দেশ বিদেশ
ট্রাম্পের আগ্রাসী মনোভাব: গ্রিনল্যান্ড পানামা ক্যানেল, কানাডা নিয়ে হুমকি

- প্রকাশের সময় : ০১:০০:৩৫ পূর্বাহ্ন, বৃহস্পতিবার, ৯ জানুয়ারী ২০২৫
- / ৭৭ বার পঠিত
আবারো যুক্তরাষ্ট্রের জাতীয় নিরাপত্তার গুরুত্ব তুলে ধরে গ্রিনল্যান্ড এবং পানামা ক্যানেল নিজেদের নিয়ন্ত্রণের কথা পুনর্ব্যক্ত করেছেন নবনির্বাচিত প্রেসিডেন্ট ডনাল্ড ট্রাম্প। তিনি ডেনমার্কের অধীনে থাকা গ্রিনল্যান্ডের স্বায়ত্তশাসন উপেক্ষা করে সেটা এবং পানামা ক্যানেলের নিয়ন্ত্রণ নিতে সামরিক বা অর্থনৈতিক শক্তি ব্যবহার করবেন কিনা- এমন প্রশ্নে নেতিবাচক জবাব দিয়েছেন। বলেছেন, না, এর কোনোটিই ব্যবহার করবো না। তবে আমি বলতে পারি অর্থনৈতিক নিরাপত্তার জন্য গ্রিনল্যান্ড এবং পানামা ক্যানেল আমাদের প্রয়োজন। ফ্লোরিডার মার-এ-লাগোতে এক ব্যাপক বিস্তৃত সংবাদ সম্মেলনে তিনি সাংবাদিকদের সঙ্গে কথা বলেন। তবে তার এমন মন্তব্যকে প্রত্যাখ্যান করেছে ডেনমার্ক ও পানামা। তারা বলেছে, কোনো অবস্থাতেই তা তারা ত্যাগ করবে না। তবে কানাডার দিকে হাত বাড়ানোর বিষয়ে তিনি প্রতিশ্রুতি দিয়েছেন অর্থনৈতিক শক্তি ব্যবহারের। একই সঙ্গে যুক্তরাষ্ট্র ও কানাডার মধ্যে অভিন্ন সীমান্তকে কৃত্রিমভাবে অঙ্কিত রেখা বলে মন্তব্য করেছেন। এ খবর দিয়েছে অনলাইন বিবিসি।
যুক্তরাষ্ট্র ও কানাডার মধ্যে যে অভিন্ন সীমান্ত তা বিশ্বের এমন সবচেয়ে দীর্ঘ সীমান্ত। ১৭০০-এর দশকে যুক্তরাষ্ট্র প্রতিষ্ঠাকালে এই সীমান্ত নির্ধারণ করা হয়েছিল। কিন্তু যুক্তরাষ্ট্রের নবনির্বাচিত প্রেসিডেন্ট ডনাল্ড ট্রাম্প বলেছেন, কানাডাকে সুরক্ষা দিতে যুক্তরাষ্ট্র শত শত কোটি ডলার খরচ করছে। তিনি কানাডার গাড়ি, কাঠ ও ডেইরি সামগ্রী আমদানি করার সমালোচনা করেন। ট্রাম্প কানাডাকে উদ্দেশ্য করে বলেন, কানাডা (যুক্তরাষ্ট্রের) একটি রাজ্য হওয়া উচিত। এর জবাবে কানাডার বিদায়ী প্রধানমন্ত্রী জাস্টিন ট্রুডো বলেছেন, দুই দেশ একসঙ্গে মিলে যাওয়ার কোনোই সুযোগ নেই। ওদিকে আর মাত্র দু’সপ্তাহেরও কম সময়ের মধ্যে প্রেসিডেন্ট হিসেবে শপথ নেবেন ট্রাম্প। তার আগে মঙ্গলবারের সংবাদ সম্মেলন তিনি শুরু করেন দুবাইয়ের ডেভেলপার ডোমাক প্রোপার্টিজ যুক্তরাষ্ট্রে ডাটা সেন্টার প্রতিষ্ঠা করতে ২০০০ কোটি ডলার বিনিয়োগ করবে। পরে তিনি পরিবেশগত বিধিবিধান, যুক্তরাষ্ট্রের নির্বাচনী ব্যবস্থা, তার বিরুদ্ধে বিভিন্ন মামলা এবং বর্তমান প্রেসিডেন্ট জো বাইডেনের কড়া সমালোচনা করেন। এর বাইরে তিনি গালফ অব মেক্সিকো বা মেক্সিকো উপসাগরকে নতুন করে গালফ অব আমেরিকা বা যুক্তরাষ্ট্র উপসাগর নামকরণের সুপারিশ করেন। এক পর্যায়ে তিনি বায়ুচালিত শক্তির বিরোধিতা পুনর্ব্যক্ত করেন। বলেন, উইন্ড টার্বাইনগুলোর শব্দ তিমিদেরকে পাগল করে দিচ্ছে। ট্রাম্প এসব মন্তব্য করলেন এমন এক সময়ে যখন তার ছেলে ডনাল্ড ট্রাম্প জুনিয়র গ্রিনল্যান্ড সফরে রয়েছেন।
এই সফরে প্রাইভেট যুদ্ধবিমানে করে রাজধানী নুকে পৌঁছানোর আগে ডনাল্ড ট্রাম্প জুনিয়র বলেছেন, লোকজনের সঙ্গে কথা বলতে তিনি গ্রিনল্যান্ডে ব্যক্তিগত সফরে যাচ্ছেন। তবে তিনি সরকারি কোনো কর্মকর্তার সঙ্গে সাক্ষাৎ করবেন না। ট্রাম্প জুনিয়রের এই সফর সম্পর্কে প্রশ্নের জবাবে ডেনিশ টিভিতে ডেনমার্কের প্রধানমন্ত্রী মেতে ফ্রেডেরিকসেন বলেন, গ্রিনল্যান্ডের মালিক এই দ্বীপবাসী। একমাত্র স্থানীয়রাই এর ভবিষ্যৎ সম্পর্কে সিদ্ধান্ত নিতে পারেন। তিনি আরও বলেন, গ্রিনল্যান্ড বিক্রির জন্য নয়। তবে তিনি জোর দিয়ে বলেন যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে ঘনিষ্ঠ সহযোগিতা করা উচিত ডেনমার্কের। উল্লেখ্য, গ্রিনল্যান্ডের জনসংখ্যা মাত্র ৫৭ হাজার। এটি বিশ্বের সবচেয়ে বড় দ্বীপ। কৌশলগত দিক দিয়ে আর্কটিক অঞ্চলে গুরুত্বপূর্ণ অংশ এই দ্বীপ। এর রয়েছে বড় রকমের স্বায়ত্তশাসন। কিন্তু এই দ্বীপটির অর্থনীতি ব্যাপকভাবে নির্ভর করে কোপেনহেগেনের ভর্তুকির ওপর। একই সঙ্গে এই দ্বীপটি ডেনমার্কের অংশ। এখানে আছে যুক্তরাষ্ট্রের একটি বিশাল মহাকাশ বিষয়ক স্থাপনা। আছে বিশ্বের বিরল কিছু খনিজ পদার্থের সবচেয়ে বড় মজুত। এসব পদার্থ ব্যাটারি ও উচ্চ প্রযুক্তির ডিভাইস তৈরিতে গুরুত্বপূর্ণ।
ট্রাম্প বলেছেন, চীন ও রাশিয়ার জাহাজকে নজরে রাখতে সেখানে সামরিক উদ্যোগ গুরুত্বপূর্ণ। তিনি বলেন, আমি পুরো পৃথিবীকে মুক্ত করা নিয়ে কথা বলছি। ডনাল্ড ট্রাম্প দ্বিতীয় দফায় নির্বাচিত হওয়ার পর যুক্তরাষ্ট্রের সীমানাকে সম্প্রসারিত করার বিষয়ে বার বার বক্তব্য দিচ্ছেন। মঙ্গলবারের ওই সংবাদ সম্মেলনে তিনি বলেন, পানামা খাল আমাদের দেশের জন্য খুবই গুরুত্বপূর্ণ। বর্তমানে এটা পরিচালনা করছে চীন। এর আগে যুক্তরাষ্ট্রের জাহাজের কাছ থেকে এই পানিপথ ব্যবহারে অতিরিক্ত চার্জ নেয়া হচ্ছে বলে অভিযোগ করেছেন ট্রাম্প।
উল্লেখ্য, এই পানামা খাল আটলান্টিক মহাসাগর ও প্রশান্ত মহাসাগরকে সংযুক্ত করেছে। ট্রাম্প যে দাবি করেছেন তা প্রত্যাখ্যান করেছেন পানামার প্রেসিডেন্ট হোসে রাউল মুলিনো। তিনি বলেছেন, পানামায় মোটেও চীনা কোনো হস্তক্ষেপ নেই। পানামা খালে প্রবেশে যে দুটি পোর্ট বা বন্দর আছে তার ব্যবস্থাপনা রয়েছে হংকংভিত্তিক কোম্পানি সিকে হাচিসন হোল্ডিংসের হাতে। ১৯০০-এর দশকে এই ক্যানেল নির্মাণ করা হয়। ১৯৭৭ সাল পর্যন্ত এই ক্যানেলের পুরোটা নিয়ন্ত্রণ করতো যুক্তরাষ্ট্র। কিন্তু যুক্তরাষ্ট্রের সাবেক প্রেসিডেন্ট জিমি কার্টারের অধীনে সমঝোতামূলক চুক্তি হয়। তার অধীনে পানামা ক্যানেলকে দেয়া হয় পানামার অধীনে। এ বিষয়ে ট্রাম্প বলেন, পানামা ক্যানেল পানামার হাতে তুলে দেয়া ছিল এক বিরাট ভুল। দেখুন কার্টার একজন ভালো মানুষ। কিন্তু তিনি বড় ভুল করেছেন। কিন্তু ডনাল্ড ট্রাম্প যুক্তরাষ্ট্রের ভূখণ্ডকে সম্প্রসারণ করার জন্য বার বার যে হুমকি দিচ্ছেন, সে বিষয়ে তিনি কতোটা গুরুতর তা স্পষ্ট নয়। সূত্র : মানবজমিন।