নিউইয়র্ক ০৯:১৭ পূর্বাহ্ন, বৃহস্পতিবার, ২০ নভেম্বর ২০২৫, ৬ অগ্রহায়ণ ১৪৩২ বঙ্গাব্দ
বিজ্ঞাপন :
মঙ্গলবারের পত্রিকা সাপ্তাহিক হককথা ও হককথা.কম এ আপনার প্রতিষ্ঠানের বিজ্ঞাপন দিতে যোগাযোগ করুন +1 (347) 848-3834

টেক্সাসে আবিরের স্বপ্নের ইতি ঘটলো দুর্বৃত্তের গুলিতে

রিপোর্ট:
  • প্রকাশের সময় : ০৮:৩৩:০০ পূর্বাহ্ন, মঙ্গলবার, ২ জানুয়ারী ২০২৪
  • / ১১২ বার পঠিত

যুক্তরাষ্ট্রের লামার বিশ্ববিদ্যালয়ের গবেষণা সহকারী শেখ আবির হোসেনের (৩৪) সকল স্বপ্নের ইতি ঘটলো দুর্বৃত্তের গুলিতে। পৃথিবীর অর্ধেকটা পথ পারি দিয়ে আবির এসেছিলেন এক উজ্জ্বল ভবিষ্যত গড়ার স্বপ্নে। লেখাপড়ার পাশাপাশি কাজ করছিলেন একটি দোকানে, হয়তো জীবনটাকে আরও একটু ভালোভাবে পরিচালনার জন্য। স্ত্রী-সন্তান নিয়ে এদেশে এসে সেই সংগ্রামটিই করে যাচ্ছিলেন যা তাকে হয়তো দিতে পারতো আরও সুখের জীবনের সন্ধান। কিন্তু সকল স্বপ্ন শেষ হলো, দুর্বৃত্তের গুলিতে। আবিরের দেশের বাড়ী বাংলাদেশের সাতক্ষীরা।

টেক্সাসের ক্রিস ফুড মার্ট নামের যে দোকানটিতে আবির কাজ করতেন সেখানেই ঘটে এই ঘটনা। দোকানটির মালিক একজন বাংলাদেশী। গত ২৯ ডিসেম্বর শুক্রবার রাত তখন ১০টার দিকে দুই দুর্বৃত্ত দোকানটিতে ঢোকে। এবং সিগারেট চুরি করে পালিয়ে যাওয়ার চেষ্টা করে। তখন আবির তাদের বাধা দেয়ার চেষ্টা করলে একজন গুলি চালায়। তার মাথায় ও বুকে গুলি লাগে। স্থানীয় টিভি চ্যানেল কেএফডিএম’র খবরে বলা হয়, পুলিশ ঘটনাস্থলে পৌঁছে আবিরকে মৃত অবস্থায় দেখতে পায়।

আবিরের পরিচিত টেক্সাসে একটি বিশ্ববিদ্যালয়ের বাংলাদেশী শিক্ষক ড. রাকিবুল ইসলাম জানান, ঘটনাস্থলে অন্য কেউ ছিলেন না, তবে পুলিশের কাছ থেকে তারাও একই কথা জেনেছেন। এ ঘটনায় পুলিশ ১৯ বছরের এক যুবককে গ্রেপ্তার করেছে এবং সন্দেহভাজন অপর একজনকে খুঁজছে বলে জানানো হয়েছে কেএফডিএম’র খবরে।

আবিরের স্ত্রী সানজিদা আলম তাদের একমাত্র শিশুকন্যা আরশিয়াকে (২) নিয়ে নিউইয়র্কে তার মা-বাবার সঙ্গে বাস করেন। আবির থাকতেন টেক্সাসের বিউমন্টে। স্বামীর মৃত্যুর খবর জেনে সানজিদা আলম নিউইয়র্ক থেকে টেক্সাস ছুটে গেছেন।

আবিরের মরদেহ কিভাবে দেশে নেওয়া যেতে পারে এ প্রসঙ্গে ড. রকিবুল জানান, তারা সব ধরনের যোগাযোগ সম্পন্ন করেছেন। প্রক্রিয়া চলমান রয়েছে। মঙ্গলবার (২ জানুয়ারী) এ ব্যাপারে আটডেট জানা যাবে। ওই দিন বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাসে জানাজা রয়েছে। তখনই নিশ্চিত হওয়া যাবে কবে নাগাদ আবীরের মরদেহ দেশে পাঠানো সম্ভব।

ড. রকিবুল জানান, এ জন্য তারা একটি তহবিল সংগ্রহের চেষ্টা করছেন। এবং টেক্সাসে বাংলাদেশী কমিউনিটির পক্ষ থেকে ভালো সাড়া পাচ্ছেন এবং সহযোগিতা পাচ্ছেন।
ওদিকে সাতক্ষীরায় আবীরের মা অপেক্ষায় রয়েছেন কবে দেশে নেওয়া হবে তার সন্তানের মরদেহ। কাঁদতে কাঁদতে তিনি নিজেই অসুস্থ হয়ে পড়েছেন। ছেলের মুখটি না দেখে তিনি মরতে চান না, এমন আকুতি করছেন মা আনজুয়ারা বেগম।

যুক্তরাষ্ট্রে পারি দেওয়ার আগে ২০১৪ সালে শেখ আবির হোসেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সমাজকল্যাণ বিভাগ থেকে প্রথম শ্রেণিতে দ্বিতীয় হয়ে স্নাতকোত্তর পাস করেন। এরপর ব্র্যাক বিশ্ববিদ্যালয়ে গবেষক হিসেবে কাজ শুরু করেন। সেখান থেকে অতীশ দীপঙ্কর বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ে খন্ডকালীন শিক্ষক ছিলেন। ২০২২ সালের ৩০ ডিসেম্বর বৃত্তি নিয়ে যুক্তরাষ্ট্রে আসেন তিনি।

ঢাবি শিক্ষক শাহিন শনিবার বিকেলে এক ফেসবুক পোস্টে লেখেন, ‘হতাশা থেকে আবির উচ্চশিক্ষা ও সুন্দর ভবিষ্যতের জন্য যুক্তরাষ্ট্রে গেছেন। কিন্তু তার স্বপ্ন এখন ভেঙ্গে গেছে। একজন আততায়ী তার প্রাণ কেড়ে নেয়। আমরা সত্যিকারের একজন বিনয়ী, সদালাপী এবং মেধাবী ছাত্রকে হারালাম’।

বন্দুক সহিংসতা আর্কাইভ অনুসারে, গত ৭ ডিসেম্বর পর্যন্ত, বিদায়ী বছর ২০২৩ সালে যুক্তরাষ্ট্রে বন্দুক সহিংসতায় কমপক্ষে ৪০ হাজার ১৪৭ জন মারা গেছে। সেই হিসেবে বন্দুক সহিংসতায় যুক্তরাষ্ট্রে প্রতিদিন গড়ে প্রায় ১১৮ জন মৃত্যু হয় বলে জানা গেছে।

Tag :

সোশ্যাল মিডিয়ায় খবরটি শেয়ার করুন

টেক্সাসে আবিরের স্বপ্নের ইতি ঘটলো দুর্বৃত্তের গুলিতে

প্রকাশের সময় : ০৮:৩৩:০০ পূর্বাহ্ন, মঙ্গলবার, ২ জানুয়ারী ২০২৪

যুক্তরাষ্ট্রের লামার বিশ্ববিদ্যালয়ের গবেষণা সহকারী শেখ আবির হোসেনের (৩৪) সকল স্বপ্নের ইতি ঘটলো দুর্বৃত্তের গুলিতে। পৃথিবীর অর্ধেকটা পথ পারি দিয়ে আবির এসেছিলেন এক উজ্জ্বল ভবিষ্যত গড়ার স্বপ্নে। লেখাপড়ার পাশাপাশি কাজ করছিলেন একটি দোকানে, হয়তো জীবনটাকে আরও একটু ভালোভাবে পরিচালনার জন্য। স্ত্রী-সন্তান নিয়ে এদেশে এসে সেই সংগ্রামটিই করে যাচ্ছিলেন যা তাকে হয়তো দিতে পারতো আরও সুখের জীবনের সন্ধান। কিন্তু সকল স্বপ্ন শেষ হলো, দুর্বৃত্তের গুলিতে। আবিরের দেশের বাড়ী বাংলাদেশের সাতক্ষীরা।

টেক্সাসের ক্রিস ফুড মার্ট নামের যে দোকানটিতে আবির কাজ করতেন সেখানেই ঘটে এই ঘটনা। দোকানটির মালিক একজন বাংলাদেশী। গত ২৯ ডিসেম্বর শুক্রবার রাত তখন ১০টার দিকে দুই দুর্বৃত্ত দোকানটিতে ঢোকে। এবং সিগারেট চুরি করে পালিয়ে যাওয়ার চেষ্টা করে। তখন আবির তাদের বাধা দেয়ার চেষ্টা করলে একজন গুলি চালায়। তার মাথায় ও বুকে গুলি লাগে। স্থানীয় টিভি চ্যানেল কেএফডিএম’র খবরে বলা হয়, পুলিশ ঘটনাস্থলে পৌঁছে আবিরকে মৃত অবস্থায় দেখতে পায়।

আবিরের পরিচিত টেক্সাসে একটি বিশ্ববিদ্যালয়ের বাংলাদেশী শিক্ষক ড. রাকিবুল ইসলাম জানান, ঘটনাস্থলে অন্য কেউ ছিলেন না, তবে পুলিশের কাছ থেকে তারাও একই কথা জেনেছেন। এ ঘটনায় পুলিশ ১৯ বছরের এক যুবককে গ্রেপ্তার করেছে এবং সন্দেহভাজন অপর একজনকে খুঁজছে বলে জানানো হয়েছে কেএফডিএম’র খবরে।

আবিরের স্ত্রী সানজিদা আলম তাদের একমাত্র শিশুকন্যা আরশিয়াকে (২) নিয়ে নিউইয়র্কে তার মা-বাবার সঙ্গে বাস করেন। আবির থাকতেন টেক্সাসের বিউমন্টে। স্বামীর মৃত্যুর খবর জেনে সানজিদা আলম নিউইয়র্ক থেকে টেক্সাস ছুটে গেছেন।

আবিরের মরদেহ কিভাবে দেশে নেওয়া যেতে পারে এ প্রসঙ্গে ড. রকিবুল জানান, তারা সব ধরনের যোগাযোগ সম্পন্ন করেছেন। প্রক্রিয়া চলমান রয়েছে। মঙ্গলবার (২ জানুয়ারী) এ ব্যাপারে আটডেট জানা যাবে। ওই দিন বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাসে জানাজা রয়েছে। তখনই নিশ্চিত হওয়া যাবে কবে নাগাদ আবীরের মরদেহ দেশে পাঠানো সম্ভব।

ড. রকিবুল জানান, এ জন্য তারা একটি তহবিল সংগ্রহের চেষ্টা করছেন। এবং টেক্সাসে বাংলাদেশী কমিউনিটির পক্ষ থেকে ভালো সাড়া পাচ্ছেন এবং সহযোগিতা পাচ্ছেন।
ওদিকে সাতক্ষীরায় আবীরের মা অপেক্ষায় রয়েছেন কবে দেশে নেওয়া হবে তার সন্তানের মরদেহ। কাঁদতে কাঁদতে তিনি নিজেই অসুস্থ হয়ে পড়েছেন। ছেলের মুখটি না দেখে তিনি মরতে চান না, এমন আকুতি করছেন মা আনজুয়ারা বেগম।

যুক্তরাষ্ট্রে পারি দেওয়ার আগে ২০১৪ সালে শেখ আবির হোসেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সমাজকল্যাণ বিভাগ থেকে প্রথম শ্রেণিতে দ্বিতীয় হয়ে স্নাতকোত্তর পাস করেন। এরপর ব্র্যাক বিশ্ববিদ্যালয়ে গবেষক হিসেবে কাজ শুরু করেন। সেখান থেকে অতীশ দীপঙ্কর বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ে খন্ডকালীন শিক্ষক ছিলেন। ২০২২ সালের ৩০ ডিসেম্বর বৃত্তি নিয়ে যুক্তরাষ্ট্রে আসেন তিনি।

ঢাবি শিক্ষক শাহিন শনিবার বিকেলে এক ফেসবুক পোস্টে লেখেন, ‘হতাশা থেকে আবির উচ্চশিক্ষা ও সুন্দর ভবিষ্যতের জন্য যুক্তরাষ্ট্রে গেছেন। কিন্তু তার স্বপ্ন এখন ভেঙ্গে গেছে। একজন আততায়ী তার প্রাণ কেড়ে নেয়। আমরা সত্যিকারের একজন বিনয়ী, সদালাপী এবং মেধাবী ছাত্রকে হারালাম’।

বন্দুক সহিংসতা আর্কাইভ অনুসারে, গত ৭ ডিসেম্বর পর্যন্ত, বিদায়ী বছর ২০২৩ সালে যুক্তরাষ্ট্রে বন্দুক সহিংসতায় কমপক্ষে ৪০ হাজার ১৪৭ জন মারা গেছে। সেই হিসেবে বন্দুক সহিংসতায় যুক্তরাষ্ট্রে প্রতিদিন গড়ে প্রায় ১১৮ জন মৃত্যু হয় বলে জানা গেছে।