যুক্তরাষ্ট্রের সহায়তা বন্ধে হুমকির মুখে বাংলাদেশসহ বিশ্বের লাখো মানুষ
- প্রকাশের সময় : ০৩:৪৮:২১ পূর্বাহ্ন, বুধবার, ২৯ জানুয়ারী ২০২৫
- / ৫৩ বার পঠিত
যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের নেতৃত্বে নতুন প্রশাসন দায়িত্ব গ্রহণের মাত্র এক সপ্তাহের মধ্যেই গুরুত্বপূর্ণ প্রতিষ্ঠানগুলোর ওপর ব্যাপক প্রভাব ফেলেছে। এর সর্বশেষ লক্ষ্যবস্তু ছিলো, জীবন রক্ষাকারী আন্তর্জাতিক সাহায্য। যুক্তরাষ্ট্রের পররাষ্ট্রমন্ত্রী মার্কো রুবিওর নির্দেশনা অনুসারে এই সহায়তা সাময়িকভাবে বন্ধের নির্দেশ দেওয়া হয়। এর ফলে, বাংলাদেশসহ বিশ্বের বিভিন্ন প্রান্তে লাখ লাখ মানুষের জীবন হুমকির মুখে পড়েছে।
মানবিক সাহায্যবিষয়ক সংবাদমাধ্যম ডেভেক্সে প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, ২৪ জানুয়ারি যুক্তরাষ্ট্রের পররাষ্ট্র দপ্তরের অফিস অব ফরেন অ্যাসিস্ট্যান্সের নতুন প্রধান পিটার ম্যারোকো এক নির্দেশনা জারি করে সব নতুন ব্যয়ের ওপর স্থগিতাদেশ দেন। একই সঙ্গে, যতক্ষণ না বিদ্যমান সহায়তা যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট ট্রাম্পের নীতিমালার সঙ্গে সামঞ্জস্যপূর্ণ বলে প্রমাণিত না হচ্ছে ততক্ষণ পর্যন্ত বিদ্যমান অনুদান কার্যক্রমও বন্ধ রাখতে বলা হয়।
এই নির্দেশনা ট্রাম্পের প্রথম দিন সই করা ৯০ দিনের সহায়তা তহবিলের স্থগিতাদেশকেও ছাড়িয়ে গেছে। ট্রাম্প প্রশাসনের নির্দেশনার ফলে অনেক সংস্থা তাদের কর্মীদের ছাঁটাই বা সাময়িক ছুটিতে পাঠিয়েছে এবং কার্যক্রম বন্ধ করছে। তবে জরুরি খাদ্য সাহায্য (যা প্রায়ই আমেরিকান কৃষকদের সহায়তা করে) এবং ইসরায়েল ও মিসরের সামরিক সহায়তার ক্ষেত্রে ব্যতিক্রম রাখা হয়েছে। অন্য সাহায্য সংস্থাগুলো ছাড়পত্রের জন্য বা অন্তত কোনো নির্দেশনার জন্য মরিয়া হয়ে চেষ্টা করছে। অনেকেই বিদেশি সাহায্যের বিষয়ে হতাশা প্রকাশ করলেও যুক্তরাষ্ট্রের নাগরিকেরা প্রায়ই এ খাতে সরকারি ব্যয়ের পরিমাণ অতিরঞ্জিত করে ভাবেন। বাস্তবে এটি ফেডারেল বাজেটের ১ শতাংশেরও কম (যা যুক্তরাষ্ট্রের সামরিক ব্যয়ের তুলনায় নগণ্য)।
আন্তর্জাতিক উন্নয়ন সহায়তা পুরোপুরি মানবিক নয়। ইতিহাস দেখিয়েছে, ধনী ও শক্তিশালী দেশগুলোও দারিদ্র্য ও রোগের প্রভাব থেকে নিজেকে রক্ষা করতে পারে না। বিদেশে উন্নয়নে বিনিয়োগ নিরাপত্তাহীনতা ও সংঘাত কমাতে সাহায্য করে, যা সীমান্ত পেরিয়ে প্রভাব বিস্তার করতে পারে। সাহায্য সংস্থাগুলো বিভ্রান্তির মধ্যে রয়েছে এবং এই পর্যালোচনা কীভাবে পরিচালিত হবে বা বন্ধের নির্দেশনা কীভাবে যুক্তরাষ্ট্রের প্রতিশ্রুতিগুলোকে প্রভাবিত করবে, তা জানার চেষ্টা করছে। এরই মধ্যে সুপেয় পানি ও কলেরার মতো রোগ প্রতিরোধের প্রকল্প বন্ধ হওয়ার খবর এসেছে।
সেন্টার ফর গ্লোবাল ডেভেলপমেন্টের গ্লোবাল হেলথ প্রোগ্রামের পরিচালক জাভিয়ের গুজমান বলেন, ‘যুক্তরাষ্ট্র বিশ্বের বৃহত্তম সাহায্যদাতা, যার সহায়তার ওপর লাখ লাখ মানুষে জীবন নির্ভরশীল। এই ধরনের ব্যাঘাতের প্রভাব বিশাল হতে পারে।’ তিনি প্রেসিডেন্টস ইমার্জেন্সি প্ল্যান ফর এইডস রিলিফের (পিইপিএফএআর) মতো প্রকল্পের প্রভাব তুলে ধরেন। এই প্রকল্প ২৫ মিলিয়নেরও বেশি মানুষের জীবন রক্ষা করেছে। গুজমান বলেন, ‘পিইপিএফএআর স্বল্প খরচে জীবন রক্ষাকারী সাহায্যের একটি উদাহরণ, যা তহবিলকে অগ্রাধিকার দেওয়া উচিত।’
অক্সফাম আমেরিকার প্রধান অ্যাবি ম্যাক্সম্যান মন্তব্য করেন, ‘বৈদেশিক উন্নয়ন সহায়তা স্থগিত করে ট্রাম্প প্রশাসন সংকটাপন্ন মানুষদের জীবন ও ভবিষ্যৎ হুমকির মুখে ফেলেছে। এই তহবিল স্থগিতাদেশের ফলে বিশ্বের সবচেয়ে জরুরি মানবিক সংকট মোকাবিলায় নির্ভরশীল মানুষদের ওপর তাৎক্ষণিক প্রভাব পড়বে। এটি বহু মানুষের জন্য জীবন-মৃত্যুর বিষয় হয়ে দাঁড়াতে পারে।’
ম্যাক্সম্যান আরও বলেন, ‘এই সিদ্ধান্তের প্রভাব সারা বিশ্বের সংকটাপন্ন মানুষ এবং বৈশ্বিক সাহায্য ব্যবস্থায় ভয়াবহ প্রতিক্রিয়া ফেলবে। সাহায্য সংস্থাগুলো অনিশ্চয়তার কারণে কার্যক্রম চালাতে বা পরিকল্পনা করতে পারছে না। সুদান, ইয়েমেন, সিরিয়া এবং বাংলাদেশের রোহিঙ্গা শরণার্থীসহ অনেক সংকট প্রবণ এলাকায় ভয়াবহ পরিস্থিতি তৈরি হবে।’ ম্যাক্সম্যান এই সিদ্ধান্ত প্রত্যাহারের আহ্বান জানান এবং তহবিল ও কর্মসূচি অব্যাহত রাখার গুরুত্ব তুলে ধরেন।