রিপাবলিকান হিলারি যেভাবে ডেমক্র্যাট
- প্রকাশের সময় : ১১:৪১:০৭ পূর্বাহ্ন, রবিবার, ১৬ অক্টোবর ২০১৬
- / ৮২৯ বার পঠিত
নিউইয়র্ক: সেদিনের রিপাবলিকান হিলারি ডায়েন রডহাম মুহূর্তেই হয়ে গেলেন ডেমক্র্যাট। রাজনৈতিক ক্যারিয়ার যার শুরু হয়েছিল রিপাবলিকানদের হাতেই। ছাত্রাবস্থাতেই হিলারি রিপাবলিকান দলের নেতাদের সংস্পর্শে আসেন। তার বেড়ে ওঠাও রিপাবলিকান কনজারভেটিভ পরিবারেই। ১৯৬০ সালে প্রেসিডেন্ট নির্বাচনে প্রচারণায় অংশ নেন। রিপাবলিকান প্রেসিডেন্ট পদপ্রার্থী ক্যারি গোল্ড ওয়াটারের পক্ষে শিকাগো শহর চষে বেড়ান। তখন তিনি হাইস্কুলের ছাত্রী। ১৯৬৫ সালে ম্যাসুসয়েটস’র ওয়েলেসলি কলেজে রাষ্ট্রবিজ্ঞান বিভাগে ভর্তি হন। রাজনীতি তাকে পিছু ছাড়েনি। কলেজের প্রথম বর্ষের ছাত্রী তখন। প্রেসিডেন্ট নির্বাচিত হন ‘ওয়েলেসলি ইয়ং রিপাবলিকান’ দলের। নিউইয়র্ক সিটির মেয়র পদপ্রার্থী জন লিন্ডাস ও সিনেট পদপ্রার্থী ম্যাসাচুসেটসের এডওয়ার্ড ব্রুফের পক্ষে তখন প্রচারণায় অংশ নেন। কলেজছাত্রী হিলারি প্রচারণা চালান বস্টন টু নিউইয়র্ক। ১৯৬৮ সালে ওয়েলেসলি কলেজ গর্ভনমেন্ট এসোসিয়েশনের প্রেসিডেন্ট নির্বাচিত হন। ড. মার্টিন লুথার বিং জুনিয়র হত্যাকান্ডের প্রতিবাদে দুই দিনব্যাপী ছাত্র ধর্মঘটের ডাক দেন। কলেজে অধিকসংখ্যক ‘ব্ল্যাক’ স্টুডেন্ট ভর্তির সুযোগ দেয়ার জন্য আন্দোলনের নেতৃত্ব দেন তিনি। তার নেতৃত্বের প্রতি আস্থাশীল তখন অনেকেই বলতেন, ‘হিলারি একদিন আমেরিকার প্রেসিডেন্ট হবে’। (উইকিপিডিয়া-অর্গ/উইকি/হিলারি)
হিলারি রডহ্যাম রিপাবলিকান কংগ্রেসম্যান চার্লস গুডেল’র আমন্ত্রণে নিউইয়র্কের গর্ভনর নেলসন রকফেলার-এর পক্ষে প্রচারণায় অংশ নেন। রকফেলার তখন রিপাবলিকান দলের প্রাইমারিতে প্রেসিডেন্ট পদপ্রার্থী। হিলারি ১৯৬৮ সালে ফ্লোরিডার মায়ামীতে অনুষ্ঠিত রিপাবলিকান ন্যাশনাল কনভেনশনে যোগ দেন। কনভেনশনে রিচার্ড নিক্সন রিপাবলিকান দলের প্রেসিডেন্ট প্রার্থী হিসেবে নির্বাচিত হন। হেরে যান নেলসন রকফেলার। হিলারি উদঘাটন করেন কিভাবে রিপাবলিকান পার্টি রেসিয়াল/বর্ণ বৈষম্য কার্ড ইস্যু ব্যবহার করে রকফেলারকে পরাজিত করে। মন তার বিষিয়ে ওঠে দলটির প্রতি। ধীরগতিতে তিনি নিজেকে গুটিয়ে নিতে থাকেন দলটির কর্মকান্ড থেকে। কার্যত রিপাবলিকান দল ত্যাগ করেন। ১৯৭০ সালে উচ্চতর ডিগ্রির জন্য কানেকটিকাটে ইয়েল ল’ স্কুলে ভর্তি হন। ১৯৭১ সালে ইয়েল ইউনিভার্সিটিরই আরেক ছাত্র বিল ক্লিন্টনের সাথে তার পরিচয় হয় এবং ডেটিং/প্রেম শুরু করেন। ইয়েলে পড়া অবস্থায় হিলারি চাইল্ড এবিউজ, শিশু অধিকার, মাইগ্রেন্ট ওয়ারকারস সিভিল রাইটস, বর্ণ বৈষম্য ইস্যু নিয়ে অধ্যায়ন ও কাজ করতেন। ১৯৭২ সালে হিলারি ডেমক্র্যাট দলের দরজায় পা রাখেন। এক্ষেত্রে প্রেমিক বিল ক্লিন্টন নিশ্চয়ই প্রভাবিত করে থাকবে। ক্লিন্টন আগ থেকেই ডেমক্র্যাট দলের সমর্থক ছিলেন। এ বছরই হিলারি ও ক্লিন্টন ডেমক্র্যাট দলের প্রেসিডেন্ট পদপ্রার্থী জর্জ ম্যাক গভার্ন এর পক্ষে টেক্সাসে নির্বাচনী প্রচারণায় অংশ নেন। ১৯৭৪ সালে প্রেসিডেন্ট নিক্সনের ওয়াটারগেট কেলেঙ্কারি ও অভিশংসন তদন্ত কমিটির সদস্যদের সহযোগী হিসেবে কাজ করেন। হিলারির শিক্ষা, মেধা ও রাজনৈতিক পলিটিক্যাল অরগানাইজার ও পরামর্শক বেটসি রাইট বলেছিলেন, হিলারি একদিন আমেরিকার সিনেটর কিংবা প্রেসিডেন্ট হবেন। সত্যটা হলো, হিলারি ২০০১ থেকে ২০০৯ পর্যন্ত সিনেটর হিসেবে দায়িত্ব পালন করেছেন। ২০১৬-তে তিনি আমেরিকার নির্বাচনে প্রেসিডেন্ট পদপ্রার্থী। এবং এদেশে সম্ভবত প্রথম মহিলা প্রেসিডেন্ট নির্বাচিত হতে যাচ্ছেন।
হিলারির সিদ্ধান্ত নেয়ার বছর ১৯৭৪। ওয়াশিংটনে সম্ভাব্য ক্যারিয়ারের লোভ ছেড়ে দিয়ে চলে যান বয়ফ্রেন্ড বিল ক্লিন্টনের কাছে আরাকানসাসে। তখনও ক্লিন্টনকে বিয়ে করার চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত নেননি। ১৯৭৫ সালের গ্রীষ্মে আরকানসাস রাজ্যের ফাটেভিল শহরে তারা দু’জন একটি বাড়ি কেনেন এবং বিবাহ বন্ধনে আবদ্ধ হওয়ার সিদ্ধান্ত নেন। ১৯৭৪ সালে ইউএস কংগ্রেস নির্বাচনে বিল ক্লিন্টন পরাজিত হন। কিন্তু দু’বছর পরই ১৯৭৬ সালে বিল আরকানসাস রাজ্যের অ্যাটর্নি জেনারেল পদে নির্বাচিত হন। হিলারি চিলড্রেনস ল’ এবং ফ্যামিলি পলিসি’র ওপর কাজ শুরু করেন। তারা ইতোমধ্যে মুভ করেন রাজ্যের রাজধানী লিটল রকে। ১৯৭৬ সাল থেকে প্রেসিডেন্ট জিমি কার্টারের সাথে কাজ শুরু করেন।
১৯৭৮ সাল। বিল ক্লিন্টন আরকানসান রাজ্যের গভর্নর নির্বাচিত হন। হিলারি হয়ে যান ফার্স্ট লেডি অব আরকানসাস। প্রতিষ্ঠা করেন ‘রোজ ল’ ফার্ম। ১৯৮৩ সালে ‘ওমেন অব আরকানসাস’ এবং ১৯৮৪ সালে ‘আরকানসাস মাদার অব দ্য ইয়ার’ পদকে ভূষিত হন। ১৯৯২ সালে বিল ক্লিন্টন প্রেসিডেন্ট নির্বাচিত হন। হিলারি বনে যান ফার্স্ট লেডি অব দ্য ইউনাইটেড স্টেটস। ২০০০ সাল পর্যন্ত ছিলেন ফার্স্ট লেডি। ২০০১ থেকে ২০০৯ পর্যন্ত ছিলেন নিউইয়র্ক থেকে নির্বাচিত সিনেটর। ওবামা’র প্রশাসনে ২০০৯ থেকে ২০১২ পর্যন্ত পররাষ্ট্র মন্ত্রীর দায়িত্ব পালন করেন। ফার্স্ট লেডি থাকাবস্থায় আমেরিকান নাগরিকদের জন্য ইউনিভারসাল হেলথ কেয়ার প্রবর্তনে অক্লান্ত পরিশ্রম করেছেন।
প্রেসিডেন্ট বারাক ওবামার ভাষ্যমতে, আমেরিকার ইতিহাসে এমন অভিজ্ঞতাসম্পন্ন প্রেসিডেন্ট পদপ্রার্থী খুব কমই দেখা গেছে। তার রাজনৈতিক প্রজ্ঞা ও অভিজ্ঞতার ধারে কাছে তিনিও কিছু নন। এমনই একজন প্রেসিডেন্ট পদপ্রার্থী হিলারি ক্লিন্টন।
৮ নভেম্বর ২০১৬ যুক্তরাষ্ট্রে প্রেসিডেন্ট নির্বাচন। জরিপ ও মতামত চলছে। কে জিতবেন? ডেমক্র্যাট দলের প্রার্থী হিলারি ক্লিন্টন না-কি রিপাবলিকান ডোনাল্ড ট্রাম্প। সর্বশেষ অধিকাংশ জরিপে হিলারি ৫ শতাংশ ভোটে এগিয়ে। হিলারি ৪৫ শতাংশ ও ট্রাম্প ৪০ শতাংশ। হিলারি ইতোমধ্যে সর্বজনীন প্রার্থী হিসেবে নিজেকে প্রতিষ্ঠিত করেছেন। অভিবাসীদের দেশ হিসেবে খ্যাত আমেরিকার অধিকাংশ মাইনরিটি সম্প্রদায়ের বেশির ভাগ ভোট পেতে যাচ্ছেন তিনি। হিসপানিক, ব্ল্যাক, এশিয়ান, মুসলিম, হিন্দু, জুইস- সবার মধ্যে তার জয় জয়কার। আমেরিকানরা হোয়াইট মহিলাদের মধ্যেও হিলারি ৬৫ শতাংশ ভোটে এগিয়ে। শুধু হোয়াইট পুরুষদের মধ্যে হিলারি ৩৩ শতাংশ এবং ট্রাম্প ৪৫ শতাংশ ভোট পাচ্ছেন (পিউ রিচার্স)।
জনমত জরিপে মাইনরিটি গ্রুপে হিলারি পক্ষে ভোটের হার এখানে তুলে ধরা হলো। ব্ল্যাক হিলারি ৮৫ শতাংশ, ট্রাম্প ২ শতাংশ, হিসপানিক হিলারি ৫৮ শতাংশ, ট্রাম্প ২০ শতাংশ, এশিয়ান হিলারি ৮০ শতাংশ, ট্রাম্প ১০ শতাংশ। যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট নির্বাচনে পপুলার ভোটের চেয়ে ইলেকটরাল ভোট প্রধান ইস্যু। প্রেসিডেন্ট নির্বাচিত হতে হলে প্রার্থীকে ন্যূনতম ২৭০ ইলেকটরাল ভোট পেতে হবে। প্রার্থী যে স্টেটে বিজয়ী হবেন, সেই স্টেটের সব ইলেকটরাল ভোট বিজয়ী প্রার্থীর দিকে যাবে। আর ইলেকটরাল ভোট নির্ধারিত হয় সংশ্লিষ্ট স্টেটের জনসংখ্যার অনুপাতে। সর্বশেষ সিএনএন জরিপে হিলারি ২৭২ ইলেকটরাল ভোট নিশ্চিত পাবার পথে। আর ডোনাল্ড ট্রাম্পের নিশ্চিত ভোট ১৯৬।
লেখক: মনোরুল ইসলাম। সাবেক সাধারণ সম্পাদক, ঢাকা রিপোর্টার্স ইউনিটি (ডিআরইউ)। নিউইয়র্ক প্রবাসী।