নিউইয়র্ক ০৯:২৩ পূর্বাহ্ন, বৃহস্পতিবার, ২০ নভেম্বর ২০২৫, ৬ অগ্রহায়ণ ১৪৩২ বঙ্গাব্দ
বিজ্ঞাপন :
মঙ্গলবারের পত্রিকা সাপ্তাহিক হককথা ও হককথা.কম এ আপনার প্রতিষ্ঠানের বিজ্ঞাপন দিতে যোগাযোগ করুন +1 (347) 848-3834

আওয়ামী লীগ প্রতিশ্রুত ‘সংখ্যালঘু সুরক্ষা আইন’ পাশের দাবী

রিপোর্ট:
  • প্রকাশের সময় : ১০:৫৩:৩১ পূর্বাহ্ন, শনিবার, ৬ জানুয়ারী ২০২৪
  • / ৮১ বার পঠিত

ইউএনএ,নিউইয়র্ক:  যুক্তরাষ্ট্র হিন্দু বৌদ্ধ খ্রিষ্টান ঐক্য পরিষদ অয়োজিত বাংলাদেশের ‘দ্বাদশ সংসদ নির্বাচনে সংখ্যালঘু নাগরিকদের নিরাপত্তা’ শীর্ষক এক সংবাদ সম্মেলনে নির্বাচনের সময় কিংবা তৎপরবর্তীকালে ২০০১ সালের অক্টোবর মাসের মত সম্ভাব্য সংখ্যালঘু বিরোধী সন্ত্রাস ঠেকানো এবং ত্বরিৎ গতিতে মোকাবেলার জন্য অগ্রীম ব্যবস্থা গ্রহন করতে সরকারের প্রতি দাবী জানানো হয়েছে। সংবাদ সম্মেলনে ঐক্য পরিষদ নেতৃবৃন্দ বলেন, স্বাধীনতার পর থেকেই বাংলাদেশে সংখ্যালঘুরা নিপিড়ীত-নির্যাতিত হয়ে আসছে। হিন্দুরা আওয়ামী লীগের ভোট ব্যাংক হিসেবে জনশ্রুতি থাকলেও দেশের সকল সরকার সংখ্যালঘুদের প্রতি একই আচরণ করেছে। নেতৃবৃন্দ বলেন, আমরা স্বাধীনতার চেতনায় বিশ্বাস করি বলেই আওয়ামী লীগকে ভোট দেই, বিএনপি স্বাধীনতার চেতনার পক্ষে নিশ্চিত করলে আমরাও বিএনপিকে ভোট দেবো। নেতৃবৃন্দ ৭ জানুয়ারীর জাতীয় নির্বাচনে সংখ্যালঘুদের উপর নির্যাতনকারী প্রার্থীদের ভোট না দেওয়ার জন্য সংশ্লিষ্ট এলাকার ভোটারদের প্রতি আহ্বান জানান। খবর ইউএনএ’র।

সিটির জ্যাকসন হাইটসের একটি মিলনায়তনে গত রোববার (৩১ ডিসেম্ব) দুপুর আয়োজিত এই সংবাদ সম্মেলনে সভাপতিত্ব করেন যুক্তরাষ্ট্র হিন্দু বৌদ্ধ খ্রিষ্টান ঐক্য পরিষদ-এর অন্যতম সভাপতি অধ্যাপক নবেন্দু দত্ত। পরিষদের সাধারণ সম্পাদক ডক্টর দ্বিজেন ভট্টাচার্যের পরিচালনায় সংবাদ সম্মেলনে স্বাগত বক্তব্য রাখেন অধ্যাপক নবেন্দু দত্ত এবং লিখিত বক্তব্য পাঠ করেন সংগঠনের যুগ্ম সম্পাদক বিষ্ণু গোপ।

প্রশ্নোত্তর পর্বে সাংবাদিকদের বিভিন্ন প্রশ্নের উত্তর দেন নবেন্দু দত্ত, শিতাংশু গুহ, ডক্টর দ্বিজেন ভট্টাচার্য, রীণা সাহা ও ডক্টর দিলীপ নাথ। এসময় সংগঠনের অন্য সভাপতি ডাক্তার টমাস দুলু রায় ও সুশীল সাহা মঞ্চে উপবিষ্ট ছিলেন।

সাংবাদিকদের প্রশ্নের উত্তরে নেতৃবৃন্দ বলেন, সংখ্যালঘুদের সমস্যা মোকাবেলা করার সর্বোত্তম পথ হচ্ছে এই মুহূর্ত্তে দেশের নির্বাচন কমিশন সহ সরকারের সকল প্রশাসন, দেশের সকল রাজনৈতিক দলের প্রধান ও সচেতন নাগরিকদের সম্পৃক্ত করে সম্ভাব্য সংখ্যালঘু বিরোধী সন্ত্রাসী আক্রমণ ঠেকাতে আগাম প্রস্তুতি নেওয়া এবং কোন দুর্ঘটনা ঘটে গেলে সেটা ত্বরিৎ গতিতে মোকাবেলার মূল দায়িত্বটা র‌্যাব, বিজিবি ও সেনাবাহিনীর ওপর ন্যাস্ত করা।এক প্রশ্নের উত্তরে নেতৃবৃন্দ বলেন, সংখ্যালঘুদের সমস্যার সমাধান নির্ভর করছে সরকারের সদিচ্ছার ওপর। সরকার যদি যুক্তরাষ্ট্রের মত হেইট ক্রাইম ও স্পীচ আইন অন্তর্ভুক্ত করে একটি কঠোর মইনোরিটি অ্য্যক্ট প্রনয়ণ করে এবং সংখ্যালঘু নির্যাতকদের বিচার প্রক্রিয়া শুরু করে, তা’হলে সাম্প্রদায়িক শক্তি সংখ্যালঘু নাগরিকদের নির্যাতন করার দু:সাহস করবে না। তারা বলেন, এটা সম্ভব হতে পারে শুধু যদি প্রগতিশীল মুসলমানরা সরকারের ওপর চাপ সৃষ্টি করেন। পাশাপাশি নেতৃবৃন্দ আওয়ামী লীগ প্রতিশ্রুত ‘সংখ্যালঘু সুরক্ষা আইন ’পাশেরও দাবী জানান।

সংবাদ সম্মেলনে পঠিত বক্তব্যে বলা হয়: নুতন বছরের শুরুর প্রাক্কালে আমরা আবারও আপনাদের শরণাপন্ন হয়েছি, কারণ ৭ জানুয়ারী ২০২৪, আমাদের মাতৃভূমি বাংলাদেশে অনুষ্ঠেয় দ্বাদশ সংসদীয় নির্বাচন ও তৎপরবর্তী সময়ে দেশে আমাদের আত্মীয় স্বজনদের নিরাপত্তা নিয়ে আমারা শঙ্কিত। যুক্তরাষ্ট্র ঐক্য পরিষদ এই নির্বাচনটি ‘সুষ্ঠু ও অবাধ’ হবে বলে আশা প্রকাশ করছে; তবে, বাংলাদেশে নির্বাচন মানেই তো সংখ্যালঘু সম্প্রদায়ের ওপর আরেক দফা পৈশাচিক নির্যাতন। অতীতের বারবার তিক্ত অভিজ্ঞতার কারণে, এমনতর ঘটনার পুনরাবৃত্তি রোধে আগাম ব্যবস্থা গ্রহন করার জন্য যুক্তরাষ্ট্র ঐক্য পরিষদ আপনাদের মাধ্যমে দেশের সংশ্লিষ্ট সকল মহলের প্রতি আহবান জানাচ্ছে। কেন্দ্রীয় ঐক্য পরিষদ সংবাদ সম্মেলন করে এব্যাপারে উদ্বেগ প্রকাশ করেছে এবং নির্বাচনের পরেও তিন সপ্তাহ সেনা-সদস্যদের মাঠে রাখার দাবী জানিয়েছে। আমরা ঐ দাবীর প্রতিও পূর্ণ সমর্থন জানাচ্ছি।পঠিত বক্তব্যে বলা হয়: ২০০১-এর নির্বাচনের আগে-পরে সংখ্যালঘু নির্যাতনের করুন কাহিনী একটু স্মরণ করতে অনুরোধ করি। স্মর্তব্য যে, ঐসব নারকীয় ঘটনার হোতাদের কিন্ত বিচার হয়নি আজও। ২০১২ সালে রামু থেকে ২০২১-এ কুমিল্লায় সংখ্যালঘু নির্যাতনের বীভৎস ঘটনাবলী, ডিজিটাল সিকিউরিটি আইনে নিরপরাধ সংখ্যালঘুদের বিরুদ্ধে ধর্ম-অবমাননার মিথ্যা অজুহাতে কারারুদ্ধ করার নিষ্ঠুরতা আমাদের জন্য সতত: কষ্ট প্রদায়ী। এরই মধ্যে আরেকটি জাতীয় নির্বাচন সমাসন্ন। ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগ এবং জাতীয় পার্টি ঐক্য পরিষদের দাবি অগ্রাহ্য করে বেশ কয়েকজন অভিযুক্ত সংখ্যালঘু নির্যাতনকারীকে মনোনয়ন দিয়েছে। যেমন, কুমিল্লার বাহার এমপি, যিনি ২০২১-এ হিন্দু নির্যাতনের ঘটনায় অভিযুক্ত, বা নারায়ণগঞ্জের সেলিম ওসমান, যিনি শিক্ষক শ্যামল ভক্তের ওপর নির্যাতনের অপরাধে অভিযুক্ত। যুক্তরাষ্ট্র ঐক্য পরিষদ সংখ্যালঘু নির্যাতনের দায়ে অভিযুক্ত যেকোন প্রার্থীকে ভোট না দেওয়ার জন্যে সংখ্যালঘুদের প্রতি উদাত্ত আহবান জানাচ্ছে।

গত দেড় বছরে আমরা দু’বার মাননীয়া প্রধানমন্ত্রী এবং একাধিকবার পররাষ্ট্রমন্ত্রী, ওয়াশিংটনস্থ রাষ্ট্রদূত এবং নিউইয়র্কস্থ কনসাল জেনারেলের সঙ্গে আমাদের দাবী-দাওয়া নিয়ে বৈঠক করেছি। কিন্ত দু:খের বিষয়, আমাদের কোন দাবী-দাওয়া সরকার পূরণ করেনি। মাননীয়া প্রধানমন্ত্রী তাঁর দলের ২০১৮ সালের নির্বাচনী প্রতিশ্রুতিও পূরণ করেননি- সংখ্যালঘু সুরক্ষা আইন পাশ হয়নি, সংখ্যালঘু কমিশনও গঠিত হয়নি। তা’তে আমরা হতাশ এবং সক্ষুব্ধ। ঐক্য পরিষদ গঠিত হয়েছিলো সংখ্যালঘু নাগরিকদের সম-অধিকার আদায়ের সংগ্রামের জন্যে, কিন্ত বাস্তবতা হচ্ছে এখন আমরা বাংলাদেশে সংখ্যালঘুদের অস্তিত্ব রক্ষার জন্য সংগ্রাম করছি। স্বাধীনতার সুফল, বিজয়ের স্বাদ সংখ্যালঘু নাগরিকদের ঘরে পৌঁছেনি। গত ৫২ বছরে সংখ্যালঘু জনসংখ্যা কেবলই কমেছে। বিশেষ করে, হিন্দুরা যেস্থলে ১৯৯৮ সালে ছিল দেশের মোট জনসংখ্যার ১৬% (The World Fact Book, 2010), সেস্থলে বর্তমানে তাঁরা মাত্র ৭.৯৫%(বাংলাদেশে সেন্সাস রিপোর্ট-২০২২)। সংখ্যালঘু সুরক্ষার ব্যাপারে সরকারের চরম উদাসীনতা দেখে মনে হচ্ছে অধ্যাপক আবুল বারাকাতের ভবিষ্যদ্বাণী ØvYx ÔNo Hindus will be left [in Bangladesh] after 30 years.Õ (Dhaka Tribune, November 20, 2016), হয়তো সত্য হতে চলেছে।

পঠিত বক্তব্যে আরো বলা হয় যে: ১৯৭৯ সালে জাতীয় নির্বাচনের মধ্যে দিয়ে বাংলাদেশে নির্বাচনের আগে-পরে সংখ্যালঘু নির্যাতন শুরু হয়, এরপর প্রায় প্রতিটি নির্বাচনের আগে-পরে সংখ্যালঘু নির্যাতন হয়েছে। ২০০১-এর পাশবিক নির্যাতনের তো কোন তুলনা হয় না, এবং সেটা জাতীয় এবং আন্তর্জাতিক মিডিয়াতে ব্যাপকভাবে প্রচারিত হয়েছিল। আপনাদের নিশচয়ই এ’সব সংবাদ শিরোনাম স্মরণ আছে, , ÔBangladeshÕs religious minorities- safe only in the departure loungeÕ (The Economist, Nov. ২৯, ২০০৩)। ১৯৮৬, ১৯৮৮ সালের নির্বাচনের পরেও সংখ্যালঘু নির্যাতন হয়েছে; এমনকি ২০১৪ সালে একটি বড় মিডিয়া ভোটের লাইনে শাঁখা-সিঁদুর পরিহিত মহিলাদের ছবি ছাপানোর পরপরই শুরু হয় হিন্দু নির্যাতন। বস্তুত: সংখ্যালঘু নির্যাতন নির্বাচনের অবিচ্ছেদ্য অনুষঙ্গ হয়ে দাঁড়িয়েছে।

এবারের নির্বাচন ঘোষণার ক’দিন আগে মুন্সিগঞ্জের এমপি এ্যডভোকেট মৃনাল দাসকে আওয়ামী লীগের প্রতিদ্বন্দ্বী গোষ্ঠী ধর্ম তুলে যাচ্ছেতাই গালাগালি করার একটি ভিডিও সামাজিক মাধ্যমে আমরা দেখে স্তম্ভিত হয়েছি। এই মুহূর্তে আমরা আসন্ন নির্বাচন সম্পর্কিত গুটিকয় ঘটনার উল্লেখ করছি: চুয়াডাঙ্গা-১ এর স্বতন্ত্র প্রার্থী আওয়ামী সমর্থক ব্যবসায়ী দিলীপ কুমার আগারওয়াল বলেছেন, ‘অবস্থা ভয়ঙ্কর, আমার ওপর আক্রমন হয়েছে’। তিনি বলেন, তার ২০জন আহত কর্মীকে হাসপাতালে যেতে হয়েছে। ঘটনাটি ঘটে গত শনিবার। বরিশাল-৪ (হিজলা-মেহেন্দিগঞ্জ) আসনে স্বতন্ত্র প্রার্থী, বর্তমান সাংসদ পঙ্কজ দেবনাথ এর সমর্থকদের ওপর হিজলা উপজেলায় শাম্মী আখতারের লোকজন আক্রমণ চালায়, ঘরবাড়ী ভেঙ্গে দেয়। এ সময় একজন সমর্থককে কোপানো হয় এবং আরো ৫জন আহত হয়। শাম্মির অনুসারী খালেদ মাসুদ আহমেদ ৪০-৫০জন ধারালো অস্ত্র নিয়ে তাঁর বাড়ীতে আক্রমন চালায় বলে আলীগঞ্জ বাজার মন্দির কমিটির প্রেসিডেন্ট রাম প্রসাদ অভিযোগ করেন। ‘মেহেরপুর-১ (মুজিবনগর, সদর উপজেলা) আসনের স্বতন্ত্র প্রার্থী ও সাবেক দুই মেয়াদের সংসদ সদস্য প্রফেসর আব্দুল মান্নান ফোনে জেলার সদর উপজেলা স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা ডা. অলোক কুমার দাসকে হুমকি দেন, এ ভিডিওটি ভাইরাল হয়েছে। ফোনে ডা. অলোক কুমার দাসকে হুমকি দিয়ে প্রফেসর আব্দুল মান্নান বলেন, ‘তুমি বাইরে থেকে এসে মেহেরপুরে খুব আরামেই আছো। টাকা-পয়সা অনেক কামাই করছো। বাড়ি-ঘর করেছো। আমি এমপি হই আর না হই, তোমার মেহেরপুরের বাসা আমি উঠিয়ে দেব। আর যদি তুমি সাবধান হয়ে যাও তাহলে আমার প্রিয় পাত্র হয়ে থাকতে পারবে।’ নারীপক্ষ নির্বাচনে নারী ও সংখ্যালঘু সম্প্রদায়ের নিরাপত্তা নিশ্চিতের দাবি জানিয়েছে। তাঁরা আসন্ন দ্বাদশ জাতীয় নির্বাচনে দেশের বিভিন্ন স্থানের ঝুঁকিপূর্ণ এলাকা চিহ্নিত করে সেখানকার নারী ও সংখ্যালঘু সম্প্রদায়ের মানুষের সার্বিক নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীসহ নির্বাচনে সম্পৃক্ত প্রশাসন, বেসরকারী প্রতিষ্ঠান ও এলাকাবাসীর যৌথ উদ্যোগে কার্যকর পদক্ষেপ নেওয়াসহ পাঁচ দফা দাবী বাস্তবায়নের জোর দাবীও জানিয়েছে। গেল ২৭ ডিসেম্বর ঢাকায় এমপি হাজী মোহাম্মদ সেলিম সন্ত্রাসী বাহিনী পাঠিয়ে ঢাকাস্থ চকবাজারের ৩নং রুইহাট্টা লেনে নির্মিত ৮-তলা ‘এনেক্স ফ্রেন্ডশীপ মার্কেট’ ভবন ভাংচুর করে এবং সেটা জবরদখল করার চেষ্টা চালায়। ঐ সম্পত্তির মালিক জ্যোতি মাধব বণিক পরদিন র‌্যাব মহাপরিচালকের কাছে তাদের রক্ষার জন্যে আবেদন জানিয়েছেন।
অতীতের নির্বাচন কালীন ভয়াবহ অভিজ্ঞতা এবং অতি-সাম্প্রতিক সংখ্যালঘু বিরোধী সহিংসতার পরিপ্রেক্ষিতে দেশের সংখ্যালঘুরা আশঙ্কা করছেন যে, তাঁদের ওপর যে কোন সময় ২০০১, রামু বা নাসির নগরের মত ভয়াবহ মাত্রার আক্রমণ হতে পারে। এ নিয়ে দেশে তাঁরা যেমন গভীর উৎকণ্ঠায় আছেন আমরাও তেমনি আমাদের আত্মীয় স্বজনের জন্য উদ্বিগ্ন।

সংবাদ সম্মেলনে পঠিত বক্তব্যে আরো বলা হয়: দু’ একটি দেশ-বিদেশে বহুল প্রচারিত কেইস ব্যতিরেকে সরকার কখনও সংখ্যালঘু নির্যাতকেদের বিচার করেনি, এর জন্য প্রয়োজনীয় কঠোর আইন প্রণয়ণ করবে বলেও করেনি। তাই, সুচিহ্নিত সংখ্যালঘু নির্যাতক সন্ত্রাসীদের দেশের সংখ্যালঘু নাগরকিদের নিশ্চিহ্ন করার কার্যক্রম বিনা দ্বিধায় চালিয়ে যেতে কোন ভয় নেই। একটি বড় রাজনৈতিক দল ও তার সমমনা গোষ্ঠী সারা দেশে অগ্নি সন্ত্রাস করে মানুষ হত্যা করছে, তারা ৭ জানুয়ারীর নির্বাচন বয়কট ও অসহযোগ আন্দোলনের ডাক দিয়েছে, এমন কি নির্বাচন প্রতিহত করারও ঘোষণা দিয়েছে। তার উপর রয়েছে অন্তর্দলীয় কোন্দল। যাঁরা নির্বাচনে অংশ গ্রহন করছেন, তারা স্বাভাবিকভাবেই সবাইকে ভোট দিতে উৎসাহ দিচ্ছেন। সংখ্যালঘু নাগরিকরা অতীতের মত এবারও নিশ্চয়ই ভোট দিতে যাবেন। আর, ভোট দিতে গেলে তারা যে অতীতের মতই সাম্প্রদায়িক শক্তির রোষাণলে পড়বেন সে আশঙ্কা যুক্তিসঙ্গত। তাই, আমরা দেশের নির্বাচন কমিশন, রাষ্ট্রপতি ও প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়, সেনাবাহিনী, বিজিবি, পুলিশ, সকল রাজনৈতিক দলের প্রধান ও সচেতন নাগরিকদের সংখ্যালঘুদের বিরুদ্ধে সম্ভাব্য সন্ত্রাসী আক্রমণ ঠেকাতে আগাম ব্যবস্থা গ্রহন করতে এবং কোন দুর্ঘটনা ঘটে গেলে সেটা ত্বরিৎ গতিতে মোকাবেলা করার দায়িত্ব পুলিশকে তো বটেই তবে এর মূল দাযিত্বটা র‌্যাব, বিজিবি ও সেনাবাহিনীর ওপর ন্যাস্ত করতে আহবান জানাচ্ছি।

সবশেষে পঠিত বক্তব্যে বলা হয়: আমরা আশা ব্যক্ত করছি যে দেশে একটি সুষ্ঠু নির্বাচন হবে, যাতে নাগরিকগণ সেকুলার ডেমক্র্যাসিতে বিশ্বাসী, প্রগতিশীল প্রার্থীদের বিপুল হারে ভোট দিয়ে জয়যুক্ত করবেন। ইংরেজি নববর্ষে আমাদের চাওয়া হল- ‘বাংলাদেশের সাধারণ মানুষ ও সংখ্যালঘুরা নিরাপদে থাকুক, বিশ্ব দরবারে বাংলাদেশ একটি ধর্ম-নিরপেক্ষ উদার গণতান্ত্রিক দেশ হিসেবে পরিচিত হোক, আর ধর্ম হোক যার যার, রাষ্ট্র হোক সবার।’

Tag :

সোশ্যাল মিডিয়ায় খবরটি শেয়ার করুন

আওয়ামী লীগ প্রতিশ্রুত ‘সংখ্যালঘু সুরক্ষা আইন’ পাশের দাবী

প্রকাশের সময় : ১০:৫৩:৩১ পূর্বাহ্ন, শনিবার, ৬ জানুয়ারী ২০২৪

ইউএনএ,নিউইয়র্ক:  যুক্তরাষ্ট্র হিন্দু বৌদ্ধ খ্রিষ্টান ঐক্য পরিষদ অয়োজিত বাংলাদেশের ‘দ্বাদশ সংসদ নির্বাচনে সংখ্যালঘু নাগরিকদের নিরাপত্তা’ শীর্ষক এক সংবাদ সম্মেলনে নির্বাচনের সময় কিংবা তৎপরবর্তীকালে ২০০১ সালের অক্টোবর মাসের মত সম্ভাব্য সংখ্যালঘু বিরোধী সন্ত্রাস ঠেকানো এবং ত্বরিৎ গতিতে মোকাবেলার জন্য অগ্রীম ব্যবস্থা গ্রহন করতে সরকারের প্রতি দাবী জানানো হয়েছে। সংবাদ সম্মেলনে ঐক্য পরিষদ নেতৃবৃন্দ বলেন, স্বাধীনতার পর থেকেই বাংলাদেশে সংখ্যালঘুরা নিপিড়ীত-নির্যাতিত হয়ে আসছে। হিন্দুরা আওয়ামী লীগের ভোট ব্যাংক হিসেবে জনশ্রুতি থাকলেও দেশের সকল সরকার সংখ্যালঘুদের প্রতি একই আচরণ করেছে। নেতৃবৃন্দ বলেন, আমরা স্বাধীনতার চেতনায় বিশ্বাস করি বলেই আওয়ামী লীগকে ভোট দেই, বিএনপি স্বাধীনতার চেতনার পক্ষে নিশ্চিত করলে আমরাও বিএনপিকে ভোট দেবো। নেতৃবৃন্দ ৭ জানুয়ারীর জাতীয় নির্বাচনে সংখ্যালঘুদের উপর নির্যাতনকারী প্রার্থীদের ভোট না দেওয়ার জন্য সংশ্লিষ্ট এলাকার ভোটারদের প্রতি আহ্বান জানান। খবর ইউএনএ’র।

সিটির জ্যাকসন হাইটসের একটি মিলনায়তনে গত রোববার (৩১ ডিসেম্ব) দুপুর আয়োজিত এই সংবাদ সম্মেলনে সভাপতিত্ব করেন যুক্তরাষ্ট্র হিন্দু বৌদ্ধ খ্রিষ্টান ঐক্য পরিষদ-এর অন্যতম সভাপতি অধ্যাপক নবেন্দু দত্ত। পরিষদের সাধারণ সম্পাদক ডক্টর দ্বিজেন ভট্টাচার্যের পরিচালনায় সংবাদ সম্মেলনে স্বাগত বক্তব্য রাখেন অধ্যাপক নবেন্দু দত্ত এবং লিখিত বক্তব্য পাঠ করেন সংগঠনের যুগ্ম সম্পাদক বিষ্ণু গোপ।

প্রশ্নোত্তর পর্বে সাংবাদিকদের বিভিন্ন প্রশ্নের উত্তর দেন নবেন্দু দত্ত, শিতাংশু গুহ, ডক্টর দ্বিজেন ভট্টাচার্য, রীণা সাহা ও ডক্টর দিলীপ নাথ। এসময় সংগঠনের অন্য সভাপতি ডাক্তার টমাস দুলু রায় ও সুশীল সাহা মঞ্চে উপবিষ্ট ছিলেন।

সাংবাদিকদের প্রশ্নের উত্তরে নেতৃবৃন্দ বলেন, সংখ্যালঘুদের সমস্যা মোকাবেলা করার সর্বোত্তম পথ হচ্ছে এই মুহূর্ত্তে দেশের নির্বাচন কমিশন সহ সরকারের সকল প্রশাসন, দেশের সকল রাজনৈতিক দলের প্রধান ও সচেতন নাগরিকদের সম্পৃক্ত করে সম্ভাব্য সংখ্যালঘু বিরোধী সন্ত্রাসী আক্রমণ ঠেকাতে আগাম প্রস্তুতি নেওয়া এবং কোন দুর্ঘটনা ঘটে গেলে সেটা ত্বরিৎ গতিতে মোকাবেলার মূল দায়িত্বটা র‌্যাব, বিজিবি ও সেনাবাহিনীর ওপর ন্যাস্ত করা।এক প্রশ্নের উত্তরে নেতৃবৃন্দ বলেন, সংখ্যালঘুদের সমস্যার সমাধান নির্ভর করছে সরকারের সদিচ্ছার ওপর। সরকার যদি যুক্তরাষ্ট্রের মত হেইট ক্রাইম ও স্পীচ আইন অন্তর্ভুক্ত করে একটি কঠোর মইনোরিটি অ্য্যক্ট প্রনয়ণ করে এবং সংখ্যালঘু নির্যাতকদের বিচার প্রক্রিয়া শুরু করে, তা’হলে সাম্প্রদায়িক শক্তি সংখ্যালঘু নাগরিকদের নির্যাতন করার দু:সাহস করবে না। তারা বলেন, এটা সম্ভব হতে পারে শুধু যদি প্রগতিশীল মুসলমানরা সরকারের ওপর চাপ সৃষ্টি করেন। পাশাপাশি নেতৃবৃন্দ আওয়ামী লীগ প্রতিশ্রুত ‘সংখ্যালঘু সুরক্ষা আইন ’পাশেরও দাবী জানান।

সংবাদ সম্মেলনে পঠিত বক্তব্যে বলা হয়: নুতন বছরের শুরুর প্রাক্কালে আমরা আবারও আপনাদের শরণাপন্ন হয়েছি, কারণ ৭ জানুয়ারী ২০২৪, আমাদের মাতৃভূমি বাংলাদেশে অনুষ্ঠেয় দ্বাদশ সংসদীয় নির্বাচন ও তৎপরবর্তী সময়ে দেশে আমাদের আত্মীয় স্বজনদের নিরাপত্তা নিয়ে আমারা শঙ্কিত। যুক্তরাষ্ট্র ঐক্য পরিষদ এই নির্বাচনটি ‘সুষ্ঠু ও অবাধ’ হবে বলে আশা প্রকাশ করছে; তবে, বাংলাদেশে নির্বাচন মানেই তো সংখ্যালঘু সম্প্রদায়ের ওপর আরেক দফা পৈশাচিক নির্যাতন। অতীতের বারবার তিক্ত অভিজ্ঞতার কারণে, এমনতর ঘটনার পুনরাবৃত্তি রোধে আগাম ব্যবস্থা গ্রহন করার জন্য যুক্তরাষ্ট্র ঐক্য পরিষদ আপনাদের মাধ্যমে দেশের সংশ্লিষ্ট সকল মহলের প্রতি আহবান জানাচ্ছে। কেন্দ্রীয় ঐক্য পরিষদ সংবাদ সম্মেলন করে এব্যাপারে উদ্বেগ প্রকাশ করেছে এবং নির্বাচনের পরেও তিন সপ্তাহ সেনা-সদস্যদের মাঠে রাখার দাবী জানিয়েছে। আমরা ঐ দাবীর প্রতিও পূর্ণ সমর্থন জানাচ্ছি।পঠিত বক্তব্যে বলা হয়: ২০০১-এর নির্বাচনের আগে-পরে সংখ্যালঘু নির্যাতনের করুন কাহিনী একটু স্মরণ করতে অনুরোধ করি। স্মর্তব্য যে, ঐসব নারকীয় ঘটনার হোতাদের কিন্ত বিচার হয়নি আজও। ২০১২ সালে রামু থেকে ২০২১-এ কুমিল্লায় সংখ্যালঘু নির্যাতনের বীভৎস ঘটনাবলী, ডিজিটাল সিকিউরিটি আইনে নিরপরাধ সংখ্যালঘুদের বিরুদ্ধে ধর্ম-অবমাননার মিথ্যা অজুহাতে কারারুদ্ধ করার নিষ্ঠুরতা আমাদের জন্য সতত: কষ্ট প্রদায়ী। এরই মধ্যে আরেকটি জাতীয় নির্বাচন সমাসন্ন। ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগ এবং জাতীয় পার্টি ঐক্য পরিষদের দাবি অগ্রাহ্য করে বেশ কয়েকজন অভিযুক্ত সংখ্যালঘু নির্যাতনকারীকে মনোনয়ন দিয়েছে। যেমন, কুমিল্লার বাহার এমপি, যিনি ২০২১-এ হিন্দু নির্যাতনের ঘটনায় অভিযুক্ত, বা নারায়ণগঞ্জের সেলিম ওসমান, যিনি শিক্ষক শ্যামল ভক্তের ওপর নির্যাতনের অপরাধে অভিযুক্ত। যুক্তরাষ্ট্র ঐক্য পরিষদ সংখ্যালঘু নির্যাতনের দায়ে অভিযুক্ত যেকোন প্রার্থীকে ভোট না দেওয়ার জন্যে সংখ্যালঘুদের প্রতি উদাত্ত আহবান জানাচ্ছে।

গত দেড় বছরে আমরা দু’বার মাননীয়া প্রধানমন্ত্রী এবং একাধিকবার পররাষ্ট্রমন্ত্রী, ওয়াশিংটনস্থ রাষ্ট্রদূত এবং নিউইয়র্কস্থ কনসাল জেনারেলের সঙ্গে আমাদের দাবী-দাওয়া নিয়ে বৈঠক করেছি। কিন্ত দু:খের বিষয়, আমাদের কোন দাবী-দাওয়া সরকার পূরণ করেনি। মাননীয়া প্রধানমন্ত্রী তাঁর দলের ২০১৮ সালের নির্বাচনী প্রতিশ্রুতিও পূরণ করেননি- সংখ্যালঘু সুরক্ষা আইন পাশ হয়নি, সংখ্যালঘু কমিশনও গঠিত হয়নি। তা’তে আমরা হতাশ এবং সক্ষুব্ধ। ঐক্য পরিষদ গঠিত হয়েছিলো সংখ্যালঘু নাগরিকদের সম-অধিকার আদায়ের সংগ্রামের জন্যে, কিন্ত বাস্তবতা হচ্ছে এখন আমরা বাংলাদেশে সংখ্যালঘুদের অস্তিত্ব রক্ষার জন্য সংগ্রাম করছি। স্বাধীনতার সুফল, বিজয়ের স্বাদ সংখ্যালঘু নাগরিকদের ঘরে পৌঁছেনি। গত ৫২ বছরে সংখ্যালঘু জনসংখ্যা কেবলই কমেছে। বিশেষ করে, হিন্দুরা যেস্থলে ১৯৯৮ সালে ছিল দেশের মোট জনসংখ্যার ১৬% (The World Fact Book, 2010), সেস্থলে বর্তমানে তাঁরা মাত্র ৭.৯৫%(বাংলাদেশে সেন্সাস রিপোর্ট-২০২২)। সংখ্যালঘু সুরক্ষার ব্যাপারে সরকারের চরম উদাসীনতা দেখে মনে হচ্ছে অধ্যাপক আবুল বারাকাতের ভবিষ্যদ্বাণী ØvYx ÔNo Hindus will be left [in Bangladesh] after 30 years.Õ (Dhaka Tribune, November 20, 2016), হয়তো সত্য হতে চলেছে।

পঠিত বক্তব্যে আরো বলা হয় যে: ১৯৭৯ সালে জাতীয় নির্বাচনের মধ্যে দিয়ে বাংলাদেশে নির্বাচনের আগে-পরে সংখ্যালঘু নির্যাতন শুরু হয়, এরপর প্রায় প্রতিটি নির্বাচনের আগে-পরে সংখ্যালঘু নির্যাতন হয়েছে। ২০০১-এর পাশবিক নির্যাতনের তো কোন তুলনা হয় না, এবং সেটা জাতীয় এবং আন্তর্জাতিক মিডিয়াতে ব্যাপকভাবে প্রচারিত হয়েছিল। আপনাদের নিশচয়ই এ’সব সংবাদ শিরোনাম স্মরণ আছে, , ÔBangladeshÕs religious minorities- safe only in the departure loungeÕ (The Economist, Nov. ২৯, ২০০৩)। ১৯৮৬, ১৯৮৮ সালের নির্বাচনের পরেও সংখ্যালঘু নির্যাতন হয়েছে; এমনকি ২০১৪ সালে একটি বড় মিডিয়া ভোটের লাইনে শাঁখা-সিঁদুর পরিহিত মহিলাদের ছবি ছাপানোর পরপরই শুরু হয় হিন্দু নির্যাতন। বস্তুত: সংখ্যালঘু নির্যাতন নির্বাচনের অবিচ্ছেদ্য অনুষঙ্গ হয়ে দাঁড়িয়েছে।

এবারের নির্বাচন ঘোষণার ক’দিন আগে মুন্সিগঞ্জের এমপি এ্যডভোকেট মৃনাল দাসকে আওয়ামী লীগের প্রতিদ্বন্দ্বী গোষ্ঠী ধর্ম তুলে যাচ্ছেতাই গালাগালি করার একটি ভিডিও সামাজিক মাধ্যমে আমরা দেখে স্তম্ভিত হয়েছি। এই মুহূর্তে আমরা আসন্ন নির্বাচন সম্পর্কিত গুটিকয় ঘটনার উল্লেখ করছি: চুয়াডাঙ্গা-১ এর স্বতন্ত্র প্রার্থী আওয়ামী সমর্থক ব্যবসায়ী দিলীপ কুমার আগারওয়াল বলেছেন, ‘অবস্থা ভয়ঙ্কর, আমার ওপর আক্রমন হয়েছে’। তিনি বলেন, তার ২০জন আহত কর্মীকে হাসপাতালে যেতে হয়েছে। ঘটনাটি ঘটে গত শনিবার। বরিশাল-৪ (হিজলা-মেহেন্দিগঞ্জ) আসনে স্বতন্ত্র প্রার্থী, বর্তমান সাংসদ পঙ্কজ দেবনাথ এর সমর্থকদের ওপর হিজলা উপজেলায় শাম্মী আখতারের লোকজন আক্রমণ চালায়, ঘরবাড়ী ভেঙ্গে দেয়। এ সময় একজন সমর্থককে কোপানো হয় এবং আরো ৫জন আহত হয়। শাম্মির অনুসারী খালেদ মাসুদ আহমেদ ৪০-৫০জন ধারালো অস্ত্র নিয়ে তাঁর বাড়ীতে আক্রমন চালায় বলে আলীগঞ্জ বাজার মন্দির কমিটির প্রেসিডেন্ট রাম প্রসাদ অভিযোগ করেন। ‘মেহেরপুর-১ (মুজিবনগর, সদর উপজেলা) আসনের স্বতন্ত্র প্রার্থী ও সাবেক দুই মেয়াদের সংসদ সদস্য প্রফেসর আব্দুল মান্নান ফোনে জেলার সদর উপজেলা স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা ডা. অলোক কুমার দাসকে হুমকি দেন, এ ভিডিওটি ভাইরাল হয়েছে। ফোনে ডা. অলোক কুমার দাসকে হুমকি দিয়ে প্রফেসর আব্দুল মান্নান বলেন, ‘তুমি বাইরে থেকে এসে মেহেরপুরে খুব আরামেই আছো। টাকা-পয়সা অনেক কামাই করছো। বাড়ি-ঘর করেছো। আমি এমপি হই আর না হই, তোমার মেহেরপুরের বাসা আমি উঠিয়ে দেব। আর যদি তুমি সাবধান হয়ে যাও তাহলে আমার প্রিয় পাত্র হয়ে থাকতে পারবে।’ নারীপক্ষ নির্বাচনে নারী ও সংখ্যালঘু সম্প্রদায়ের নিরাপত্তা নিশ্চিতের দাবি জানিয়েছে। তাঁরা আসন্ন দ্বাদশ জাতীয় নির্বাচনে দেশের বিভিন্ন স্থানের ঝুঁকিপূর্ণ এলাকা চিহ্নিত করে সেখানকার নারী ও সংখ্যালঘু সম্প্রদায়ের মানুষের সার্বিক নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীসহ নির্বাচনে সম্পৃক্ত প্রশাসন, বেসরকারী প্রতিষ্ঠান ও এলাকাবাসীর যৌথ উদ্যোগে কার্যকর পদক্ষেপ নেওয়াসহ পাঁচ দফা দাবী বাস্তবায়নের জোর দাবীও জানিয়েছে। গেল ২৭ ডিসেম্বর ঢাকায় এমপি হাজী মোহাম্মদ সেলিম সন্ত্রাসী বাহিনী পাঠিয়ে ঢাকাস্থ চকবাজারের ৩নং রুইহাট্টা লেনে নির্মিত ৮-তলা ‘এনেক্স ফ্রেন্ডশীপ মার্কেট’ ভবন ভাংচুর করে এবং সেটা জবরদখল করার চেষ্টা চালায়। ঐ সম্পত্তির মালিক জ্যোতি মাধব বণিক পরদিন র‌্যাব মহাপরিচালকের কাছে তাদের রক্ষার জন্যে আবেদন জানিয়েছেন।
অতীতের নির্বাচন কালীন ভয়াবহ অভিজ্ঞতা এবং অতি-সাম্প্রতিক সংখ্যালঘু বিরোধী সহিংসতার পরিপ্রেক্ষিতে দেশের সংখ্যালঘুরা আশঙ্কা করছেন যে, তাঁদের ওপর যে কোন সময় ২০০১, রামু বা নাসির নগরের মত ভয়াবহ মাত্রার আক্রমণ হতে পারে। এ নিয়ে দেশে তাঁরা যেমন গভীর উৎকণ্ঠায় আছেন আমরাও তেমনি আমাদের আত্মীয় স্বজনের জন্য উদ্বিগ্ন।

সংবাদ সম্মেলনে পঠিত বক্তব্যে আরো বলা হয়: দু’ একটি দেশ-বিদেশে বহুল প্রচারিত কেইস ব্যতিরেকে সরকার কখনও সংখ্যালঘু নির্যাতকেদের বিচার করেনি, এর জন্য প্রয়োজনীয় কঠোর আইন প্রণয়ণ করবে বলেও করেনি। তাই, সুচিহ্নিত সংখ্যালঘু নির্যাতক সন্ত্রাসীদের দেশের সংখ্যালঘু নাগরকিদের নিশ্চিহ্ন করার কার্যক্রম বিনা দ্বিধায় চালিয়ে যেতে কোন ভয় নেই। একটি বড় রাজনৈতিক দল ও তার সমমনা গোষ্ঠী সারা দেশে অগ্নি সন্ত্রাস করে মানুষ হত্যা করছে, তারা ৭ জানুয়ারীর নির্বাচন বয়কট ও অসহযোগ আন্দোলনের ডাক দিয়েছে, এমন কি নির্বাচন প্রতিহত করারও ঘোষণা দিয়েছে। তার উপর রয়েছে অন্তর্দলীয় কোন্দল। যাঁরা নির্বাচনে অংশ গ্রহন করছেন, তারা স্বাভাবিকভাবেই সবাইকে ভোট দিতে উৎসাহ দিচ্ছেন। সংখ্যালঘু নাগরিকরা অতীতের মত এবারও নিশ্চয়ই ভোট দিতে যাবেন। আর, ভোট দিতে গেলে তারা যে অতীতের মতই সাম্প্রদায়িক শক্তির রোষাণলে পড়বেন সে আশঙ্কা যুক্তিসঙ্গত। তাই, আমরা দেশের নির্বাচন কমিশন, রাষ্ট্রপতি ও প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়, সেনাবাহিনী, বিজিবি, পুলিশ, সকল রাজনৈতিক দলের প্রধান ও সচেতন নাগরিকদের সংখ্যালঘুদের বিরুদ্ধে সম্ভাব্য সন্ত্রাসী আক্রমণ ঠেকাতে আগাম ব্যবস্থা গ্রহন করতে এবং কোন দুর্ঘটনা ঘটে গেলে সেটা ত্বরিৎ গতিতে মোকাবেলা করার দায়িত্ব পুলিশকে তো বটেই তবে এর মূল দাযিত্বটা র‌্যাব, বিজিবি ও সেনাবাহিনীর ওপর ন্যাস্ত করতে আহবান জানাচ্ছি।

সবশেষে পঠিত বক্তব্যে বলা হয়: আমরা আশা ব্যক্ত করছি যে দেশে একটি সুষ্ঠু নির্বাচন হবে, যাতে নাগরিকগণ সেকুলার ডেমক্র্যাসিতে বিশ্বাসী, প্রগতিশীল প্রার্থীদের বিপুল হারে ভোট দিয়ে জয়যুক্ত করবেন। ইংরেজি নববর্ষে আমাদের চাওয়া হল- ‘বাংলাদেশের সাধারণ মানুষ ও সংখ্যালঘুরা নিরাপদে থাকুক, বিশ্ব দরবারে বাংলাদেশ একটি ধর্ম-নিরপেক্ষ উদার গণতান্ত্রিক দেশ হিসেবে পরিচিত হোক, আর ধর্ম হোক যার যার, রাষ্ট্র হোক সবার।’