নিউইয়র্ক ১১:৫২ পূর্বাহ্ন, বৃহস্পতিবার, ২৬ ডিসেম্বর ২০২৪, ১২ পৌষ ১৪৩১ বঙ্গাব্দ
বিজ্ঞাপন :
মঙ্গলবারের পত্রিকা সাপ্তাহিক হককথা ও হককথা.কম এ আপনার প্রতিষ্ঠানের বিজ্ঞাপন দিতে যোগাযোগ করুন +1 (347) 848-3834

যুক্তরাষ্ট্রের অবৈধরা ওয়ার্ক পারমিট-সোস্যাল সিকিউরিটি-মেডিকেইড পাচ্ছেন

রিপোর্ট:
  • প্রকাশের সময় : ০৯:৫৪:১১ অপরাহ্ন, শনিবার, ৬ ডিসেম্বর ২০১৪
  • / ১০৭০ বার পঠিত

নিউইয়র্ক: দীর্ঘদিনের প্রত্যাশিত আমেরিকার প্রেসিডেন্টের নির্বাহী আদেশ নিয়ে এখনো কমিউনিটিতে রয়েছে বিস্তর অস্পষ্টতা। ওবামার ঘোষণায় অনেকে হয়তো মুক্তি পেতে যাচ্ছেন দুর্বিসহ যন্ত্রনা থেকে। কেউ আবার ভুগছেন পাওয়া না পাওয়ার বেদনায়। বিষয়টি নিয়ে কথা বলছেন ইমিগ্রেশন বিষয়ে অভিজ্ঞ আইনজ্ঞরাও। ধারণা করা হচ্ছে ২০১৫ সালের মার্চ থেকেই প্রেসিডেন্ট ওবামার নির্বাহী আদেশের আলোকে আনডক্যুমেন্টেডরা বৈধতা নয় পাচ্ছেন আইডিন্টিটি (ওয়ার্ক পারমিট)। তবে তার জন্য অপক্ষো করতে হবে ছয় মাস। তড়িঘড়ি না করে সংশ্লিষ্ট সোর্স তথা ‘ইউএস সিটিজেনশীপ ইমিগ্রেশন সার্ভিস’-এর মাধ্যমে আবেদন করতে পরামর্শ দিয়েছেন তারা। প্রেসিডেন্টের আদেশ পর্যালোচনা শেষে চুড়ান্ত অনুমোদনের পর ইমিগ্রেশন সার্ভিস এ বিষয়ে আবেদন জমা নিবেন।
বিশিষ্ট ইমিগ্রেশন এটর্নী শেখ সেলিম বলেন, ‘আসলে বিষয়টি নিয়ে অনেকেই ভিন্ন ভিন্ন মত প্রকাশ করছেন। তবে আমি বলবো জাতির উদ্দেশ্যে দেয়া ভাষণে প্রেসিডেন্ট ঘোষণা দিয়েছেন কেবল। তার এই আদেশ পরিপূর্ণ রূপ নিতে সময় লাগবে। তাই বিষয়টি নিয়ে তাড়াহুড়োর কিছু নেই। তবে ইতোমধ্যে যারা মনে করছেন যে তারা এই ঘোষণার আওতায় সুযোগ পাচ্ছেন; তাদের উচিত হবে বার্থ সার্টিফিকেট’সহ সংশ্লিষ্ট কাগজপত্র গুছিয়ে নেয়া। কোন ধরণের ভুল তথ্য দেয়া ঠিক হবে না’।
উল্লেখ্য, গত ২০১২ সালের জুনে প্রেসিডেন্ট ওবামা তার এক ঘোষণায় ‘ডেফারড আ্যাকশন ফর চাইল্ড আ্যারাইভাল’ সংক্রান্ত নির্বাহী আদেশ দেন। এরপর ২০ নভেম্বর বৃহস্পতিবারে তার ঘোষিত ইমিগ্রেশন রিফর্ম বিল সংক্রান্ত আদেশ তারই বৃহত্তর রূপ। এবারের নির্বাহী আদেশে প্রায় ৫০ লাখ আনডক্যুমেন্টেড বৈধতা পাবে বলে আশা করা হচ্ছে। এই আদেশে যুক্তরাষ্ট্রে কমপক্ষে ৫ বছর ধরে বসবাসরত জন্মগত আমেরিকান নাগরিকদের আনডক্যুমেন্টেড পিতা মাতা এ আদেশের আওতায় পড়বেন। যারা ২০১০ সালের ৩১ ডিসেম্বরের পূর্ব থেকে যুক্তরাষ্ট্রে বসবাস করেছেন তারা এই প্রক্রিয়ার মধ্যে পড়বেন। এছাড়া যে সব আনডক্যুমেন্টেড শিশু ২০১০ সালের ৩১ ডিসেম্বরের পূর্ব থেকে যুক্তরাষ্ট্রে বসবাস করেছেন তারাও এই বৈধকরণ প্রক্রিয়ার মধ্যে পড়বেন।
সূত্র জানায়, প্রেসিডেন্টের আদেশের বিস্তারিত নীতিমালা সহসাই প্রকাশ করবে ডিপার্টমেন্ট অব হোমল্যান্ড সিকিউরিটি। কিন্তু তার আগেই মাথাচাড়া দিয়ে উঠছে কিছু প্রতারকচক্র। তারা আবেদনকারীদের সাহায্য করার নামে প্রতারণার ফাঁদ পেতে বসেছে ইতোমধ্যেই। জানা গেছে, নিউইয়র্ক, নিউজার্সী’সহ অন্যান্য ষ্টেটে এটর্নী কিংবা লিগ্যাল কনসালটেন্ট না হয়েও ছদ্মাবরণে এসব প্রতারকচক্র সহজ-সরল প্রবাসী অভিবাসীদের মিথ্যে আশ্বাস দিচ্ছেন। বিনিময়ে কনসালটেন্সি ফি হিসেবে হাতিয়ে নিচ্ছেন মোটা অঙ্কের টাকা। আর এসব চক্রকে সাহায্য করতে কতিপয় দালালও মাঠে নেমে পড়েছেন।
যারা বৈধতা পাচ্ছেন: প্রেসিডেন্ট ওবামা তার নির্বাহী আদেশে স্পষ্টত উল্লেখ করেছেন, ‘যারা ৫ বছরের বেশী সময় ধরে যুক্তরাষ্ট্রে বসবাস করছেন এবং যাদের সন্তান এদেশে জন্ম নিয়েছে অথবা স্থায়ী বাসিন্দা, তাদের সুবাদে তারা এ সুযোগ পাবেন। তারা আগামী বছরের প্রথমভাগে প্রয়োজনীয় কাগজপত্র উপস্থাপনের মাধ্যমে ওয়ার্ক পারমিটের জন্য আবেদন করতে পারবেন’। সূত্র মতে, প্রায় ৪৭ লাখের মধ্যে ৪৪ লাখ বাবা-মা ও তাদের সন্তানরা এদেশের নাগরিক বা স্থায়ী বাসিন্দা। তারা এখন এদেশে স্বাভাবিকভাবে বসবাস করতে পারবেন এবং ড্রাইভিং লাইসেন্স, ব্যাংক একাউন্ট খোলা, বাড়ী-ঘর কেনা ও মাতৃভূমি তথা দেশে আসা-যাওয়া করতে পারবেন। এছাড়াও বৈধতার আওতায় যারা আসবেন তারা সোশ্যাল সিকিউরিটি কার্ড পাবেন ঠিকই কিন্তু গ্রীণকার্ড নয়। আপাতত হতে পারছেন না যুক্তরাষ্ট্রের নাগরিকও। পাবেন না ভোটাধিকার ও সরকারী স্বাস্থ্যসুবিধা’।
এছাড়াও, যুক্তরাষ্ট্রে বসবাসকালে যাদের রেকর্ড পরিস্কার অর্থাৎ অপরাধমূলক কোন কর্মকান্ডে জড়িত ছিলেন না তারাই মুলত এই আদেশের আওতায় আসবেন। যারা ট্যাক্স পরিশোধকারীÑ তারা নির্ধারিত প্রসেসিং ফি দিয়ে হোমল্যান্ড সিকিউরিটির নির্দিষ্ট ফর্মে আবেদন করতে পারবেন। যথাযথ কর্তৃপক্ষের বরাবরে আবেদনের পর হোমল্যান্ড সিকিউরিটি’সহ সংশ্লিষ্ট বিভাগ আবেদনকারীদের ব্যাকগ্রাউন্ড যাচাই করবেন। এসব পরীক্ষায় উত্তীর্ণরাই পাবেন বৈধতা।
তবে আশার বাণী হচ্ছে ইমিগ্রেশন সংস্কার সুবিধভোগী বয়স্ক অবৈধ অভিবাসীরা সোস্যাল সিকিউরিটি’র পাশাপাশি পাবেন মেডিক্যাল সুবিধা। সূত্রে জানা যায়, যুক্তরাষ্ট্রে বসবাসকারি বয়ষ্করা অবসর যাপনের বয়স সীমায় পৌঁছলে তারা সোস্যাল সিকিউরিটির সাথে মেডিকেইড সুবিধার যোগ্য হিসেবে গণ্য হবেন।
এদিকে, প্রেসিডেন্ট ওবামা তার ঘোষণায় ‘ডেফারড অ্যাকশন ফর চাইল্ডহুড অ্যারাইভাল-ডাকা’ কর্মসূচির আওতা সম্প্রসারণ করেছেন বলেও জানা গেছে। যার ফলে আরো তিন লাখ তরুণ বৈধতা লাভের জন্য আবেদন করতে পারবেন। ২০১২ সালে চালু করা এই কর্মসূচিতে তরুণদের মধ্যে যাদের বয়স সীমা ১৫ বছরের ঊর্ধ্বে ও ৩১ বছরের বেশি নয়; তারাই বৈধতা পাওয়ার জন্য উপযুক্ত বলে নির্ধারণ করা হয়েছিল। ওবামার নির্বাহী আদেশে সেই বয়সসীমার অবসান ঘটবে। এ ছাড়া ২০১২ সালে ঘোষিত কর্মসূচিতে ২০০৭ সালের জানুয়ারি মাসের আগে যুক্তরাষ্ট্রে আগতদের বৈধতার জন্য আবেদনের সুযোগ দেয়া হয়েছিল। ওবামার ঐ ঘোষণা অনুযায়ী এখন ২০১০ সালের জানুয়ারি মাসের আগে যারা যুক্তরাষ্ট্রে প্রবেশ করেছে এমন যে-কোনো তরুণ বৈধতা লাভের জন্য আবেদন করার যোগ্য বলে বিবেচিত হবেন। এই শ্রেণীর আনডকুমেন্টেড তরুণরা তিন বছরের জন্য ডিপোর্টেশনের কবল থেকে মুক্ত থাকবে। এছাড়াও, এতদিন ধরে এমপ্লয়মেন্ট বেজড গ্রীণ কার্ডধারীদের স্বামী বা স্ত্রীরা আগে ওয়ার্ক পারমিট পেতেন না। নতুন আদেশে তারাও ওয়ার্ক পারমিট লাভ করবেন বলে জানান আইনজীবীরা।
সূত্র মতে, প্রতি বছর যুক্তরাষ্ট্রে উচ্চদক্ষ প্রায় ৬৫ হাজার এমপ্লয়মেন্ট ভিসা ইস্যু করা হয়। এ ছাড়া বিনিয়োগ ভিসার কোটা বর্তমান সংখ্যার চেয়ে আরো ২০ হাজার বৃদ্ধি করা হবে। তবে, অনেকেই মনে করছেন, ‘ইমিগ্রেশন ইস্যু নিয়ে ডেমোক্রেটদের অনেক বড় মূল্য দিতে হবে। বিষয়টি নিয়ে পুরো আমেরিকা জুড়ে  দ্বিধা-বিভক্তি তৈরী হয়েছে। সে কারণে প্রেসিডেন্ট বারাক ওবামার এই নির্বাহী আদেশ কতোটা বাস্তবায়নযোগ্য সে প্রশ্ন থেকেই যাচ্ছে। মধ্যবর্তী নির্বাচনে পর নির্বাহী আদেশে প্রেসিডেন্ট ওবামা ৩ বছরের জন্য ৪৭ লাখ আনডকুমেন্টেডদের যে বিশেষ সুযোগ দিচ্ছেন তার সফলতা নির্ভর করছে আগামী প্রেসিডেন্সিয়াল ইলেকশনের ফলাফলের উপর’।
প্রতারকদের কাছ থেকে সতর্ক থাকতে পরামর্শ দিয়ে বেশ কয়েকজন এটর্নী বাংলা পত্রিকাকে জানান, ‘১৯৮৭ সালে প্রেসিডেন্ট রোনাল্ড রিগ্যানের সময়ে নির্বাহী আদেশে এ্যামনেস্টি প্রদান করা হয়েছিল। সে সময়েও একটি চক্র মাথাচাড়া দিয়ে উঠে। ঐ সময়ে চক্রটি সাধারণ প্রবাসীদের কাছ থেকে গ্রীণকার্ড প্রদানের কথা বলে লাখ লাখ ডলার হাতিয়ে নেয়। আর এসব প্রতারক চক্রের খপ্পরে পড়ে মিথ্যা এবং বানোয়াট তথ্য দিয়ে দীর্ঘ ২৫ বছরেও অনেকে বৈধ হতে পারেনি।
তবে, এ বিষয়ে কমিউনিটির মধ্যে সচেতনা বৃদ্ধিতে কাজ করছে মানবাধিকার সংগঠন ও ‘সাউথ এশিয়ান অর্গেনাইজেশন সেন্টার- ড্রাম। ২০ নভেম্বর প্রেসিডেন্ট ওবামার নির্বাহী আদেশ ঘোষণার একদিন পর ২১ নভেম্বর শুক্রবার আনুষ্ঠানিক প্রতিক্রিয়া জানানো হয় সংগঠনটির পক্ষ থেকে। ‘ডেসিস রাইজিং আপ এন্ড মুভিং-ড্রাম’ কমিউনিটি অর্গানাইজার কাজী ফৌজিয়া বাংলা পত্রিকাকে বলেন, ‘ওবামার এই আদেশে আমরা খুশি। কিন্তু তিনি খন্ডিত আদেশ দিয়েছেন। অনেকগুলো শর্ত রয়েছে তার এই আদেশে। যেখানে অনেকেই বঞ্চিত হয়েছেন। তবে, আমরা আশা করছি বঞ্চিতরাও তাদের প্রাপ্য অধিকার পাবেন। আমাদের আন্দোলনও অব্যাহত থাকবে। তারপরও প্রেসিডেন্টের এই সাহসী উদ্যোগের জন্য আমরা তাকে সাধুবাদ জানাই’।
তিনি আরো জানান, ‘অতীতেও আমাদের কমিউনিটির নিরীহ প্রবাসীদের ফাঁদে ফেলে একটি চক্র মিথ্যা তথ্য দিয়ে আবেদন করিয়ে বিপদে ফেলেছে। আমি ভুক্তভোগিদের উদ্দেশ্য বলবো না জেনে কিংবা না বুঝে কাউকে কোন তথ্য সরবরাহ করবেন না। এছাড়া প্রেসিডেন্টের আদেশ কার্যকরে সংশ্লিষ্ট বিভাগের মাধ্যমে আবেদন গ্রহণ করা হবে। তাই ধৈর্য্য ধরে অপেক্ষা করতে হবে। কমপক্ষে ছয় মাস লাগবে এই প্রক্রিয়া চালু হতে’।
কাজী ফৌজিয়া বলেন, ‘আনডক্যুমেন্টেডদের জন্য আমরা ড্রাম অফিসে মাসে ২বার একটি সেমিনারের আয়োজন করে থাকি। ২৬ নভেম্বর বুধবারও একটি ফ্রি-সেমিনার ও কর্মশালার আয়োজন করা হয়েছিল ড্রামের পক্ষ থেকে। এছাড়াও প্রেসিডেন্টের আদেশের চূড়ান্ত আবেদনের সময় অনেক আইনজীবী ও ফাউন্ডেশন এগিয়ে আসবে আনডক্যুমেন্টেডদের আইনী সহায়তায়। তাই তড়িঘড়ি করার কোন কারণ দেখছি না আমি’।
ড্রামের হিসেব মতে, প্রেসিডেন্টের বর্তমান আদেশের আওতায় সংগঠনটির সাথে সম্পৃক্ত প্রায় ১শ ৫০জনের বৈধতার সুযোগ সৃষ্টি হয়েছে। আশার বাণী হচ্ছে যার মধ্যে ১শ ৩৫জনই বাংলাদেশী। (বাংলা পত্রিকা)

Tag :

সোশ্যাল মিডিয়ায় খবরটি শেয়ার করুন

আপনার মন্তব্য লিখুন

About Author Information

যুক্তরাষ্ট্রের অবৈধরা ওয়ার্ক পারমিট-সোস্যাল সিকিউরিটি-মেডিকেইড পাচ্ছেন

প্রকাশের সময় : ০৯:৫৪:১১ অপরাহ্ন, শনিবার, ৬ ডিসেম্বর ২০১৪

নিউইয়র্ক: দীর্ঘদিনের প্রত্যাশিত আমেরিকার প্রেসিডেন্টের নির্বাহী আদেশ নিয়ে এখনো কমিউনিটিতে রয়েছে বিস্তর অস্পষ্টতা। ওবামার ঘোষণায় অনেকে হয়তো মুক্তি পেতে যাচ্ছেন দুর্বিসহ যন্ত্রনা থেকে। কেউ আবার ভুগছেন পাওয়া না পাওয়ার বেদনায়। বিষয়টি নিয়ে কথা বলছেন ইমিগ্রেশন বিষয়ে অভিজ্ঞ আইনজ্ঞরাও। ধারণা করা হচ্ছে ২০১৫ সালের মার্চ থেকেই প্রেসিডেন্ট ওবামার নির্বাহী আদেশের আলোকে আনডক্যুমেন্টেডরা বৈধতা নয় পাচ্ছেন আইডিন্টিটি (ওয়ার্ক পারমিট)। তবে তার জন্য অপক্ষো করতে হবে ছয় মাস। তড়িঘড়ি না করে সংশ্লিষ্ট সোর্স তথা ‘ইউএস সিটিজেনশীপ ইমিগ্রেশন সার্ভিস’-এর মাধ্যমে আবেদন করতে পরামর্শ দিয়েছেন তারা। প্রেসিডেন্টের আদেশ পর্যালোচনা শেষে চুড়ান্ত অনুমোদনের পর ইমিগ্রেশন সার্ভিস এ বিষয়ে আবেদন জমা নিবেন।
বিশিষ্ট ইমিগ্রেশন এটর্নী শেখ সেলিম বলেন, ‘আসলে বিষয়টি নিয়ে অনেকেই ভিন্ন ভিন্ন মত প্রকাশ করছেন। তবে আমি বলবো জাতির উদ্দেশ্যে দেয়া ভাষণে প্রেসিডেন্ট ঘোষণা দিয়েছেন কেবল। তার এই আদেশ পরিপূর্ণ রূপ নিতে সময় লাগবে। তাই বিষয়টি নিয়ে তাড়াহুড়োর কিছু নেই। তবে ইতোমধ্যে যারা মনে করছেন যে তারা এই ঘোষণার আওতায় সুযোগ পাচ্ছেন; তাদের উচিত হবে বার্থ সার্টিফিকেট’সহ সংশ্লিষ্ট কাগজপত্র গুছিয়ে নেয়া। কোন ধরণের ভুল তথ্য দেয়া ঠিক হবে না’।
উল্লেখ্য, গত ২০১২ সালের জুনে প্রেসিডেন্ট ওবামা তার এক ঘোষণায় ‘ডেফারড আ্যাকশন ফর চাইল্ড আ্যারাইভাল’ সংক্রান্ত নির্বাহী আদেশ দেন। এরপর ২০ নভেম্বর বৃহস্পতিবারে তার ঘোষিত ইমিগ্রেশন রিফর্ম বিল সংক্রান্ত আদেশ তারই বৃহত্তর রূপ। এবারের নির্বাহী আদেশে প্রায় ৫০ লাখ আনডক্যুমেন্টেড বৈধতা পাবে বলে আশা করা হচ্ছে। এই আদেশে যুক্তরাষ্ট্রে কমপক্ষে ৫ বছর ধরে বসবাসরত জন্মগত আমেরিকান নাগরিকদের আনডক্যুমেন্টেড পিতা মাতা এ আদেশের আওতায় পড়বেন। যারা ২০১০ সালের ৩১ ডিসেম্বরের পূর্ব থেকে যুক্তরাষ্ট্রে বসবাস করেছেন তারা এই প্রক্রিয়ার মধ্যে পড়বেন। এছাড়া যে সব আনডক্যুমেন্টেড শিশু ২০১০ সালের ৩১ ডিসেম্বরের পূর্ব থেকে যুক্তরাষ্ট্রে বসবাস করেছেন তারাও এই বৈধকরণ প্রক্রিয়ার মধ্যে পড়বেন।
সূত্র জানায়, প্রেসিডেন্টের আদেশের বিস্তারিত নীতিমালা সহসাই প্রকাশ করবে ডিপার্টমেন্ট অব হোমল্যান্ড সিকিউরিটি। কিন্তু তার আগেই মাথাচাড়া দিয়ে উঠছে কিছু প্রতারকচক্র। তারা আবেদনকারীদের সাহায্য করার নামে প্রতারণার ফাঁদ পেতে বসেছে ইতোমধ্যেই। জানা গেছে, নিউইয়র্ক, নিউজার্সী’সহ অন্যান্য ষ্টেটে এটর্নী কিংবা লিগ্যাল কনসালটেন্ট না হয়েও ছদ্মাবরণে এসব প্রতারকচক্র সহজ-সরল প্রবাসী অভিবাসীদের মিথ্যে আশ্বাস দিচ্ছেন। বিনিময়ে কনসালটেন্সি ফি হিসেবে হাতিয়ে নিচ্ছেন মোটা অঙ্কের টাকা। আর এসব চক্রকে সাহায্য করতে কতিপয় দালালও মাঠে নেমে পড়েছেন।
যারা বৈধতা পাচ্ছেন: প্রেসিডেন্ট ওবামা তার নির্বাহী আদেশে স্পষ্টত উল্লেখ করেছেন, ‘যারা ৫ বছরের বেশী সময় ধরে যুক্তরাষ্ট্রে বসবাস করছেন এবং যাদের সন্তান এদেশে জন্ম নিয়েছে অথবা স্থায়ী বাসিন্দা, তাদের সুবাদে তারা এ সুযোগ পাবেন। তারা আগামী বছরের প্রথমভাগে প্রয়োজনীয় কাগজপত্র উপস্থাপনের মাধ্যমে ওয়ার্ক পারমিটের জন্য আবেদন করতে পারবেন’। সূত্র মতে, প্রায় ৪৭ লাখের মধ্যে ৪৪ লাখ বাবা-মা ও তাদের সন্তানরা এদেশের নাগরিক বা স্থায়ী বাসিন্দা। তারা এখন এদেশে স্বাভাবিকভাবে বসবাস করতে পারবেন এবং ড্রাইভিং লাইসেন্স, ব্যাংক একাউন্ট খোলা, বাড়ী-ঘর কেনা ও মাতৃভূমি তথা দেশে আসা-যাওয়া করতে পারবেন। এছাড়াও বৈধতার আওতায় যারা আসবেন তারা সোশ্যাল সিকিউরিটি কার্ড পাবেন ঠিকই কিন্তু গ্রীণকার্ড নয়। আপাতত হতে পারছেন না যুক্তরাষ্ট্রের নাগরিকও। পাবেন না ভোটাধিকার ও সরকারী স্বাস্থ্যসুবিধা’।
এছাড়াও, যুক্তরাষ্ট্রে বসবাসকালে যাদের রেকর্ড পরিস্কার অর্থাৎ অপরাধমূলক কোন কর্মকান্ডে জড়িত ছিলেন না তারাই মুলত এই আদেশের আওতায় আসবেন। যারা ট্যাক্স পরিশোধকারীÑ তারা নির্ধারিত প্রসেসিং ফি দিয়ে হোমল্যান্ড সিকিউরিটির নির্দিষ্ট ফর্মে আবেদন করতে পারবেন। যথাযথ কর্তৃপক্ষের বরাবরে আবেদনের পর হোমল্যান্ড সিকিউরিটি’সহ সংশ্লিষ্ট বিভাগ আবেদনকারীদের ব্যাকগ্রাউন্ড যাচাই করবেন। এসব পরীক্ষায় উত্তীর্ণরাই পাবেন বৈধতা।
তবে আশার বাণী হচ্ছে ইমিগ্রেশন সংস্কার সুবিধভোগী বয়স্ক অবৈধ অভিবাসীরা সোস্যাল সিকিউরিটি’র পাশাপাশি পাবেন মেডিক্যাল সুবিধা। সূত্রে জানা যায়, যুক্তরাষ্ট্রে বসবাসকারি বয়ষ্করা অবসর যাপনের বয়স সীমায় পৌঁছলে তারা সোস্যাল সিকিউরিটির সাথে মেডিকেইড সুবিধার যোগ্য হিসেবে গণ্য হবেন।
এদিকে, প্রেসিডেন্ট ওবামা তার ঘোষণায় ‘ডেফারড অ্যাকশন ফর চাইল্ডহুড অ্যারাইভাল-ডাকা’ কর্মসূচির আওতা সম্প্রসারণ করেছেন বলেও জানা গেছে। যার ফলে আরো তিন লাখ তরুণ বৈধতা লাভের জন্য আবেদন করতে পারবেন। ২০১২ সালে চালু করা এই কর্মসূচিতে তরুণদের মধ্যে যাদের বয়স সীমা ১৫ বছরের ঊর্ধ্বে ও ৩১ বছরের বেশি নয়; তারাই বৈধতা পাওয়ার জন্য উপযুক্ত বলে নির্ধারণ করা হয়েছিল। ওবামার নির্বাহী আদেশে সেই বয়সসীমার অবসান ঘটবে। এ ছাড়া ২০১২ সালে ঘোষিত কর্মসূচিতে ২০০৭ সালের জানুয়ারি মাসের আগে যুক্তরাষ্ট্রে আগতদের বৈধতার জন্য আবেদনের সুযোগ দেয়া হয়েছিল। ওবামার ঐ ঘোষণা অনুযায়ী এখন ২০১০ সালের জানুয়ারি মাসের আগে যারা যুক্তরাষ্ট্রে প্রবেশ করেছে এমন যে-কোনো তরুণ বৈধতা লাভের জন্য আবেদন করার যোগ্য বলে বিবেচিত হবেন। এই শ্রেণীর আনডকুমেন্টেড তরুণরা তিন বছরের জন্য ডিপোর্টেশনের কবল থেকে মুক্ত থাকবে। এছাড়াও, এতদিন ধরে এমপ্লয়মেন্ট বেজড গ্রীণ কার্ডধারীদের স্বামী বা স্ত্রীরা আগে ওয়ার্ক পারমিট পেতেন না। নতুন আদেশে তারাও ওয়ার্ক পারমিট লাভ করবেন বলে জানান আইনজীবীরা।
সূত্র মতে, প্রতি বছর যুক্তরাষ্ট্রে উচ্চদক্ষ প্রায় ৬৫ হাজার এমপ্লয়মেন্ট ভিসা ইস্যু করা হয়। এ ছাড়া বিনিয়োগ ভিসার কোটা বর্তমান সংখ্যার চেয়ে আরো ২০ হাজার বৃদ্ধি করা হবে। তবে, অনেকেই মনে করছেন, ‘ইমিগ্রেশন ইস্যু নিয়ে ডেমোক্রেটদের অনেক বড় মূল্য দিতে হবে। বিষয়টি নিয়ে পুরো আমেরিকা জুড়ে  দ্বিধা-বিভক্তি তৈরী হয়েছে। সে কারণে প্রেসিডেন্ট বারাক ওবামার এই নির্বাহী আদেশ কতোটা বাস্তবায়নযোগ্য সে প্রশ্ন থেকেই যাচ্ছে। মধ্যবর্তী নির্বাচনে পর নির্বাহী আদেশে প্রেসিডেন্ট ওবামা ৩ বছরের জন্য ৪৭ লাখ আনডকুমেন্টেডদের যে বিশেষ সুযোগ দিচ্ছেন তার সফলতা নির্ভর করছে আগামী প্রেসিডেন্সিয়াল ইলেকশনের ফলাফলের উপর’।
প্রতারকদের কাছ থেকে সতর্ক থাকতে পরামর্শ দিয়ে বেশ কয়েকজন এটর্নী বাংলা পত্রিকাকে জানান, ‘১৯৮৭ সালে প্রেসিডেন্ট রোনাল্ড রিগ্যানের সময়ে নির্বাহী আদেশে এ্যামনেস্টি প্রদান করা হয়েছিল। সে সময়েও একটি চক্র মাথাচাড়া দিয়ে উঠে। ঐ সময়ে চক্রটি সাধারণ প্রবাসীদের কাছ থেকে গ্রীণকার্ড প্রদানের কথা বলে লাখ লাখ ডলার হাতিয়ে নেয়। আর এসব প্রতারক চক্রের খপ্পরে পড়ে মিথ্যা এবং বানোয়াট তথ্য দিয়ে দীর্ঘ ২৫ বছরেও অনেকে বৈধ হতে পারেনি।
তবে, এ বিষয়ে কমিউনিটির মধ্যে সচেতনা বৃদ্ধিতে কাজ করছে মানবাধিকার সংগঠন ও ‘সাউথ এশিয়ান অর্গেনাইজেশন সেন্টার- ড্রাম। ২০ নভেম্বর প্রেসিডেন্ট ওবামার নির্বাহী আদেশ ঘোষণার একদিন পর ২১ নভেম্বর শুক্রবার আনুষ্ঠানিক প্রতিক্রিয়া জানানো হয় সংগঠনটির পক্ষ থেকে। ‘ডেসিস রাইজিং আপ এন্ড মুভিং-ড্রাম’ কমিউনিটি অর্গানাইজার কাজী ফৌজিয়া বাংলা পত্রিকাকে বলেন, ‘ওবামার এই আদেশে আমরা খুশি। কিন্তু তিনি খন্ডিত আদেশ দিয়েছেন। অনেকগুলো শর্ত রয়েছে তার এই আদেশে। যেখানে অনেকেই বঞ্চিত হয়েছেন। তবে, আমরা আশা করছি বঞ্চিতরাও তাদের প্রাপ্য অধিকার পাবেন। আমাদের আন্দোলনও অব্যাহত থাকবে। তারপরও প্রেসিডেন্টের এই সাহসী উদ্যোগের জন্য আমরা তাকে সাধুবাদ জানাই’।
তিনি আরো জানান, ‘অতীতেও আমাদের কমিউনিটির নিরীহ প্রবাসীদের ফাঁদে ফেলে একটি চক্র মিথ্যা তথ্য দিয়ে আবেদন করিয়ে বিপদে ফেলেছে। আমি ভুক্তভোগিদের উদ্দেশ্য বলবো না জেনে কিংবা না বুঝে কাউকে কোন তথ্য সরবরাহ করবেন না। এছাড়া প্রেসিডেন্টের আদেশ কার্যকরে সংশ্লিষ্ট বিভাগের মাধ্যমে আবেদন গ্রহণ করা হবে। তাই ধৈর্য্য ধরে অপেক্ষা করতে হবে। কমপক্ষে ছয় মাস লাগবে এই প্রক্রিয়া চালু হতে’।
কাজী ফৌজিয়া বলেন, ‘আনডক্যুমেন্টেডদের জন্য আমরা ড্রাম অফিসে মাসে ২বার একটি সেমিনারের আয়োজন করে থাকি। ২৬ নভেম্বর বুধবারও একটি ফ্রি-সেমিনার ও কর্মশালার আয়োজন করা হয়েছিল ড্রামের পক্ষ থেকে। এছাড়াও প্রেসিডেন্টের আদেশের চূড়ান্ত আবেদনের সময় অনেক আইনজীবী ও ফাউন্ডেশন এগিয়ে আসবে আনডক্যুমেন্টেডদের আইনী সহায়তায়। তাই তড়িঘড়ি করার কোন কারণ দেখছি না আমি’।
ড্রামের হিসেব মতে, প্রেসিডেন্টের বর্তমান আদেশের আওতায় সংগঠনটির সাথে সম্পৃক্ত প্রায় ১শ ৫০জনের বৈধতার সুযোগ সৃষ্টি হয়েছে। আশার বাণী হচ্ছে যার মধ্যে ১শ ৩৫জনই বাংলাদেশী। (বাংলা পত্রিকা)