নিউইয়র্ক ১১:২৬ পূর্বাহ্ন, বৃহস্পতিবার, ২১ নভেম্বর ২০২৪, ৭ অগ্রহায়ণ ১৪৩১ বঙ্গাব্দ
বিজ্ঞাপন :
মঙ্গলবারের পত্রিকা সাপ্তাহিক হককথা ও হককথা.কম এ আপনার প্রতিষ্ঠানের বিজ্ঞাপন দিতে যোগাযোগ করুন +1 (347) 848-3834

যুক্তরাষ্ট্রের নির্বাচন : বিজয়ী হবেন যুদ্ধকালীন প্রেসিডেন্ট

রিপোর্ট:
  • প্রকাশের সময় : ০৩:০৬:১২ অপরাহ্ন, বুধবার, ৩০ অক্টোবর ২০২৪
  • / ১৫ বার পঠিত

ফ্রেডরিক কেম্পে: আগামী ৫ নভেম্বর আমেরিকান ভোটাররা ‘একটি যুদ্ধকালীন প্রেসিডেন্ট’ নির্বাচিত করতে চলেছেন। এটা নিছক ভবিষ্যদ্বাণী নয়, বরং অবস্থাদৃষ্টে বলতে হয়, এটাই বাস্তবতা। যদিও চীন, রাশিয়া, ইরান ও উত্তর কোরিয়ার মধ্যে ক্রমবর্ধমান ভূরাজনৈতিক এবং প্রতিরক্ষা শিল্প সহযোগিতার প্রেক্ষাপটে উদ্ধৃত বিপদ’ সম্পর্কে নির্বাচনে প্রতিদ্ব›িদ্বতাকারী দুই প্রার্থী কমলা হ্যারিস ও ডোনাল্ড ট্রাম্পের কেউই এখন পর্যন্ত স্পষ্ট করে কিছু বলেননি। তবে এ চারটি দেশের সম্মিলিত অক্ষশক্তির মাধ্যমে নজিরবিহীন বিপদ আসতে পারে বলে জোর আশঙ্কা রয়েছে।
সেই চ্যালেঞ্জ মোকাবিলার প্রশ্নে যুক্তরাষ্ট্র কী ধরনের কৌশলগত ব্যবস্থা গ্রহণ করবে, সে সম্পর্কে উল্লেখযোগ্য কোনো রূ পরেখা তুলে ধরেননি দুই প্রার্থীর কেউই। অথচ সাবেক প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প বা ভাইস প্রেসিডেন্ট কমলা হ্যারিসের মধ্য থেকে চূড়ান্ত ফলাফলে যিনিই নির্বাচিত হন না কেন, প্রেসিডেন্ট নির্বাচিত হওয়ার ক্ষেত্রে তার জন্য এটাই অনিবার্য প্রেক্ষাপট। উপরন্তু নির্বাচনে বিজয় লাভের পর স্নায়ুযুদ্ধ কিংবা দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের পর থেকে সবচেয়ে বিপজ্জনক ভূরাজনৈতিক মুহূর্তে কমান্ডার ইন চিফের ভূমিকায় অবতীর্ণ হবেন তিনি।
ঠিক এমন একটি পটভূমিতে ওয়াশিংটন পোস্টের নিয়মিত কলামিস্ট জর্জ এফ উইল এক লেখায় বলেছেন যে, ২০২৪ সালের যুক্তরাষ্ট্রের নির্বাচনকে ১৯৪০ সালের নির্বাচনের সঙ্গে তুলনা করা যায়। সে সময়েও ইম্পেরিয়াল জাপান, হিটলারের জার্মানি বা মুসোলিনির ইতালির বিরুদ্ধে আনুষ্ঠানিকভাবে যুদ্ধ ঘোষণা করেনি যুক্তরাষ্ট্র। ঠিক একইভাবে এখনো ওয়াশিংটন কোনো শক্তির বিরুদ্ধে ‘আনুষ্ঠানিক’ যুদ্ধে লিপ্ত নেই। যদিও তখন দৃশ্যপট কিছুটা ভিন্ন ছিল।
তখন নির্বাচনে অংশ নেওয়া দুই প্রার্থীর এক জন ছিলেন প্রেসিডেন্ট ফ্র্যাংকলিন ডেলানো রুজভেল্ট (এফডিআর), যিনি বেশ ভালোমতোই বুঝতে পেরেছিলেন যে, তিনিই যুদ্ধকালীন প্রেসিডেন্ট হতে চলেছেন। ফলে তার আচরণ ও কর্মপ্রণালিতে এটা স্পষ্টও হয়ে ওঠে। এফ উইলের ভাষায়, ‘এফডিআরের আচরণে একটি বিচ্ছিন্নতাবাদী জাতিকে বৈশ্বিক সংঘাতে টেনে নিয়ে যাওয়ার মতো পরিস্থিতি সৃষ্টি হয়।’ ১৯৩৭ সালে আগ্রাসী দেশগুলোর উদ্দেশে তার ‘কোয়ারান্টিন স্পিচ’ এবং সামরিক কর্মপরিকল্পনা ঘোষণার পর পরিস্থিতি উত্তপ্ত হয়ে উঠতে থাকে।
এফডিআরের প্রতিদ্ব›দ্বী ছিলেন রিপাবলিকান ব্যবসায়ী ওয়েন্ডেল উইলকি। তিনি ছিলেন এফডিআরের চেয়ে অনেক বেশি আন্তর্জাতিকতাবাদী। তবে এফডিআরের দিকেই ভোটাররা আকৃষ্ট হন। এ বিষয়ের অবতারণা করে উইল লিখেছেন, ‘তৃতীয় বিশ্বযুদ্ধের আশঙ্কার প্রেক্ষাপটে দাঁড়িয়ে মাত্র সপ্তাহ তিনেক পর আমেরিকান ভোটাররা যখন নিজেদের প্রেসিডেন্ট নির্বাচন করতে চলেছেন, তখন প্রার্থীদের অবশ্যই উচিত, বৈশ্বিক সংঘাতের বিষয়ে নিজের চিন্তা তুলে ধরে দেশবাসীকে আশ্বস্ত করা।’
মোদ্দা কথা, দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধ যেভাবে জাপান, জার্মানি ও ইতালীর সমন্বিত অক্ষ দ্বারা সূচিত ‘সংকটের জ্বালামুখ’ দিয়ে শুরু হয়েছিল, তেমনিভাবে এখনো অনুরূপ অক্ষ রয়ে গেছে- চীন, রাশিয়া, ইরান এবং উত্তর কোরিয়া। ফলে এ নিয়ে প্রার্থীদের চিন্তাভাবনা কী, তা ভোটারদের কাছে স্পষ্ট হওয়া দরকার। এখানে আমি কূটনীতিক ও ইতিহাসবিদ ফিলিপ জেলিকোর উদ্ধৃতিও উল্লেখ করতে চাই। টেক্সাসের ন্যাশনাল সিকিউরিটি রিভিউয়ে এক লেখায় জেলিকো যুক্তি তুলে ধরে বলেছেন যে, পরবর্তী আমেরিকান প্রেসিডেন্টের বিশ্বব্যাপী যুদ্ধে জড়িত হওয়ার ২০-৩০ শতাংশ আশঙ্কা রয়েছে। ঐ সব সংঘাতকে জেলিকো ব্যাখ্যা করেছেন এভাবে যে, সব পক্ষ কেবল একটিমাত্র যুদ্ধে, তথা বিশ্বযুদ্ধে লিপ্ত থাকবে না, বরং তারা একেকটি ফ্রন্ট বা অঞ্চলে যুক্ত হয়ে সংঘর্ষ চালাবে।
সম্প্রতি আটলান্টিক কাউন্সিলের বিশেষজ্ঞদের নিয়ে নিজের ধারণা সম্প্রসারিত করেছেন জেলিকো। তার আশঙ্কা, নতন প্রেসিডেন্টের জন্য বিশেষত আগামী তিন বছর হবে এক কঠিন বিপদের মুহূর্ত! এই সময়কালকে সফলভাবে সামলে উঠতে হলে প্রেসিডেন্টকে বিশ্বব্যাপী মিত্র ও অংশীদারদের পাশাপাশি আমেরিকান অর্থনীতি, প্রতিরক্ষা শিল্প, প্রযুক্তি এবং সমাজের অন্তর্নিহিত শক্তিগুলোকে কাজে লাগিয়ে তবেই স্বৈরাচারীদের বিরুদ্ধে অগ্রসর হওয়া উচিত।
জেলিকোর মতে, প্রেসিডেন্টকে স্বল্প মেয়াদে যেসব সমস্যার মুখে পড়তে হতে পারে, তাহলো রুশ প্রেসিডেন্ট ভøাদিমির পুতিন এবং চীনা নেতা শি জিনপিংয়ের প্রতিদ্ব›িদ্বতার মুখোমুখি অবস্থানে রয়েছে যুক্তরাষ্ট্র। এ ধরনের পরিস্থিতিতে যুক্তরাষ্ট্রের অভ্যন্তরীণ বিভ্রান্তির সুযোগ নিতে পারে তারা। পাশাপাশি যুক্তরাষ্ট্রের প্রতিরক্ষা খাতও নানাবিধ উঠতি চ্যালেঞ্জে নিপতিত। এসব বিষয় মাথায় রেখেই উভয় প্রার্থীকে প্রস্তুতি নিতে হবে। উপরন্ত ইউক্রেন যুদ্ধ ও তাইওয়ান ইস্যু নিয়ে কার্যকর চিন্তাভাবনা করতে হবে।
জর্জ উইল লিখেছেন, রাশিয়ার পশ্চিম সীমান্ত থেকে জলসীমা পর্যন্ত জায়গা- যেখানে চীন আক্রমণাত্মকভাবে ফিলিপাইনের সার্বভৌমত্ব দখল করছে, আজকের যুদ্ধ ও যুদ্ধাবস্থার মূল মঞ্চ। পৃথিবীর অন্তত ২৪টি সংঘাতসংকুল অঞ্চলের ছয়টিই এ অঞ্চল জুড়ে রয়েছে। উইনস্টন চার্চিলের দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের স্মৃতিকথার (ওয়ার্ল্ড ওয়ার টু মেমোরিজ) প্রথম খন্ডের শিরোনাম উদ্ধৃতি করে তিনি বলেছেন যে, বিশ্বযুদ্ধের ‘সমাবেশের ঝড়’ দেখতে ঠিক কেমন, এ অঞ্চলের দিকে দৃষ্টি দিলে তা বোঝা যাবে।
মুশকিল হলো, যুক্তরাষ্ট্রের নির্বাচনে অবতীর্ণ দুই প্রেসিডেন্টের কেউই এসব নিয়ে ভোটারদের উদ্দেশে তেমন কিছু বলেননি। ফলে ক্রমবর্ধমান বৈশ্বিক সংকট সম্পর্কে সুস্পষ্ট রূপরেখা ভোটারদের সামনে হাজির করতে ব্যর্থ হওয়ার দায়ে ভবিষ্যতের কোনো এক সময়ে দুই প্রার্থীর বিরুদ্ধে অভিযোগ উঠলে অবাক হওয়ার কিছুই থাকবে না। এ ধরনের কথা অনেকের কাছে ‘আতিশয্যপূর্ণ’ বলে মনে হতে পারে।
তাদের উদ্দেশে বলতে হয়, পার্ল হারবারে জাপানী আক্রমণের বছরখানেক আগে ১৯৪১ সালের জানুয়ারীতে এফডিআরের (রুজভেল্ট) তৃতীয় উদ্বোধনী ভাষণটি পড়–ন, তাহলেই সব বুঝতে পারবেন। ঐ ভাষণের ঠিক পরের দিনই কংগ্রেস জাপানের বিরুদ্ধে যুদ্ধ ঘোষণা করে। ভাষণে রুজভেল্ট বলেন, ‘দ্রæত ঘটে যাওয়া নানা ঘটনার মধ্যে আমাদের সামনে এখন এমন এক সময় এসে গেছে, যখন কিছুক্ষণের জন্য থেমে গিয়ে ইতিহাসে আমাদের অবস্থান কী, সেদিকে তাকাতে হবে। আমরা আদতে কী এবং এমনকি আমরা কোন রাস্তায় হাঁটতে চাই, তা নতুন করে আবিষ্কার করা প্রয়োজন। আর আমরা যদি তা না করি, তাহলে বিচ্ছিন্নতা ও নিষ্ক্রিয়তার কঠিন বিপদের ঝুঁকি রয়েই যাবে। বস্তুত, একটি জাতির জীবন বছর গণনা দ্বারা নয়, বরং মানুষের আত্মার জীবনকাল দ্বারা নির্ধারিত হয়।’
যুদ্ধ তখনকার তুলনায় এখন ততটা অনিবার্য নয় বটে। তবে যুদ্ধের আশঙ্কাকে উপেক্ষা করার ফলাফল সবর্দাই মারাত্মক হতে পারে। ওয়ার্ল্ড ওয়ার টু মেমোরিজের উপসংহারে রুজভেল্ট লিখেছেন, ‘মহাবিপদের মুখে আমাদের দৃঢ় লক্ষ্য হবে গণতন্ত্রের অখন্ডতা রক্ষা করা এবং তা স্থায়ী করা। আর এজন্য আমেরিকান চেতনা ও বিশ্বাসকে একত্রিত করা অনেক বেশি জরুরি।’
অনুষ্ঠিতব্য আমেরিকান প্রেসিডেন্ট নির্বাচনে অবতীর্ণ দুই প্রার্থী ভোটারদের উদ্দেশে কী বলেছেন বা বলতে ভুলে গেছেন তার চেয়ে বড় কথা হলো, ক্ষমতায় গিয়ে বিজয়ী প্রার্থী দেশের জন্য ঠিক কী বয়ে আনেন। তবে প্রতিটি পদক্ষেপেই প্রেসিডেন্টকে মাথায় রাখতে হবে, ‘একজন যুদ্ধকালীন প্রেসিডেন্ট’ হিসেবেই তাকে নির্বাচিত করা হয়েছে। (দৈনিক ইত্তেফাক)
লেখক: আটলান্টিক কাউন্সিলের প্রেসিডেন্ট এবং প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা (সিইও)
আটলান্টিক কাউন্সিল থেকে ভাষান্তর: সুমৃৎ খান সুজন

সোশ্যাল মিডিয়ায় খবরটি শেয়ার করুন

যুক্তরাষ্ট্রের নির্বাচন : বিজয়ী হবেন যুদ্ধকালীন প্রেসিডেন্ট

প্রকাশের সময় : ০৩:০৬:১২ অপরাহ্ন, বুধবার, ৩০ অক্টোবর ২০২৪

ফ্রেডরিক কেম্পে: আগামী ৫ নভেম্বর আমেরিকান ভোটাররা ‘একটি যুদ্ধকালীন প্রেসিডেন্ট’ নির্বাচিত করতে চলেছেন। এটা নিছক ভবিষ্যদ্বাণী নয়, বরং অবস্থাদৃষ্টে বলতে হয়, এটাই বাস্তবতা। যদিও চীন, রাশিয়া, ইরান ও উত্তর কোরিয়ার মধ্যে ক্রমবর্ধমান ভূরাজনৈতিক এবং প্রতিরক্ষা শিল্প সহযোগিতার প্রেক্ষাপটে উদ্ধৃত বিপদ’ সম্পর্কে নির্বাচনে প্রতিদ্ব›িদ্বতাকারী দুই প্রার্থী কমলা হ্যারিস ও ডোনাল্ড ট্রাম্পের কেউই এখন পর্যন্ত স্পষ্ট করে কিছু বলেননি। তবে এ চারটি দেশের সম্মিলিত অক্ষশক্তির মাধ্যমে নজিরবিহীন বিপদ আসতে পারে বলে জোর আশঙ্কা রয়েছে।
সেই চ্যালেঞ্জ মোকাবিলার প্রশ্নে যুক্তরাষ্ট্র কী ধরনের কৌশলগত ব্যবস্থা গ্রহণ করবে, সে সম্পর্কে উল্লেখযোগ্য কোনো রূ পরেখা তুলে ধরেননি দুই প্রার্থীর কেউই। অথচ সাবেক প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প বা ভাইস প্রেসিডেন্ট কমলা হ্যারিসের মধ্য থেকে চূড়ান্ত ফলাফলে যিনিই নির্বাচিত হন না কেন, প্রেসিডেন্ট নির্বাচিত হওয়ার ক্ষেত্রে তার জন্য এটাই অনিবার্য প্রেক্ষাপট। উপরন্তু নির্বাচনে বিজয় লাভের পর স্নায়ুযুদ্ধ কিংবা দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের পর থেকে সবচেয়ে বিপজ্জনক ভূরাজনৈতিক মুহূর্তে কমান্ডার ইন চিফের ভূমিকায় অবতীর্ণ হবেন তিনি।
ঠিক এমন একটি পটভূমিতে ওয়াশিংটন পোস্টের নিয়মিত কলামিস্ট জর্জ এফ উইল এক লেখায় বলেছেন যে, ২০২৪ সালের যুক্তরাষ্ট্রের নির্বাচনকে ১৯৪০ সালের নির্বাচনের সঙ্গে তুলনা করা যায়। সে সময়েও ইম্পেরিয়াল জাপান, হিটলারের জার্মানি বা মুসোলিনির ইতালির বিরুদ্ধে আনুষ্ঠানিকভাবে যুদ্ধ ঘোষণা করেনি যুক্তরাষ্ট্র। ঠিক একইভাবে এখনো ওয়াশিংটন কোনো শক্তির বিরুদ্ধে ‘আনুষ্ঠানিক’ যুদ্ধে লিপ্ত নেই। যদিও তখন দৃশ্যপট কিছুটা ভিন্ন ছিল।
তখন নির্বাচনে অংশ নেওয়া দুই প্রার্থীর এক জন ছিলেন প্রেসিডেন্ট ফ্র্যাংকলিন ডেলানো রুজভেল্ট (এফডিআর), যিনি বেশ ভালোমতোই বুঝতে পেরেছিলেন যে, তিনিই যুদ্ধকালীন প্রেসিডেন্ট হতে চলেছেন। ফলে তার আচরণ ও কর্মপ্রণালিতে এটা স্পষ্টও হয়ে ওঠে। এফ উইলের ভাষায়, ‘এফডিআরের আচরণে একটি বিচ্ছিন্নতাবাদী জাতিকে বৈশ্বিক সংঘাতে টেনে নিয়ে যাওয়ার মতো পরিস্থিতি সৃষ্টি হয়।’ ১৯৩৭ সালে আগ্রাসী দেশগুলোর উদ্দেশে তার ‘কোয়ারান্টিন স্পিচ’ এবং সামরিক কর্মপরিকল্পনা ঘোষণার পর পরিস্থিতি উত্তপ্ত হয়ে উঠতে থাকে।
এফডিআরের প্রতিদ্ব›দ্বী ছিলেন রিপাবলিকান ব্যবসায়ী ওয়েন্ডেল উইলকি। তিনি ছিলেন এফডিআরের চেয়ে অনেক বেশি আন্তর্জাতিকতাবাদী। তবে এফডিআরের দিকেই ভোটাররা আকৃষ্ট হন। এ বিষয়ের অবতারণা করে উইল লিখেছেন, ‘তৃতীয় বিশ্বযুদ্ধের আশঙ্কার প্রেক্ষাপটে দাঁড়িয়ে মাত্র সপ্তাহ তিনেক পর আমেরিকান ভোটাররা যখন নিজেদের প্রেসিডেন্ট নির্বাচন করতে চলেছেন, তখন প্রার্থীদের অবশ্যই উচিত, বৈশ্বিক সংঘাতের বিষয়ে নিজের চিন্তা তুলে ধরে দেশবাসীকে আশ্বস্ত করা।’
মোদ্দা কথা, দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধ যেভাবে জাপান, জার্মানি ও ইতালীর সমন্বিত অক্ষ দ্বারা সূচিত ‘সংকটের জ্বালামুখ’ দিয়ে শুরু হয়েছিল, তেমনিভাবে এখনো অনুরূপ অক্ষ রয়ে গেছে- চীন, রাশিয়া, ইরান এবং উত্তর কোরিয়া। ফলে এ নিয়ে প্রার্থীদের চিন্তাভাবনা কী, তা ভোটারদের কাছে স্পষ্ট হওয়া দরকার। এখানে আমি কূটনীতিক ও ইতিহাসবিদ ফিলিপ জেলিকোর উদ্ধৃতিও উল্লেখ করতে চাই। টেক্সাসের ন্যাশনাল সিকিউরিটি রিভিউয়ে এক লেখায় জেলিকো যুক্তি তুলে ধরে বলেছেন যে, পরবর্তী আমেরিকান প্রেসিডেন্টের বিশ্বব্যাপী যুদ্ধে জড়িত হওয়ার ২০-৩০ শতাংশ আশঙ্কা রয়েছে। ঐ সব সংঘাতকে জেলিকো ব্যাখ্যা করেছেন এভাবে যে, সব পক্ষ কেবল একটিমাত্র যুদ্ধে, তথা বিশ্বযুদ্ধে লিপ্ত থাকবে না, বরং তারা একেকটি ফ্রন্ট বা অঞ্চলে যুক্ত হয়ে সংঘর্ষ চালাবে।
সম্প্রতি আটলান্টিক কাউন্সিলের বিশেষজ্ঞদের নিয়ে নিজের ধারণা সম্প্রসারিত করেছেন জেলিকো। তার আশঙ্কা, নতন প্রেসিডেন্টের জন্য বিশেষত আগামী তিন বছর হবে এক কঠিন বিপদের মুহূর্ত! এই সময়কালকে সফলভাবে সামলে উঠতে হলে প্রেসিডেন্টকে বিশ্বব্যাপী মিত্র ও অংশীদারদের পাশাপাশি আমেরিকান অর্থনীতি, প্রতিরক্ষা শিল্প, প্রযুক্তি এবং সমাজের অন্তর্নিহিত শক্তিগুলোকে কাজে লাগিয়ে তবেই স্বৈরাচারীদের বিরুদ্ধে অগ্রসর হওয়া উচিত।
জেলিকোর মতে, প্রেসিডেন্টকে স্বল্প মেয়াদে যেসব সমস্যার মুখে পড়তে হতে পারে, তাহলো রুশ প্রেসিডেন্ট ভøাদিমির পুতিন এবং চীনা নেতা শি জিনপিংয়ের প্রতিদ্ব›িদ্বতার মুখোমুখি অবস্থানে রয়েছে যুক্তরাষ্ট্র। এ ধরনের পরিস্থিতিতে যুক্তরাষ্ট্রের অভ্যন্তরীণ বিভ্রান্তির সুযোগ নিতে পারে তারা। পাশাপাশি যুক্তরাষ্ট্রের প্রতিরক্ষা খাতও নানাবিধ উঠতি চ্যালেঞ্জে নিপতিত। এসব বিষয় মাথায় রেখেই উভয় প্রার্থীকে প্রস্তুতি নিতে হবে। উপরন্ত ইউক্রেন যুদ্ধ ও তাইওয়ান ইস্যু নিয়ে কার্যকর চিন্তাভাবনা করতে হবে।
জর্জ উইল লিখেছেন, রাশিয়ার পশ্চিম সীমান্ত থেকে জলসীমা পর্যন্ত জায়গা- যেখানে চীন আক্রমণাত্মকভাবে ফিলিপাইনের সার্বভৌমত্ব দখল করছে, আজকের যুদ্ধ ও যুদ্ধাবস্থার মূল মঞ্চ। পৃথিবীর অন্তত ২৪টি সংঘাতসংকুল অঞ্চলের ছয়টিই এ অঞ্চল জুড়ে রয়েছে। উইনস্টন চার্চিলের দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের স্মৃতিকথার (ওয়ার্ল্ড ওয়ার টু মেমোরিজ) প্রথম খন্ডের শিরোনাম উদ্ধৃতি করে তিনি বলেছেন যে, বিশ্বযুদ্ধের ‘সমাবেশের ঝড়’ দেখতে ঠিক কেমন, এ অঞ্চলের দিকে দৃষ্টি দিলে তা বোঝা যাবে।
মুশকিল হলো, যুক্তরাষ্ট্রের নির্বাচনে অবতীর্ণ দুই প্রেসিডেন্টের কেউই এসব নিয়ে ভোটারদের উদ্দেশে তেমন কিছু বলেননি। ফলে ক্রমবর্ধমান বৈশ্বিক সংকট সম্পর্কে সুস্পষ্ট রূপরেখা ভোটারদের সামনে হাজির করতে ব্যর্থ হওয়ার দায়ে ভবিষ্যতের কোনো এক সময়ে দুই প্রার্থীর বিরুদ্ধে অভিযোগ উঠলে অবাক হওয়ার কিছুই থাকবে না। এ ধরনের কথা অনেকের কাছে ‘আতিশয্যপূর্ণ’ বলে মনে হতে পারে।
তাদের উদ্দেশে বলতে হয়, পার্ল হারবারে জাপানী আক্রমণের বছরখানেক আগে ১৯৪১ সালের জানুয়ারীতে এফডিআরের (রুজভেল্ট) তৃতীয় উদ্বোধনী ভাষণটি পড়–ন, তাহলেই সব বুঝতে পারবেন। ঐ ভাষণের ঠিক পরের দিনই কংগ্রেস জাপানের বিরুদ্ধে যুদ্ধ ঘোষণা করে। ভাষণে রুজভেল্ট বলেন, ‘দ্রæত ঘটে যাওয়া নানা ঘটনার মধ্যে আমাদের সামনে এখন এমন এক সময় এসে গেছে, যখন কিছুক্ষণের জন্য থেমে গিয়ে ইতিহাসে আমাদের অবস্থান কী, সেদিকে তাকাতে হবে। আমরা আদতে কী এবং এমনকি আমরা কোন রাস্তায় হাঁটতে চাই, তা নতুন করে আবিষ্কার করা প্রয়োজন। আর আমরা যদি তা না করি, তাহলে বিচ্ছিন্নতা ও নিষ্ক্রিয়তার কঠিন বিপদের ঝুঁকি রয়েই যাবে। বস্তুত, একটি জাতির জীবন বছর গণনা দ্বারা নয়, বরং মানুষের আত্মার জীবনকাল দ্বারা নির্ধারিত হয়।’
যুদ্ধ তখনকার তুলনায় এখন ততটা অনিবার্য নয় বটে। তবে যুদ্ধের আশঙ্কাকে উপেক্ষা করার ফলাফল সবর্দাই মারাত্মক হতে পারে। ওয়ার্ল্ড ওয়ার টু মেমোরিজের উপসংহারে রুজভেল্ট লিখেছেন, ‘মহাবিপদের মুখে আমাদের দৃঢ় লক্ষ্য হবে গণতন্ত্রের অখন্ডতা রক্ষা করা এবং তা স্থায়ী করা। আর এজন্য আমেরিকান চেতনা ও বিশ্বাসকে একত্রিত করা অনেক বেশি জরুরি।’
অনুষ্ঠিতব্য আমেরিকান প্রেসিডেন্ট নির্বাচনে অবতীর্ণ দুই প্রার্থী ভোটারদের উদ্দেশে কী বলেছেন বা বলতে ভুলে গেছেন তার চেয়ে বড় কথা হলো, ক্ষমতায় গিয়ে বিজয়ী প্রার্থী দেশের জন্য ঠিক কী বয়ে আনেন। তবে প্রতিটি পদক্ষেপেই প্রেসিডেন্টকে মাথায় রাখতে হবে, ‘একজন যুদ্ধকালীন প্রেসিডেন্ট’ হিসেবেই তাকে নির্বাচিত করা হয়েছে। (দৈনিক ইত্তেফাক)
লেখক: আটলান্টিক কাউন্সিলের প্রেসিডেন্ট এবং প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা (সিইও)
আটলান্টিক কাউন্সিল থেকে ভাষান্তর: সুমৃৎ খান সুজন