নিউইয়র্ক ০৯:০৬ অপরাহ্ন, রবিবার, ০৬ জুলাই ২০২৫, ২২ আষাঢ় ১৪৩২ বঙ্গাব্দ
বিজ্ঞাপন :
মঙ্গলবারের পত্রিকা সাপ্তাহিক হককথা ও হককথা.কম এ আপনার প্রতিষ্ঠানের বিজ্ঞাপন দিতে যোগাযোগ করুন +1 (347) 848-3834

প্রেসিডেন্ট নির্বাচনের ২৪ ঘন্টার মধ্যেই যুক্তরাষ্ট্রে ট্রাম্পবিরোধী ব্যাপক বিক্ষোভ

রিপোর্ট:
  • প্রকাশের সময় : ০৭:১১:২৩ অপরাহ্ন, বৃহস্পতিবার, ১০ নভেম্বর ২০১৬
  • / ৯৫৮ বার পঠিত

নিউইয়র্ক: ডোনাল্ড ট্রাম্প প্রেসিডেন্ট নির্বাচিত হওয়ার পর বুধবার (৯ নভেম্বর) যুক্তরাষ্ট্রের শহরে শহরে বিক্ষোভ করেছেন হাজারো মানুষ। ডোনাল্ড ট্রাম্পের অপ্রত্যাশিত বিজয় মার্কিন নাগরিকদের একাংশকে গভীরভাবে হতাশ করেছে। সেই হতাশা এখন দ্রুত পরিণত হচ্ছে প্রতিবাদে। এর মধ্যে সবচেয়ে বড় মিছিলটি হয় নিউইয়র্কে। শিকাগো, সান ফ্রান্সিসকো, ওকল্যান্ড, বোস্টন, ক্যানসাস সিটিসহ দেশের অন্যান্য শহরেও অনুরূপ মিছিল হয়। ওকল্যান্ডের একটি মিছিলে ট্রাম্পের বিশাল কুশপুত্তলিকা পোড়ানো হয়। ওয়াশিংটন ডিসিতে হোয়াইট হাউসের সামনে মোমবাতি হাতে নিয়ে নীরব প্রতিবাদ জানায় কয়েক শ মানুষ। সপ্তাহান্তে আরও বড় ধরনের মিছিলের আয়োজন চলছে।
সবচেয়ে অভাবিত প্রতিবাদটি আসে সুপ্রিম কোর্টের উদারনৈতিক হিসেবে বিবেচিত বিচারপতি রুথ গিন্সবার্গের কাছ থেকে। বুধবার আদালতে তিনি তাঁর সুপরিচিত ‘ভিন্নমত গলাবন্ধ’টি পরে নিজ আসনে বসেন। সাধারণত আদালতের রায়ের সঙ্গে নিজের ভিন্নমত প্রকাশের জন্য গিন্সবার্গ তাঁর এই গলাবন্ধটি পরে থাকেন। কিন্তু বুধবার কোনো রায় পড়ার দিন ছিল না, সে কারণেই একে ট্রাম্পের নির্বাচনে নীরব প্রতিবাদ হিসেবে দেখছেন অনেকে। গত জুলাই মাসে নিউইয়র্ক টাইমস-এর সঙ্গে এক সাক্ষাৎকারে বিচারপতি গিন্সবার্গ বলেন, ট্রাম্পের মতো মানুষ কী করে প্রেসিডেন্ট হন, তা তিনি কল্পনাও করতে পারেন না। পরে ট্রাম্পের তীব্র সমালোচনার মুখে তিনি নিজ মন্তব্যের জন্য দুঃখ প্রকাশ করেন।
এদিকে রিপাবলিকান পার্টির অধিকাংশ নেতা, যাঁরা একসময় ট্রাম্পকে প্রত্যাখ্যান করেছিলেন, তাঁরা একের পর এক নবনির্বাচিত প্রেসিডেন্টের প্রতি নিজেদের সমর্থন জানানো শুরু করেছেন। স্পিকার পল রায়ান আশ্বাস দিয়েছেন, ট্রাম্পের এজেন্ডা বাস্তবায়নে তিনি সর্বাত্মক সহায়তা করবেন। আইন পরিষদের উভয় কক্ষ, সিনেট ও প্রতিনিধি পরিষদ এখন রিপাবলিকানদের নিয়ন্ত্রণে থাকায় এই কাজ দ্রুত সম্পন্ন করা সম্ভব হবে। উইসকনসিনে নিজ বাসভবনে তিনি সাংবাদিকদের বলেন, ঠিক এই রকম একটি পরিস্থিতির অপেক্ষায় তিনি ছিলেন। দলের নেতা-কর্মীসহ সবাইকে তিনি প্রেসিডেন্ট ট্রাম্পের পেছনে ঐক্যবদ্ধ হতে আহ্বান জানান।
দলের অনেক সুপরিচিত মুখ এখন ট্রাম্প প্রশাসনে স্থান পাওয়ার জন্য উঠেপড়ে লেগেছেন। ট্রাম্পের শিবির থেকে জানানো হয়েছে, চাকরির উমেদারি করে রিপাবলিকান দলের অনেক চেনা মুখই এখন ট্রাম্পকে টেলিফোন করছেন। কেউ কেউ তাঁদের জীবনবৃত্তান্ত পাঠানো শুরু করেছেন। সবচেয়ে বড় চাকরিগুলো যাঁরা পেতে পারেন, তাঁদের মধ্যে উল্লেখযোগ্য হলেন রিপাবলিকান দলের জাতীয় কমিটির চেয়ারম্যান রেইন্স প্রিবাস। তিনি হোয়াইট হাউসে চিফ অব স্টাফের পদটি পেতে পারেন। নিউইয়র্কের প্রাক্তন মেয়র রুডি জুলিয়ানি হোমল্যান্ড সিকিউরিটি ও নিউজার্সির গভর্নর ক্রিস ক্রিস্টি অ্যাটর্নি জেনারেলের পদটি পেতে পারেন বলে ভাবা হচ্ছে। তাঁরা দুজনই নির্বাচনী প্রচারণাকালে ট্রাম্পের পক্ষে অবস্থান নেন। সিনেটর বব কোর্কারকে পররাষ্ট্রমন্ত্রী ও সিনেটর জেফ সেশনকে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীর দায়িত্ব দেওয়া হতে পারে।
‘পলিটিকো’ জানিয়েছে, ব্যবসায়ী হিসেবে সুপরিচিত ও সফল এমন কিছু ব্যক্তিকেও ট্রাম্প তাঁর মন্ত্রিপরিষদে অন্তর্ভুক্ত করতে পারেন। এই ‘বহিরাগত’ ব্যক্তিদের তালিকায় যাঁরা রয়েছেন, তাঁদের অন্যতম হলেন লুকাস অয়েল কোম্পানির প্রতিষ্ঠাতা ৭৪ বছর বয়সী ফরেস্ট লুকাস। তিনি অভ্যন্তরীণ মন্ত্রণালয়ের দায়িত্ব পেতে পারেন।
ট্রাম্পের সমর্থকেরা তাঁর বিজয়কে জনগণের কাছ থেকে পাওয়া এক ‘ম্যান্ডেট’ হিসেবে আখ্যায়িত করেছেন। স্পিকার পল রায়ান ও ট্রাম্পের ক্যাম্পেইন ম্যানেজার কেলি অ্যানকনওয়ে বলেছেন, নিজের প্রস্তাবিত এজেন্ডা বাস্তবায়নে ট্রাম্প ‘ম্যান্ডেট’ পেয়েছেন। এ কথার অর্থ, মেক্সিকো সীমান্তে দেয়াল নির্মাণ, ‘ওবামাকেয়ার’ বাতিল, হিলারি ক্লিনটনকে জেলে ঢোকানোর প্রতিশ্রুতিসহ অন্য যেসব পরিকল্পনার কথা নির্বাচনী প্রচারকালে ট্রাম্প তাঁর সমর্থকদের কাছে রেখেছিলেন, এখন তার বাস্তবায়নে জনগণের সমর্থন তিনি পেয়ে গেছেন।
সে কথার প্রতিবাদ করেছেন কেউ কেউ। দেশের অধিকাংশ মানুষ তাঁকে ভোট দেননি, শুধু ইলেকটোরাল ভোটে এগিয়ে থেকে প্রেসিডেন্ট নির্বাচিত হয়েছেন ট্রাম্প। চার বছর আগে মোট জাতীয় ও ইলেকটোরাল ভোটে দীর্ঘ ব্যবধানে জয়ী হয়েছিলেন বারাক ওবামা। সে সময় পল রায়ান বলেছেন, ওবামা কোনো ম্যান্ডেট পেয়েছেন, তা তিনি বিশ্বাস করেন না।
এদিকে বুধবার হোয়াইট হাউসে তাঁর নিয়মিত ব্রিফিংয়ে ওবামার প্রেস সেক্রেটারি জশ আর্নেস্ট অবশ্য হিলারির প্রতি আগাম ক্ষমার ব্যাপারে সরাসরি কোনো মন্তব্য করতে অস্বীকার করেন। তিনি বলেন, প্রেসিডেন্ট কাকে বা কাদের ক্ষমা প্রদর্শন করবেন, তার আগাম ঘোষণা নিয়ে কোনো কথা বলতে তিনি প্রস্তুত নন। সাম্প্রতিক সময়ে দীর্ঘদিন মাদক-সংক্রান্ত অপরাধে জেলে রয়েছেন এমন অনেক ব্যক্তিকে ওবামা ক্ষমা করেছেন। (প্রথম আলো)

সোশ্যাল মিডিয়ায় খবরটি শেয়ার করুন

আপনার মন্তব্য লিখুন

About Author Information

প্রেসিডেন্ট নির্বাচনের ২৪ ঘন্টার মধ্যেই যুক্তরাষ্ট্রে ট্রাম্পবিরোধী ব্যাপক বিক্ষোভ

প্রকাশের সময় : ০৭:১১:২৩ অপরাহ্ন, বৃহস্পতিবার, ১০ নভেম্বর ২০১৬

নিউইয়র্ক: ডোনাল্ড ট্রাম্প প্রেসিডেন্ট নির্বাচিত হওয়ার পর বুধবার (৯ নভেম্বর) যুক্তরাষ্ট্রের শহরে শহরে বিক্ষোভ করেছেন হাজারো মানুষ। ডোনাল্ড ট্রাম্পের অপ্রত্যাশিত বিজয় মার্কিন নাগরিকদের একাংশকে গভীরভাবে হতাশ করেছে। সেই হতাশা এখন দ্রুত পরিণত হচ্ছে প্রতিবাদে। এর মধ্যে সবচেয়ে বড় মিছিলটি হয় নিউইয়র্কে। শিকাগো, সান ফ্রান্সিসকো, ওকল্যান্ড, বোস্টন, ক্যানসাস সিটিসহ দেশের অন্যান্য শহরেও অনুরূপ মিছিল হয়। ওকল্যান্ডের একটি মিছিলে ট্রাম্পের বিশাল কুশপুত্তলিকা পোড়ানো হয়। ওয়াশিংটন ডিসিতে হোয়াইট হাউসের সামনে মোমবাতি হাতে নিয়ে নীরব প্রতিবাদ জানায় কয়েক শ মানুষ। সপ্তাহান্তে আরও বড় ধরনের মিছিলের আয়োজন চলছে।
সবচেয়ে অভাবিত প্রতিবাদটি আসে সুপ্রিম কোর্টের উদারনৈতিক হিসেবে বিবেচিত বিচারপতি রুথ গিন্সবার্গের কাছ থেকে। বুধবার আদালতে তিনি তাঁর সুপরিচিত ‘ভিন্নমত গলাবন্ধ’টি পরে নিজ আসনে বসেন। সাধারণত আদালতের রায়ের সঙ্গে নিজের ভিন্নমত প্রকাশের জন্য গিন্সবার্গ তাঁর এই গলাবন্ধটি পরে থাকেন। কিন্তু বুধবার কোনো রায় পড়ার দিন ছিল না, সে কারণেই একে ট্রাম্পের নির্বাচনে নীরব প্রতিবাদ হিসেবে দেখছেন অনেকে। গত জুলাই মাসে নিউইয়র্ক টাইমস-এর সঙ্গে এক সাক্ষাৎকারে বিচারপতি গিন্সবার্গ বলেন, ট্রাম্পের মতো মানুষ কী করে প্রেসিডেন্ট হন, তা তিনি কল্পনাও করতে পারেন না। পরে ট্রাম্পের তীব্র সমালোচনার মুখে তিনি নিজ মন্তব্যের জন্য দুঃখ প্রকাশ করেন।
এদিকে রিপাবলিকান পার্টির অধিকাংশ নেতা, যাঁরা একসময় ট্রাম্পকে প্রত্যাখ্যান করেছিলেন, তাঁরা একের পর এক নবনির্বাচিত প্রেসিডেন্টের প্রতি নিজেদের সমর্থন জানানো শুরু করেছেন। স্পিকার পল রায়ান আশ্বাস দিয়েছেন, ট্রাম্পের এজেন্ডা বাস্তবায়নে তিনি সর্বাত্মক সহায়তা করবেন। আইন পরিষদের উভয় কক্ষ, সিনেট ও প্রতিনিধি পরিষদ এখন রিপাবলিকানদের নিয়ন্ত্রণে থাকায় এই কাজ দ্রুত সম্পন্ন করা সম্ভব হবে। উইসকনসিনে নিজ বাসভবনে তিনি সাংবাদিকদের বলেন, ঠিক এই রকম একটি পরিস্থিতির অপেক্ষায় তিনি ছিলেন। দলের নেতা-কর্মীসহ সবাইকে তিনি প্রেসিডেন্ট ট্রাম্পের পেছনে ঐক্যবদ্ধ হতে আহ্বান জানান।
দলের অনেক সুপরিচিত মুখ এখন ট্রাম্প প্রশাসনে স্থান পাওয়ার জন্য উঠেপড়ে লেগেছেন। ট্রাম্পের শিবির থেকে জানানো হয়েছে, চাকরির উমেদারি করে রিপাবলিকান দলের অনেক চেনা মুখই এখন ট্রাম্পকে টেলিফোন করছেন। কেউ কেউ তাঁদের জীবনবৃত্তান্ত পাঠানো শুরু করেছেন। সবচেয়ে বড় চাকরিগুলো যাঁরা পেতে পারেন, তাঁদের মধ্যে উল্লেখযোগ্য হলেন রিপাবলিকান দলের জাতীয় কমিটির চেয়ারম্যান রেইন্স প্রিবাস। তিনি হোয়াইট হাউসে চিফ অব স্টাফের পদটি পেতে পারেন। নিউইয়র্কের প্রাক্তন মেয়র রুডি জুলিয়ানি হোমল্যান্ড সিকিউরিটি ও নিউজার্সির গভর্নর ক্রিস ক্রিস্টি অ্যাটর্নি জেনারেলের পদটি পেতে পারেন বলে ভাবা হচ্ছে। তাঁরা দুজনই নির্বাচনী প্রচারণাকালে ট্রাম্পের পক্ষে অবস্থান নেন। সিনেটর বব কোর্কারকে পররাষ্ট্রমন্ত্রী ও সিনেটর জেফ সেশনকে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীর দায়িত্ব দেওয়া হতে পারে।
‘পলিটিকো’ জানিয়েছে, ব্যবসায়ী হিসেবে সুপরিচিত ও সফল এমন কিছু ব্যক্তিকেও ট্রাম্প তাঁর মন্ত্রিপরিষদে অন্তর্ভুক্ত করতে পারেন। এই ‘বহিরাগত’ ব্যক্তিদের তালিকায় যাঁরা রয়েছেন, তাঁদের অন্যতম হলেন লুকাস অয়েল কোম্পানির প্রতিষ্ঠাতা ৭৪ বছর বয়সী ফরেস্ট লুকাস। তিনি অভ্যন্তরীণ মন্ত্রণালয়ের দায়িত্ব পেতে পারেন।
ট্রাম্পের সমর্থকেরা তাঁর বিজয়কে জনগণের কাছ থেকে পাওয়া এক ‘ম্যান্ডেট’ হিসেবে আখ্যায়িত করেছেন। স্পিকার পল রায়ান ও ট্রাম্পের ক্যাম্পেইন ম্যানেজার কেলি অ্যানকনওয়ে বলেছেন, নিজের প্রস্তাবিত এজেন্ডা বাস্তবায়নে ট্রাম্প ‘ম্যান্ডেট’ পেয়েছেন। এ কথার অর্থ, মেক্সিকো সীমান্তে দেয়াল নির্মাণ, ‘ওবামাকেয়ার’ বাতিল, হিলারি ক্লিনটনকে জেলে ঢোকানোর প্রতিশ্রুতিসহ অন্য যেসব পরিকল্পনার কথা নির্বাচনী প্রচারকালে ট্রাম্প তাঁর সমর্থকদের কাছে রেখেছিলেন, এখন তার বাস্তবায়নে জনগণের সমর্থন তিনি পেয়ে গেছেন।
সে কথার প্রতিবাদ করেছেন কেউ কেউ। দেশের অধিকাংশ মানুষ তাঁকে ভোট দেননি, শুধু ইলেকটোরাল ভোটে এগিয়ে থেকে প্রেসিডেন্ট নির্বাচিত হয়েছেন ট্রাম্প। চার বছর আগে মোট জাতীয় ও ইলেকটোরাল ভোটে দীর্ঘ ব্যবধানে জয়ী হয়েছিলেন বারাক ওবামা। সে সময় পল রায়ান বলেছেন, ওবামা কোনো ম্যান্ডেট পেয়েছেন, তা তিনি বিশ্বাস করেন না।
এদিকে বুধবার হোয়াইট হাউসে তাঁর নিয়মিত ব্রিফিংয়ে ওবামার প্রেস সেক্রেটারি জশ আর্নেস্ট অবশ্য হিলারির প্রতি আগাম ক্ষমার ব্যাপারে সরাসরি কোনো মন্তব্য করতে অস্বীকার করেন। তিনি বলেন, প্রেসিডেন্ট কাকে বা কাদের ক্ষমা প্রদর্শন করবেন, তার আগাম ঘোষণা নিয়ে কোনো কথা বলতে তিনি প্রস্তুত নন। সাম্প্রতিক সময়ে দীর্ঘদিন মাদক-সংক্রান্ত অপরাধে জেলে রয়েছেন এমন অনেক ব্যক্তিকে ওবামা ক্ষমা করেছেন। (প্রথম আলো)