বিচারপতি রুথ বেডার গিন্সবার্গ-এর মৃত্যু : যুক্তরাষ্ট্রে বিচারপতি নিয়োগ নিয়ে তুমুল রাজনৈতিক বিরোধ

- প্রকাশের সময় : ১২:১৮:৩১ পূর্বাহ্ন, সোমবার, ২১ সেপ্টেম্বর ২০২০
- / ৬৮ বার পঠিত
হককথা ডেস্ক: যুক্তরাষ্ট্রের সর্বোচ্চ আদালত সুপ্রিম কোর্টের বিচারপতি নিয়োগ নিয়ে দেশটির রাজনীতি ক্রমশ উত্তপ্ত হয়ে উঠছে। সুপ্রিম কোর্টের সদ্য প্রয়াত বিচারপতি রুথ বেডার গিন্সবার্গের স্থলে আগামী সপ্তাহে একজন নারীকেই মনোনয়ন দেওয়া হবে বলে জানিয়েছেন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প। গিন্সবার্গের মৃত্যুতে সর্বোচ্চ আদালতের খালি হওয়া বিচারপতির আসন পূরণ নিয়ে ডেমোক্রেট আর রিপাবলিকানদের তুমুল রাজনৈতিক বিরোধের মধ্যেই শনিবার (১৯ সেপ্টেম্বর) ট্রাম্প একথা জানিয়েছেন। এদিকে, ডেমোক্রেটিক পার্টি বলছে, এমন করা হলে রাজনৈতিকভাবে ‘প্রতিশোধ’ নেওয়া হবে। নির্বাচনকে সামনে রেখে সব রাজনৈতিক ইস্যুকে ছাপিয়ে এখন সুপ্রিম কোর্টের বিচারপতি নিয়োগকে কেন্দ্র করে বিতর্ক তুঙ্গে। সংবাদসূত্র :বিবিসি, রয়টার্স, আল-জাজিরা
আমেরিকার প্রেসিডেন্ট নির্বাচনের মাত্র কয়েক সপ্তাহ আগে গত ১৮ সেপ্টেম্বও শুক্রবার ৮৭ বছর বয়সি গিন্সবার্গের মৃত্যু হয়। লিঙ্গ সমতার দৃঢ় সমর্থক এই নারী বিচারপতি অগ্ন্যাশয়ের ক্যান্সারে আক্রান্ত ছিলেন। একজন গুরুত্বপূর্ণ নারীবাদী হিসেবে তিনি যুক্তরাষ্ট্রের উদারপন্থিদের মধ্যে অন্যতম শীর্ষ ব্যক্তিত্বে পরিণত হয়েছিলেন। প্রেসিডেন্ট নির্বাচনের আগে আগে তার মৃত্যু ডেমোক্রেটদের জন্য ‘দুঃসংবাদ’ হিসেবে হাজির হয়েছে। আমেরিকান আইনসংক্রান্ত বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ বিষয়ে রায় ও নির্দেশনা দেওয়ার দায়িত্বে থাকা সর্বোচ্চ আদালতের ৯ জন বিচারপতির মধ্যে মতাদর্শগত ভারসাম্য থাকাটা জরুরি বলেও মনে করছেন অনেকে।
ডেমোক্রেটিক পার্টির প্রেসিডেন্ট প্রার্থী ও সাবেক ভাইস প্রেসিডেন্ট জো বাইডেন সদ্য প্রয়াত বিচারপতির শূন্যস্থান পূরণের সিদ্ধান্ত নির্বাচনের পর হওয়া উচিত বলে মন্তব্য করেছেন। কিন্তু ট্রাম্প এতদিন সময় নিতে রাজি নন। তিনি ‘যত দ্রæত সম্ভব গিন্সবার্গের উত্তরসূরিকে শপথ পড়ানোর প্রতিশ্রæতি দিয়েছেন। প্রেসিডেন্ট ট্রাম্পের এ অবস্থানই ডেমোক্রেটদের ভীত করে তুলেছে। তাদের আশঙ্কা, রিপাবলিকানরা এমন একজনকেই মনোনয়ন দেবেন, যার মাধ্যমে তারা যুক্তরাষ্ট্রের সর্বোচ্চ আদালতের রক্ষণশীল সংখ্যাগরিষ্ঠতা কয়েক দশকের জন্য নিশ্চিত করে ফেলবেন।
গত শনিবার (১৯ সেপ্টেম্বর) নর্থ ক্যারোলাইনায় এক নির্বাচনী প্রচার সমাবেশে ট্রাম্প বলেন, ‘আগামী সপ্তাহেই আমি একজনের নাম সামনে নিয়ে আসব। তিনি একজন নারীই হবেন। আমার মনে হয়, (গিন্সবার্গের স্থলাভিষিক্ত) একজন নারীই হওয়া উচিত, কেননা সত্যিকার অর্থে আমি পুরুষদের চেয়ে নারীদেরই বেশি পছন্দ করি।’ এদিন ট্রাম্পের বক্তব্যের সময় তার অনেক সমর্থককেই ‘আসন পূরণ করো’ ¯েøাগান দিতে দেখা গেছে। তাদের প্রত্যাশা, প্র্রসিডেন্টের এক মেয়াদে সর্বোচ্চ আদালতের তিন বিচারক মনোনয়ন দেওয়ার এ বিরল সুযোগ ট্রাম্প যেন গ্রহণ করেন।
রিপাবলিকান এ প্রেসিডেন্ট তার চলতি মেয়াদেই রক্ষণশীল ব্রেট কাভানহ ও নেইল গোরসাচকে সর্বোচ্চ আদালতের বিচারক পদে বসিয়েছেন। যুক্তরাষ্ট্রের সুপ্রিম কোর্টের বিচারকরা আমৃত্যু এ পদে থাকার সুযোগ পান। ট্রাম্প এর আগে কেন্দ্রীয় আপিল আদালতের দুই নারী বিচারক অ্যামি কোনি বেরেট ও বারবারা লেগোয়ার ভূয়সী প্রশংসা করেছিলেন।
গিন্সবার্গের শূন্যস্থানে এই দুই নারী বিচারকের মধ্য একজনকে বেছে নেওয়া হতে পারে বলে অনেকে ধারণা করছেন। এই দুইজনের যেকোনো একজন সর্বোচ্চ আদালতের বিচারক হলে সুপ্রিম কোর্ট অনেক দিনের জন্য রিপাবলিকানদের দিকেই হেলে থাকবে বলে মনে করা হচ্ছে। বেরেট ও লেগোয়ার পাশাপাশি হোয়াইট হাউসের ডেপুটি কাউন্সেল কেট কোমারফোর্ড টডের নামও বাতাসে ভাসছে বলে গণমাধ্যমের প্রতিবেদনে জানানো হয়েছে।
ডেমোক্রেটরা প্রেসিডেন্ট নির্বাচনের আগে নতুন বিচারপতি মনোনয়ন না দেওয়ার জন্য ২০১৬ সালের উদাহরণও টানছেন। সেবার সিনেটের রিপাবলিকানরা সুপ্রিম কোর্টে বিচারপতির শূন্য পদে বারাক ওবামার মনোনয়ন আটকে দিয়েছিলেন। সে সময় সিনেটের সংখ্যাগরিষ্ঠ অংশের নেতা মিচ ম্যাককনেল ওই পদক্ষেপের পেছনে ‘নির্বাচনের বছর’কে কারণ হিসেবে দেখিয়েছিলেন। এবার ম্যাককনেলের অবস্থান একেবারেই বিপরীত। শুক্রবার রিপাবলিকান এ সিনেটর বলেন, ট্রাম্পের মনোনীত ব্যক্তিকে যত দ্রæত সম্ভব সুপ্রিম কোর্টের বিচারক পদে বসাতে তিনি তৎপর থাকবেন; এজন্য নির্বাচনের আগেই সিনেটে এ সংক্রান্ত ভোটের ব্যবস্থা করবেন বলেও প্রতিশ্রæতি দিয়েছেন তিনি।
এদিকে, সিনেটে ডেমোক্রেটিক পার্টির নেতা, নিউইয়র্ক ষেকে নির্বাচিত সিনেটর চাক শুমার ডেমোক্রেটিক ককাসের ভার্চুয়াল সভায় বলেন, যুক্তরাষ্ট্রের সব মূল্যবোধ ঝুঁকির মুখে। আগামী জানুয়ারীর আগে নতুন বিচারপতি মনোনয়নে রিপাবলিকানরা উদ্যোগ নিলে সম্ভাব্য প্রতিশোধের জন্য প্রস্তুত থাকতে হবে। সিনেটর চার্লস শুমার সতর্ক করে বলেন, নতুন বিচারপতি নিয়োগ সমাজের অনেক কিছুর ওপর প্রভাব ফেলবে।
প্রজনন অধিকার, বৈষম্য প্রতিরোধ, অপরাধ, বিচার ব্যবস্থার ভবিষ্যৎ, প্রেসিডেন্টের ক্ষমতা, অভিবাসীদের অধিকার, কর আইন, নাগরিক আইন ও স্বাস্থ্যসেবাসহ নানা বিষয়ে এর প্রভাবের কথা তিনি স্মরণ করিয়ে দেন। (দৈনিক যায়যায়দিন)