গাজায় জনসাধারণকে হত্যার জন্য ইসরায়েলকে তিরস্কার
- প্রকাশের সময় : ০৭:৩৪:২০ পূর্বাহ্ন, বৃহস্পতিবার, ৮ ফেব্রুয়ারী ২০২৪
- / ৭২ বার পঠিত
হককথা ডেস্ক : ইসরায়েলকে অমানবিকতা চালানোর লাইসেন্স দেওয়া হয়নি বলে জানিয়েছেন যুক্তরাষ্ট্রের পররাষ্ট্রমন্ত্রী অ্যান্টনি ব্লিঙ্কেন। বুধবার তিনি ইসরায়েল সফর করেন। সেখানে তিনি হামাসের বিরুদ্ধে যুদ্ধ করতে গিয়ে গাজায় জনসাধারণকে হত্যার জন্য ইসরায়েলকে তিরস্কার করেন। এদিন ইসরায়েলকে সতর্ক করে দেন ব্লিঙ্কেন।
তেল আবিবে সংবাদ সম্মেলনে ব্লিঙ্কেন বলেন, ৭ অক্টোবর ইসরায়েলিদের ওপর অমানবিক আচরণ করা হয়েছিল। গাজায় থাকা জিম্মিদের ওপরও অমানবিকতা দেখানো হচ্ছে। তবে এটি অন্যদের ওপর অমানবিকতা পরিচালনার লাইসেন্স হতে পারে না।
টাইমস অব ইসরায়েলের খবরে বলা হয়েছে যে, হোয়াইট হাউজ গাজা উপত্যকায় বেসামরিক হতাহত এবং যুদ্ধের সময় সেখানে মানবিক পরিস্থিতি নিয়ে ইসরায়েলের প্রতি অসন্তোষ গোপন করেনি। তবে বুধবারের সমালোচনা ছিল আজ পর্যন্ত সবচেয়ে কঠোর।
ব্লিঙ্কেন ইসরায়েলের রাজনৈতিক ও সামরিক নেতৃত্বের সঙ্গে দীর্ঘ বৈঠকের পর এমন মন্তব্য করেন। ব্লিঙ্কেন বলেন, গাজার সিংহভাগ মানুষের ৭ অক্টোবরের হামলার সঙ্গে কোনো সম্পর্ক নেই।
তিনি বলেন, গাজার পরিবারগুলো নির্ভর করছে সাহায্যের ওপর। তারা আমাদের মতই পরিবার। তারা হলেন- বাবা, মা, ছেলে এবং মেয়ে। তারা একটি ভালো জীবিকা অর্জন করতে চান। তারা বাচ্চাদের স্কুলে পাঠাতে চান এবং স্বাভাবিক জীবনযাপন করতে চান।
ব্লিঙ্কেন বলেন, তাদের ওপর থেকে দৃষ্টি সরানো উচিত নয়। আমরা আমাদের সাধারণ মানবিকতার দৃষ্টি হারাতে পারি না। এটি করা উচিত নয়।
যুক্তরাষ্ট্রের পররাষ্ট্রমন্ত্রী জানান, যুক্তরাষ্ট্র গাজায় বেসামরিক সুরক্ষা শক্তিশালী করতে সুনির্দিষ্ট উপায়ে এবং অভাবীদের সহায়তা পৌঁছে দিতে ইসরায়েলকে চাপ দেওয়া অব্যাহত রেখেছে। ব্লিঙ্কেন বলেন, ইসরায়েল এ বিষয়ে সম্মত হওয়ায় গাজায় নভেম্বরের শেষদিক থেকে সাহায্য প্রবেশ করছে। এটি এখন আগের চেয়ে অনেক বেশি পরিমাণে প্রবেশ করছে।
গাজায় ইসরায়েলের হামলা শুরুর পর প্রথমবারের মতো ইরেজ ক্রসিং চালু করার আহ্বান জানান ব্লিঙ্কেন। তিনি বলেন, ইসরায়েলকে নিশ্চিত করতে হবে যে গাজায় জীবন রক্ষাকারী সহায়তা বিতরণ কোনো কারণে কারও দ্বারা অবরুদ্ধ হবে না।
গাজায় প্রবেশের জন্য মিশরের রাফাহ সীমান্ত ক্রসিং ছাড়া বাকি সবগুলো ইসরায়েলের ভেতর দিয়ে রয়েছে। ব্লিঙ্কেন বলেন, গাজায় ইসরায়েলের অভিযানে নিরীহ বেসামরিক লোকদের হতাহতের সংখ্যা এখনও অনেক বেশি। এদিন ব্লিঙ্কেন ইসরায়েলের পাশাপাশি একটি স্বাধীন ফিলিস্তিন রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠার জন্য একটি সুনির্দিষ্ট ও অপরিবর্তনীয় পথ তৈরির আহ্বান জানান। তিনি বলেন, এটি হলে উভয়েই শান্তিতে বসবাস করতে পারবে।
এছাড়া ফিলিস্তিনের পশ্চিম তীরকেন্দ্রিক সরকারের প্রেসিডেন্ট মাহমুদ আব্বাসের সঙ্গেও বৈঠক করেন অ্যান্টনি ব্লিঙ্কেন। এ সময় তিনি স্বাধীন ফিলিস্তিন রাষ্ট্রের প্রতি যুক্তরাষ্ট্রের সমর্থন পুনর্ব্যাক্ত করেন। আল জাজিরা বলছে, মাহমুদ আব্বাস সরকারের ক্ষমতা বাস্তবে খুব বেশি নয়। তারা ইসরায়েলি সামরিক বাহিনীর নিয়ন্ত্রণে কাজ করে।
এদিকে যুক্তরাষ্ট্রের সিনেটর এলিজাবেথ ওয়ারেন ইসরায়েলের নেতানিয়াহুর জন্য ‘ব্ল্যাঙ্ক চেক’ বন্ধ করার আহ্বান জানিয়েছেন। তিনি বলেন, যুক্তরাষ্ট্রকে ইসরায়েলের প্রধানমন্ত্রী বেনিয়ামিন নেতানিয়াহুর সরকারকে ‘ব্ল্যাঙ্ক চেক’ প্রদান বন্ধ করতে হবে।
সিনেটর ওয়ারেন সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম এক্সে বলেন, ‘নেতানিয়াহুর জন্য আর কোনো ব্ল্যাঙ্ক চেক নেই। আমাদের শর্তসাপেক্ষে সাহায্য করতে হবে। যুদ্ধবিরতি আবার শুরু করতে হবে এবং দ্বি-রাষ্ট্রীয় সমাধানের মাধ্যমে শান্তির অগ্রগতি করতে হবে।ওয়ারেন এর আগে নেতানিয়াহু সরকারের বিরুদ্ধে গাজায় একটি ‘মানবিক বিপর্যয়’ তৈরির অভিযোগ করেন।
প্রায় চার মাস আগে ফিলিস্তিনের অবরুদ্ধ গাজা ভূখণ্ডে যুদ্ধ শুরুর পর থেকে ইসরায়েলের হামলায় নিহত ফিলিস্তিনির সংখ্যা সাড়ে ২৭ হাজার ছাড়িয়ে গেছে বলে জানিয়েছেন সেখানকার স্বাস্থ্য কর্মকর্তারা। এর মধ্যে সাড়ে ১১ হাজারই শিশু এবং ৮ হাজারের বেশি নারী।
হামাস পরিচালিত গাজার স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় মঙ্গলবার জানিয়েছে যে, ইসরায়েলের হামলায় এখন পর্যন্ত ২৭ হাজার ৫৮৫ জন নিহত হয়েছেন। আহত হয়েছেন প্রায় ৭০ হাজার মানুষ।
হককথা/নাছরিন