত্রী ছিলাম। ঘটনা ঘটে সকাল সোয়া আটটা নাগাদ। মেরীল্যান্ডের বেথেস্দাস্থ গ্রোভনার-ষ্ট্র্যাটমোর ষ্টেশন পার হওয়ার কয়েক মিনিটের মাথায় ‘রেড লাইন’ ট্রেনে।
ওই এলাকায় অর্থাৎ ডিসি মেরীল্যান্ড ভার্জিনিয়ায় যারা থাকেন তারা জানেন রেড লাইনের কথা। গ্রোভনার স্টেশন পার হওয়ার পরই বুঝতে পারছিলাম কিছু একটা ঝামেলা আছে। ট্রেনটি কয়েক সেকেন্ড পর পর থেমে যাচ্ছিল। সাত আটবার থেমে থেমে এক্কেবারেই থেমে গেল।
ট্রেনভর্তি গাদাগাদি করা মানুষ। বাইরে এ্যাতো ঠান্ডা, ৯ ডিগ্রি ফারেনহাইট, যা সেলসিয়াসের হিসাবে প্রায় মাইনাস তেরো ডিগ্রি। ট্রেনে চড়ার আগে ঠান্ডায় জ্বলে যাচ্ছিল মুখ। এখন মানুষের ভীড়ে গরম লাগছে। ট্রেনে এসি ছাড়া হয়েছে।
সকাল আটটা, বুঝতেই পারছেন সবাই অফিসের পথে। দাড়ানোর যায়গা নেই। কোন রকম দু’পায়ের পাতা ট্রেনের ফ্লোরে রেখে সোজা দাড়িয়ে ছিলাম। সবাই মুখ চাওয়া চাওয়ি করতে লাগলো। কেউ বুঝতে পারছে না ঘটনা কি? সাধারণত ট্রেন ট্রাফিক থাকলে বেক কষেই ড্রাইভার ঘোষণা করে যে ট্রেন মুভিং ইন ফিউ সেকেন্ড। মিনিট বিশেক হয়ে গেল কোনো সাড়া শব্দ নেই। রোকেয়া আপা ফোন করে বললেন কোথায়। বললাম গ্রোভনারে ট্রেনের মধ্যে। ওহ, ওখানে অনেকেই তাহলে আটকা পড়েছে। ফোন কেটে গেল।
হঠাৎ দুইটা শব্দ শোনা গেল। ‘ব্রেক প্রবলেম’। যাত্রীরা আবারো মুখ চাওয়া চাওয়ি করতে শুরু করল। এ্যাতো দ্রুত ঘোষণা করল যে বেশীভাগ যাত্রীই বুঝলো না কি বলেছে। কয়েকবার চিন্তা করলাম ড্রাইভার কি বললো। ‘গ্রেট প্রবলেন?’ নাহ ‘ব্রেক প্রবলেম’ বলেছে বোধহয়। পাশের জনকে জিজ্ঞেস করলাম। বলল কনফিউজড। আরেকজন বলল ব্রেক প্রবলেম। ভয়ে সবাই জড়োসড়ো।
আবারো নিশ্চুপ। যে যার ডিভাইস নিয়ে ব্যাস্ত। আমার পকেটে আমার ডিভাইস তা যে বের করবো সে সুযোগ ও নেই। এমন টাইট অবস্থায় দাড়িয়ে যে পকেটে হাত ঢুকাতেই পারছি না। আসহায় দাড়িয়ে থাকলাম আরো মিনিট বিশেক। একটা ছবিও তুলতে পারিনি। তাহেরা আপার তোলা একটা ছবি দিলাম এর সঙ্গে। আরেকটি ঘোষণা। উই আর বিং রেসকিউড। মিনিট দশেক পর বিপরীত দিক থেকে পাশে ট্র্যাকে একটা ট্রেন এসে থামলো। কয়েকজন কর্মী নেমে এসে বললো ডোন্ট ওয়ারি, দ্যা ট্রেন ইজ বিং পুশড টু ফ্রেন্ডশীপ হাইট স্টেশন।
আরো কয়েক মিনিট পর মনে হল ট্রেনটি পেছনের দিকে যাচ্ছে। হ্যা তাই। গ্রোভনার স্টেশনে গিয়ে দরজা খুললো। বের হয়ে প্ল্যাটফর্মের অপর পাশে ট্রেন ধরার জন্য দাড়ালাম। হাজার হাজার মানুষ। একটা ট্রেনে ওঠার চেষ্টা করে ব্যর্থ হলাম। ভাবলাম তাহেরা আপা হয়ত থাকতে পারে এই ট্রেনেই। কল করলাম। বলল ট্রেনের চিন্তা বাদ দাও। বাইরে চলে আসো জ্যোতি আমাদেরকে অফিসে পৌছেঁ দেবে। ঠিক তাই হল। বাইরে গিয়ে দেখি রকভিল পাইকে লেক্সাস নিয়ে অপেক্ষায় জ্যোতি আর তাহেরা আপা।
গাড়ীতে উঠলাম। তখন অলরেডী সাড়ে নয়টা বাজে। আটটায় সাধারণত অফিসে পৌছাই। পৌছালাম দশটায়। জীবনে প্রথম ট্রেনের ব্রেক ফেল প্রত্যক্ষ করলাম। সিস্টেম লসে পড়ে দুই ঘন্টা লস হল। ট্রেনের যাত্রীরা অনেকেই অতো সময় যাত্রীদেরকে ট্রেনে আটকে রাখা বেআইনী বলে ‘স্যু’ করার কথা আলোচনা করছিলো। কেউ করেছে হয়তো, জানি না। ১২ জানুয়ারী’২০১৫