আধুনিক সিঙ্গাপুরের প্রতিষ্ঠাতা লি আর নেই
- প্রকাশের সময় : ১২:১২:৫৫ পূর্বাহ্ন, মঙ্গলবার, ২৪ মার্চ ২০১৫
- / ১১১২ বার পঠিত
ঢাকা: নিতান্তই এক গরিব পরিবারের সন্তান তিনি। দৃঢ় মনোবল আর চৌকস বুদ্ধিমত্তার সঙ্গে ছোট্ট একটি দ্বীপ রাষ্ট্রকে বিশ্ব সেরাদের আসনে প্রতিষ্ঠিত করেছেন। বলছি সিঙ্গাপুরের কথা। গত তিন দশকেরও বেশি সময় এই ছোট্ট দেশকে লি কুয়ান ইউ বিশ্বের সেরা দেশগুলোর একটিতে পরিণত করেছেন। ছাত্র হিসেবে তিনি তেমন তুখোড় ছিলেন না। তা সত্ত্বেও তিনি নিজেকে প্রতিষ্ঠিত করেছেন। নিজের দেশকে বিশ্বের সেরা হিসেবে প্রতিষ্ঠিত করেছেন। তাই তাকে বলা হয় সিঙ্গাপুরের ‘জাতির জনক’। তার পরামর্শ অনুসরণ করতেন বিশ্বের বাঘা বাঘা নেতারা। তিনি এক সাক্ষাৎকারে বলেছেন, আমি বলছি না যে, আমি যা করেছি তার সবই ঠিক। কিন্তু আমি সবকিছু করেছি একটি মহৎ উদ্দেশ্যে। ২০১০ সালের ১৩ সেপ্টেম্বর তিনি নিউইয়র্ক টাইমস পত্রিকাকে একটি সাক্ষাৎকার দেন। এতে তার উত্তরাধিকার সম্পর্কে বলেন, শোক গাঁথাতেই শেষ কথাটা লেখা থাকবে না। শেষ কথাটি লেখা হবে পিএইচডি গবেষকরা যখন মহাফেজখানা ঘাঁটাঘাঁটি করবেন, আমার পুরনো কাগজপত্র পড়বেন, আমার শত্রুরা কি বলেছিল সেসব মূল্যায়ন করবেন, তথ্য প্রমাণাদি ছেঁকে সত্যটা বের করে আনবেন তখন। এমন এক রাষ্ট্রনায়ক লি কুয়ান ইউ আর নেই। গত রোববার (২২ মার্চ) সিঙ্গাপুর জেনারেল হাসপাতালে শেষ নিঃশ্বাস ত্যাগ করেন তিনি। তার মৃত্যুতে কাঁদছে পুরো দেশ। বিশ্বে তার ভক্তের অভাব নেই। তাদের মধ্যে দেখা দিয়েছে বিষাদ। এক মাসেরও বেশি সময় তিনি নিউমোনিয়ায় ভুগছিলেন। তার মৃত্যুর খবর প্রচার হওয়ার সঙ্গে সঙ্গে রাষ্ট্রীয় টেলিভিশন তার নিয়মিত সম্প্রচার বন্ধ করে দেয়। তাদের মহান এ নেতার প্রতি শ্রদ্ধা নিবেদন করে অনুষ্ঠান প্রচার করা শুরু করে। তার মৃত্যুতে দেশব্যাপী সাত দিনের শোক ঘোষণা করা হয়েছে। সে শোকে কাঁদছে সিঙ্গাপুর।
লি’র মৃত্যুতে শোক প্রকাশ করেছেন রাষ্ট্রপতি আবদুল হামিদ ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।
‘বিশ্ব নেতারা তার পরামর্শ শুনতেন। তাই তাকে ‘জায়ান্ট অব হিস্টরি’ নামে আখ্যায়িত করেছেন যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট বারাক ওবামা। চীনের প্রেসিডেন্ট সি জিনপিং বলেছেন, লি কুয়ান ইউ ছিলেন বিশ্বব্যাপী একজন সম্মানীত ব্যক্তি ও রাষ্ট্রনায়ক। রাশিয়ার প্রেসিডেন্ট ভøাদিমির পুতিন তাকে বর্ণনা করেছেন বিশ্ব রাজনীতির ‘প্যাট্রিয়ার্ক’ হিসেবে। আগামী রোববার (২৯ মার্চ) মৃত লি কুয়ান ইউ’র অন্ত্যেষ্টিক্রিয়া সম্পন্ন হবে। তার মৃত্যুর খবর শুনে সিঙ্গাপুরবাসী ফুল দিয়ে সম্মান প্রদর্শন করছে। সোমবার থেকে শনিবার পর্যন্ত তার মৃতদেহ রাখা হবে পার্লামেন্টে। পরিবারের সদস্যরা সোমবার ও মঙ্গলবার তার প্রতি শ্রদ্ধা প্রদর্শন করবেন। প্রেসিডেন্টের সরকারি বাসভবন ও প্রধানমন্ত্রীর অফিসের সামনে অসংখ্য মানুষ ফুল দিয়ে তাদের এ নেতার প্রতি শ্রদ্ধা নিবেদন করছেন। ১৯৫৯ সালে তিনি প্রথমবার সিঙ্গাপুরের প্রধানমন্ত্রী হন। এরপর ১৯৯০ সালে তিনি পদত্যাগ করেন। এর মধ্যবর্তী সময়টাতে তিনি টানা প্রধানমন্ত্রী ছিলেন। এ সময়েই সমালোচকদের তীর্যক কথার বাণকে উপেক্ষা করে তিনি এগিয়ে নিয়েছেন সিঙ্গাপুরকে। তিনি নেতৃত্ব দিয়ে সিঙ্গাপুরকে ঈর্ষণীয় অবস্থানে নিয়ে গেছেন। তার বিরুদ্ধে মত প্রকাশের স্বাধীনতাকে দমন-পীড়নের অভিযোগ থাকলেও তিনি তার ফর্মুলা ধরে এগিয়েছেন। তাতে সফলতা পেয়েছেন। সিঙ্গাপুরকে বানিয়েছেন বিশ্ব বাণিজ্য ও অর্থনৈতিক কর্মকান্ডের প্রাণকেন্দ্র। এটা সম্ভব হয়েছে তার কঠোর প্রশাসনিক কাঠামো ও দুর্নীতি একেবারে কমে যাওয়ার কারণে। ২০১১ সালের নির্বাচনকে দেখা হয় লি কুয়ান ইউ-এর যুগের অবসান হিসেবে। কারণ, ওই বছর জনগণ ক্ষমতাসীন দল পিপলস অ্যাকশন পার্টির বিরুদ্ধে ভোট দেয়। ফলে লি কুয়ান ইউ তার পদ ত্যাগ করেন। তিনি ক্ষমতাকে কে›ন্দ্রীভূত করার কারণে, সরকার পরিচ্ছন্ন করার কারণে মতপ্রকাশের স্বাধীনতাকে সীমিত করেছিলেন, জনসমাবেশে কড়াকড়ি আরোপ করেছিলেন। এছাড়া তিনি সেলফ সেন্সরশিপ আরোপের একটি পরিবেশ তৈরি করেন। এমনকি অর্থনৈতিক অবস্থাকে উদারীকরণ করার জন্য তিনি কর্তৃত্ববাদী হয়ে উঠেছিলেন। তাই তার ‘সিঙ্গাপুর মডেল’ নিয়ে সমালোচনা হয়েছে বিস্তর। তার এই মডেলের প্রশংসা হয়েছে ও তা নিয়ে গবেষণা করেছেন চীন সহ এশিয়ার নেতারা। লি কুয়াং ইউ’র মতো নেতা বিশ্বে খুব কমই হয়। এক সময় এমন প্রভাবশালী নেতা সম্ভবত ছিলেন ফিদেল ক্যাস্ত্রো এবং কিম ইল সাং। সিঙ্গাপুরকে নেতৃত্ব দিয়ে লি যতদূর নিয়ে গিয়েছেন এ দু’জন নেতা তাতে ব্যর্থ হয়েছেন। লি সিঙ্গাপুরকে ‘তৃতীয় বিশ্বের দেশ থেকে প্রথম অবস্থানে নিয়ে এসেছেন। তিন দশক ধরে তিনি প্রধানমন্ত্রী হিসেবে সিঙ্গাপুর পরিচালনা করেছেন। তাই এখন যে সিঙ্গাপুর মাথা উঁচু করে দাঁড়িয়ে আছে লি কুয়ান ইউকে তার রূপকার বলা হয়। পিপলস অ্যাকশন পার্টির প্রতিষ্ঠাতা ও প্রথম মহাসচিব লি। ১৯৫৯ থেকে ১৯৯০ সালের মধ্যে তিনি দলকে আটবার নির্বাচনে বিজয় এনে দেন। ১৯৬৫ সালে মালয়েশিয়া থেকে সিঙ্গাপুর আলাদা হওয়া পর্যবেক্ষণ করেন তিনি। এশিয়ায় সবচেয়ে প্রভাবশালী রাজনীতিকদের মধ্যে তিনি অন্যতম। ১৯৯০ সালে সিঙ্গাপুরের দ্বিতীয় প্রধানমন্ত্রী গোহ চোক টোং তাকে নিয়োগ দেন একজন সিনিয়র মন্ত্রী হিসেবে।
লি কুয়ান ইউ’র জীবনী অনুসারে তিনি সিঙ্গাপুরে চতুর্থ প্রজন্মের মানুষ। তার পূর্বপুরুষ লি বক বুন ১৮৬৩ সালে চীনের গুয়াংডং প্রদেশের দাবু কাউন্টি থেকে পাড়ি জমায় সিঙ্গাপুরে। লি বক বুন এক দোকানির মেয়ে সিওউ হুনান নিওকে বিয়ে করেন। তবে ১৮৮২ সালে তিনি স্ত্রী ও তিন সন্তানকে ফেলে চলে যান চীনে। তিনি গ্রামের বাড়িতে নির্মাণ করেছিলেন একটি ছোট কাচারি ঘর এবং নিজেকে নিজে পদস্থ কর্মকর্তা হিসেবে প্রকাশ ঘটান। তিনি চীন থেকে ফিরে আসার দু’বছরের মাথায় মারা যান। লি কুয়ান ইউ’র দাদার নাম লি হুন লিয়ং। তার জন্ম ১৮৭১ সালে সিঙ্গাপুরে। তিনি ইংরেজি নিয়ে পড়াশোনা করেন। এক পর্যায়ে তিনি একটি ওষুধের দোকানে ডিসপেন্সার হিসেবে কাজ করেন। লি হুন লিয়ংয়ের বয়স যখন ২৬ বছর তখন কো লিয়েম নিও নামে ১৬ বছরের এক বালিকাকে বিয়ে করেন তিনি। এটা ছিল তখনকার প্রথা অনুযায়ী পারিবারিক বিয়ে। এক্ষেত্রে দুটি পরিবারই ছিল মধ্যবিত্ত। তার ছোট মামার ছিল কাটোং মার্কেট, কিছু রাবারের এস্টেট আর অরচার্ড রোডে ছিল বাড়ি। পরে হিপ ইঞ্জিনিয়ারিং মোহ স্টিমশিপ কোম্পানির ব্যবস্থাপনা পরিচালকের দায়িত্ব পান লি হুন লিয়ং। তার ছিল দু’জন স্ত্রী। ওই সময়ে একাধিক বিয়ে ছিল একটি সাধারণ ঘটনা। তো তার ছিল ৫ কন্যা ও তিনটি ছেলে। তার ছেলে লি চিন কুন বিয়ে করেন চুয়া হিম নিওকে। তার গর্ভ থেকে ১৯২৩ সালে ভূমিষ্ঠ হন লি কুয়ান ইউ। গ্রেট ডিপ্রেশন বা ভয়াবহ মন্দার সময়টাতে লি কুয়ান ইউ’র দাদার অর্থসম্পদ একেবারে কমে যায়। ফলে তার পিতা লি চিন কুন একজন দরিদ্র দোকানিতে পরিণত হন। লি কুয়ান ইউ বিয়ে করেন কাওয়া গিওক চু’কে। ২০১০ সালের ২ অক্টোবর ঘুমন্ত অবস্থায় মারা যান তিনি। তার রয়েছে দুটি ছেলে ও এক মেয়ে। বড় ছেলের নাম লি হাইয়েন লুং। তিনি অবসরপ্রাপ্ত ব্রিগেডিয়ার জেনারেল। ২০০৪ সালে তিনি সিঙ্গাপুরের প্রধানমন্ত্রী নির্বাচিত হন। লি পরিবারের অনেক সদস্য সিঙ্গাপুরের সুখ্যাত সব পদে আসীন। তার বোন লি ওয়েই লিং পরিচালনা করেন ন্যাশনাল নিউরোসায়েন্স ইনস্টিটিউট। লি কুয়ান ইউ তার আত্মজীবনীতে লিখেছেন, সিঙ্গাপুরে তার আইন নিয়ে কাজ করার বাসনা ছিল। বিদেশের পড়াশোনা শেষে তিনি যোগ দেন আইনি প্রতিষ্ঠান জন লেকক-এ। এখানে মাসে বেতন পেতেন ৫০০ ডলার।
পেছন ফিরে দেখা: লি কুয়ানের আত্মজীবনী অনুসারে তিনি শৈশবে পড়াশোনা শুরু করেন তেলোক কুরা প্রাইমারি স্কুলে। এ সময় তিনি ছিলেন অতি দরিদ্র এক ছাত্র। তার তেমন মেধা ছিল না। এরপর তিনি পড়াশোনা করতে যোগ দেন র্যাফলস ইনস্টিটিউটে। সেখানে তিনি মানিয়ে নিতে খুব সংকটে পড়ছিলেন। কারণ ওই প্রতিষ্ঠানে পড়াশোনা করতে গিয়েছিল সারা সিঙ্গাপুরের সবচেয়ে সেরা ১৫০ জন ছাত্র। এখানে তিনি শীর্ষ সফলতা অর্জনের চেষ্টা করেন। তিন বছরের জন্য যোগ দেন স্কাউটসে। খেলতেন ক্রিকেট, টেনিস, দাবা। করতেন বিতর্ক। কেমব্রিজে জুনিয়র হিসেবে পড়াকালে তিনি বেশকিছু বৃত্তি লাভ করেন। অর্জন করেন ব্যাপক সফলতা। এক পর্যায়ে সিঙ্গাপুর ও মালয়ে তিনি সেরা ছাত্র হয়ে ওঠেন। ১৯৪২ থেকে ১৯৪৫ সাল পর্যন্ত চলে দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধ। এতে লি কুয়ান ইউ’র বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষা কার্যক্রম বিলম্বিত হয়ে পড়ে। এ সময়ে তিনি জাপানি ভাষা শিখতে শুরু করেন। তার দাদার এক বন্ধুর কোম্পানি শিমোদা’তে ্রথমে কেরানি হিসেবে কাজ শুরু করেন। যুদ্ধের শেষদিকে তিনি একটি রেডিও শুনে বুঝতে পারেন জাপানিরা যুদ্ধে পরাজিত হতে যাচ্ছে। এতে তার মধ্যে আতঙ্ক দেখা দেয় যে, এর ফলে সিঙ্গাপুরে নৃশংস এক লড়াই শুরু হতে পারে। কারণ, সিঙ্গাপুরে অনেক জাপানি তখন বসবাস করেন। তিনি পরিবারের সঙ্গে ক্যামেরন হাইল্যান্ডে একটি ফার্ম শুরু করেন। এ সময় তার অফিসের এক লিফটবয় বলেন, তার ফাইলপত্র নিয়ে গেছে নিরাপত্তা রক্ষাকারী বাহিনীর লোকজন। লি বুঝতে পারলেন জাপানি নিরাপত্তা রক্ষাকারীরা তাকে অনুসরণ করছে। তাই তিনি পরিকল্পনা বাদ দিলেন।
রাজনৈতিক ক্যারিয়ার: ১৯৫৪ সালের ১২ই নভেম্বর ইংরেজি শিক্ষায় কিছু শিক্ষিত ব্যক্তিকে নিয়ে তিনি একটি দল গঠন করেন। এটি ছিল মধ্যবিত্তদের হাতে গড়া পিপলস অ্যাকশন পার্টি। ওই সময়ে সিঙ্গাপুরের শতকরা ৭০ ভাগ মানুষ কথা বলেন চীনা ভাষায়। সেই দলকে নিয়েই তিনি পাল্টে দিয়েছেন সিঙ্গাপুরকে। আগেই বলা হয়েছে, ১৯২৩ সালের ১৬ সেপ্টেম্বর তিনি বৃটিশশাসিত সিঙ্গাপুরে জন্মগ্রহণ করেন। ১৯৩৬-৪২ সাল পর্যন্ত পড়াশোনা করেন র্যাফল ইনস্টিটউট ও র্যাফল কলেজে। ১৯৪২ সালে দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের সময় জাপান দখল করে নেয় সিঙ্গাপুর। ১৪৫ সালে বৃটিশরা ফিরে যায় সিঙ্গাপুরে। ১৯৪৬-৫০ সাল পর্যন্ত তিনি লন্ডন স্কুল অব ইকোনমিস্ট ও পলিটিক্যাল সায়েন্সে পড়াশোনা করেন। শিক্ষা লাভ করেন ইউনিভার্সিটি অব কেমব্রিজে। ১৯৪৭ সালে গোপনে বিয়ে করেন কাওয়া গিওক চু’কে। এ ঘটনা ঘটে ইংল্যান্ডে। গিওক চু ছিলেন রানীর পক্ষ থেকে বৃত্তি পাওয়া ছাত্রী। তিনিও কেমব্রিজে পড়ছিলেন আইন নিয়ে। সিঙ্গাপুরে ফেরার পর আবার ১৯৫০ সালে কাওয়া গিওক চু’কে বিয়ে করেন তিনি। ১৯৫০ থেকে ’৫৯ সাল পর্যন্ত আইন চর্চা করেন। একটি ট্রেড ইউনিয়নের লিগ্যাল এডভাইজার হন। নীতিনির্ধারণী কাউন্সিল বা লেজিসলেটিভ কাউন্সিলে সিঙ্গাপুরের মানুষের কণ্ঠ সীমিত হওয়ায় তিনি হতাশা প্রকাশ করেন। তাই তিনি সক্রিয় রাজনৈতিক আন্দোলনের কথা ভাবতে থাকেন। ১৯৫৪ সালে প্রতিষ্ঠা করেন পিপলস অ্যাকশন পার্টি। ১৯৫৫ সালে পার্লামেন্ট নির্বাচনে বিজয়ী হন লি কুয়ান ইউ। ফলে তাকে বানানো হয় বিরোধীদলীয় নেতা। ১৯৫৯ সালের জাতীয় নির্বাচনে নেতৃত্ব দিয়ে পিপলস অ্যাকশন পার্টিকে বিজয়ী করেন। এর ফলে প্রথমবার তিনি প্রধানমন্ত্রী হন ৩৫ বছর বয়সে। ১৯৬৩ সালে সিঙ্গাপুর, মালয় ও সাবাহ মালয়েশিয়ার সঙ্গে যুক্ত হয়। এ সময়েই মালয়েশিয়াকে স্বাধীনতা দেয় বৃটেন। ১৯৬৫ সালে মালয়েশিয়ার কাছ থেকে সিঙ্গাপুর স্বাধীন হয়। সিঙ্গাপুর স্বাধীন হয়েছে এমন ঘোষণায় কেঁদে ফেলেন লি। তিনি প্রতিষ্ঠা করেন স্বরাষ্ট্র ও প্রতিরক্ষা মন্ত্রণালয়। মাত্র ৫০ কর্মকর্তা আছে এমন দুটি ব্যাটালিয়ন, ১০০০ সদস্য ও দুটি জাহাজ নিয়ে স্বাধীন হয় সিঙ্গাপুর। তখনও ছিল না বিমান বাহিনী। এখন চীন, জাপান ও যুক্তরাজ্যের চেয়েও বেশি সামরিক খাতে ব্যয় করে সিঙ্গাপুর। ১৯৬৭ সালে শুরু হয় ন্যাশনাল সার্ভিস। তখনকার প্রতিরক্ষা মন্ত্রী গোজ কেং সুই বলেন, সব পরিবারের যুবকদের অবশ্যই সামরিক প্রশিক্ষণ নিতে হবে। এটা করা হবে শক্তিশালী একটি প্রতিরক্ষা বাহিনী গঠনের জন্য। ১৯৬৮ সালে সিঙ্গাপুরে যাত্রা শুরু করে ডেভেলপমেন্ট ব্যাংক অব সিঙ্গাপুর। বর্তমানে ডেভেলপমেন্ট ব্যাংক অব সিঙ্গাপুর গ্রুপ হোল্ডিংস লিমিটেড হলো দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ার সবচেয়ে বড় ব্যাংক। ১৯৭২ সালে যাত্রা শুরু করে সিঙ্গাপুর এয়ারলাইন্স। ১৯৭৪ সালে একটি নিয়ম চালু হয়। তাতে বলা হয়, রাষ্ট্রীয় মালিকানাধীন কোম্পানি তেমাসেক হোল্ডিংসে সরকারি বিনিয়োগ করা যাবে বাণিজ্যিক ভিত্তিতে। ২০১৪ সালের ৩১ মার্চ পর্যন্ত ১২ মাসে তেমাসেকের সম্পদের পরিমাণ দাঁড়ায় ২২৩০০ কোটি ডলার। এ কোম্পানির প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা হলেন হো চিং। তিনি প্রধানমন্ত্রী লি হাইয়েন লুংয়ের স্ত্রী। ১৯৮১ সালে চাঙ্গি বিমানবন্দরের টার্মিনাল-১ উন্মুক্ত করে দেয়া হয়। বর্তমানে সেখানে রয়েছে তিনটি টার্মিনাল। বিশ্বের ব্যস্ততম আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরগুলোর মধ্যে এটি একটি। (দৈনিক মানবজমিন)