নিউইয়র্ক ১০:৫২ অপরাহ্ন, শুক্রবার, ২৬ জুলাই ২০২৪, ১১ শ্রাবণ ১৪৩১ বঙ্গাব্দ
বিজ্ঞাপন :
মঙ্গলবারের পত্রিকা সাপ্তাহিক হককথা ও হককথা.কম এ আপনার প্রতিষ্ঠানের বিজ্ঞাপন দিতে যোগাযোগ করুন +1 (347) 848-3834

কিম্বারলি’র ‘বিগ হোল’

রিপোর্ট:
  • প্রকাশের সময় : ০৩:৪৭:০৮ পূর্বাহ্ন, সোমবার, ১ ডিসেম্বর ২০১৪
  • / ১২৩৫ বার পঠিত

নিউইয়র্ক: আফ্রিকা! চারিদিকে ঘন জঙ্গলের আড়ালে লুকিয়ে আছে হয়তো কোনো ভয়ংকর প্রানী! সাবধান থাকতে হবে প্রতিটি পদক্ষেপে; নয়তো জীবন নাশের সম্ভাবনা। আফ্রিকা সম্পর্কে এমন ধারনা থাকাটাই স্বাভাবিক। হয়তো এমন অভিজ্ঞতার মুখোমুখিই হতাম যদিনা দক্ষিণ আফ্রিকায় না যাওয়া হতো। ২০০৮ এর অক্টোবরের কোনো এক মধ্যাহ্নে বিমান যখন আফ্রিকার গেটওয়ে বলে পরিচিত জোহানেসবার্গে নামার প্রস্তুতিতে ব্যস্ত, ঠিক তখনো মনে একরাশ বিষ্ময়! দেশটি কেমন হবে দেখতে? ওখানে তখন সবে গ্রীষ্মকাল শুরু হয়েছে। কিন্তু সেদিন পুরো আকাশ জুড়ে ছিলো মেঘের ঘনঘটা। জোহানেসবার্গের এয়ারপোর্টে নেমে প্রথমেই চমৎকৃত হলাম, এর সাজানো গোছানো পরিপাটি অবস্থা দেখে। আগেই জেনে গিয়েছিলাম আইন শৃঙ্খলার ব্যাপারটি মোটেও ভালো নয় সেখানে। তাই চারিদিকে সাবধানী দৃষ্টি ছিলো সবার। এয়ারপোর্টের পাট চুকিয়ে এবার আমাদের গন্তব্য হোটেল। প্রায় ৪০ কিলোমিটার পথে কোথাও চোখে পড়েনি এতটুকু মালিন্য। অসম্ভব ভালো এদের সড়ক অবকাঠামো। মাসখানেকের সফরের বিভিন্ন পর্যায়ে শত শত কিলোমিটার ভ্রমনেও ক্লান্তি আসেনি হয়তো এ কারনেই। আমাদের জোহানেসবার্গে আমাদের থাকতে হয়েছিলো প্রায় ১২দিন। সেখান থেকে ব্লুমফনটেইন হয়ে আসতে হলো কিম্বারলি। দক্ষিন আফ্রিকার অন্যতম প্রধান হীরার খনি এলাকা বলে প্রসিদ্ধি রয়েছে যার। মহাসড়কের ধারঘেঁষে আপনি যদি এগোতে থাকেন তাহলে একটু পরপরই চোখে পড়বে খনি এলাকা। পৃথিবীর সবচেয়ে মহামূল্যবান হীরা এখানে মাটির নিচে পাওয়া যায় হরহামেশাই! চোখেই পড়েছে কিন্তু কেনার সামর্থ্য আর হয়নি। কারন হীরার দেশ বলে পরিচিত হলেও, হীরা এখানেও বলতে গেলে দুর্মূল্য। ভ্রমন সঙ্গীদের অনেককে, যাবার সময় প্রিয়জনদের জন্য হীরার আংটি নিয়ে যেতে দেখেছি। কিন্তু সে হীরা চোখে দেখা অনেকটাই অসাধ্য। তারপরওতো হীরা বলে কথা!  দামও নেহাতই কম নয়। কয়েকশ ডলার গুনতে হয়েছে সবাইকেই। সে যাক, কিম্বারলির ‘বিগ হোলে’ যেতে হয়েছে একেবারে শেষ দিনে। এ শহরে এসে ‘বিগ হোলে’ না গেলে আফ্রিকা সফরটা অপূর্ণই থেকে যেতো। কিম্বারলির বিগ হোলকে এক সময় বলা হতো মনুষ্য সৃষ্ট সবচেয়ে গর্ত। একই সাথে পৃথিবীর সবচেয়ে বড় হীরার খনিও ছিলো এটি।

Image111১৮৭১ সালের জুলাইয়ে এটি প্রথম আবি®কৃত হয়। ঐ সময়ে এটি সহ আরো তিনটি খনি আবিষ্কৃত হয়। যাদের একসাথে বলা হতো কিম্বারলি মাইনস্। এদের ভেতর অন্যতম ছিলো এই বিগ হোল। বলা হয়ে থাকে মহাশূণ্য থেকেও এটি দৃশ্যমান। পৃথিবীখ্যাত অনেক বিখ্যাত ও বড় আকৃতির হীরা বিভিন্ন সময় উত্তোলিত হয়েছে এখান থেকে। ১৮৭১ এ আবিষ্কার হওয়ার পর থেকে এ পর্যন্ত প্রায় ২ হাজার ৭শ’ ২২ কেজি হীরা পাওয়া গেছে বিগ হোল থেকে। ২শ’ ১৫ মিটার গভীর এ খনিতে এখনো হীরা আছে বলে জানা যায়। তবে আনুষ্ঠানিকভাবে ১৯১৪ সালে খনিটি বন্ধ করে দেয়া হয়। এখন এটি পুরো দস্তুর একটি পর্যটন কেন্দ্র। প্রতিদিন স্থানীয় ছাড়াও বহু বিদেশী পর্যটক কিম্বারলি আসেন শুধু এর বিখ্যাত সব হীরার খনি দেখতে। তবে এদের ভেতর ‘বিগ হ্লো’ তার আপন বৈশিষ্টে সমুজ্জ্বল সব সময়। খনির মূল কুপের উপরিভাগে হালকা নিলাভ পানি পর্যটকদের দৃষ্টি কেড়ে নেয় সবার আগে। বিশাল একটি প্ল্যাটফর্ম থেকে পুরো খনি এলাকা দেখে নেয়া যায় এক নজরে। বিগ হোলে ঢোকার মুখে রয়েছে নিরাপত্তার নানা স্তর। কারন একটি মিউজিয়াম পেরিয়ে তবেই উঠতে হয় সেই প্ল্যাটাফর্মে। যেখানে রয়েছে বিভিন্ন সময়ে এখানে পাওয়া দুর্লভ সব হীরার প্রদর্শনী। হীরার আংটি না কেনা হলেও এসব হীরার প্রদর্শনী দেখে নিজেকে ভাগ্যবান মনে হয়েছে। হীরে লেগে আছে খনির পাথরের গায়ে। সবে পাওয়া গেছে এটি। এখন অনেকগুলো ধাপ পেরিয়ে তবেই তা বিক্রির উপযোগী হবে। পর্যায়ক্রমিকভাবে এ ধাপ গুলোও দেখানো হয়েছে সেখানে।  খনির মূল অংশে ঢোকার ব্যবস্থাও রয়েছে। মাটির উপরিভাগ থেকে দোতলা সমান নিচে আকা বাঁকা পথে এগিয়ে যেতে হয়। রয়েছে আধূনিক সব ব্যবস্থা। যাতে কোনো দূর্ঘটনা না ঘটে। ছোট্ট মিউজিয়ামটিতে রয়েছে ইউরোপীয়দের আফ্রিকায় হীরা পাওয়ার ইতিহাস। ইস! এগুলোর একটিও যদি পেতাম! দক্ষিণ আফ্রিকায় এখন কৃষ্ণাঙ্গ সরকার রয়েছে। দেশটির এক সময়কার আয়ের প্রধান উৎস এই হীরা এখনো অনেকাংশে রয়ে গেছে ইউরোপীয়দের তত্বাবধানে। তবে সরকার ধীরে ধীরে এগুলো নিজেদের আয়ত্বে নিয়ে নিচ্ছে। এতে ক্ষতিও হচ্ছে। ইউরোপীয়দের খনি ব্যবস্থাপনার সাথে পাল্লা দিয়ে পেরে উঠছেনা সরকারের প্রতিষ্ঠান গুলো। আর তাতেই ধীরে ধীরে রুগ্ন হয়ে পড়ছে তাদের হীরক শিল্প। তবে অর্থনীতির একটি উল্লেখযোগ্য অংশ জুড়ে আছে এটি এখনো। খনি এলাকা ঘুরে নিচে নেমে এলাম। এখানে ছোট ছোট গিফট শপ গুলোতে বিক্রি হয় বিভিন্ন সুভ্যেনির, খনির ভেতরকার পাথর সহ আরো অনেক কিছু। বিগ হোলের কিছু পাথর কিনলাম। দুধের স্বাদ ঘোলে মেটালাম আ কি! বেরিয়ে এলাম ঘন্টা খানেকের ভেতর। বাইরে তখন অপেক্ষায় আরো অনেকে।

 

Tag :

সোশ্যাল মিডিয়ায় খবরটি শেয়ার করুন

আপনার মন্তব্য লিখুন

About Author Information

কিম্বারলি’র ‘বিগ হোল’

প্রকাশের সময় : ০৩:৪৭:০৮ পূর্বাহ্ন, সোমবার, ১ ডিসেম্বর ২০১৪

নিউইয়র্ক: আফ্রিকা! চারিদিকে ঘন জঙ্গলের আড়ালে লুকিয়ে আছে হয়তো কোনো ভয়ংকর প্রানী! সাবধান থাকতে হবে প্রতিটি পদক্ষেপে; নয়তো জীবন নাশের সম্ভাবনা। আফ্রিকা সম্পর্কে এমন ধারনা থাকাটাই স্বাভাবিক। হয়তো এমন অভিজ্ঞতার মুখোমুখিই হতাম যদিনা দক্ষিণ আফ্রিকায় না যাওয়া হতো। ২০০৮ এর অক্টোবরের কোনো এক মধ্যাহ্নে বিমান যখন আফ্রিকার গেটওয়ে বলে পরিচিত জোহানেসবার্গে নামার প্রস্তুতিতে ব্যস্ত, ঠিক তখনো মনে একরাশ বিষ্ময়! দেশটি কেমন হবে দেখতে? ওখানে তখন সবে গ্রীষ্মকাল শুরু হয়েছে। কিন্তু সেদিন পুরো আকাশ জুড়ে ছিলো মেঘের ঘনঘটা। জোহানেসবার্গের এয়ারপোর্টে নেমে প্রথমেই চমৎকৃত হলাম, এর সাজানো গোছানো পরিপাটি অবস্থা দেখে। আগেই জেনে গিয়েছিলাম আইন শৃঙ্খলার ব্যাপারটি মোটেও ভালো নয় সেখানে। তাই চারিদিকে সাবধানী দৃষ্টি ছিলো সবার। এয়ারপোর্টের পাট চুকিয়ে এবার আমাদের গন্তব্য হোটেল। প্রায় ৪০ কিলোমিটার পথে কোথাও চোখে পড়েনি এতটুকু মালিন্য। অসম্ভব ভালো এদের সড়ক অবকাঠামো। মাসখানেকের সফরের বিভিন্ন পর্যায়ে শত শত কিলোমিটার ভ্রমনেও ক্লান্তি আসেনি হয়তো এ কারনেই। আমাদের জোহানেসবার্গে আমাদের থাকতে হয়েছিলো প্রায় ১২দিন। সেখান থেকে ব্লুমফনটেইন হয়ে আসতে হলো কিম্বারলি। দক্ষিন আফ্রিকার অন্যতম প্রধান হীরার খনি এলাকা বলে প্রসিদ্ধি রয়েছে যার। মহাসড়কের ধারঘেঁষে আপনি যদি এগোতে থাকেন তাহলে একটু পরপরই চোখে পড়বে খনি এলাকা। পৃথিবীর সবচেয়ে মহামূল্যবান হীরা এখানে মাটির নিচে পাওয়া যায় হরহামেশাই! চোখেই পড়েছে কিন্তু কেনার সামর্থ্য আর হয়নি। কারন হীরার দেশ বলে পরিচিত হলেও, হীরা এখানেও বলতে গেলে দুর্মূল্য। ভ্রমন সঙ্গীদের অনেককে, যাবার সময় প্রিয়জনদের জন্য হীরার আংটি নিয়ে যেতে দেখেছি। কিন্তু সে হীরা চোখে দেখা অনেকটাই অসাধ্য। তারপরওতো হীরা বলে কথা!  দামও নেহাতই কম নয়। কয়েকশ ডলার গুনতে হয়েছে সবাইকেই। সে যাক, কিম্বারলির ‘বিগ হোলে’ যেতে হয়েছে একেবারে শেষ দিনে। এ শহরে এসে ‘বিগ হোলে’ না গেলে আফ্রিকা সফরটা অপূর্ণই থেকে যেতো। কিম্বারলির বিগ হোলকে এক সময় বলা হতো মনুষ্য সৃষ্ট সবচেয়ে গর্ত। একই সাথে পৃথিবীর সবচেয়ে বড় হীরার খনিও ছিলো এটি।

Image111১৮৭১ সালের জুলাইয়ে এটি প্রথম আবি®কৃত হয়। ঐ সময়ে এটি সহ আরো তিনটি খনি আবিষ্কৃত হয়। যাদের একসাথে বলা হতো কিম্বারলি মাইনস্। এদের ভেতর অন্যতম ছিলো এই বিগ হোল। বলা হয়ে থাকে মহাশূণ্য থেকেও এটি দৃশ্যমান। পৃথিবীখ্যাত অনেক বিখ্যাত ও বড় আকৃতির হীরা বিভিন্ন সময় উত্তোলিত হয়েছে এখান থেকে। ১৮৭১ এ আবিষ্কার হওয়ার পর থেকে এ পর্যন্ত প্রায় ২ হাজার ৭শ’ ২২ কেজি হীরা পাওয়া গেছে বিগ হোল থেকে। ২শ’ ১৫ মিটার গভীর এ খনিতে এখনো হীরা আছে বলে জানা যায়। তবে আনুষ্ঠানিকভাবে ১৯১৪ সালে খনিটি বন্ধ করে দেয়া হয়। এখন এটি পুরো দস্তুর একটি পর্যটন কেন্দ্র। প্রতিদিন স্থানীয় ছাড়াও বহু বিদেশী পর্যটক কিম্বারলি আসেন শুধু এর বিখ্যাত সব হীরার খনি দেখতে। তবে এদের ভেতর ‘বিগ হ্লো’ তার আপন বৈশিষ্টে সমুজ্জ্বল সব সময়। খনির মূল কুপের উপরিভাগে হালকা নিলাভ পানি পর্যটকদের দৃষ্টি কেড়ে নেয় সবার আগে। বিশাল একটি প্ল্যাটফর্ম থেকে পুরো খনি এলাকা দেখে নেয়া যায় এক নজরে। বিগ হোলে ঢোকার মুখে রয়েছে নিরাপত্তার নানা স্তর। কারন একটি মিউজিয়াম পেরিয়ে তবেই উঠতে হয় সেই প্ল্যাটাফর্মে। যেখানে রয়েছে বিভিন্ন সময়ে এখানে পাওয়া দুর্লভ সব হীরার প্রদর্শনী। হীরার আংটি না কেনা হলেও এসব হীরার প্রদর্শনী দেখে নিজেকে ভাগ্যবান মনে হয়েছে। হীরে লেগে আছে খনির পাথরের গায়ে। সবে পাওয়া গেছে এটি। এখন অনেকগুলো ধাপ পেরিয়ে তবেই তা বিক্রির উপযোগী হবে। পর্যায়ক্রমিকভাবে এ ধাপ গুলোও দেখানো হয়েছে সেখানে।  খনির মূল অংশে ঢোকার ব্যবস্থাও রয়েছে। মাটির উপরিভাগ থেকে দোতলা সমান নিচে আকা বাঁকা পথে এগিয়ে যেতে হয়। রয়েছে আধূনিক সব ব্যবস্থা। যাতে কোনো দূর্ঘটনা না ঘটে। ছোট্ট মিউজিয়ামটিতে রয়েছে ইউরোপীয়দের আফ্রিকায় হীরা পাওয়ার ইতিহাস। ইস! এগুলোর একটিও যদি পেতাম! দক্ষিণ আফ্রিকায় এখন কৃষ্ণাঙ্গ সরকার রয়েছে। দেশটির এক সময়কার আয়ের প্রধান উৎস এই হীরা এখনো অনেকাংশে রয়ে গেছে ইউরোপীয়দের তত্বাবধানে। তবে সরকার ধীরে ধীরে এগুলো নিজেদের আয়ত্বে নিয়ে নিচ্ছে। এতে ক্ষতিও হচ্ছে। ইউরোপীয়দের খনি ব্যবস্থাপনার সাথে পাল্লা দিয়ে পেরে উঠছেনা সরকারের প্রতিষ্ঠান গুলো। আর তাতেই ধীরে ধীরে রুগ্ন হয়ে পড়ছে তাদের হীরক শিল্প। তবে অর্থনীতির একটি উল্লেখযোগ্য অংশ জুড়ে আছে এটি এখনো। খনি এলাকা ঘুরে নিচে নেমে এলাম। এখানে ছোট ছোট গিফট শপ গুলোতে বিক্রি হয় বিভিন্ন সুভ্যেনির, খনির ভেতরকার পাথর সহ আরো অনেক কিছু। বিগ হোলের কিছু পাথর কিনলাম। দুধের স্বাদ ঘোলে মেটালাম আ কি! বেরিয়ে এলাম ঘন্টা খানেকের ভেতর। বাইরে তখন অপেক্ষায় আরো অনেকে।