এটা কষ্টের, এ বেদনা দীর্ঘ সময় থাকবে: নির্বাচনোত্তর ভাষণে হিলারি

- প্রকাশের সময় : ০৬:৪৩:২৪ অপরাহ্ন, বৃহস্পতিবার, ১০ নভেম্বর ২০১৬
- / ১৯৬৫ বার পঠিত
নিউইয়র্ক: যুক্তরাষ্ট্রের ঐতিহাসিক প্রেসিডেন্ট নির্বাচনে ভোটারদের দেওয়া মোট ভোটে (পপুলার ভোট) এগিয়ে থেকেও ইলেকটোরাল কলেজ ভোটে হেরে গেলেন হিলারি ক্লিনটন। জিতে গেলেন ডোনাল্ড ট্রাম্প। ভোট শেষে এখন পর্যন্ত পাওয়া ৫২২টি ইলেকটোরাল ভোটের মধ্যে ট্রাম্প পেয়েছেন ২৯০ ও হিলারি ২৩২টি। তবে মোট ভোটের মধ্যে হিলারি ৪৭ দশমিক ৭ শতাংশ ভোট পেয়েছেন। ট্রাম্প পেয়েছেন ৪৭ দশমিক ৫ শতাংশ। এদিকে নির্বাচনে পরাজয়ের পর নিউইয়র্কে বুধবার (৯ নভেম্বর) প্রথমবারের মতো সমর্থকদের উদ্দেশে বক্তব্য দেন ডেমোক্রেটিক পার্টির প্রার্থী হিলারি ক্লিনটন। সমাবেশে হিলারি উপস্থিত সমর্থক, ভক্ত ও শুভাকাংখীদের উদ্দেশ্যে বলে- ‘এটা কষ্টের, এ বেদনা দীর্ঘ সময় থাকবে’।
সিএনএন-এর হিসাবে এরিপোর্ট লেখা পর্যন্ত ৯২ শতাংশ ভোট গণনা হয়েছে। এর মধ্যে হিলারি পেয়েছেন ৫ কোটি ৯৭ লাখ ৫৫ হাজার ২৮৪ ভোট। আর ট্রাম্প পেয়েছেন ৫ কোটি ৯৫ লাখ ৩৫ হাজার ৫২২ ভোট। পার্থক্য মাত্র ২ লাখ ১৯ হাজার ৭৬২ ভোট। যে ইলেকটোরাল কলেজ ভোটের কারণে ট্রাম্প জিতে গেলেন, ওই ভোট নিয়ে দুই বছর আগে টুইট করেছিলেন নতুন এই প্রেসিডেন্ট। ২০১২ সালে মিট রমনি হেরে যাওয়ার প্রসঙ্গে ওই টুইট বার্তায় তিনি বলেছিলেন, গণতন্ত্রের জন্য এই ইলেকটোরাল কলেজ ভোট এক বিপর্যয়।
অপরদিকে মিশিগান অঙ্গরাজ্যের ফলাফল ঘোষণা এখনো বাকি। মিশিগানে ইলেকটোরাল ভোট ১৬টি। এখানেও যদি হিলারির পপুলার (জনপ্রিয়) ভোটের ধারাবাহিকতা বজায় থাকে, তাহলে ২০০০ সালের পর তিনি হবেন প্রথম প্রেসিডেন্ট প্রার্থী, যিনি পপুলার ভোট বেশি পাওয়ার পরও পরাজিত হয়েছেন। উল্লেক্য, ২০০০ সালে ডেমোক্রেটিক প্রার্থী আল গোরও পপুলার ভোট বেশি পেয়েও নির্বাচনে হেরে গিয়েছিলেন। ২০০০ সালের আগেও অ্যান্ড্রু জ্যাকসন, স্যামুয়েল টিলডেন ও গ্রোভার ক্লিভল্যান্ডও পপুলার ভোট বেশি পাওয়ার পরও হেরে গিয়েছিলেন।
নির্বাচনোত্তর ভাষণ: প্রেসিডেন্ট নির্বাচনে পরাজয়ের পর নিউইয়র্কে বুধবার (৯ নভেম্বর) সকালে প্রথমবারের মতো সমর্থকদের উদ্দেশে বক্তব্য দেন ডেমোক্রেটিক পার্টির প্রার্থী, সাবেক ফাস্ট লেডী ও সাবেক সেক্রেটারী অব ষ্টেট (পররাষ্ট্রমন্ত্রী) হিলারি ক্লিনটন। এসময় তাঁর স্বামী ও সাবেক প্রেসিডেন্ট বিল ক্লিনটন ও রানিংমেট টিম কেইন হিলারির পাশে ছিলেন।
নিউইয়র্কে তার নির্বাচনী সদর দফতরে ভাষণদানকালে হিলারি ক্লিনটন বললেন, ‘আমি দুঃখিত, আমরা নির্বাচনে জিততে পারিনি। যে মূল্যবোধ আমরা ধারণ করি এবং আমাদের দেশের জন্য যে স্বপ্ন দেখি তা নিয়ে আমরা জিততে পারিনি।’ হিলারি বলেছেন, এটা কষ্টকর। এই বেদনা দীর্ঘ সময় ধরে থাকবে। তবে পরাজয়ের কষ্টের কথা স্বীকার করলেও নির্বাচনের ফলাফল মেনে নিয়ে খোলা মনে ট্রাম্পকে দেশ পরিচালনার সুযোগ দিতে সমর্থকদের আহ্বান জানান হিলারি।
বুধবার নিউইয়র্কের ম্যানহাটনে সমর্থকদের উদ্দেশে দেওয়া ভাষণে হিলারি ক্লিনটন এ কথা বলেন। দৃঢ়কণ্ঠে হিলারি বলেন, ‘আমাদের প্রচারণা কেবল এক ব্যক্তি বা একটি নির্বাচনের জন্য ছিল না। যে দেশটিকে আমরা ভালোবাসি তার জন্যই ছিল এ প্রচারণা।’
হিলারি তাঁর বক্তব্যে নবনির্বাচিত প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পকে অভিনন্দন জানিয়ে বলেন, আমি দেশের স্বার্থে তাঁর সঙ্গে কাজ করতে চাই।
যুক্তরাষ্ট্রের ইতিহাসে এবারের নির্বাচনের প্রচারণা ছিল সবচেয়ে তিক্ততাপূর্ণ। আর ভোটের ফলাফলেও এক বিভক্ত দেশের ছবি উঠে এসেছে। এ কথা স্মরণ করে হিলারি বলেন, ‘আমরা যা ভেবেছিলাম, যুক্তরাষ্ট্র তার চেয়ে অনেক বেশি বিভক্ত হয়ে পড়েছে এ নির্বাচনে।’ তিনি সবাইকে নির্বাচনের ফলাফল মেনে নিয়ে ভবিষ্যতের দিকে তাকানোর আহ্বান জানান।
আবেগময় এই ভাষণের সময় করতালিতে মুখর হয়ে ওঠে আয়োজন স্থল। এ সময় হিলারির সঙ্গে ছিলেন স্বামী ও সাবেক প্রেসিডেন্ট বিল ক্লিনটন এবং মেয়ে চেলসি। হিলারির আগে তাঁর রানিংমেট টিম কেইন বক্তব্য দেন।
ট্রাম্পকে অভিনন্দন জানানোর কথা তুলে ধরে হিলারি ক্লিনটন বলেন, ‘গতরাতে আমি ডোনাল্ড ট্রাম্পকে অভিনন্দন জানিয়েছি। আমি তাঁকে বলেছি, দেশের স্বার্থে তার সঙ্গে কাজ করব।’ হিলারি বলেন, ‘আমি আশা করি, সব আমেরিকান নাগরিকের জন্য তিনি একজন সফল প্রেসিডেন্ট হবেন।’ আশাবাদী হিলারি বলেন, ‘একদিন, কেউ একজন এই অচলায়তন ভাঙবে। আশা করি, আমরা এখন যা ভাবছি তারও আগে সেটি সম্ভব হবে।
তিনি নারী ও মেয়ে শিশুদের উদ্দেশে বলেন, আমি আপনাদের একজন, এর চেয়ে আর অন্য কোনো কিছু আমাকে গর্বিত করে না। তিনি বলেন, ‘তোমাদের গুরুত্ব ও শক্তি নিয়ে কখনোই সন্দিহান থাকবে না। এ বিশ্বে যে সুযোগ আছে এর প্রতিটিতে তোমার অধিকার আছে।’
উল্লেখ্য, নির্বাচিত হলে হিলারি হতেন যুক্তরাষ্ট্রের প্রথম নারী প্রেসিডেন্ট। তবে সেই ইতিহাস সৃষ্টি হলো না। নির্বাচনের আগে কাচের দেয়াল ভেঙে দেওয়ার কথা বলেছিলেন তিনি। তবে তিনি তা ভাঙতে পারলেন না। ’