ট্রাম্প কি তালেবানদের কাছ থেকে বিলিয়ন ডলার মূল্যের পরিত্যক্ত যুক্তরাষ্ট্রের সামরিক সরঞ্জাম পুনরুদ্ধার করতে সক্ষম হবেন?

- প্রকাশের সময় : ১০:৩৯:০৪ অপরাহ্ন, মঙ্গলবার, ২৮ জানুয়ারী ২০২৫
- / ৪৬ বার পঠিত
প্রেসিডেন্ট পদে অভিষেকের প্রাক্কালে ডনাল্ড ট্রাম্প ওয়াশিংটনের জনসভায় একটি প্রতিশ্রুতি দিয়েছিলেন। তিনি বলেছিলেন, ২০২১ সালে যুক্তরাষ্ট্রের সেনা যখন আফগানিস্তান ছেড়ে চলে যায় সেই সময় আমেরিকার সেনাবাহিনী যে বিপুল পরিমাণ সামরিক পরিকাঠামো ও সরঞ্জাম এশিয়ার এই দেশে ছেড়ে গিয়েছিল তা তিনি ফেরানোর বন্দোবস্ত করবেন। যদিও প্রথম মেয়াদে ট্রাম্প প্রশাসন ন্যাটো বাহিনী প্রত্যাহারের জন্য তালেবানের সাথে চুক্তিতে স্বাক্ষর করেছিল, কিন্তু পরবর্তী যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট জো বাইডেন যেভাবে গোটা প্রক্রিয়াটি পরিচালনা করেছিলেন তার কড়া সমালোচনা করেছেন এই রিপাবলিকান নেতা। তার মতে, ‘ডেমোক্র্যাট প্রেসিডেন্ট আমাদের সামরিক সরঞ্জামের একটি বড় অংশ কাবুলে শত্রুদের দিয়ে এসেছে।’
এ প্রসঙ্গে মানবিক সাহায্যের কথা উল্লেখ করে ট্রাম্প বলেন, ‘আমরা যদি বছরে তাদের (তালেবান) বিলিয়ন ডলার দিই, তাহলে তাদের বলুন আমাদের সামরিক সরঞ্জাম ফেরত দিতে। না হলে আমরা তাদের অর্থ দেব না। সুতরাং, আমরা তাদের টাকা দেব, পরিবর্তে আমরা সামরিক সরঞ্জাম ফেরত চাই।’
২০২২ সালে যুক্তরাষ্ট্রের প্রতিরক্ষা বিভাগের একটি প্রতিবেদন অনুসারে, ন্যাটো বাহিনী প্রত্যাহারের সময় যুক্তরাষ্ট্র আফগানিস্তানে ৭ বিলিয়ন ডলার মূল্যের সামরিক সরঞ্জাম রেখে গেছে। এর বেশিরভাগই ন্যাটো-সমর্থিত আফগান সেনাবাহিনীর। এই অস্ত্র তালেবান যোদ্ধারা দ্রুত জব্দ করে। যুক্তরাষ্ট্রের বাহিনী ২০ বছরের যুদ্ধের শেষ সপ্তাহগুলোতে বিমান থেকে কম্পিউটার সিস্টেম পর্যন্ত যতটা সম্ভব সরঞ্জাম ভেঙে ফেলার বা ধ্বংস করে দেবার চেষ্টা করেছিল। কিন্তু ২০২১ সালের আগস্টে যখন যুক্তরাষ্ট্রের-প্রশিক্ষিত আফগান সামরিক বাহিনী ভেঙে পড়ে এবং ইসলামপন্থী যোদ্ধাদের কাছে আত্মসমর্পণ করে তখনও বিপুল পরিমাণ অস্ত্র তালেবানের হাতে পড়ে। সরঞ্জামগুলোর মধ্যে রয়েছে বিমান, আকাশ থেকে স্থলে নিক্ষেপ করার যুদ্ধাস্ত্র, সামরিক যান, যুদ্ধের ট্যাঙ্ক, ইউএস ট্র্যাক, অস্ত্র, বুলেটপ্রুফ ভেস্ট, ছদ্মবেশী ইউনিফর্ম, যোগাযোগ সরঞ্জাম এবং অন্যান্য উপকরণ যা গত প্রায় চার বছরে শুধু খারাপ হয়েছে তা নয়, তালেবান যোদ্ধাদের দ্বারা ভেঙে ফেলা হয়েছে।
তবে বিশেষজ্ঞরা বলছেন, আফগানিস্তানে রেখে যাওয়া যুক্তরাষ্ট্রের সামরিক সরঞ্জাম পুনরুদ্ধার করা বেশ সহজ।ওয়াশিংটনের RAND থিঙ্ক ট্যাঙ্কের একজন সিনিয়র নীতি গবেষক, জেসন ক্যাম্পবেল মনে করিয়ে দিয়েছেন যুক্তরাষ্ট্রের আফগানিস্তানে মানবিক সহায়তা পৌঁছে দেবার ক্ষেত্রে একক বৃহত্তম দাতা দেশ। এই নগদ চালানগুলো জাতিসংঘ এবং অন্যান্য বেসরকারি সংস্থার মাধ্যমে অত্যন্ত সতর্কতার সাথে পরিচালনা করা হয় যাতে লক্ষ লক্ষ আফগানকে সাহায্যের মাধ্যমে বাঁচিয়ে রাখা যায়। আন্তর্জাতিক ব্যাংকিং পরিষেবা ব্যবহারের ক্ষেত্রে তালেবানদের ওপর বিধি নিষেধ আছে।
ক্যাম্পবেল দ্য ইন্ডিপেনডেন্টকে জানিয়েছেন, ‘ট্রাম্প ইঙ্গিত দিয়েছেন যে যুক্তরাষ্ট্র প্রতি মাসে তালেবানদের কোষাগারে ৪০ মিলিয়ন ডলার পাঠাচ্ছে। এখন তারা যা খুশি তা করতে পারে।’ তবে ট্রাম্পকে আমেরিকান সামরিক সরঞ্জাম ফিরিয়ে আনার জন্য তালেবানের সাথে যদি আলোচনায় বসতে হয় , তবে প্রক্রিয়াটি যতটা সহজ মনে হচ্ছে তার চেয়ে অনেক বেশি কঠিন হবে। আফগানিস্তানের প্রতিরক্ষা সচিবের অফিসে প্রাক্তন কান্ট্রি ডিরেক্টর রান্ডাল বলছেন, ‘এমন সরঞ্জামগুলো বিশ্লেষণ এবং যাচাই করার জন্য তাকে (ট্রাম্প )একটি দল পাঠাতে হবে। তার দলকে চুক্তিগুলো সুরক্ষিত করতে হবে। এটি একটি গুরুত্বপূর্ণ বিষয় আপনি কীভাবে আফগানিস্তানের বাইরে আমেরিকান সরঞ্জাম আনতে পারেন।’
২০১৫ সালে ওবামা প্রশাসন আফগানিস্তানের অভ্যন্তরে তার পদচারণা কমানোর চেষ্টা করলে যুক্তরাষ্ট্র তার সাঁজোয়া মাইন-প্রতিরোধী অ্যাম্বুশ প্রোটেক্টেড ভেহিকেল (MRAPV) ধ্বংস করে দিয়েছিলো। কারণ সেগুলো দেশে ফেরানো অনেক ব্যয়বহুল ছিল। মঙ্গলবার তালেবানরা পাল্টা প্রতিক্রিয়ায় ট্রাম্পের দেয়া পরামর্শটি সরাসরি প্রত্যাখ্যান করেছে। তারা অবশিষ্ট যুক্তরাষ্ট্রের সামরিক সরঞ্জাম ফেরত দিতে রাজি হয়নি। নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক একজন কর্মকর্তা বলেছেন যে, এই অস্ত্রগুলো ফেরত দেওয়ার দাবি করার পরিবর্তে ট্রাম্প প্রশাসনের উচিত আফগানিস্তানের অভ্যন্তরে ইসলামিক স্টেট খোরাসান (আইএসকেপি) গ্রুপসহ ক্রমবর্ধমান সন্ত্রাসী হুমকির বিরুদ্ধে লড়াই করার জন্য তালেবানদের আরও উন্নত অস্ত্র দিয়ে সজ্জিত করা।
আফগান জাতীয় নিরাপত্তা পরিষদের কর্মকর্তা আহমেদ সুজা জামাল ট্রাম্পের দাবিকে প্রত্যাখ্যান করেছেন। সুজা বলেছেন, ‘ট্রাম্পের কাছে তার অনুসারী এবং ভোটারদের দেয়া প্রতিশ্রুতি পালনের সময় এসেছে, তাই তিনি বাইডেন প্রশাসনের ক্ষতি পূরণ করতে চান। ট্রাম্প বিলক্ষণ জানেন, তালেবানদের হাত আমেরিকান সামরিক হার্ডওয়্যারে পৌঁছে গেছে।
সাবেক আফগান বেসামরিক কর্মচারী যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্টকে সতর্ক করে দিয়েছেন যে তালেবানের সাথে যে কোনো আলোচনা বেশ জটিল হবে। ২০২০ সালের প্রত্যাহার চুক্তির পর থেকে এর সমর্থন কেবল চীন, রাশিয়া এবং না ইরান সহ দেশগুলোর অক্ষের মধ্যে রয়েছে। কাবুলে গিয়ে আমেরিকান সম্পদ ফেরত চাওয়াকে দুর্বলতা বলে মনে করেন সুজা। তিনি বলেন, তালেবানরা আমেরিকার এই পদক্ষেপকে সম্মান করে না। সূত্র : ইন্ডিপেন্ডেন্ট