যুক্তরাষ্ট্রে করোনা তহবিলের ১০ হাজার কোটি ডলার চুরি

- প্রকাশের সময় : ০৮:৩৬:৫৯ পূর্বাহ্ন, বৃহস্পতিবার, ২৩ ডিসেম্বর ২০২১
- / ৫৮ বার পঠিত
হককথা ডেস্ক : যুক্তরাষ্ট্রের করোনাভাইরাস (কোভিড-১৯) মহামারি ত্রাণতহবিল থেকে বিশাল অঙ্কের অর্থ চুরি হয়ে গেছে। দেশটির সিক্রেট সার্ভিসের গোয়েন্দারা জানিয়েছেন, চুরি যাওয়া অর্থের পরিমাণ প্রায় ১০ হাজার কোটি (১০০ বিলিয়ন) ডলার। একটি জালিয়াত চক্র এই অর্থ সরিয়ে নিয়েছে। এর মধ্যে অল্প কিছু অর্থ উদ্ধার করা গেছে। খবর সিএনবিসি ও এপি।
যুক্তরাষ্ট্রে করোনা মহামারিতে চাকরি হারানো কিংবা ব্যবসায়িকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হওয়া নাগরিকদের আর্থিক সহায়তার জন্য ২০২০ সালে ‘মহামারি ত্রাণতহবিল’ গঠন করে দেশটির কেন্দ্রীয় সরকার। ‘মার্চ-২০২০ কেয়ার্স অ্যাক্ট, পিপিপি’ নামের আইনের আওতায় করা এই তহবিলের অর্থের পরিমাণ ৩৪ লাখ কোটি (৩.৪ ট্রিলিয়ন) ডলার। এখন পর্যন্ত তহবিলের ৩ শতাংশ অর্থ বিতরণ করা হয়েছে। বিতরণকৃত অর্থ থেকেই ঘটেছে বিশাল এই চুরির ঘটনা। তহবিলের ছাড় দেওয়া অর্থের যে অংশটি মহামারিতে চাকরি হারানো নাগরিকদের জন্য বরাদ্দ করা হয়েছিল বেশিরভাগ অর্থ সেখান থেকেই চুরি হয়েছে।
সিএনবিসি জানিয়েছে, দেশজুড়ে ক্ষুদ্র ব্যবসায়ীদের জন্য সৃষ্ট ‘স্মল বিজনেস অ্যাডমিনিস্ট্রেশন’র পেচেক প্রোটেকশন প্রোগ্রাম, ঋণ কর্মসূচি ‘দ্য ইকোনমিক ইনজুরি ডিজাস্টার লোন প্রোগ্রাম ও আরও বেকার সমস্যা মোকাবিলায় গৃহীত আরও একটি কর্মসূচি থেকে বিভিন্ন সময়ে জালিয়াতির মাধ্যমে এই অর্থ হাতিয়ে নিয়েছে একটি চক্র। গত সপ্তাহে কেন্দ্রীয় সরকারের শ্রমিক বিভাগের পক্ষ থেকে চাকরি হারানো বেকার নাগরিকদের আর্থিক সহায়তা প্রদানে অনিয়মের বিষয়ে অভিযোগ তোলা হয়। এরপর তদন্ত শুরু করেন গোয়েন্দা কর্মকর্তারা। সিক্রেট সার্ভিস জানিয়েছে, এ ঘটনায় শতাধিক সন্দেহভাজনকে আটক করা হয়েছে। তাদের থেকে এখন পর্যন্ত ২০৩ কোটি ডলার (২.৩ বিলিয়ন) উদ্ধার করা হয়েছে।
এপির প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, যুক্তরাষ্ট্রের ৫১টি রাজ্যের প্রতিটিতেই তহবিলের অর্থ চুরির ঘটনা ঘটেছে। ইতোমধ্যে ৯০০টি চুরির ঘটনা উদ্ঘাটন ও তদন্ত করছেন গোয়েন্দা কর্মকর্তারা। যুক্তরাষ্ট্রে ২০২০ সালের জানুয়ারিতে আঘাত হানে করোনা। এরপর গত দুই বছর ধরে দেশটির জনজীবনের রীতিমতো তাণ্ডব চালায় মহামারি। এর প্রত্যক্ষ প্রভাব পড়েছে দেশটির অর্থনীতির ওপরও। লকডাউন ও কঠোর করোনা বিধিনিষেধের কারণে লাখো-কোটি মানুষ চাকরি হারিয়েছেন, ছোটখাটো খুচরা ব্যবসা করে যারা জীবিকা অর্জন করতেন, মহামারির কারণে তাদেরও উপার্জন একরকম বন্ধ হয়ে গেছে।
এই পরিস্থিতিতে সরকারের আর্থিক প্রণোদনার সিদ্ধান্ত ক্ষতিগ্রস্ত নাগরিকদের মধ্যে স্বস্তি ফিরিয়ে আনে। কিন্তু তহবিল চুরির ঘটনায় জনমনে বিষাদ নেমে এসেছে। চুরির তথ্য সামনে আসায় বেশ বিব্রত অবস্থায় পড়েছে প্রেসিডেন্ট জো বাইডেনের সরকার। তবে প্রশাসন চুরির তদন্ত কার্যক্রমকে খুবই গুরুত্ব দিয়ে বিবেচনা করছে উল্লেখ করে গোয়েন্দা কর্মকর্তা ডটসন বলেছেন, ‘আমরা কি চুরি-জালিয়াতি চিরতরে বন্ধ করতে পারব? পারব না; আমরা বড়জোর যা করতে পারি, তা হলো-এই জঘন্য কর্মকাণ্ডের সঙ্গে যারা যুক্ত, তাদের বিচারের আওতায় আনা এবং উপযুক্ত শাস্তি দেওয়া। এখন আমরা এই কাজই করছি।’
যুক্তরাষ্ট্রে দারিদ্র্যসীমার নিচে প্রায় চার কোটি মানুষ : যুক্তরাষ্ট্রে বর্তমানে প্রায় চার কোটি মানুষ দারিদ্র্যসীমার নিচে বসবাস করছে। সম্প্রতি প্রকাশিত যুক্তরাষ্ট্রের সেন্সাস ব্যুরোর তথ্য মতে, ২০২০ সালে দরিদ্রের সংখ্যা ছিল ৩ কোটি ৭০ লাখ। এটা মোট জনগণের প্রায় ১১.৪ শতাংশ। করোনা মহামারির কারণে এই সংখ্যা আরও বেড়েছে। প্রায় অর্ধেক যুক্তরাষ্ট্রের পরিবারই সংসার চালাতে হিমশিম খাচ্ছে। করোনাপীড়িত এসব দরিদ্রদের সহায়তায় নতুন উপায় সামনে আনছে দেশটির বেশ কয়েকটি শহর কর্তৃপক্ষ। আর সেই উপায় আর কিছুই নয়, অতি দরিদ্রকে নগদ অর্থ প্রদান। রয়টার্স জানিয়েছে, যুক্তরাষ্ট্রজুড়ে অন্তত ১৬টি ও কাউন্টি নিম্নআয়ের নাগরিকদের নগদ অর্থ সহায়তা দেওয়া শুরু করেছে। একই পরিকল্পনা নিয়ে এগোচ্ছে আরও অন্তত ৩১টি স্থানীয় সরকার।