যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট নির্বাচন-২০২০ : দুই বার ভোট দিতে বললেন ট্রাম্প

- প্রকাশের সময় : ১২:৩৮:৫৮ অপরাহ্ন, শনিবার, ৫ সেপ্টেম্বর ২০২০
- / ২৩৯ বার পঠিত
হককথা ডেস্ক: যুক্তরাষ্ট্রের নর্থ ক্যারোলাইনা রাজ্যে ডাকযোগে ভোটগ্রহণের প্রাক্কালে প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প ভোটারদের দুই বার ভোট দেওয়ার পরামর্শ দিয়েছেন। এমন ‘বেআইনি’ প্ররোচনার ফলে সমালোচনার ঝড় উঠছে। সংবাদসূত্র: ডয়চে ভেলে, রয়টার্স, এপি, বিবিসি
যুক্তরাষ্ট্রে প্রেসিডেন্ট নির্বাচনের তারিখ ৩ নভেম্বর হলেও শুক্রবার থেকেই ডাকযোগে ভোটগ্রহণের প্রক্রিয়া শুরু হওয়ার কথা। এ দিন নর্থ ক্যারোলাইনা রাজ্যের মানুষকে ‘মেইল ইন’ ভোটের কাগজপত্র পাঠানো হচ্ছে। করোনা সংকটের প্রেক্ষাপটে চলতি বছরের প্রেসিডেন্ট নির্বাচনে সংখ্যাগুরু ভোটারই ডাকযোগে ভোট দেবেন বলে ধরে নেওয়া হচ্ছে। সে কারণে একাধিক রাজ্য সব ভোটারের কাছে ‘মেইল ইন’ ভোটের ব্যালট পেপার পাঠাচ্ছে। কিছু রাজ্যে নির্বাচনের দুই সপ্তাহ আগে এমন ভোট গণনা করা হয়। বাকি রাজ্যে নির্বাচনের পর সেই কাজ করা হয়। বিশেষজ্ঞদের মতে, রেকর্ড সংখ্যক ডাকযোগে ভোটের কারণে নির্বাচনের রাতে সার্বিক চিত্র উঠে আসবে না।
প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প শুরু থেকেই ‘মেইল ইন’ ভোটের বিরোধিতা করে চলেছেন। তার অভিযোগ, এই প্রক্রিয়ায় কারচুপির আশঙ্কা বেশি। কোনো তথ্যপ্রমাণ ছাড়াই তিনি এমন আশঙ্কার উল্লেখ করে চলেছেন। সেই প্রক্রিয়া থামাতে না পেরে এবার তিনি নর্থ ক্যারোলাইনার ভোটারদের দুই বার ভোট দেওয়ার ডাক দিয়েছেন। একবার ডাকযোগে, একবার সশরীরে ভোটগ্রহণ কেন্দ্রে গিয়ে ভোট দেওয়ার পরামর্শ দিয়েছেন খোদ প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প। তার মতে, একমাত্র এভাবেই নির্বাচন প্রক্রিয়ার কার্যকারিতা যাচাই করা সম্ভব। সেই প্রক্রিয়া নিখুঁত হলে ডাকযোগে ভোট দেওয়ার পর কোনো ভোটার দ্বিতীয়বার ভোট দেওয়ার সুযোগ পাবেন না।
উল্লেখ্য, নর্থ ক্যারোলাইনার মতো কিছু রাজ্যে শুধু একাধিকবার ভোট দেওয়াই বেআইনি নয়, কাউকে সে কাজে উৎসাহ দেওয়াও অপরাধ হিসেবে গণ্য করা হয়। নর্থ ক্যারোলাইনা রাজ্যের অ্যাটর্নি জেনারেল ও ডেমোক্রেটিক পার্টির সদস্য জশ স্টাইন এক টুইট বার্তায় প্রেসিডেন্টের বিরুদ্ধে সেই অভিযোগ এনেছেন। তার মতে, ভোটারদের আইন ভাঙতে উৎসাহ দিয়ে নির্বাচনে অরাজকতা সৃষ্টির কাজে সহায়তা চাইছেন ট্রাম্প।
ট্রাম্প শিবির অবশ্য এমন অভিযোগ অস্বীকার করেছে। হোয়াইট হাউসের মুখপাত্র কেলেই ম্যাকএনানি ‘ফক্স নিউজ’ চ্যানেলকে বলেন, প্রেসিডেন্ট মোটেই কাউকে বেআইনি কাজ করতে বলছেন না। তিনি ভোটারদের সচেতন করতে শুধু বলেছেন, প্রত্যেকের ভোট যাতে সত্যি নথিভুক্ত হয়, তা যাচাই করতে হবে। সেটা না হলে সশরীরে ভোট দিতে যাওয়ার পরামর্শ দিয়েছেন ট্রাম্প।
এদিকে, ফেসবুক জানিয়েছে, ট্রাম্পের যে ভিডিওতে দুই বার ভোট দেবার ডাক দিয়েছেন, কোম্পানির নীতি মেনে সেটি সরিয়ে ফেলা হবে। কোনো মন্তব্য ছাড়া অথবা প্রেসিডেন্টের পক্ষ নিয়ে সেই ভিডিও শেয়ার করলেও ভিডিওর যেকোনো সংস্করণ সরিয়ে ফেলা হবে। টুইটারও ট্রাম্পের মন্তব্য ‘ফ্ল্যাগ’ করেছে।
নির্বাচনের আগেই টিকা বিতরণের তোড়জোড়
এদিকে, যুক্তরাষ্ট্রে প্রেসিডেন্ট নির্বাচনের আগেই করোনাভাইরাসের টিকা বিতরণের তোড়জোড় শুরু করেছে ট্রাম্প প্রশাসন। অঙ্গরাজ্যগুলোকে এর জন্য প্রস্তুতি নিতে বলা হয়েছে। কিন্তু এ উদ্যোগ বিপজ্জনক মনে করছেন স্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞরা। তড়িঘড়ি এমন উদ্যোগের পেছনে রাজনৈতিক চাপেরও অভিযোগ উঠেছে।
যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প গতমাসে রিপাবলিকানদের জাতীয় সম্মেলনে দলীয় মনোনয়ন পাওয়ার পর এ বছর শেষের আগেই তার প্রশাসনের কোভিড-১৯ এর টিকা দেওয়া শুরুর প্রতিশ্রæতি দিয়েছিলেন। এর ওপরই তিনি এখন জোর দিচ্ছেন।
আমেরিকান সংবাদ মাধ্যমগুলো বলছে, প্রেসিডেন্ট নির্বাচনের দুইদিন আগে, অর্থাৎ ১ নভেম্বরের মধ্যেই টিকা বিতরণের জন্য সব অঙ্গরাজ্যকে প্রস্তুতি নিয়ে ফেলতে বলেছে যুক্তরাষ্ট্রের ‘সেন্টারস ফর ডিজিজ কন্ট্রোল অ্যান্ড প্রিভেনশন’ (সিডিসি)। ট্রাম্প প্রশাসনের এমন উদ্যোগের পেছনে রাজনৈতিক হস্তক্ষেপ নিয়ে ডেমোক্রেট এবং স্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞরাও উদ্বেগ প্রকাশ করেছেন। সিনেটের শীর্ষ ডেমোক্রেট নেতা চাক শুমার প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প প্রশাসনের রাজনৈতিক চাপের কাছে মাথা নত করার অভিযোগ করেছেন সিডিসি’র বিরুদ্ধে। তাছাড়া এই রাজনৈতিক চাপের মুখে নিরাপদ ও কার্যকর টিকার জন্য সংশ্লিষ্ট সব প্রক্রিয়া শেষের আগেই তা বিতরণ করার উদ্যোগে বিপদ দেখছেন স্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞরাও। নির্বাচনের আগে টিকা বিতরণ স্পষ্টতই চাপের মুখে করা হচ্ছে বলে অভিমত অ্যারিজোনার এক সংক্রামক রোগ বিশেষজ্ঞের। করোনাভাইরাস সংকট এবং এর পরিণতিতে দেখা দেওয়া অর্থনৈতিক বিপর্যয় সামাল দেওয়ায় ব্যর্থতা ঢাকতে প্রশাসন তড়িঘড়ি টিকা বিতরণ করতে চাইছে বলে মনে করছেন সমালোচকরা। (দৈনিক যায়যায়দিন)