নিউইয়র্ক ০৯:০৭ পূর্বাহ্ন, মঙ্গলবার, ১১ ফেব্রুয়ারী ২০২৫, ২৯ মাঘ ১৪৩১ বঙ্গাব্দ
বিজ্ঞাপন :
মঙ্গলবারের পত্রিকা সাপ্তাহিক হককথা ও হককথা.কম এ আপনার প্রতিষ্ঠানের বিজ্ঞাপন দিতে যোগাযোগ করুন +1 (347) 848-3834

যুক্তরাষ্ট্রে জন্মসূত্রে নাগরিকত্ব বাতিল, অন্যদের অবস্থান কী

রিপোর্ট:
  • প্রকাশের সময় : ০৩:১৫:২৩ পূর্বাহ্ন, মঙ্গলবার, ১১ ফেব্রুয়ারী ২০২৫
  • / ৫৫ বার পঠিত

জন্মসূত্রে নাগরিকত্ব পাওয়ার নিয়ম বাতিল করে নির্বাহী আদেশ দিয়েছেন যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট ডনাল্ড ট্রাম্প। এই আদেশ বেশ কিছু রাজ্য থেকে চ্যালেঞ্জ জানিয়ে আদালতে আর্জি জানানো হয়েছে। অন্যদিকে অভিবাসী পরিবারগুলোতে দেখা দিয়েছে উদ্বেগ। তবে অন্য রাষ্ট্র এ বিষয়ে কী চায় সেটিই এখন মূল প্রশ্ন। এতদিন যুক্তরাষ্ট্রে জন্ম নেয়া শিশুদের নাগরিকত্ব দিয়ে এসেছে। সংবিধানের ১৪তম সংশোধনীর মাধ্যমে এ নিয়ম ১৬০ বছর ধরে চালু আছে সেখানে। তবে সমগ্র বিশ্ব এ নিয়মে চলে না। এশিয়া, আফ্রিকা বা ইউরোপের বেশির ভাগ দেশেই পিতা-মাতার জাতীয়তার ভিত্তিতে শিশুর নাগরিকত্ব নির্ধারিত হয়।

এদিকে দ্বিতীয় মেয়াদে দায়িত্ব গ্রহণ করার পর জন্মসূত্রে নাগরিকত্বের নিয়ম বাতিল করেছেন ট্রাম্প। অভিবাসীর সংখ্যা হ্রাসের পরিকল্পনার অংশ হিসেবে জন্মসূত্রে নাগরিকত্ব দেয়ার নিয়ম বাতিল করেছেন ট্রাম্প। যদিও তার এমন পদক্ষেপ ইতিমধ্যে দেশটির জনগণের সমর্থন পেয়েছে। এ খবর দিয়েছে অনলাইন বিবিসি। জন্মসূত্রে প্রায় ৩০টি দেশ শিশুর নাগরিকত্ব দেয়। এর মধ্যে যুক্তরাষ্ট্র অন্যতম। তবে যুক্তরাষ্ট্রের ভেতরেই অনেক রাজ্য আছে, যেখানে তারা নিজেদের মতো করে প্রয়োগ করে এসব বিধান। তবে এশিয়া, ইউরোপ ও আফ্রিকার বেশ কিছু দেশ এ নিয়মের বিপরীতে চলে। সেখানে রক্তের সম্পর্ক অর্থাৎ পিতা-মাতার জাতীয়তা অনুযায়ী শিশুদের জাতীয়তা নির্ধারিত হয়। এক্ষেত্রে জন্মস্থানের ওপর তাদের জাতীয়তা নির্ধারিত হয় না। কিছু কিছু দেশে অবশ্য দুই নিয়মের সংমিশ্রণে চলে। স্বাভাবিক নিয়মে সেখানে স্থায়ী বাসিন্দাদের সন্তানরাও নাগরিকত্ব পেয়ে থাকে।

ক্যালিফোর্নিয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের সমাজবিজ্ঞানের প্রফেসর জন স্ক্রেনটি বিশ্বাস করেন, যদিও জন্মসূত্রে নাগরিকত্ব পাওয়া যুক্তরাষ্ট্র জুড়ে খুবই স্বাভাবিক বিষয়। তবে কিছু রাজ্য আছে, যেখানে তারা তাদের মতো করে এই নিয়ম ব্যবহার করে। উদাহরণস্বরূপ কোনো কোনো রাজ্য দাস বা সাবেক দাসদের এর আওতায় এনেছে। তিনি বলেন, ইতিহাস খুব জটিল বিষয়। যুক্তরাষ্ট্রে ১৪তম সংশোধনী গৃহীত হয়েছিল মুক্ত ক্রীতদাসদের অবস্থান পরিষ্কার করার জন্য। তবে সাবেক কলোনি থেকে জাতি-রাষ্ট্র গঠন করা ছিল সবার মূল উদ্দেশ্য- এমন যুক্তি তুলে ধরেন মি. স্ক্রেনটি। তিনি বলেন, দেশকে শাসনযোগ্য করতে কাদেরকে দেশে প্রবেশ করতে দেয়া হবে আর কাদের বের করতে হবে- এ বিষয়ে আরও কৌশলী হওয়া উচিত ছিল। সম্প্রতি বেশ কিছু দেশ অভিবাসী সমস্যা, জাতীয় পরিচয় ও বার্থ ট্যুরিজম (যেখানে সন্তান জন্ম দেয়ার উদ্দেশ্যে ভ্রমণ করা হয়) সমস্যার কারণে তাদের নাগরিকত্ব আইন সংশোধন করেছে। উদাহরণস্বরূপ, ভারত একবার ওই দেশে জন্ম নেয়া শিশুদের জন্মসূত্রে নাগরিকত্ব দেয়ার নিয়ম চালু করে। তবে সময়ের বিবর্তনে অবৈধ অভিবাসী বেড়ে যাওয়ায় উদ্বেগ দেখা দেয়। এর ফলে সেখানে জন্ম নেয়া শিশুর নাগরিকত্ব সীমাবদ্ধ করা হয়। ২০০৪ সালের ডিসেম্বর থেকে চলা নিয়ম অনুযায়ী একজন শিশু তখনই ভারতের নাগরিকত্ব পাবে যখন তার পিতা-মাতা উভয়ই ভারতের নাগরিক।

এ ছাড়া পিতা-মাতার একজন ভারতীয় বা অপরজন অবৈধ অভিবাসী হিসেবে গণ্য না হলে নাগরিকত্ব দেয়া হয়। ঔপনিবেশিক আমলে অনেক আফ্রিকান দেশ জন্মসূত্রে নাগরিকত্ব দেয়ার নিয়ম মেনে চললেও স্বাধীনতা পাওয়ার পর তারা সে নিয়ম বাতিল করে। বর্তমানে ওই দেশগুলোতে নাগরিকত্ব পাওয়ার জন্য হয় পিতা-মাতার কোনো একজনকে ওই দেশের নাগরিক বা স্থায়ী বাসিন্দা হতে হবে। চীন, মালয়েশিয়া ও সিঙ্গাপুরের মতো দেশে নাগরিকত্ব পাওয়ার বিষয়টি আরও সীমাবদ্ধ। ইউরোপেও এ বিষয়ে উল্লেখযোগ্য পরিবর্তন লক্ষ্য করা হয়েছে। ইউরোপে আয়ারল্যান্ডই সর্বশেষ দেশ যেখানে অনিয়ন্ত্রিত জন্মসূত্রে নাগরিকত্বের বিষয়টিতে অনুমতি দেয়। ২০০৪ সালের জুনের নির্বাচনের পর ওই নীতি বাতিল করা হয়। ওই নির্বাচনে ৭৯ শতাংশ মানুষ সংবিধান সংশোধনের পক্ষে ভোট দেয়, যেখানে নাগরিকত্ব পাওয়ার জন্য পিতা-মাতার একজনকে ওই দেশের নাগরিক বা স্থায়ী বাসিন্দা হতে হয়। সূত্র : মানবজমিন।

 

সোশ্যাল মিডিয়ায় খবরটি শেয়ার করুন

যুক্তরাষ্ট্রে জন্মসূত্রে নাগরিকত্ব বাতিল, অন্যদের অবস্থান কী

প্রকাশের সময় : ০৩:১৫:২৩ পূর্বাহ্ন, মঙ্গলবার, ১১ ফেব্রুয়ারী ২০২৫

জন্মসূত্রে নাগরিকত্ব পাওয়ার নিয়ম বাতিল করে নির্বাহী আদেশ দিয়েছেন যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট ডনাল্ড ট্রাম্প। এই আদেশ বেশ কিছু রাজ্য থেকে চ্যালেঞ্জ জানিয়ে আদালতে আর্জি জানানো হয়েছে। অন্যদিকে অভিবাসী পরিবারগুলোতে দেখা দিয়েছে উদ্বেগ। তবে অন্য রাষ্ট্র এ বিষয়ে কী চায় সেটিই এখন মূল প্রশ্ন। এতদিন যুক্তরাষ্ট্রে জন্ম নেয়া শিশুদের নাগরিকত্ব দিয়ে এসেছে। সংবিধানের ১৪তম সংশোধনীর মাধ্যমে এ নিয়ম ১৬০ বছর ধরে চালু আছে সেখানে। তবে সমগ্র বিশ্ব এ নিয়মে চলে না। এশিয়া, আফ্রিকা বা ইউরোপের বেশির ভাগ দেশেই পিতা-মাতার জাতীয়তার ভিত্তিতে শিশুর নাগরিকত্ব নির্ধারিত হয়।

এদিকে দ্বিতীয় মেয়াদে দায়িত্ব গ্রহণ করার পর জন্মসূত্রে নাগরিকত্বের নিয়ম বাতিল করেছেন ট্রাম্প। অভিবাসীর সংখ্যা হ্রাসের পরিকল্পনার অংশ হিসেবে জন্মসূত্রে নাগরিকত্ব দেয়ার নিয়ম বাতিল করেছেন ট্রাম্প। যদিও তার এমন পদক্ষেপ ইতিমধ্যে দেশটির জনগণের সমর্থন পেয়েছে। এ খবর দিয়েছে অনলাইন বিবিসি। জন্মসূত্রে প্রায় ৩০টি দেশ শিশুর নাগরিকত্ব দেয়। এর মধ্যে যুক্তরাষ্ট্র অন্যতম। তবে যুক্তরাষ্ট্রের ভেতরেই অনেক রাজ্য আছে, যেখানে তারা নিজেদের মতো করে প্রয়োগ করে এসব বিধান। তবে এশিয়া, ইউরোপ ও আফ্রিকার বেশ কিছু দেশ এ নিয়মের বিপরীতে চলে। সেখানে রক্তের সম্পর্ক অর্থাৎ পিতা-মাতার জাতীয়তা অনুযায়ী শিশুদের জাতীয়তা নির্ধারিত হয়। এক্ষেত্রে জন্মস্থানের ওপর তাদের জাতীয়তা নির্ধারিত হয় না। কিছু কিছু দেশে অবশ্য দুই নিয়মের সংমিশ্রণে চলে। স্বাভাবিক নিয়মে সেখানে স্থায়ী বাসিন্দাদের সন্তানরাও নাগরিকত্ব পেয়ে থাকে।

ক্যালিফোর্নিয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের সমাজবিজ্ঞানের প্রফেসর জন স্ক্রেনটি বিশ্বাস করেন, যদিও জন্মসূত্রে নাগরিকত্ব পাওয়া যুক্তরাষ্ট্র জুড়ে খুবই স্বাভাবিক বিষয়। তবে কিছু রাজ্য আছে, যেখানে তারা তাদের মতো করে এই নিয়ম ব্যবহার করে। উদাহরণস্বরূপ কোনো কোনো রাজ্য দাস বা সাবেক দাসদের এর আওতায় এনেছে। তিনি বলেন, ইতিহাস খুব জটিল বিষয়। যুক্তরাষ্ট্রে ১৪তম সংশোধনী গৃহীত হয়েছিল মুক্ত ক্রীতদাসদের অবস্থান পরিষ্কার করার জন্য। তবে সাবেক কলোনি থেকে জাতি-রাষ্ট্র গঠন করা ছিল সবার মূল উদ্দেশ্য- এমন যুক্তি তুলে ধরেন মি. স্ক্রেনটি। তিনি বলেন, দেশকে শাসনযোগ্য করতে কাদেরকে দেশে প্রবেশ করতে দেয়া হবে আর কাদের বের করতে হবে- এ বিষয়ে আরও কৌশলী হওয়া উচিত ছিল। সম্প্রতি বেশ কিছু দেশ অভিবাসী সমস্যা, জাতীয় পরিচয় ও বার্থ ট্যুরিজম (যেখানে সন্তান জন্ম দেয়ার উদ্দেশ্যে ভ্রমণ করা হয়) সমস্যার কারণে তাদের নাগরিকত্ব আইন সংশোধন করেছে। উদাহরণস্বরূপ, ভারত একবার ওই দেশে জন্ম নেয়া শিশুদের জন্মসূত্রে নাগরিকত্ব দেয়ার নিয়ম চালু করে। তবে সময়ের বিবর্তনে অবৈধ অভিবাসী বেড়ে যাওয়ায় উদ্বেগ দেখা দেয়। এর ফলে সেখানে জন্ম নেয়া শিশুর নাগরিকত্ব সীমাবদ্ধ করা হয়। ২০০৪ সালের ডিসেম্বর থেকে চলা নিয়ম অনুযায়ী একজন শিশু তখনই ভারতের নাগরিকত্ব পাবে যখন তার পিতা-মাতা উভয়ই ভারতের নাগরিক।

এ ছাড়া পিতা-মাতার একজন ভারতীয় বা অপরজন অবৈধ অভিবাসী হিসেবে গণ্য না হলে নাগরিকত্ব দেয়া হয়। ঔপনিবেশিক আমলে অনেক আফ্রিকান দেশ জন্মসূত্রে নাগরিকত্ব দেয়ার নিয়ম মেনে চললেও স্বাধীনতা পাওয়ার পর তারা সে নিয়ম বাতিল করে। বর্তমানে ওই দেশগুলোতে নাগরিকত্ব পাওয়ার জন্য হয় পিতা-মাতার কোনো একজনকে ওই দেশের নাগরিক বা স্থায়ী বাসিন্দা হতে হবে। চীন, মালয়েশিয়া ও সিঙ্গাপুরের মতো দেশে নাগরিকত্ব পাওয়ার বিষয়টি আরও সীমাবদ্ধ। ইউরোপেও এ বিষয়ে উল্লেখযোগ্য পরিবর্তন লক্ষ্য করা হয়েছে। ইউরোপে আয়ারল্যান্ডই সর্বশেষ দেশ যেখানে অনিয়ন্ত্রিত জন্মসূত্রে নাগরিকত্বের বিষয়টিতে অনুমতি দেয়। ২০০৪ সালের জুনের নির্বাচনের পর ওই নীতি বাতিল করা হয়। ওই নির্বাচনে ৭৯ শতাংশ মানুষ সংবিধান সংশোধনের পক্ষে ভোট দেয়, যেখানে নাগরিকত্ব পাওয়ার জন্য পিতা-মাতার একজনকে ওই দেশের নাগরিক বা স্থায়ী বাসিন্দা হতে হয়। সূত্র : মানবজমিন।