নিউইয়র্ক ০৬:৩৮ পূর্বাহ্ন, শনিবার, ২১ ডিসেম্বর ২০২৪, ৭ পৌষ ১৪৩১ বঙ্গাব্দ
বিজ্ঞাপন :
মঙ্গলবারের পত্রিকা সাপ্তাহিক হককথা ও হককথা.কম এ আপনার প্রতিষ্ঠানের বিজ্ঞাপন দিতে যোগাযোগ করুন +1 (347) 848-3834

মানুষ তখনই শক্তিশালী হয় যখন সবাই ঐক্যবদ্ধ

রিপোর্ট:
  • প্রকাশের সময় : ০৬:৫০:৫৩ অপরাহ্ন, রবিবার, ৫ ফেব্রুয়ারী ২০১৭
  • / ৭২৬ বার পঠিত

ঢাকা: গত ২১ জানুয়ারী শনিবার যুক্তরাষ্ট্র শুধু নয়, সারা বিশ্বে নারীরা বিক্ষোভের ডাক দেন। এতে ব্যাপক সাড়াও পাওয়া যায়। প্রায় ২০ লাখ বিক্ষোভকারী এতে অংশ নিয়ে প্রতিবাদের ঝড় তোলেন। বলার অপেক্ষা রাখে না, এ বিক্ষোভ ডোনাল্ড ট্রাম্পের নানা ভারসাম্যহীন কর্মসূচির বিরুদ্ধে। খোদ যুক্তরাষ্ট্রের নারীরা সেখানে সদ্য ক্ষমতাদখলকারী ট্রাম্পের বিরুদ্ধে রুখে দাঁড়িয়েছেন, সেহেতু বিশ্বের অন্যান্য দেশও তাদের ডাকে সাড়া দেবে- এমনটিই স্বাভাবিক। ওয়াশিংটনে ‘উইম্যান মার্চ’ বা নারীদের পদযাত্রা আয়োজন করা হয় মূলত একটি উদ্দেশ্যকে সামনে নিয়ে। আর তা হলো ট্রাম্পের প্রেসিডেন্সি নিয়ে উদ্বেগ-উৎকণ্ঠা জানানো। রাজপথে নেমে আসে যুক্তরাষ্ট্র জুড়ে প্রায় ১৮-২০ লাখ নারী। ট্রাম্পের প্রেসিডেন্সি ছাড়াও আরো বেশ কয়েকটি কারণে ফুঁসে ওঠেন নারীরা। এর কিছু কারণ গণমাধ্যমকে জানিয়েছেন মিছিলে অংশগ্রহণকারীরা। তাদের অভিযোগ, ডোনাল্ড ট্রাম্পের আমলে রীতিমতো হুমকিতে পড়তে পারে নারী অধিকারের পাশাপাশি অন্যান্য নাগরিক অধিকার। প্রায় দুই মাইল দীর্ঘ এক শান্তিপূর্ণ পদযাত্রা ছিল এটি। তাদের সবাই বলেছেন, ঘৃণা ও বিভক্তির রাজনীতি ছড়াচ্ছেন ট্রাম্প। প্রতিবাদকারীদের অনেকে এসেছেন বাস, রেলে এমনকি অনেকে বিমানে করেও।
অভিষেক অনুষ্ঠানে নিন্দিতও হয়েছেন ট্রাম্প। কারণ নারীদের সম্পর্কে কুরুচিপূর্ণ মন্তব্য করেছেন তিনি। সারা বিশ্বে ৬৫০টির বেশি ট্রাম্পবিরোধী নারী সমাবেশ হয়। অংশ নেয়া নারীদের হাতে ছিল ‘নারীর শক্তি বনাম ট্রাম্প’, ‘ট্রাম্পেকে ছুড়ে ফেলুন’ ইত্যাদি সেøাগান লেখা ব্যানার। মেন্দি ফ্রাইব্যান্ড। যিনি সিডনি বিক্ষোভের আয়োজক। তিনি বলেন, ‘আমরা চাই সারা বিশ্বের নারীদের সম্মিলিত স্বর প্রকাশ পাক। ট্রাম্পবিরোধী সমাবেশ করছি না আমরা, এ সমাবেশ নারীবিদ্বেষী মনোভাব, ঘৃণাভরা কটূক্তি, গোঁড়ামি, বিদেশীদের প্রতি অহেতুক ভয় ছড়ানো প্রভৃতির জন্য।
কয়েকজন বন্ধুকে সঙ্গে নিয়ে সান ফান্সিসকো থেকে আসা ক্রিস্টিনা কগলিন বলেছেন, ‘আমাকেও দাঁড়াতে হবে কিছু বিষয়ের ব্যাপারে। কারণ নিরাপত্তাহীনতাকে মেনে নেয়া যায় না।’ আরিজোনা থেকে আসা তানিয়া গ্যাকসিওলা বলেছেন, ‘ট্রাম্প যেসব ভারসাম্যহীনতার অনুমোদন চান তা গ্রহণযোগ্য নয়। এই আয়োজন এমন কিছু বুঝানোর জন্য। আশা করা যায় তিনি তা বুঝবেন, তার নজরে আসবে আজকের মিছিল।’
নর্থ ক্যারোলিনা থেকে আগত প্রবীণ তৃষ্ণা নরম্যান। তার হাতে প্ল্যাকার্ডে লেখা ছিল ‘গ্যাসলাইটার ইন চিফ থেকে সাবধান।’ এমন ব্যঙ্গাত্মক কিছু বলার কারণ আছে। মিথ্যাচার, ভুল সিদ্ধান্ত, সন্দেহ ইত্যাদি অনেক নেতিবাচক প্রভাব ফেলতে পারে। তৃষ্ণা আরো বলেন, ‘আমাদের অধিকার আদায়ের দায়িত্ব আমারও। মানুষ এখনই শক্তিশালী হয় যখন সবাই ঐক্যবদ্ধ হয়।’ অন্য আরেকজন বলেন, ‘আমার স্বামীর পরিবার মুসলমান। তারা সন্ত্রাসী নয়। তবে অভিবাসী।’ কৃষ্ণাঙ্গ নারী কিম লি উইলকিন মন্তব্য করেন, ধর্মীয় অধিকার, মানবাধিকার প্রভৃতি গুরুত্বপূর্ণ বিষয়ে সোচ্চার বেশির ভাগ আমেরিকান। এখানে এত মানুষের সমাগম এ কারণেই।
ওয়াশিংটনে আয়োজিত উইম্যান মার্চে আসা মারা নামান বলেন, ‘এত নারী একসঙ্গে রাজপথে নামা মানে ইচ্ছা করলেই আমাদের ঠকানো বা বঞ্চিত করা যাবে না।’ তরুণী মারিয়া ইমাম মন্তব্য করেন, ‘এত অল্প বয়সে ইতিহাসের একটি অংশ হতে হয়েছে আমাকে। ভবিষ্যতে আমি এই র‌্যালির গল্প শোনাবো আমাদের ছেলেমেয়েদের।’
সবচেয়ে কম বয়সে নোবেল শান্তি পুরস্কারজয়ী তরুণী মালালা ইউসুফজাই ব্যথিত কণ্ঠে বলেছেন, ‘ট্রাম্পের অভিবাসন আদেশ আমাকেও দুঃখ দিয়েছে। পৃথিবীর সবচেয়ে অরক্ষিত শিশু ও পরিবারগুলোর দিকে তার যেন নজর পড়ে। আমার হৃদয় ভেঙে দিয়েছে তার এ সংক্রান্ত পক্ষপাত বিবৃতি।’
প্রায় ৩২ বছর বয়সী তরুণী মুনিরা আহমেদ। তিনি মার্কিন নাগরিক হলেও বাংলাদেশী বংশোদ্ভূত। নিউইয়র্কের কুইন্স এলাকায় থাকেন। বছর কয়েক আগে তিনি নিজের একটি ছবি তুলেছিলেন যুক্তরাষ্ট্রের পতাকাকে হিজাব বানিয়ে। পোস্টার আকারে তার সেই ছবি শোভা পায় বিক্ষোভকারীদের হাতে হাতে। আর তা নয়া প্রেসিডেন্ট ট্রাম্পের বিরুদ্ধে। গণমাধ্যমেও স্থান করে নেয় এ সংক্রান্ত একটি প্রতিবেদনে। মুনিরা বলেন, ‘এ ঘটনা জানাজানি হলে অনেকে শুধু বিস্মিতই হয়নি, আনন্দে জড়িয়েও ধরেছে আমাকে।’ তিনি আরো বলেন, ‘কোনো ভালো কিছুরই বিরোধী নয় এটি। আমি অন্যদের মতোই অতি সাধারণ একজন আমেরিকান। একজন মুসিলম নারীও। যা কিছু মন্দ তার প্রতিবাদ করা দরকার।’ মুসলমানদের নিষিদ্ধ করার নীতিগত একেবারেই অযৌক্তিক। অনেকে বলেছেন, মুনিরা আহমেদের ছবি থেকে তৈরি পোস্টারটির সাংস্কৃতিক প্রভাব অনেক বেশি, সবচেয়ে বেশি বললেও বাড়িয়ে বলা যাবে না। মুনিরাও রীতিমতো হতাশা প্রকাশ করেন ট্রাম্পের বিজয়ে। ট্রাম্প প্রেসিডেন্ট হন অধিকাংশ মানুষের ভোট না পেয়েও। আমেরিকা থেকে অন্যান্য লোকের নৈতিক সমর্থন নেই ওই মনোভাবের প্রতি এমনটিও বলেছেন মুনিরা।
বিক্ষোভে অংশ নেয়া অপর এক বাংলাদেশী মুসলিম নারী তারিহা চৌধুরী। তারিহা বলেন, ‘খুবই ভয়ঙ্কর সিদ্ধান্তগুলো। ইসলামভীতি বেড়ে চলেছে ট্রাম্প নির্বাচিত হওয়ার পর থেকে। বর্ণবাদীদের হাতে দেশটির ক্ষমতা। এ থেকে আমরা কী আশা করতে পারি?’
ভোটদানে বিরত ছিলেন প্রায় ৪৩ শতাংশ লোক। গত প্রায় ২০ বছরে সবচেয়ে বেশি ভোটদানে বিরত থাকার এই হার বা পরিমাণ। প্রায় ২৩ কোটি ভোটারের মধ্যে বিরত ছিলেন প্রায় ১১ কোটি। ট্রাম্পকে ভোট দেননি প্রতি চারজনের মধ্যে তিনজনই প্রায়। তবু নির্বাচিত ট্রাম্প। হায় মার্কিন গণতন্ত্র। প্রসঙ্গক্রমে বলতে হয়, স্থিতাবস্থারই নতুন সংস্করণের প্রতিশ্রুতি ছিল হিলারির প্রচারে। ধনীশ্রেষ্ঠ ১ শতাংশের হাতে রয়েছে মার্কিন আয়ের (জাতীয়) পায় ৯৭ শতাংশ। তাদেরই একজন ট্রাম্প। তার প্রচারাভিযানে প্রায় ৩৭ কোটি ডলার ব্যয় করা হয়। নানা সঙ্কট দুর্বিষহ করে তুলছে মানুষের জীবনকে। বহু মানুষ রীতিমতো নরকযন্ত্রণায়। অনেকের খোয়া গেছে কাজ, পেনশন ইত্যাদি। নিরাপত্তার সব রক্ষাকবচও হারিয়েছেন। অনেক বিশেষজ্ঞ বলেছেন, যুক্তরাষ্ট্রে নতুন কোনো প্রেসিডেন্টের দায়িত্ব গ্রহণকে ঘিরে নিকট অতীতে এমন আন্দোলন হয়েছে বলে আমাদের জানা নেই। সময়ই বলে দেবে তা কত দূর গড়ায় বা কোন দিকে মোড় নেয়। (নয়া দিগন্ত)

সোশ্যাল মিডিয়ায় খবরটি শেয়ার করুন

আপনার মন্তব্য লিখুন

About Author Information

মানুষ তখনই শক্তিশালী হয় যখন সবাই ঐক্যবদ্ধ

প্রকাশের সময় : ০৬:৫০:৫৩ অপরাহ্ন, রবিবার, ৫ ফেব্রুয়ারী ২০১৭

ঢাকা: গত ২১ জানুয়ারী শনিবার যুক্তরাষ্ট্র শুধু নয়, সারা বিশ্বে নারীরা বিক্ষোভের ডাক দেন। এতে ব্যাপক সাড়াও পাওয়া যায়। প্রায় ২০ লাখ বিক্ষোভকারী এতে অংশ নিয়ে প্রতিবাদের ঝড় তোলেন। বলার অপেক্ষা রাখে না, এ বিক্ষোভ ডোনাল্ড ট্রাম্পের নানা ভারসাম্যহীন কর্মসূচির বিরুদ্ধে। খোদ যুক্তরাষ্ট্রের নারীরা সেখানে সদ্য ক্ষমতাদখলকারী ট্রাম্পের বিরুদ্ধে রুখে দাঁড়িয়েছেন, সেহেতু বিশ্বের অন্যান্য দেশও তাদের ডাকে সাড়া দেবে- এমনটিই স্বাভাবিক। ওয়াশিংটনে ‘উইম্যান মার্চ’ বা নারীদের পদযাত্রা আয়োজন করা হয় মূলত একটি উদ্দেশ্যকে সামনে নিয়ে। আর তা হলো ট্রাম্পের প্রেসিডেন্সি নিয়ে উদ্বেগ-উৎকণ্ঠা জানানো। রাজপথে নেমে আসে যুক্তরাষ্ট্র জুড়ে প্রায় ১৮-২০ লাখ নারী। ট্রাম্পের প্রেসিডেন্সি ছাড়াও আরো বেশ কয়েকটি কারণে ফুঁসে ওঠেন নারীরা। এর কিছু কারণ গণমাধ্যমকে জানিয়েছেন মিছিলে অংশগ্রহণকারীরা। তাদের অভিযোগ, ডোনাল্ড ট্রাম্পের আমলে রীতিমতো হুমকিতে পড়তে পারে নারী অধিকারের পাশাপাশি অন্যান্য নাগরিক অধিকার। প্রায় দুই মাইল দীর্ঘ এক শান্তিপূর্ণ পদযাত্রা ছিল এটি। তাদের সবাই বলেছেন, ঘৃণা ও বিভক্তির রাজনীতি ছড়াচ্ছেন ট্রাম্প। প্রতিবাদকারীদের অনেকে এসেছেন বাস, রেলে এমনকি অনেকে বিমানে করেও।
অভিষেক অনুষ্ঠানে নিন্দিতও হয়েছেন ট্রাম্প। কারণ নারীদের সম্পর্কে কুরুচিপূর্ণ মন্তব্য করেছেন তিনি। সারা বিশ্বে ৬৫০টির বেশি ট্রাম্পবিরোধী নারী সমাবেশ হয়। অংশ নেয়া নারীদের হাতে ছিল ‘নারীর শক্তি বনাম ট্রাম্প’, ‘ট্রাম্পেকে ছুড়ে ফেলুন’ ইত্যাদি সেøাগান লেখা ব্যানার। মেন্দি ফ্রাইব্যান্ড। যিনি সিডনি বিক্ষোভের আয়োজক। তিনি বলেন, ‘আমরা চাই সারা বিশ্বের নারীদের সম্মিলিত স্বর প্রকাশ পাক। ট্রাম্পবিরোধী সমাবেশ করছি না আমরা, এ সমাবেশ নারীবিদ্বেষী মনোভাব, ঘৃণাভরা কটূক্তি, গোঁড়ামি, বিদেশীদের প্রতি অহেতুক ভয় ছড়ানো প্রভৃতির জন্য।
কয়েকজন বন্ধুকে সঙ্গে নিয়ে সান ফান্সিসকো থেকে আসা ক্রিস্টিনা কগলিন বলেছেন, ‘আমাকেও দাঁড়াতে হবে কিছু বিষয়ের ব্যাপারে। কারণ নিরাপত্তাহীনতাকে মেনে নেয়া যায় না।’ আরিজোনা থেকে আসা তানিয়া গ্যাকসিওলা বলেছেন, ‘ট্রাম্প যেসব ভারসাম্যহীনতার অনুমোদন চান তা গ্রহণযোগ্য নয়। এই আয়োজন এমন কিছু বুঝানোর জন্য। আশা করা যায় তিনি তা বুঝবেন, তার নজরে আসবে আজকের মিছিল।’
নর্থ ক্যারোলিনা থেকে আগত প্রবীণ তৃষ্ণা নরম্যান। তার হাতে প্ল্যাকার্ডে লেখা ছিল ‘গ্যাসলাইটার ইন চিফ থেকে সাবধান।’ এমন ব্যঙ্গাত্মক কিছু বলার কারণ আছে। মিথ্যাচার, ভুল সিদ্ধান্ত, সন্দেহ ইত্যাদি অনেক নেতিবাচক প্রভাব ফেলতে পারে। তৃষ্ণা আরো বলেন, ‘আমাদের অধিকার আদায়ের দায়িত্ব আমারও। মানুষ এখনই শক্তিশালী হয় যখন সবাই ঐক্যবদ্ধ হয়।’ অন্য আরেকজন বলেন, ‘আমার স্বামীর পরিবার মুসলমান। তারা সন্ত্রাসী নয়। তবে অভিবাসী।’ কৃষ্ণাঙ্গ নারী কিম লি উইলকিন মন্তব্য করেন, ধর্মীয় অধিকার, মানবাধিকার প্রভৃতি গুরুত্বপূর্ণ বিষয়ে সোচ্চার বেশির ভাগ আমেরিকান। এখানে এত মানুষের সমাগম এ কারণেই।
ওয়াশিংটনে আয়োজিত উইম্যান মার্চে আসা মারা নামান বলেন, ‘এত নারী একসঙ্গে রাজপথে নামা মানে ইচ্ছা করলেই আমাদের ঠকানো বা বঞ্চিত করা যাবে না।’ তরুণী মারিয়া ইমাম মন্তব্য করেন, ‘এত অল্প বয়সে ইতিহাসের একটি অংশ হতে হয়েছে আমাকে। ভবিষ্যতে আমি এই র‌্যালির গল্প শোনাবো আমাদের ছেলেমেয়েদের।’
সবচেয়ে কম বয়সে নোবেল শান্তি পুরস্কারজয়ী তরুণী মালালা ইউসুফজাই ব্যথিত কণ্ঠে বলেছেন, ‘ট্রাম্পের অভিবাসন আদেশ আমাকেও দুঃখ দিয়েছে। পৃথিবীর সবচেয়ে অরক্ষিত শিশু ও পরিবারগুলোর দিকে তার যেন নজর পড়ে। আমার হৃদয় ভেঙে দিয়েছে তার এ সংক্রান্ত পক্ষপাত বিবৃতি।’
প্রায় ৩২ বছর বয়সী তরুণী মুনিরা আহমেদ। তিনি মার্কিন নাগরিক হলেও বাংলাদেশী বংশোদ্ভূত। নিউইয়র্কের কুইন্স এলাকায় থাকেন। বছর কয়েক আগে তিনি নিজের একটি ছবি তুলেছিলেন যুক্তরাষ্ট্রের পতাকাকে হিজাব বানিয়ে। পোস্টার আকারে তার সেই ছবি শোভা পায় বিক্ষোভকারীদের হাতে হাতে। আর তা নয়া প্রেসিডেন্ট ট্রাম্পের বিরুদ্ধে। গণমাধ্যমেও স্থান করে নেয় এ সংক্রান্ত একটি প্রতিবেদনে। মুনিরা বলেন, ‘এ ঘটনা জানাজানি হলে অনেকে শুধু বিস্মিতই হয়নি, আনন্দে জড়িয়েও ধরেছে আমাকে।’ তিনি আরো বলেন, ‘কোনো ভালো কিছুরই বিরোধী নয় এটি। আমি অন্যদের মতোই অতি সাধারণ একজন আমেরিকান। একজন মুসিলম নারীও। যা কিছু মন্দ তার প্রতিবাদ করা দরকার।’ মুসলমানদের নিষিদ্ধ করার নীতিগত একেবারেই অযৌক্তিক। অনেকে বলেছেন, মুনিরা আহমেদের ছবি থেকে তৈরি পোস্টারটির সাংস্কৃতিক প্রভাব অনেক বেশি, সবচেয়ে বেশি বললেও বাড়িয়ে বলা যাবে না। মুনিরাও রীতিমতো হতাশা প্রকাশ করেন ট্রাম্পের বিজয়ে। ট্রাম্প প্রেসিডেন্ট হন অধিকাংশ মানুষের ভোট না পেয়েও। আমেরিকা থেকে অন্যান্য লোকের নৈতিক সমর্থন নেই ওই মনোভাবের প্রতি এমনটিও বলেছেন মুনিরা।
বিক্ষোভে অংশ নেয়া অপর এক বাংলাদেশী মুসলিম নারী তারিহা চৌধুরী। তারিহা বলেন, ‘খুবই ভয়ঙ্কর সিদ্ধান্তগুলো। ইসলামভীতি বেড়ে চলেছে ট্রাম্প নির্বাচিত হওয়ার পর থেকে। বর্ণবাদীদের হাতে দেশটির ক্ষমতা। এ থেকে আমরা কী আশা করতে পারি?’
ভোটদানে বিরত ছিলেন প্রায় ৪৩ শতাংশ লোক। গত প্রায় ২০ বছরে সবচেয়ে বেশি ভোটদানে বিরত থাকার এই হার বা পরিমাণ। প্রায় ২৩ কোটি ভোটারের মধ্যে বিরত ছিলেন প্রায় ১১ কোটি। ট্রাম্পকে ভোট দেননি প্রতি চারজনের মধ্যে তিনজনই প্রায়। তবু নির্বাচিত ট্রাম্প। হায় মার্কিন গণতন্ত্র। প্রসঙ্গক্রমে বলতে হয়, স্থিতাবস্থারই নতুন সংস্করণের প্রতিশ্রুতি ছিল হিলারির প্রচারে। ধনীশ্রেষ্ঠ ১ শতাংশের হাতে রয়েছে মার্কিন আয়ের (জাতীয়) পায় ৯৭ শতাংশ। তাদেরই একজন ট্রাম্প। তার প্রচারাভিযানে প্রায় ৩৭ কোটি ডলার ব্যয় করা হয়। নানা সঙ্কট দুর্বিষহ করে তুলছে মানুষের জীবনকে। বহু মানুষ রীতিমতো নরকযন্ত্রণায়। অনেকের খোয়া গেছে কাজ, পেনশন ইত্যাদি। নিরাপত্তার সব রক্ষাকবচও হারিয়েছেন। অনেক বিশেষজ্ঞ বলেছেন, যুক্তরাষ্ট্রে নতুন কোনো প্রেসিডেন্টের দায়িত্ব গ্রহণকে ঘিরে নিকট অতীতে এমন আন্দোলন হয়েছে বলে আমাদের জানা নেই। সময়ই বলে দেবে তা কত দূর গড়ায় বা কোন দিকে মোড় নেয়। (নয়া দিগন্ত)