ট্রাম্প ভোটে দাঁড়াতে পারবেন?

- প্রকাশের সময় : ১১:৫১:২৩ অপরাহ্ন, রবিবার, ২ এপ্রিল ২০২৩
- / ৫৪ বার পঠিত
হককথা ডেস্ক : মুখ বন্ধ রাখতে পর্নো তারকাকে ঘুষ দেওয়ায় সাবেক আমেরিকান প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প অভিযুক্ত হয়েছেন। দেশটির ইতিহাসে এই প্রথম কোনো প্রেসিডেন্ট ফৌজদারি অভিযোগে অভিযুক্ত হলেন। এরপর আগামী প্রেসিডেন্ট নির্বাচনে তিনি প্রতিদ্বন্দ্বিতা করতে পারবেন কি না, জেলে যাবেন কি না এবং তার রাজনৈতিক ভবিষ্যৎ নিয়ে প্রশ্ন দেখা দিয়েছে। এসব প্রশ্নের উত্তর খোঁজার চেষ্টা হয়েছে এই প্রতিবেদনে।
ভোটে দাঁড়াতে পারবেন ট্রাম্প ?
সিএনএনের রাজনীতিবিষয়ক বিশ্লেষক জাচারি বি উলফ জানিয়েছেন, ট্রাম্প অভিযুক্ত কেন, দোষী সাব্যস্ত হলেও ২০২৪ সালের প্রেসিডেন্ট নির্বাচনে প্রার্থী হতে পারবেন। ইউনিভার্সিটি অব ক্যালিফোর্নিয়ার আইনের অধ্যাপক রিচার্ড হ্যাচেনের বরাত দিয়ে তিনি জানান, কোনো বাধাই ট্রাম্পকে প্রার্থী হতে বাধা দিতে পারবে না।আমেরিকান সংবিধানে প্রেসিডেন্ট নির্বাচনে প্রার্থী হতে তিনটি শর্ত দেওয়া হয়েছে। এগুলো হচ্ছে — যুক্তরাষ্ট্রের জন্মগত নাগরিক, ৩৫ বছর বয়স এবং যুক্তরাষ্ট্রে অন্তত ১৪ বছর বসবাস করতে হবে। যদিও রাজনৈতিকভাবে একজন অভিযুক্তের প্রেসিডেন্ট প্রার্থী হওয়া কিংবা জয়ী হয়ে আসা খুবই কঠিন।
প্রেসিডেন্ট নির্বাচনের ক্ষেত্রে আমেরিকান সংবিধানের ২২তম ও ১৪তম সংশোধনীতে কিছু সীমাবদ্ধতার কথা উল্লেখ আছে। তবে এগুলো ট্রাম্পের ক্ষেত্রে প্রযোজ্য হবে না। যেমন — ২২তম সংশোধনীতে বলা হয়েছে, কেউ টানা দুই মেয়াদে প্রেসিডেন্টের দায়িত্ব পালন করলে তৃতীয় বার প্রার্থী হওয়ার সুযোগ নেই। ট্রাম্প একবারই দায়িত্ব পালন করেছেন এবং দ্বিতীয় বারের নির্বাচনে হেরেছেন। কোনো অপরাধ বা আচরণের কারণে কেউ প্রতিনিধি পরিষদ ও সিনেটে অভিযুক্ত বা দোষী সাব্যস্ত হয়ে অভিশংসিত হলে প্রেসিডেন্ট নির্বাচনে অযোগ্য হবেন। ট্রাম্প ক্ষমতায় থাকাকালে প্রতিনিধি পরিষদে দুই বার অভিশংসিত হলেও সিনেটে দুই বারই মুক্তি পেয়েছেন। ১৪তম সংশোধনীতে সাবেক কনফেডারেট সৈন্যরা নির্বাচনে অংশ নিতে পারবেন না, এমন একটি অযোগ্যতার ধারা উল্লেখ করা হয়। তবে ট্রাম্প দোষী সাব্যস্ত হলে ফ্লোরিডায় তার ভোট দিতে পারবেন না।
ট্রাম্প কি জেলে যাবেন ?
অধ্যাপক রিচার্ড হ্যাচেনের মতে, অভিযুক্ত হলেই ট্রাম্পকে জেলে যেতে হবে না। কারণ জেলে যেতে হয় তাকে, যিনি দোষী সাব্যস্ত হন এবং যার সাজা হয়। আবার ট্রাম্প জেলে গেলে তার দুই পাশে সিক্রেট সার্ভিসের সদস্যদের দায়িত্ব পালন করতে হবে। অর্থাৎ, সিক্রেট সার্ভিসের সদস্যদেরও জেলের সেলে থাকতে হবে এবং তাদের কারাগারের পোশাক পরতে হবে। কারণ সাবেক প্রেসিডেন্ট জেলে গেলেও তার সুরক্ষার দায়িত্ব সিক্রেট সার্ভিসের। এর আগে দোষী সাব্যস্ত হলেও যুক্তরাষ্ট্রের শীর্ষ কর্মকর্তাদের জেলে যেতে হয়নি। সাবেক প্রেসিডেন্ট রিচার্ড নিক্সন তার উত্তরসূরি গেরাল্ড ফোর্ডের কাছ থেকে ক্ষমা পেয়েছিলেন। দুর্নীতির কেলেঙ্কারিতে জড়িয়ে যাওয়ায় নিক্সনের এক ভাইস প্রেসিডেন্ট স্পিরো অ্যাগনিউ পদত্যাগ করেছিলেন। চুক্তির মাধ্যমে তিনি কারাগারে যাওয়া থেকে রক্ষা পেয়েছিলেন। সাবেক আমেরিকান ভাইস প্রেসিডেন্ট অ্যারোন বার অল্পের জন্য রাষ্ট্রদ্রোহের মামলা থেকে রক্ষা পেয়েছিলেন এবং দেশত্যাগ করেছিলেন। রিচার্ড হ্যাচেন বলছেন, ট্রাম্প যে ধরনের অপরাধে অভিযুক্ত হয়েছেন, তাতে তাকে জেলে যেতে হবে না। ব্রুকলিনের সাবেক প্রসিকিউটর ও শীর্ষ কর্মকর্তাদের আইনজীবী আরথুর আইডালা বলেছেন, ট্রাম্পকে এক মিনিট জেলে থাকতে হবে এমন সম্ভাবনা দেখি না।
আরোও পড়ুন। পর্ন তারকা কানেকশন ও ট্রাম্পের পরিণতি
কে এই স্টর্মি ড্যানিয়েলস ?
৪৪ বছর বয়সি স্টর্মির আসল নাম স্টেফানি গ্রেগরি ক্লিফোর্ড। তবে নীল ছবির দুনিয়ায় তিনি পরিচিত স্টর্মি নামেই। ২০১৬ সালে আমেরিকার প্রেসিডেন্ট নির্বাচনের ঠিক আগে ট্রাম্পের সঙ্গে একাধিক নারীর সম্পর্কের কথা প্রকাশ্যে আসে। সেই সব নারীর মধ্যে উল্লেখযোগ্য পর্নো তারকা স্টর্মি ড্যানিয়েলস। দাবি করা হয়েছিল, ২০০৬ সাল নাগাদ স্টর্মির সঙ্গে সম্পর্কে জড়ান ট্রাম্প। অভিযোগ উঠেছিল, তাদের সম্পর্ক নিয়ে মুখ বন্ধ রাখার জন্য ১ লাখ ৩০ হাজার ডলার ঘুষ দেওয়া হয়েছিল স্টর্মিকে। সেই অভিযোগেই ট্রাম্পকে আবার অভিযুক্ত করেছে আমেরিকার একটি আদালত। যদিও স্টর্মির সঙ্গে শারীরিক সম্পর্কে লিপ্ত হওয়ার কথা অস্বীকার করেছেন ট্রাম্প।
স্টর্মির জন্ম লুইসিয়ানার ব্যাটন রুজে। যদিও বর্তমানে টেক্সাসের বাসিন্দা। জন্মের চার বছরের মাথায় তার মা-বাবার বিবাহবিচ্ছেদ ঘটে। মায়ের কাছেই মানুষ হন তিনি। ১৯৯৭ সালে ব্যাটন রুজের স্কটল্যান্ডভিল ম্যাগনেট হাইস্কুল থেকে স্নাতক হন স্টর্মি এবং সাংবাদিক হওয়ার সিদ্ধান্ত নেন। তবে তার ভাগ্যে অন্য কিছু লেখা ছিল। ১৭ বছর বয়সে স্টর্মি স্ট্রিপার হিসেবে কাজ শুরু করেন। কিছুদিনেই স্ট্রিপার হিসেবে খ্যাতি পান তিনি। এক পর্নো পরিচালক তার ছবিতে অভিনয় করার সুযোগ দেন। পর্নো ছবিতে অভিনয়ের প্রস্তাব গ্রহণ করার পর স্টর্মিকে আর ফিরে তাকাতে হয়নি। অভিনয়ের জন্য একাধিক পুরস্কারও পেয়েছেন। বহু জটিলতাও রয়েছে স্টর্মির ব্যক্তিগত জীবনে। ২০০৩ সালে প্যাট মাইনকে বিয়ে করেন স্টর্মি। প্যাটের সঙ্গে বিচ্ছেদের পর ২০০৭ সালে তিনি মাইকেল মোসিনিকে বিয়ে করেন। মাইকেলের ওপর পারিবারিকভাবে হামলার অভিযোগে স্টর্মিকে ২০০৯ সালে গ্রেফতার করা হয়। এরপর ২০১৫ সালে ব্রেন্ডন মিলারকে বিয়ে করেন তিনি। সেই বিয়েও ভেঙে যায়। এর মধ্যে স্টর্মি ২০১৯ সালে নিজেকে উভকামী বলে ঘোষণা করেন। ২০২২ সালে তিনি পর্নো তারকা ব্যারেট ব্লেডকে বিয়ে করেন। সূত্র : দৈনিক ইত্তেফাক
সুমি/হককথা