জিমি কার্টারের শতবর্ষে পদার্পণ বাইডেনের শুভেচ্ছা
- প্রকাশের সময় : ০২:১৮:১২ পূর্বাহ্ন, শুক্রবার, ৪ অক্টোবর ২০২৪
- / ১৩৪ বার পঠিত
দ্য গার্ডিয়ান: যুক্তরাষ্ট্রের সাবেক প্রেসিডেন্ট জিমি কার্টার মঙ্গলবার (১ অক্টোবর) শতবর্ষে পদার্পণ করেছেন। শততম জন্মদিন উপলক্ষে তাকে শুভেচ্ছা জানিয়েছেন দেশটির প্রেসিডেন্ট জো বাইডেন, সাবেক প্রেসিডেন্ট বারাক ওবামাসহ বিশিষ্টজন এবং তার শুভাকাঙ্খীরা। জিমি কার্টার-ই হলেন- প্রথম কোনো সাবেক আমেরিকান প্রেসিডেন্ট, যিনি শতবর্ষে পদার্পণের মাইলফলক অর্জন করলেন।
১৯ মাস ধরে যুক্তরাষ্ট্রের জর্জিয়া অঙ্গরাজ্যের পেস্নইনস এলাকায় নিজ বাসভবনে নিবিড় সেবাযতেœ রয়েছেন সাবেক এই প্রেসিডেন্ট। তার নাতি জেসন কার্টার বলেছেন, নভেম্বরে অনুষ্ঠেয় প্রেসিডেন্ট নির্বাচনে ডেমোক্র্যাট প্রার্থী কমলা হ্যারিসকে ভোট দেওয়ার আগ্রহ ব্যক্ত করেছেন জিমি কার্টার।
জিমি কার্টারের জন্মদিনে তাকে শুভেচ্ছা জানিয়ে প্রেসিডেন্টের সরকারি বাসভবন হোয়াইট হাউসের প্রাঙ্গণে বড় বড় অক্ষরে ‘হ্যাপি বার্থডে প্রেসিডেন্ট কার্টার’ লেখা চিহ্ন স্থাপন করা হয়েছে। এ ছাড়া বাইডেন (৮১) এক বিবৃতিতে তার পূর্বসূরি এই প্রেসিডেন্টকে বিশ্ববাসী ও আমেরিকানদের জন্য ‘নৈতিক শক্তি’ হিসেবে উলেস্নখ করেছেন।
সাবেক প্রেসিডেন্ট ওবামাও সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম এক্সে এক ভিডিও বার্তায় বলেছেন, ‘শুভ ১০০তম জন্মদিন, প্রেসিডেন্ট কার্টার! আপনার বন্ধুত্ব, আপনার মৌলিক শিষ্টাচার এবং কার্টারসেন্টারের মাধ্যমে অসাধারণ সব কর্মকান্ডের জন্য আপনাকে ধন্যবাদ। এ দেশের জন্য আপনি যা করেছেন, মিশেল ও আমি সেজন্য আপনার কাছে কৃতজ্ঞ।’
এদিকে কার্টারকে শুভেচ্ছা জানাতে মঙ্গলবার তার বাড়িতে পরিবারের প্রায় ২৫ জন সদস্য সমবেত হন বলে জানিয়েছে অ্যাসোসিয়েটেড প্রেস। সেখানে কেক কেটে তার জন্মদিন উদযাপন করা হয়। জিমি কার্টারের ছেলে চিপ কার্টার বার্তা সংস্থা এপিকে বলেন, তার লক্ষ্য আসছে নির্বাচনে ভোট দেওয়া। এ বিষয়ে উদগ্রীব হয়ে আছেন তিনি। চিপ আরও বলেন, ‘দুই মাস আগে তার কাছে আমি জানতে চেয়েছিলাম, আপনি কি শতবর্ষী হতে চান? তখন তার জবাব ছিল,‘’আমি কমলা হ্যারিসকে ভোট দেওয়ার জন্য বাঁচতে চাই।’
কার্টারকে শুভেচ্ছা জানিয়েছেন সাবেক প্রেসিডেন্ট বিল ক্লিনটনও। জন্মদিনে এক্সে পাঠানো এক বার্তায় তার মঙ্গল কামনা করেন তিনি।
যুক্তরাষ্ট্রের যেকোনো প্রেসিডেন্টের চেয়ে সবচেয়ে দীর্ঘ আয়ুর অধিকারী প্রেসিডেন্ট কার্টার ১৯৭৭-এর জানুয়ারী থেকে ১৯৮১ সালের জানুয়ারী পর্যন্ত এই পদে দায়িত্ব পালন করেন। ১৯৮০ সালে অনুষ্ঠিত নির্বাচনে রিপাবলিকান প্রতিদ্ব›দ্বী রোনাল্ড রিগ্যানের কাছে পরাজিত হয়ে হোয়াইট হাউস ছাড়েন কার্টার। হোয়াইট হাউস ছাড়ার পরও দশকের পর দশক ধরে বিভিন্ন মানবিক কর্মকান্ডে নিজেকে যুক্ত করে রেখেছেন জিমি কার্টার। এর মধ্যে রয়েছে- মানবাধিকার রক্ষা, দেশে দেশে দারিদ্র্য হ্রাসে কর্মসূচিও। আন্তর্জাতিক সংঘাতের শান্তিপূর্ণ সমাধান খুঁজে পেতে নিরলস প্রচেষ্টা, গণতন্ত্র ও মানবাধিকার পরিস্থিতির উন্নতি সাধন এবং অর্থনৈতিক ও সামাজিক উন্নয়নে ভূমিকা রাখার স্বীকৃতি হিসেবে ২০২২ সালে তাকে নোবেল শান্তি পুরস্কার দেওয়া হয়।
জিমি কার্টার প্রেসিডেন্ট হিসেবে ক্ষমতায় থাকাকালে যুক্তরাষ্ট্রে অর্থনৈতিক দুর্দশা চলছিল। তার শাসনকালেই ইরানে আমেরিকান দূতাবাসে যুক্তরাষ্ট্রের ৫২ জন কূটনীতিক ও নাগরিককে জিম্মি করা হয়েছিল। তিনি ক্ষমতা ছাড়ার পর এই জিম্মিদশার অবসান হয়। অবশ্য, ক্যাম্প ডেভিড চুক্তি স্বাক্ষরের ক্ষেত্রে কার্টারের ভূমিকা ছিল। এর মধ্য দিয়ে মিসর ও ইসরায়েলের মধ্যে শান্তিচুক্তি সম্ভব হয়।
রোজেলিন কার্টারের সঙ্গে জিমি কার্টারের দাম্পত্য জীবন ছিল দীর্ঘ ৭৭ বছরের। গত বছরের নভেম্বরে মারা যান রোজেলিন। সর্বশেষ কার্টারকে জনসমক্ষে দেখা গিয়েছিল তার স্ত্রীর অন্ত্যেষ্টিক্রিয়ার অনুষ্ঠানে। সেখানে হুইলচেয়ারে বসে ছিলেন তিনি।
জিমি কার্টার কয়েক বছর ধরে ত্বকের ক্যানসার মেলানোমাসহ বিভিন্ন শারীরিক জটিলতায় ভুগছেন। ইতোমধ্যে তার যকৃৎ ও মস্তিষ্কে ক্যানসার ছড়িয়ে পড়েছে। তিনি আনুষ্ঠানিক কোনো চিকিৎসা না নিয়ে গত বছরের ফেব্রæয়ারী থেকে বাড়িতে পরিবারের সঙ্গে বাকি জীবন কাটিয়ে দেওয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছেন।
কার্টারকে সেদিন স্বাগত জানিয়েছে মুষলধারায় বৃষ্টি
এদিকে ১৯৮১ সালে প্রেসিডেন্ট জিমি কার্টার যখন জর্জিয়ার প্লেইনসে ফিরে যান তখন তিনি পরাজিত ও ভোটারদের দ্বারা প্রত্যাখ্যাত। রিপাবলিকান রোনাল্ড রেগান বিপুল ভোটে জয়লাভ করেছেন। কার্টারকে সেদিন স্বাগত জানিয়েছে মুষলধারায় বৃষ্টি। তার মনের বিষন্নতা ও দেশের অবস্থা প্রতিফলিত হয়েছিল সেই প্রাকৃতিক পরিবেশে।
লেখক ও ইতিহাসবিদ জোনাথন অল্টার বলেন, “দফতরে তিনি রাজনৈতিকভাবে ব্যর্থ হয়েছিলেন। তিনি রোনাল্ড রেগানের কাছে ব্যাপকভাবে পর্যুদস্ত হন। তবে, সারগর্ভ ও দূরদর্শিতার জন্য তিনি সফল।” কার্টার সেন্টারের মানবিক কাজের জন্য আজ অনেকে তাকে চেনেন এবং অল্টার তার এই মানবিক দিকের স্বীকৃতি দিয়ে বলেছেন, গোটা বিশ্বে তিনি “শান্তি প্রতিষ্ঠা করেছেন, রোগের বিরুদ্ধে মোকাবেলা করেছেন এবং আশা জাগিয়েছেন”, আর সে কারণেই ২০০২ সালে জিমি কার্টার শান্তিতে নোবেল পুরস্কার পান।
অল্টার বলেছেন, “১০০টির বেশি দেশে নির্বাচন তত্ত¡াবধান করে তিনি দারুণ কাজ করেছেন। তবে, সাবেক প্রেসিডেন্টদের ক্ষমতা প্রেসিডেন্টের মত নয়। প্রেসিডেন্ট হিসেবে তার অর্জনের তালিকা অনেক দীর্ঘ, অথচ তা উপেক্ষা করা হয়েছে, ছোট করে দেখানো হয়েছে বা মানুষ গোটাটাই ভুলে গেছেন।”
১৯৭০-এর দশকে ইরানে জিম্মি সংকট, ক্রমবর্ধমান মুদ্রাস্ফীতি ও তেল নিষেধাজ্ঞা হোয়াইট হাউসে কার্টারের কেরিয়ারে সর্বনাশ ঢেকে এনেছিল এবং তার পরম্পরা বা লেগ্যাসির উপর দীর্ঘ ছায়াপাত করেছিল। তবে, এক সময়ের বাদাম চাষী, জর্জিয়ার গভর্নর, প্রেসিডেন্ট ও শান্তিতে নোবেল পুরস্কার বিজয়ী কার্টারের শততম জন্মদিনে লেখক ও ইতিহাসবিদরা যুক্তরাষ্ট্রের একবারের প্রেসিডেন্ট হিসেবে তার ব্যর্থতা ও সাফল্যকে পুনর্মূল্যায়ন করছেন।
অল্টারের লেখা জীবনীগ্রন্থ “হিজ ভেরি বেস্ট: জিমি কার্টার, এ লাইফ” বেশ কয়েকটি বইয়ের অন্যতম যেখানে হোয়াইট হাউসে তার চার বছরকে আর যাই হোক ব্যর্থ বলে উপসংহার টানা হয়নি।
আগস্ট মাসে শিকাগোতে ডেমোক্রেটিক ন্যাশনাল কনভেনশনে ভিওএ-কে দেওয়া এক সাক্ষাৎকারে অল্টার বলেছেন, “শুধুমাত্র বিখ্যাত ক্যাম্প ডেভিড চুক্তি ও চীনের সঙ্গে সম্পর্ক শুরু করা নয়, বরং পরিবেশ ও অন্যান্য বিষয় নিয়ে বহু আইনি কৃতিত্ব রয়েছে যা বারাক ওবামা ও বিল ক্লিন্টন উভয়ের আইনি কৃতিত্বকে সত্যিই ছাপিয়ে যায়।”
কার্টার ১৯৮০ সালে আলাস্কা ন্যাশনাল ইন্টারেস্ট ল্যান্ডস কনজারভেশন অ্যাক্ট স্বাক্ষর করেন যা ১০০ মিলিয়ন একরের বেশি এলাকা সুরক্ষিত করে যার মধ্যে রয়েছে জমি, জাতীয় উদ্যান, আশ্রয় শিবির, স্মৃতিসৌধ, অরণ্য ও অনেক সংরক্ষিত এলাকা। অল্টার বলেন, এই আইনকে সর্বকালের সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ পরিবেশ আইনগুলির অন্যতম হিসেবে বিবেচনা করা হয় এখন।