মধ্যবর্তী নির্বাচন : মঙ্গলবার বদলে যেতে পারে ট্রাম্প-আমেরিকা
- প্রকাশের সময় : ১০:২৯:০৬ অপরাহ্ন, সোমবার, ৫ নভেম্বর ২০১৮
- / ৫০৭ বার পঠিত
হককথা ডেস্ক: প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের অতি-উত্তপ্ত বর্ণবাদী ও জাতিবিদ্বেষমূলক বক্তব্যের ফলে দেশের ভেতরে সহিংসতা বাড়ছে রাজনৈতিক বিশ্লেষকদের অনেকেই এ কথা বলছেন। তবে ৬ নবেম্বরের নির্বাচন ট্রাম্পের এই ক্ষমতার দাপটকে খর্ব করতে পারে। যুক্তরাষ্ট্রের রাজনীতিতে আসে পারে ক্ষমতার সমতা। কংগ্রেস ও সিনেটে রেড স্টেট হিসেবে চিহ্নিত বিভিন্ন জায়গায় ডোমোক্রেটদের পক্ষে ব্যাপক জনপ্রিয়তা লক্ষনীয়। এর আগে কখনো দেখা যায়নি। এই ধারা অব্যাহত থাকলে আগামী কালের নির্বাচনে বদলে যেতে পারে ট্রাম্প আমেরিকা । একরোখা রাজনীতিতে আসতে পারে সমতা।
ইমিগ্রান্ট কমিউনিটি ও প্রো ইমিগ্রান্ট গ্রুপ এজন্য মঙ্গলবারের নির্বাচনকে চ্যালেঞ্জ হিসেবে নিয়ে এদিন সবাইকে ভোট কেন্দ্রে আসার আহ্বান জানিয়েছে। অনেকেই মনে করছেন ট্রাম্প আমেরিকা নিয়ে সাধারণ মানুষ কি ভাবছে তার একটি প্রতীকি রেফারেন্ডাম হচ্ছে মঙ্গলবারের নির্বাচন। নিউইয়র্ক সিটিতে সকাল ৬টা থেকে রাত ৯টা পর্যন্ত ভোট গ্রহণ অনুষ্ঠিত হবে।
এবারের নির্বাচনে বাংলাদেশীদের বন্ধু হিসেবে কংগ্রেসে প্রার্থী হয়েছেন আনেকজান্দ্রিয়া ওকাসিয়ো, গ্রগরী মিকস, স্টেট সিনেটে জ্যামাইকা এলাকায় প্রার্থী হচ্ছেন সবার প্রিয় জন লু, জ্যাকসন হাইটসে জেসিকা রামস এবং স্টেট এসেম্বলীতে ক্যাটালিনা ক্রুজ। এছাড়া পার্কচেস্টার এলাকায় নির্বাচনে এসেম্বলী প্রার্থী হচ্ছেন কেরিনস রিয়েস।
ম্যানহাটনে বাংলাদেশীদের বন্ধু হিসেবে হারলেম এলাকা থেকে প্রার্থী হয়েছেন প্রথম মুসলিম প্রার্থী সাবেক কাউন্সিল সদস্য রবার্ট জ্যাকসন। এর বাইরে ডেমোক্রেট হিসেবে গভর্নর পদে রয়েছেন বর্তমান গভর্নর এন্ড্রু কুমো, এটর্নী জেনারেল লটিশিয়া জেমস এবং স্টেট কম্পট্রোলার থমাস দিনাপোলি। মনে করা হচ্ছে মঙ্গলবারের নির্বাচনে ডেমোক্রেটরা যুক্তরাষ্ট্র কংগ্রেসের দুই কক্ষের যেকোন একটিতে সংখ্যাগরিষ্টতা অর্জন করলে তাতে ক্ষমতার ব্যালেন্স সৃষ্টি হবে। যা রুখে দিতে পারে প্রেসিডেন্ট ট্রাম্পের অভিবাসন বিরোধী বিভিন্ন পদক্ষেপ। প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প ক্ষমতায় আসার পর থেকে কংগ্রেসের দুই কক্ষ রিপাবলিকান সংখ্যাগরিষ্ট হওয়ায় বলতে গেলে বিনা বাধায় তিনি বিভিন্ন ধরনের পদক্ষেপ নেয়ার সাহস দেখাচ্ছেন। এক্ষেত্রে বর্ণ বৈষম্যমুলক অনেক মন্তব্য করেও তিনি পার পেয়ে যান। প্রতিবাদীদের তিনি কেয়ার করেন থোড়াই।
এবিষয়ে তারই সাবেক আইনজীবী মাইকেল কোহেন বলেন, ভোটে জিততে শ্বেতাঙ্গ ও কৃষ্ণাঙ্গদের মধ্যে দ্বদ্ব উসকে দিচ্ছেন প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প।
নির্বাচনী প্রচারণায় বর্ণবাদ ও জাতবিদ্বেষ ছড়ানো ভাষা ব্যবহার করছেন তিনি। পাশাপাশি অভিবাসী ভীতি বাড়িয়ে ও অর্থনীতিকে চাঙ্গা করার প্রতিশ্রুতি দিয়ে উগ্রপন্থীদের ভোট নিয়ন্ত্রণে নেয়ার চেষ্টা করছেন ট্রাম্প। বিশ্লেষকরা বলছেন, যুক্তরাষ্ট্রের রাজনীতিতে কট্টরপন্থীদের হুমকি একটি নিত্য বিষয়।
গত সপ্তাহে পেনসিলভানিয়ার পিটসবার্গের সিনাগগে ইহুদিদের প্রতি বিদ্বেষবশত এক কট্টর ট্রাম্প-সমর্থক এলোপাতাড়ি গুলিবর্ষণে ১১ ব্যক্তিকে হত্যা করে। এ ঘটনার পর ট্রাম্প জানিয়েছিলেন, তিনি গলার স্বর কিছুটা নিচু করার চেষ্টা করছেন। কিন্তু তার কথার পাঠ উল্টাতে ২৪ ঘণ্টাও লাগেনি। তিনি নিজের সাড়ে ৫ কোটি টুইটার অনুসারীর কাছে একটি ভিডিও বিলি করেন। এতে খুনি হিসেবে শাস্তিপ্রাপ্ত এক অবৈধ অভিবাসীর ছবি দেখিয়ে বলা হয়, ডেমোক্রেটরা চান এ রকম মানুষকে আশ্রয় দিতে। ভিডিওটি এতটাই বর্ণবাদী ও মিথ্যা তথ্যের ভিত্তিতে নির্মিত যে একাধিক রিপাবলিকান নেতাও এর নিন্দা করেছেন।
ওহাইয়োর রিপাবলিকান গভর্নর জন কেইশিচ বলেন, ‘এমন নির্লজ্জ বর্ণবাদী ভিডিও আগে কখনো দেখিনি। ভয়াবহ বিজ্ঞাপনটির একটিই উদ্দেশ্য, আর তা হল মানুষের মনে ভীতি জাগানো।’
গত সপ্তাহে সাবেক প্রেসিডেন্ট বারাক ওবামা, সাবেক প্রেসিডেন্ট প্রার্থী হিলারি ক্লিনটনসহ ১৫ জনের বাসায় বোমা পাঠানোর অভিযোগে সিজার সিয়োক নামের এক উগ্রপন্থীকে আটক করা হয়। ট্রাম্প সমালোচক বেছে বেছে প্যাকেট বোমা পাঠায় ট্রাম্পের কট্টর এ সমর্থক। এসবের জন্য ট্রাম্পের উত্তপ্ত বর্ণাবাদ বক্তব্যকেই দায়ী করা হচ্ছে। তিনি যে ভাষায় তার প্রতিপক্ষ, অভিবাসীসহ বিভিন্ন সংখ্যালঘু সম্প্রদায়ের বিরুদ্ধে বিষোদগার করেছেন, তাতে ট্রাম্প-সমর্থকদের সহিংসতায় উসকে দেয়া হচ্ছে।
কোহেন বলেন, ২০১৬ সালের নির্বাচনে শ্বেতাঙ্গদের বিরুদ্ধে কৃষ্ণাঙ্গদের ক্ষেপিয়ে ভোটের ফায়দা লুটেছিলেন ট্রাম্প। এ বিষয়ে ট্রাম্পের সঙ্গে কথোপকথন সম্প্রতি ভ্যানিটি ফেয়ারকে জানিয়েছেন কোহেন। ট্রাম্প বলেছিলেন, যেসব কৃষ্ণাঙ্গ আমাকে ভোট দেবে তারা আসলেই বোকা। কৃষ্ণাঙ্গ নেতা নেলসন ম্যান্ডেলার মৃত্যুর পরে কোহেনকে ট্রাম্প বলেছিলেন, যেসব দেশ কৃষ্ণাঙ্গ নেতার নেতৃত্বে চলছে সেসব দেশ ‘অ্যাসহোলে’ পরিণত হয়েছে।
বিশ্লেষকরা বলছেন, যুক্তরাষ্ট্রের রাজনীতিতে শ্বেতাঙ্গদের হুমকি একটি বড় জায়গাজুড়ে রয়েছে। গত কয়েক দশকে শ্বেতাঙ্গ শ্রেষ্ঠত্বাবাদী, বর্ণবাদী, নব্য নাৎসি ও অ্যান্টিসেমিটদের হাতে সহিংসতা বেড়েছে। গত কয়েক বছরে আইএস জঙ্গিদের চেয়ে তাদের হাতে আমেরিকানরাই বেশি মারা গেছেন। নিউ আমেরিকা থিংকট্যাংকের নিরাপত্তা বিশ্লেষক পিটার সিঙ্গার বলেন, ‘কট্টর ডানপন্থীদের চরমপন্থা ও সন্ত্রাসবাদ যুক্তরাষ্ট্রের জন্য বড় সমস্যা।
আমরা এখনও এগুলোর মুখোমুখি হচ্ছি। নিউ আমেরিকার তথ্যানুসারে, যুক্তরাষ্ট্রে সম্প্রতি ৩০০ হত্যার ৭০ শতাংশই চরমপন্থীদের ঘটানো। শুধু ২০১৭ সালেই ৩৪টি হত্যার মধ্যে ২০টিই ঘটে কট্টরপন্থী হামলায়। ২০১৬ সালের মতো এবারের প্রচারণায়ও তার প্রধান অস্ত্র অভিবাসনবিরোধী ভীতির ব্যবহার। দক্ষিণ আমেরিকার তিনটি দেশ থেকে আশ্রয়প্রার্থী কয়েক হাজার মানুষের একটি কাফেলা মেক্সিকো হয়ে এগিয়ে আসছে। ট্রাম্প বলছেন, এ ‘ক্যারাভান’ যুক্তরাষ্ট্রের বিরুদ্ধে একটি ‘অভিযান’। এটি রুখে দিতে তিনি সীমান্তে কয়েক হাজার সেনা মোতায়েনের নির্দেশ দিয়েছেন।
মেক্সিকো সীমান্তে ইতিমধ্যে ৭ হাজার সেনা পাঠানোর সিদ্ধান্ত হয়েছে বলে শুক্রবার জানিয়েছে মার্কিন সামরিক মুখপাত্র মাইকেল কুশারেক। ট্রাম্পের সেনা পাঠানোর এ সিদ্ধান্ত সামরিক বাহিনীকে রাজনীতিকরণের পাঁয়তারা বলে অভিযোগ তুলেছেন সামরিক বিশ্লেষকরা। অবসরপ্রাপ্ত কর্নেল ডেভিড লাপান বলেন, ‘মধ্যবর্তী নির্বাচনের ঠিক আগে মার্কিন হোমল্যান্ড সিকিউরিটিকে ভোটের সুবিধা হাসিলে ব্যবহার করছেন ট্রাম্প। তাছাড়া দারিদ্র্যপীড়িত নারী, শিশু অভিবাসীদেরকে রাষ্ট্রের হুমকি উল্লেখ করে তাদের বিরুদ্ধে সেনা লেলিয়ে দেয়া হাস্যকর।’