ফ্লয়েড হত্যায় পুলিশ কর্মকর্তা দোষী সাব্যস্ত, জেল হতে পারে ৪০ বছরের

- প্রকাশের সময় : ০১:৪৮:২৪ পূর্বাহ্ন, বুধবার, ২১ এপ্রিল ২০২১
- / ৫৮ বার পঠিত
হককথা ডেস্ক: যুক্তরাষ্ট্রের মিনেসোটা অঙ্গরাজ্যে পুলিশ হেফাজতে মারা যাওয়া কৃষ্ণাঙ্গ যুবক জর্জ ফ্লয়েড হত্যাকান্ডের প্রধান আসামি মিনিয়াপলিস শহরের বরখাস্তকৃত পুলিশ কর্মকর্তা ডেরেক চৌভিনের বিরুদ্ধে আরোপিত সবগুলো অভিযোগ প্রমাণিত হয়েছে। পাশাপাশি নিজের অপরাধ স্বীকার করে নিয়েছেন তিনি। মঙ্গলবার (২০ এপ্রিল) হেনেপিন কাউন্টি আদালতে এ রায় পড়ে শোনান জুরি বোর্ডের বিচারকরা। খবর বিবিসি, সিএনএন ও বার্তা সংস্থা রয়টার্স’র।
বার্তা সংস্থাগুলোর প্রতিবেদনে বলা হয়, ২০২০ সালের মে মাসে জর্জ ফ্লয়েড হত্যাকান্ডের ঘটনায় সাবেক পুলিশ কর্মকর্তা ডেরেক চৌভিনের বিরুদ্ধে আরোপিত তিনটি অভিযোগ ‘দ্বিতীয় ডিগ্রী’ অনিচ্ছাকৃত হত্যা, ‘তৃতীয় ডিগ্রি’ হত্যা এবং ‘দ্বিতীয় ডিগ্রি’ হত্যা সবগুলোই প্রমাণিত হয়েছে। এখন তাকে সর্বোচ্চ ৪০ বছর পর্যন্ত কারাদন্ডাদেশ দেওয়া হতে পারে।
রায় ঘোষণার পর ডেরেক চৌভিনকে পুলিশ হেফাজতে নেওয়া হচ্ছে। ছবি: সংগৃহীত
আইন অনুযায়ী ‘দ্বিতীয় ডিগ্রী’ অনিচ্ছাকৃত হত্যার জন্য সর্বোচ্চ ৪০ বছর কারাদন্ডাদেশ, ‘তৃতীয় ডিগ্রি’ হত্যার জন্য সর্বোচ্চ ২৫ বছরের কারাদন্ড এবং ‘দ্বিতীয় ডিগ্রি’ হত্যার জন্য সর্বোচ্চ ১০ বছরের কারাদন্ড বা ২০ হাজার ডলার জরিমানা করা হতে পারে। এদিন তার জামিনের আবেদন করলে সেটি প্রত্যাহার করে দেন আদালত। একইসঙ্গে তাকে (ডেরেক চৌভিন) আট সপ্তাহের জন্য পুলিশ হেফাজতে নেওয়া হয়েছে।
এদিকে, রায় ঘোষণার সময় আদালতের বাহিরে জড়ো হন অসংখ্য মানুষ। এ সময় তারা ‘ন্যায়বিচার’ এবং ‘বø্যাক লাইভস ম্যাটারস’ বলে ¯েøাগান দিচ্ছিল। পুলিশ কর্মকর্তা ডেরেক চৌভিন দোষী সাব্যস্তের খবরে তারা উল্লাস প্রকাশ করে।
গেলো বছর যুক্তরাষ্ট্রের মিনেপোলিসে পুলিশ কর্মকর্তার হাতে নির্মমভাবে নির্যাতনের শিকার হন জর্জ ফ্লয়েড। একপর্যায়ে হাঁটু দিয়ে গলা চেপে ধরে ফ্লয়েডকে মেরে ফেলা হয়। গত বছরের ওই ঘটনার পর ডেরেক শাউভিনকে মার্কিন পুলিশ থেকে বহিষ্কার করা হয়। জর্জ ফ্লয়েড মৃত্যুর পর যুক্তরাষ্ট্র সহ সারা বিশ্বে বর্ণবাদের বিরুদ্ধে তীব্র আন্দোলন শুরু হয়।
রায় ঘোষণার পর আদালত প্রাঙ্গণে উপস্থিত জনতার উল্লাস। ছবি: সংগৃহীত
গত ৩১ মার্চ হত্যাকান্ডের নতুন একটি ভিডিও আদালতে প্রদর্শন করা হয়। সেখানে দেখা যায়, আটকের পর জর্জ ফ্লয়েড পুলিশ অফিসারদের কাছে অনুনয় করে বলছে ‘আমি খারাপ লোক নই, আমার কোনো ক্ষতি করবেন না’। ঘটনাস্থলে উপস্থিত থাকা পুলিশ কর্মকর্তা টমাস লেন, জে আলেকজান্ডার কুয়েং এবং টু থাওয়ের বডি ক্যামেরায় ধারণ করা এই ভিডিও ফুটেজে আরো দেখা যায়, জর্জ ফ্লয়েড পুলিশের মুখোমুখি হচ্ছেন। এরপর প্রাণ ভিক্ষা চেয়ে বলেন, ‘দয়া করে আমাকে গুলি করবেন না। কয়েকদিন আগেই আমি আমার মা’কে হারিয়েছি’।
হাতকড়া বাধা অবস্থাতেই তিনি টমাস লেন এবং জে আলেকজান্ডার কুয়েংকে বলছিলেন, আমাকে মারবেন না। বিনিময়ে আপনারা যা বলবেন তাই করতে রাজি আছি। এমন অবস্থার মধ্যেই ফ্লয়েডকে জোর করে গাড়িতে তুলতে যায় এই দুই পুলিশ কর্মকর্তা। তখন কান্না করে দেন কৃষ্ণাঙ্গ যুবকটি।
ঠিক ওই সময় ঘটনাস্থলে পৌঁছান টু থাওয়ে এবং ডেরেক চৌভিন। পুলিশ অফিসাররা তাকে গাড়ি থেকে টেনে নামান এবং মাটিতে শুইয়ে দেন। এমন মুহূর্তে জর্জ ফ্লয়েডকে বলতে শোনা যায়, তিনি তার মা এবং পরিবারের সদস্যদের উদ্দেশে বলছেন ‘সে তাদেরকে ভালোবাসে’। ভিডিওতে এটাও দেখা যায় যে, ফ্লয়েডের গলায় পুলিশ অফিসার ডেরেক চৌভিন টানা ৯ মিনিটের মতো চেপে ধরে রয়েছেন। এরপর তার নিঃশ্বাস পরীক্ষা করা হয়।