ভয়াবহ নাইন ইলেভেন হামলার ২৩ বছর অতিবাহিত : এখনও ক্ষত বহন করছে মানুষ
- প্রকাশের সময় : ০২:৫২:২৬ পূর্বাহ্ন, বৃহস্পতিবার, ১২ সেপ্টেম্বর ২০২৪
- / ১০৭ বার পঠিত
২০০১ সালের ১১ সেপ্টেম্বর ভয়াবহ সন্ত্রাসী হামলা হয় যুক্তরাষ্ট্রের নিউইয়র্ক সহ আরো দুই স্থানে। এই হামলা ৯/১১ নামে পরিচিত। ওই দিন আল-কায়েদার সন্ত্রাসীরা দুটি উড়োজাহাজ ছিনতাই করে নিউইয়র্কের বিশ্ব বাণিজ্য কেন্দ্রের সুউচ্চ জোড়া ভবন বা টুইন টাওয়ারে হামলা চালায়। আরেকটি উড়োজাহাজ আছড়ে পড়ে ওয়াশিংটন ডিসি সংলগ্ন পেন্টাগনে। হামলা হয় পেনসিলভেনিয়াতেও। এসব হামলায় প্রাণ হারায় অন্তত ৩ হাজার মানুষ। আহত হয় আরও প্রায় ২৫ হাজার মানুষ। শুধু যুক্তরাষ্ট্রেই নয়, পুরো বিশ্বের ইতিহাসের অন্যতম প্রাণঘাতী সন্ত্রাসী হামলা ছিল এটি, যার ক্ষত এখনও বহন করছে মানুষ।
নাইন ইলাভেন নামে পরিচিত, ইতিহাসের ভয়াবহ সন্ত্রাসী হামলার ২৩ বছর পূর্ণ হয়েছে বুধবার। ২০০১ সালের ১১ সেপ্টেম্বর ইসলামিক জঙ্গী গোষ্ঠি আল-কায়েদার সন্ত্রাসীরা, চারটি উড়োজাহাজ ছিনতাই করে নিউইয়র্কের ওয়ার্ল্ড ট্রেড সেন্টারের টুইন টাওয়ারে আছড়ে ফেলে। আরেকটি উড়োজাহাজ আঘাত করে পেন্টাগনে। হামলা হয় পেনসিলভেনিয়ায়। এসব হামলায় প্রাণ হারান প্রায় ৩ হাজার মানুষ। গুরুতর আহত হন প্রায় ২৫ হাজার। ২০০১ সালের ১১ সেপ্টেম্বর সকাল ৮টা ৪৬ মিনিটে নিউইয়র্কের আকাশচুম্বি ভবন ওয়ার্ল্ড ট্রেড সেন্টারের টুইন টাওয়ারের নর্থ টাওয়ারে আঘাত করে জঙ্গীদের ছিনতাই করা যাত্রীবাহী একটি বিমান। এর কিছু সময় পর ৯টা ৩ মিনিটে লাইভ টেলিকাস্টে বিশ্ববাসী দেখতে পায় দ্বিতীয় বিমানটির সাউথ টাওয়ারে আছড়ে পড়ার দৃশ্য। হামলায় ২টি ভবনেই আগুন ধরে যায়। মাত্র ২ ঘন্টার মধ্যে ২টি ভবনই ধুলার ঝড় তুলে ভেঙে গুঁড়িয়ে পড়ে। সকাল ৯টা ৩৭ মিনিটে তৃতীয় বিমানটি আঘাত করে পেন্টাগনের পশ্চিম অংশে।
হোয়াইট হাউজে আঘাত করতে যাওয়া আরেকটি বিমান সকাল ১০টা ৩ মিনিটে আছড়ে পড়ে পেনসিভেনিয়ায়। ঘটনায় ভয়াবহতায় শুধু যুক্তরাষ্ট্রই নয়, চমকে যায় গোটা বিশ্ব। বিশাল ও নিয়ন্ত্রিত ক্ষেপণাস্ত্র হিসেবে বিমানগুলোকে ব্যবহার করেছিলো কায়দায় আল-কায়েদার জঙ্গিরা। ভয়াবহ এ হামলায় আল কায়েদার ১৯ জন জঙ্গীর নাম কালো তালিকায় অন্তর্ভ‚ক্ত করে যুক্তরাষ্ট্র। একই বছর অক্টোবরে আই এস এর ওপর হামলা চালায় যুক্তরাষ্ট্র নেতৃত্বাধীন ন্যাটো বাহিনী। এর কয়েক মাসের মধ্যেই আল কায়েদার অনেক শীর্ষ নেতাকে হত্যা ও গ্রেপ্তার করে ন্যাটো। হামলার ঘটনায় প্রধান আসামি করা হয় আল কায়েদার প্রতিষ্ঠাতা ও প্রধান নেতা ওসামা বিন লাদেনকে। ২০১১ সালের ২রা মে ওসামা বিন লাদেনকে পাকিস্তানের অ্যাবোটাবাদের একটি বাড়িতে অভিযান চালিয়ে হত্যা করে নেভি সিল সদস্যরা। নাইন ইলেভেনের পর পরই সন্ত্রাসবাদের বিরুদ্ধে দীর্ঘমেয়াদী অভিযানের ঘোষণা দেয় যুক্তরাষ্ট্র। যে অভিযান হামলার ২৩ বছর পরেও অব্যাহত রয়েছে। ন্যাটোর সদস্যভুক্ত দেশগুলোর সমন্বয়ে সন্ত্রাসের বিরুদ্ধে যুদ্ধ-ম‚লমন্ত্র নিয়ে কাজ করছে প্রতিরক্ষা দপ্তর। শুধু আকাশ পথে হামলা নয়, সন্ত্রাসবাদ মোকাবেলায় দীর্ঘস্থায়ী অভিযানের কথা উল্লেখ করেছিলেন তৎকালীন প্রেসিডেন্ট জর্জ বুশ। যে অভিযান এখনো অব্যাহত রয়েছে বলে জানিয়েছে যুক্তরাষ্ট্র।
নিউইয়র্ক সিটি প্রশাসনের হিসেবে সেদিনের হামলায় নিহত হন ২হাজার ৭শ ৯৪জন। প্রতিবছর ভাগ্যহত মানুষদের স্মরণে নীরবতা পালনের মধ্য দিয়ে ম্যানহাটানস্থ গ্রাউন্ড জিরোতে শুরু হয় দিনটির মূল আনুষ্ঠানিকতা। সূত্র মতে, সেদিন অন্তত ১০/১৫জন বাংলাদেশী নিহত হন। সরকারি রেকর্ড অনুয়ায়ী নিহতদের তালিকায় রয়েছেন মোহাম্মদ শাহজাহান মিয়া, আবুল কাসেম চৌধুরী, মোহাম্মদ সাদেক আলী, আশফাক আহমেদ, নাভিদ হোসেন, নুরুল হক মিয়া ও শাকিলা ইয়াসমীন দম্পতি, সাব্বির আহমেদ, মোহাম্মদ সালাহউদ্দিন চৌধুরী এবং ওসমান গনি। সঠিক কাগজপত্রের অভাবে বাংলাদেশীদেরর মধ্যে নিহতরে মধ্যে আরো অনেকেই তালিকার বাইরে থেকে যান বলে ধারণা করা হচ্ছে।
নুরুল হক মিয়া ও শাকিলা ইয়াসমীন দম্পতি কাজ করতেন মার্শ এন্ড মেকলেনান কোম্পানীতে। নুরুল হকের বয়স ছিলো ৩৫ আর শাকিলার ২৬। শাকিলা ১৯৯৯ সালে ভার্জিনিয়া কমনওয়েলথ বিশ্ববিদ্যালয় থেকে ম্যানেজমেন্ট ইনফরমেশন সিস্টেম এমআইএস বিষয়ে ডিগ্রী লাভ করেন। এবং একই সালে এই কোম্পানীতে যোগ দেন তিনি। ঘটনার দিনও কাজ করেছেন স্বামী-স্ত্রী একসাথে।
৩৮ বছর বয়সী মোহাম্মদ সালাহউদ্দিন চৌধুরী থাকতেন কুইন্সে। তিনি কাজ করতেন সন্ধ্যার শিফটে উইন্ডোজ অব দ্য ওয়ার্ল্ড রেস্টুরেন্টে। স্ত্রী ছিলেন প্রেগনেন্ট। ১১ সেপ্টেম্বর বিকেলে ডাক্তারে কাছে এ্যাপয়েন্টমেন্ট ছিলো। তাই শিফট পরিবর্তন করে ঐদিনের জন্যে সকালের শিফটে কাজে আসেন। নিয়তির নির্মম পরিহাস; সন্তানের মুখ আর দেখে যেতে পারলেন না হতভাগা সালাহউদ্দিন চৌধুরী। ঘটনার দু’দিন পর ১৩ সেপ্টেম্বর তার একটি পুত্র সন্তান জন্মলাভ করে।
একই প্রতিষ্ঠানে কম্পিউটার এ্যাডমিন হিসেবে কর্মরত ছিলেন মোহাম্মদ শাহজাহান মিয়া। এরকম আরো অনেকেই আছেন যাদের সঠিক তথ্য পাওয়া যায়নি। বলতে গেলে নিহত বাংলাদেশী পরিবারগুলোর খোঁজ এখন আর কেউ রাখছে না। এমন প্রশ্নও উঠে এসেছে সবার মুখে মুখে।