৭১ সালেই বাংলাদেশ ভারতের কাছে বিক্রি হয়ে গেছে : আবু জাফর মাহমুদ
- প্রকাশের সময় : ০৭:৪৯:৪১ পূর্বাহ্ন, মঙ্গলবার, ৯ জানুয়ারী ২০২৪
- / ৯২ বার পঠিত
নিউইয়র্কে ব্যতিক্রমী আয়োজনে স্মরণ হলেন বাংলাদেশের অন্যতম রূপকার ও জাসদের আধ্যাত্মিক নেতা সিরাজুল আলম খান। তাঁর ৮৩তম জন্মদিবস পালন উপলক্ষ্যে শনিবার (৬ জানুয়ারী) সন্ধ্যায় পিপল ইউনাইটেড ফর প্রোগ্রেস (পিপল আপ) আয়োজিত এক আলোচনা সভার আয়োজন করে। এতে সভাপতিত্ব করেন বীর মুক্তিযোদ্ধা, নিউইয়র্কের বাংলাদেশী কমিউনিটিতে হোমকেয়ার সার্ভিসের অগ্রদূত, বিশিষ্ট সমাজসেবী স্যার ড. আবু জাফর মাহমুদ। জ্যাকসন হাইটস্থ বাংলা সিডিপ্যাপ ও আলেগ্রা হোম কেয়ারের করপোরেট অফিসে আয়োজিত সভায় আরও বক্তব্য রাখেন প্রবীন সাংবাদিক মঈনুদ্দিন নাসের, সাপ্তাহিক পরিচয় সম্পাদক নাজমুল আহসান, সাপ্তাহিক বাংলাদেশ সম্পাদক ডা. ওয়াজেদ এ খান, সাপ্তাহিক বাংলা পত্রিকা ও টাইম টিভির সিইও আবু তাহের, সাপ্তাহিক প্রথম আলোর সম্পাদক ইব্রাহিম চৌধুরী খোকন, বিশিষ্ট সাংবাদিক সালাহউদ্দিন, নিউইয়র্ক বাংলাদেশ প্রেসক্লাবের সাধারণ সম্পাদক মমিনুল ইসলাম মজুমদার, সিনিয়র আইনজীবি শেখ আখতারুল ইসলাম, যুক্তরাষ্ট্র জাসদ নেতা হাজি আনোয়ার হোসেন লিটন, যুক্তরাষ্ট্র জাগপা’র সভাপতি রহমত উল্লাহ, কমিউনিটি অ্যাক্টিভিষ্ট রফিক উল্লাহ ও সাংবাদিক মাহবুবুর রহমান। অনুষ্ঠানটি পরিচালনা করেন সাংবাদিক আদিত্য শাহিন।
অনুষ্ঠানে আবু জাফর মাহমুদ সংক্ষেপে বাংলাদেশের স্বাধীনতার ইতিহাস তুলে ধরে বলেন, একাত্তুরে বঙ্গবন্ধু পাকিস্তানে আটক ছিলেন। তিনি যুদ্ধ দেখেননি। যার সাথে যুদ্ধকালীন সময়ের সম্পর্ক নেই। কিন্তু সেই সময়ে তিনিই ছিলেন আমাদের মধ্যে সবচেয়ে প্রভাবশালী নেতা। স্বাধীনতার পর তাঁকে সাধারণ মানুষ, মুক্তিযুদ্ধের সংগঠক, মুক্তিযাদ্ধা ও ছাত্রনেতাদের কাছ থেকে তাকে বিচ্ছিন্ন করে ফেলা হয়। শ্লোগান দেয়া হয়, ‘এক নেতা এক দেশ, বঙ্গবন্ধু বাংলাদেশ’। এই শ্লোগানই বাংলাদেশে রাজনীতির পরাজয় এনেছে। যে দেশ জন্ম দিলাম- সেখানে একজন নেতা থাকবে, আর কোন নেতা থাকবে না, কাউকে স্বীকার করা হবে না। যারা বিরোধীতা করবে তাদের বিরুদ্ধে রক্ষবাহিনী ও গুন্ডাবাহিনী লেলিয়ে দেয়া হলো। তখন আর বাংলাদেশ থাকে না। ৯ মাসের যুদ্ধে ছাত্র জনতার চেতনার যে পরিবর্তন এসেছিল পাকিস্তানে আটক সে নেতার বুঝবার কথা নয়। তিনি বাংলাদেশের অন্যতম রূপকার ও জাসদের আধ্যাত্মিক নেতা সিরাজুল আলম খানের প্রতি গভীর শ্রদ্ধা জানিয়ে বলেন, তিনি স্বাধীনতার পর দেশ গঠনে বঙ্গবন্ধুকে ২৫টি দফা দিয়েছিলেন। কিন্তু বঙ্গবন্ধু তা কর্ণপাত করেন নি।
আবু জাফর মাহমুদ বলেন, ৭১ সালেই বাংলাদেশ ভারতের কাছে বিক্রি হয়ে গেছে। এ সংক্রান্ত কাগজটি অস্থায়ী রাষ্ট্রপতি সৈয়দ নজরুল ইসলাম না পড়েই স্বাক্ষর করে প্রধানমন্ত্রী তাজউদ্দীন আহমদের হাতে দিয়েছিলেন। পরবর্তীতে যখন পড়েছিলেন, তখন চেয়ার থেকে তিনি পড়ে গিয়েছিলেন। এটি আমার কথা নয়। মরহুম স্পীকার হুমায়ুন রশীদ চৌধুরীর লেখা বইয়ে এই তথ্য রয়েছে। হুমায়ুন রশীদ চৌধুরী ৭১ সালে দিল্লীতে কুটনীতিক হিসেবে দায়িত্ব পালন করতেন।
আবু জাফর মাহমুদ বলেন, সিরাজুল আলম খানের সাথে সাক্ষাতে আমি একটি প্রশ্ন করেছিলাম। জানতে চেয়েছিলাম, বাংলাদেশ জন্ম হবার আগেই দেশটি বিক্রি হয়ে গেল। আপনিতো জানতেন। তখনতো আপনিও ভারতে ছিলেন। কোন প্রতিক্রিয়া দেখাননি কেন? তিনি জবাবে বলেছিলেন, আরও অনেকেই ফ্যাক্টর ছিলেন। তিনি আর এ বিষয়ে এগুননি।
তিনি আরো বলেন, এর প্রমান মেলে নির্বাচনের ২ দিন আগে পররাষ্ট্র সচিবের বক্তব্যে। তিনি সাংবাদিকদের জানিয়েছেন, ভারতের চাপে ৭ জানুয়ারীর নির্বাচন করতে হচ্ছে। তা’হলে রাষ্ট্রটি এখন কার? বুঝতে হবে। নির্বাচনের নমিনেশন দেয় ভারত, সেনা প্রধানের নাম আসে ওখান থেকে, কার কোথায় বদলি হবে তার তালিকা আসে ওপার থেকে। তাহলে এটা কি আমাদের বাংলাদেশ?
বাংলাদেশের নির্বাচন প্রসঙ্গে জাফর মাহমুদ বলেন, আওয়ামী লীগ প্রাচীন একটি বড় সংগঠন। তার প্রধান দলটিকে ৩ ভাগে ভাগ করে ফেললেন। একজনকে আরেকজনের মুখোমুখি করে দিলেন। নৌকা, ট্রাক ও ঈগলে তাদের তুলে দিলেন। নেতা কর্মীদের লুটতরাজে অভ্যস্থ করলেন। যাদের ব্যবসা নেই, কাজ নেই তাদের বানিয়ে দিলেন মিলিয়নিয়ার। দলটিকে একটি বিকলাঙ্গ দলে পরিনত করতে যাচ্ছেন।
সিরাজুল আলম খান প্রসঙ্গে আবু জাফর মাহমুদ বলেন, সিরাজুল আলম খান মনে করতেন তার জীবনটা জাতির জন্য নিবেদিত। তিনিই ছিলেন আমার চেতনার প্রথম প্রেরণা। আমাদের রাজনৈতিক নেতারা যা বলেন, সেটার আলোকে আমরা সব করতে অভ্যস্থ। কিন্তু আমি ব্যক্তিগতভাবে তার বিপরীতে চলি। রাজনৈতিক দল গড়ে নেতারা যে সুবিধা ভোগ করেন, ক্ষমতা ভোগ করেন এসবের কিছুই সিরাজুল আলম খানকে স্পর্শ করেনি। তার ওপর কোন রাজনৈতিক প্রভু ছিল না।
অনুষ্ঠানের অন্যান্য বক্তারা সিরাজুল আলম খানের প্রতি শ্রদ্ধা জানিয়ে বলেন, দেশের স্বাধীনতার ইতিহাস বিকৃত করা হচ্ছে আর গুণীজনরা সম্মানিত হচ্ছেন না বলেই বাংলাদেশের জনগণ স্বাধীনতার সুফল পাচ্ছেন না। বক্তারা দলমতের উর্দ্বে উঠে জাতীয় নেতাদের সম্মান জানানোর উপর গুরুত্বারোপ করেন।
অনুষ্ঠানের শুরুতেই সিরাজুল আলম খানের প্রতি শ্রদ্ধা জানিয়ে কেক কাটা হয়। এসময় নিউইয়র্ক বাংলাদেশ প্রেসক্লাবের সভাপতি মনোয়ারুল ইসলাম, সাপ্তাহিক প্রবাস সম্পাদক মোহাম্মদ সাইদ ও আমেরিকা বাংলাদেশ প্রেসক্লাবের সাধারণ সম্পাদক মঞ্জুরুল ইসলাম সহ কমিউনিটির বিশিষ্ট ব্যক্তিবর্গ উপস্থিত ছিলেন।

















