১৭ নির্বাহী আদেশে সই : প্রথমদিনেই বাজিমাত জো বাইডেনের

- প্রকাশের সময় : ০২:২৮:৩৬ অপরাহ্ন, বৃহস্পতিবার, ২১ জানুয়ারী ২০২১
- / ১৮৯ বার পঠিত
স্বপন কুমার ক্ন্ডুু: যুক্তরাষ্ট্রের ৪৬তম প্রেসিডেন্ট জো বাইডেন ক্ষমতায় এসেই বাজিমাত করেছেন। হোয়াইট হাউজে প্রথম কর্মদিবসে মুসলিম নিষেধাজ্ঞা তুলে নেওয়াসহ ১৭টি নির্বাহী আদেশে তিনি স্বাক্ষর করেছেন। এর মধ্য দিয়ে বিদায়ি প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের বেশকিছু নীতি, বিশেষ করে বিতর্কিত নীতি তিনি বদলে ফেলেছেন। বুধবার (২০ জানুয়ারী) হোয়াইট হাউজের ওভাল অফিসে সাংবাদিকদের সঙ্গে আলাপকালে নতুন প্রেসিডেন্ট বাইডেন বলেন, সংকট মোকাবিলার ক্ষেত্রে অপচয় করার মতো কোনো সময় আমাদের হাতে নেই। খবর আল জাজিরা, সিএনএন, বিবিসি ও রয়টার্সের।
প্রথম কনফারেন্সে নতুন প্রশাসনের উদ্দেশে তিনি বলেন, আমি আপনাদের সহযোগিতা চাই। আমি অনেক ভুল করব। যখন ভুল করব, তখন তা আমি স্বীকার করব। ভুল সংশোধনে সাহায্য করার জন্য আমি আপনাদের সহযোগিতা চাই। নতুন প্রশাসনের কর্মীদের ভার্চুয়ালি শপথ নেওয়ার আহবান জানিয়ে তিনি আরও বলেন, আমি আপনাদের কাছ থেকে সততা ও শালীনতা চাই। আমাদের মনে রাখতে হবে, জনগণ আমাদের জন্য কাজ করে না। আমরা জনগণের জন্য কাজ করি। জনগণের প্রতি আমাদের দায়বদ্ধতা রয়েছে।
ওয়াশিংটন ডিসির স্থানীয় সময় বুধবার বিকাল ৪টার কিছু আগে প্রেসিডেন্ট হিসাবে প্রথমবারের মতো হোয়াইট হাউজে প্রবেশ করেন জো বাইডেন। হোয়াইট হাউজের কাছে ট্রেজারি বিভাগের অফিস ভবনের সামনে বাইডেন ও তার পরিবারের সদস্যদের মোটর শোভাযাত্রাসহকারে নিয়ে আসা হয়। স্ত্রী জিল বাইডেনের হাত ধরে জো বাইডেন পেনসিলভানিয়া অ্যাভিনিউ হয়ে হোয়াইট হাউজে প্রবেশ করেন। এ সময় কড়া নিরাপত্তাবেষ্টনীর মধ্যেও দূর থেকে লোকজনকে হাত নেড়ে তাদের অভিনন্দন জানাতে দেখা যায়। বাইডেন ও জিলের পেছনে তখন হাঁটছিলেন পরিবারের অন্য সদস্যরা। হেঁটে যাওয়ার সময় বাইডেন এক মুহূর্তের জন্য থামেন। এক সাংবাদিকের প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, ‘মনে হচ্ছে আমি বাড়িতেই ঢুকছি।’
হোয়াইট হাউজে প্রবেশের পর পূর্বসূরি প্রেসিডেন্ট ট্রাম্পের বার্তা পাওয়ার কথা নতুন প্রেসিডেন্ট বাইডেনের। তবে ২০ জানুয়ারী বাইডেনের শপথ নেওয়া থেকে শুরু করে কোনো আনুষ্ঠানিকতায় ট্রাম্পের নাম উচ্চারিত হয়নি। ট্রাম্প যেমন বাইডেনের নাম মুখে নেননি, বাইডেনও তার নাম মুখে আনেননি। ট্রাম্পের মুখপাত্র জানিয়েছেন, প্রথা অনুযায়ী ওভাল অফিসের ড্রয়ারে উত্তরসূরি প্রেসিডেন্টের জন্য ট্রাম্প নোট লিখে গেছেন।
বাইডেনকে প্রেসিডেন্ট সম্বোধন করে আদৌ কী লেখা হয়েছে, এ নিয়ে মানুষের মধ্যে কৌতূহল বিরাজ করছে। সাংবাদিকদের বাইডেন বলেছেন, বিদায়ী প্রেসিডেন্ট একটি উদার চিঠি লিখে গেছেন। চিঠিটি ব্যক্তিগত ও ট্রাম্পের সঙ্গে কথা বলার আগে তিনি এর বিষয়বস্তু প্রকাশ করতে চান না।
সাংবাদিকদের নতুন প্রেসিডেন্ট বাইডেন জানান, বেশ কিছু নির্বাহী আদেশে তিনি দ্রæত সই করেছেন। আমেরিকার মানুষকে দেওয়া প্রতিশ্রæতি বাস্তবায়ন শুরু করে দিয়েছি। ২০১৭ সালে প্রেসিডেন্টের দায়িত্ব গ্রহণের কিছুদিন পর ট্রাম্প সাতটি মুসলিম দেশের নাগরিকদের যুক্তরাষ্ট্র ভ্রমণে নিষেধাজ্ঞা আরোপ করেছিলেন।
পরে সেটি মুসলিম নিষেধাজ্ঞা হিসাবে পরিচিতি পায়। তবে হোয়াইট হাউজে অভিষেকের কয়েক ঘণ্টার মধ্যেই ট্রাম্পের মুসলিম নিষেধাজ্ঞা বাতিলের নির্বাহী আদেশে স্বাক্ষর করেন বাইডেন। নির্বাচনের আগে তিনি প্রতিশ্রæতি দিয়েছিলেন ক্ষমতায় এলে প্রথমদিনই মুসলিম নিষেধাজ্ঞা তুলে নেবেন।
শপথ নেওয়ার পরপরই বাইডেন যুক্তরাষ্ট্রের ভেঙে পড়া অভিবাসনব্যবস্থা সংস্কারে কংগ্রেসের প্রতি আহবান জানিয়েছেন। জলবায়ুবিষয়ক আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের ঐতিহাসিক প্যারিস চুক্তিতে পুনরায় যোগদানের নির্দেশেও স্বাক্ষর করেছেন তিনি। শপথ গ্রহণের কয়েক ঘণ্টার মধ্যে তিনি জাতিসংঘের মাধ্যমে আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়কে এ সিদ্ধান্তের কথা জানিয়ে দেন।
অপ্রাপ্ত বয়সে মা-বাবার সঙ্গে যুক্তরাষ্ট্রে আসা কয়েক লাখ অভিবাসীকে বিতাড়িত করা বন্ধ রাখতে নির্বাহী আদেশে বাইডেন সই করেছেন। সাবেক প্রেসিডেন্ট বারাক ওবামার চালু করা অভিবাসন কর্মসূচি বন্ধ করার নির্বাহী আদেশ দিয়েছিলেন ট্রাম্প। এখন বাইডেনের নির্বাহী আদেশের মাধ্যমে কর্মসূচিটি আবার চালু হলো। এতে যুক্তরাষ্ট্রে কয়েক লাখ অভিবাসীর স্থায়ীভাবে বসবাস করার পথ উন্মুক্ত হলো।
মেক্সিকো সীমান্তে দেওয়াল নির্মাণে তহবিলের জন্য ন্যাশনাল ইমার্জেন্সি ডিক্লারেশন বাতিল করেছেন বাইডেন। অর্থাৎ, সীমান্তে দেওয়াল নির্মাণের কাজ স্থগিত করা হয়েছে।
সব ফেডারেল স্থাপনায় লোকজনকে মাস্ক পরা বাধ্যতামূলক করে তিনি নির্বাহী আদেশও জারি করেছেন। ১০ মাসে যুক্তরাষ্ট্রে করোনাভাইরাসে চার লাখের বেশি মানুষ মারা গেছেন। এ পরিস্থিতিতে চরম স্বাস্থ্য সংকটে পড়েছে যুক্তরাষ্ট্রবাসী। আগেই তিনি বলেছিলেন, করোনাভাইরাস মহামারির সংক্রমণ থেকে দেশবাসীকে বাঁচানোর উদ্যোগই হবে তার প্রথম কাজ।
প্রথমদিন জো বাইডেন তার পূর্বসূরি তিন প্রেসিডেন্ট বারাক ওবামা, জর্জ ডবিøউ বুশ ও বিল ক্লিনটন এবং তাদের পরিবারের সদস্যদের নিয়ে আর্লিংটন জাতীয় সমাধিস্থানে যান। যুক্তরাষ্ট্রের ঐক্যের ক্ষেত্রে অন্যতম এ স্থাপনায় দাঁড়িয়ে সামরিক বাহিনীর দেওয়া স্যালুট গ্রহণ করা ছাড়াও ফুলেল শ্রদ্ধা নিবেদন করেন প্রেসিডেন্ট জো বাইডেন ও ভাইস প্রেসিডেন্ট কমলা হ্যারিস।
বুধবার সন্ধ্যায় হোয়াইট হাউজে প্রথম সংবাদ সম্মেলনে বাইডেনের প্রেস সেক্রেটারি জেন সাকি বলেন, এমন প্রণোদনা আইন পাশে দ্বিদলীয় সমঝোতাকেই প্রাধান্য দেওয়া হবে। তবে রিপাবলিকানদের কাছ থেকে বিরোধিতা এলে সব ধরনের বিকল্প ভাবনায় আছে। (দৈনিক যুগান্তর)