তুষার ঝড়ে অচল নিউইয়র্ক : জরুরী অবস্থা : গৃহবন্দী মানুষ
- প্রকাশের সময় : ০২:২১:৩৮ অপরাহ্ন, মঙ্গলবার, ২৭ জানুয়ারী ২০১৫
- / ৯৯৩ বার পঠিত
নিউইয়র্ক: স্মরণকালের ভয়াবহ তুষার ঝড়ে অচল হয়ে পড়েছে বিশ্বের রাজধানী খ্যাত যুক্তরাষ্ট্রের নিউইয়র্ক। ঘোষণা করা হয়েছে জরুরী অবস্থা। গৃহবন্দী হয়েছে মানুষ। বন্ধ করে দেয়া হয়েছে নিউইয়র্কের পাতাল পথ (সাবওয়ে)। জীবন যাত্র প্রায় অচল। বন্ধ ঘোষণা করা হয়েছে নিউইয়র্ক সিটির সকল স্কুল-কলেজ। শুধুমাত্র এ্যাম্বুলেস, ফায়ার সার্ভিসসহ জরুরী যানবাহন ছাড়া রাত ১১টা পর থেকে নিউইয়র্ক সিটির সকল রাস্তায় যান চলাচল বন্ধ করে দেয়া হয়েছে। আইন লঙ্ঘন করলে ৩০০ ডলার জরিমানা হতে পারে। নিউইয়র্রে ইতিহাসে যানবাহন চলাচলে নিষেধাজ্ঞা আরোপের ঘটনা এই প্রথম। পরিস্থিতি মোকাবেলায় সিটি ও ষ্টেট প্রশাসন প্রয়োজনীয় সকল ব্যবস্থা গ্রহণ করেছে। ২৬ জানুয়ারী সোমবার থেকে শুরু হয়ে ২৭ জানুয়ারী বয়ে চলছে এই তুষার ঝড়। একদিন পর ২৯-৩০ জানুয়ারী বৃহস্প্রতিবার-শুক্রবার আবার তুষার ঝড়ের আভাষ দিয়েছে আবহওয়া বিভাগ। যুক্তরাষ্ট্রের রাষ্ট্রীয় টেলিভিশন সিএনএন এবারের তুষার ঝড়কে ইতিহাসের সবচেয়ে বড় তুষার ঝড় হিসাবে উল্লে¬খ করেছে। নিউইয়র্কসহ আশেপাশের রাজ্যে ৩০ ইঞ্চি থেকে ৩৬ ইঞ্চি বা তিন ফুটের অধিক তুষার পড়ার আশঙ্কা রয়েছে। এই রিপোর্ট রেখা পর্যন্ত কোন হতাহতের খবর পাওয়া যায়নি।
শুধু নিউইয়র্ক নয় নিউইয়র্কের পাশের রাজ্য নিউজার্সি, ম্যাসাচুসেটস, রোড আইল্যান্ড ও কানেকটিকাট অঙ্গরাজ্যগুলোর তুষার ঝড়ের কবরে পড়েছে। এসব রাজ্যগুলোতেও জারি করা হয়েছে জরুরূ অবস্থা। সেখানেও বিপর্যন্ত হয়ে পড়েছে স্বাভাবিক জীবনযাত্র। এদিকে তুষার ঝড়ের রিপোর্ট প্রকাশিত হয়েছে বাংলাদেশের বিভিন্ন মিডিয়ায়। দেশের শীর্ষ মিডিয়ার প্রতিবেদনগুলোর উল্লেখযোগ্য ছিলো নি¤œরূপ।
‘তুষার ঝড়ে অচল নিউইয়র্ক’ শিরোনামে দৈনিক নয়া দিগন্ত-এ প্রকাশিত প্রতিবেদনে বলা হয়েছে: তুষার ঝড় জুনোর আঘাতে অচল হয়ে পড়েছে নিউইয়র্ক। সোমবার স্মরণকালের ভয়াবহ এ ঝড়ে নিউইয়র্ক রীতিমতো ভুতুড়ে নগরীতে পরিণত হয়েছে। চব্বিশ ঘন্টা জেগে থাকা শহরটির ট্রেন স্টেশন, রাস্তা সবই ফাঁকা হয়ে পড়ে। নিতান্ত প্রয়োজন না হলে বাড়ির বাইরে কেউ পা রাখছেন না।
নির্জীব গ্রান্ড সেন্ট্রাল টার্মিনালে বসে আছেন জোসেফ বার্কে নামের এক আইনজীবী। শহরতলিতে বাস করা এ আইনজীবী বলছেন, আমি সাধারণত ছয়টা সাড়ে ছয়টায় বাড়ি ফিরি। কিন্তু আজ অনেক আগেই ফিরে যাচ্ছি। যাত্রীর আসা যাওয়ায় সাধারণত মুখর থাকে গ্রান্ড সেন্ট্রাল টার্মিনাল। কিন্তু সোমবার সন্ধ্যায় টার্মিনালকে মনে হয়েছে মৃতপ্রায়। এছাড়া ম্যানহাটনের ব্যস্ত এলাকা ইউনিয়ন স্কোয়ারের আন্ডারগ্রাউন্ড স্টেশনটিকেও ফাঁকা পড়ে থাকতে দেখা গেছে।
এদিকে ভয়াবহ এ তুষার ঝড়ের কারণে নিউইয়র্ক কর্তৃপক্ষকে ব্যতিক্রমী কিছু নিরাপত্তা পদক্ষেপ নিতে হয়েছে। এর মধ্যে রয়েছে রাত এগারোটা থেকে গণপরিবহণ বন্ধ করা। এছাড়া নিউইয়র্ক রাজ্যের ১৩টি কাউন্টিতে রাস্তায় চলাচল অপরাধ হিসেবে গণ্য করা। নিরাপত্তার স্বার্থে ন্যাশনাল গার্ড মোতায়েন করা হয়েছে। বিদ্যুৎ বিপর্যয় ও গাছ উপড়ে যাওয়ার বিষয়ে কর্তৃপক্ষ জনগণকে সতর্ক করেছে।
সোমবার ও মঙ্গলবার যুক্তরাষ্ট্রের বিশেষ করে জেএফকে, নিউআর্ক ও লাগোর্ডিয়া বিমানবন্দরের সাড়ে ছয় হাজারেরও বেশি ফ্লাইট বাতিল করা হয়েছে। দুর্যোগপূর্ণ আবহাওয়ার কারণে মঙ্গলবার মেট্রোপলিটন অপেরার শো, বাস্কেটবল গেমস এবং আর্ট মিউজিয়াম বন্ধ রাখা হচ্ছে।
নগরীর মেয়র বিল ডি ব¬াসিও এবং গভর্ণর এন্ড্রু কওমোর পরামর্শ মেনে অন্যান্য অনেক বাসিন্দার মতো বার্কে মঙ্গলবার বাড়িতে অবস্থানেরই সিদ্ধান্ত নিয়েছেন।
এদিকে নিউইয়র্কবাসীর ভোগান্তি ছাড়াও ঝড়ের কারণে পর্যটকদের বেড়ানোর পরিকল্পনাও ভেস্তে গেছে। ব্রুকলীন ব্রিজের মতো আকর্ষণীয় পর্যটক স্পটগুলোও এখন জনশূণ্য হয়ে পড়েছে।
ঝড়ের কারণে নিউইয়র্কবাসীকে প্রয়োজনীয় খাবারও মজুদ করতে হয়েছে। শেষ মুহূর্তে গ্রোসারী শপগুলোতে লোকজনের ভিড় দেখা গেছে। তুষারে আটকে যাওয়ার ভয়ে খাবার মজুদে ছিল বেশ হুড়োহুড়ি। খাবার সংগ্রহে এসে বুটিক শপে কাজ করা রোজা রামিয়েজ বলেন, আমার কোন খাবার নেই। আমার খাবার দরকার। কে জানে কাল আমি বেরুতে পারবো কিনা।
একজন পাইকারী খাবার বিক্রেতা বলেন, দিনভর দোকানের বাইরে লোকজনের লম্বা লাইন ছিল। খাবার দ্রুতই শেষ হচ্ছিল। আমরা সকলের জন্য যথেষ্ট খাবার মজুদ রেখেছিলাম। তিনি বলেন, দোকানী ও কর্মচারীদের নিরাপদে বাড়ি ফেরার জন্যে আজ আমরা নির্ধারিত সময়ের তিন ঘন্টা আগেই আটটার মধ্যে দোকান বন্ধ করছি।
দৈনিক মানব জমিন-এ প্রকাশিত ‘তুষারঝড়ে বিপর্যস্ত যুক্তরাষ্ট্র, জরুরী অবস্থা ঘোষণা’ শীর্ষক এরা’র প্রতিবেদনে বলা হয়েছে: ভয়াবহ তুষার ঝড়ের কবলে পড়েছে নিউইয়র্কসহ আশেপাশের কয়েকটি অঙ্গরাজ্য। নিউইয়র্ক সিটির গভর্নর এন্ড্রু কুমো এবং মেয়র বিল ব¬াজিও বলেছেন, এবারের তুষারঝড় হচ্ছে সবচেয়ে ভয়ঙ্কর তুষার ঝড়। যে কারণে তারা সংবাদ সম্মেলন করে নিউইয়র্ক সিটিতে জরুরী অবস্থা জারি করেছেন। জরুরি অবস্থা শুধু নিউইয়র্কে নয় তুষার ঝড়ে আক্রান্ত নিউইয়র্কের পাশের অঙ্গরাজ্য নিউজার্সি, বস্টন, রোড আইল্যান্ড, ম্যাসাচুচাস ও কানেকটিকাটেও জরুরী অবস্থা জারি করা হয়েছে। জরুরী অবস্থা জারির ফলে পুরো নিউইয়র্ক সিটি থমকে দাঁড়িয়েছে। নিউইয়র্কের গুরুত্বপূর্ণ লাগোয়ার্ডিয়া এবং জেএফকে বিমানবন্দরসহ অন্যান্য বিমানবন্দরে প্রায় ৭ হাজারেরও বেশি ফ্লাইট বাতিল করা হয়েছে। নিউইয়র্ক সিটির সব স্কুল এবং কলেজ বন্ধ করা হয়েছে। এর আগে কখনো দেখা যায়নি রাস্তা বন্ধ করে দিতে। এবার অবস্থা এতই ভয়ঙ্কর হয়ে দেখা দিয়েছে যে, রাত ১১টার পর থেকে নিউইয়র্ক সিটির সকল রাস্তায় যান চলাচল বন্ধ করে দেয়া হয়েছে। শুধু মাত্র এ্যাম্বুলেস, ফায়ার সার্ভিসসহ জরুরী যানবাহন ছাড়া। এই আইন লঙ্ঘন করলে ৩০০ ডলার জরিমানা হতে পারে। এর আগে বিকেল ৫টা থেকে নিউইয়র্ক সিটির সকল সরকারি ট্রেন এবং বাস বন্ধ করা শুরু হয় রাত ১১টায় চূড়ান্তভাবে বন্ধ করে দেয়া হয়। পরবর্তী নির্দেশ না দেয়া পর্যন্ত এই আদেশ অব্যাহত থাকবে। যদিও আরেক ঘোষণায় বলা হয়েছে সরকারি বাস এবং ট্রেন চলার সম্ভাবনা রয়েছে আগামী বুধবার ২৮ জানুয়ারী সকাল থেকে। বিমানবন্দর কর্তৃপক্ষ জানিয়েছে, বিশেষ ব্যবস্থাপনায় জেএফকে আন্তর্জাতিক ও নিউয়ার্ক আন্তর্জাতিক এয়ারপোর্টে বিশেষ ব্যবস্থায় সীমিত কয়েকটি ফ্লাইট চলবে। অন্যদিকে নিউইয়র্ক, নিউজার্সি, কানেকটিকাট, লংআইল্যান্ড, বস্টন এবং ম্যাসাচুচাসে সকল যান চলাচল বন্ধ রয়েছে। যে সব যাত্রী নিরাপদে বা বাড়িতে যেতে পারেননি, তাদের রাস্তায় অবস্থানের কথা বলা হয়েছে। এবারের তুষার ঝড়কে সিএনএন ‘ঐতিহাসিক তুষারঝড়’ হিসাবে উলে¬খ করেছে। নিউইয়র্কসহ আশেপাশের স্টেটে তিন ফিট থেকে শুরু করে কোন কোন স্টেটে ৩০ ইঞ্চির অধিক তুষার পড়ার সম্ভাবনা রয়েছে। যা গত ২৬ জানুয়ারী সকাল থেকে তুষার ঝড় শুররু হয়েছে। এই তুষার ঝড় ২৭শে জানুয়ারী সন্ধ্যায় থামার সম্ভাবনা রয়েছে। এই তুষার ঝড়ে বিভিন্ন স্টেটের হাজার হাজার মানুষ কোন না কোনভাবে আক্রান্ত হবার সম্ভাবনা রয়েছে। নিউইয়র্কসহ তুষারে ঝড়ে আক্রান্ত অন্যান্য স্টেটের মানুষকে বাসায় থাকার জন্য অনুরোধ জানিয়েছেন সিটির গভর্নর এবং মেয়রবৃন্দ। ২৬ জানুয়ারী সকাল থেকে রাত পর্যন্ত তুষার এবং বৃষ্টি থাকলেও রাত সাড়ে ১১ টা থেকে প্রায় ৭০ মাইল বেগে শুরু হয় ভয়ঙ্কর তুষার ঝড়। যাতে জনজীবন বিপর্যস্ত হয়ে পড়ে। সিটি মেয়র এবং গভর্নর জরুরী অবস্থা ঘোষণার সাথে সাথেই মানুষ হন্যে হয়ে বিভিন্ন স্টোরে গিয়ে খাদ্য, পানিসহ জরুরী সময়ের জন্য প্রয়োজনীয় জিনিসপত্র ক্রয় করে বাসায় ফিরেন। আবার যান চলাচল বন্ধ হয়ে যাবার কারণে অনেক মানুষকে অনেকক্ষণ দাঁড়িয়ে থাকে ভোগান্তিতে পড়তে হয় এবং বিকল্প পথে ট্যাক্সিতে অধিক ভাড়া দিয়ে বাসায় ফিরতে হয়। রাত ১১ টার পর নিউইয়র্ক সিটির ২৪ ঘন্টার বাণিজ্যিক শহর ম্যানহাটনসহ নিউইয়র্ক সিটির সকল রাস্তাঘাট জনশূণ্য হয়ে পড়ে। ম্যাসিজসহ সকল বড় বড় স্টোর বন্ধ করে দেয়া হয়। নিউইয়র্ক সিটিতে রেকর্ড পরিমাণ তুষার পড়েছিলো ২০০৬ সালের ১১ ও ১২ ফেব্রুয়ারীতে ২৬.৯ ইঞ্চি, ১৯৪৭ সালের ২৬ ও ২৭ ডিসেম্বরে পড়েছিলো ২৫.৮ ইঞ্চি, ১৯৮৮ সালের ১২ থেকে ১৪ মার্চে পড়েছিলো ২১ ইঞ্চি, ২০১০ সালের ২৫ ও ২৬ ফেব্রুয়ারী পড়েছিলো ২০.৯ ইঞ্চি, ১৯৯৬ সালের ৭ ও ৮ জানুয়ারীতে তুষার পড়েছিলো ২০.২ ইঞ্চি। এবার আংশকা প্রকাশ করা হচ্ছে, কোন কোন এলাকায় ৩০ ইঞ্চির বেশি তুষার পড়বে।
শহীদুল ইসলাম প্রেরীত ‘তুষার ঝড়ে অচল নিউইয়র্ক, জরুরী অবস্থা’ শিরোনমে দৈনিক ইত্তেফাক-এ প্রকাশিত প্রতিবেদনে বলা হয়েছে: ‘নিউইয়র্ক শহর কখনো ঘুমায় না’-এ প্রবাদ বাক্যটি ভুল প্রমাণিত হতে চলেছে। ভয়াবহ তুষার ঝড়ের কবলে পড়ে থমকে গেছে অতিব্যস্ত এই শহরের জনজীবন। নিউইয়র্ক রাজ্যের গভর্নর এন্ড্রু কুমো এবং সিটি মেয়র বিল ব¬াজিও এবারের তুষারকে ‘সবচেয়ে ভয়ঙ্কর’ উলে¬খ করেছেন। পাশাপাশি জারি করেছেন জরুরি অবস্থা। আর এ কারণে অনেকটাই ভূতুড়ে নগরীতে পরিণত হয়েছে নিউইয়র্ক সিটি।
জরুরী অবস্থা শুধু নিউইয়র্কে নয়, তুষার ঝড়ে আক্রান্ত নিউইয়র্কের পাশের রাজ্য নিউজার্সি, ম্যাসাচুসেটস, রোড আইল্যান্ড ও কানেকটিকাটেও জারি করা হয়েছে। নিউইয়র্কের গুরুত্বপূর্ণ জন এফ কেনেডি (জেএফকে) এবং লাগোর্ডিয়া এয়ারপোর্টসহ অন্যান্য এয়ারপোর্টে প্রায় সাত হাজারেরও বেশি ফ্লাইট বাতিল করা হয়েছে। বন্ধ ঘোষণা করা হয়েছে নিউইয়র্ক সিটির সকল স্কুল-কলেজ। শুধুমাত্র এ্যাম্বুলেস, ফায়ার সার্ভিসসহ জরুরী যানবাহন ছাড়া রাত ১১টা পর থেকে নিউইয়র্ক সিটির সকল রাস্তায় যান চলাচল বন্ধ করে দেয়া হয়েছে। আইন লঙ্ঘন করলে ৩০০ ডলার জরিমানা হতে পারে। নিউইয়র্রে ইতিহাসে যানবাহন চলাচলে নিষেধাজ্ঞা আরোপের ঘটনা এই প্রথম।
নিউইয়র্কের বার্তা সংস্থা এনা জানায়, সোমবার বিকেল পাঁচটা থেকে নিউইয়র্ক সিটির সকল ট্রেন এবং বাস চলাচল পর্যায়ক্রমে বন্ধ করা হয়। রাত ১১টায় চূড়ান্তভাবে বন্ধ করে দেয়া হয়। পরবর্তী নির্দেশ না দেয়া পর্যন্ত এই আদেশ অব্যাহত থাকবে। যদিও আরেক ঘোষণায় বলা হয়েছে, স্থানীয় সময় বুধবার (২৮ জানুয়ারী) সকাল থেকে পাবলিক বাস ও ট্রেন চলার সম্ভাবনা রয়েছে। এয়ারপোর্ট কর্তৃপক্ষ জানিয়েছে, বিশেষ ব্যবস্থাপনায় জেএফকে আন্তর্জাতিক ও নিউইয়র্ক আন্তর্জাতিক এয়ারপোর্টে বিশেষ ব্যবস্থায় সীমিত কয়েকটি ফ্লাইট চলবে। অন্যদিকে নিউইয়র্ক, নিউজার্সি, কানেকটিকাট, লং আইল্যান্ড এবং ম্যাসাচুসেটস রাজ্যে সকল যান চলাচল বন্ধ রয়েছে। যেসব যাত্রী নিরাপদে বা বাড়িতে যেতে পারেননি, তাদের রাস্তায় অবস্থানের কথা বলা হয়েছে।
এদিকে যুক্তরাষ্ট্রের রাষ্ট্রীয় টেলিভিশন সিএনএন এবারের তুষার ঝড়কে ইতিহাসের সবচেয়ে বড় তুষার ঝড় হিসাবে উল্লে¬খ করেছে। নিউইয়র্কসহ আশেপাশের রাজ্যে ৩০ ইঞ্চি থেকে ৩৬ ইঞ্চি বা তিন ফুটের অধিক তুষার পড়ার আশঙ্কা রয়েছে। এই তুষার ঝড়ে বিভিন্ন রাজ্যের হাজার হাজার মানুষ কোন না কোনভাবে আক্রান্ত হবার শঙ্কা রয়েছে। নিউইয়র্কসহ তুষারে ঝড়ে আক্রান্ত অন্যান্য রাজ্যের মানুষকে বাসায় থাকার জন্য অনুরোধ জানিয়েছেন রাজ্য গভর্নর ও মেয়র।
সোমবার সকাল থেকে রাত পর্যন্ত তুষার এবং বৃষ্টি থাকলেও রাত সাড়ে ১১টা থেকে ঘণ্টায় প্রায় ৭০ মাইল বেগে শুরু হয় ভয়ংকর তুষার ঝড়। যাতে জনজীবন বিপর্যস্ত হয়ে পড়ে।
এদিকে জরুরি অবস্থা ঘোষণার পর মানুষ হন্যে হয়ে বিভিন্ন স্টোরে গিয়ে খাদ্য, পানিসহ জরুরী প্রয়োজনীয় জিনিসপত্র কিনে বাসায় ফেরেন। আবার যান চলাচল বন্ধ হয়ে যাবার কারণে অনেকে ভোগান্তিতে পড়েন।
উলে¬খ্য, নিউইয়র্ক সিটিতে রেকর্ড পরিমাণ তুষার পড়েছিল ২০০৬ সালের ১১ ও ১২ ফেব্রুয়ারীতে ২৬ দশমিক ৯ ইঞ্চি, ১৯৪৭ সালের ২৬ ও ২৭ ডিসেম্বরে পড়েছিল ২৫ দশমিক ৮ ইঞ্চি, ১৯৮৮ সালের ১২ থেকে ১৪ মার্চে পড়েছিলো ২১ ইঞ্চি, ২০১০ সালের ২৫ ও ২৬ ফেব্রুয়ারী পড়েছিলো ২০ দশমিক ৯ ইঞ্চি, ১৯৯৬ সালের ৭ ও ৮ জানুয়ারীতে তুষার পড়েছিলো ২০ দশমিক ২ ইঞ্চি।
বার্তা সংস্থা এএফপি’র খবরে জানানো হয়, শীতকালীন ঝড় জুনোর কারণে উত্তর-পূর্বাঞ্চলের বিভিন্ন এলাকায় কমপক্ষে তিন ফুটের মতো বরফ জমেছে। বিশেষ করে নিউ ইংল্যান্ড, কানেটিকাট ও ম্যাসাচুসেটসে এই ঝড়ের প্রভাব সবচেয়ে বেশি। এ ঝড়ে গত দুদিনে ছয় হাজার ৫৬০টি ফ্লাইট বাতিল করা হয়েছে।
তুষার ঝড়ের সতর্কতার সঙ্গে বন্যার সতর্কতা জারি করা হয়েছে। বিদ্যুত্ সরবরাহ বিঘ্ন ঘটার ও গাছপালা পড়ার ব্যাপারে কর্তৃপক্ষ নাগরিকদের সতর্ক করেছে।
‘ভয়ঙ্কর তুষার ঝড়ের মুখে নিউইয়র্ক’ শিরোনামে প্রকাশিত দৈনিক ইনকিলাব-এর প্রতিবেদনে বলা হয়েছে: নিউইয়র্কে এ যাবতকালের সবচেয়ে ভয়ঙ্কর তুষার ঝড়ের আভাস দিয়েছে যুক্তরাষ্ট্রের জাতীয় আবহাওয়া দফতর। ঝড়টি এ অঞ্চলের ওপর দিয়ে বয়ে যাবে স্থানীয় সময় ২৬ জানুয়ারী সোমবার সন্ধ্যা থেকে (বাংলাদেশ সময় মঙ্গলবার ভোর রাত)। এছাড়া ফিলাডেলফিয়া থেকে মাইনেতেও ভারী তুষারপাতের আশঙ্কা করা হচ্ছে। ঝড়ের প্রভাবে নিউইয়র্ক ও বোস্টনের কোনো কোনো এলাকা ইতিমধ্যেই ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। এছাড়া দুর্যোগপূর্ণ আবহাওয়ার কারইে জর্জ এফ কেনেডি বিমানবন্দর ইতোমধ্যেই বন্ধ করে দেয়া হয়েছে। বাতিল করা হয়েছে কয়েকশ’ ফ্লাইট।
এ কারণে নিউইয়র্ক রাজ্য গভর্নর এন্ড্রু ক্যুমো এবং সিটি মেয়র বিল ডি ব¬াসিও গত সোমবার স্থানীয় সময় দুপুরের ভাষণে নাগরিকদের সতর্ক থাকার পরামর্শ দিয়েছেন। পারতপক্ষে কেউ যেন সোমবার দুপুর থেকে মঙ্গলবার দুপুর পর্যন্ত ঘরের বাইরে না যায় সে আহ্বানও জানিয়েছেন তারা। কারণ, ৩০ ইঞ্চি থেকে ৩৬ ইঞ্চি পর্যন্ত তুষারপাতের পূর্বাভাস দিয়েছে জাতীয় দুর্যোগ ও আবহাওয়া দফতর।
নিউইয়র্কে ১৯৪৭ সালের ২৬-২৭ ডিসেম্বর ২৬ দশমিক ৪ ইঞ্চি এবং ২০০৬ সালের ১১-১২ ফেব্রুয়ারীতে ২৬ দশমিক ৯ ইঞ্চি তুষারপাত হয়েছিল। এখন পর্যন্ত সেটিই ছিল নিউইয়র্ক সিটির দেড়শ’ বছরের ইতিহাসে সর্বোচ্চ।
তবে, এবার যে পূর্বাভাস দেয়া হয়েছে তা আগে কখনো ঘটেনি। সিটি মেয়র আরো বলেছেন, এমন ভয়ঙ্কর পরিস্থিতি মোকাবেলার যাবতীয়ু প্রস্তুতি গ্রহণ করা হয়েছে। সিটির ৬ হাজার মাইল রাস্তা থেকে বরফ সরানোর জন্যে ৬৩০০ কর্মচারি রয়েছেন। এছাড়া, আইন-শৃঙ্খলা পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণের জন্য ৩৮ হাজার পুলিশের পাশাপাশি ন্যাশনাল গার্ড থাকবে স্ট্যান্ড বাই।
স্থানীয় আবহাওয়া দফতরের পূর্বাভাস অনুযায়ী, তুষারের সময় ঘণ্টায় ৪০ থেকে ৫০ মাইল বেগে হিমেল হাওয়া প্রবাহিত হবে। এটি হচ্ছে ভয়ের বড় কারণ। সর্বসাধারণকে যে কোন প্রয়োজনে ৯১১ অথবা ৩১১ নম্বরে ফোন করতে বলা হয়েছে।
ভয়াবহ তুষাপাতের আশঙ্কায় সোমবার দুপুর থেকেই জেএফকেসহ আশপাশের সব বিমানবন্দরে বিমান উঠানামা বন্ধ ঘোষণা করা হয়েছে। নিউইয়র্ক সিটির পাবলিক স্কুল সোমবার খোলা থাকলেও মঙ্গলবার ২৭ জানুয়ারী তা খোলা থাকবে কিনা সেটি স্থির করা হবে তুষারঝড়ের গতি-প্রকৃতির আলোকে-বলেছেন মেয়র ব্লাজিয়ো। গত বছরের ফেব্রুয়ারী মাসে এ শহরে ১৩ ইঞ্চি তুষারপাত হলেও পাবলিক স্কুল খোলা রাখা হয়।