নিউইয়র্ক ০২:৩৮ পূর্বাহ্ন, শুক্রবার, ১৮ অক্টোবর ২০২৪, ২ কার্তিক ১৪৩১ বঙ্গাব্দ
বিজ্ঞাপন :
মঙ্গলবারের পত্রিকা সাপ্তাহিক হককথা ও হককথা.কম এ আপনার প্রতিষ্ঠানের বিজ্ঞাপন দিতে যোগাযোগ করুন +1 (347) 848-3834

‘স্টেট অব দ্য ইউনিয়ন’ ভাষণ : বিভক্ত ইউএস কংগ্রেসকে ঐক্যবদ্ধ হওয়ার আহ্বান বাইডেনের

রিপোর্ট:
  • প্রকাশের সময় : ০৩:১৭:০৯ অপরাহ্ন, বুধবার, ৮ ফেব্রুয়ারী ২০২৩
  • / ২৫ বার পঠিত

হককথা ডেস্ক: প্রেসিডেন্সির গুরুত্বপূর্ণ মুহূর্তে ‘স্টেট অব দ্য ইউনিয়ন’ ভাষণ দিয়েছেন প্রেসিডেন্ট জো বাইডেন। এই ভাষণ এমনভাবে দিলেন যেন তিনি নতুন নির্বাচনের জন্য প্রস্তুত এবং প্রথমবারের মতো রিপাবিলকানদের দখলে থাকা কংগ্রেসের একটি কক্ষের বিষয়ে মোকাবিলা করছেন। তীব্রভাবে বিভক্ত কংগ্রেসে তিনি ভাষণ দিয়েছেন। তা শুনেছেন লাখ লাখ আমেরিকান সহ বিশ্ববাসী। তাঁর ভাষণে যুক্তরাষ্ট্রের গণতন্ত্র ‘ক্ষতবিক্ষত’ হলেও এখনও ‘অটুট’ রয়েছে বলে জানান প্রেসিডেন্ট জো বাইডেন। মঙ্গলবার (৭ ফেব্রæয়ারী) রাতে আমেরিকানদের উদ্দেশে ‘স্টেট অব দ্য ইউনিয়ন’ ভাষণে তিনি এ কথা বলেন। ‘স্টেট অব ইউনিয়ন ভাষণে’ বাইডেন তাঁর বিরোধী রিপাবলিকানদের প্রতি ‘বøু কলার’ অর্থনীতি গঠনে ঐক্যবদ্ধ হওয়ার আহ্বান জানান।
প্রেসিডেন্ট বাইডেন এদিন রাত ৯টার দিকে তাঁর ‘স্টেট অব ইউনিয়ন ভাষণ’ শুরু করেন এবং প্রায় সোয়া এক ঘন্টার মতো অভ্যন্তরীন ও আন্তর্জাতিক বিভিন্ন বিষয় তাঁর ভাষণে তুলে ধরেন। এসময় হাউজ স্পীকার কেভিন ম্যাকার্থী ছাড়াও ভাইস প্রেসিডেন্ট কামলা হারিস, ইউএস সিনেটের লীডার চাক শুম্যার, কংগ্রেসে মাইনোরিটি লীডার হাকিম জ্যাফরিজ সহ যৌথ হাউজের প্রতিনিধিরা উপস্থিত ছিলেন। তাঁরা ভাষণের সময় মাঝে মধ্যেই দাঁড়িয়ে করতালির মাধ্যমে প্রেসিডেন্ট বাইডেনকে স্বাগত জানান।
প্রেসিডেন্ট জো বাইডেন (৮০) তাঁর ভাষণে খুব শিগগীরই আমেরিকার আগামী প্রেসিডেন্ট নির্বাচনে দ্বিতীয় দফায় প্রার্থী হওয়ার ঘোষণা দেবেন। বাইডেন পূর্ণ কংগ্রেস এবং লাখ লাখ টেলিভিশন দর্শকদের সামনে ভাষণে তার উদার ও জনমুখী দৃষ্টিভঙ্গি তুলে ধরেন। তিনি ২০২০ সালের যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট নির্বাচনের ফলাফল উল্টে দেয়ার তার পূর্বসূরি ডোনাল্ড ট্রাম্পের অভিযোগ তুলে ধরে বলেন, যুক্তরাষ্ট্রের গণতন্ত্র ক্ষতবিক্ষত হয়েছে। গৃহযুদ্ধের পর গণতন্ত্র সবচেয়ে বড়ো ধরনের হুমকির মুখে পড়েছে। তবে বাইডেন বলেন, ‘আজকে আমাদের গণতন্ত্র অনবরত এবং অটুট রয়েছে।’
জো বাইডেন আরও বলেন, গত চার দশকে অর্থনৈতিক উত্থানের মধ্যেও বহু লোককে পেছনে ঠেলে দেওয়া হয়েছে যেন তারা অদৃশ্য। তীব্র রাজনৈতিক বিভাজনের প্রেক্ষিতে প্রতিনিধি পরিষদের নিয়ন্ত্রণে থাকা রিপাবলিকনদের প্রতি ঐক্যবদ্ধ দেশ গড়ার আহ্বান জানান বাইডেন।
হোয়াইট হাউসের ঘোষণায় বলা হয়েছে, ইউনিয়ন স্টেট ভাষণ অনুষ্ঠানে ফাস্ট লেডি জিল বাইডেন, ইউক্রেনের দূত ওকসানা মারকারোভা এবং রক ব্যান্ডের স্টার ও এইচআইভি/এইডস প্রচারক বোনো অতিথি হিসেবে উপস্থিত থাকবেন।
বিবিসি’র খবরে বলা হয়েছে: রাজনৈতিকভাবে বিভক্ত ইউএস কংগ্রেসকে ঐক্যবদ্ধ হওয়ার আহ্বান জানিয়েছেন প্রেসিডেন্ট জো বাইডেন। মঙ্গলবার প্রেসিডেন্ট তাঁর বার্ষিক স্টেট অব দ্য ইউনিয়ন ভাষণে এই আহ্বান জানান। ভাষণে বাইডেন তাঁর প্রশাসনের নানা অর্জন-সাফল্যের কথা তুলে ধরেন। তিনি অর্থনীতি, শিক্ষা, স্বাস্থ্য, কর্মসংস্থান, পররাষ্ট্রনীতি নিয়ে কথা বলেন। বাইডেনের এই ভাষণকে আগামী বছর অর্থাৎ ২০২৪ সালের প্রেসিডেন্ট নির্বাচনে তাঁর সম্ভাব্য প্রতিদ্ব›িদ্বতার নকশাপরিকল্পনা হিসেবে দেখা হচ্ছে। এ বিষয়ে তিনি শিগগির আনুষ্ঠানিক ঘোষণা দেবেন বলে ধারণা করা হচ্ছে।
প্রেসিডেন্ট জো বাইডেন তাঁর ভাষণে শিক্ষানীতি বাস্তবায়নের ওপর জোর দিয়েছেন। পাবলিক স্কুলে শিক্ষক বাড়াতে আহ্বান জানিয়েছেন। পুলিশ সংস্কারের আহ্বানও জানিয়েছেন বাইডেন। যুক্তরাষ্ট্রে নির্বিচারে গুলি নিয়েও কথা বলেছেন বাইডেন। তিনি দেশে অ্যাসল্ট অস্ত্র নিষিদ্ধের আহ্বান জানিয়েছেন।
জো বাইডেন বলেছেন, একবারের জন্য, সব জন্য এই অ্যাসল্ট অস্ত্র নিষিদ্ধ করা হোক। যুক্তরাষ্ট্র আগেও এই কাজ করেছে। তখন সুফল পাওয়া গিয়েছিল। নির্বিচারে গুলির ঘটনা কমে এসেছিল।
বাইডেন বলেছেন, তিনি চীনা প্রেসিডেন্ট সি চিন পিংকে এই বিষয় স্পষ্ট করে দিয়েছেন যে বেইজিংয়ের সঙ্গে ওয়াশিংটন প্রতিযোগিতা চায়। কোনো সংঘাত চায় না। চীনের সঙ্গে প্রতিযোগিতায় জয়ী হতে ঐক্যবদ্ধ হওয়ার জন্য কংগ্রেসের প্রতি তিনি আহ্বান জানিয়েছেন।
এদিকে পশ্চিমা সামরিক জোট ন্যাটোর প্রশংসা করেছেন বাইডেন। ইউক্রেনে রুশ হামলার মুখে এই জোট যে শক্তি দেখিয়েছে, তার কথা উল্লেখ করেন তিনি। বাইডেন বলেন, ‘আমরা ন্যাটোকে ঐক্যবদ্ধ করেছি। একটি বৈশ্বিক জোট তৈরি করেছি। আমরা পুতিনের আগ্রাসনের বিরুদ্ধে রুখে দাঁড়িয়েছি। আমরা ইউক্রেনের জনগণের পাশে দাঁড়িয়েছি।’
জলবায়ু সংকটকে অস্তিত্বের জন্য হুমকি বলে অভিহিত করেন বাইডেন। তিনি বলেন, জলবায়ু পরিবর্তনের ফলে সৃষ্ট বিপদের বাস্তবতা মানতে হবে। এই চ্যালেঞ্জ মোকাবিলায় যুক্তরাষ্ট্রের অনেক কিছু করার আছে।
ভাষণে তিনি বলেছেন, আমেরিকা ফার্স্ট। পররাষ্ট্রনীতি লাস্ট। অর্থাৎ পররাষ্ট্রনীতির আগে যুক্তরাষ্ট্রের স্বার্থ দেখবে যুক্তরাষ্ট্র। সপ্তাহান্তে যুক্তরাষ্ট্রের জন্য চীনের নজরদারি বেলুন ছিল বিশাল এক খবর। কিন্তু এ বিষয়টি প্রেসিডেন্ট বাইডেনের ভাষণে খুব কমই উল্লেখ করা হয়েছে। ভাষণের শেষ তৃতীয়াংশের শেষের দিকে এ প্রসঙ্গ উল্লেখ করেন তিনি।
প্রেসিডেন্ট জো বাইডেন বলেন, গত সপ্তাহে আমরা পরিষ্কার করে বলেছি যে, যদি চীন আমাদের সার্বভৌমত্বে হুমকি হয়, আমরাও আমাদের দেশকে সুরক্ষিত রাখতে ব্যবস্থা নেবো এবং সেটাই করেছি। বেলুন নিয়ে তার মন্তব্য এতটুকুই ছিল। পররাষ্ট্রনীতি নিয়ে তিনি যা বলেছেন তার বেশির ভাগই ছিল গত বছরের। বিশেষ করে ইউক্রেনে রাশিয়ার আগ্রাসন নিয়ে। ইউক্রেনের রাষ্ট্রদূততে যুক্তরাষ্ট্রে স্বাগত জানিয়েছেন প্রেসিডেন্ট। গ্যালারিতে বসিয়েছেন। ইউক্রেনের জন্য মিত্রদের সমর্থন জড়ো করেছেন। যুদ্ধবিধ্বস্ত ইউক্রেনের জন্য নতুন করে সাহায্যের জন্য কোনো আহ্বান জানাননি তিনি। অতি সম্প্রতি তুরস্ক ও সিরিয়ায় যে ভয়াবহ ভূমিকম্প হয়েছে এবং এতে যে মানবিক সংকট সৃষ্টি হয়েছে- সে বিষয়ে তিনি কিছু উল্লেখ করেননি। পক্ষান্তরে তিনি আভ্যন্তরীণ উদ্বেগের দিকে অধিক জোর দিয়েছেন।
উল্লেখ্য, বাইডেনের দ্বিতীয় দফায় প্রার্থী হওয়ার বিষয়ে এবিসি নিউজ ও ওয়াশিংটন পোস্টের এক জনমত জরিপে দেখা গেছে ৫৮ শতাংশ ডেমোক্রেট এবং ডেমোক্রেটপন্থী স্বতন্ত্ররা বলেছেন, ২০২৪ সালের নির্বাচনের জন্যে দলটির অন্য কাউকে খুঁজে নেওয়া উচিত।
জনমত জরিপ অনুযায়ী আমেরিকানরা যে বিষয়ে পরোয়া করে তা হলো অর্থনীতি। তারা এখনও বিশ্বাস করে, দেশ এখনও লড়াই করছে। যদি দেশ পিছনে দিকে ঘুরে দাঁড়ায় তাহলেও তারা তা বিশ্বাস করবে বলে মনে হয় না। তাদের মানসিকতা বদলে দেয়ার উত্তম চেষ্টা ছিল বাইডেনের ভাষণে। এর মধ্য দিয়ে তিনি আবার নির্বাচনের সুযোগ খুঁজে থাকতে পারেন। তিনি রেকর্ড কম বেকারত্বের বিরুদ্ধে বক্তব্য রাখেন। তিনি বলেন, মুদ্রাস্ফীতি এবং বিদ্যুতের উচ্চমূল্য এখন নিম্নমুখী। এই কারণগুলোর জন্য গত দেড় বছরে প্রেসিডেন্টের এপ্রæভাল রেটিং কমেছে।
রিপাবলিকানদের সঙ্গে তিনি চমৎকারভাবে দায়িত্ব পালন করতে চান। স্টেট অব দ্য ইউনিয়ন ভাষণে জো বাইডেনের বিপরীতে ছিলেন রিপাবলিকানদের নতুন মুখ কেভিন ম্যাকার্থি। তিনি প্রতিনিধি পরিষদে রিপাবলিকান দলের স্পিকার। রিপাবলিকানদের আয়ত্তে আনার জন্য প্রেসিডেন্ট বাইডেন যেটুকু চেষ্টা করেছেন সুষ্ঠুভাবে তা নিশ্চিত করার জন্য তিনি তাকে সহায়তা করেছেন।

সোশ্যাল মিডিয়ায় খবরটি শেয়ার করুন

‘স্টেট অব দ্য ইউনিয়ন’ ভাষণ : বিভক্ত ইউএস কংগ্রেসকে ঐক্যবদ্ধ হওয়ার আহ্বান বাইডেনের

প্রকাশের সময় : ০৩:১৭:০৯ অপরাহ্ন, বুধবার, ৮ ফেব্রুয়ারী ২০২৩

হককথা ডেস্ক: প্রেসিডেন্সির গুরুত্বপূর্ণ মুহূর্তে ‘স্টেট অব দ্য ইউনিয়ন’ ভাষণ দিয়েছেন প্রেসিডেন্ট জো বাইডেন। এই ভাষণ এমনভাবে দিলেন যেন তিনি নতুন নির্বাচনের জন্য প্রস্তুত এবং প্রথমবারের মতো রিপাবিলকানদের দখলে থাকা কংগ্রেসের একটি কক্ষের বিষয়ে মোকাবিলা করছেন। তীব্রভাবে বিভক্ত কংগ্রেসে তিনি ভাষণ দিয়েছেন। তা শুনেছেন লাখ লাখ আমেরিকান সহ বিশ্ববাসী। তাঁর ভাষণে যুক্তরাষ্ট্রের গণতন্ত্র ‘ক্ষতবিক্ষত’ হলেও এখনও ‘অটুট’ রয়েছে বলে জানান প্রেসিডেন্ট জো বাইডেন। মঙ্গলবার (৭ ফেব্রæয়ারী) রাতে আমেরিকানদের উদ্দেশে ‘স্টেট অব দ্য ইউনিয়ন’ ভাষণে তিনি এ কথা বলেন। ‘স্টেট অব ইউনিয়ন ভাষণে’ বাইডেন তাঁর বিরোধী রিপাবলিকানদের প্রতি ‘বøু কলার’ অর্থনীতি গঠনে ঐক্যবদ্ধ হওয়ার আহ্বান জানান।
প্রেসিডেন্ট বাইডেন এদিন রাত ৯টার দিকে তাঁর ‘স্টেট অব ইউনিয়ন ভাষণ’ শুরু করেন এবং প্রায় সোয়া এক ঘন্টার মতো অভ্যন্তরীন ও আন্তর্জাতিক বিভিন্ন বিষয় তাঁর ভাষণে তুলে ধরেন। এসময় হাউজ স্পীকার কেভিন ম্যাকার্থী ছাড়াও ভাইস প্রেসিডেন্ট কামলা হারিস, ইউএস সিনেটের লীডার চাক শুম্যার, কংগ্রেসে মাইনোরিটি লীডার হাকিম জ্যাফরিজ সহ যৌথ হাউজের প্রতিনিধিরা উপস্থিত ছিলেন। তাঁরা ভাষণের সময় মাঝে মধ্যেই দাঁড়িয়ে করতালির মাধ্যমে প্রেসিডেন্ট বাইডেনকে স্বাগত জানান।
প্রেসিডেন্ট জো বাইডেন (৮০) তাঁর ভাষণে খুব শিগগীরই আমেরিকার আগামী প্রেসিডেন্ট নির্বাচনে দ্বিতীয় দফায় প্রার্থী হওয়ার ঘোষণা দেবেন। বাইডেন পূর্ণ কংগ্রেস এবং লাখ লাখ টেলিভিশন দর্শকদের সামনে ভাষণে তার উদার ও জনমুখী দৃষ্টিভঙ্গি তুলে ধরেন। তিনি ২০২০ সালের যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট নির্বাচনের ফলাফল উল্টে দেয়ার তার পূর্বসূরি ডোনাল্ড ট্রাম্পের অভিযোগ তুলে ধরে বলেন, যুক্তরাষ্ট্রের গণতন্ত্র ক্ষতবিক্ষত হয়েছে। গৃহযুদ্ধের পর গণতন্ত্র সবচেয়ে বড়ো ধরনের হুমকির মুখে পড়েছে। তবে বাইডেন বলেন, ‘আজকে আমাদের গণতন্ত্র অনবরত এবং অটুট রয়েছে।’
জো বাইডেন আরও বলেন, গত চার দশকে অর্থনৈতিক উত্থানের মধ্যেও বহু লোককে পেছনে ঠেলে দেওয়া হয়েছে যেন তারা অদৃশ্য। তীব্র রাজনৈতিক বিভাজনের প্রেক্ষিতে প্রতিনিধি পরিষদের নিয়ন্ত্রণে থাকা রিপাবলিকনদের প্রতি ঐক্যবদ্ধ দেশ গড়ার আহ্বান জানান বাইডেন।
হোয়াইট হাউসের ঘোষণায় বলা হয়েছে, ইউনিয়ন স্টেট ভাষণ অনুষ্ঠানে ফাস্ট লেডি জিল বাইডেন, ইউক্রেনের দূত ওকসানা মারকারোভা এবং রক ব্যান্ডের স্টার ও এইচআইভি/এইডস প্রচারক বোনো অতিথি হিসেবে উপস্থিত থাকবেন।
বিবিসি’র খবরে বলা হয়েছে: রাজনৈতিকভাবে বিভক্ত ইউএস কংগ্রেসকে ঐক্যবদ্ধ হওয়ার আহ্বান জানিয়েছেন প্রেসিডেন্ট জো বাইডেন। মঙ্গলবার প্রেসিডেন্ট তাঁর বার্ষিক স্টেট অব দ্য ইউনিয়ন ভাষণে এই আহ্বান জানান। ভাষণে বাইডেন তাঁর প্রশাসনের নানা অর্জন-সাফল্যের কথা তুলে ধরেন। তিনি অর্থনীতি, শিক্ষা, স্বাস্থ্য, কর্মসংস্থান, পররাষ্ট্রনীতি নিয়ে কথা বলেন। বাইডেনের এই ভাষণকে আগামী বছর অর্থাৎ ২০২৪ সালের প্রেসিডেন্ট নির্বাচনে তাঁর সম্ভাব্য প্রতিদ্ব›িদ্বতার নকশাপরিকল্পনা হিসেবে দেখা হচ্ছে। এ বিষয়ে তিনি শিগগির আনুষ্ঠানিক ঘোষণা দেবেন বলে ধারণা করা হচ্ছে।
প্রেসিডেন্ট জো বাইডেন তাঁর ভাষণে শিক্ষানীতি বাস্তবায়নের ওপর জোর দিয়েছেন। পাবলিক স্কুলে শিক্ষক বাড়াতে আহ্বান জানিয়েছেন। পুলিশ সংস্কারের আহ্বানও জানিয়েছেন বাইডেন। যুক্তরাষ্ট্রে নির্বিচারে গুলি নিয়েও কথা বলেছেন বাইডেন। তিনি দেশে অ্যাসল্ট অস্ত্র নিষিদ্ধের আহ্বান জানিয়েছেন।
জো বাইডেন বলেছেন, একবারের জন্য, সব জন্য এই অ্যাসল্ট অস্ত্র নিষিদ্ধ করা হোক। যুক্তরাষ্ট্র আগেও এই কাজ করেছে। তখন সুফল পাওয়া গিয়েছিল। নির্বিচারে গুলির ঘটনা কমে এসেছিল।
বাইডেন বলেছেন, তিনি চীনা প্রেসিডেন্ট সি চিন পিংকে এই বিষয় স্পষ্ট করে দিয়েছেন যে বেইজিংয়ের সঙ্গে ওয়াশিংটন প্রতিযোগিতা চায়। কোনো সংঘাত চায় না। চীনের সঙ্গে প্রতিযোগিতায় জয়ী হতে ঐক্যবদ্ধ হওয়ার জন্য কংগ্রেসের প্রতি তিনি আহ্বান জানিয়েছেন।
এদিকে পশ্চিমা সামরিক জোট ন্যাটোর প্রশংসা করেছেন বাইডেন। ইউক্রেনে রুশ হামলার মুখে এই জোট যে শক্তি দেখিয়েছে, তার কথা উল্লেখ করেন তিনি। বাইডেন বলেন, ‘আমরা ন্যাটোকে ঐক্যবদ্ধ করেছি। একটি বৈশ্বিক জোট তৈরি করেছি। আমরা পুতিনের আগ্রাসনের বিরুদ্ধে রুখে দাঁড়িয়েছি। আমরা ইউক্রেনের জনগণের পাশে দাঁড়িয়েছি।’
জলবায়ু সংকটকে অস্তিত্বের জন্য হুমকি বলে অভিহিত করেন বাইডেন। তিনি বলেন, জলবায়ু পরিবর্তনের ফলে সৃষ্ট বিপদের বাস্তবতা মানতে হবে। এই চ্যালেঞ্জ মোকাবিলায় যুক্তরাষ্ট্রের অনেক কিছু করার আছে।
ভাষণে তিনি বলেছেন, আমেরিকা ফার্স্ট। পররাষ্ট্রনীতি লাস্ট। অর্থাৎ পররাষ্ট্রনীতির আগে যুক্তরাষ্ট্রের স্বার্থ দেখবে যুক্তরাষ্ট্র। সপ্তাহান্তে যুক্তরাষ্ট্রের জন্য চীনের নজরদারি বেলুন ছিল বিশাল এক খবর। কিন্তু এ বিষয়টি প্রেসিডেন্ট বাইডেনের ভাষণে খুব কমই উল্লেখ করা হয়েছে। ভাষণের শেষ তৃতীয়াংশের শেষের দিকে এ প্রসঙ্গ উল্লেখ করেন তিনি।
প্রেসিডেন্ট জো বাইডেন বলেন, গত সপ্তাহে আমরা পরিষ্কার করে বলেছি যে, যদি চীন আমাদের সার্বভৌমত্বে হুমকি হয়, আমরাও আমাদের দেশকে সুরক্ষিত রাখতে ব্যবস্থা নেবো এবং সেটাই করেছি। বেলুন নিয়ে তার মন্তব্য এতটুকুই ছিল। পররাষ্ট্রনীতি নিয়ে তিনি যা বলেছেন তার বেশির ভাগই ছিল গত বছরের। বিশেষ করে ইউক্রেনে রাশিয়ার আগ্রাসন নিয়ে। ইউক্রেনের রাষ্ট্রদূততে যুক্তরাষ্ট্রে স্বাগত জানিয়েছেন প্রেসিডেন্ট। গ্যালারিতে বসিয়েছেন। ইউক্রেনের জন্য মিত্রদের সমর্থন জড়ো করেছেন। যুদ্ধবিধ্বস্ত ইউক্রেনের জন্য নতুন করে সাহায্যের জন্য কোনো আহ্বান জানাননি তিনি। অতি সম্প্রতি তুরস্ক ও সিরিয়ায় যে ভয়াবহ ভূমিকম্প হয়েছে এবং এতে যে মানবিক সংকট সৃষ্টি হয়েছে- সে বিষয়ে তিনি কিছু উল্লেখ করেননি। পক্ষান্তরে তিনি আভ্যন্তরীণ উদ্বেগের দিকে অধিক জোর দিয়েছেন।
উল্লেখ্য, বাইডেনের দ্বিতীয় দফায় প্রার্থী হওয়ার বিষয়ে এবিসি নিউজ ও ওয়াশিংটন পোস্টের এক জনমত জরিপে দেখা গেছে ৫৮ শতাংশ ডেমোক্রেট এবং ডেমোক্রেটপন্থী স্বতন্ত্ররা বলেছেন, ২০২৪ সালের নির্বাচনের জন্যে দলটির অন্য কাউকে খুঁজে নেওয়া উচিত।
জনমত জরিপ অনুযায়ী আমেরিকানরা যে বিষয়ে পরোয়া করে তা হলো অর্থনীতি। তারা এখনও বিশ্বাস করে, দেশ এখনও লড়াই করছে। যদি দেশ পিছনে দিকে ঘুরে দাঁড়ায় তাহলেও তারা তা বিশ্বাস করবে বলে মনে হয় না। তাদের মানসিকতা বদলে দেয়ার উত্তম চেষ্টা ছিল বাইডেনের ভাষণে। এর মধ্য দিয়ে তিনি আবার নির্বাচনের সুযোগ খুঁজে থাকতে পারেন। তিনি রেকর্ড কম বেকারত্বের বিরুদ্ধে বক্তব্য রাখেন। তিনি বলেন, মুদ্রাস্ফীতি এবং বিদ্যুতের উচ্চমূল্য এখন নিম্নমুখী। এই কারণগুলোর জন্য গত দেড় বছরে প্রেসিডেন্টের এপ্রæভাল রেটিং কমেছে।
রিপাবলিকানদের সঙ্গে তিনি চমৎকারভাবে দায়িত্ব পালন করতে চান। স্টেট অব দ্য ইউনিয়ন ভাষণে জো বাইডেনের বিপরীতে ছিলেন রিপাবলিকানদের নতুন মুখ কেভিন ম্যাকার্থি। তিনি প্রতিনিধি পরিষদে রিপাবলিকান দলের স্পিকার। রিপাবলিকানদের আয়ত্তে আনার জন্য প্রেসিডেন্ট বাইডেন যেটুকু চেষ্টা করেছেন সুষ্ঠুভাবে তা নিশ্চিত করার জন্য তিনি তাকে সহায়তা করেছেন।