নিউইয়র্ক ০৮:৫৪ অপরাহ্ন, শুক্রবার, ২৬ জুলাই ২০২৪, ১১ শ্রাবণ ১৪৩১ বঙ্গাব্দ
বিজ্ঞাপন :
মঙ্গলবারের পত্রিকা সাপ্তাহিক হককথা ও হককথা.কম এ আপনার প্রতিষ্ঠানের বিজ্ঞাপন দিতে যোগাযোগ করুন +1 (347) 848-3834

নির্বাহী এ্যামনেস্টি ঘোষণা করছেন ওবামা

রিপোর্ট:
  • প্রকাশের সময় : ০৯:২৪:০০ অপরাহ্ন, শুক্রবার, ১৪ নভেম্বর ২০১৪
  • / ১০৪০ বার পঠিত

প্রেসিডেন্ট বরাক ওবামা বলেছেন, যুক্তরাষ্ট্র ইমিগ্রেশন সমস্যা সমাধানে তিনি কংগ্রেসের উপর নির্ভরশীল হয়ে বসে থাকবেন না। প্রয়োজনে নির্বাহী অধ্যাদেশ বা ক্ষমতা প্রয়োগের মাধ্যমে কোটি কোটি অবৈধকে বৈধতা এবং যুক্তরাষ্ট্রের সীমান্ত সুরক্ষার বিষয়টি নিশ্চিত করাই হবে তার প্রধান কাজ।
প্রেসিডেন্ট বলেন, আমি চাই কংগ্রেসের মাধ্যমে বিষয়টির নিস্পত্তি হোক। কিন্তু দুই পক্ষের টানাটানিতে ইমিগ্রেশন সংস্কার আইনকে কোনভাবেই জিম্মি করতে দেয়া হবে না। গত রোববার সিবিএস টেলিভিশনের ফেইস দ্যা ন্যাশন অনুষ্ঠানে সাংবাদিক বব শিফারের সাথে এক একান্ত সাক্ষাতকারে প্রেসিডেন্ট তার এই মনোভাব প্রকাশ করেন।
প্রেসিডেন্ট ওবামা বলেন,এটা অত্যন্ত মর্মান্তিক যে, আমরা প্রতিদিন এমন লোকদের ডিপোর্ট করছি যাদের ডিপোর্ট করা উচিৎ নয়। অথচ আমরা এমন লোকদের ডিপোর্ট করছিনা যারা বিপজ্জনক এবং ডিপোর্ট হওয়ার যোগ্য।
প্রেসিডেন্ট বলেন, দুই পক্ষই ইমিগ্রেশন নিয়ে কিছু করতে চান। কিন্তু এটা বছরের পর বছর ধরে ঝুলে আছে। কোন অগ্রগ্রতি নেই। লক্ষ লক্ষ মানুষ যারা বছরের পর বছর এদেশে অবৈধভাবে বসবাস করছে, যাদের সন্তান সন্ততি এই জনপদে বড় হচ্ছে, তাদের জন্য আমাদের কিছু করতে হবে। তারা এখন এই সমাজেরই অংশ। নির্দিষ্ট জরিমানা,ফী এবং ইংরেজী জানার মাধ্যমে তারা বৈধতা পেতে পারে।
সাক্ষাতকারে ওবামা বলেন,দলমত নির্বিশেষে এবিষয়ে সবাই একমত যে, ১১ মিলিয়ন অবৈধকে ডিপোর্ট করা সম্ভব নয়।
প্রেসিডেন্ট বলেন, এবছরের গ্রীষ্মেই আমি নির্বাহী অধ্যাদেশের মাধ্যমে অবৈধদের বৈধতা দিতে চেয়েছিলাম। কিন্তু রিপাবলিকান অধ্যুষিত এলাকার ডেমোক্রেটরা এতে আপত্তি করলেন। তাদের যুক্তি ছিল এটা করা হলে মধ্যবর্তি নির্বাচনে এর নেতিবাচক প্রতিক্রিয়া হবে। যার ফলে আমি নিজেই সদ্য সমাপ্ত নির্বাচন পর্যন্ত তা পিছিয়ে দেই।
কিন্তু নির্বাচনের ফলাফলে দেখা গেছে এই কৌশল ডেমোক্রেটদের তেমন সাহায্য করে নাই।
পর্যবেক্ষকরা মনে করছেন, এর ফলে ওবামা এখন আর অপেক্ষা না করে নিজেই নিজের সিদ্ধান্ত তথা নির্বাহী ক্ষমতা প্রয়োগ করতে যাচ্ছেন।
অবশ্য রিপাবলিকান নিয়ন্ত্রিত হাউসের স্পীকার জন বহেনার এর স্টাফ মেম্বাররা ওবামার এই সিদ্ধান্তের বিরুদ্ধে হুঁশিয়ারী উচ্চারণ করে এটাকে প্রেসিডেন্টের নির্বাহী এ্যামনেষ্টি বলে অভিহিত করেছেন।
জানা গেছে, আগামী মাসের মধ্যেই অবৈধদের বৈধতা প্রদানের ঘোষণার প্রস্তুতি চলছে। প্রেসিডেন্ট ওবামা এই ঘোষণা দেবেন। যুক্তরাষ্ট্র কংগ্রেসের নতুন অধিবেশন শুরু হওয়ার আগেই প্রেসিডেন্ট এই ঘোষণা দিতে পারেন। এর আগে রিপাবলিকান ও ডেমোক্রেটদের সাথে নিয়ে সমঝোতার মাধ্যমে বৈধতা বিলটি চুড়ান্ত করতে প্রেসিডেন্ট ওবামা উদ্যোগ নেবেন। এর অংশ হিসেবে ইতোমধ্যেই হোয়াইট হাউসে সর্বদলীয় একটি বৈঠক করেছেন প্রেসিডেন্ট ওবামা।
হোয়াইট হাউস সূত্রের বরাত দিয়ে বিভিন্ন সংবাদ মাধ্যম বলেছে প্রেসিডেন্ট ওবামা এখন চুড়ান্ত সিদ্ধান্ত নিতে যাচ্ছেন। এক্ষেত্রে দুই দলের মধ্যে রশি টানাটানি হলে নির্বাহী অধ্যাদেশের মাধ্যমে ইমিগ্র্যাশন সমস্যার সমাধানে কঠোর হবেন ওবামা।
সুত্রমতে, জানুয়ারীর আগেই প্রেসিডেন্ট বরাক ওবামা তার বিশেষ ক্ষমতার প্রয়োগ করে বেশ কিছু সিদ্ধান্ত নিতে যাচ্ছেন। এর মধ্যে অভিবাসন সংক্রান্ত বিলটি প্রাধান্য পাবে। রাজনৈতিক বিশ্লেষকরা ধারনা করছেন আগামী প্রেসিডেন্ট নির্বাচনের প্রধান ট্রাম কার্ড হবে ইমিগ্রেশন। এক্ষেত্রে ডেমোক্রেট ও রিপাবলিকানদের মধ্যে এক ধরনের প্রতিযোগীতা চলছে। হিস্পানিক সহ ইমিগ্র্যান্ট ভোটারদের হাতে থাকবে ২০১৬ সালের নির্বাচনের চাবিকাঠি। এক্ষেত্রে নির্বাচনী বৈতরণী পারের কৌশল হিসেবে দুই পক্ষই সাধারণ ক্ষমা বা এ্যামনেস্টি ঘোষণায় একমত হতে পারে বলে ধারনা করছেন পর্যবেক্ষক মহল।
ইমিগ্রেশন রির্ফম বিলটি ছিল অভিবাসীদের বহুবছরের প্রত্যাশার বিষয়, কিন্তু ওবামা বিলটি দ্বিপাক্ষিক সম্মতিতে পাশ করার ইচ্ছায় বার বারই সময় নিচ্ছিলেন। কিন্তু রিপাবলিকানদের অনড় অবস্থান এবং ক্রমাগত বাধার মুখে বারবর সে উদ্যোগ পিছিয়ে পড়ে। রিপাবলিকানদের সমর্থন পেতে শেষ পর্যন্ত বিশেষ ক্ষমতা প্রয়োগের হুশিয়ারি দিয়ে কালক্ষেপনের কৌশল নিয়েছেন। মধ্যবর্তী নির্বাচন এর আগেও ওবামা চাচ্ছিলেন বিষয়টি নিয়ে একতরফা কোন রকম সিদ্ধান্ত নিতে। তবে মধ্যবর্তী এই নির্বাচনের ফলাফল ডেমোক্রেদের বেকায়দায় ফেলেছে। কারণ নির্বাচনে ওবামার দল ডেমক্রেটরা কংগ্রেসের উভয় কক্ষে তাদের  সংখ্যা গরিষ্ঠতা হারিয়েছে। এ অবস্থায় তার পরিকল্পিত কর্মসূচী বাস্তবায়ন অনেক কঠিন হয়ে পড়বে। নির্বাচনে এই বিষয়টি প্রেসিডেন্ট ও তার দলের জন্য একটি বিপত্তির কারণ হয়ে দাঁড়ায়। এ অবস্থায় প্রেসিডেন্ট ওবামা জানুয়ারীর আগেই প্রেসিডেন্ট এর বিশেষ ক্ষমতার মাধ্যমে বেশ কিছু সিদ্ধান্ত নিতে যাচ্ছেন বলে আভাস দিয়েছেন।
হোয়াইট হাউসে গত  বুধবার সাংবাদিকদের সাথে আলাপ কালে প্রেসিডেন্ট তার বিশেষ ক্ষমতা প্রয়োগের এই আভাস দিয়েছেন। এবং শুক্রবার সিবিএস নিউজ এর ‘ফেইস দ্যা ন্যাশন’  অনুষ্ঠানে দেয়া সাক্ষাৎকারে এ বিষয়টি আরো পরিস্কার হয়ে যায়।  ইমিগ্রেশন রির্ফম নিয়ে তাঁর পরিকল্পনা পুর্নব্যক্ত করে ওবামা বলেছেন ‘আমার যা করা দরকার আমি তাই করতে যাচ্ছি’।
এর তাৎক্ষনিক প্রতিক্রিয়ায় গত রোবার রিপাবলিকান নেতারা জানিয়েছে যদি অবৈধ অভিবাসীদের ওবামা এমেনেস্টি বা সাধারণ ক্ষমার আদেশ দেন তবে আগামী দু’ বছর তাদের  সাথে প্রেসিডেন্ট নিজেই  দ্বিপাক্ষিক সম্পর্ক বিষাক্ত করে তুলবেন। হাউস স্পিকার জন বেহনার, হাউস মাইনোরিটি লিডার  ম্যাককনেল (যিনি জানুয়ারীতে সিনেটে মেজরিটি লিডার হচ্ছেন) প্রেসিডেন্ট এর সাথে আলোচনায় ইমিগ্রেশন নিয়ে  নির্বাহী আদেশ না দেবার অনুরোধ জানিয়েছেন। মজার ব্যাপার হচ্ছে এই রিপাবলিকানরাই ওবামার প্রস্তাবিত বিলগুলো বার বার আটকে দিয়ে চরম অসহোযোগিতা করেছে। এমনকি ২৪ জুন জন বেহনার প্রথম প্রেসিডেন্ট এর বিরুদ্ধে মামলা করার ঘোষণা দেন। কারণ তার মতে প্রেসিডেন্ট তার বিশেষ ক্ষমতার অপব্যবহার করছেন। এরপর ২ জুলাই ওবামা জনসম্মুখে রিপাবলিকানদেরকে তার বিরুদ্ধে মামলা করার চ্যালেঞ্জ দিয়ে বলেন, জনগণের জন্য কাজ করতে গিয়ে তিনি যে কোন ধরনের মামলার সম্মুখীন হতে রাজী। এমনকি জুলাই এর ৮ তারিখে আলাসকার গভর্ণর আরো এক কাঠি এগিয়ে প্রেসিডেন্টকে ইমপিচমেন্ট করার কথা পর্যন্ত বলে ফেলেন।
প্রেসিডেন্ট ওবামা যতবারই কোন গুরুতপূর্ন বিষয়ে আইনে পরিণত করবার উদ্যোগ নিয়েছেন প্রায় ততবারই হাউস তার বিরোধীতা করেছে, এমনকি কোন কোন প্রস্তাব হাউসের আলোচ্য সূচিতেই আনা হয়নি। এ রকম পরিস্থিতিতে প্রেসিডেন্ট এর বিশেষ ক্ষমতা প্রয়োগ ছাড়া তার কাছে আর কোন পথ খোলা নেই বলেই মনে করা হচ্ছে।
এদিকে নির্বাচন পরবর্তী দিনগুলোতে যুুক্তরাষ্ট্রের দুই রাজনৈতিক দলের মধ্যে একমত হয়ে কাজ করার সম্ভাবনা খুব ক্ষীণ বলেনই ধারনা করছেন রাজনৈতি বিশ্লেষকরা। টাইম টেলিভিশনে ‘ডেমক্রেসি এন্ড পিপল’ অনুষ্ঠানে সাবেক ডেমোক্রেটিক পার্টি ক্যান্ডিডেট মোর্শেদ আলম ও এটর্নী এট ল’ পেরি ডি সিলভারও এমনটাই মত দিয়েছেন। মোর্শেদ আলম বলেন, এই মর্ধ্যবর্তী নির্বাচন এ ডেমোক্রেটদের পরাজয়  এবং অভিবাসন আইন নিয়ে প্রেসিডেন্ট এর নির্বাহী আদেশ প্রকারান্তরে দু’ বছর পর প্রেসিডেন্ট নির্বাচনে ডেমোক্রেটদের সহায়তাই করবে। কারণ জানুয়ারী থেকে কংগ্রেসের উভয় কক্ষে সংখ্যাগরিষ্ঠ রিপাবলিকানরা প্রেসিডেন্ট এর পরিকল্পিত বিভিন্ন জনকল্যাণমূলক কাজে আনা  বিলগুলোতে সহযোগিতা করবেনা যেমনটি গত কয়েক বছর হয়েছ। এটা  মধ্যবিত্ব ও সাধারণ মানুষের মধ্যে আরো অসন্তোষ তৈরি করবে। ফলে বিরোধী দলের অসহযোগিতার আচরণ আরো একবার ডেমক্রেট প্রেসিডেন্ট নির্বাচিত হবার পথকে সহজ করে তুলতে পারে।
বৃহৎ গণতান্ত্রিক দেশ যুক্তরাষ্ট্রের রাজনীতিতে অভিবাসন, স্বাস্থ্যনীতির মত বিষয় নিয়ে দুই দল ভিন্ন মেরুতে অবস্থান করলেও এটাই গণতন্ত্রের সৌন্দর্য। তবে সাধারণ মানুষের প্রত্যাশা, ভিন্নমত যেন শেষ পর্যন্ত জনমানুষের কল্যাণের বিপরীতে অবস্থান না নেয়। (সাপ্তাহিক বাংলা পত্রিকা)

সোশ্যাল মিডিয়ায় খবরটি শেয়ার করুন

আপনার মন্তব্য লিখুন

About Author Information

নির্বাহী এ্যামনেস্টি ঘোষণা করছেন ওবামা

প্রকাশের সময় : ০৯:২৪:০০ অপরাহ্ন, শুক্রবার, ১৪ নভেম্বর ২০১৪

প্রেসিডেন্ট বরাক ওবামা বলেছেন, যুক্তরাষ্ট্র ইমিগ্রেশন সমস্যা সমাধানে তিনি কংগ্রেসের উপর নির্ভরশীল হয়ে বসে থাকবেন না। প্রয়োজনে নির্বাহী অধ্যাদেশ বা ক্ষমতা প্রয়োগের মাধ্যমে কোটি কোটি অবৈধকে বৈধতা এবং যুক্তরাষ্ট্রের সীমান্ত সুরক্ষার বিষয়টি নিশ্চিত করাই হবে তার প্রধান কাজ।
প্রেসিডেন্ট বলেন, আমি চাই কংগ্রেসের মাধ্যমে বিষয়টির নিস্পত্তি হোক। কিন্তু দুই পক্ষের টানাটানিতে ইমিগ্রেশন সংস্কার আইনকে কোনভাবেই জিম্মি করতে দেয়া হবে না। গত রোববার সিবিএস টেলিভিশনের ফেইস দ্যা ন্যাশন অনুষ্ঠানে সাংবাদিক বব শিফারের সাথে এক একান্ত সাক্ষাতকারে প্রেসিডেন্ট তার এই মনোভাব প্রকাশ করেন।
প্রেসিডেন্ট ওবামা বলেন,এটা অত্যন্ত মর্মান্তিক যে, আমরা প্রতিদিন এমন লোকদের ডিপোর্ট করছি যাদের ডিপোর্ট করা উচিৎ নয়। অথচ আমরা এমন লোকদের ডিপোর্ট করছিনা যারা বিপজ্জনক এবং ডিপোর্ট হওয়ার যোগ্য।
প্রেসিডেন্ট বলেন, দুই পক্ষই ইমিগ্রেশন নিয়ে কিছু করতে চান। কিন্তু এটা বছরের পর বছর ধরে ঝুলে আছে। কোন অগ্রগ্রতি নেই। লক্ষ লক্ষ মানুষ যারা বছরের পর বছর এদেশে অবৈধভাবে বসবাস করছে, যাদের সন্তান সন্ততি এই জনপদে বড় হচ্ছে, তাদের জন্য আমাদের কিছু করতে হবে। তারা এখন এই সমাজেরই অংশ। নির্দিষ্ট জরিমানা,ফী এবং ইংরেজী জানার মাধ্যমে তারা বৈধতা পেতে পারে।
সাক্ষাতকারে ওবামা বলেন,দলমত নির্বিশেষে এবিষয়ে সবাই একমত যে, ১১ মিলিয়ন অবৈধকে ডিপোর্ট করা সম্ভব নয়।
প্রেসিডেন্ট বলেন, এবছরের গ্রীষ্মেই আমি নির্বাহী অধ্যাদেশের মাধ্যমে অবৈধদের বৈধতা দিতে চেয়েছিলাম। কিন্তু রিপাবলিকান অধ্যুষিত এলাকার ডেমোক্রেটরা এতে আপত্তি করলেন। তাদের যুক্তি ছিল এটা করা হলে মধ্যবর্তি নির্বাচনে এর নেতিবাচক প্রতিক্রিয়া হবে। যার ফলে আমি নিজেই সদ্য সমাপ্ত নির্বাচন পর্যন্ত তা পিছিয়ে দেই।
কিন্তু নির্বাচনের ফলাফলে দেখা গেছে এই কৌশল ডেমোক্রেটদের তেমন সাহায্য করে নাই।
পর্যবেক্ষকরা মনে করছেন, এর ফলে ওবামা এখন আর অপেক্ষা না করে নিজেই নিজের সিদ্ধান্ত তথা নির্বাহী ক্ষমতা প্রয়োগ করতে যাচ্ছেন।
অবশ্য রিপাবলিকান নিয়ন্ত্রিত হাউসের স্পীকার জন বহেনার এর স্টাফ মেম্বাররা ওবামার এই সিদ্ধান্তের বিরুদ্ধে হুঁশিয়ারী উচ্চারণ করে এটাকে প্রেসিডেন্টের নির্বাহী এ্যামনেষ্টি বলে অভিহিত করেছেন।
জানা গেছে, আগামী মাসের মধ্যেই অবৈধদের বৈধতা প্রদানের ঘোষণার প্রস্তুতি চলছে। প্রেসিডেন্ট ওবামা এই ঘোষণা দেবেন। যুক্তরাষ্ট্র কংগ্রেসের নতুন অধিবেশন শুরু হওয়ার আগেই প্রেসিডেন্ট এই ঘোষণা দিতে পারেন। এর আগে রিপাবলিকান ও ডেমোক্রেটদের সাথে নিয়ে সমঝোতার মাধ্যমে বৈধতা বিলটি চুড়ান্ত করতে প্রেসিডেন্ট ওবামা উদ্যোগ নেবেন। এর অংশ হিসেবে ইতোমধ্যেই হোয়াইট হাউসে সর্বদলীয় একটি বৈঠক করেছেন প্রেসিডেন্ট ওবামা।
হোয়াইট হাউস সূত্রের বরাত দিয়ে বিভিন্ন সংবাদ মাধ্যম বলেছে প্রেসিডেন্ট ওবামা এখন চুড়ান্ত সিদ্ধান্ত নিতে যাচ্ছেন। এক্ষেত্রে দুই দলের মধ্যে রশি টানাটানি হলে নির্বাহী অধ্যাদেশের মাধ্যমে ইমিগ্র্যাশন সমস্যার সমাধানে কঠোর হবেন ওবামা।
সুত্রমতে, জানুয়ারীর আগেই প্রেসিডেন্ট বরাক ওবামা তার বিশেষ ক্ষমতার প্রয়োগ করে বেশ কিছু সিদ্ধান্ত নিতে যাচ্ছেন। এর মধ্যে অভিবাসন সংক্রান্ত বিলটি প্রাধান্য পাবে। রাজনৈতিক বিশ্লেষকরা ধারনা করছেন আগামী প্রেসিডেন্ট নির্বাচনের প্রধান ট্রাম কার্ড হবে ইমিগ্রেশন। এক্ষেত্রে ডেমোক্রেট ও রিপাবলিকানদের মধ্যে এক ধরনের প্রতিযোগীতা চলছে। হিস্পানিক সহ ইমিগ্র্যান্ট ভোটারদের হাতে থাকবে ২০১৬ সালের নির্বাচনের চাবিকাঠি। এক্ষেত্রে নির্বাচনী বৈতরণী পারের কৌশল হিসেবে দুই পক্ষই সাধারণ ক্ষমা বা এ্যামনেস্টি ঘোষণায় একমত হতে পারে বলে ধারনা করছেন পর্যবেক্ষক মহল।
ইমিগ্রেশন রির্ফম বিলটি ছিল অভিবাসীদের বহুবছরের প্রত্যাশার বিষয়, কিন্তু ওবামা বিলটি দ্বিপাক্ষিক সম্মতিতে পাশ করার ইচ্ছায় বার বারই সময় নিচ্ছিলেন। কিন্তু রিপাবলিকানদের অনড় অবস্থান এবং ক্রমাগত বাধার মুখে বারবর সে উদ্যোগ পিছিয়ে পড়ে। রিপাবলিকানদের সমর্থন পেতে শেষ পর্যন্ত বিশেষ ক্ষমতা প্রয়োগের হুশিয়ারি দিয়ে কালক্ষেপনের কৌশল নিয়েছেন। মধ্যবর্তী নির্বাচন এর আগেও ওবামা চাচ্ছিলেন বিষয়টি নিয়ে একতরফা কোন রকম সিদ্ধান্ত নিতে। তবে মধ্যবর্তী এই নির্বাচনের ফলাফল ডেমোক্রেদের বেকায়দায় ফেলেছে। কারণ নির্বাচনে ওবামার দল ডেমক্রেটরা কংগ্রেসের উভয় কক্ষে তাদের  সংখ্যা গরিষ্ঠতা হারিয়েছে। এ অবস্থায় তার পরিকল্পিত কর্মসূচী বাস্তবায়ন অনেক কঠিন হয়ে পড়বে। নির্বাচনে এই বিষয়টি প্রেসিডেন্ট ও তার দলের জন্য একটি বিপত্তির কারণ হয়ে দাঁড়ায়। এ অবস্থায় প্রেসিডেন্ট ওবামা জানুয়ারীর আগেই প্রেসিডেন্ট এর বিশেষ ক্ষমতার মাধ্যমে বেশ কিছু সিদ্ধান্ত নিতে যাচ্ছেন বলে আভাস দিয়েছেন।
হোয়াইট হাউসে গত  বুধবার সাংবাদিকদের সাথে আলাপ কালে প্রেসিডেন্ট তার বিশেষ ক্ষমতা প্রয়োগের এই আভাস দিয়েছেন। এবং শুক্রবার সিবিএস নিউজ এর ‘ফেইস দ্যা ন্যাশন’  অনুষ্ঠানে দেয়া সাক্ষাৎকারে এ বিষয়টি আরো পরিস্কার হয়ে যায়।  ইমিগ্রেশন রির্ফম নিয়ে তাঁর পরিকল্পনা পুর্নব্যক্ত করে ওবামা বলেছেন ‘আমার যা করা দরকার আমি তাই করতে যাচ্ছি’।
এর তাৎক্ষনিক প্রতিক্রিয়ায় গত রোবার রিপাবলিকান নেতারা জানিয়েছে যদি অবৈধ অভিবাসীদের ওবামা এমেনেস্টি বা সাধারণ ক্ষমার আদেশ দেন তবে আগামী দু’ বছর তাদের  সাথে প্রেসিডেন্ট নিজেই  দ্বিপাক্ষিক সম্পর্ক বিষাক্ত করে তুলবেন। হাউস স্পিকার জন বেহনার, হাউস মাইনোরিটি লিডার  ম্যাককনেল (যিনি জানুয়ারীতে সিনেটে মেজরিটি লিডার হচ্ছেন) প্রেসিডেন্ট এর সাথে আলোচনায় ইমিগ্রেশন নিয়ে  নির্বাহী আদেশ না দেবার অনুরোধ জানিয়েছেন। মজার ব্যাপার হচ্ছে এই রিপাবলিকানরাই ওবামার প্রস্তাবিত বিলগুলো বার বার আটকে দিয়ে চরম অসহোযোগিতা করেছে। এমনকি ২৪ জুন জন বেহনার প্রথম প্রেসিডেন্ট এর বিরুদ্ধে মামলা করার ঘোষণা দেন। কারণ তার মতে প্রেসিডেন্ট তার বিশেষ ক্ষমতার অপব্যবহার করছেন। এরপর ২ জুলাই ওবামা জনসম্মুখে রিপাবলিকানদেরকে তার বিরুদ্ধে মামলা করার চ্যালেঞ্জ দিয়ে বলেন, জনগণের জন্য কাজ করতে গিয়ে তিনি যে কোন ধরনের মামলার সম্মুখীন হতে রাজী। এমনকি জুলাই এর ৮ তারিখে আলাসকার গভর্ণর আরো এক কাঠি এগিয়ে প্রেসিডেন্টকে ইমপিচমেন্ট করার কথা পর্যন্ত বলে ফেলেন।
প্রেসিডেন্ট ওবামা যতবারই কোন গুরুতপূর্ন বিষয়ে আইনে পরিণত করবার উদ্যোগ নিয়েছেন প্রায় ততবারই হাউস তার বিরোধীতা করেছে, এমনকি কোন কোন প্রস্তাব হাউসের আলোচ্য সূচিতেই আনা হয়নি। এ রকম পরিস্থিতিতে প্রেসিডেন্ট এর বিশেষ ক্ষমতা প্রয়োগ ছাড়া তার কাছে আর কোন পথ খোলা নেই বলেই মনে করা হচ্ছে।
এদিকে নির্বাচন পরবর্তী দিনগুলোতে যুুক্তরাষ্ট্রের দুই রাজনৈতিক দলের মধ্যে একমত হয়ে কাজ করার সম্ভাবনা খুব ক্ষীণ বলেনই ধারনা করছেন রাজনৈতি বিশ্লেষকরা। টাইম টেলিভিশনে ‘ডেমক্রেসি এন্ড পিপল’ অনুষ্ঠানে সাবেক ডেমোক্রেটিক পার্টি ক্যান্ডিডেট মোর্শেদ আলম ও এটর্নী এট ল’ পেরি ডি সিলভারও এমনটাই মত দিয়েছেন। মোর্শেদ আলম বলেন, এই মর্ধ্যবর্তী নির্বাচন এ ডেমোক্রেটদের পরাজয়  এবং অভিবাসন আইন নিয়ে প্রেসিডেন্ট এর নির্বাহী আদেশ প্রকারান্তরে দু’ বছর পর প্রেসিডেন্ট নির্বাচনে ডেমোক্রেটদের সহায়তাই করবে। কারণ জানুয়ারী থেকে কংগ্রেসের উভয় কক্ষে সংখ্যাগরিষ্ঠ রিপাবলিকানরা প্রেসিডেন্ট এর পরিকল্পিত বিভিন্ন জনকল্যাণমূলক কাজে আনা  বিলগুলোতে সহযোগিতা করবেনা যেমনটি গত কয়েক বছর হয়েছ। এটা  মধ্যবিত্ব ও সাধারণ মানুষের মধ্যে আরো অসন্তোষ তৈরি করবে। ফলে বিরোধী দলের অসহযোগিতার আচরণ আরো একবার ডেমক্রেট প্রেসিডেন্ট নির্বাচিত হবার পথকে সহজ করে তুলতে পারে।
বৃহৎ গণতান্ত্রিক দেশ যুক্তরাষ্ট্রের রাজনীতিতে অভিবাসন, স্বাস্থ্যনীতির মত বিষয় নিয়ে দুই দল ভিন্ন মেরুতে অবস্থান করলেও এটাই গণতন্ত্রের সৌন্দর্য। তবে সাধারণ মানুষের প্রত্যাশা, ভিন্নমত যেন শেষ পর্যন্ত জনমানুষের কল্যাণের বিপরীতে অবস্থান না নেয়। (সাপ্তাহিক বাংলা পত্রিকা)