নিউইয়র্ক ০৭:৩৩ পূর্বাহ্ন, বৃহস্পতিবার, ১৩ ফেব্রুয়ারী ২০২৫, ১ ফাল্গুন ১৪৩১ বঙ্গাব্দ
বিজ্ঞাপন :
মঙ্গলবারের পত্রিকা সাপ্তাহিক হককথা ও হককথা.কম এ আপনার প্রতিষ্ঠানের বিজ্ঞাপন দিতে যোগাযোগ করুন +1 (347) 848-3834

জন্মসূত্রে নাগরিকত্ব নিয়ে ট্রাম্পের সিদ্ধান্তে অনিশ্চয়তার মধ্যে পড়েছেন হাজারো অভিবাসী বাবা-মা

রিপোর্ট:
  • প্রকাশের সময় : ০২:২০:৫৭ পূর্বাহ্ন, বৃহস্পতিবার, ১৩ ফেব্রুয়ারী ২০২৫
  • / ৩৩ বার পঠিত

নেহা সতপুতে এবং অক্ষয় পিসা তাদের প্রথম সন্তানকে স্বাগত জানানোর সব প্রস্তুতি সেরে রেখেছেন। পেশায় ইঞ্জিনিয়ার এই ভারতীয় দম্পতি এক দশকেরও বেশি সময় ধরে এইচ-১ বি ভিসাতে যুক্তরাষ্ট্রে রয়েছেন। একটা বড় প্রযুক্তি সংস্থায় কাজ করেন এই দম্পতি। নতুন অভিভাবকদের জন্য ছুটির নীতি রয়েছে ওই প্রযুক্তি সংস্থায়, সেই সমস্ত কিছুকে মাথায় রেখেই ধীরে ধীরে ক্যালিফোর্নিয়ার সান জোসেতে নিজেদের জীবন গড়ে তুলেছিলেন তারা। আগামী ২৬শে ফেব্রুয়ারি তাদের আসন্ন পুত্রসন্তান ভূমিষ্ঠ হওয়ার কথা। তাদের আশা ছিল যুক্তরাষ্ট্রের নাগরিক হিসেবে জন্মগ্রহণ করবে তাদের প্রথম সন্তান। কিন্তু প্রেসিডেন্ট ডনাল্ড ট্রাম্পের সাম্প্রতিক নির্বাহী আদেশ তাদের স্বপ্নের পথে বাধা হয়ে দাঁড়িয়েছে।

যুক্তরাষ্ট্রে কর্মরত অস্থায়ী বিদেশি কর্মীদের (যুক্তরাষ্ট্রে) জন্মানো সন্তানদের স্বয়ংক্রিয়ভাবে যুক্তরাষ্ট্রের নাগরিকত্ব না দেয়ার বিষয়ে তিনি আইন করতে চান।এতদিন বাবা-মায়ের অভিবাসন স্ট্যাটাস যাই থাকুক না কেন, তাদের সন্তানদের জন্মসূত্রে যুক্তরাষ্ট্রের নাগরিকত্ব দেয়া হতো। জন্মসূত্রে নাগরিকত্ব পাওয়ার ক্ষেত্রে ট্রাম্প যে পরিবর্তন আনতে চান, সেই সংক্রান্ত মামলায় প্রাথমিকভাবে দুই সপ্তাহের স্থগিতাদেশ দিয়েছিল সিয়াটল আদালত।

সেই মেয়াদ বাড়িয়ে দিয়ে ট্রাম্পের প্রচেষ্টাকে আপাতত আটকে দিয়েছেন মেরিল্যান্ডের একজন ফেডারেল বিচারক। এর অর্থ হলো আদালতে মামলার নিষ্পত্তি না হওয়া পর্যন্ত ওই বিধি কার্যকর করা যাবে না। যদিও উচ্চতর আদালত যে কোনও সিদ্ধান্তকে বদলে দিতে পারে এবং এক্ষেত্রেও সেই আশঙ্কা রয়ে যাচ্ছে। এই বিষয় সংক্রান্ত একাধিক মামলা এবং আইনি চ্যালেঞ্জ, অক্ষয় পিসা এবং তার স্ত্রী নেহার মতো হাজার হাজার মানুষকে অনিশ্চয়তার মধ্যে ফেলে দিয়েছে। এই প্রসঙ্গে অক্ষয় পিসা বলেন, এর সরাসরি প্রভাব আমাদের ওপর পড়েছে। যদি এই বিধি কার্যকর হয়, তাহলে আমরা জানি না এর পরে কী হবে- এটা সম্পূর্ণ ধোঁয়াশার মতো একটা ব্যাপার।

যুক্তরাষ্ট্রে বসবাসকারী অভিবাসী যারা খুব শিগগিরই অভিভাবক হতে চলেছেন, তাদের কাছে সবচেয়ে বড় প্রশ্ন হলো, নতুন বিধি চালু হলে তাদের সন্তানের নাগরিকত্ব কী হবে? তাদের উদ্বেগ বৈধ, নিউইয়র্ক-ভিত্তিক অভিবাসন অ্যাটর্নি সাইরাস মেহতা বলেছেন, ‘ যুক্তরাষ্ট্রের আইনে এখানে জন্মগ্রহণকারী ব্যক্তিকে অ-অভিবাসী মর্যাদা দেওয়ার কোনও বিধান নেই।’ সন্তান জন্মের নির্ধারিত তারিখ যতই এগিয়ে আসছে, ততই উদ্বেগ বাড়ছে নেতা -অক্ষয়ের মতো হবু বাবা -মায়েদের । আসন্ন সন্তানকে নির্ধারিত সময়ের আগেই সি-সেকশনের মাধ্যমে প্রসবের বিষয়ে ডাক্তারের সঙ্গে পরামর্শও করেছেন নেহা এবং অক্ষয়ের মতো অনেকেই। চিকিৎসকদের মতে, যদি সবকিছু ঠিকঠাক থাকে তবে অন্তঃসত্ত্বা নারীরা ৪০ তম সপ্তাহে সন্তান জন্ম দিতে পারেন। যদিও অক্ষয় বলেছেন, ‘আমার অগ্রাধিকার সন্তান যাতে নিরাপদে ভূমিষ্ট হতে পারে এবং আমার স্ত্রীর স্বাস্থ্য ঠিক থাকে। নাগরিকত্ব দ্বিতীয় স্থানে রয়েছে।’ হবু মা নেহা সতপুতে বলেছেন, ‘আমি চাই প্রাকৃতিক নিয়মেই সমস্ত কিছু চলুক।’

আমেরিকান অ্যাসোসিয়েশন অফ ফিজিশিয়ানস অফ ইন্ডিয়ান অরিজিন (এএপিআই) এর সভাপতি ডাঃ সতীশ কাথুলা, প্রাথমিকভাবে সি-সেকশন চাইছে এমন পরিবারগুলোর প্রসূতি বিশেষজ্ঞদের সঙ্গে দেখা করেন। তিনি জানিয়েছেন, নিউ জার্সিতে কয়েকটা ঘটনা ছাড়া বেশিরভাগ চিকিৎসকই এ জাতীয় কোনও বিষয়ের কথা তাকে জানাননি। ওহাইও-ভিত্তিক ডা. সতীশ কাঠুলা বলেছেন, ‘এমন এক দেশে যেখানে কঠোর চিকিৎসা আইন রয়েছে, সেখানে শুধু নাগরিকত্বের জন্য নির্ধারিত সময়ের আগে সি-সেকশন করার বিরুদ্ধে আমি। আমাদের চিকিৎসকরা নীতিবান। চিকিৎসাগতভাবে প্রয়োজন না হলে, তারা কোনোভাবেই তা (সন্তান প্রসবের জন্য অস্ত্রোপচার) করবেন না।’ যুক্তরাষ্ট্রের নাগরিকত্ব অত্যন্ত লোভনীয়, বিশেষ করে দক্ষ H-1B ভিসাধারীদের কাছে। ভারতীয়রা যুক্তরাষ্ট্রে দ্বিতীয় বৃহত্তম অভিবাসী গোষ্ঠী। একটি জন্মগত নাগরিকত্ব আদেশ ভারতীয়দের কঠোরভাবে আঘাত করবে- যুক্তরাষ্ট্রে ৫ মিলিয়নেরও বেশি ভারতীয়দের অ-অভিবাসী ভিসা রয়েছে।

দক্ষিণ এশীয় অভিভাবকরা ট্রাম্পের অর্ডারের প্রভাব এবং পরবর্তী পদক্ষেপ সম্পর্কে উদ্বেগ নিয়ে অনলাইন গোষ্ঠীগুলির কাছে নিরন্তর প্রতিক্রিয়া জানাচ্ছেন। ট্রাম্পের নির্বাহী আদেশে বলা হয়েছে যে, এটি বৈধ স্থায়ী বাসিন্দাদের সন্তানদের যুক্তরাষ্ট্রের নাগরিকত্বের ডকুমেন্টেশন পাওয়ার ক্ষমতাকে প্রভাবিত করবে না। তবে যুক্তরাষ্ট্রে ভারতীয়রা বৈধভাবে স্থায়ী বসবাসের জন্য গ্রিন কার্ড পাওয়ার অপেক্ষায় থাকেন দীর্ঘদিন ধরে। অভিবাসন নীতি বিশ্লেষক স্নেহা পুরী এই বিষয়ে সতর্ক করে দিয়ে বলেছেন, জন্মগত নাগরিকত্বের বিরুদ্ধে বিধি নিষেধ ভারতীয়দের জন্য বেশ সমস্যার কারণ হয়ে দাঁড়াবে। যুক্তরাষ্ট্রে ৫০ লক্ষেরও বেশি ভারতীয়ের নন-ইমিগ্র্যান্ট ভিসাতে (অ-অভিবাসী ভিসায়) রয়েছেন। প্রতি বছর, এইচ-১বি ভিসার ৭২ শতাংশ পেয়ে থাকেন ভারতীয়রা। কেটো ইনস্টিটিউটের তথ্য অনুযায়ী, ২০২৩ সালে গ্রিন কার্ডের জন্য অপেক্ষায় থাকা ব্যক্তিদের মধ্যে ৬২ শতাংশই ভারতীয়। বর্তমানে যারা কর্মসংস্থানভিত্তিক গ্রিন কার্ড পেয়েছেন, সেই ভারতীয়রা ২০১২ সালে এর জন্য আবেদন করেছিলেন। কেটোর ইমিগ্রেশন স্টাডিজের পরিচালক ডেভিড বিয়ারওয়ার্ন জানাচ্ছেন, নতুন ভারতীয় আবেদনকারীদের আজীবন অপেক্ষা করতে হবে। গ্রিন কার্ড পাওয়ার আগেই চার লক্ষ আবেদনকারীর মৃত্যু হবে বলে আশঙ্কা করা হচ্ছে।

প্রসঙ্গত, পিউ রিসার্চ এর তথ্য বিশ্লেষণ বলছে, ২০২২ সালের হিসাব অনুযায়ী, যুক্তরাষ্ট্রে ৭২৫,০০০ কাগজপত্র ছাড়া ভারতীয় অভিবাসী রয়েছে, যা তাদের যুক্তরাষ্ট্রে থাকা নথিপত্রহীন অভিবাসী গোষ্ঠীর তালিকায় তৃতীয় বৃহত্তম গোষ্ঠীতে পরিণত করেছে। অন্যদিকে, মাইগ্রেশন পলিসি ইনস্টিটিউটের হিসাব আবার ভিন্ন। এই প্রতিষ্ঠানের তথ্য বিশ্লেষণ বলছে, এই সংখ্যা তিন লাখ ৭৫ হাজার এবং কাগজ ছাড়া অভিবাসী গোষ্ঠীর তালিকায় ভারতের স্থান পঞ্চম। যুক্তরাষ্ট্রের জনসংখ্যার তিন শতাংশ নথিপত্রহীন অভিবাসী মানুষ। তারাই ভিন্ন দেশে জন্মগ্রহণ করে যারা যুক্তরাষ্ট্রে এসেছেন এমন জনসংখ্যার ২২ শতাংশ।

এইচ-১বি বা ‘ও’ ভিসায় থাকা ভারতীয়দের প্রধান উদ্বেগের বিষয় তাদের সন্তানদের জীবনযাত্রার মান। বিদেশে যুক্তরাষ্ট্রের দূতাবাসে ভিসা স্ট্যাম্প লাগানোর জন্য পর্যায়ক্রমে যুক্তরাষ্ট্র ত্যাগ করতে হয় এই ক্যাটাগরির ভিসায় থাকা ব্যক্তিদের। ভিসা স্ট্যাম্পের উদ্দেশ্যে যাদের নির্দিষ্ট সময়ে ভারতে আসতে হয়, তাদের প্রায়শই অ্যাপয়েন্টমেন্ট পেতে দেরি হয়। যারা এই অভিজ্ঞতার সম্মুখীন হয়েছেন, সেই অভিবাসীরা চান না যে যুক্তরাষ্ট্রের মাটিতে জন্মানো তাদের সন্তানদেরও একই আমলাতান্ত্রিক পদ্ধতির সম্মুখীন হতে হোক। বেশ কয়েক বছর ধরে গ্রিন কার্ডের আবেদনকারী হিসাবে লাইনে দাঁড়িয়ে থাকতে হয়েছে অক্ষয় পিসাকে। তিনি জানেন যুক্তরাষ্ট্রের নাগরিকত্ব জীবনকে কতটা সহজ করে দিতে পারে।

যুক্তরাষ্ট্রের অনেক চিকিৎসক ট্রাম্পের এই সিদ্ধান্তের বিরোধিতা করে জানিয়েছেন গুরুত্বপূর্ণ সেবা প্রদানের ক্ষেত্রে দক্ষ বিদেশি কর্মীরা কী ভূমিকা পালন করেন। ডা. কাঠুলা বলেছেন, ‘উত্তর ও দক্ষিণ ডাকোটার মতো গ্রামীণ অঞ্চলে ভারতীয় চিকিৎসকরা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করেন। তারা না থাকলে স্বাস্থ্যসেবায় এর প্রভাব পড়বে । এখন তারাই নিজেদের সংসার নিয়ে দ্বিধায় ভুগছেন।’ সান জোসের বাসিন্দা প্রিয়ংশি জাজুর সন্তান ভূমিষ্ঠ হওয়ার কথা এপ্রিলে। সম্ভাব্য পরিবর্তন নিয়ে তিনিও দ্বিধায় রয়েছেন । তিনি বলছেন, পাসপোর্টের জন্য আমাদের কি ভারতীয় কনস্যুলেটের সাথে যোগাযোগ করতে হবে? কোন ভিসা প্রযোজ্য? অনলাইনে কোনও তথ্য নেই।’

নেহার কথায় ‘গর্ভাবস্থা এমনিতেই যথেষ্ট স্ট্রেসের। আমরা ভেবেছিলাম, এক দশক পর বিষয়টা হয়তো সহজ হয়ে যাবে। কিন্তু এখন তা আরো জটিল আকার ধারণ করেছে।’ তার স্বামী অক্ষয় যোগ করেছেন, ‘ট্যাক্স প্রদানকারী অভিবাসী হিসাবে, আমাদের শিশু যুক্তরাষ্ট্রের নাগরিকত্ব পাবার যোগ্য – এটিই ছিল আইন তাই না?’ সূত্র : বিবিসি

সোশ্যাল মিডিয়ায় খবরটি শেয়ার করুন

জন্মসূত্রে নাগরিকত্ব নিয়ে ট্রাম্পের সিদ্ধান্তে অনিশ্চয়তার মধ্যে পড়েছেন হাজারো অভিবাসী বাবা-মা

প্রকাশের সময় : ০২:২০:৫৭ পূর্বাহ্ন, বৃহস্পতিবার, ১৩ ফেব্রুয়ারী ২০২৫

নেহা সতপুতে এবং অক্ষয় পিসা তাদের প্রথম সন্তানকে স্বাগত জানানোর সব প্রস্তুতি সেরে রেখেছেন। পেশায় ইঞ্জিনিয়ার এই ভারতীয় দম্পতি এক দশকেরও বেশি সময় ধরে এইচ-১ বি ভিসাতে যুক্তরাষ্ট্রে রয়েছেন। একটা বড় প্রযুক্তি সংস্থায় কাজ করেন এই দম্পতি। নতুন অভিভাবকদের জন্য ছুটির নীতি রয়েছে ওই প্রযুক্তি সংস্থায়, সেই সমস্ত কিছুকে মাথায় রেখেই ধীরে ধীরে ক্যালিফোর্নিয়ার সান জোসেতে নিজেদের জীবন গড়ে তুলেছিলেন তারা। আগামী ২৬শে ফেব্রুয়ারি তাদের আসন্ন পুত্রসন্তান ভূমিষ্ঠ হওয়ার কথা। তাদের আশা ছিল যুক্তরাষ্ট্রের নাগরিক হিসেবে জন্মগ্রহণ করবে তাদের প্রথম সন্তান। কিন্তু প্রেসিডেন্ট ডনাল্ড ট্রাম্পের সাম্প্রতিক নির্বাহী আদেশ তাদের স্বপ্নের পথে বাধা হয়ে দাঁড়িয়েছে।

যুক্তরাষ্ট্রে কর্মরত অস্থায়ী বিদেশি কর্মীদের (যুক্তরাষ্ট্রে) জন্মানো সন্তানদের স্বয়ংক্রিয়ভাবে যুক্তরাষ্ট্রের নাগরিকত্ব না দেয়ার বিষয়ে তিনি আইন করতে চান।এতদিন বাবা-মায়ের অভিবাসন স্ট্যাটাস যাই থাকুক না কেন, তাদের সন্তানদের জন্মসূত্রে যুক্তরাষ্ট্রের নাগরিকত্ব দেয়া হতো। জন্মসূত্রে নাগরিকত্ব পাওয়ার ক্ষেত্রে ট্রাম্প যে পরিবর্তন আনতে চান, সেই সংক্রান্ত মামলায় প্রাথমিকভাবে দুই সপ্তাহের স্থগিতাদেশ দিয়েছিল সিয়াটল আদালত।

সেই মেয়াদ বাড়িয়ে দিয়ে ট্রাম্পের প্রচেষ্টাকে আপাতত আটকে দিয়েছেন মেরিল্যান্ডের একজন ফেডারেল বিচারক। এর অর্থ হলো আদালতে মামলার নিষ্পত্তি না হওয়া পর্যন্ত ওই বিধি কার্যকর করা যাবে না। যদিও উচ্চতর আদালত যে কোনও সিদ্ধান্তকে বদলে দিতে পারে এবং এক্ষেত্রেও সেই আশঙ্কা রয়ে যাচ্ছে। এই বিষয় সংক্রান্ত একাধিক মামলা এবং আইনি চ্যালেঞ্জ, অক্ষয় পিসা এবং তার স্ত্রী নেহার মতো হাজার হাজার মানুষকে অনিশ্চয়তার মধ্যে ফেলে দিয়েছে। এই প্রসঙ্গে অক্ষয় পিসা বলেন, এর সরাসরি প্রভাব আমাদের ওপর পড়েছে। যদি এই বিধি কার্যকর হয়, তাহলে আমরা জানি না এর পরে কী হবে- এটা সম্পূর্ণ ধোঁয়াশার মতো একটা ব্যাপার।

যুক্তরাষ্ট্রে বসবাসকারী অভিবাসী যারা খুব শিগগিরই অভিভাবক হতে চলেছেন, তাদের কাছে সবচেয়ে বড় প্রশ্ন হলো, নতুন বিধি চালু হলে তাদের সন্তানের নাগরিকত্ব কী হবে? তাদের উদ্বেগ বৈধ, নিউইয়র্ক-ভিত্তিক অভিবাসন অ্যাটর্নি সাইরাস মেহতা বলেছেন, ‘ যুক্তরাষ্ট্রের আইনে এখানে জন্মগ্রহণকারী ব্যক্তিকে অ-অভিবাসী মর্যাদা দেওয়ার কোনও বিধান নেই।’ সন্তান জন্মের নির্ধারিত তারিখ যতই এগিয়ে আসছে, ততই উদ্বেগ বাড়ছে নেতা -অক্ষয়ের মতো হবু বাবা -মায়েদের । আসন্ন সন্তানকে নির্ধারিত সময়ের আগেই সি-সেকশনের মাধ্যমে প্রসবের বিষয়ে ডাক্তারের সঙ্গে পরামর্শও করেছেন নেহা এবং অক্ষয়ের মতো অনেকেই। চিকিৎসকদের মতে, যদি সবকিছু ঠিকঠাক থাকে তবে অন্তঃসত্ত্বা নারীরা ৪০ তম সপ্তাহে সন্তান জন্ম দিতে পারেন। যদিও অক্ষয় বলেছেন, ‘আমার অগ্রাধিকার সন্তান যাতে নিরাপদে ভূমিষ্ট হতে পারে এবং আমার স্ত্রীর স্বাস্থ্য ঠিক থাকে। নাগরিকত্ব দ্বিতীয় স্থানে রয়েছে।’ হবু মা নেহা সতপুতে বলেছেন, ‘আমি চাই প্রাকৃতিক নিয়মেই সমস্ত কিছু চলুক।’

আমেরিকান অ্যাসোসিয়েশন অফ ফিজিশিয়ানস অফ ইন্ডিয়ান অরিজিন (এএপিআই) এর সভাপতি ডাঃ সতীশ কাথুলা, প্রাথমিকভাবে সি-সেকশন চাইছে এমন পরিবারগুলোর প্রসূতি বিশেষজ্ঞদের সঙ্গে দেখা করেন। তিনি জানিয়েছেন, নিউ জার্সিতে কয়েকটা ঘটনা ছাড়া বেশিরভাগ চিকিৎসকই এ জাতীয় কোনও বিষয়ের কথা তাকে জানাননি। ওহাইও-ভিত্তিক ডা. সতীশ কাঠুলা বলেছেন, ‘এমন এক দেশে যেখানে কঠোর চিকিৎসা আইন রয়েছে, সেখানে শুধু নাগরিকত্বের জন্য নির্ধারিত সময়ের আগে সি-সেকশন করার বিরুদ্ধে আমি। আমাদের চিকিৎসকরা নীতিবান। চিকিৎসাগতভাবে প্রয়োজন না হলে, তারা কোনোভাবেই তা (সন্তান প্রসবের জন্য অস্ত্রোপচার) করবেন না।’ যুক্তরাষ্ট্রের নাগরিকত্ব অত্যন্ত লোভনীয়, বিশেষ করে দক্ষ H-1B ভিসাধারীদের কাছে। ভারতীয়রা যুক্তরাষ্ট্রে দ্বিতীয় বৃহত্তম অভিবাসী গোষ্ঠী। একটি জন্মগত নাগরিকত্ব আদেশ ভারতীয়দের কঠোরভাবে আঘাত করবে- যুক্তরাষ্ট্রে ৫ মিলিয়নেরও বেশি ভারতীয়দের অ-অভিবাসী ভিসা রয়েছে।

দক্ষিণ এশীয় অভিভাবকরা ট্রাম্পের অর্ডারের প্রভাব এবং পরবর্তী পদক্ষেপ সম্পর্কে উদ্বেগ নিয়ে অনলাইন গোষ্ঠীগুলির কাছে নিরন্তর প্রতিক্রিয়া জানাচ্ছেন। ট্রাম্পের নির্বাহী আদেশে বলা হয়েছে যে, এটি বৈধ স্থায়ী বাসিন্দাদের সন্তানদের যুক্তরাষ্ট্রের নাগরিকত্বের ডকুমেন্টেশন পাওয়ার ক্ষমতাকে প্রভাবিত করবে না। তবে যুক্তরাষ্ট্রে ভারতীয়রা বৈধভাবে স্থায়ী বসবাসের জন্য গ্রিন কার্ড পাওয়ার অপেক্ষায় থাকেন দীর্ঘদিন ধরে। অভিবাসন নীতি বিশ্লেষক স্নেহা পুরী এই বিষয়ে সতর্ক করে দিয়ে বলেছেন, জন্মগত নাগরিকত্বের বিরুদ্ধে বিধি নিষেধ ভারতীয়দের জন্য বেশ সমস্যার কারণ হয়ে দাঁড়াবে। যুক্তরাষ্ট্রে ৫০ লক্ষেরও বেশি ভারতীয়ের নন-ইমিগ্র্যান্ট ভিসাতে (অ-অভিবাসী ভিসায়) রয়েছেন। প্রতি বছর, এইচ-১বি ভিসার ৭২ শতাংশ পেয়ে থাকেন ভারতীয়রা। কেটো ইনস্টিটিউটের তথ্য অনুযায়ী, ২০২৩ সালে গ্রিন কার্ডের জন্য অপেক্ষায় থাকা ব্যক্তিদের মধ্যে ৬২ শতাংশই ভারতীয়। বর্তমানে যারা কর্মসংস্থানভিত্তিক গ্রিন কার্ড পেয়েছেন, সেই ভারতীয়রা ২০১২ সালে এর জন্য আবেদন করেছিলেন। কেটোর ইমিগ্রেশন স্টাডিজের পরিচালক ডেভিড বিয়ারওয়ার্ন জানাচ্ছেন, নতুন ভারতীয় আবেদনকারীদের আজীবন অপেক্ষা করতে হবে। গ্রিন কার্ড পাওয়ার আগেই চার লক্ষ আবেদনকারীর মৃত্যু হবে বলে আশঙ্কা করা হচ্ছে।

প্রসঙ্গত, পিউ রিসার্চ এর তথ্য বিশ্লেষণ বলছে, ২০২২ সালের হিসাব অনুযায়ী, যুক্তরাষ্ট্রে ৭২৫,০০০ কাগজপত্র ছাড়া ভারতীয় অভিবাসী রয়েছে, যা তাদের যুক্তরাষ্ট্রে থাকা নথিপত্রহীন অভিবাসী গোষ্ঠীর তালিকায় তৃতীয় বৃহত্তম গোষ্ঠীতে পরিণত করেছে। অন্যদিকে, মাইগ্রেশন পলিসি ইনস্টিটিউটের হিসাব আবার ভিন্ন। এই প্রতিষ্ঠানের তথ্য বিশ্লেষণ বলছে, এই সংখ্যা তিন লাখ ৭৫ হাজার এবং কাগজ ছাড়া অভিবাসী গোষ্ঠীর তালিকায় ভারতের স্থান পঞ্চম। যুক্তরাষ্ট্রের জনসংখ্যার তিন শতাংশ নথিপত্রহীন অভিবাসী মানুষ। তারাই ভিন্ন দেশে জন্মগ্রহণ করে যারা যুক্তরাষ্ট্রে এসেছেন এমন জনসংখ্যার ২২ শতাংশ।

এইচ-১বি বা ‘ও’ ভিসায় থাকা ভারতীয়দের প্রধান উদ্বেগের বিষয় তাদের সন্তানদের জীবনযাত্রার মান। বিদেশে যুক্তরাষ্ট্রের দূতাবাসে ভিসা স্ট্যাম্প লাগানোর জন্য পর্যায়ক্রমে যুক্তরাষ্ট্র ত্যাগ করতে হয় এই ক্যাটাগরির ভিসায় থাকা ব্যক্তিদের। ভিসা স্ট্যাম্পের উদ্দেশ্যে যাদের নির্দিষ্ট সময়ে ভারতে আসতে হয়, তাদের প্রায়শই অ্যাপয়েন্টমেন্ট পেতে দেরি হয়। যারা এই অভিজ্ঞতার সম্মুখীন হয়েছেন, সেই অভিবাসীরা চান না যে যুক্তরাষ্ট্রের মাটিতে জন্মানো তাদের সন্তানদেরও একই আমলাতান্ত্রিক পদ্ধতির সম্মুখীন হতে হোক। বেশ কয়েক বছর ধরে গ্রিন কার্ডের আবেদনকারী হিসাবে লাইনে দাঁড়িয়ে থাকতে হয়েছে অক্ষয় পিসাকে। তিনি জানেন যুক্তরাষ্ট্রের নাগরিকত্ব জীবনকে কতটা সহজ করে দিতে পারে।

যুক্তরাষ্ট্রের অনেক চিকিৎসক ট্রাম্পের এই সিদ্ধান্তের বিরোধিতা করে জানিয়েছেন গুরুত্বপূর্ণ সেবা প্রদানের ক্ষেত্রে দক্ষ বিদেশি কর্মীরা কী ভূমিকা পালন করেন। ডা. কাঠুলা বলেছেন, ‘উত্তর ও দক্ষিণ ডাকোটার মতো গ্রামীণ অঞ্চলে ভারতীয় চিকিৎসকরা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করেন। তারা না থাকলে স্বাস্থ্যসেবায় এর প্রভাব পড়বে । এখন তারাই নিজেদের সংসার নিয়ে দ্বিধায় ভুগছেন।’ সান জোসের বাসিন্দা প্রিয়ংশি জাজুর সন্তান ভূমিষ্ঠ হওয়ার কথা এপ্রিলে। সম্ভাব্য পরিবর্তন নিয়ে তিনিও দ্বিধায় রয়েছেন । তিনি বলছেন, পাসপোর্টের জন্য আমাদের কি ভারতীয় কনস্যুলেটের সাথে যোগাযোগ করতে হবে? কোন ভিসা প্রযোজ্য? অনলাইনে কোনও তথ্য নেই।’

নেহার কথায় ‘গর্ভাবস্থা এমনিতেই যথেষ্ট স্ট্রেসের। আমরা ভেবেছিলাম, এক দশক পর বিষয়টা হয়তো সহজ হয়ে যাবে। কিন্তু এখন তা আরো জটিল আকার ধারণ করেছে।’ তার স্বামী অক্ষয় যোগ করেছেন, ‘ট্যাক্স প্রদানকারী অভিবাসী হিসাবে, আমাদের শিশু যুক্তরাষ্ট্রের নাগরিকত্ব পাবার যোগ্য – এটিই ছিল আইন তাই না?’ সূত্র : বিবিসি