হককথা রিপোর্ট: অবশেষে সকল জল্পনা-কল্পনার অবসান ঘটলো। রুদ্ধশ্বাস ভোট লড়াইয়ের পর যুক্তরাষ্ট্রের ৪৬তম প্রেসিডেন্ট হিসেবে নির্বাচিত হয়েছেন ডেমোক্র্যাটদলীয় প্রার্থী জো বাইডেন। ক্ষমতাসীন রিপাবলিকান প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের সঙ্গে হাড্ডাহাড্ডি প্রতিদ্ব›িদ্বতার পর ৫৩৮ ইলেকটোরাল ভোটের মধ্যে ম্যাজিক সংখ্যা ২৭০টি নিশ্চিত করেছেন তিনি। শনিবার পেনসিলভানিয়ার ২০টি ইলেকটোরাল ভোট জয়ের মধ্য দিয়ে তার ২৭৩টি ইলেকটোরাল ভোট নিশ্চিত হয়। একইসঙ্গে যুক্তরাষ্ট্রের ইতিহাসে প্রথম নারী ও প্রথম কৃষ্ণাঙ্গ ভাইস প্রেসিডেন্ট হিসেবে নির্বাচিত হয়েছেন সিনেটর কমলা হ্যারিস। আমেরিকান চ্যানেল সিএনএন, বৃটিশ মিডিয়া বিবিসি এই তথ্য নিশ্চিত করেছে।
সিএনএন, বিবিসি বলছে, প্রেসিডেন্ট নির্বাচনে ২৭০ ইলেক্টরালের লক্ষ্যমাত্রা পার হয়ে ২৮৪টি ইলেক্টরাল কলেজ ভোট পেয়ে জয়ী হয়েছেন ডেমোক্র্যোট পার্টির প্রার্থী জো বাইডেন। নির্বাচনী ফল নির্ধারণকারী পেনসেলভেনিয়া জয়ের পর প্রেসিডেন্টের আসন নিশ্চিত করেন বাইডেন। এর ফলে ১৯৯০ সালের পর ডোনাল্ড ট্রাম্পই প্রথম প্রেসিডেন্ট যিনি দ্বিতীয় মেয়াদে প্রেসিডেন্ট নির্বাচিত হতে পারেননি। বর্তমান ফল অনুয়ায়ী ট্রাম্প ২১৪টি ইলেক্টরাল কলেজ ভোট পেয়েছেন। এদিকে জয় আসবেই ধরে নিয়ে শেষ মুহূর্ত পর্যন্ত দাঁতে দাঁত কামড়ে পড়েছিলেন তিনি। একের পর এক রাজ্যে ধাক্কা খেলেও, ভোট পুনঃগণনার দাবিতে অনড় ছিলেন। কিন্তু পেনসিলভেনিয়ার দৌলতে শেষ মুহূর্তে তাঁর মুখের গ্রাস ছিনিয়ে নিলেন জো বাইডেন। তাই দ্বিতীয় বার আর হোয়াইট হাউসের দখল নেওয়া হলো না ট্রাম্পের। ৪৬তম প্রেসিডেন্ট হিসেবে তাঁর জায়গায় বাইডেনকেই বেছে নিলেন আমেরিকার সাধারণ মানুষ।
২৫৩ ইলেক্টরাল ভোট নিয়ে এদিন শুরু থেকেই এগিয়ে ছিলেন জো বাইডেন। ট্রাম্পের সপক্ষে ভোট ছিল ২১৪। জর্জিয়ায় ভোট পুনঃগণনার সিদ্ধান্ত নেওয়ার পর আশায় বুক বাঁধতে শুরু করে ট্রাম্প শিবির। ডেমোক্র্যাটদের গড় হিসেবে পরিচিত পেনসিলভেনিয়ার দিকেই তাকিয়ে ছিলেন বাইডেন ও তাঁর সমর্থকরা। তাঁরা জানতেন, সেখানে ২০টি ইলেক্টরাল ভোট জিতে নিতে ট্রাম্পের আর কিছু করার থাকবে না। শেষমেষ তাই হলো। পেনসিলভেনিয়াই বাইডেনকে জয় এনে দিল।
যদিও এখনও নর্থ ক্যারোলিনা, জর্জিয়া, অ্যারিজোনা, নেভাদা ও আলাস্কা- এই পাঁচটি রাজ্যের ফল ঘোষণা বাকি রয়েছে। এর মধ্যে আদালতের নির্দেশে জর্জিয়ার ভোট পুনঃগণনা হচ্ছে। নির্বাচনের ফল জানতে সবার দৃষ্টি ছিল পেনসিলভানিয়া অঙ্গরাজ্যের দিকে। এই রাজ্যে জিতলেই বাইডেনের জয় নিশ্চিত হতো। হয়েছেও সেটাই। পেনসিলভানিয়ায় জয়ের ফলে আগেই ২৫৩ ইলেকটোরাল ভোট পাওয়া বাইডেনের মোট ইলেকটোরাল ভোটের সংখ্যা দাঁড়িয়েছে ২৭৩। বাকি পাঁচটি অঙ্গরাজ্যে ট্রাম্প জয় পেলেও তার ইলেকটোরাল ভোটের সংখ্যা দাঁড়াবে ২৬৫। অবশ্য এই সব রাজ্যের মধ্যে আলস্কা ও নর্থ ক্যারোলিনা ছাড়া অন্যান্য রাজ্যে বাইডেন এগিয়ে রয়েছেন।
এদিকে মঙ্গলবার (৩ নভেম্বর) অনুষ্ঠিত নির্বাচনের পর গত দু’দিন আগে থেকেই জয়ের আভাস দিচ্ছিলেন জো বাইডেন। শুক্রবার রাতে ডেলওয়ারে নিজ শহর উইলমিংটন থেকে দেয়া নির্বাচন পরবর্তী এক ভাষণে বাইডেন বলেছিলেন, আমরা এখনও বিজয়ের চূড়ান্ত ঘোষণা পাইনি। তবে সংখ্যা বলছে এটি পরিষ্কার, আমরা এই প্রতিযোগিতায় জিতে যাচ্ছি। ডেমোক্র্যাট প্রার্থী বলেছিলেন, আমরা সাত কোটি ৪০ লাখের বেশি ভোট পেয়েছি; যা যুক্তরাষ্ট্রের ইতিহাসে আর কোনো প্রেসিডেন্ট প্রার্থী পাননি। অবশেষে সত্যি হলো বাইডেনের দাবী। নির্বাচনে ব্যাটল রাজ্য হিসেবে পরিচিত পেনসেলভেনিয়ায় জয়ের মধ্য দিয়ে প্রেসিডেন্ট নির্বাচিত হলেন ৭৭ বছরের জো বাইডেন।
অপরদিকে ভোট গণনার শুরু থেকেই ক্ষমতাসীন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প ভোট জালিয়াতির কথা বলে আসছিলেন। তবে তাঁর এ অভিযোগ কেউ আমলে নিচ্ছেলো না। যুক্তরাষ্ট্রের ফেডারেল নির্বাচন কমিশনার এলেন ওয়াইনট্রাব বলেছেন, এ বছরের প্রেসিডেন্ট নির্বাচনে জালিয়াতির কোনো প্রমাণ মেলেনি। শনিবার (৭ অক্টোবর) সিএনএনকে তিনি বলেন, রাজ্যের ও স্থানীয় কর্মকর্তারা, সারা দেশের নির্বাচন কর্মীরা কাজ করে যাচ্ছেন। নির্বাচন যেভাবে হয়েছে তা নিয়ে খুব সামান্য কিছু অভিযোগ আমরা পেয়েছি। তিনি আরও বলেন, আমি বলতে চাই, ভোট জালিয়াতির কোনো ধরনের প্রমাণ কোথাও পাওয়া যায়নি। অবৈধভাবে ভোট দেওয়ার কোনো প্রমাণ নেই। তিনি আরও বলেন, জালিয়াতির কোনো অভিযোগ কোথাও পাওয়া যায়নি। যেসব অভিযোগ করা হয়েছে, সেখানেও কোনো প্রমাণ দেওয়া হয়নি।