ট্রাম্প কি আরও জ্বলে ওঠার ‘রসদ’ পেলেন
- প্রকাশের সময় : ০৭:৩৭:৪৯ পূর্বাহ্ন, বৃহস্পতিবার, ২১ ডিসেম্বর ২০২৩
- / ১১২ বার পঠিত
হককথা ডেস্ক : দ্বিতীয় মেয়াদে যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট হিসেবে ডোনাল্ড ট্রাম্পের প্রচারাভিযান সর্বশেষ কলোরাডোয় আইনি চ্যালেঞ্জের মুখে পড়ল। কিন্তু এই চ্যালেঞ্জই সম্ভবত রিপাবলিকান এই নেতাকে তাঁর দলের মনোনয়ন পাওয়ার ক্ষেত্রে আরও বেশি শক্তির জোগান দেবে।
কলোরাডোর সুপ্রিম কোর্ট এক আদেশে বলেছেন, আগামী বছর অঙ্গরাজ্যটিতে অনুষ্ঠেয় প্রেসিডেন্ট নির্বাচনের প্রাইমারিতে সাবেক প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প অংশ নিতে পারবেন না। এ সিদ্ধান্ত দেওয়ার ক্ষেত্রে কলোরাডো সুপ্রিম কোর্ট যুক্তরাষ্ট্রের সংবিধানে থাকা বিদ্রোহসংক্রান্ত একটি ধারার কথা উল্লেখ করেছেন। এটি যুক্তরাষ্ট্রের সংবিধানের চতুর্দশ সংশোধনীর ৩ নম্বর ধারা। তবে অভূতপূর্ব এ সিদ্ধান্ত রক্ষণশীল নেতৃত্বাধীন যুক্তরাষ্ট্রের সুপ্রিম কোর্টে বাতিল হতে পারে।
ডেমেক্র্যাট ও রিপাবলিকান—উভয় প্রধান দলের দাতা এবং রাজনৈতিক বিশ্লেষকেরা বলেছেন, এ রায় ট্রাম্পের রাজনৈতিক ভিত্তিকে বরং পোক্ত করবে। তাঁর সেই যুক্তিতে ইন্ধন জোগাবে, যা তিনি বলে আসছেন—তিনি পক্ষপাতমূলক আইনি ব্যবস্থার ভুক্তভোগী।
পর্যবেক্ষকদের মতে, ট্রাম্পের প্রচারাভিযানের জন্য দরকারি তহবিল জোগাড়ে সহায়ক হবে আদালতের রায়, যেমনটা এ বছরের শুরুর দিকে হয়েছিল; যখন সাবেক এ প্রেসিডেন্টকে অভিযুক্ত করা হয়েছিল। অন্যান্য কথিত অপরাধের মধ্যে ২০২০ সালের নির্বাচনকে উল্টে দেওয়ার প্রচেষ্টা চালানোর জন্য অপরাধের অভিযোগও ছিল। অবশ্য সেগুলোর মধ্যে ‘বিদ্রোহ’ ছিল না।
ফ্লোরিডার অ্যাটর্নি ও ডেমোক্র্যাট প্রেসিডেন্ট জো বাইডেনের মূল তহবিল সংগ্রহকারীর একজন জন মরগান। তিনি বলছেন, ট্রাম্প (আদালতের রায়) উদ্যাপন করছেন। মরগান মনে করেন, এ ঘটনা রিপাবলিকানদের ‘তহবিল সংগ্রহের বড় কারণ’ হয়ে উঠতে পারে।
কলোরাডোর আদালতের রায়ের বিরুদ্ধে যুক্তরাষ্ট্রের সুপ্রিম কোর্টে আপিল করার কথা জানিয়ে দিয়েছেন ট্রাম্প। দেশটির শীর্ষ আদালতের ৯ বিচারপতির মধ্যে ৬ জনই রক্ষণশীল। এই রক্ষণশীল বিচারপতিদের তিনজন নিয়োগ পেয়েছেন আবার ট্রাম্পের আগের মেয়াদে। অর্থাৎ, ট্রাম্পই তাঁদের নিয়োগ দিয়েছেন।
এর ফলে সেখানে রায় ট্রাম্পের অনুকূলে আসতে পারে বলে ধারণা করা হচ্ছে।
ট্রাম্পের প্রচারাভিযানের পক্ষ থেকে সমর্থকদের কলোরাডোর আদালতের ‘নৃশংস’ এ সিদ্ধান্তের বিরুদ্ধে লড়াই চালিয়ে যাওয়ার জন্য অনুদান দেওয়ার আহ্বান জানানো হয়েছে। সাম্প্রতিক রয়টার্স–ইপসোসের এক জরিপ বলছে, ২০২৪–এর নির্বাচনের আগে ৭৭ বছর বয়সী ট্রাম্প বর্তমান প্রেসিডেন্ট বাইডেনের চেয়ে সামান্য এগিয়ে আছেন।
অবশ্য কলোরাডোর আদালতের রায় ডেমোক্র্যাটদের অন্যভাবে সাহায্য করতে পারে। স্বাধীন ভোটাররা বরাবরই নির্বাচনে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখে। তাঁদের মধ্যে যাঁরা বিশ্বাস করেন যে ট্রাম্প বিদ্রোহে জড়িত, তাঁদের প্রতি ডেমোক্র্যাটরা নতুন করে বিষয়টি ভেবে দেখার আবেদন জানাতে পারেন।
৫ থেকে ১১ ডিসেম্বর পরিচালিত রয়টার্স–ইপসোসের করা এক জরিপ অনুযায়ী, ৫৭ শতাংশ স্বাধীন ভোটার বলেছেন, এটি বিশ্বাসযোগ্য যে ট্রাম্প ‘২০২১ সালের ৬ জানুয়ারি যুক্তরাষ্ট্রের ক্যাপিটলে আক্রমণ করার জন্য জনতাকে উসকে দেওয়ার চেষ্টা করেছিলেন।’ জরিপে অংশ নেওয়া মাত্র ৩০ শতাংশ ব্যক্তি বলেছেন, বিষয়টি বিশ্বাসযোগ্য নয়।
এর বিপরীতে প্রায় ৭০ শতাংশ রিপাবলিকান উত্তরদাতারা এ অভিযোগকে ‘বিশ্বাসযোগ্য নয়’ বলে মনে করেন। যেখানে ২৩ শতাংশ রিপাবলিকান বলেছেন, এটি বিশ্বাসযোগ্য। বাকিরা নিশ্চিত নন বলে জানিয়েছেন।
ডেমোক্র্যাট ও রিপাবলিকান—উভয় প্রধান দলের দাতা এবং রাজনৈতিক বিশ্লেষকেরা বলেছেন, এ রায় ট্রাম্পের রাজনৈতিক ভিত্তিকে বরং পোক্ত করবে। তাঁর সেই যুক্তিতে ইন্ধন জোগাবে, যা তিনি বলে আসছেন—তিনি পক্ষপাতমূলক আইনি ব্যবস্থার ভুক্তভোগী।
কলোরাডো আদালতের রায় ঘোষণার পরদিন বুধবার বাইডেনের কাছে জানতে চাওয়া হয়, ট্রাম্প একজন বিদ্রোহী কি না। উত্তরে তিনি বলেন, এর স্বপক্ষে প্রমাণ আছে। আপনারা সব দেখেছেন।
‘১৪তম সংশোধনী প্রযোজ্য হোক বা না হোক, আমরা আদালতকে সেই সিদ্ধান্ত নিতে দেব’, বলেন বাইডেন। তাঁর ভাষায়, ‘তবে তিনি (ট্রাম্প) অবশ্যই একটি বিদ্রোহকে সমর্থন করেছিলেন। এটি নিয়ে কোনো প্রশ্ন নেই। একেবারেই নেই, শূন্য এবং মনে হচ্ছে, তিনি এটিকে (বিদ্রোহ) দ্বিগুণ করছিলেন।’
প্রাইমারিতে ধাক্কা
রিপাবলিকানদের মধ্যে মনোনয়ন পাওয়ার ক্ষেত্রে ট্রাম্পের জনপ্রিয়তা তুঙ্গে। কলোরাডোর বাধা এর কোনো হেরফের ঘটাবে না। যে অঙ্গরাজ্যে গণতান্ত্রিক প্রবণতা বাড়ছে, আগামী বছরের সাধারণ নির্বাচনে সেটিকে প্রতিদ্বন্দ্বিতামূলক হিসেবে দেখা হচ্ছে না।
আগামী ১৫ জানুয়ারি আইওয়া থেকে রিপাবলিকানদের মনোনয়নপ্রক্রিয়া শুরু হওয়ার কথা। এর এক মাসের কম সময় আগে আদালতের এ সিদ্ধান্ত এল, যখন ট্রাম্প তাঁর ওপর ‘স্পটলাইট’ ফেরানোর চেষ্টা করছেন। অন্যদিকে রিপাবলিকানদের মনোনয়ন–দৌড়ে থাকা জাতিসংঘের সাবেক রাষ্ট্রদূত নিকি হ্যালি যখন কিছুটা পাদপ্রদীপের আলোয় এসেছেন।
ফ্লোরিডাভিত্তিক রিপাবলিকান বিশ্লেষক ফোর্ড ও’কনেলের ভাষায়, ট্রাম্প দীর্ঘদিন ধরে বলে আসছেন, তিনি রাজনৈতিকভাবে উদ্দেশ্যপ্রণোদিত আইনি প্রক্রিয়ার শিকার হয়ে আসছেন। আদালতের এ রায় ট্রাম্পের এমন বয়ানকেই বরং শক্তিশালী করবে। এতে করে সিদ্ধান্তহীন রিপাবলিকান ভোটারদের তাঁর (ট্রাম্প) দিকে ঠেলে দিতে পারে।
ও’কনেল বলেন, যদি অভিযোগের বিষয়টি ট্রাম্পকে প্রাইমারিতে উল্লেখযোগ্যভাবে এগিয়ে দেয়, তবে ২০২৪ সালের রিপাবলিকান মনোনীত প্রার্থী কে হবেন, সে সম্পর্কে তৃণমূলের মধ্যে সব ধরনের বিতর্কের অবসান ঘটাবে।
ট্রাম্পের আগের মামলাগুলোর সময়ও যেমনটা দেখা গেছে, এবারও রিপাবলিকান থেকে মনোনয়নের দৌড়ে থাকা ট্রাম্পের প্রতিদ্বন্দ্বীরা কলোরাডোর আদালতের সিদ্ধান্ত থেকে লাভবান হওয়ার পরিবর্তে বরং তাঁর প্রতিরক্ষায় ঝাঁপিয়ে পড়েছেন।
ফ্লোরিডার গভর্নর রন ডিস্যান্টিস সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম এক্সে (সাবেক টুইটার) লিখেছেন, বামপন্থীরা ‘গণতন্ত্র’কে তার ক্ষমতার ব্যবহারের ন্যায্যতা দেওয়ার জন্য আহ্বান জানান, এমনকি যদি জাল আইনি ভিত্তিতে একজন প্রার্থীকে সরিয়ে দেওয়ার জন্য বিচারিক ক্ষমতার অপব্যবহার করা হয়, তাতেও তাঁদের অবস্থানের পরিবর্তন হয় না।
নিকি হ্যালি আদালতের এ রায়কে ‘সত্যিই অকল্পনীয়’ বলে অভিহিত করেন। ফক্স নিউজকে তিনি বলেন, ‘আমি নিজেই ডোনাল্ড ট্রাম্পকে পরাজিত করতে যাচ্ছি।’ তাঁর ভাষায়, ‘তাঁকে (ট্রাম্প) ব্যালট থেকে সরানোর জন্য আমার বিচারকের দরকার নেই।’
কলোরাডোর সুপ্রিম কোর্ট সাত বিচারপতির বেঞ্চের সংখ্যাগরিষ্ঠ মতের (৪-৩) ভিত্তিতে রুল দিয়ে বলেছেন, সাবে যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প যোগ্য প্রার্থী নন। আদালত বলেন, ভয় বা অনুগ্রহ ছাড়া এবং আইন যে সিদ্ধান্তে পৌঁছাতে বাধ্য করে, জনসাধারণের প্রতিক্রিয়া দ্বারা প্রভাবিত না হয়ে তাঁরা এ সিদ্ধান্তে পৌঁছেছেন।
হককথা/নাছরিন