নিউইয়র্ক ০৩:৪৯ পূর্বাহ্ন, বুধবার, ০৪ ডিসেম্বর ২০২৪, ১৯ অগ্রহায়ণ ১৪৩১ বঙ্গাব্দ
বিজ্ঞাপন :
মঙ্গলবারের পত্রিকা সাপ্তাহিক হককথা ও হককথা.কম এ আপনার প্রতিষ্ঠানের বিজ্ঞাপন দিতে যোগাযোগ করুন +1 (347) 848-3834

এবার লুজিয়ানায় আমরণ অনশনে বাংলাদেশীরা : টেক্সাসে ১১ বাংলাদেশী মুক্ত

রিপোর্ট:
  • প্রকাশের সময় : ০৯:০৮:২১ অপরাহ্ন, বৃহস্পতিবার, ২২ অক্টোবর ২০১৫
  • / ৯০৮ বার পঠিত

নিউইয়র্ক: যুক্তরাষ্ট্রের টেক্সাসের এলপাসো কারাগারের ডিটেনশন সেন্টারে আমরণ অনশনের পর এবার লুজিয়ানায় আমরণ অনশন করছেন আটক বাংলাদেশীরা। সাত সমুদ্র তেরো নদী পাড়ি দিয়ে সীমান্ত পাড়ি দিয়ে ‘স্বপ্নের দেশ আমেরিকা’য় আসেন বাংলাদেশীরা। কিন্তু স্বপ্নের সোনার হরিণের খোঁজে অবৈধ পথে যুক্তরাষ্ট্রে এসে কারাগারে বন্দী থাকতে হচ্ছে মাসের পর মাস। অন্য জাতিগোষ্ঠীর নাগরিকরা বর্ডার ক্রস করে প্রবেশের পর প্রাপ্য আইনী সুবিধা পেলেও ‘বাংলাদেশ বিরোধী মিথ্যা প্রচারণায়’ তা থেকে বঞ্চিত হচ্ছেন বাংলাদেশীরা। ফলে বেশ কয়েকজনকে ডিপোর্টেশনসহ ডিটেনশন সেন্টারের বিভিন্ন নির্যাতন সইতে হয়েছে। ‘জঙ্গিবাদী’ ও ‘সন্ত্রাসী’ রাষ্ট্র বাংলাদেশ- এমন প্রচারণায় কাল হয়ে দাঁড়িয়েছে অভিবাসীবান্ধব দেশ আমেরিকায় প্রবেশকারী বাংলাদেশীদের বেলায়।
আর এই আটক বাংলাদেলীরা অবশেষে কোনো উপায় না পেয়ে আমরণ অনশন শুরু করেছেন বন্দীরা। জানা গেছে, কয়েক মাস ধরে মানবেতর জীবনযাপনের পর নিশ্চিত মৃত্যু জেনেও আমরণ অনশন (হাঙ্গার স্ট্রাইক) শুরু করেন টেক্সাসের এলপাসো কারাগারে বন্দী অর্ধশতাধিক বাংলাদেশী। ১৪ অক্টোবর শুরু হওয়া এ অনশনে মাথাব্যথার কারণ হয়ে দাঁড়িয়েছে যুক্তরাষ্ট্রের কারা ইমিগ্রেশন কর্তৃপক্ষের। অনশন অবস্থায় কোনো খাবার এমনকি তরল পানিও পান করেননি বাংলাদেশী বন্দীরা। ফলে অনেকে গুরুতর অসুস্থ হয়ে পড়েন। দ্রুত হাসপাতালে নিয়ে তাদের জোরপূর্বক স্যালাইন দেওয়া হয়। অনশন ভাঙতেও চাপ দেওয়া হয়। কিন্তু কোনোকিছুতেই অনশন ভাঙতে রাজি হননি বন্দীরা। এ ঘটনায় বিপাকে পড়েছে কারা কর্তৃপক্ষ।
একদিকে বন্দীদের অনশন, অন্যদিকে মানবাধিকার সংগঠনগুলোর তীব্র প্রতিবাদ ও জোরাল অবস্থানে এরই মধ্যে ১১ জনকে মুক্তি দিতে বাধ্য হয় ‘ইমিগ্রেশন এ্যান্ড কাস্টমস এনফোর্সমেন্ট-আইস’। ১৬ অক্টোবর শুক্রবার রাতে অনশনরতদের মধ্য থেকে ৬ জন এবং ডিটেনশন সেন্টার থেকে ৫ জনসহ সর্বমোট ১১ বাংলাদেশীকে মুক্তি দেওয়া হয়। এদের প্রত্যেকেই নিউইয়র্কের সাউথ এশিয়ান মানবাধিকার সংগঠন ‘ড্রাম’ সহ দেশী-বিদেশী কয়েকটি সংস্থার তত্ত্বাবধানে রয়েছেন। খুব দ্রুতই তাদের নিউইয়র্কের দিকে নিয়ে আসা হচ্ছে বলে নিশ্চিত করেছেন ড্রাম-এর কমিউনিটি অরগানাইজার কাজী ফৌজিয়া।
এ বিষয়ে বাংলাদেশী গণমাধ্যমের সঙ্গে কাজী ফৌজিয়া এবং ড্রামের নির্বাহী পরিচালক ফাহাদ আহমেদ মূলধারার গণমাধ্যমের সঙ্গে সার্বক্ষণিক যোগযোগ রাখছেন। একইভাবে কারাগারের ডিটেনশন সেন্টারে অনশনরত বাংলাদেশীসহ অন্যদের সঙ্গে প্রতি মুহূর্তে যোগাযোগ অব্যাহত রাখছেন তারা। দিয়ে যাচ্ছেন বিভিন্ন আইনী দিক নির্দেশনা। পাশাপাশি সবগুলো মানবাধিকার সংগঠন মিলে হোমল্যান্ড সিকিউরিটি ও আমেরিকার ইমিগ্রেশন সংশ্লিষ্ট বিভাগে লিখিত পিটিশন দাখিল করা হয়েছে।
ডিটেনশন সেন্টারে বন্দীদের আইনী সহায়তাসহ বিভিন্ন বিষয়ে ১৯ অক্টোবর সোমবার হোমল্যান্ড সিকিউরিটির কাছে আবেদন করা হয়। মানবাধিকার সংগঠনগুলোর পক্ষে আশা করা হচ্ছে, দু-এক দিনের মধ্যে আরও অনেক অনশনকারীকে মুক্তি দিতে বাধ্য হবে কারা ইমিগ্রেশন কর্তৃপক্ষ।
এদিকে বাংলাদেশী বন্দীদের সঙ্গে অনশন শুরুর দ্বিতীয় দিনে হাজী খিয়াজ মোহাম্মদ বিলাল নামে এক আফগান নাগরিককে জোরপূর্বক অন্যত্র নিয়ে যায় ‘ইমিগ্রেশন এ্যান্ড কাস্টমস এনফোর্সমেন্ট-আইস’। মানবাধিকারকর্মীদের তোপের মুখে দু’দিন পর তাকে আবারও অনশনকারীদের কাছে দিয়ে যাওয়া হয়।
মানবাধিকার ও ইমিগ্রেশন সংশ্লিষ্টরা বলেছেন, অনশনরত অবস্থায় থাকা প্রত্যেকেরই এলাইন নম্বর রয়েছে। যুক্তরাষ্ট্রের ‘ইমিগ্রেশন ল’ মোতাবেক তারা পে-রোল পাওয়ার যোগ্য। কিন্তু ইমিগ্রেশন সংস্থা ‘ডিপার্টমেন্ট অব হোম্যালন্ড সিকিউরিটি-ডিএইচএস’র বাংলাদেশবিরোধী অবস্থানে তা থেকে বঞ্চিত অনশনকারীরা। বাংলাদেশের বিরোধী রাজনৈতিক দল ‘বিএনপি’কে টিআর-থ্রি নামের সন্ত্রাসী সংগঠন আখ্যা দিয়ে আদালতে বিভিন্ন গোপন তথ্য-উপাত্ত তুলে ধরে হোমল্যান্ড সিকিউরিটি। কারণ বন্দী সবাই বিএনপি ও সরকারবিরোধী রাজনৈতিক কর্মী বলে পরিচয় দিয়েছে। এটাই নিয়ম। যারাই বিভিন্ন দেশে থেকে আসে তারা হয় বিতাড়িত আর না হয় সরকারের অত্যাচারের স্বীকার বলে দাবি করে। এমনটি জানিয়ে কয়েকজন বাংলাদেশী ইমিগ্রেশন এ্যাটর্নি বলেন, এ রকমও নজির রয়েছে যে, বর্তমানে অনেকে আওয়ামী লীগ কর্মীও সরকারবিরোধী বলে রাজনৈতিক আশ্রয় প্রার্থনা করেছেন। আমাদের কাছে তার প্রমাণও আছে। অতীতে বিএনপি সরকারের আমলেও অনেক বিএনপি কর্মী আওয়ামী লীগ বলে আশ্রয় প্রার্থনা করেছেন। তবে হঠাৎ করে বিএনপিকে সন্ত্রাসী সংগঠন আখ্যা দেওয়ায় এ সব বন্দীর মধ্য থেকে বেশ কয়েকজনকে জোর করে ডিপোর্টেশন (দেশে ফেরত) পাঠানো হয়েছে। এ আতঙ্ক থেকেই আমরণ অনশন শুরু করেন বন্দী বাংলাদেশীরা।
২০ অক্টোবর এ রিপোর্ট লেখা পর্যন্ত ষষ্ঠ দিনের মতো অনশন কর্মসূচি অব্যাহত রেখেছেন টেক্সোসের এলপাসোর বন্দীরা। এই প্রতিবেদকের সাথে সার্বক্ষণিক যোগাযোগকারী বাংলাদেশী মাহবুবুর রহমানই মূলত: এ অনশনের নেতৃত্ব দিচ্ছেন। তার অবস্থা খুবই গুরুতর। মাহবুবসহ মোট ছয়জনকে হাসপাতালে স্যালাইন দেওয়া হয়েছে। তাদের সঙ্গে যোগাযোগ রাখছেন মানবাধিকার কর্মী কাজী ফৌজিয়া।
কাজী ফৌজিয়া স্থানীয় সময় সোমবার রাত ১২টায় বলেন, ‘মাহবুবসহ অনেকের সঙ্গে আমরা সার্বক্ষণিক আলাপ চালিয়ে যাচ্ছি। কিছুক্ষণ আগেও আলাপ হয়েছে। বিষয়টি এখন অনেক দূর গড়িয়েছে। আশা করি, অনশনকারীরা তাদের প্রাপ্য আইনী সহায়তা পাবেন এবং মুক্তি পেয়ে বেরিয়ে আসবেন। আমরা সেই প্রত্যাশায় কাজ চালিয়ে যাচ্ছি। আমাদের সঙ্গে গণমাধ্যমসহ বেশ কয়েকটি মানবাধিকার সংগঠন ও বিশেষজ্ঞ আইনজীবীরাও রয়েছেন।’
হাসপাতালে চিকিৎসাধীন ছয়জন হলেন- মাহবুবুর রহমান (এলাইন নম্বর এ # ২০২-১৫৬-৮১৬), শাসসুদ্দিন (এলাইন নম্বর এ # ২০২-৮৪৯-৬৩৬), দেলোয়ার হোসেন (এলাইন নম্বর এ # ২০২-১৫৬-১৯৭), মোহাম্মদ আমিনুল ইসলাম (এলাইন নম্বর এ # ২০২-১৫৫-৩৯৮), মোহাম্মদ শাহজাহান (এলাইন নম্বর এ # ২০২-১৫৫-৩৯৯) এবং আফগান নাগরিক হাজী খিয়াজ মোহাম্মদ বিলাল (এলাইন নম্বর এ # ২০২-১৫৬-৮৭৭)।
Elapso-Bangladeshi--therepo_1লুজিয়ানার ডিটেনশন সেন্টারে ১৪ জনের অনশন
এদিকে টেক্সাসের এলপাসো ডিটেনশন সেন্টারের খবর দ্রুত ছড়িয়ে পড়ে যুক্তরাষ্ট্রের বিভিন্ন ডিটেনশন সেন্টারে। এর পর বিভিন্ন স্থানে নতুন করে অনশন শুরু হয়েছে। যার মধ্যে অন্যতম লুজিয়ানার ‘জেনা এবং লুজিয়ানা’ ডিটেনশন সেন্টারে অনশন শুরু করেছেন বাংলাদেশী বন্দীরা। ১৯ অক্টোবর থেকে শুরু করা এ অনশনে ১৪ জনের মধ্যে ১০ জন বাংলাদেশী ও চারজন ভারতীয় নাগরিক রয়েছেন। তাদের প্রত্যেকেই অন্যায়ভাবে ডিপোর্টেশন বন্ধসহ নিজেদের প্রাপ্য পে-রোল না পাওয়া পর্যন্ত অনশন কর্মসূচি অব্যাহত রাখার পক্ষে অবস্থান নিয়েছেন।
যুক্তরাষ্ট্রের কারাগারে বন্দী বাংলাদেশীসহ সবার আইনী সহায়তায় সবার অংশগ্রণের লক্ষ্যে অনলাইনে ক্যাম্পেইন পেজ খুলেছে সাউথ এশিয়ান মানবাধিকার সংগঠন ‘ডেসিস রাইজিং আপ এ্যান্ড মুভিং-ড্রাম’। অনলাইনে এ পিটিশনের মাধ্যমে সকল বন্দীর আইনী সহায়তা রেজিস্ট্রেশন করার জন্য আহ্বান জানানো হয়েছে ড্রামের পক্ষ থেকে। ‘নট ওয়ান মোর’ নামের একটি সংগঠন এ অনলাইন পিটিশন ক্যাম্পেইন পরিচালনা করছে। (সুত্র: দ্যা রিপোর্ট ২৪ ডটকম)

সোশ্যাল মিডিয়ায় খবরটি শেয়ার করুন

আপনার মন্তব্য লিখুন

About Author Information

এবার লুজিয়ানায় আমরণ অনশনে বাংলাদেশীরা : টেক্সাসে ১১ বাংলাদেশী মুক্ত

প্রকাশের সময় : ০৯:০৮:২১ অপরাহ্ন, বৃহস্পতিবার, ২২ অক্টোবর ২০১৫

নিউইয়র্ক: যুক্তরাষ্ট্রের টেক্সাসের এলপাসো কারাগারের ডিটেনশন সেন্টারে আমরণ অনশনের পর এবার লুজিয়ানায় আমরণ অনশন করছেন আটক বাংলাদেশীরা। সাত সমুদ্র তেরো নদী পাড়ি দিয়ে সীমান্ত পাড়ি দিয়ে ‘স্বপ্নের দেশ আমেরিকা’য় আসেন বাংলাদেশীরা। কিন্তু স্বপ্নের সোনার হরিণের খোঁজে অবৈধ পথে যুক্তরাষ্ট্রে এসে কারাগারে বন্দী থাকতে হচ্ছে মাসের পর মাস। অন্য জাতিগোষ্ঠীর নাগরিকরা বর্ডার ক্রস করে প্রবেশের পর প্রাপ্য আইনী সুবিধা পেলেও ‘বাংলাদেশ বিরোধী মিথ্যা প্রচারণায়’ তা থেকে বঞ্চিত হচ্ছেন বাংলাদেশীরা। ফলে বেশ কয়েকজনকে ডিপোর্টেশনসহ ডিটেনশন সেন্টারের বিভিন্ন নির্যাতন সইতে হয়েছে। ‘জঙ্গিবাদী’ ও ‘সন্ত্রাসী’ রাষ্ট্র বাংলাদেশ- এমন প্রচারণায় কাল হয়ে দাঁড়িয়েছে অভিবাসীবান্ধব দেশ আমেরিকায় প্রবেশকারী বাংলাদেশীদের বেলায়।
আর এই আটক বাংলাদেলীরা অবশেষে কোনো উপায় না পেয়ে আমরণ অনশন শুরু করেছেন বন্দীরা। জানা গেছে, কয়েক মাস ধরে মানবেতর জীবনযাপনের পর নিশ্চিত মৃত্যু জেনেও আমরণ অনশন (হাঙ্গার স্ট্রাইক) শুরু করেন টেক্সাসের এলপাসো কারাগারে বন্দী অর্ধশতাধিক বাংলাদেশী। ১৪ অক্টোবর শুরু হওয়া এ অনশনে মাথাব্যথার কারণ হয়ে দাঁড়িয়েছে যুক্তরাষ্ট্রের কারা ইমিগ্রেশন কর্তৃপক্ষের। অনশন অবস্থায় কোনো খাবার এমনকি তরল পানিও পান করেননি বাংলাদেশী বন্দীরা। ফলে অনেকে গুরুতর অসুস্থ হয়ে পড়েন। দ্রুত হাসপাতালে নিয়ে তাদের জোরপূর্বক স্যালাইন দেওয়া হয়। অনশন ভাঙতেও চাপ দেওয়া হয়। কিন্তু কোনোকিছুতেই অনশন ভাঙতে রাজি হননি বন্দীরা। এ ঘটনায় বিপাকে পড়েছে কারা কর্তৃপক্ষ।
একদিকে বন্দীদের অনশন, অন্যদিকে মানবাধিকার সংগঠনগুলোর তীব্র প্রতিবাদ ও জোরাল অবস্থানে এরই মধ্যে ১১ জনকে মুক্তি দিতে বাধ্য হয় ‘ইমিগ্রেশন এ্যান্ড কাস্টমস এনফোর্সমেন্ট-আইস’। ১৬ অক্টোবর শুক্রবার রাতে অনশনরতদের মধ্য থেকে ৬ জন এবং ডিটেনশন সেন্টার থেকে ৫ জনসহ সর্বমোট ১১ বাংলাদেশীকে মুক্তি দেওয়া হয়। এদের প্রত্যেকেই নিউইয়র্কের সাউথ এশিয়ান মানবাধিকার সংগঠন ‘ড্রাম’ সহ দেশী-বিদেশী কয়েকটি সংস্থার তত্ত্বাবধানে রয়েছেন। খুব দ্রুতই তাদের নিউইয়র্কের দিকে নিয়ে আসা হচ্ছে বলে নিশ্চিত করেছেন ড্রাম-এর কমিউনিটি অরগানাইজার কাজী ফৌজিয়া।
এ বিষয়ে বাংলাদেশী গণমাধ্যমের সঙ্গে কাজী ফৌজিয়া এবং ড্রামের নির্বাহী পরিচালক ফাহাদ আহমেদ মূলধারার গণমাধ্যমের সঙ্গে সার্বক্ষণিক যোগযোগ রাখছেন। একইভাবে কারাগারের ডিটেনশন সেন্টারে অনশনরত বাংলাদেশীসহ অন্যদের সঙ্গে প্রতি মুহূর্তে যোগাযোগ অব্যাহত রাখছেন তারা। দিয়ে যাচ্ছেন বিভিন্ন আইনী দিক নির্দেশনা। পাশাপাশি সবগুলো মানবাধিকার সংগঠন মিলে হোমল্যান্ড সিকিউরিটি ও আমেরিকার ইমিগ্রেশন সংশ্লিষ্ট বিভাগে লিখিত পিটিশন দাখিল করা হয়েছে।
ডিটেনশন সেন্টারে বন্দীদের আইনী সহায়তাসহ বিভিন্ন বিষয়ে ১৯ অক্টোবর সোমবার হোমল্যান্ড সিকিউরিটির কাছে আবেদন করা হয়। মানবাধিকার সংগঠনগুলোর পক্ষে আশা করা হচ্ছে, দু-এক দিনের মধ্যে আরও অনেক অনশনকারীকে মুক্তি দিতে বাধ্য হবে কারা ইমিগ্রেশন কর্তৃপক্ষ।
এদিকে বাংলাদেশী বন্দীদের সঙ্গে অনশন শুরুর দ্বিতীয় দিনে হাজী খিয়াজ মোহাম্মদ বিলাল নামে এক আফগান নাগরিককে জোরপূর্বক অন্যত্র নিয়ে যায় ‘ইমিগ্রেশন এ্যান্ড কাস্টমস এনফোর্সমেন্ট-আইস’। মানবাধিকারকর্মীদের তোপের মুখে দু’দিন পর তাকে আবারও অনশনকারীদের কাছে দিয়ে যাওয়া হয়।
মানবাধিকার ও ইমিগ্রেশন সংশ্লিষ্টরা বলেছেন, অনশনরত অবস্থায় থাকা প্রত্যেকেরই এলাইন নম্বর রয়েছে। যুক্তরাষ্ট্রের ‘ইমিগ্রেশন ল’ মোতাবেক তারা পে-রোল পাওয়ার যোগ্য। কিন্তু ইমিগ্রেশন সংস্থা ‘ডিপার্টমেন্ট অব হোম্যালন্ড সিকিউরিটি-ডিএইচএস’র বাংলাদেশবিরোধী অবস্থানে তা থেকে বঞ্চিত অনশনকারীরা। বাংলাদেশের বিরোধী রাজনৈতিক দল ‘বিএনপি’কে টিআর-থ্রি নামের সন্ত্রাসী সংগঠন আখ্যা দিয়ে আদালতে বিভিন্ন গোপন তথ্য-উপাত্ত তুলে ধরে হোমল্যান্ড সিকিউরিটি। কারণ বন্দী সবাই বিএনপি ও সরকারবিরোধী রাজনৈতিক কর্মী বলে পরিচয় দিয়েছে। এটাই নিয়ম। যারাই বিভিন্ন দেশে থেকে আসে তারা হয় বিতাড়িত আর না হয় সরকারের অত্যাচারের স্বীকার বলে দাবি করে। এমনটি জানিয়ে কয়েকজন বাংলাদেশী ইমিগ্রেশন এ্যাটর্নি বলেন, এ রকমও নজির রয়েছে যে, বর্তমানে অনেকে আওয়ামী লীগ কর্মীও সরকারবিরোধী বলে রাজনৈতিক আশ্রয় প্রার্থনা করেছেন। আমাদের কাছে তার প্রমাণও আছে। অতীতে বিএনপি সরকারের আমলেও অনেক বিএনপি কর্মী আওয়ামী লীগ বলে আশ্রয় প্রার্থনা করেছেন। তবে হঠাৎ করে বিএনপিকে সন্ত্রাসী সংগঠন আখ্যা দেওয়ায় এ সব বন্দীর মধ্য থেকে বেশ কয়েকজনকে জোর করে ডিপোর্টেশন (দেশে ফেরত) পাঠানো হয়েছে। এ আতঙ্ক থেকেই আমরণ অনশন শুরু করেন বন্দী বাংলাদেশীরা।
২০ অক্টোবর এ রিপোর্ট লেখা পর্যন্ত ষষ্ঠ দিনের মতো অনশন কর্মসূচি অব্যাহত রেখেছেন টেক্সোসের এলপাসোর বন্দীরা। এই প্রতিবেদকের সাথে সার্বক্ষণিক যোগাযোগকারী বাংলাদেশী মাহবুবুর রহমানই মূলত: এ অনশনের নেতৃত্ব দিচ্ছেন। তার অবস্থা খুবই গুরুতর। মাহবুবসহ মোট ছয়জনকে হাসপাতালে স্যালাইন দেওয়া হয়েছে। তাদের সঙ্গে যোগাযোগ রাখছেন মানবাধিকার কর্মী কাজী ফৌজিয়া।
কাজী ফৌজিয়া স্থানীয় সময় সোমবার রাত ১২টায় বলেন, ‘মাহবুবসহ অনেকের সঙ্গে আমরা সার্বক্ষণিক আলাপ চালিয়ে যাচ্ছি। কিছুক্ষণ আগেও আলাপ হয়েছে। বিষয়টি এখন অনেক দূর গড়িয়েছে। আশা করি, অনশনকারীরা তাদের প্রাপ্য আইনী সহায়তা পাবেন এবং মুক্তি পেয়ে বেরিয়ে আসবেন। আমরা সেই প্রত্যাশায় কাজ চালিয়ে যাচ্ছি। আমাদের সঙ্গে গণমাধ্যমসহ বেশ কয়েকটি মানবাধিকার সংগঠন ও বিশেষজ্ঞ আইনজীবীরাও রয়েছেন।’
হাসপাতালে চিকিৎসাধীন ছয়জন হলেন- মাহবুবুর রহমান (এলাইন নম্বর এ # ২০২-১৫৬-৮১৬), শাসসুদ্দিন (এলাইন নম্বর এ # ২০২-৮৪৯-৬৩৬), দেলোয়ার হোসেন (এলাইন নম্বর এ # ২০২-১৫৬-১৯৭), মোহাম্মদ আমিনুল ইসলাম (এলাইন নম্বর এ # ২০২-১৫৫-৩৯৮), মোহাম্মদ শাহজাহান (এলাইন নম্বর এ # ২০২-১৫৫-৩৯৯) এবং আফগান নাগরিক হাজী খিয়াজ মোহাম্মদ বিলাল (এলাইন নম্বর এ # ২০২-১৫৬-৮৭৭)।
Elapso-Bangladeshi--therepo_1লুজিয়ানার ডিটেনশন সেন্টারে ১৪ জনের অনশন
এদিকে টেক্সাসের এলপাসো ডিটেনশন সেন্টারের খবর দ্রুত ছড়িয়ে পড়ে যুক্তরাষ্ট্রের বিভিন্ন ডিটেনশন সেন্টারে। এর পর বিভিন্ন স্থানে নতুন করে অনশন শুরু হয়েছে। যার মধ্যে অন্যতম লুজিয়ানার ‘জেনা এবং লুজিয়ানা’ ডিটেনশন সেন্টারে অনশন শুরু করেছেন বাংলাদেশী বন্দীরা। ১৯ অক্টোবর থেকে শুরু করা এ অনশনে ১৪ জনের মধ্যে ১০ জন বাংলাদেশী ও চারজন ভারতীয় নাগরিক রয়েছেন। তাদের প্রত্যেকেই অন্যায়ভাবে ডিপোর্টেশন বন্ধসহ নিজেদের প্রাপ্য পে-রোল না পাওয়া পর্যন্ত অনশন কর্মসূচি অব্যাহত রাখার পক্ষে অবস্থান নিয়েছেন।
যুক্তরাষ্ট্রের কারাগারে বন্দী বাংলাদেশীসহ সবার আইনী সহায়তায় সবার অংশগ্রণের লক্ষ্যে অনলাইনে ক্যাম্পেইন পেজ খুলেছে সাউথ এশিয়ান মানবাধিকার সংগঠন ‘ডেসিস রাইজিং আপ এ্যান্ড মুভিং-ড্রাম’। অনলাইনে এ পিটিশনের মাধ্যমে সকল বন্দীর আইনী সহায়তা রেজিস্ট্রেশন করার জন্য আহ্বান জানানো হয়েছে ড্রামের পক্ষ থেকে। ‘নট ওয়ান মোর’ নামের একটি সংগঠন এ অনলাইন পিটিশন ক্যাম্পেইন পরিচালনা করছে। (সুত্র: দ্যা রিপোর্ট ২৪ ডটকম)