বাইডেন ও ট্রাম্প মুখোমুখি বিতর্ক : পরস্পরকে তীব্র আক্রমণের চেষ্টা
- প্রকাশের সময় : ০৬:৪০:০৪ পূর্বাহ্ন, শুক্রবার, ২৮ জুন ২০২৪
- / ৭৭ বার পঠিত
যুক্তরাষ্ট্রের আসন্ন নির্বাচন সামনে রেখে দেশটির ডেমোক্রেটিক প্রেসিডেন্ট জো বাইডেন এবং রিপাবলিকান প্রতিপক্ষ ডোনাল্ড ট্রাম্পের মধ্যে মুখোমুখি বিতর্ক হয়েছে। এতে দেশের অর্থনীতি নিয়ে একে অপরকে পাল্টাপাল্টি আক্রমণ করেন। চার বছরের মধ্যে এই প্রথম তারা আগামী ৫ নভেম্বরের নির্বাচনকে সামনে রেখে একে অন্যের মুখোমুখি হলেন।
এ বিতর্কে ৮১ বছর বয়সী বাইডেন এবং ৭৮ বছর বয়সী ট্রাম্প উভয়কে বেশ বিপাকে পড়তে হয়েছে।
এমন একটি বিতর্কে তারা একটি ব্রেকআউট মুহূর্ত পর্যন্ত চেয়েছিলেন। কিন্তু পরে আর তা পাননি তারা। বিতর্ক মঞ্চে উঠলেও প্রথা অনুসারে করমর্দন করেননি বাইডেন ও ট্রাম্প। ২০২০ সালের প্রেসিডেন্ট নির্বাচনের বিতর্কেও কভিড-১৯ বিধি-নিষেধের কারণে করমর্দন করেননি দুইজন।
বিতর্কের শুরুতে আসে অর্থনীতি ইস্যু। এরপর একে একে গর্ভপাত অধিকার, কর, স্বাস্থ্যসেবা এবং আফগানিস্তান থেকে সেনা প্রত্যাহার নিয়ে বিতর্কে জড়ান বাইডেন ও ট্রাম্প। বিভিন্ন ইস্যুতে কথা বলার সময় তারা একে অন্যের বিরুদ্ধে মিথ্যা বলার অভিযোগ আনেন এবং পরস্পরকে তীব্র আক্রমণের চেষ্টা করেন।
বিতর্ক শুরুর পর ডেমোক্র্যাট প্রেসিডেন্ট প্রার্থী বাইডেন ইসরায়েল-গাজা যুদ্ধ নিয়ে প্রশ্নের সম্মুখীন হন।
এই ইস্যুতে বাইডেনের ডেমোক্র্যাট সমর্থকের একাংশের বিরোধিতার মুখে রয়েছেন বাইডেন। প্রশ্ন করা হয়, হামাস ও ইসরায়েল যুদ্ধ শেষ করতে বাইডেন কী করবেন? উত্তরে বাইডেন বলেন, একমাত্র হামাসই এই যুদ্ধ শেষ করতে চায় না। বাইডেন ইসরায়েলের প্রতি তার পূর্ণ সমর্থনের কথা জানান। তিনি হামাসকে নির্মূল করার কথা বলেন।
এদিকে সিএনএনের আটলান্টা স্টুডিওতে মুখোমুখি বিতর্কে রাশিয়া-ইউক্রেন নিয়েও কথা হয়।
জো বাইডেন ট্রাম্পকে বলেন, তার বিশ্বাস ভ্লাদিমির পুতিন একজন ‘যুদ্ধাপরাধী’। পুতিন পুরনো ‘সোভিয়েত সাম্রাজ্য’ আবার প্রতিষ্ঠা করতে চান বলেও অভিযোগ তোলেন তিনি।
বাইডেন আরো বলেন, ‘পুতিন ইউক্রেনে যুদ্ধ থামাতে চান বলে কি আপনি মনে করেন?…পোল্যান্ডে, বেলারুশে, ন্যাটোর দেশগুলোতে কী ঘটছে বলে আপনি মনে করেন?’ ইউক্রেনকে যুক্তরাষ্ট্রের অর্থের চেয়ে বেশি অস্ত্র দেওয়ার বিষয়টি উল্লেখ করে মার্কিন প্রেসিডেন্ট বলেন, ‘এসব কারণেই আমরা শক্তিশালী।’
ইউক্রেনে যুদ্ধ বন্ধে পুতিনের শর্ত নিয়ে ট্রাম্পকে প্রথমে একবার সিএনএনের সঞ্চালক ডানা বাশ প্রশ্ন করলেও এর উত্তর এড়িয়ে যান তিনি। এরপর বাশ দ্বিতীয়বার ট্রাম্পকে প্রশ্ন করেন, ‘পুতিনের শর্তগুলো আপনার কাছে গ্রহণযোগ্য কি না?’ এর উত্তরে ট্রাম্প বলেন, ‘না, এগুলো গ্রহণযোগ্য নয়।’
বাইডেন বিতর্কে ডোনাল্ড ট্রাম্পকে ফৌজদারি অপরাধে দোষী সাব্যস্ত হওয়া নিয়েও তীব্র আক্রমণ করেন। নৈতিকতা নিয়ে প্রশ্ন তুলে ট্রাম্পকে ‘কটূক্তি’ করেন বাইডেন। একজন দোষী সাব্যস্ত অপরাধী হিসেবে ট্রাম্পকে অভিহিত করেন বাইডেন।
মুখোমুখি বিতর্কে অভিবাসন নিয়ে সাবেক মার্কিন প্রেসিডেন্ট ট্রাম্পের আমলের পদক্ষেপের সমালোচনা করেন বাইডেন। তিনি বলেন, ট্রাম্পের আমলে অভিবাসনপ্রত্যাশী মায়েদের কাছ থেকে তাঁদের শিশুদের নিয়ে যাওয়া হয়েছে। শিশুদের খাঁচায় রাখছিলেন। পরিবারগুলোকে আলাদা করে দিয়েছিলেন, এটা সঠিক উপায় নয়।
বাইডেনকে তার বয়স সম্পর্কেও প্রশ্ন করা হয়, তিনি যখন দ্বিতীয় মেয়াদ শেষ করবেন তখন তার বয়স হবে ৮৬। তিনি হবেন সবচেয়ে বয়স্ক প্রেসিডেন্ট। জবাবে বাইডেন বলেন, একসময় তিনি সবচেয়ে কমবয়সী আইন প্রণেতা বলে সমালোচনার শিকার হতেন এবং ট্রাম্প ‘তিন বছরের ছোট এবং অনেকটাই কম যোগ্য’।
বাইডেন বলেন, ‘রেকর্ড দেখুন। দেখুন তিনি যে ভয়ানক পরিস্থিতি রেখে গিয়েছিলেন সেখান থেকে কীভাবে ঘুরে দাঁড়িয়েছি।’ অন্যদিকে ট্রাম্পকে বলা হয়, তার বয়স এখন ৭৮ বছর এবং দ্বিতীয় মেয়াদ শেষে তা হবে ৮২ বছর। জবাবে ট্রাম্প বলেন, তার স্বাস্থ্য ভালো এবং তিনি এ সময় গল্ফও খেলেন বলে জানান।
রিপাবলিকান ও ডেমোক্র্যাটদের যারা মনোযোগ দিয়ে বিতর্ক দেখেছেন তারা অনেকেই তাদের প্রতিক্রিয়া দিয়েছেন। সাবেক ডেমোক্র্যাট কংগ্রেস উইম্যান স্টেফাইন মারফি বলেছেন কিছু মুহূর্ত ছিল, যেখানে বাইডেন তার বয়স তুলে ধরেছেন। তাকে বোঝাটা কষ্টসাধ্য ছিলো।
কিন্তু অন্যদিকে তার মতে, ডোনাল্ড ট্রাম্প কিছু মন্তব্য করেছেন, যা ‘সত্যি নয়’ এবং এগুলোর সত্যতা যাচাই করা উচিত। তিনি বলেন, তার উদ্বেগের জায়গা হলো নির্বাচনের ফল গ্রহণ করবেন কি না তা বলতে ডোনাল্ড ট্রাম্প অনীহা দেখিয়েছেন।
সাবেক রিপাবলিকান কংগ্রেস উইম্যান রোডনি ডেভিস বলেছেন, বিতর্কটি ছিল ‘ডোনাল্ড ট্রাম্পের পরিষ্কার জয়’। তিনি বলেছেন, ‘আমেরিকাজুড়ে ডেমোক্র্যাটদের জন্য দুঃখজনক যে বিতর্কের ধরনটি প্রেসিডেন্ট ট্রাম্পকে সহায়তা করেছে।’
বিতর্কের শেষে ট্রাম্প বলেন, আমেরিকার মানুষ এখন জাহান্নামে বাস করছে। তার ভাষায়, ‘সাড়ে তিন বছর ধরে আমরা জাহান্নামে বাস করছি’। অন্যদিকে বাইডেন তার শেষ বক্তব্যে আমেরিকানদের জন্য গুরুত্বপূর্ণ ইস্যু মূল্যস্ফীতি কমিয়ে আনার প্রতিশ্রুতি দেন এবং বলেন, তিনি কর কমিয়ে আনতে চান। একই সঙ্গে দাবি করেন, ট্রাম্প কর বাড়িয়ে দেবেন।
এবার টেলিভিশন স্টুডিওতে বিতর্কটি অনুষ্ঠিত হচ্ছে। আগের বিতর্কগুলোতে দর্শকদের উপস্থিতি থাকলেও এবার তেমনটা হচ্ছে না। ফলে দর্শকদের প্রতিক্রিয়া সরাসরি দেখার সুযোগ নেই। বাইডেনের প্রচারদলের অনুরোধে এ ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে। স্থানীয় সময় বৃহস্পতিবার (বাংলাদেশ সময় শুক্রবার সকাল ৭টায়) প্রথম মুখোমুখি বিতর্কে অংশ নেন বাইডেন ও ট্রাম্প। প্রায় দেড় ঘণ্টার ওই বিতর্কে ট্রাম্প ৪০ মিনিট ১২ সেকেন্ডের মতো কথা বলেছেন। অপরদিকে বাইডেন কথা বলেছেন ৩৫ মিনিট ৪১ সেকেন্ড। সূত্র : বিবিসি, সিএনএন