সংলাপের তাগিদ, ভোট বানচালের নির্দেশদাতা ও বাস্তবায়নকারীদের প্রতি হুঁশিয়ারি
- প্রকাশের সময় : ১২:৪৯:৪০ পূর্বাহ্ন, বৃহস্পতিবার, ২৫ মে ২০২৩
- / ৬০ বার পঠিত
হককথা ডেস্ক : বাংলাদেশের জন্য যুক্তরাষ্ট্র ভিসা নীতি ঘোষণার পর বুধবার রাতে চ্যানেল আই’র তৃতীয় মাত্রা অনুষ্ঠানে সরাসরি অংশ নিয়েছিলেন যুক্তরাষ্ট্র সহকারি পররাষ্ট্রমন্ত্রী ডনাল্ড লু। তিনি ঘোষিত ভিসা নীতির ব্যাখ্যাসহ বিভিন্ন প্রশ্নের জবাব দিয়েছেন। ওই আলোচনায় সংলাপের তাগিদ যেমন দিয়েছেন তেমনই ভোট বানচালের নির্দেশদাতা ও বাস্তবায়নকারীদেরও সতর্ক করেছেন। লু জানিয়েছেন, ভিসা নীতিতে নিষেধাজ্ঞার আওতায় পড়া ব্যক্তিদের নির্দেশদাতারাও এই নীতির মধ্যে পড়বেন। তাদের জন্যও ভিসা নিষেধাজ্ঞা হতে পারে। অনুষ্ঠানটি সঞ্চালনা করেন জিল্লুর রহমান। ডনাল্ড লুকে সঞ্চালক প্রশ্ন করেন, যুক্তরাষ্ট্র কেন বাংলাদেশের ক্ষেত্রে এই নীতি নিতে গেল? এটা কি জরুরি?
জবাবে লু বলেন, আমি খুব পরিষ্কার করে বলতে চাই আমরা কারো বিরুদ্ধে নিষেধাজ্ঞা দিইনি। আপনি যেমন বলেছেন, পররাষ্ট্রমন্ত্রী ব্লিনকেন নতুন পলিসি ঘোষণা করেছেন। এতে পরিষ্কার করে বলা হয়েছে, যুক্তরাষ্ট্র সরকার যে কারো বিরুদ্ধে ভিসায় বিধিনিষেধ দিতে পারবে, যাদেরকে মনে হবে যে তারা বাংলাদেশে অবাধ ও সুষ্ঠু নির্বাচনকে বাধাগ্রস্ত করছেন। তিনি হতে পারেন সরকারের, বিচার বিভাগের, আইন প্রয়োগকারী অথবা বিরোধী দলীয় সদস্য। আমাদের দৃষ্টিভঙ্গি হলো, দক্ষিণ এশিয়া এবং বিশ্বজুড়ে নেতৃত্বে বাংলাদেশের এগিয়ে যাওয়ার জন্য প্রয়োজন গণতন্ত্র। অনুষ্ঠানের সঞ্চালক প্রশ্ন করেন, কিভাবে বাংলাদেশি কমকর্তাসহ বাংলাদেশি ব্যক্তিবিশেষ এবং অন্যদের চিহ্নিত করা হবে এই নীতির অধীনে? জবাবে লু বলেন, এই নীতি প্রয়োগ করা হবে সমভাবে সরকার ও বিরোধী দলীয় সদস্যদের ক্ষেত্রে।
উদাহরণ হিসবে ধরুন, যদি আমরা দেখতে পাই বিরোধী দলীয় কোনো সদস্য নির্বাচনকে বাধাগ্রস্ত করতে সহিংসতায় জড়িত, ভোটারদের ভীতি প্রদর্শনে জড়িত, তাদেরকে যুক্তরাষ্ট্রের ভিসা দেয়া হবে না। একইভাবে আমরা যদি দেখি সরকারি কোনো সদস্য, আইন প্রয়োগকারী সংস্থার সদস্য ভোটারদের ভীতি প্রদর্শনে জড়িত, সহিংসতায় জড়িত, মুক্ত মত প্রকাশ বাধাগ্রস্ত করছেন, তাহলে ওই সদস্যকে আমরা যুক্তরাষ্ট্রের ভিসা দেবো না। জিল্লুর রহমান জানতে চান, ভিসায় বিধিনিষেধ কি পরিবারের সদস্যদের ক্ষেত্রেও প্রযোজ্য হবে? জবাবে লু বলেন, হ্যাঁ। এই নীতি খুব পরিষ্কার। ঘনিষ্ঠ পরিবারের (ইমিডিয়েট পরিবার) ক্ষেত্রে প্রযোজ্য হবে। তার স্বামী বা স্ত্রী এবং সন্তানরাও ভিসা বিধিনিষেধের আওতায় পড়বেন। যাদের ভিসায় এমন বিধিনিষেধ আরোপ করা হবে, তাদেরকে অবিলম্বে জানিয়ে দেয়া হবে।
আরোও পড়ুন । যুক্তরাষ্ট্রের ভিন্ন ধরনের নিষেধাজ্ঞা
সঞ্চালক জানতে চান, সুনির্দিষ্টভাবে কারা বিধিনিষেধের আওতায় পড়বেন? জবাবে লু বলেন, পররাষ্ট্রমন্ত্রী পলিসি ঘোষণা করেছেন। সুনির্দিষ্ট ব্যক্তিদের ক্ষেত্রে তা প্রযোজ্য হবে। এই নীতি আমাদেরকে অনুমোদন করে চারটি ক্ষেত্র-ভোটারদের ভীতি প্রদর্শন, ভোট জালিয়াতি, মুক্ত মত প্রকাশকে প্রত্যাখ্যান করা এবং স্বাধীনভাবে সভা-সমাবেশ করায় বাধা, সহিংসতা করে অবাধ ও সুষ্ঠু নির্বাচনকে বাধাগ্রস্ত করা। আমি আমার প্রতিশ্রুতি দিতে পারি, এই প্রক্রিয়া হবে সুষ্ঠু এবং গঠনমূলক। এটা ব্যবহার করা হবে সরকার ও বিরোধী দলের ক্ষেত্রে সমভাবে। যুক্তরাষ্ট্র সরকার কখনো কোনো পক্ষ নেয় না। আমরা কোনো বিশেষ দলকে সমর্থন করি না। কোনো বিশেষ প্রার্থীকে সমর্থন করি না। যুক্তরাষ্ট্র সরকার শুধু অবাধ ও সুষ্ঠু গণতান্ত্রিক প্রক্রিয়াকে সমর্থন করে।
জিল্লুর রহমান জানতে চান, ভিসা বিধিনিষেধ কিভাবে প্রয়োগ হবে, বিশেষ করে উচ্চ পর্যায়ের ব্যক্তিদের জড়িত থাকার বিষয়ে? এ প্রশ্নে লু বলেন, এটা একটা ভাল প্রশ্ন। যারা ভোটারদের ভীতি প্রদর্শন করবেন অথবা ভোট জালিয়াতি করবেন, তারা যুক্তরাষ্ট্রের ভিসা পাবেন না। একইসঙ্গে যারা নির্দেশ দেবেন, তারাও যুক্তরাষ্ট্রে সফরের ভিসা পাবেন না। এই ঘোষণা কি ১৪ই মে রাষ্ট্রদূত পিটার হাসের নিরাপত্তা কমিয়ে দেয়ার প্রতিশোধ হিসেবে নেয়া হলো কিনা এমন প্রশ্নে লু বলেন, মোটেও তা নয়। আমি ব্যক্তিগতভাবে বাংলাদেশ সরকারকে এ বিষয়ে অবহিত করেছি ৩রা মে। ফলে ওই ঘটনার প্রতিশোধ নেয়ার জন্য আমাদের এই সিদ্ধান্ত এমন নয়। যুক্তরাষ্ট্র সরকার এই ঘটনায় প্রতিশোধ নেয়নি বা নিতে এ নীতি ঘোষণা করেনি। আমাদের এই নীতির লক্ষ্য হলো সহিংসতা রোধ করা। আগামী বছরে বাংলাদেশে একটি অবাধ ও সুষ্ঠু নির্বাচনকে উৎসাহিত করা। আমার সরকার বাংলাদেশের সঙ্গে বন্ধুত্বপূর্ণ সম্পর্ক চায়। আমাদের এই নীতি প্রধানমন্ত্রী, সরকার, বাংলাদেশের নাগরিক সমাজ ও বাংলাদেশিরা যাতে একটি অবাধ ও সুষ্ঠু নির্বাচন পায়, তার জন্য। যুক্তরাষ্ট্রের কাছে বাংলাদেশের গুরুত্ব অনেক।
বাংলাদেশের নির্বাচন যুক্তরাষ্ট্রের জন্য এত গুরুত্বপূর্ণ কেন? এমন প্রশ্নে লু বলেন, বাংলাদেশে কয়েকবার সফরের সুযোগ হয়েছে আমার। এই দেশটি আমাদের কাছে খুব স্পেশাল। জনগণের মধ্যে সম্পর্ক, পরিবারের মধ্যে সম্পর্ক, প্রতিষ্ঠান, বিশ্ববিদ্যালয়, আমাদের কোম্পানির মধ্যে সম্পর্ক আছে। বিশ্বজুড়ে গণতন্ত্রকে উৎসাহিত করা আমাদের কেন্দ্রীয় প্রবণতা। আমরা বিশ্বাস করি, বাংলাদেশ একটি গণতান্ত্রিক দেশ, যাদের একটি অবাধ ও সুষ্ঠু নির্বাচন দাবি করে। আমি জানি এই নীতি অনেক প্রশ্ন সৃষ্টি করবে। আমি আবারও জোর দিয়ে বলতে চাই, আমরা সবচেয়ে গঠনমূলক এবং ইতিবাচক উপায়ে এই নীতি গ্রহণ করছি। আমরা বাংলাদেশে সংলাপ চাই। সরকার, বিরোধী দল, নাগরিক সমাজ- সবার উদ্যোগ চাই, যাতে এমন একটি পরিবেশ সৃষ্টি হয়, যেখানে অবাধ ও সুষ্ঠু নির্বাচন হতে পারে। এটা হতে পারে বাংলাদেশের কঠিন সময়। এই নির্বাচন হতে পারে আনন্দের। বাংলাদেশে অর্থনৈতিক, রাজনৈতিক অগ্রগতি হতে পারে এর মধ্য দিয়ে। সূত্র : মানবজমিন
বেলী/হককথা