রাশিয়ার তেল-গ্যাস-কয়লার উপর যুক্তরাষ্ট্র-যুক্তরাজ্য নিষেধাজ্ঞা

- প্রকাশের সময় : ১২:২৩:৪৪ পূর্বাহ্ন, বুধবার, ৯ মার্চ ২০২২
- / ৩৪ বার পঠিত
হককথা ডেস্ক : রাশিয়ার তেল, গ্যাস ও কয়লা আমদানির ওপর সম্পূর্ণ নিষেধাজ্ঞা দিয়েছে যুক্তরাষ্ট্র ও যুক্তরাজ্য। এদিকে রাশিয়া বলেছে, তাদের তেলের ওপর নিষেধাজ্ঞা আরোপ করা হলে ইউরোপে গ্যাসের সরবরাহ বন্ধ করে দেবে তারা।
গতকাল মঙ্গলবার (৮ মার্চ )যুক্তরাষ্ট্র প্রেসিডেন্ট জো বাইডেন এই নিষেধাজ্ঞার ঘোষণা দিয়ে বলেন, এই উদ্যোগের মানে হলো- যুক্তরাষ্ট্র জনগণ আরেকটি বড় ধরনের ধাক্কার মুখোমুখি হবেন। কিন্তু আমরা পুতিনের যুদ্ধে ভর্তুকি দেওয়ার অংশ হবো না।
গ্যাসের দাম বাড়ার আশঙ্কা থাকা সত্ত্বেও এই সিদ্ধান্ত যুক্তরাষ্ট্রে ব্যাপকভাবে দ্বিপক্ষীয় রাজনৈতিক সমর্থন পেয়েছে।
কয়েকদিন ধরেই শোনা যাচ্ছিল বাইডেন এমন ঘোষণা দিতে পারেন। ফলে, বিশ্ববাজারে তেলের দাম বাড়তে শুরু করে। আন্তর্জাতিক বাজারে ব্রেন্ট ক্রুডের দাম ৫ শতাংশের বেশি বেড়ে ব্যারেল প্রতি ১৩০ ডলারে দাঁড়িয়েছে।
বাইডেন এ বিষয়ে তার ইউরোপীয় মিত্র দেশেগুলোর সঙ্গে একজোট হয়ে কাজ করছেন। কিন্তু ইউরোপের জন্য রাশিয়ার তেল ও গ্যাসের উপর নিষেধাজ্ঞা আরোপ কঠিন। কারণ, তারা রাশিয়ার তেল-গ্যাসের উপর অনেকাংশে নির্ভরশীল।
ইউরোপীয় ইউনিয়ন (ইইউ) অবশ্য এখনই যুক্তরাষ্ট্রের মত এত কঠোর ব্যবস্থা গ্রহণ করতে পারছে না। কারণ, তারা তাদের গ্যাসের ৪০ শতাংশ এবং তেলের ৩০ শতাংশের যোগান পায় রাশিয়া থেকে। এই সরবরাহ হঠাৎ বন্ধ করা হলে সহসাই কোনো বিকল্প উৎস থেকে যোগান দেওয়া সম্ভব না।
বাইডেনের নিষেধাজ্ঞা আরোপের ঘোষণার কিছুক্ষণ আগেই যুক্তরাজ্যের প্রধানমন্ত্রী ঘোষণা করেছেন, তার দেশ এ বছরের শেষ নাগাদ পর্যায়ক্রমে রাশিয়ার তেল ও তেলজাত পণ্য আমদানি কমিয়ে আনতে শুরু করবে।
তিনি বলেন, এই সিদ্ধান্তের প্রভাব রাশিয়ার উপর ভয়ংকরভাবে পড়বে। নিষেধাজ্ঞার ফলে তাদের অর্থনীতি প্রবল চাপে পড়বে।
ইতোমধ্যেই যুক্তরাজ্যভিত্তিক সংস্থা শেল জানিয়ে দিয়েছে, তারা আর রাশিয়া থেকে তেল কিনবে না।
ইইউ’র প্রতিক্রিয়া
যুক্তরাষ্ট্র ও যুক্তরাজ্য এই ঘোষণা দিলেও ইইউ এই ধরনের নিষেধাজ্ঞা জারি করেনি। কারণ, জার্মানিসহ ইউরোপের অনেক দেশই রাশিয়ার গ্যাসের উপর নির্ভরশীল।
ইউরোপীয় কমিশন জানিয়েছে, তারা রাশিয়ার তেল ও গ্যাসের উপর নির্ভরশীলতা ২০৩০ সালের আগেই শেষ করে দেবে। তারা অন্য দেশ থেকে তেল ও গ্যাস আনার চেষ্টা করছে। তাছাড়া দ্রুত বিকল্প শক্তির উৎপাদন ও ব্যবহার বাড়ানোর চেষ্টাও করছে।
রাশিয়ার প্রতিক্রিয়া
রাশিয়া জানিয়েছে, তারাও কয়েকটি দেশে কিছু কাঁচামাল ও পরিশোধিত পণ্য পাঠানো বন্ধ করে দেবে। তবে কী কী পণ্য পাঠানো তারা বন্ধ করবে সেই তালিকা এখনো দেওয়া হয়নি। তেল ও গ্যাস ছাড়াও রাশিয়া থেকে পশ্চিমা দেশগুলো দানাশষ্য ও মাংস কেনে।
রাশিয়া আগেই হুমকি দিয়েছে, তাদের উপর তেল ও গ্যাস নিয়ে নিষেধাজ্ঞা জারি হলে, বিশ্ববাজারে তেলের দাম বেড়ে ব্যারেলপ্রতি ৩০০ ডলার হবে। তার ধাক্কা বিশ্বের প্রতিটি দেশের উপর এসে পড়বে। তাছাড়া তারা জার্মানিকেও গ্যাসের সরবরাহ বন্ধ করে দেয়ার হুমকি দিয়েছে।
জেলেনস্কির বক্তব্য
যুক্তরাষ্ট্র ও যুক্তরাজ্যের এই ঘোষণাকে স্বাগত জানিয়েছেন ইউক্রেনের প্রেসিডেন্ট ভলোদিমির জেলেনস্কি। তিনি বলেন, এটা একটা খুবই শক্তিশালী বার্তা। এখন যা পরিস্থিতি হলো, তাতে রাশিয়াকে হয় আন্তর্জাতিক আইন মানতে হবে, যুদ্ধ বন্ধ করতে হবে, নাহলে তাদের হাতে কোনো অর্থ থাকবে না।
তিনি বলেন, রাশিয়াকে দেয়া প্রতিটি সেন্ট বুলেট বা অস্ত্র বানাতে খরচ হয়। সেই অস্ত্র অন্য সার্বভৌম দেশের উপর আছড়ে পড়ে। আর আলোচনার মধ্যে দিয়ে লড়াই বন্ধ করতে হবে।
দাম বাড়ছে
রাশিয়ার উপর নিষেধাজ্ঞা জারি করার ফলে শুধু যে মস্কো চাপে পড়েছে তাই নয়, যুক্তরাষ্ট্র ও ইউরোপের দেশগুলোতেও তার প্রভাব পড়ছে। সব জায়গায় পেট্রোপণ্যের দাম বেড়েছে। তার প্রভাব সাধারণ মানুষের দৈনন্দিন জীবনের উপর পড়েছে। প্রায় সব দেশেই জিনিসের দাম কমবেশি বাড়ছে। -বিবিসি ও ডয়চে ভেলে
হককথা/এমউএ