বিমানের নিউইয়র্ক ফ্লাইট ঘিরে আবারও অনিশ্চয়তা!
- প্রকাশের সময় : ০১:২৮:২৪ পূর্বাহ্ন, সোমবার, ৩ জুন ২০২৪
- / ১২৬ বার পঠিত
আকাশপথে আমেরিকার নিউইয়র্কের সাথে যুক্ত হতে অনেক দিন ধরেই চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছে ঢাকা। কিন্তু বেসামরিক বিমান চলাচল কর্তৃপক্ষকে (বেবিচক) যুক্তরাষ্ট্রের কর্তৃপক্ষ ক্যাটাগরি-১ এ উন্নীত না করায় এ চেষ্টা এখনো সফলতার মুখ দেখেনি। দেশটিতে ফ্লাইট শুরুর পূর্বশর্তই হলো- বেবিচককে ক্যাটাগরি-১ এ উন্নীত হতে হবে। এরপর বাংলাদেশের বিমান সংস্থাগুলো ফ্লাইট শুরুর জন্য স্টট পেতে আবেদন করতে পারবে। তবে, দেশটির নিয়ন্ত্রক সংস্থার তালিকায় এখনও বেবিচকের অবস্থান ক্যাটাগরি-২।
একসময় নিয়মিত ঢাকা থেকে নিউইয়র্কে ফ্লাইট পরিচালনা করতো বিমান। ২০০৬ সালে নিরাপত্তাজনিত কারণ দেখিয়ে বাংলাদেশকে ক্যাটাগরি-২ এ অবনমন করে দেশটির আকাশপথের নিয়ন্ত্রক সংস্থা এফএএ। এই রুটে ফ্লাইট পরিচালনার জন্য বিমান সে সময় ব্যবহার করত যুক্তরাষ্ট্রের নির্মাতা প্রতিষ্ঠান ম্যাকডোনাল্ড অ্যান্ড ডগলাসের তৈরি ডিসি-১০ মডেলের উড়োজাহাজ।
ম্যাকডোনাল্ড অ্যান্ড ডগলাস তাদের সবশেষ ডিসি-১০ উড়োজাহাজ তৈরি করে ১৯৮৮ সালে। এরপর এটি আমেরিকান আরেক নির্মাতা প্রতিষ্ঠান বোয়িংয়ের সাথে একীভূত হয়ে যায়। এফএএ আমেরিকায় ২০ বছরের পুরোনো উড়োজাহাজ দিয়ে ফ্লাইট পরিচালনার অনুমতি দেয় না।
যুক্তরাষ্ট্র কর্তৃপক্ষের তালিকায় বাংলাদেশের অবনমনের ফলে সে দেশে সরাসরি ফ্লাইট পরিচালনার সুযোগ হারায় বিমান। ক্যাটাগরি-১ এর মর্যাদা পুনরুদ্ধারে বেশ কয়েক বছর ধরেই চেষ্টা চলছে। সেই চেষ্টার অংশ হিসেবে আমেরিকান উড়োজাহাজ নির্মাতা প্রতিষ্ঠান বোয়িংয়ের কাছ থেকে ১২টি নতুন প্রজন্মের উড়োজাহাজও কিনেছে বিমান। নিরাপত্তা ব্যবস্থা জোরদার করা হয়েছে রাজধানী ঢাকার হযরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরের। এখন নতুন করে ইউরোপীয় নির্মাতা এয়ারবাসের কাছ থেকে যে নতুন এ-৩৫০ মডেলের উড়োজাহাজ কেনার কথা চলছে, সেটিও এই নিউইয়র্ক ফ্লাইটকে মাথায় রেখেই। এর মধ্যে এফএএ কর্মকর্তারা কয়েক দফায় বাংলাদেশ সফর করেছেন। নিরীক্ষা করেছেন বিমান ও বেবিচককে। কিন্তু সেসব নিরীক্ষায় সংস্থাটি কী পেয়েছে, তা প্রকাশ্যে জানানো হয়নি। অবশ্য বেবিচকের পক্ষ থেকে এ বিষয়ে ইতিবাচক তথ্য পাওয়ার কথা বিভিন্ন সময় গণমাধ্যমকে জানানো হয়েছে।
বিমান বোয়িংয়ের কাছ থেকে যে উড়োজাহাজগুলো কিনেছে, তার মধ্যে আছে দুটি বোয়িং সেভেন থ্রি সেভেন, চারটি বোয়িং ট্রিপল সেভেন, আর ছয়টি বোয়িং সেভেন এইট সেভেন ড্রিমলাইনার উড়োজাহাজ। এর মধ্যে ট্রিপল সেভেন ও ড্রিমলাইনার উড়োজাহাজগুলো একটানা ১৬ ঘণ্টার বেশি উড়তে সক্ষম। নিউইয়র্কে ফ্লাইট শুরুর অনুমতি পাওয়া যাবে এ আশা করেই এই উড়োজাহাজগুলো কেনা হয়েছিল।
তবে সহসা এই রুটে ফ্লাইট যে শুরু হচ্ছে না, তা বেসামরিক বিমান পরিবহন ও পর্যটনমন্ত্রী মুহাম্মদ ফারুক খানের কথাতেই স্পষ্ট। গত ৩০ মে বৃহস্পতিবার তিনি সাংবাদিকদের জানিয়েছেন, ফ্লাইট শুরু করতে আবারও নতুন পর্যবেক্ষণ দিয়েছে যুক্তরাষ্ট্র কর্তৃপক্ষ ফেডারেল অ্যাভিয়েশন অ্যাডমিনিস্ট্রেশন (এফএএ)। এদিন হযরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরের তৃতীয় টার্মিনাল পরিদর্শন করতে যান বিমানমন্ত্রী। এ সময় তাঁর কাছে জানতে চাওয়া হয়, কবে চালু হতে পারে ঢাকা-নিউইয়র্ক ফ্লাইট?
জবাবে মন্ত্রী বলেন, ‘ঢাকা-নিউইয়র্ক ফ্লাইটের ব্যাপারে তারা (এফএএ) আমাদের কিছু অবজারভেশন দিয়েছে। যখনই তারা এসেছে, আমাদের তিনটা-চারটা অবজারভেশন দিয়েছে, আমরা একটা একটা করে পূরণ করেছি। কখনো সিকিউরিটি নিয়ে, কখনো অন্য ব্যাপারে। কিন্তু, এফএএ কি চায়, সেটি এখনো আমাদের কাছে পরিষ্কার নয়। এটা দুঃখজনক যে তারা একটা করে অবজারভেশন দেয়, পরে আর কিছুই হয় না।’ বিমানমন্ত্রী বলেন, ‘এটা আজকের কথা না, আমি আগেও মন্ত্রী থাকাকালীন যখন বোয়িংয়ের উড়োজাহাজ কিনেছি, তখনও আমরা বলেছিলাম নিউইয়র্কে আমাদের স্লট দিতে হবে। কিন্তু এটি বাস্তবায়িত হয়নি। আমরা চেষ্টা অব্যাহত রাখছি।’
এ ঘটনার পেছনে বাংলাদেশী সংস্থাগুলোর মধ্যে সমন্বয়ের অভাব রয়েছে বলে মনে করছেন অ্যাভিয়েশন বিশেষজ্ঞ ও বিমান পরিচালনা পর্ষদের সাবেক সদস্য কাজী ওয়াহেদুল আলম। তিনি ইনডিপেনডেন্ট ডিজিটালকে বলেন, ‘বিমান একদিকে এয়ারবাসের কাছ থেকে এ-৩৫০ উড়োজাহাজ কিনতে চাচ্ছে নিউইয়র্ককে মাথায় রেখে। অন্যদিকে মন্ত্রী বলছেন, অনিশ্চয়তার কথা।’
কাজী ওয়াহেদুল আলম বলেন, ‘আমি যতটুকু জানি, আমেরিকায় ফ্লাইট শুরুর জন্য এফএএ বাংলাদেশকে ৫টি শর্ত দিয়েছিল। এর মধ্যে দুটো এখনও পূরণ হয়নি। আগামী সেপ্টেম্বরে আরেকটি অডিট হওয়ার কথা রয়েছে। সেখানে এটার অগ্রগতি তুলে ধরার কথা রয়েছে।’
কোনো শর্তগুলো পূরণ হয়নি জানতে চাইলে এই বিশেষজ্ঞ বলেন, ‘যে শর্ত দুটো এখনও পুরণ হয়নি তার মধ্যে একটি ছিল, তারা (এফএএ) বেবিচকের স্বায়ত্বশাসন চেয়েছে। এটা তো এখন সরকার চালায়। তাদের শর্তটা ছিল, নিয়ন্ত্রক সংস্থা হিসেবে বেবিচক স্বাধীনভাবে কাজ করবে। আরেকটি শর্ত ছিল, অপারেটর নিয়ন্ত্রক হতে পারবে না। আমাদের এখানে বিমানবন্দরগুলো বেবিচক চালায়, সেবা তারাই দেয়। আমেরিকার শর্ত হলো, বিমানবন্দরগুলো আলাদা সংস্থার মাধ্যমে অপারেট করবে। তবে এ ছাড়া নতুন কোনো শর্ত দেওয়া হয়েছে কিনা বিষয়টি আমার জানা নেই।’
কাজী ওয়াহেদুল বলেন, ‘আমি যতটুকু জানি, এই শর্তগুলো এখনও পূরণ হয়নি। তবে সরকার বিমানবন্দরগুলো পরিচালনার জন্য আলাদা কোম্পানি করার একটি উদ্যোগ নিচ্ছে। তৃতীয় টার্মিনালে যেমনটা জাপানের সাথে হচ্ছে। এর পেছনে রাজনৈতিক কোনো কারণ আছে বলে আমি মনে করি না। আমেরিকার শর্তপূরণ হলেই তারা ফ্লাইট পরিচালনার অনুমতি দেবে।’
অবশ্য এর মধ্যে ২০১৪ সালে একবার ভাড়ায় আনা উড়োজাহাজ দিয়ে নিউইয়র্ক ফ্লাইট চালুর উদ্যোগ নিয়েছিল বিমান। বিমানের সেই সময়ের ব্যবস্থাপনা পরিচালক কেভিন স্টিল এক সংবাদ সম্মেলনে টিকিট বিক্রির ঘোষণাও দিয়েছিলেন। তার আগের বছর; অর্থাৎ, ২০১৩ সালের ১৭ আগস্ট আমেরিকার সাথে বিমান চলাচলে সমঝোতা স্মারক সই করে বাংলাদেশ। তারপর অবশ্য সে উদ্যোগ আর এগোয়নি।
অবশ্য বিমান নিউইয়র্কে আসতে না পারলেও কানাডার টরন্টোতে ফ্লাইট শুরুর মাধ্যমে উত্তর আমেরিকার সাথে আকাশপথে এরই মধ্যে যুক্ত হয়েছে। রুটটি বর্তমানে বিমানের লাভজনক রুটগুলোর একটি। (আইটিভিবিডি.কম)