যুক্তরাষ্ট্রে প্রচন্ড তুষার ঝড় : বড় ঝড়ের শঙ্কা : অন্তত ২০টি রাজ্যের সাড়ে আট কোটি মানুষ স্বেচ্ছা গৃহবন্দী : জরুরী অবস্থা জারী
- প্রকাশের সময় : ০৫:১৮:৩৫ অপরাহ্ন, শনিবার, ২৩ জানুয়ারী ২০১৬
- / ৯৫৯ বার পঠিত
নিউইয়র্ক: প্রচন্ড তুষারঝড়ের কবলে যুক্তরাষ্ট্র। ব্যাপক তুষারপাতের ফলে বিশ্বের রাজধানী নিউইয়র্ক সহ ওয়াশিংটন ডিসি, আরকানসাস, টিনেসি, মেরিল্যান্ড, নর্থ ক্যারোলিনা, নিউজার্সি, কানেকটিকাট, ম্যাসাচুসেটস, ডেলাওয়ার, রোডআইল্যান্ড, পেনসিলভানিয়া ও কেনটাকি সহ বিভিন্ন অঙ্গরাজ্যের গোটা এলাকা তুষারাবৃত। যেন শেতশুভ্র মাঠ। অন্তত ২০টি রাজ্যের সাড়ে আট কোটি মানুষ এখন তুষারঝড়ের কবলে। তুষার ঝড়ের সঙ্গে বইছে প্রবল বাতাস। শুক্রবার (২২ জানুয়ারী) বিকেলে বিভিন্ন অঙ্গরাজ্যে তুষারপাত শুরু হয়। নিউইয়র্কে তুষারপাত শুরু হয়েছে শুক্রবার রাত ১০টার থেকে। তুষারঝড়ের কারণে বিভিন্ন অঙ্গরাজ্যে বিদ্যুৎ সরবরাহ বিঘিœত হচ্ছে। এসব অঙ্গরাজ্যের দুই লাখ মানুষ বিদ্যুৎহীন হয়ে পড়েছে বলে রাজ্যগুলোর প্রশাসন জানিয়েছে। এদিকে তুষারপাতের কারণে এরই মধ্যে গাড়ি দুর্ঘটনায় ৮জন নিহত হয়েছে। যুক্তরাষ্ট্রের আরকানসাস, টিনেসি, নর্থ ক্যারোলিনা ও কেনটাকি অঞ্চলে এসব প্রাণহানি ঘটেছে। অপরদিকে তাষারঝড়ের কারণে এ পর্যন্ত ৬ হাজারের বেশি ফ্লাইট বাতিল করা হয়েছে। এর অধিকাংশই নিউইয়র্ক ও ফিলাডেলফিয়ার বিমানবন্দরের। শুধু শুক্রবারই বিলম্বিত হয়েছে ৭,০০০ ফ্লাইট। খবরে বলা হয়েছে: এই তুষারঝড়ের পরিস্থিতি তৈরি যুক্তরাষ্ট্রের মধ্য আটলান্টিক অঞ্চলে। এ অঞ্চলগুলো তিন ফুট পর্যন্ত বরফে সয়লাব হয়ে যেতে পারে বলে আশকা করা হচ্ছে। যুক্তরাষ্ট্রের আবহাওয়ার পূর্বাভাস থেকে জানা গেছে, তুষারঝড়ে মেরিল্যান্ডের বাল্টিমোর এবং ওয়াশিংটন ডিসিতে ২ থেকে ৩ ফুট বরফ জমতে পারে। আর ঘণ্টায় বাতাসের গতিবেগ হতে পারে ৪০ থেকে ৬০ মাইল। যুক্তরাষ্ট্রের ন্যাশনাল ওয়েদার সার্ভিসের পরিচালক লুইস উসেলিনি এ ঝড়কে খুবই বিপজ্জনক বলে বর্ণনা করেছেন। তিনি বলেন, অন্তত পাঁচ কোটি লোক এই ঝড়ে দুর্ভোগ পোহাবে। উদ্ভুত পরিস্থিতিতে কার্যত: মানুষজন স্বেচ্ছা গৃহবন্দী হয়ে পড়েছেন। উল্লেখ্য, যুক্তরাষ্ট্রের ৯০ বছরের ইতিহাসে এমন প্রাকৃতিক দুর্যোগ দেখা যায়নি। ১৯২২ সালের পর এটি হচ্ছে সবচেয়ে মারাত্মক তুষারঝড়। ঐবছর (১৯২২ সাল) ওয়াশিংটন ডিসিতে ২৮ ইঞ্চি বরফ জমেছিল, তা ছিল এযাবতকালের রেকর্ড।
ওয়াশিংটন ডিসিতে জনজীবনের জন্যে মারাত্মক হুমকিস্বরূপ তুষারঝড়ের কারণে রাজধানীর সব রেল চলাচল বন্ধ ঘোষণা করা হয়েছে। সোমবার ভোর পর্যন্ত তা বন্ধ থাকবে। নিউইয়র্কে সিটিতেও জরুরী অবস্থা জারী করে সিটির সব বাসিন্দাদের জরুরি প্রয়োজন ছাড়া কেউ যেন ঘরের বাইরে বের না হয় তার পরামর্শ দেওয়া হয়েছে। বন্ধ করে দেয়া হয়েছে যানবাহন। তুষারঝড়ের কারণে ইতিমধ্যেই নিউইয়র্কসহ ম্যারিল্যান্ড, নর্থ ক্যারোলিনা, ভার্জিনিয়া, পেনসিলভেনিয়া প্রভৃতি অঙ্গরাজ্যে জরুরি অবস্থা জারি করা হয়েছে। ওয়াশিংটন ডিসিতে ৩০০ এবং নিউইয়র্ক সিটিতে ন্যাশনাল গার্ডের ৬০০ সদস্যকে প্রস্তুত রাখা হয়েছে যে কোনো ধরনের প্রয়োজনে সাড়া দেওয়ার জন্যে। পুলিশ এবং দমকল বাহিনীতে ছুটি বাতিল করা হয়েছে।
যুক্তরাষ্ট্রের জাতীয় আবহাওয়া দপ্তর আগেই তুষার ঝড়ের সতর্ক বার্তা জারি করেছিল। বলা হয়েছিল শুক্রবার সন্ধ্যা থেকে হালকা তুষার কণা ঝরবে এবং শনিবার সকাল ৮টা থেকে শুরু হবে তুষার ঝড়। কিন্তু বাস্তবে শুক্রবার মধ্যরাত থেকেই তুষার ঝড় শুরু হয়েছে যায়। শুক্রবার রাত ১০টা থেকে নিউইয়র্কে তুষার পড়া শুরু করে। তুষাড় ঝড়ে আক্রান্ত অন্য রাজ্যগুলোতে গণপরিবহন সম্পূর্ণরূপে বন্ধ ঘোষণা করা হলেও নিউইয়র্কের প্রধান গণপরিবহন ‘সাবওয়ে’ বা পাতাল ট্রেন সার্ভিস চালু রাখা হয়েছে।
এদিকে পূর্ব প্রস্তুতি হিসেবে শুক্রবার বিকাল থেকেই নিউইয়র্ক সিটির প্রায় সবগুলো সড়কে হাজার হাজার টন লবণ ছিটানো হয়। প্রশাসনের পূর্ব প্রস্তুতির ঘোষণার প্রেক্ষিতে সিটিবাসীকে ব্যাপক প্রস্তুতি নিতে দেখা যায়। বিশেষ করে জরুরী প্রয়োজনীয় খাবার, মোমবাতি, দিয়াশলাই, টর্চ লাইটসহ অন্যান্য সামগ্রী ক্রয় করতে দোকানগুলোতে ভীড় লক্ষনীয় ছিলো শুক্রবার। অনেকেই আগে-ভাগেই যথাস্থানে গাড়ী পার্ক করে বাসায় ফিরে যায়। তবে তুষার ঝড় সাপ্তাহের উইকেন্ডে আর্থাৎ শনি-রোববার আঘাত হানায় সতর্কতা অবলম্বন সহজ হয়ে যায়। নিউইয়র্ক সিটির মেয়র বিল ডি ব্লাজিও শুক্রবার জরুরি এক সাংবাদিক সম্মেলনে সিটিবাসীকে শনিবার বাসায় অবস্থান করার আহ্বান জানিয়েছেন। মেয়র এ ঝড়কে এই ‘মওসুমের প্রথম বড় ঝড়’ বলে অভিহিত করেছেন।
চলতি বছর নিউইয়র্কে প্রথমবারের মতো ব্যাপকভাবে তুষার পড়ার কারণে অনেকেই রাস্তায় বেরিয়ে বা খোলা মাঠ বা পার্কে গিয়ে আনন্দ উপভোগ করতে দেখা যায়। বিশেষ করে প্রথমবারের মতো যারা নিউইয়র্কের তুষারপাত দেখছেন তাদের কাছে তারা নতুন অভিজ্ঞতা উপভোগ করছেন। তাদের অনেকেই পরিবার-পরিজন নিয়ে বাসা-বাড়ী থেকে বেড়িয়ে তুষার পড়া উপভোগ করছেন।
অপরদিকে বাংলাদেশ থেকে উদ্বিগ্ন হয়ে স্বজনরা প্রতিনিয়ত ফোনে খোঁজ-খবর নিচ্ছেন। তবে বাংলাদেশীরা নিরাপদেই আছেন। এ রিপোর্ট লেখা পর্যন্ত যুক্তরাষ্ট্রে বসবাসকারী কোন বাংলাদেশী কোন ক্ষয়ক্ষতির সম্মুখীন হননি।