যুক্তরাষ্ট্রের মধ্যবর্তী নির্বাচনের চূড়ান্ত ফলাফল এখনো পাওয়া যায়নি। তবে প্রাথমিক ফলাফলে দেখা গেছে, কংগ্রেসের উচ্চকক্ষ সিনেটের নিয়ন্ত্রণ নিয়ে ডেমোক্রেটিক পার্টি ও রিপাবলিকান পার্টির মধ্যে হাড্ডাহাড্ডি লড়াই চলছে। সিনেটের নিয়ন্ত্রণ শেষ পর্যন্ত কাদের হাতে যাবে, তা নির্ধারণে গুরুত্বপূর্ণ হয়ে উঠেছে তিনটি অঙ্গরাজ্য। এই তিন অঙ্গরাজ্য হলো জর্জিয়া, নেভাদা ও অ্যারিজোনা।
১০০ আসনের সিনেটে সংখ্যাগরিষ্ঠতার জন্য প্রয়োজন ৫১টি আসনে জয়। সবশেষ ফলাফলে ডেমোক্র্যাট ও রিপাবলিকানরা পেয়েছে যথাক্রমে ৪৮ ও ৪৯টি আসন। আর দুটি আসনে জয় পেলে সিনেট চলে যাবে রিপাবলিকানদের নিয়ন্ত্রণে।
শেষ খবর পাওয়া পর্যন্ত নেভাদায় এগিয়ে রয়েছেন রিপাবলিকান প্রার্থী অ্যাডাম ল্যাক্সাল্ট। আর অ্যারিজোনায় এগিয়ে ডেমোক্রেটিক প্রার্থী মার্ক কেলি। চূড়ান্ত ফলাফলে যদি নেভাদায় রিপাবলিকান ও অ্যারিজোনায় ডেমোক্র্যাটরা জয় পান, তাহলে দুই দলেরই সিনেটে আসনসংখ্যা হবে ৫০। ডেমোক্রেটিক পার্টির এক আসন কম হলেও ভাইস প্রেসিডেন্ট কমলা হ্যারিসের ‘কাস্টিং ভোট’ এর কারণে একটি অতিরিক্ত আসন পাবে দলটি।
সে ক্ষেত্রে সিনেটের নিয়ন্ত্রণ কাদের হাতে যাবে, তা নির্ধারিত হবে জর্জিয়ার ফলাফলের ওপর। সেখানে আরেক বিপত্তি। নির্বাচনের নিয়মানুযায়ী জয় পেতে একজন প্রার্থীকে ৫০ শতাংশ ভোট পেতে হয়। কিন্তু জর্জিয়ায় ডেমোক্রেটিক প্রার্থী রাফায়েল ওয়ারনক ও রিপাবলিকান হার্শেল ওয়ালকারের কেউই ৫০ শতাংশ ভোট পাননি। ফলে জর্জিয়ায় ভোট গড়িয়েছে রান-অফ বা দ্বিতীয় দফায়। আর দ্বিতীয় দফা ভোট অনুষ্ঠিত হবে আগামী ৬ ডিসেম্বর।
এদিকে কংগ্রেসের নিম্নকক্ষ হাউস অব রিপ্রেজেন্টেটিভস বা প্রতিনিধি পরিষদে নিয়ন্ত্রণ পাওয়ার পথে অনেকটা এগিয়ে রিপাবলিকান পার্টি। নিম্নকক্ষের ৪৩৫ আসনের মধ্যে ২০৯টিতে জয় নিশ্চিত করেছেন রিপাবলিকানরা। আর ডেমোক্রেটিকরা ১৮৯টি আসনে জয় পেয়েছেন। প্রতিনিধি পরিষদে সংখ্যাগরিষ্ঠতা পেতে মোট ২১৮টি আসনে জয় প্রয়োজন।
মধ্যবর্তী নির্বাচনে রিপাবলিকানরা যদি শেষ পর্যন্ত প্রতিনিধি পরিষদের নিয়ন্ত্রণ পান, তাহলে বিভিন্ন ইস্যুতে বেকায়দায় পড়বেন প্রেসিডেন্ট জো বাইডেন। ফলে কংগ্রেসে অনেক আইন পাসে বাধার সম্মুখীন হতে পারে বাইডেন প্রশাসন।
ডেমোক্র্যাটরা যদি কংগ্রেসে দখল ধরে রাখতে পারেন, তাহলে প্রেসিডেন্ট বাইডেন জলবায়ু পরিবর্তনের মতো বিষয়ে তাঁর পরিকল্পনা চালিয়ে যেতে, সরকার পরিচালিত স্বাস্থ্যসেবা কর্মসূচি প্রসারিত করতে, গর্ভপাতের অধিকার রক্ষা এবং বন্দুক নিয়ন্ত্রণকে কঠোর করতে সক্ষম হবেন।
আর যদি রিপাবলিকানরা উভয় কক্ষের নিয়ন্ত্রণ নেন, তাঁরা বাইডেন প্রশাসনের এজেন্ডাগুলো থামিয়ে দিতে পারবেন। এ ছাড়া তদন্ত কমিটিগুলোও নিয়ন্ত্রণ করতে সক্ষম হবেন। ফলে ২০২১ সালের ৬ জানুয়ারি ক্যাপিটল হিলে সাবেক প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের সমর্থকদের হামলার তদন্ত মাঝপথেই আটকে দিতে পারবেন।
এ ছাড়া আগের কিছু ইস্যুতে নতুন তদন্ত শুরু করতে পারেন রিপাবলিকানরা। যেমন—চীনের সঙ্গে জো বাইডেনের ছেলের কথিত ব্যবসায়িক লেনদেন বা আফগানিস্তান থেকে তড়িঘড়ি মার্কিন সেনা প্রত্যাহার। এমনকি রিপাবলিকান আধিপত্য ইউক্রেনের জন্য সহায়তা দেওয়ার মতো বাইডেনের বৈদেশিক নীতিকেও বাধাগ্রস্ত করতে পারে।