নিউইয়র্ক ০৮:০১ পূর্বাহ্ন, শনিবার, ২১ ডিসেম্বর ২০২৪, ৭ পৌষ ১৪৩১ বঙ্গাব্দ
বিজ্ঞাপন :
মঙ্গলবারের পত্রিকা সাপ্তাহিক হককথা ও হককথা.কম এ আপনার প্রতিষ্ঠানের বিজ্ঞাপন দিতে যোগাযোগ করুন +1 (347) 848-3834

ওবামা ও ট্রাম্পের হোয়াইট হাউজে কাজ করার অভিজ্ঞতা

রিপোর্ট:
  • প্রকাশের সময় : ০১:৪৮:১২ পূর্বাহ্ন, শুক্রবার, ৩ মার্চ ২০১৭
  • / ৭৭৬ বার পঠিত

২০১১ সালে কলেজ থেকে বের হয়ে সোজা হোয়াইট হাউজে কাজ করার জন্য আমাকে হায়ার করা হয়। অবশেষে ন্যাশনাল সিকিউরিটি কাউন্সিল তথা জাতীয় নিরাপত্তা পরিষদে কাজ করার সুযোগ লাভ করি আমি। এখানে আমার কাজ ছিল আমার দেশের অবস্থানকে রক্ষা ও সমুন্নত করা। আমি একজন হিজাব পরা মুসলিম নারী। হোয়াইট হাউজের ওয়েস্ট উইংয়ে আমিই ছিলাম একমাত্র হিজাবি। তার পরও ওবামা প্রশাসন সবসময় আমাকে স্বাগত জানিয়েছে। আমাকে আপন করে নিয়েছে।
বেশির ভাগ আমেরিকান মুসলিম সহকর্মীদের মতো ২০১৬ সালের বেশির ভাগ সময় আমার কেটেছে ভয় ও ত্রাসের মধ্যে। কেননা রিপাবলিকান প্রেসিডেন্ট প্রার্থী ডোনাল্ড ট্রাম্প সে সময় আমাদের মুসলিম সম্প্রদায়ের নিন্দা করে চলেছেন। তা সত্ত্বেও এ কারণেই আমি ভাবলাম ট্রাম্প প্রশাসনের আমলে এনএসসি বা জাতীয় নিরাপত্তা পরিষদের স্টাফ হয়ে আমার টিকে থাকার চেষ্টা করা উচিত। উদ্দেশ্য একটাই, যাতে নতুন প্রেসিডেন্ট ও তার সহযোগীদের সামনে ইসলাম ও আমেরিকার মুসলিম নাগরিকদের সম্পর্কে অধিকতর সূক্ষ্ম দৃষ্টিভঙ্গি তুলে ধরতে পারি। কিন্তু ট্রাম্প প্রশাসনে আমি মাত্র আট দিন টিকে থাকতে পারলাম।
যখন সব সিরীয় উদ্বাস্তÍু ও সাত মুসলিম সংখ্যাগরিষ্ঠ দেশ থেকে পর্যটকদের ভ্রমণযাত্রার ওপর ট্রাম্প নিষেধাজ্ঞা জারি করলেন, তখন আমি বুঝতে পারলাম এখানে আমি আর বেশি দিন টিকে থাকতে পারব না। ট্রাম্প প্রশাসনের পক্ষে কাজও করতে পারব না। কেননা তারা আমাকে এবং আমার মতো লোকদের নাগরিক হিসেবে নয়, বরং দেখেন হুমকি হিসেবে।
আমার হোয়াইট হাউজ ত্যাগের আগের দিন সন্ধ্যার কথা। আমি আমার সহকর্মীদের কাছ থেকে বিদায় নিতে গেলাম। আমার অনেক সহকর্মী ইতোমধ্যে হোয়াইট হ্উাজ ত্যাগ করে চলে গেছেন। আমি ট্রাম্পের সিনিয়র এনএসসি যোগাযোগ উপদেষ্টা মাইকেল অ্যান্টনকে আমার বিদায়ের কথা জানালাম। তিনি প্রথমে যেন আকাশ থেকে পড়লেন। জানতে চাইলেন আমি পুরোপুরি সরকার ত্যাগ করছি কি না। এরপর সতর্কতার সাথে নীরব হয়ে গেলেন। জিজ্ঞেস করলেন না কেন চলে যাচ্ছি। তবে আমি তাকে আমার চলে যাওয়ার কারণটা বলতে পারলাম।
আমি তাকে বললাম, আমাকে চলে যেতে হচ্ছে। কারণ এ দেশের সবচেয়ে ঐতিহাসিক ভবনটিতে প্রতিদিন আমাকে অপমানিত হতে হচ্ছে। এই প্রশাসন একজন আমেরিকান ও মুসলিম হিসেবে আমার অবস্থানের বিরুদ্ধে কাজ করছে এবং সব কিছুতে ঘৃণা ছড়াচ্ছে। আমি তাকে বললাম, এই প্রশাসন গণতন্ত্রের মৌলিক মতবাদ ও নীতিকেই আক্রমণ করছে। আমি তাকে বললাম, এরপরও আমি আশা করেছিলাম যে, তারা এবং যারা কংগ্রেসে আছেন তারা সব পরিণতিতে নিজেদের দায়িত্বের ব্যাপারে প্রস্তÍুতি নেবেন এবং তারা তাদের সিদ্ধান্তে তা যোগ করবেন। এ কথা বলার পর তিনি আমার দিকে তাকালেন। কিন্তু কিছু বললেন না।
পরে আমি জানতে পারলাম যে, মাইকেল অ্যান্টন কর্তৃত্ববাদের গুণকীর্তন করে ছদ্মনামে একটি প্রবন্ধ লিখেছেন। সেই প্রবন্ধে তিনি আমেরিকান সমাজের ‘বৈচিত্র’কে দুর্বলতা হিসেবে আক্রমণ করেছেন এবং ইসলামকে দেখেছেন ‘আধুনিক পশ্চিমা বিশ্বের সাথে বেমানান’ হিসেবে। আমার সারা জীবন এবং যা কিছু আমি শিখেছি তা প্রমাণ করে যে, এই সহজ অভিব্যক্তি আসলে ভুল।
আমার পিতা-মাতা অভিবাসী হিসেবে ১৯৭৮ সালে বাংলাদেশ থেকে যুক্তরাষ্ট্রে আসেন এবং এ দেশে জন্মগ্রহণ করা সন্তানদের জন্য সুযোগ তৈরির চেষ্টা করেন। আমার মা ব্যাংকের ক্যাশিয়ার হিসেবে কাজ করেন। পরে তিনি ডে-কেয়ার বা দিবাযতেœর ব্যবসা শুরু করেন। আমার পিতা অনেক রাত পর্যন্ত আমেরিকার ব্যাংকে কাজ করতেন। অবশেষে তিনি এই ব্যাংকের হেড অফিসে অ্যাসিস্ট্যান্ট ভাইস প্রেসিডেন্টের পদে উন্নীত হন। আমার পিতা পিএইচডি অর্জনের জন্য পড়াশোনা শুরু করেন। কিন্তু ১৯৯৫ সালে তিনি সড়ক দুর্ঘটনায় নিহত হন।
যখন আমার বয়স বারো, তখন থেকেই আমি হিজাব পরতে শুরু করি। এতে আমার পরিবারের উৎসাহ ছিল। তবে সব সময় এটা ছিল আমার পছন্দনীয় ও স্বচ্ছন্দের বিষয়ও। এটা আমার জন্য বিশ্বাস, পরিচয় ও স্বাভাবিক অবস্থায় ফিরে আসার ব্যাপার। কিন্তু নাইন-ইলেভেনের ঘটনার পর বদলে গেল সব কিছু। ভয়ঙ্কর ও মর্মবেদনাদায়ক বিষয় হলো- হঠাৎ আমাকে কিছু বাচ্চার ভীতিকর অনুভূতির সংস্পর্শে আসতে হলো। স্কুলে তারা আমাকে অভিশাপ দিতে লাগল। জনসমক্ষে থুতু দিতে লাগল। স্থানীয় লোকেরা আমাকে ‘সন্ত্রাসী’ বলতে শুরু করল। তারা বলতে লাগল, ‘তোমার দেশে ফিরে যাও’।
আমার বাবা আমাকে শিখিয়েছিলেন ইসলামি শাস্ত্র দ্বারা অনুপ্রাণিত একটি বাংলা প্রবাদ। তা হলো- যখন কেউ তোমাকে লাথি মারবে, তখন তুমি উঠে দাঁড়িয়ে তোমার হাত বাড়িয়ে দেবে এবং প্রত্যাঘাতের বদলে তাকে সম্বোধন করবে ভাই বলে’। শান্তি, ধৈর্য, অধ্যবসায়, সম্মান, ক্ষমা ও মর্যাদার প্রতীক এমন কথার চেয়ে ভালো কথা আর কী হতে পারে! এই মূল্যবোধগুলো আমি আমার কর্মজীবনসহ সারা জীবনে বহন করে চলেছি।
আমি সরকারি কাজ করব তা কখনো ভাবিনি। আমি তাদেরই দলে ছিলাম যারা মনে করেন সরকার মজ্জাগতভাবেই দুর্নীতিগ্রস্ত ও অকার্যকর। ওবামার হোয়াইট হাউজে কাজ করার অভিজ্ঞতা আমার এই ধারণাকে ভুল প্রমাণিত করেছে। প্রেসিডেন্ট বারাক ওবামার মাধ্যমে অনুপ্রাণিত হয়ে আমি ২০১১ সালে জর্জ ওয়াশিংটন বিশ্ববিদ্যালয় থেকে স্নাতক শেষ করে যোগ দেই হোয়াইট হাউজে। জুনিয়র ইয়ারে আমি এখানে ইন্টার্নি করার সুযোগ পাই। তখন প্রেসিডেন্সিয়াল করেসপনডেন্স অফিসে আমার কাজ ছিল চিঠি পড়া ও শাসনতন্ত্র পরিষদ থেকে আসা টেলিফোন গ্রহণ করা। আমার অনুভূতি ছিল পরাবাস্তব। এখানে ২২ বছরের একজন আমেরিকান মুসলিম নারী মেরিল্যান্ড থেকে উঠে এসে যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্টের জন্য কাজ করছে। চুল ঢেকে রাখার জন্য উপহাসের পাত্রী হচ্ছে এবং এ জন্য তাকে ডাকা হচ্ছে হিজাবি বলে।
২০১২ সালে আমি পাবলিক এনগেজমেন্ট অফিসে যোগ দেয়ার জন্য হোয়াইট হাউজের ওয়েস্ট উইংয়ের দিকে রওনা হলাম। সেখানে দেশীয় ইস্যু যেমন- স্বাস্থ্যসেবা ও গার্হস্থ্য বিষয়ে আমেরিকান মুসলিমসহ বিভিন্ন সম্প্রদায়ের সাথে কাজ করি। ২০১৪ সালের শুরুর দিকে উপ-জাতীয় নিরাপত্তা উপদেষ্টা বেন রোডস আমাকে জাতীয় নিরাপত্তা পরিষদের (এনএসসি) একটি পদে কাজ করার জন্য প্রস্তাব দিলেন। এখানে আমি আড়াই বছর কাজ করি। হোয়াইট হাউজের সিচুয়েশন রুমে প্রেসিডেন্ট ওবামাকে আমেরিকান মুসলিমদের ব্যাপারে নানা পরামর্শ দিই। কিউবা ও লাওসের সাথে আমেরিকার সম্পর্ক উন্নয়ন থেকে শুরু করে বিশ্বব্যাপী নারী ও যুবকদের মধ্যে ব্যবসায়িক উন্নতি ইত্যাদি ছোটখাটো বিষয়ে কাজ করি।
২০১৫ সালের ফেব্রুয়ারী মাসে ইসলামোফোবিয়া বা ইসলামভীতির কারণে তিনজন তরুণ আমেরিকান মুসলিম ছাত্র নিহত হয়। গণমাধ্যম ও প্রশাসন উভয়ে বিষয়টি তুলে ধরতে কালক্ষেপণ করে না। যেন শোক পালন করার আগেই মৃতরা পুননিরীক্ষিত ছিল। আবেগের দিক থেকে বিষয়টি ছিল বিধ্বংসীকর। অবশেষে ওবামা প্রশাসন থেকে যখন এই হামলার নিন্দা জানানো হলো এবং ক্ষতিগ্রস্তদের প্রতি শোক প্রকাশ করা হলো, তখন রোডেস আমাকে এক পাশে ডেকে নিয়ে এখানে আমাকে পেয়ে আমার প্রতি অত্যন্ত কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করলেন। সেই সাথে তিনি কামনা করলেন সরকারে যেন আরো বেশি আমেরিকান মুসলিম কাজ করেন। কেননা আমেরিকার সরকারের সিদ্ধান্ত গ্রহণে জনগণের প্রতিফলন থাকা উচিত।
এক মাস পর ধর্মপ্রচারক ফ্র্যাংকলিন গ্রাহাম ঘোষণা করেন যে ‘সরকারে মুসলমানদের অনুপ্রবেশ ঘটেছে’। গ্রাহামের এই উসকানি নতুন ছিল না। ওবামার শাসনামলে বছরে পর বছর ধরে ডানপন্থী ওয়েবসাইটগুলো নানা ষড়যন্ত্রতত্ত্ব ও মিথ্যা প্রপাগান্ডা ছড়িয়েছে। তাদের টার্গেট ছিল কিছু মুসলিম সংগঠন ও ব্যক্তি। এমনকি আমাদের মধ্যে যারা সরকারে কাজ করেন তারাও। তারা আমাদের ‘সন্ত্রাসী’, ‘শরিয়া আইনের প্রচারক’ ‘মুসলিম ব্রাদারহুডের কর্মী’ ইত্যাদি নামে ডাকতে লাগলেন। ট্রাম্প যখন মুসলমানদের আমেরিকায় নিষিদ্ধের দাবি তুললেন, তখন সমাজে মুসলমানদের বিরুদ্ধে হেইট ক্রাইম বা ঘৃণা অপরাধ বেড়ে গেল। অনেক মসজিদ জ্বালিয়ে দেয়া হলো। বিভিন্ন ব্যক্তির ওপর আঘাত হানা হলো। কানাডার একটি মসজিদে একজন স্বঘোষিত ট্রাম্প সমর্থক ছয়জন মুসলমানকে হত্যা করল।
এভাবে ২০১৫ ও ২০১৬ সালজুড়ে ট্রাম্পের নির্বাচনী প্রচারণার পদ্ধতিগত কারণে অবিশ্বাস, আশঙ্কা ও উদ্বেগ বাড়তে লাগল। গত ফেব্রুয়ারী মাসে ওবামা একটি মসিজদ পরিদর্শন করে জনগণকে মনে করিয়ে দেন যে, আমরা আমেরিকানরা একটি পরিবার। যখন আমাদের পরিবারের কোনো অংশ নিজেদের বিচ্ছিন্ন বলে উপলব্ধি করতে থাকে… তখন তা আমাদের মূল্যবোধের জন্য চ্যালেঞ্জ হয়ে দাঁড়ায়। বিশেষ করে ২০১৬ সালের আবহাওয়া ছিল ঠিক নাইন-এলেভেনের পরের অবস্থার মতো।
আমার চাকরি ছেড়ে দেয়া উচিত কি না এই নিয়ে আমি তর্ক করতে লাগলাম। যেহেতু আমি রাজনৈতিকভাবে নিয়োগ লাভ করিনি, এনএসসি সরাসরি আমাকে হায়ার (ভাড়া) করে এনেছে, তাই আমার থাকার পক্ষে যুক্তি আছে। তখন জাতীয় নিরাপত্তা উপদেষ্টা ছিলেন মাইকেল ফ্লিন (পরে তিনি পদত্যাগ করেন)। তিনি বলেছিলেন, ‘মুসলমানদের ভয় যৌক্তিক’। তবে কতিপয় সহকর্মী ও কমিউনিটি নেতা আমাকে থেকে যাওয়ার কথা বললেন। কেউ কেউ আবার আমার নিরাপত্তার ব্যাপারে উদ্বেগ প্রকাশ করলেন। তারপর আসল ৩০ জানুয়ারী। সাতটি সংখ্যাগরিষ্ঠ মুসলিম দেশের নাগরিকদের বিরুদ্ধে ভ্রমণ নিষেধাজ্ঞার নির্বাহী আদেশ জারি হলো এবং সৃষ্টি হলো বিশৃঙ্খলা।
ডানপন্থী লেখকেরা দাবি করেন যে, ইসলাম ও পশ্চিমা বিশ্ব পরস্পরে যুদ্ধে লিপ্ত। দুঃখজনকভাবে আইএসও তাদের আক্রমণের পেছনে এমনই দাবি করে। অথচ তাদের বেশির ভাগ হামলার লক্ষ্যবস্তুু হচ্ছে মুসলমানরাই। আজ আমেরিকার জাতীয় নিরাপত্তাকে এমন কিছু লোকের হাতে তুলে দেয়া হয়েছে যারা মনে করেন আমেরিকার বৈচিত্র্য হচ্ছে ‘দুর্বলতা’স্বরূপ। অথচ এটা নির্জলা মিথ্যা কথা। বিভিন্ন ধর্ম, বর্ণ, গোষ্ঠী, লিঙ্গ ও বয়সের মানুষ কয়েক সপ্তাহ ধরে রাস্তায় ও বিমানবন্দরে তাদের সহকর্মী আমেরিকানদের অধিকার রক্ষার জন্য যে আন্দোলন করছেন, তাতে প্রমাণিত হয় এর বিপরীতটাই আসলে সত্য। অর্থাৎ আমেরিকার বৈচিত্র্য একটি শক্তি। একই কথা বলা যায় ন্যায়বিচার ও সমতার আদর্শের প্রতি আমেরিকান প্রতিশ্রুতির ব্যাপারেও।
আমেরিকার ইতিহাসেও আছে হোঁচট খাওয়ার ঘটনা। এতে প্রমাণিত হয়, এই জাতি অধিকতর সমৃদ্ধি ও স্থিতিশীলতা কেবল সংগ্রাম, সমবেদনা ও ব্যাপক জনগোষ্ঠীকে অন্তর্ভুক্তি করা ছাড়া অর্জন করতে পারেনি। এ কারণেই আমার বাবা এসেছেন এখানে। এ কারণেই আমি আমার সাবেক পঞ্চম গ্রেড ছাত্রদের বলেছিলাম যে, এই দেশ তাদের তথা অভিভাসীদের ছাড়া কখনো মহান হতে পারবে না। (সংক্ষেপিত)
লেখক : বাংলাদেশী বংশোদ্ভূত মার্কিন পরিবারের সন্তান এবং যুক্তরাষ্ট্রের সাবেক উপ-জাতীয় নিরাপত্তা উপদেষ্টা বেন রোডসের সাবেক জ্যেষ্ঠ উপদেষ্টা
দ্য আটলান্টিক থেকে অনুবাদ : জাওয়াদ ইবরাহিম
(দৈনিক নয়া দিগন্ত)

সোশ্যাল মিডিয়ায় খবরটি শেয়ার করুন

আপনার মন্তব্য লিখুন

About Author Information

ওবামা ও ট্রাম্পের হোয়াইট হাউজে কাজ করার অভিজ্ঞতা

প্রকাশের সময় : ০১:৪৮:১২ পূর্বাহ্ন, শুক্রবার, ৩ মার্চ ২০১৭

২০১১ সালে কলেজ থেকে বের হয়ে সোজা হোয়াইট হাউজে কাজ করার জন্য আমাকে হায়ার করা হয়। অবশেষে ন্যাশনাল সিকিউরিটি কাউন্সিল তথা জাতীয় নিরাপত্তা পরিষদে কাজ করার সুযোগ লাভ করি আমি। এখানে আমার কাজ ছিল আমার দেশের অবস্থানকে রক্ষা ও সমুন্নত করা। আমি একজন হিজাব পরা মুসলিম নারী। হোয়াইট হাউজের ওয়েস্ট উইংয়ে আমিই ছিলাম একমাত্র হিজাবি। তার পরও ওবামা প্রশাসন সবসময় আমাকে স্বাগত জানিয়েছে। আমাকে আপন করে নিয়েছে।
বেশির ভাগ আমেরিকান মুসলিম সহকর্মীদের মতো ২০১৬ সালের বেশির ভাগ সময় আমার কেটেছে ভয় ও ত্রাসের মধ্যে। কেননা রিপাবলিকান প্রেসিডেন্ট প্রার্থী ডোনাল্ড ট্রাম্প সে সময় আমাদের মুসলিম সম্প্রদায়ের নিন্দা করে চলেছেন। তা সত্ত্বেও এ কারণেই আমি ভাবলাম ট্রাম্প প্রশাসনের আমলে এনএসসি বা জাতীয় নিরাপত্তা পরিষদের স্টাফ হয়ে আমার টিকে থাকার চেষ্টা করা উচিত। উদ্দেশ্য একটাই, যাতে নতুন প্রেসিডেন্ট ও তার সহযোগীদের সামনে ইসলাম ও আমেরিকার মুসলিম নাগরিকদের সম্পর্কে অধিকতর সূক্ষ্ম দৃষ্টিভঙ্গি তুলে ধরতে পারি। কিন্তু ট্রাম্প প্রশাসনে আমি মাত্র আট দিন টিকে থাকতে পারলাম।
যখন সব সিরীয় উদ্বাস্তÍু ও সাত মুসলিম সংখ্যাগরিষ্ঠ দেশ থেকে পর্যটকদের ভ্রমণযাত্রার ওপর ট্রাম্প নিষেধাজ্ঞা জারি করলেন, তখন আমি বুঝতে পারলাম এখানে আমি আর বেশি দিন টিকে থাকতে পারব না। ট্রাম্প প্রশাসনের পক্ষে কাজও করতে পারব না। কেননা তারা আমাকে এবং আমার মতো লোকদের নাগরিক হিসেবে নয়, বরং দেখেন হুমকি হিসেবে।
আমার হোয়াইট হাউজ ত্যাগের আগের দিন সন্ধ্যার কথা। আমি আমার সহকর্মীদের কাছ থেকে বিদায় নিতে গেলাম। আমার অনেক সহকর্মী ইতোমধ্যে হোয়াইট হ্উাজ ত্যাগ করে চলে গেছেন। আমি ট্রাম্পের সিনিয়র এনএসসি যোগাযোগ উপদেষ্টা মাইকেল অ্যান্টনকে আমার বিদায়ের কথা জানালাম। তিনি প্রথমে যেন আকাশ থেকে পড়লেন। জানতে চাইলেন আমি পুরোপুরি সরকার ত্যাগ করছি কি না। এরপর সতর্কতার সাথে নীরব হয়ে গেলেন। জিজ্ঞেস করলেন না কেন চলে যাচ্ছি। তবে আমি তাকে আমার চলে যাওয়ার কারণটা বলতে পারলাম।
আমি তাকে বললাম, আমাকে চলে যেতে হচ্ছে। কারণ এ দেশের সবচেয়ে ঐতিহাসিক ভবনটিতে প্রতিদিন আমাকে অপমানিত হতে হচ্ছে। এই প্রশাসন একজন আমেরিকান ও মুসলিম হিসেবে আমার অবস্থানের বিরুদ্ধে কাজ করছে এবং সব কিছুতে ঘৃণা ছড়াচ্ছে। আমি তাকে বললাম, এই প্রশাসন গণতন্ত্রের মৌলিক মতবাদ ও নীতিকেই আক্রমণ করছে। আমি তাকে বললাম, এরপরও আমি আশা করেছিলাম যে, তারা এবং যারা কংগ্রেসে আছেন তারা সব পরিণতিতে নিজেদের দায়িত্বের ব্যাপারে প্রস্তÍুতি নেবেন এবং তারা তাদের সিদ্ধান্তে তা যোগ করবেন। এ কথা বলার পর তিনি আমার দিকে তাকালেন। কিন্তু কিছু বললেন না।
পরে আমি জানতে পারলাম যে, মাইকেল অ্যান্টন কর্তৃত্ববাদের গুণকীর্তন করে ছদ্মনামে একটি প্রবন্ধ লিখেছেন। সেই প্রবন্ধে তিনি আমেরিকান সমাজের ‘বৈচিত্র’কে দুর্বলতা হিসেবে আক্রমণ করেছেন এবং ইসলামকে দেখেছেন ‘আধুনিক পশ্চিমা বিশ্বের সাথে বেমানান’ হিসেবে। আমার সারা জীবন এবং যা কিছু আমি শিখেছি তা প্রমাণ করে যে, এই সহজ অভিব্যক্তি আসলে ভুল।
আমার পিতা-মাতা অভিবাসী হিসেবে ১৯৭৮ সালে বাংলাদেশ থেকে যুক্তরাষ্ট্রে আসেন এবং এ দেশে জন্মগ্রহণ করা সন্তানদের জন্য সুযোগ তৈরির চেষ্টা করেন। আমার মা ব্যাংকের ক্যাশিয়ার হিসেবে কাজ করেন। পরে তিনি ডে-কেয়ার বা দিবাযতেœর ব্যবসা শুরু করেন। আমার পিতা অনেক রাত পর্যন্ত আমেরিকার ব্যাংকে কাজ করতেন। অবশেষে তিনি এই ব্যাংকের হেড অফিসে অ্যাসিস্ট্যান্ট ভাইস প্রেসিডেন্টের পদে উন্নীত হন। আমার পিতা পিএইচডি অর্জনের জন্য পড়াশোনা শুরু করেন। কিন্তু ১৯৯৫ সালে তিনি সড়ক দুর্ঘটনায় নিহত হন।
যখন আমার বয়স বারো, তখন থেকেই আমি হিজাব পরতে শুরু করি। এতে আমার পরিবারের উৎসাহ ছিল। তবে সব সময় এটা ছিল আমার পছন্দনীয় ও স্বচ্ছন্দের বিষয়ও। এটা আমার জন্য বিশ্বাস, পরিচয় ও স্বাভাবিক অবস্থায় ফিরে আসার ব্যাপার। কিন্তু নাইন-ইলেভেনের ঘটনার পর বদলে গেল সব কিছু। ভয়ঙ্কর ও মর্মবেদনাদায়ক বিষয় হলো- হঠাৎ আমাকে কিছু বাচ্চার ভীতিকর অনুভূতির সংস্পর্শে আসতে হলো। স্কুলে তারা আমাকে অভিশাপ দিতে লাগল। জনসমক্ষে থুতু দিতে লাগল। স্থানীয় লোকেরা আমাকে ‘সন্ত্রাসী’ বলতে শুরু করল। তারা বলতে লাগল, ‘তোমার দেশে ফিরে যাও’।
আমার বাবা আমাকে শিখিয়েছিলেন ইসলামি শাস্ত্র দ্বারা অনুপ্রাণিত একটি বাংলা প্রবাদ। তা হলো- যখন কেউ তোমাকে লাথি মারবে, তখন তুমি উঠে দাঁড়িয়ে তোমার হাত বাড়িয়ে দেবে এবং প্রত্যাঘাতের বদলে তাকে সম্বোধন করবে ভাই বলে’। শান্তি, ধৈর্য, অধ্যবসায়, সম্মান, ক্ষমা ও মর্যাদার প্রতীক এমন কথার চেয়ে ভালো কথা আর কী হতে পারে! এই মূল্যবোধগুলো আমি আমার কর্মজীবনসহ সারা জীবনে বহন করে চলেছি।
আমি সরকারি কাজ করব তা কখনো ভাবিনি। আমি তাদেরই দলে ছিলাম যারা মনে করেন সরকার মজ্জাগতভাবেই দুর্নীতিগ্রস্ত ও অকার্যকর। ওবামার হোয়াইট হাউজে কাজ করার অভিজ্ঞতা আমার এই ধারণাকে ভুল প্রমাণিত করেছে। প্রেসিডেন্ট বারাক ওবামার মাধ্যমে অনুপ্রাণিত হয়ে আমি ২০১১ সালে জর্জ ওয়াশিংটন বিশ্ববিদ্যালয় থেকে স্নাতক শেষ করে যোগ দেই হোয়াইট হাউজে। জুনিয়র ইয়ারে আমি এখানে ইন্টার্নি করার সুযোগ পাই। তখন প্রেসিডেন্সিয়াল করেসপনডেন্স অফিসে আমার কাজ ছিল চিঠি পড়া ও শাসনতন্ত্র পরিষদ থেকে আসা টেলিফোন গ্রহণ করা। আমার অনুভূতি ছিল পরাবাস্তব। এখানে ২২ বছরের একজন আমেরিকান মুসলিম নারী মেরিল্যান্ড থেকে উঠে এসে যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্টের জন্য কাজ করছে। চুল ঢেকে রাখার জন্য উপহাসের পাত্রী হচ্ছে এবং এ জন্য তাকে ডাকা হচ্ছে হিজাবি বলে।
২০১২ সালে আমি পাবলিক এনগেজমেন্ট অফিসে যোগ দেয়ার জন্য হোয়াইট হাউজের ওয়েস্ট উইংয়ের দিকে রওনা হলাম। সেখানে দেশীয় ইস্যু যেমন- স্বাস্থ্যসেবা ও গার্হস্থ্য বিষয়ে আমেরিকান মুসলিমসহ বিভিন্ন সম্প্রদায়ের সাথে কাজ করি। ২০১৪ সালের শুরুর দিকে উপ-জাতীয় নিরাপত্তা উপদেষ্টা বেন রোডস আমাকে জাতীয় নিরাপত্তা পরিষদের (এনএসসি) একটি পদে কাজ করার জন্য প্রস্তাব দিলেন। এখানে আমি আড়াই বছর কাজ করি। হোয়াইট হাউজের সিচুয়েশন রুমে প্রেসিডেন্ট ওবামাকে আমেরিকান মুসলিমদের ব্যাপারে নানা পরামর্শ দিই। কিউবা ও লাওসের সাথে আমেরিকার সম্পর্ক উন্নয়ন থেকে শুরু করে বিশ্বব্যাপী নারী ও যুবকদের মধ্যে ব্যবসায়িক উন্নতি ইত্যাদি ছোটখাটো বিষয়ে কাজ করি।
২০১৫ সালের ফেব্রুয়ারী মাসে ইসলামোফোবিয়া বা ইসলামভীতির কারণে তিনজন তরুণ আমেরিকান মুসলিম ছাত্র নিহত হয়। গণমাধ্যম ও প্রশাসন উভয়ে বিষয়টি তুলে ধরতে কালক্ষেপণ করে না। যেন শোক পালন করার আগেই মৃতরা পুননিরীক্ষিত ছিল। আবেগের দিক থেকে বিষয়টি ছিল বিধ্বংসীকর। অবশেষে ওবামা প্রশাসন থেকে যখন এই হামলার নিন্দা জানানো হলো এবং ক্ষতিগ্রস্তদের প্রতি শোক প্রকাশ করা হলো, তখন রোডেস আমাকে এক পাশে ডেকে নিয়ে এখানে আমাকে পেয়ে আমার প্রতি অত্যন্ত কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করলেন। সেই সাথে তিনি কামনা করলেন সরকারে যেন আরো বেশি আমেরিকান মুসলিম কাজ করেন। কেননা আমেরিকার সরকারের সিদ্ধান্ত গ্রহণে জনগণের প্রতিফলন থাকা উচিত।
এক মাস পর ধর্মপ্রচারক ফ্র্যাংকলিন গ্রাহাম ঘোষণা করেন যে ‘সরকারে মুসলমানদের অনুপ্রবেশ ঘটেছে’। গ্রাহামের এই উসকানি নতুন ছিল না। ওবামার শাসনামলে বছরে পর বছর ধরে ডানপন্থী ওয়েবসাইটগুলো নানা ষড়যন্ত্রতত্ত্ব ও মিথ্যা প্রপাগান্ডা ছড়িয়েছে। তাদের টার্গেট ছিল কিছু মুসলিম সংগঠন ও ব্যক্তি। এমনকি আমাদের মধ্যে যারা সরকারে কাজ করেন তারাও। তারা আমাদের ‘সন্ত্রাসী’, ‘শরিয়া আইনের প্রচারক’ ‘মুসলিম ব্রাদারহুডের কর্মী’ ইত্যাদি নামে ডাকতে লাগলেন। ট্রাম্প যখন মুসলমানদের আমেরিকায় নিষিদ্ধের দাবি তুললেন, তখন সমাজে মুসলমানদের বিরুদ্ধে হেইট ক্রাইম বা ঘৃণা অপরাধ বেড়ে গেল। অনেক মসজিদ জ্বালিয়ে দেয়া হলো। বিভিন্ন ব্যক্তির ওপর আঘাত হানা হলো। কানাডার একটি মসজিদে একজন স্বঘোষিত ট্রাম্প সমর্থক ছয়জন মুসলমানকে হত্যা করল।
এভাবে ২০১৫ ও ২০১৬ সালজুড়ে ট্রাম্পের নির্বাচনী প্রচারণার পদ্ধতিগত কারণে অবিশ্বাস, আশঙ্কা ও উদ্বেগ বাড়তে লাগল। গত ফেব্রুয়ারী মাসে ওবামা একটি মসিজদ পরিদর্শন করে জনগণকে মনে করিয়ে দেন যে, আমরা আমেরিকানরা একটি পরিবার। যখন আমাদের পরিবারের কোনো অংশ নিজেদের বিচ্ছিন্ন বলে উপলব্ধি করতে থাকে… তখন তা আমাদের মূল্যবোধের জন্য চ্যালেঞ্জ হয়ে দাঁড়ায়। বিশেষ করে ২০১৬ সালের আবহাওয়া ছিল ঠিক নাইন-এলেভেনের পরের অবস্থার মতো।
আমার চাকরি ছেড়ে দেয়া উচিত কি না এই নিয়ে আমি তর্ক করতে লাগলাম। যেহেতু আমি রাজনৈতিকভাবে নিয়োগ লাভ করিনি, এনএসসি সরাসরি আমাকে হায়ার (ভাড়া) করে এনেছে, তাই আমার থাকার পক্ষে যুক্তি আছে। তখন জাতীয় নিরাপত্তা উপদেষ্টা ছিলেন মাইকেল ফ্লিন (পরে তিনি পদত্যাগ করেন)। তিনি বলেছিলেন, ‘মুসলমানদের ভয় যৌক্তিক’। তবে কতিপয় সহকর্মী ও কমিউনিটি নেতা আমাকে থেকে যাওয়ার কথা বললেন। কেউ কেউ আবার আমার নিরাপত্তার ব্যাপারে উদ্বেগ প্রকাশ করলেন। তারপর আসল ৩০ জানুয়ারী। সাতটি সংখ্যাগরিষ্ঠ মুসলিম দেশের নাগরিকদের বিরুদ্ধে ভ্রমণ নিষেধাজ্ঞার নির্বাহী আদেশ জারি হলো এবং সৃষ্টি হলো বিশৃঙ্খলা।
ডানপন্থী লেখকেরা দাবি করেন যে, ইসলাম ও পশ্চিমা বিশ্ব পরস্পরে যুদ্ধে লিপ্ত। দুঃখজনকভাবে আইএসও তাদের আক্রমণের পেছনে এমনই দাবি করে। অথচ তাদের বেশির ভাগ হামলার লক্ষ্যবস্তুু হচ্ছে মুসলমানরাই। আজ আমেরিকার জাতীয় নিরাপত্তাকে এমন কিছু লোকের হাতে তুলে দেয়া হয়েছে যারা মনে করেন আমেরিকার বৈচিত্র্য হচ্ছে ‘দুর্বলতা’স্বরূপ। অথচ এটা নির্জলা মিথ্যা কথা। বিভিন্ন ধর্ম, বর্ণ, গোষ্ঠী, লিঙ্গ ও বয়সের মানুষ কয়েক সপ্তাহ ধরে রাস্তায় ও বিমানবন্দরে তাদের সহকর্মী আমেরিকানদের অধিকার রক্ষার জন্য যে আন্দোলন করছেন, তাতে প্রমাণিত হয় এর বিপরীতটাই আসলে সত্য। অর্থাৎ আমেরিকার বৈচিত্র্য একটি শক্তি। একই কথা বলা যায় ন্যায়বিচার ও সমতার আদর্শের প্রতি আমেরিকান প্রতিশ্রুতির ব্যাপারেও।
আমেরিকার ইতিহাসেও আছে হোঁচট খাওয়ার ঘটনা। এতে প্রমাণিত হয়, এই জাতি অধিকতর সমৃদ্ধি ও স্থিতিশীলতা কেবল সংগ্রাম, সমবেদনা ও ব্যাপক জনগোষ্ঠীকে অন্তর্ভুক্তি করা ছাড়া অর্জন করতে পারেনি। এ কারণেই আমার বাবা এসেছেন এখানে। এ কারণেই আমি আমার সাবেক পঞ্চম গ্রেড ছাত্রদের বলেছিলাম যে, এই দেশ তাদের তথা অভিভাসীদের ছাড়া কখনো মহান হতে পারবে না। (সংক্ষেপিত)
লেখক : বাংলাদেশী বংশোদ্ভূত মার্কিন পরিবারের সন্তান এবং যুক্তরাষ্ট্রের সাবেক উপ-জাতীয় নিরাপত্তা উপদেষ্টা বেন রোডসের সাবেক জ্যেষ্ঠ উপদেষ্টা
দ্য আটলান্টিক থেকে অনুবাদ : জাওয়াদ ইবরাহিম
(দৈনিক নয়া দিগন্ত)