ইসলাম ধর্ম গ্রহণকারী কে এই যুক্তরাষ্ট্রের অ্যাক্টিভিস্ট শন কিং?
- প্রকাশের সময় : ১২:০৭:২৩ পূর্বাহ্ন, মঙ্গলবার, ১২ মার্চ ২০২৪
- / ১৬৫ বার পঠিত
যুক্তরাষ্ট্রের লেখক ও অ্যাক্টিভিস্ট শন কিং ও তার স্ত্রী ইসলাম ধর্ম গ্রহণ করেছেন। স্থানীয় সময় সোমবার (১১ মার্চ) পবিত্র রমজান মাসের প্রথম দিনে ইসলাম গ্রহণ করেছেন তারা। কলেমা শাহাদাত পাঠ করার পর শন বলেছেন, ফিলিস্তিনিদের দেখে অনুপ্রাণিত হয়ে ইসলাম ধর্ম গ্রহণ করেছেন তিনি ও তার স্ত্রী। তুর্কি সংবাদমাধ্যম টিআরটি ওয়ার্ল্ড এই খবর জানিয়েছে।
খবরে বলা হয়েছে, সোমবার ইনস্টাগ্রামের লাইভে তারা কলেমা পড়ে ইসলাম ধর্ম গ্রহণ করেছেন। তাদের কলেমা পাঠ করিয়েছেন শনের ১০ বছরের পুরনো বন্ধু ও যুক্তরাষ্ট্রের মুসলিম স্কলার ওমার সুলেইমানি।
৪৪ বছর বয়সী শন ফিলিস্তিনের গাজাবাসীকে উদ্দেশ করে বলেন, তার এই সিদ্ধান্ত গ্রহণের পেছনে ‘গাজাবাসীর পোহানো ৬ মাসের দুর্ভোগ ও যন্ত্রণা’ রয়েছে। এ সময় তিনি ফিলিস্তিনিদের তৈরি কেফিয়াহ রুমাল পরা ছিলেন।
শন বলেন, ‘এটি আমার হৃদয়কে আরও গভীরভাবে নাড়া দিয়েছে যে পৃথিবীর সবচেয়ে ভয়ংকর ও ট্রমাটিক জায়গা, যেখানে শুধু ধ্বংসস্তূপ আর বেঁচে যাওয়া পরিবারের সদস্যরা ছাড়া প্রায় কিছুই নেই, সেখানে থেকেও মানুষ কীভাবে জীবনের অর্থ ও লক্ষ্য খুঁজে পায়।’
শন আরও বলেন, ‘ইসলামের প্রতি তাদের বিশ্বাস ও আন্তরিকতা শুধু আমারই নয়, বরং বিশ্বের লাখ লাখ মানুষের হৃদয়কেই প্রশস্ত করেছে।’ অবরুদ্ধ গাজা উপত্যকায় ফিলিস্তিনিদের ওপর ইসরায়েলি হামলার প্রকাশ্যেই প্রতিবাদ জানিয়ে আসছেন শন। এই যুদ্ধে এখন পর্যন্ত ৩১ হাজার ১১২ ফিলিস্তিনি নিহত হয়েছেন। তাদের অধিকাংশই নারী ও শিশু। এসময় আহত হয়েছেন আরও ৭২ হাজার ৭৬০ জন।
৭ অক্টোবর থেকে নিয়মিত শন সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে গাজা উপত্যকার ধ্বংসযজ্ঞ তুলে ধরে ইসরায়েলি আগ্রাসন বন্ধের দাবি জানিয়ে আসছিলেন। এমনকি নাটালি রানান (১৭) ও তার মা জুডিথ তাই রানান (৫৯) নামের দুই আমেরিকান জিম্মিকে মুক্ত করার বিষয়ে হামাসের সঙ্গে কাজ করার দাবিও করেছিলেন তিনি। তবে শনের এমন দাবি প্রত্যাখ্যান করেছে ওই পরিবারটি।
ফিলিস্তিনিদের সমর্থন দেওয়ার জেরে ডিসেম্বরে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ইনস্টাগ্রাম তার অ্যাকাউন্ট ব্যান করেছিল। তখন তার অ্যাকাউন্টে ৬০ লাখের বেশি অনুসারী ছিল। মেটা কেন তার অ্যাকাউন্টটি ডিঅ্যাক্টিভেট করে এবং শেষে মুছে ফেলে, এ বিষয়টি এখনও পরিষ্কার নয়।
কে এই শন কিং এবং কেনই বা তিনি ফিলিস্তিনিদের জন্যে লড়ছেন?
বর্ণবাদের শিকার, ঘৃণামূলক অপরাধ
‘স্কুলে থাকাকালীন তার ওপর দিয়ে একটি পিকআপ ট্রাক চালানোর চেষ্টা করে একদল যুবক, পরের এক ঘটনায় এক ডজন স্বঘোষিত ‘রেডনেকস’-এর আক্রমণের শিকার হলে তার মেরুদণ্ডে একাধিক অস্ত্রোপচার করা লাগে। একজন বাইরেসিয়াল শিশু হিসেবে যুক্তরাষ্ট্রের কেনটাকি অঙ্গরাজ্যে বেড়ে ওঠার সময় এসব ঘটনার মুখোমুখি হয়েছিলেন তিনি। নিয়মিত এসব বর্ণবাদের বিরুদ্ধে কথা বলেছিলেন শন।
শন বলেছিলেন, একটি বিশেষ হামলার শিকার হওয়ার পর তার হাইস্কুলের প্রিয় বন্ধু এবং ওই বন্ধুর বাবা যাজক তাকে দেখতে এসেছিলেন। এ ঘটনাটি তখন তাকে ধর্ম বিষয়ক কোনও পেশায় জড়িত হওয়ার কথা ভাবিয়েছিল। শন বলেছিলেন, তিনি একজন পিতৃহীন শিশু হয়ে বেড়ে উঠেছেন এবং ‘এই মানুষটি আমাকে দেখতে আসায় তার দ্বারা এতটাই প্রভাবিত হয়েছিলাম যে আমি তার মতোই হতে চেয়েছিলাম।’ পড়াশোনা শেষে জর্জিয়ার একটি খ্রিষ্টান সেন্টারে যাজক হওয়ার সিদ্ধান্ত নেন তিনি। এর আগে, শন স্বল্প সময়ের জন্য একটি হাইস্কুলে নাগরিকবিদ্যা পড়াতেন এবং আটলান্টার কিশোর বিচার ব্যবস্থায়ও কাজ করতেন।
২০০৮ সালে আটলান্টায় কারিজিয়াস চার্চ নামে একটি গির্জা প্রতিষ্ঠা করেন তিনি। এর জন্য নতুন সদস্য নিয়োগে ক্ষেত্রে প্রায়ই সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমকে ব্যবহার করতেন শন। ফলে ফেসবুকে তিনি ‘ফেসবুক প্যাস্টর’ নামে ব্যাপক পরিচিতি পান। মাত্র চার বছর পর ‘ব্যক্তিগত চাপ এবং বিভ্রান্তিতে’ ভোগার কারণে গির্জা থেকে পদত্যাগ করেন তিনি।
নাগরিক অধিকারের পক্ষে সোচ্চার
ঘৃণামূলক অপরাধের সঙ্গে তার ব্যক্তিগত অভিজ্ঞতার কারণে সামাজিক ন্যায়বিচার প্রতিষ্ঠায় নিজের জীবনকে উৎসর্গ করেছিলেন শন। এর মধ্যে অন্যতম ‘ব্ল্যাক লাইভস ম্যাটার মুভমেন্ট’। তিনি নাগরিক ও মানবাধিকার, জাতিগত সম্পর্ক, পুলিশি বর্বরতা, নির্বিচারে ধরপাকড় এবং আইন প্রয়োগকারীদের অসদাচরণের মতো বিষয়ে লেখালেখির মাধ্যমে প্রতিবাদ করেছিলেন।
এছাড়াও, শন দৈনিক কস, নিউ ইয়র্ক ডেইলি নিউজ এবং দ্য ইয়াং তুর্কসের মতো মিডিয়া আউটলেটগুলোতে নিয়মিত লিখতেন। একটি বিশেষ নিবন্ধে শন কৃষ্ণাঙ্গ কিশোর মাইকেল ব্রাউনের গুলির বিশ্লেষণ করে পুলিশ অফিসার ড্যারেন উইলসনের জীবন হুমকির মধ্যে ছিল, এমন দাবির বিরুদ্ধে যুক্তি দেখিয়েছিলেন।
২০১৭ সালে কৃষ্ণাঙ্গ ব্যক্তি ডিঅ্যান্ড্রে হ্যারিসের ওপর হামলার পিছনে তিন জনকে শনাক্ত ও গ্রেফতার করায় তার অবদান ছিল। এ বিষয়ে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে একটি সফল প্রচারাভিযানের নেতৃত্ব দেওয়ার জন্য কৃতিত্ব লাভ করেছিলেন তিনি।
সমাজকর্মের মাধ্যমে শন গ্রাসরুটস ল প্রজেক্ট নামের একটি অলাভজনক গোষ্ঠী প্রতিষ্ঠা করেছেন। এছাড়া হোপমব.ওআরজি, জাস্টিস টুগেদার, দ্য রিয়েল জাস্টিস পিএসি এবং দ্য নর্থ স্টারসহ বেশ কয়েকটি ইন্টারনেট প্রচারণা, ওয়েবসাইট এবং সংস্থা শুরু করেছিলেন।
যাহোক, তার কিছু কার্যকলাপ বছরের পর বছর ধরে আর্থিক অব্যবস্থাপনা অভিযোগের সম্মুখীন হয়েছে। এমনকি সহকর্মীদের কাছ থেকেও অভিযোগ পেয়েছেন তিনি। শন ও তার স্ত্রী বর্তমানে তাদের পাঁচ সন্তানের সঙ্গে নিউ ইয়র্কে থাকেন। এই সন্তানদের মধ্যে দুজন দত্তক নেওয়া। সূত্র : বাংলা ট্রিবিউন।