নিউইয়র্ক ০৪:৩২ অপরাহ্ন, সোমবার, ০৭ জুলাই ২০২৫, ২৩ আষাঢ় ১৪৩২ বঙ্গাব্দ
বিজ্ঞাপন :
মঙ্গলবারের পত্রিকা সাপ্তাহিক হককথা ও হককথা.কম এ আপনার প্রতিষ্ঠানের বিজ্ঞাপন দিতে যোগাযোগ করুন +1 (347) 848-3834
কঠিন সময় শেষ, এখন ভালো সময় : কমলাকে জয়ী করার আহ্বান

ডেমোক্রেটিক পার্টির জাতীয় সম্মেলনে কাঁদলেন বাইডেন

শিকাগো থেকে বিশেষ প্রতিনিধি
  • প্রকাশের সময় : ১২:১৯:৩২ পূর্বাহ্ন, বুধবার, ২১ অগাস্ট ২০২৪
  • / ১১৩ বার পঠিত

আগামী ৫ নভেম্বর মঙ্গলবার অনুষ্ঠিত যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট নির্বাচন সামনে রেখে শিকাগোয় আনুষ্ঠানিকভাবে শুরু হয়েছে ক্ষমতাসীন দল ডেমোক্রেটিক পার্টির জাতীয় সম্মেলন (ডিএসসি)। প্রেসিডেন্ট নির্বাচনের আগে ডেমোক্র্যাটিক পার্টির নেতাদের এই জমায়েত এখন আগ্রহের কেন্দ্রে। শিকাগোর ‘ইউনাইটেড সেন্টার অ্যারিনা’ড সোমবার (১৯ আগষ্ট) রাত থেকে শুরু হওয়া সম্মেলন চলবে আগামী বৃহস্পতিবার (২২ আগষ্ট) পর্যন্ত। এতে প্রেসিডেন্ট জো বাইডেন থেকে শুরু করে দলটির নেতা ও ডেলিগেটদের পাশাপাশি কয়েক হাজার আমন্ত্রিত অতিথি অংশ নিয়েছেন। সম্মেলনের শেষদিন বৃহস্পতিবার প্রেসিডেন্ট প্রার্থী হিসেবে কমলা ডেমোক্র্যাটিক পার্টির আনুষ্ঠানিক মনোনয়ন গ্রহণ করবেন। সম্মেলনে পর্যায়ক্রমে অংশ নেবেন সাবেক প্রেসিডেন্ট বারাক ওবামা ও বিল ক্লিনটন, সাবেক ফাস্ট লেডী মিশের ওবামা সহ আরো অনেকে। এদিকে সম্মেলনে বক্তাদের তালিকায় নিউইয়র্কের মেয়র এরিক অ্যাডমসের নাম না থাকলেও তিনি সম্মেলনের তৃতীয় দিন বুধবার শিকাগো যাচ্ছেন বলে জানা গেছে। এতো একটি সম্মেলনে নিউইয়র্কের মেয়রের নাম নেই কেনো এমন প্রশ্নে রাজনৈতিক বিশ্লেষকরা বলছেন, তার (এরিক অ্যাডামস) বিরুদ্ধে ফেডারেল তদন্ত চলছে বলেই হয়তো নৈতিকতার প্রশ্নে তাকে ডিএনসি-তে বক্তাদের তালিকায় রাখা হয়নি।

সম্মেলনের প্রথমদিন সোমবার শীর্ষ নেতাদের সঙ্গে সপরিবারে যোগ দেন যুক্তরাষ্ট্রের ৪৬তম প্রেসিডেন্ট জো বাইডেন। প্রেসিডেন্ট পদ থেকে বিদায় নেওয়ার আগে দলের জাতীয় সম্মেলনে এটাই তার শেষ ভাষণ। ফলে প্রেসিডেন্ট হওয়ার দৌড় থেকে হঠাৎ সরে যাওয়া বাইডেন ভাষণে কী বলেন, সেদিকেই নজর ছিল সবার। বাইডেন যখন মঞ্চে উঠছিলেন, তখন দর্শক সারির সবাই একসঙ্গে দাঁড়িয়ে তাকে সম্মান দেখান। একইসঙ্গে, উপস্থিত নেতাকর্মীরা সমস্বরে বলে ওঠেন ‘ধন্যবাদ জো’। এ ঘটনার পর বাইডেন বেশ আবেগাপ্লত হয়ে পড়েন। একপর্যায়ে আবেগে কেঁদেও ফেলেন। নিজেকে সামলে নিয়ে উপস্থিত সবাইকে ধন্যবাদ জানিয়ে প্রেসিডেন্ট বলেন, কঠিন সময় শেষ, এখন ভালো সময়। প্রেসিডেন্টের দায়িত্ব নেওয়ার পর নিজের সর্বোচ্চটা দিয়ে দেশের জন্য কাজ করেছেন বলেও জানান তিনি। মঞ্চে মেয়ে অ্যাশলি বাইডেনকে কিছুক্ষণ জড়িয়ে ধরে থাকেন বাইডেন। এর পর চোখের পানি মুছতে দেখা যায় তাকে।

আসন্ন প্রেসিডেন্ট নির্বাচন থেকে সরে দাঁড়াতে বাইডেনকে চাপ দিয়েছিলেন ডেমোক্র্যাটিক পার্টির সর্বস্তরের নেতা। তিনি তাদের প্রতি ক্ষুব্ধ বলে যেসব কথা বলা হচ্ছে, তা সত্য নয় বলে উল্লেখ করেন বাইডেন। নির্বাচনে কমলা হ্যারিসকে জয়ী করতে আমেরিকান ভোটারদের প্রতি আহবান জানান বাইডেন। তিনি বলেন, ‘কমলা হ্যারিসকে প্রেসিডেন্ট প্রার্থী হিসেবে ঘোষণা দেওয়াটা তার পুরো ক্যারিয়ারের মধ্যে সর্বোত্তম সিদ্ধান্ত ছিল। বাইডেন বলেন, তিনি (কমলা হ্যারিস) কঠিন, তিনি অভিজ্ঞ এবং তিনি অত্যন্ত সৎ একজন মানুষ।’

সম্মেলনে সমবেত জনতার উদ্দেশে অ্যাশলি বাইডেন বলেন, তার বাবা জো বাইডেন সত্যিকার অর্থে একজন কন্যাসন্তানের বাবা। তিনি নারীদের সব সময় মূল্যায়ন করেন। তাদের ওপর বিশ্বাস রাখেন। সম্মেলনে বাইডেন প্রেসিডেন্ট হিসেবে তার বিভিন্ন কাজের কথা তুলে ধরেন। তিনি বলেন, আরও উন্নত একটি যুক্তরাষ্ট্র তৈরিতে তারা কাজ করে যাচ্ছেন।

সম্মেলনে শেষ ভাষণে ‘আমেরিকা, আমি আমার সর্বোচ্চটা তোমাকে দিয়েছি উল্লেখ করে বাইডেন বলেন, গণতন্ত্রকে অবশ্যই রক্ষা করতে হবে। আমরা আমেরিকার আত্মাকে রক্ষার জন্য লড়ছি। এ সময় কমলা হ্যারিসকে ভোট দেওয়ার আহবান জানিয়ে তিনি বলেন, গণতান্ত্রিক ধারা বজায় রাখতে আপনারা কমলা হ্যারিসকে বিজয়ী করুন। উল্লেখ্য, প্রেসিডেন্ট পদ থেকে বিদায় নেওয়ার আগে দলের জাতীয় সম্মেলনে এটাই ছিল তার শেষ ভাষণ। ফলে প্রেসিডেন্ট হওয়ার দৌড় থেকে হঠাৎ সরে যাওয়া বাইডেন ভাষণে কী বলেন, সেদিকেই নজর ছিল সবার।

এদিকে বাইডেন মঞ্চে ওঠার আগে আকস্মিকভাবে সেখানে হাজির হয়ে নজর কাড়েন কমলা হ্যারিস। প্রেসিডেন্টকে ধন্যবাদ দিতেই হঠাৎ এই আগমন বলে জানান তিনি। কমলা বলেন, জো, আপনার ঐতিহাসিক নেতৃত্বের জন্য ধন্যবাদ। আমরা আপনার কাছে চিরকৃতজ্ঞ। নভেম্বর মাসে অনুষ্ঠিত হতে যাওয়া যুক্তরাষ্ট্রের পরবর্তী প্রেসিডেন্ট নির্বাচনে ফের প্রার্থী হওয়ার কথা ছিল জো বাইডেনের। কিন্তু গত জুনের শেষের দিকে প্রতিদ্বন্দ্বী রিপাবলিকান দলের প্রার্থী ও সাবেক প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের সঙ্গে এক টেলিভিশন বিতর্কে কথা বলতে গিয়ে খেই হারিয়ে ফেলেন তিনি। স্বাস্থ্যগত সমস্যাও ছিলো আলোচনা-সমালোচনা।

পরবর্তীতে ভোটার জরিপে বাইডেনকে বেশ পিছিয়ে পড়তে দেখা যায়। ফলে প্রেসিডেন্ট প্রার্থী না হওয়ার জন্য নিজ দলের ভেতরেই চাপে পড়েন তিনি এবং একপর্যায়ে নির্বাচন থেকে সরে আসেন। এমন পরিস্থিতিতে এক মাসেরও কম সময় আগে নির্বাচনী দৌড়ে যোগ দেন কমলা। এবারের সম্মেলনে তার পক্ষেই ভোট চাচ্ছেন দলটির নেতারা। বৃহস্পতিবার (২২ আগষ্ট) সম্মেলনের শেষদিনে তিনি ফের মঞ্চে উঠবেন এক আনুষ্ঠানকিভাবে দলের প্রেসিডেন্ট প্রার্থী হিসেবে আনুষ্ঠানিকভাবে ভাষণ দেবেন। কিন্তু প্রথমদিনেই হুট করে হাজির হওয়ায় উপস্থিত নেতাকর্মীরা বেশ অবাক হন।

হাজারো কন্ঠে স্লোগানে স্লোগানে কমলার নাম
অপরদিকে কমলা হ্যারিস যখন মঞ্চে উঠেন তখন হাজার হাজার নেতাকর্মী উঠে দাঁড়িয়ে করতালি দিয়ে তাকে সম্মেলনে স্বাগত জানান। সেই সঙ্গে স্লোগান চলতে থাকে। এসময় কমলা বলেন, যখন আমরা লড়াই করি, আমরা জিতে যাই। অল্প সময় মঞ্চে অবস্থানকালে তিনি বাইডেনকে ধন্যবাদ দেওয়ার বাইরে তেমন কিছু বলেননি। রীতি অনুযায়ী, সম্মেলনের শেষদিনে তিনি আবারও মঞ্চে উঠবেন।

সম্মেলনের প্রথম দিন কমলা হ্যারিস চলে যাওয়ার বেশ কিছুক্ষণ পরে মঞ্চে আসেন ডেমোক্র্যাটিক পার্টির আরেক প্রভাবশালী নেতা হিলারি ক্লিনটন। তিনি যখন মঞ্চে উঠছিলেন, তখন দর্শক সারি থেকে হিলারি, হিলারি আওয়াজ শোনা যাচ্ছিল। কমলা হ্যারিসের মতো তিনিও ভাষণ শুরু করেন প্রেসিডেন্ট জো বাইডেনের প্রতি কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করে। বাইডেন হোয়াইট হাউসের মর্যাদা ফিরিয়ে এনেছেন বলেও মন্তব্য করেন হিলারি।

সাবেক এই ফাস্ট লেডি বলেন, আজীবন আপনি যেভাবে নেতৃত্ব দিয়েছেন, মানুষের পাশে থেকেছেন, সেটার জন্য আপনাকে অনেক ধন্যবাদ জো বাইডেন। একই সঙ্গে, কমলা হ্যারিসকে বিজয়ী করার জন্য সবাইকে একসঙ্গে কাজ করার আহ্বান জানান তিনি। প্রসঙ্গত উল্লেখ্য, ২০১৬ সালের প্রেসিডেন্ট নির্বাচনে অংশ নেন হিলারি। কিন্তু সেবার তিনি ট্রাম্পের কাছে পরাজিত হন। কাজেই এবারের নির্বাচনে কমলা হ্যারিস জয়ী হলে তিনি প্রথম আমেরিকান নারী প্রেসিডেন্ট হওয়ার রেকর্ড গড়বেন। হবেন বারাক ওবামার পর দেশটির দ্বিতীয় কৃষ্ণাঙ্গ প্রেসিডেন্ট এবং দেশের প্রথম ভারতীয় বংশোদ্ভূত বিশ্বনেতা।

উল্লেখ্য, নভেম্বরের নির্বাচনে ডেমোক্রাটিক পার্টির প্রার্থী কমলা হ্যারিসের প্রধান প্রতিদ্বন্দ্বি রিপাবলিকান পার্টি মনোনীত সাবেক প্রেসিডেন্ট ডেনাল্ড ট্রাম্প। এছাড়াও ইন্ডিপেন্ডেন্ট অথবা থার্ড পার্টির প্রার্থী হয়ে প্রেসিডেন্ট নির্বাচনে প্রতিদ্বন্দ্বিতায় অংশ নিচ্ছেন আরো চারজন। এরা হলেন রবার্ড এফ কেনেডি জুনিয়র, কর্নেল ওয়েষ্ট, জিল স্টেইন ও চেজ ওলিভার।

সম্মেলনের আশপাশের ফিলিস্তিনের পক্ষে ব্যাপক বিক্ষোভ
এদিকে সোমবারের সম্মেলন চলাকালে আশপাশের এলাকায় প্রায় দেড় হাজার মানুষ ফিলিস্তিনের পক্ষে বিক্ষোভ করেন। সম্মেলন শুরুর আগ থেকেই তারা বিভিন্ন স্থানে সমবেত হতে থাকেন। গাজাযুদ্ধে ইসরাইলকে সমর্থন দেওয়ায় ক্ষোভ প্রকাশ করেন আন্দোলনকারীরা। বিক্ষোভ শেষে পদযাত্রাও করেন তারা। ইসরাইলকে সাহায্য করা বন্ধের পাশাপাশি গাজায় দ্রুত যুদ্ধবিরতির আহবান জানান বিক্ষোভকারীরা। একই সঙ্গে, ডেমোক্র্যাটদের জাতীয় সম্মেলন বন্ধ করার দাবিও জানান তারা। বৃহস্পতিবার সম্মেলনের শেষদিনেও বড় বিক্ষোভ করার ঘোষণা দিয়েছেন আন্দোলনকারীরা।

উল্লেখ্য, গাজা যুদ্ধের প্রতিবাদে যুক্তরাষ্ট্রে গত কয়েকমাস ধরেই বিক্ষোভ হতে দেখা যাচ্ছে, বিশেষ করে বিশ্ববিদ্যালয়গুলোতে। বিভিন্ন অঙ্গরাজ্যে ছড়িয়ে পড়া ওই বিক্ষোভ সামাল দিতে গিয়ে কিছু কিছু স্থানে রীতিমত হিমশিম খেতে হয়েছে পুলিশকে। কয়েক জায়গায় বিক্ষোভকারীদের সঙ্গে সংঘর্ষও হয়েছে তাদের। এতে উভয়পক্ষের অনেকে আহত হয়েছেন। বিক্ষোভকারীদের গ্রেপ্তারের ঘটনাও ঘটেছে, যাদের মধ্যে বেশিরভাগই শিক্ষক-শিক্ষার্থী।

Tag :

সোশ্যাল মিডিয়ায় খবরটি শেয়ার করুন

কঠিন সময় শেষ, এখন ভালো সময় : কমলাকে জয়ী করার আহ্বান

ডেমোক্রেটিক পার্টির জাতীয় সম্মেলনে কাঁদলেন বাইডেন

প্রকাশের সময় : ১২:১৯:৩২ পূর্বাহ্ন, বুধবার, ২১ অগাস্ট ২০২৪

আগামী ৫ নভেম্বর মঙ্গলবার অনুষ্ঠিত যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট নির্বাচন সামনে রেখে শিকাগোয় আনুষ্ঠানিকভাবে শুরু হয়েছে ক্ষমতাসীন দল ডেমোক্রেটিক পার্টির জাতীয় সম্মেলন (ডিএসসি)। প্রেসিডেন্ট নির্বাচনের আগে ডেমোক্র্যাটিক পার্টির নেতাদের এই জমায়েত এখন আগ্রহের কেন্দ্রে। শিকাগোর ‘ইউনাইটেড সেন্টার অ্যারিনা’ড সোমবার (১৯ আগষ্ট) রাত থেকে শুরু হওয়া সম্মেলন চলবে আগামী বৃহস্পতিবার (২২ আগষ্ট) পর্যন্ত। এতে প্রেসিডেন্ট জো বাইডেন থেকে শুরু করে দলটির নেতা ও ডেলিগেটদের পাশাপাশি কয়েক হাজার আমন্ত্রিত অতিথি অংশ নিয়েছেন। সম্মেলনের শেষদিন বৃহস্পতিবার প্রেসিডেন্ট প্রার্থী হিসেবে কমলা ডেমোক্র্যাটিক পার্টির আনুষ্ঠানিক মনোনয়ন গ্রহণ করবেন। সম্মেলনে পর্যায়ক্রমে অংশ নেবেন সাবেক প্রেসিডেন্ট বারাক ওবামা ও বিল ক্লিনটন, সাবেক ফাস্ট লেডী মিশের ওবামা সহ আরো অনেকে। এদিকে সম্মেলনে বক্তাদের তালিকায় নিউইয়র্কের মেয়র এরিক অ্যাডমসের নাম না থাকলেও তিনি সম্মেলনের তৃতীয় দিন বুধবার শিকাগো যাচ্ছেন বলে জানা গেছে। এতো একটি সম্মেলনে নিউইয়র্কের মেয়রের নাম নেই কেনো এমন প্রশ্নে রাজনৈতিক বিশ্লেষকরা বলছেন, তার (এরিক অ্যাডামস) বিরুদ্ধে ফেডারেল তদন্ত চলছে বলেই হয়তো নৈতিকতার প্রশ্নে তাকে ডিএনসি-তে বক্তাদের তালিকায় রাখা হয়নি।

সম্মেলনের প্রথমদিন সোমবার শীর্ষ নেতাদের সঙ্গে সপরিবারে যোগ দেন যুক্তরাষ্ট্রের ৪৬তম প্রেসিডেন্ট জো বাইডেন। প্রেসিডেন্ট পদ থেকে বিদায় নেওয়ার আগে দলের জাতীয় সম্মেলনে এটাই তার শেষ ভাষণ। ফলে প্রেসিডেন্ট হওয়ার দৌড় থেকে হঠাৎ সরে যাওয়া বাইডেন ভাষণে কী বলেন, সেদিকেই নজর ছিল সবার। বাইডেন যখন মঞ্চে উঠছিলেন, তখন দর্শক সারির সবাই একসঙ্গে দাঁড়িয়ে তাকে সম্মান দেখান। একইসঙ্গে, উপস্থিত নেতাকর্মীরা সমস্বরে বলে ওঠেন ‘ধন্যবাদ জো’। এ ঘটনার পর বাইডেন বেশ আবেগাপ্লত হয়ে পড়েন। একপর্যায়ে আবেগে কেঁদেও ফেলেন। নিজেকে সামলে নিয়ে উপস্থিত সবাইকে ধন্যবাদ জানিয়ে প্রেসিডেন্ট বলেন, কঠিন সময় শেষ, এখন ভালো সময়। প্রেসিডেন্টের দায়িত্ব নেওয়ার পর নিজের সর্বোচ্চটা দিয়ে দেশের জন্য কাজ করেছেন বলেও জানান তিনি। মঞ্চে মেয়ে অ্যাশলি বাইডেনকে কিছুক্ষণ জড়িয়ে ধরে থাকেন বাইডেন। এর পর চোখের পানি মুছতে দেখা যায় তাকে।

আসন্ন প্রেসিডেন্ট নির্বাচন থেকে সরে দাঁড়াতে বাইডেনকে চাপ দিয়েছিলেন ডেমোক্র্যাটিক পার্টির সর্বস্তরের নেতা। তিনি তাদের প্রতি ক্ষুব্ধ বলে যেসব কথা বলা হচ্ছে, তা সত্য নয় বলে উল্লেখ করেন বাইডেন। নির্বাচনে কমলা হ্যারিসকে জয়ী করতে আমেরিকান ভোটারদের প্রতি আহবান জানান বাইডেন। তিনি বলেন, ‘কমলা হ্যারিসকে প্রেসিডেন্ট প্রার্থী হিসেবে ঘোষণা দেওয়াটা তার পুরো ক্যারিয়ারের মধ্যে সর্বোত্তম সিদ্ধান্ত ছিল। বাইডেন বলেন, তিনি (কমলা হ্যারিস) কঠিন, তিনি অভিজ্ঞ এবং তিনি অত্যন্ত সৎ একজন মানুষ।’

সম্মেলনে সমবেত জনতার উদ্দেশে অ্যাশলি বাইডেন বলেন, তার বাবা জো বাইডেন সত্যিকার অর্থে একজন কন্যাসন্তানের বাবা। তিনি নারীদের সব সময় মূল্যায়ন করেন। তাদের ওপর বিশ্বাস রাখেন। সম্মেলনে বাইডেন প্রেসিডেন্ট হিসেবে তার বিভিন্ন কাজের কথা তুলে ধরেন। তিনি বলেন, আরও উন্নত একটি যুক্তরাষ্ট্র তৈরিতে তারা কাজ করে যাচ্ছেন।

সম্মেলনে শেষ ভাষণে ‘আমেরিকা, আমি আমার সর্বোচ্চটা তোমাকে দিয়েছি উল্লেখ করে বাইডেন বলেন, গণতন্ত্রকে অবশ্যই রক্ষা করতে হবে। আমরা আমেরিকার আত্মাকে রক্ষার জন্য লড়ছি। এ সময় কমলা হ্যারিসকে ভোট দেওয়ার আহবান জানিয়ে তিনি বলেন, গণতান্ত্রিক ধারা বজায় রাখতে আপনারা কমলা হ্যারিসকে বিজয়ী করুন। উল্লেখ্য, প্রেসিডেন্ট পদ থেকে বিদায় নেওয়ার আগে দলের জাতীয় সম্মেলনে এটাই ছিল তার শেষ ভাষণ। ফলে প্রেসিডেন্ট হওয়ার দৌড় থেকে হঠাৎ সরে যাওয়া বাইডেন ভাষণে কী বলেন, সেদিকেই নজর ছিল সবার।

এদিকে বাইডেন মঞ্চে ওঠার আগে আকস্মিকভাবে সেখানে হাজির হয়ে নজর কাড়েন কমলা হ্যারিস। প্রেসিডেন্টকে ধন্যবাদ দিতেই হঠাৎ এই আগমন বলে জানান তিনি। কমলা বলেন, জো, আপনার ঐতিহাসিক নেতৃত্বের জন্য ধন্যবাদ। আমরা আপনার কাছে চিরকৃতজ্ঞ। নভেম্বর মাসে অনুষ্ঠিত হতে যাওয়া যুক্তরাষ্ট্রের পরবর্তী প্রেসিডেন্ট নির্বাচনে ফের প্রার্থী হওয়ার কথা ছিল জো বাইডেনের। কিন্তু গত জুনের শেষের দিকে প্রতিদ্বন্দ্বী রিপাবলিকান দলের প্রার্থী ও সাবেক প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের সঙ্গে এক টেলিভিশন বিতর্কে কথা বলতে গিয়ে খেই হারিয়ে ফেলেন তিনি। স্বাস্থ্যগত সমস্যাও ছিলো আলোচনা-সমালোচনা।

পরবর্তীতে ভোটার জরিপে বাইডেনকে বেশ পিছিয়ে পড়তে দেখা যায়। ফলে প্রেসিডেন্ট প্রার্থী না হওয়ার জন্য নিজ দলের ভেতরেই চাপে পড়েন তিনি এবং একপর্যায়ে নির্বাচন থেকে সরে আসেন। এমন পরিস্থিতিতে এক মাসেরও কম সময় আগে নির্বাচনী দৌড়ে যোগ দেন কমলা। এবারের সম্মেলনে তার পক্ষেই ভোট চাচ্ছেন দলটির নেতারা। বৃহস্পতিবার (২২ আগষ্ট) সম্মেলনের শেষদিনে তিনি ফের মঞ্চে উঠবেন এক আনুষ্ঠানকিভাবে দলের প্রেসিডেন্ট প্রার্থী হিসেবে আনুষ্ঠানিকভাবে ভাষণ দেবেন। কিন্তু প্রথমদিনেই হুট করে হাজির হওয়ায় উপস্থিত নেতাকর্মীরা বেশ অবাক হন।

হাজারো কন্ঠে স্লোগানে স্লোগানে কমলার নাম
অপরদিকে কমলা হ্যারিস যখন মঞ্চে উঠেন তখন হাজার হাজার নেতাকর্মী উঠে দাঁড়িয়ে করতালি দিয়ে তাকে সম্মেলনে স্বাগত জানান। সেই সঙ্গে স্লোগান চলতে থাকে। এসময় কমলা বলেন, যখন আমরা লড়াই করি, আমরা জিতে যাই। অল্প সময় মঞ্চে অবস্থানকালে তিনি বাইডেনকে ধন্যবাদ দেওয়ার বাইরে তেমন কিছু বলেননি। রীতি অনুযায়ী, সম্মেলনের শেষদিনে তিনি আবারও মঞ্চে উঠবেন।

সম্মেলনের প্রথম দিন কমলা হ্যারিস চলে যাওয়ার বেশ কিছুক্ষণ পরে মঞ্চে আসেন ডেমোক্র্যাটিক পার্টির আরেক প্রভাবশালী নেতা হিলারি ক্লিনটন। তিনি যখন মঞ্চে উঠছিলেন, তখন দর্শক সারি থেকে হিলারি, হিলারি আওয়াজ শোনা যাচ্ছিল। কমলা হ্যারিসের মতো তিনিও ভাষণ শুরু করেন প্রেসিডেন্ট জো বাইডেনের প্রতি কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করে। বাইডেন হোয়াইট হাউসের মর্যাদা ফিরিয়ে এনেছেন বলেও মন্তব্য করেন হিলারি।

সাবেক এই ফাস্ট লেডি বলেন, আজীবন আপনি যেভাবে নেতৃত্ব দিয়েছেন, মানুষের পাশে থেকেছেন, সেটার জন্য আপনাকে অনেক ধন্যবাদ জো বাইডেন। একই সঙ্গে, কমলা হ্যারিসকে বিজয়ী করার জন্য সবাইকে একসঙ্গে কাজ করার আহ্বান জানান তিনি। প্রসঙ্গত উল্লেখ্য, ২০১৬ সালের প্রেসিডেন্ট নির্বাচনে অংশ নেন হিলারি। কিন্তু সেবার তিনি ট্রাম্পের কাছে পরাজিত হন। কাজেই এবারের নির্বাচনে কমলা হ্যারিস জয়ী হলে তিনি প্রথম আমেরিকান নারী প্রেসিডেন্ট হওয়ার রেকর্ড গড়বেন। হবেন বারাক ওবামার পর দেশটির দ্বিতীয় কৃষ্ণাঙ্গ প্রেসিডেন্ট এবং দেশের প্রথম ভারতীয় বংশোদ্ভূত বিশ্বনেতা।

উল্লেখ্য, নভেম্বরের নির্বাচনে ডেমোক্রাটিক পার্টির প্রার্থী কমলা হ্যারিসের প্রধান প্রতিদ্বন্দ্বি রিপাবলিকান পার্টি মনোনীত সাবেক প্রেসিডেন্ট ডেনাল্ড ট্রাম্প। এছাড়াও ইন্ডিপেন্ডেন্ট অথবা থার্ড পার্টির প্রার্থী হয়ে প্রেসিডেন্ট নির্বাচনে প্রতিদ্বন্দ্বিতায় অংশ নিচ্ছেন আরো চারজন। এরা হলেন রবার্ড এফ কেনেডি জুনিয়র, কর্নেল ওয়েষ্ট, জিল স্টেইন ও চেজ ওলিভার।

সম্মেলনের আশপাশের ফিলিস্তিনের পক্ষে ব্যাপক বিক্ষোভ
এদিকে সোমবারের সম্মেলন চলাকালে আশপাশের এলাকায় প্রায় দেড় হাজার মানুষ ফিলিস্তিনের পক্ষে বিক্ষোভ করেন। সম্মেলন শুরুর আগ থেকেই তারা বিভিন্ন স্থানে সমবেত হতে থাকেন। গাজাযুদ্ধে ইসরাইলকে সমর্থন দেওয়ায় ক্ষোভ প্রকাশ করেন আন্দোলনকারীরা। বিক্ষোভ শেষে পদযাত্রাও করেন তারা। ইসরাইলকে সাহায্য করা বন্ধের পাশাপাশি গাজায় দ্রুত যুদ্ধবিরতির আহবান জানান বিক্ষোভকারীরা। একই সঙ্গে, ডেমোক্র্যাটদের জাতীয় সম্মেলন বন্ধ করার দাবিও জানান তারা। বৃহস্পতিবার সম্মেলনের শেষদিনেও বড় বিক্ষোভ করার ঘোষণা দিয়েছেন আন্দোলনকারীরা।

উল্লেখ্য, গাজা যুদ্ধের প্রতিবাদে যুক্তরাষ্ট্রে গত কয়েকমাস ধরেই বিক্ষোভ হতে দেখা যাচ্ছে, বিশেষ করে বিশ্ববিদ্যালয়গুলোতে। বিভিন্ন অঙ্গরাজ্যে ছড়িয়ে পড়া ওই বিক্ষোভ সামাল দিতে গিয়ে কিছু কিছু স্থানে রীতিমত হিমশিম খেতে হয়েছে পুলিশকে। কয়েক জায়গায় বিক্ষোভকারীদের সঙ্গে সংঘর্ষও হয়েছে তাদের। এতে উভয়পক্ষের অনেকে আহত হয়েছেন। বিক্ষোভকারীদের গ্রেপ্তারের ঘটনাও ঘটেছে, যাদের মধ্যে বেশিরভাগই শিক্ষক-শিক্ষার্থী।