নিউইয়র্ক ০২:৪৯ অপরাহ্ন, সোমবার, ১৬ সেপ্টেম্বর ২০২৪, ১ আশ্বিন ১৪৩১ বঙ্গাব্দ
বিজ্ঞাপন :
মঙ্গলবারের পত্রিকা সাপ্তাহিক হককথা ও হককথা.কম এ আপনার প্রতিষ্ঠানের বিজ্ঞাপন দিতে যোগাযোগ করুন +1 (347) 848-3834

‘সাহিত্য একাডেমি নিউইয়র্ক’র ত্রয়োদশ বছর পূর্ণ

রিপোর্ট:
  • প্রকাশের সময় : ১২:৩২:২৩ পূর্বাহ্ন, রবিবার, ৩ ডিসেম্বর ২০২৩
  • / ৩২ বার পঠিত

পলি শাহীনা: সাহিত্যানুরাগীদের ভালোবাসায় সিক্ত হয়ে ‘সাহিত্য একাডেমি নিউইয়র্ক’ গত ২৪ নভেম্বর ত্রয়োদশ বছর পূর্ণ করলো। মানুষের হৃদয়ে তেরো বছর আগে প্রতিষ্ঠানটির বীজ বপন করা হয়। পুরো আসরটি সঞ্চালনায় ছিলেন একাডেমির পরিচালক মোশাররফ হোসেন। তিনি প্রয়াত লেখক মনসুর আলী সহ যাঁরা প্রতিষ্ঠানের শুরু থেকে ছিলেন তাঁদের সবাইকে শ্রদ্ধার সঙ্গে স্মরণ করেন। সাহিত্য একাডেমির রয়েছে পর্বতসদৃশ্য অজস্র ভালোবাসাময় স্মৃতির প্রাচীর। আসরে আগত সকলে সাহিত্য একাডেমিকে ঘিরে প্রাণখুলে স্মৃতি রোমন্থন করেন, শুভেচ্ছা জানান, সঙ্গে দৃঢ প্রত্যয়ী মোশাররফ হোসেন এবং তাঁর সহযোগীদের সংগঠনটি নিয়মিতভাবে পরিচালনা করার জন্য ধন্যবাদ জানান।

অনুষ্ঠানের শুরুতে সাংবাদিক সৈয়দ মোহাম্মদ উল্লাহর সঙ্গে সকলে মিলে বর্ষপূর্তির কেক কাটেন। তিনি বলেন, সাহিত্য একাডেমি আমাদের প্রাণের মেলা। সৃজনশীল সকল ক্ষেত্রের মতো লেখালেখিতেও অসাধারণ সব প্রতিভাবান লেখকরা এখন লিখছেন। প্রবাসী লেখক বলে কিছু নেই, সকলে বাংলা সাহিত্যের লেখক। আসরে উপস্থিত সিনিয়র, জুনিয়র সহ অনেক লেখক রয়েছেন যাঁরা বাংলাদেশে থাকলে তাঁদের নাম আরো বেশী উচ্চারিত হতো। প্রবাসে সাহিত্য চর্চায় সাহিত্য একাডেমি যে অবদান রাখছে, সেটি অনন্য এক দৃষ্টান্ত।

সাংবাদিক মঞ্জুর আহমেদ বলেন, ২০০১ সাল থেকে পত্রিকা সম্পাদনা শুরু করে আজ অবধি জড়িত আছি। শুরুর দিকে পত্রিকার জন্য স্থানীয় লেখকদের খুব কম লেখা পেতাম। আজ আনন্দের সঙ্গে জানাই, স্থানীয় লেখকরা কবিতা-গল্প- প্রবন্ধ খুব ভালো লিখছেন। নিউইয়র্কের সাহিত্য অঙ্গন আজ খুব সমৃদ্ধ। সাহিত্য একাডেমিতে উপস্থিত অনেকের লেখা পাই, লেখাগুলো খুবই উন্নতমানের।

লেখক হাসান ফেরদৌস বলেন, আমরা এমন এক সময় উৎসবে মিলিত হয়েছি যখন খুবই দুঃসময়। আমাদের সামনে মানুষ মারা যাচ্ছে পাখীর মতো। গাজায় প্রায় ৬০০০ শিশু মারা গেছে। সাহিত্য একাডেমি এবং সকল লেখকদের পক্ষ হতে যুদ্ধের তীব্র নিন্দা করছি, দাবী করছি অবিলম্বে যুদ্ধ বন্ধ হোক। লেখকের বড় কাজ অন্যের মধ্যে আশা জাগানো। কবিতা মানুষকে বিশ্বাস, আশা যোগায়, পথ দেখায়। আমরা যেন সে কবিতা লিখি যে কবিতা মানুষকে পথ দেখাবে। বিশ্বাস করি সে কবিতা সাহিত্য একাডেমির কেউ লিখবে।

লেখক ফেরদৌস সাজেদীন বলেন, সাহিত্য একাডেমিতে ঢুকে অনেক নক্ষত্র দেখতে পাচ্ছি। আজ আমাদের উৎসবের দিন। গত তেরো বছর ধরে আমরা একে অপরের স্বরচিত পাঠ শুনে, সহযোগীতা করে এখানে পৌঁছেছি। সাহিত্য একাডেমি উম্মুক্ত জায়গা। যে কেউ এখানে আসতে পারে, যোগ দিতে পারে। সাহিত্য একাডেমির বড় গুণ সবাইকে আপন করে নেয়। লেখা এবং লেখা প্রকাশের মধ্যবর্তী সময়টা খুব গুরুত্বপূর্ণ। সাহিত্য একাডেমি লেখকদের ওই মধ্যবর্তী সময়টার যত্ন নেয়।

লেখক আবেদীন কাদের বলেন, তেরো বছর ধরে একটি সাহিত্য সংগঠন চালিয়ে নেয়া সহজ কাজ নয়। সাহিত্য একাডেমি নিয়মিত আসর করছে, এটি অত্যন্ত আনন্দের।

সাপ্তাহিক প্রথম আলো নিউইয়ক-এর সম্পাদক ইব্রাহীম চৌধুরী খোকন বলেন, আসরে উপস্থিত অনেকেই আমার পত্রিকায় লেখেন। এখানে লেখালেখি করে কেউ অর্থ পান না। কঠিন জীবন সংগ্রামের মধ্যেও যে আপনারা লিখছেন সেটাই যথেষ্ট। নিউইয়র্কের সাহিত্যাঙ্গনে সাহিত্য একাডেমি একটি গুরুত্বপূর্ণ সংগঠন, তাঁরা সকলকে একসঙ্গে যুক্ত রাখেন।

লেখক নীরা কাদরী বলেন, কবি শহীদ কাদরীর উৎসাহে আমি সাহিত্য একাডেমির সঙ্গে যুক্ত হয়েছিলাম। সাহিত্য একাডেমির মতো নিয়মিত সাহিত্য আসর এই শহরে আর কোথাও হয় না। সাহিত্য একাডেমির সঙ্গে আছি, এবং থাকব।

নাট্যব্যক্তিত্ব, লেখক রেখা আহমেদ বলেন, সাহিত্য একাডেমি বড়, ছোট সকলকে একসঙ্গে একই জায়গায় যুক্ত করতে পেরেছে, এটি অবশ্যই প্রশংসার দাবী রাখে। মুক্তিযোদ্ধা, লেখক মোহসীন আলী বলেন, ১৯৮৬ সালে প্রথম এই দেশে যখন আসি তখন এমন সাহিত্য আসর ছিল না। আজ সাহিত্য একাডেমির তেরোতম বার্ষিকীতে আসতে পেরে আমি আনন্দিত। সাংবাদিক নিনি ওয়াহেদ বলেন, এখানে নতুনরা অনেক ভালো লিখছে। সাহিত্য একাডেমিতে এসে নতুনদের অসাধারণ স্বরচিত পাঠ শুনে খুব ভালো লাগে। সাহিত্য একাডেমি নতুনদের জন্য লেখালেখির আবহ তৈরি করছে। আশা করি, বাংলা সাহিত্যের লেখক হিসেবে নতুনরা একদিন সুনাম অর্জন করবে।

কবি শামস আল মমীন বলেন, এই শহরে যারা নতুন লিখছে তাদের জন্য সাহিত্য একাডেমি একটি অনুপ্রেরণামূলক প্লাটফর্ম। সাহিত্য সংগঠন নিয়মিত চালানো কঠিন কাজ, সাহিত্য একাডেমি সে কঠিন কাজটি করছে।

লেখক এবিএম সালেহ উদ্দিন বলেন, এমন শীতার্ত সন্ধ্যায় আমরা সাহিত্য একাডেমিতে একসাথ হয়েছি প্রাণের টানে। আমাদের সাহিত্য শুধু কল্পনা নির্ভর না হোক, হোক মানবতার। একদিন হয়ত নিউইয়র্কের সাহিত্যিকদের অন্যরা অনুসরণ করবে।

লেখক আবু সায়ীদ রতন বলেন, সাহিত্য একাডেমিতে এলে আরো ভালো লেখার তাগিদ অনুভব করি। নিউইয়র্ক থেকে প্রকাশিত পত্রিকার সাহিত্য পাতা আলোকিত করে রাখেন সাহিত্য একাডেমির অনেকেই।

লেখক রাণু ফেরদৌস বলেন, সাহিত্য একাডেমিতে আসার পর নিয়মিত কবিতা লিখি, পড়ি। এখানে এসে অন্যের লেখা শুনে অনুপ্রাণিত হই। সাহিত্য একাডেমি একটি পরিবারের মতো।

বাফা’র প্রতিষ্ঠাতা ফরিদা ইয়াসমিন বলেন, একটি সংগঠন নিয়মিত পরিচালনা করা কঠিন কাজ। সাহিত্য একাডেমি হতে আমাদের শেখার আছে। সাহিত্য একাডেমি অনেক দূর এগিয়ে যাক।

লেখক-সাংবাদিক আকবর হায়দার কিরণ বলেন, সাহিত্য একাডেমির শুরু হতে যাঁদের দেখেছি তাঁদের অনেককে আজ দেখে ভালো লাগছে। সাহিত্য একাডেমির এই যাত্রা অব্যাহত থাকুক।

সাংস্কৃতিক ব্যক্তিত্ব শহীদ উদ্দিন বলেন, সাহিত্য বুঝি না, এখানে আসি আমার প্রিয় মানুষরা আসেন, তাই।

লেখক স্বপন বিশ্বাস বলেন, আমি সাধারণত কোন সংগঠনের সঙ্গে জড়িত হই না। সাহিত্য একাডেমিতে এসে মনে হচ্ছে, ভুল করি নাই। যেখানে দু’জন লেখক বন্ধু বেশীদিন একসঙ্গে চলতে পারেন না, সেখানে লেখকের সংগঠন সাহিত্য একাডেমি তেরো বছরে পৌঁছালো কীভাবে, এটি আমার কাছে বিস্ময়!

আবৃত্তিকার আবীর আলমগীর বলেন, তারুণ্যের সময় হতে এই শহরে আছি, অনেক সাহিত্য আসর দেখেছি, কয়েক বছর পর বন্ধ হয়ে গেছে। সেক্ষেত্রে সাহিত্য একাডেমি তেরো বছর পার করছে, তাদের ধন্যবাদ। তিনি কবি বেনজির শিকদারের কবিতা আবৃত্তি করেন।

নাট্যব্যক্তিত্ব এজাজ আলম বলেন, সাহিত্য একাডেমি এগিয়ে যাক স্বমহিমায়। তিনি নবারুণ ভট্টাচার্যের একটি কবিতা পাঠ করেন। আবৃত্তিকার কবির কিরণ বলেন, সাহিত্য একাডেমি আমার কাছে একটা অন্যরকম উদ্দীপনার নাম। যাঁরা লিখছেন আপনারা সবসময় অন্যায়ের বিরুদ্ধে সোচ্চার থাকবেন।

গীতিকার মাহফুজুর রহমান বলেন, আমি এসেছি সাহিত্য একাডেমিকে সমর্থন যোগাতে, সাহস যোগাতে, এটি আমার দায়িত্ব মনে করেছি। ওকলাহোমা থেকে আগত আবৃত্তিকার দিনাত জাহান বলেন, আমার শহরে সাহিত্য চর্চার তেমন সুযোগ নেই। এমন সমৃদ্ধ সাহিত্য আসরে যোগ দিতে পেরে খুশি হয়েছি। তিনি শঙ্খ ঘোষের একটি কবিতা আবৃত্তি করেন।

স্বরচিত পাঠ সহ আরো যাঁরা শুভেচ্ছা জানিয়েছেন তাঁরা হলেন, ধনঞ্জয় সাহা, মৃদুল আহমেদ, পারভীন সুলতানা, তাহমিনা খান, বেনজির শিকদার, ফারহানা হোসেন, লুৎফা শাহানা, নেহার সিদ্দিকী, জেবুন্নেসা জ্যোৎস্না, সুমন শামসুদ্দিন, মনিজা রহমান, শুক্লা রায়, রূপা খানম, আকলিমা রানা চৌধুরী, সুলতানা ফেরদৌসী, ছন্দা বিনতে সুলতান, মিয়া আসকির, শাহ পলাশ, স্বাধীন মজুমদার, পলি শাহীনা প্রমুখ।

আসরে আরো উপস্থিত ছিলেন আহমাদ মাজহার, রাহাত কাজী শিউলি, মিনহাজ আহমেদ, উদিতা আজাদ, সাবিনা হাই উর্বি, তাহরীনা পারভীন প্রীতি, ফরহাদ হোসেন, রওশন আরা নীপা, শহীদুল ইসলাম, আনিস সিদ্দিকী, রেদোয়ান জুয়েল, শাফী মাহমুদ, ইয়াকুস আলী মিঠু, এস এম রোজী, দিনা ফেরদৌস, মাহবুব লীলেন, শাহ আলম প্রমুখ।

নতুন প্রজন্মের আলভান চৌধুরীর সংগীত আসরে উপস্থিত সকলে তন্ময় হয়ে উপভোগ করেন।

Tag :

সোশ্যাল মিডিয়ায় খবরটি শেয়ার করুন

‘সাহিত্য একাডেমি নিউইয়র্ক’র ত্রয়োদশ বছর পূর্ণ

প্রকাশের সময় : ১২:৩২:২৩ পূর্বাহ্ন, রবিবার, ৩ ডিসেম্বর ২০২৩

পলি শাহীনা: সাহিত্যানুরাগীদের ভালোবাসায় সিক্ত হয়ে ‘সাহিত্য একাডেমি নিউইয়র্ক’ গত ২৪ নভেম্বর ত্রয়োদশ বছর পূর্ণ করলো। মানুষের হৃদয়ে তেরো বছর আগে প্রতিষ্ঠানটির বীজ বপন করা হয়। পুরো আসরটি সঞ্চালনায় ছিলেন একাডেমির পরিচালক মোশাররফ হোসেন। তিনি প্রয়াত লেখক মনসুর আলী সহ যাঁরা প্রতিষ্ঠানের শুরু থেকে ছিলেন তাঁদের সবাইকে শ্রদ্ধার সঙ্গে স্মরণ করেন। সাহিত্য একাডেমির রয়েছে পর্বতসদৃশ্য অজস্র ভালোবাসাময় স্মৃতির প্রাচীর। আসরে আগত সকলে সাহিত্য একাডেমিকে ঘিরে প্রাণখুলে স্মৃতি রোমন্থন করেন, শুভেচ্ছা জানান, সঙ্গে দৃঢ প্রত্যয়ী মোশাররফ হোসেন এবং তাঁর সহযোগীদের সংগঠনটি নিয়মিতভাবে পরিচালনা করার জন্য ধন্যবাদ জানান।

অনুষ্ঠানের শুরুতে সাংবাদিক সৈয়দ মোহাম্মদ উল্লাহর সঙ্গে সকলে মিলে বর্ষপূর্তির কেক কাটেন। তিনি বলেন, সাহিত্য একাডেমি আমাদের প্রাণের মেলা। সৃজনশীল সকল ক্ষেত্রের মতো লেখালেখিতেও অসাধারণ সব প্রতিভাবান লেখকরা এখন লিখছেন। প্রবাসী লেখক বলে কিছু নেই, সকলে বাংলা সাহিত্যের লেখক। আসরে উপস্থিত সিনিয়র, জুনিয়র সহ অনেক লেখক রয়েছেন যাঁরা বাংলাদেশে থাকলে তাঁদের নাম আরো বেশী উচ্চারিত হতো। প্রবাসে সাহিত্য চর্চায় সাহিত্য একাডেমি যে অবদান রাখছে, সেটি অনন্য এক দৃষ্টান্ত।

সাংবাদিক মঞ্জুর আহমেদ বলেন, ২০০১ সাল থেকে পত্রিকা সম্পাদনা শুরু করে আজ অবধি জড়িত আছি। শুরুর দিকে পত্রিকার জন্য স্থানীয় লেখকদের খুব কম লেখা পেতাম। আজ আনন্দের সঙ্গে জানাই, স্থানীয় লেখকরা কবিতা-গল্প- প্রবন্ধ খুব ভালো লিখছেন। নিউইয়র্কের সাহিত্য অঙ্গন আজ খুব সমৃদ্ধ। সাহিত্য একাডেমিতে উপস্থিত অনেকের লেখা পাই, লেখাগুলো খুবই উন্নতমানের।

লেখক হাসান ফেরদৌস বলেন, আমরা এমন এক সময় উৎসবে মিলিত হয়েছি যখন খুবই দুঃসময়। আমাদের সামনে মানুষ মারা যাচ্ছে পাখীর মতো। গাজায় প্রায় ৬০০০ শিশু মারা গেছে। সাহিত্য একাডেমি এবং সকল লেখকদের পক্ষ হতে যুদ্ধের তীব্র নিন্দা করছি, দাবী করছি অবিলম্বে যুদ্ধ বন্ধ হোক। লেখকের বড় কাজ অন্যের মধ্যে আশা জাগানো। কবিতা মানুষকে বিশ্বাস, আশা যোগায়, পথ দেখায়। আমরা যেন সে কবিতা লিখি যে কবিতা মানুষকে পথ দেখাবে। বিশ্বাস করি সে কবিতা সাহিত্য একাডেমির কেউ লিখবে।

লেখক ফেরদৌস সাজেদীন বলেন, সাহিত্য একাডেমিতে ঢুকে অনেক নক্ষত্র দেখতে পাচ্ছি। আজ আমাদের উৎসবের দিন। গত তেরো বছর ধরে আমরা একে অপরের স্বরচিত পাঠ শুনে, সহযোগীতা করে এখানে পৌঁছেছি। সাহিত্য একাডেমি উম্মুক্ত জায়গা। যে কেউ এখানে আসতে পারে, যোগ দিতে পারে। সাহিত্য একাডেমির বড় গুণ সবাইকে আপন করে নেয়। লেখা এবং লেখা প্রকাশের মধ্যবর্তী সময়টা খুব গুরুত্বপূর্ণ। সাহিত্য একাডেমি লেখকদের ওই মধ্যবর্তী সময়টার যত্ন নেয়।

লেখক আবেদীন কাদের বলেন, তেরো বছর ধরে একটি সাহিত্য সংগঠন চালিয়ে নেয়া সহজ কাজ নয়। সাহিত্য একাডেমি নিয়মিত আসর করছে, এটি অত্যন্ত আনন্দের।

সাপ্তাহিক প্রথম আলো নিউইয়ক-এর সম্পাদক ইব্রাহীম চৌধুরী খোকন বলেন, আসরে উপস্থিত অনেকেই আমার পত্রিকায় লেখেন। এখানে লেখালেখি করে কেউ অর্থ পান না। কঠিন জীবন সংগ্রামের মধ্যেও যে আপনারা লিখছেন সেটাই যথেষ্ট। নিউইয়র্কের সাহিত্যাঙ্গনে সাহিত্য একাডেমি একটি গুরুত্বপূর্ণ সংগঠন, তাঁরা সকলকে একসঙ্গে যুক্ত রাখেন।

লেখক নীরা কাদরী বলেন, কবি শহীদ কাদরীর উৎসাহে আমি সাহিত্য একাডেমির সঙ্গে যুক্ত হয়েছিলাম। সাহিত্য একাডেমির মতো নিয়মিত সাহিত্য আসর এই শহরে আর কোথাও হয় না। সাহিত্য একাডেমির সঙ্গে আছি, এবং থাকব।

নাট্যব্যক্তিত্ব, লেখক রেখা আহমেদ বলেন, সাহিত্য একাডেমি বড়, ছোট সকলকে একসঙ্গে একই জায়গায় যুক্ত করতে পেরেছে, এটি অবশ্যই প্রশংসার দাবী রাখে। মুক্তিযোদ্ধা, লেখক মোহসীন আলী বলেন, ১৯৮৬ সালে প্রথম এই দেশে যখন আসি তখন এমন সাহিত্য আসর ছিল না। আজ সাহিত্য একাডেমির তেরোতম বার্ষিকীতে আসতে পেরে আমি আনন্দিত। সাংবাদিক নিনি ওয়াহেদ বলেন, এখানে নতুনরা অনেক ভালো লিখছে। সাহিত্য একাডেমিতে এসে নতুনদের অসাধারণ স্বরচিত পাঠ শুনে খুব ভালো লাগে। সাহিত্য একাডেমি নতুনদের জন্য লেখালেখির আবহ তৈরি করছে। আশা করি, বাংলা সাহিত্যের লেখক হিসেবে নতুনরা একদিন সুনাম অর্জন করবে।

কবি শামস আল মমীন বলেন, এই শহরে যারা নতুন লিখছে তাদের জন্য সাহিত্য একাডেমি একটি অনুপ্রেরণামূলক প্লাটফর্ম। সাহিত্য সংগঠন নিয়মিত চালানো কঠিন কাজ, সাহিত্য একাডেমি সে কঠিন কাজটি করছে।

লেখক এবিএম সালেহ উদ্দিন বলেন, এমন শীতার্ত সন্ধ্যায় আমরা সাহিত্য একাডেমিতে একসাথ হয়েছি প্রাণের টানে। আমাদের সাহিত্য শুধু কল্পনা নির্ভর না হোক, হোক মানবতার। একদিন হয়ত নিউইয়র্কের সাহিত্যিকদের অন্যরা অনুসরণ করবে।

লেখক আবু সায়ীদ রতন বলেন, সাহিত্য একাডেমিতে এলে আরো ভালো লেখার তাগিদ অনুভব করি। নিউইয়র্ক থেকে প্রকাশিত পত্রিকার সাহিত্য পাতা আলোকিত করে রাখেন সাহিত্য একাডেমির অনেকেই।

লেখক রাণু ফেরদৌস বলেন, সাহিত্য একাডেমিতে আসার পর নিয়মিত কবিতা লিখি, পড়ি। এখানে এসে অন্যের লেখা শুনে অনুপ্রাণিত হই। সাহিত্য একাডেমি একটি পরিবারের মতো।

বাফা’র প্রতিষ্ঠাতা ফরিদা ইয়াসমিন বলেন, একটি সংগঠন নিয়মিত পরিচালনা করা কঠিন কাজ। সাহিত্য একাডেমি হতে আমাদের শেখার আছে। সাহিত্য একাডেমি অনেক দূর এগিয়ে যাক।

লেখক-সাংবাদিক আকবর হায়দার কিরণ বলেন, সাহিত্য একাডেমির শুরু হতে যাঁদের দেখেছি তাঁদের অনেককে আজ দেখে ভালো লাগছে। সাহিত্য একাডেমির এই যাত্রা অব্যাহত থাকুক।

সাংস্কৃতিক ব্যক্তিত্ব শহীদ উদ্দিন বলেন, সাহিত্য বুঝি না, এখানে আসি আমার প্রিয় মানুষরা আসেন, তাই।

লেখক স্বপন বিশ্বাস বলেন, আমি সাধারণত কোন সংগঠনের সঙ্গে জড়িত হই না। সাহিত্য একাডেমিতে এসে মনে হচ্ছে, ভুল করি নাই। যেখানে দু’জন লেখক বন্ধু বেশীদিন একসঙ্গে চলতে পারেন না, সেখানে লেখকের সংগঠন সাহিত্য একাডেমি তেরো বছরে পৌঁছালো কীভাবে, এটি আমার কাছে বিস্ময়!

আবৃত্তিকার আবীর আলমগীর বলেন, তারুণ্যের সময় হতে এই শহরে আছি, অনেক সাহিত্য আসর দেখেছি, কয়েক বছর পর বন্ধ হয়ে গেছে। সেক্ষেত্রে সাহিত্য একাডেমি তেরো বছর পার করছে, তাদের ধন্যবাদ। তিনি কবি বেনজির শিকদারের কবিতা আবৃত্তি করেন।

নাট্যব্যক্তিত্ব এজাজ আলম বলেন, সাহিত্য একাডেমি এগিয়ে যাক স্বমহিমায়। তিনি নবারুণ ভট্টাচার্যের একটি কবিতা পাঠ করেন। আবৃত্তিকার কবির কিরণ বলেন, সাহিত্য একাডেমি আমার কাছে একটা অন্যরকম উদ্দীপনার নাম। যাঁরা লিখছেন আপনারা সবসময় অন্যায়ের বিরুদ্ধে সোচ্চার থাকবেন।

গীতিকার মাহফুজুর রহমান বলেন, আমি এসেছি সাহিত্য একাডেমিকে সমর্থন যোগাতে, সাহস যোগাতে, এটি আমার দায়িত্ব মনে করেছি। ওকলাহোমা থেকে আগত আবৃত্তিকার দিনাত জাহান বলেন, আমার শহরে সাহিত্য চর্চার তেমন সুযোগ নেই। এমন সমৃদ্ধ সাহিত্য আসরে যোগ দিতে পেরে খুশি হয়েছি। তিনি শঙ্খ ঘোষের একটি কবিতা আবৃত্তি করেন।

স্বরচিত পাঠ সহ আরো যাঁরা শুভেচ্ছা জানিয়েছেন তাঁরা হলেন, ধনঞ্জয় সাহা, মৃদুল আহমেদ, পারভীন সুলতানা, তাহমিনা খান, বেনজির শিকদার, ফারহানা হোসেন, লুৎফা শাহানা, নেহার সিদ্দিকী, জেবুন্নেসা জ্যোৎস্না, সুমন শামসুদ্দিন, মনিজা রহমান, শুক্লা রায়, রূপা খানম, আকলিমা রানা চৌধুরী, সুলতানা ফেরদৌসী, ছন্দা বিনতে সুলতান, মিয়া আসকির, শাহ পলাশ, স্বাধীন মজুমদার, পলি শাহীনা প্রমুখ।

আসরে আরো উপস্থিত ছিলেন আহমাদ মাজহার, রাহাত কাজী শিউলি, মিনহাজ আহমেদ, উদিতা আজাদ, সাবিনা হাই উর্বি, তাহরীনা পারভীন প্রীতি, ফরহাদ হোসেন, রওশন আরা নীপা, শহীদুল ইসলাম, আনিস সিদ্দিকী, রেদোয়ান জুয়েল, শাফী মাহমুদ, ইয়াকুস আলী মিঠু, এস এম রোজী, দিনা ফেরদৌস, মাহবুব লীলেন, শাহ আলম প্রমুখ।

নতুন প্রজন্মের আলভান চৌধুরীর সংগীত আসরে উপস্থিত সকলে তন্ময় হয়ে উপভোগ করেন।