নানা আয়োজনে নিউইয়র্ক মেরিল্যান্ড ভার্জেনিয়া ও মিশিগানে বিভক্ত ফোবানা সম্মেলন
দর্শক-শ্রোতার উপস্থিতি কম
- প্রকাশের সময় : ০২:৫৪:৩২ পূর্বাহ্ন, রবিবার, ১ সেপ্টেম্বর ২০২৪
- / ১৩৪ বার পঠিত
উত্তর আমেরিকার লেবার ডে উইকেন্ড ঘিরে নিউইয়র্ক সহ যুক্তরাষ্ট্রের চার ষ্টেটে শুরু হয়েছে বিভক্ত ফোবানা সম্মেলন। এবারের সম্মেলন হচ্ছে ৩৮তম ফোবানা সম্মেলন। শুক্রবার থেকে শুরু হওয়া এই সম্মেলন চলবে রোববার (১ সেপ্টেম্বর) পর্যন্ত। সম্মেলনগুলোর অনুষ্ঠানমাল মধ্যে থাকছে সেমিনার, কাব্য জলসা, ফ্যাশন শো, রকমারী স্টল, সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান প্রভৃতি। তিনদিনব্যাপী ফোবানা সম্মেলনের কথা বলা হলেও মূল অনুষ্ঠানমালা হচ্ছে শনিবার ও রোববার। এদিকে ফোবানা বিভক্ত হওয়ার ফলে সম্মেলনগুলোতে প্রবাসীদের উপস্থিতি কম পরিলক্ষিত হচ্ছে। অপরদিকে বিভক্ত নয়, ফোবানাকে এক ছাতার তলে আনার জন্য সচেতন প্রবাসী বাংলাদেশীরা দাবী জানিয়েছেন। খবর ইউএনএ’র।
নিউইয়র্কের ফোবানা সম্মেলন চলছে ম্যারিয়ট নিউইয়র্ক লাগোর্ডিয়া এয়ারপোর্ট হোটেলে। এই সম্মেলনের আয়োজক সংগঠন হচ্ছে আমেরিকা বাংলাদেশ চেম্বার অব কমার্স এন্ড ইন্ডাষ্ট্রি (এবিসিসিআই)। শুক্রবার সন্ধ্যায় এই সম্মেলনের উদ্বোধন করেন কনসাল জেনারেল নাজমুল হুদা। এতে চেয়ারম্যান গিয়াস আহমেদ, এক্সিকিউটিভ সেক্রেটারী দেওয়ান এ আজিম জুয়েল, প্রধান উপদেষ্টা ডা. মাসুদুর রহমান, কনভেনর আসিফ বারী টুটুল, সদস্য সচিব ফাহাদ সোলায়মান প্রমুখ। শনিবার সম্মেলনের দ্বিতীয় দিন আমন্ত্রিত অতিথি হিসেবে শুভেচ্ছা বক্তব্য রাখেন কনসাল জেনারেল নাজমুল হুদা, ষ্টেট অ্যাসেম্বলীওমেন জেসিকা গঞ্জালেস রোহাস, নিউইয়র্ক সিটি মেয়র অফিসের প্রধান প্রশাসনিক কর্মকর্তা মীর বাশার। এছাড়াও ষ্টেট অ্যাসেম্বলীওমেন জেনিফার রাজ কুমারের পক্ষ থেকে তার প্রতিনিধির মাধ্যমে ফোবানা কর্মকর্তাদের মাঝে সাইটেশন প্রদান করা হয়। এসময় বক্তারা ফোবানা সম্মেলনের সার্বিক সাফল্য কামনা করেন। গিয়াস আহমেদ তার বক্তব্যে ফোবানা সম্মেলনের লক্ষ্য, উদ্দেশ্য ও প্রবাসে বাংলাদেশীদের ঐক্যের উপর গুরুত্বারোপ করেন। তিনি বলেন, সকল বাংলাদেশী ঐক্যবদ্ধ থাকলে আমাদের অধিকার আদায় সহজ হবে।
সেমিনার পর্বে গ্লোবাল ওয়ার্মিং বিষয়ে বক্তব্য রাখেন ডা. মাসুদুর রহমান। ‘গণ অভ্যূত্থান পরবর্তী বাংলাদেশ এবং করনীয়’ বিষয়ক সেমিনারে বক্তব্য রাখেন সিনিয়র সাংবাদিক-লেখক সাঈদ তারেক, বীর মুক্তিযোদ্ধা খন্দকার ফরহাদ। এই পর্ব পরিচালনা করেন সাংবাদিক রিমন ইসলাম। সাংস্কৃতিক পর্বে সঙ্গীত পরিবেশন করেন বাংলাদেশের জনপ্রিয় সঙ্গীত শিল্পী আখি আলমগীর ছাড়াও বাউল কালা মিয়া, চন্দন চৌধুরী, কৃষ্ণা তিথি, শশী, ত্রিনয়না হাসান, প্রেমা, নাজুয়া আকন্দ, লুমিন, অমিত, শিল্পী দম্পতি প্রমি-তাজ প্রমুখ।
ম্যারিল্যান্ড ফোবানা:
ম্যারিল্যান্ডের হোটেল হিলটন গেইটসবার্গে অনুষ্ঠিত সম্মেলনের আয়োজক সংগঠন হচ্ছে বাংলাদেশী আমেরিকান ফাউন্ডেশন ইনক। এই সম্মেলনের চেয়ারম্যান শাহ নেওয়াজ আর এক্সিকিউটিভ সেক্রেটারী হচ্ছেন কাজী সাখাওয়াত হোসেন আযম। শনিবারের সাংস্কৃতিক পর্বে প্রবাসের জনপ্রিয় সঙ্গীত শিল্পী রানো নেওয়াজ ছাড়াও অনিক রাজ প্রমুখ শিল্পীরা সঙ্গীত পরিবেশন করেন। এছাড়াও বিভিন্ন সংগঠনের শিল্পীরা দলীয় নৃত্য পরিবেশন করেন। উল্লেখ্য, ফোবানা’র ইতিহাসে মেরিল্যান্ডে এবারই প্রথম সম্মেলন অনুষ্ঠিত হচ্ছে।
‘চেতনায় বাংলাদেশ’ শ্লোগান নিয়ে ভার্জিনিয়া আর্লিংটনের ক্রিস্টাল গেটওয়ে ম্যারিয়টে অনুষ্ঠিত সম্মেলনের আয়োজক সংগঠন হচ্ছে বাংলাদেশ এসোসিয়েশন অব গ্রেটার ওয়াশিংটন ডিসি। এই সম্মেলনের চেয়ারম্যান মোহাম্মদ আলমগীর ও এক্সিকিউটিভ সেক্রেটারী আবীর আলমগীর। এই সম্মেলনের উদ্বোধন করেন ভয়েস অব আমেরিকার কিংবদন্তী সাংবাদিক ইকবাল বাহার চৌধুরী।
অপরদিকে মিশিগানের ডেট্রয়েটের জায়নি ফিল্ডে অনুষ্ঠিত সম্মেলনের আয়োজক সংগঠন হচ্ছে বাংলাদেশ এসোসিয়েশন অব মিশিগান। এই সম্মেলনের চেয়ারম্যান আতিকুর রহমান এবং এক্সিকিউটিভ সেক্রেটারী হচ্ছেন ড. রফিক খান।
ভার্জিনিয়ার ফোবানা:
কমলা হ্যারিসের মতো বাংলাদেশীরাও একদিন যুক্তরাষ্ট্রের নেতৃত্ব দেবেন : ইকবাল বাহার চৌধুরী
ভার্জিনিয়া থেকে ছাবেদ সাথী জানান: মূলধারার রাজনীতিতে সম্পৃক্ত বাংলাদেশীরাও একদিন যুক্তরাষ্ট্রের নেতৃত্ব দেবেন বলে আশা প্রকাশ করেছেন ভার্জিনিয়ায় অনুষ্ঠিত ৩৮তম সম্মেলনের উদ্বোধক ও ভয়েস অব আমেরিকার কিংবদন্তী সাংবাদিক ইকবাল বাহার চৌধুরী। তিনি বলেন প্রবাসে এ রকমের সম্মেলন করে শিক্ষার্থীদের মূলধারার রাজনীতিতে সম্পৃক্ত করতে উৎসাহ দিতে হবে। তাহলে একদিন যুক্তরাষ্ট্রেন ভাইস প্রেসিডেন্ট কমলা হ্যারিসের মত বাংলাদেশীরাও একদিন যুক্তরাষ্ট্রের নেতৃত্ব দেবেন। গত শুক্রবার (৩০ আগস্ট) সন্ধ্যায় ভার্জিনিয়া অঙ্গর্জ্যের আর্লিংটনের ক্রিস্টাল গেটওয়ে ম্যারিয়ট হোটেলে ৩৮তম সম্মেলনের উদ্বোধনকালে তিনি এসব কথা বলেন। তিন দিনের এ সম্মেলন চলবে রোববার (১ সেপ্টেম্বর) পর্যন্ত।
প্রধান অতিথি সাংবাদিক ইকবাল বাহার চৌধুরী ১৯৮৭ সালে কীভাবে প্রথম বাংলাদেশ সম্মেলন হয়েছিলো সে বিষয়ে তার গল্প শোনান। ঐ সময়ে যুক্তরাষ্ট্রে পশ্চিমবঙ্গের বসবাসকারী মানুষরা এখানে করত বঙ্গ সম্মেলন। সেই আইডিয়া থেকেই আমরা বেশ কয়েজন মিলে প্রথম বাংলাদেশ সম্মেলন শুরু করি। প্রথম সম্মেলন হয়েছিল ওয়াশিংটন ডিসিতে। দ্বিতীয় সম্মেলন নিউইয়র্কে এবং তৃতীয় ও চতুর্থ সম্মেলন হয়েছিল যথাক্রমে বোস্টন ও টেক্সাসে। এরপর হাটিহাটি পা পা করে আজ ফোবানার ৩৮তম সম্মেলন অনুষ্ঠিত হচ্ছে। আজ এ সম্মেলনে উপস্থিত হয়ে উদ্বোধন করতে পেরে নিজেকে ধন্য মনে করছি। শারীরিক অবস্থার কারণে আগামী ফোবানা সম্মেলন যোগ দিতে পারবো কিনা জানি না।
ইকবাল বাহার বলেন, দেশে যেভাবে নানা পরিবর্তন হয়েছে তেমনি ভাবে শিক্ষার মান উন্নয়নসহ নানা পরিবর্তনের প্রয়োজন। তাহলেই আমরা একটি উন্নত জাতি দেখতে পাবো। একই সঙ্গে বাংলাদেশী শিক্ষার্থীসহ যুক্তরাষ্ট্র প্রবাসীদের মূলধারার রাজনীতিতে সম্পৃক্ত হতে হবে। আমাদের প্রজন্ম একদিন ভাইস প্রেসিডেন্ট কমলা হ্যারিসের মত যুক্তরাষ্ট্রের নেতৃত্ব দেবেন বলে উল্লেখ করেন তিনি।
৩৮তম ফোবানা সম্মেলনের বর্তমান চেয়ারপারসন মোহাম্মদ আলমগীর, এক্সিকিউটিভ সেক্রেটারী আবীর আলমগীর বলেন, যুক্তরাষ্ট্রের ৮৬টি বাংলাদেশি সংগঠনের অংশ গ্রহণ করেছে এবারের ফোবানা সম্মেলনে। ২৫টিরও বেশি অঙ্গরাজ্য থেকে শতশত শিল্পী ও কলা-কুশলীরা এখন ভার্জিনিয়ায় অবস্থান করছেন। আরও দুই দিন সাংস্কৃতিককর্মীরা প্রস্তুত তাদের বৈচিত্রময় সাংস্কৃতিক পরিবেশনার মধ্য দিয়ে আমাদের দর্শকশ্রোতাদের আনন্দ দেবেন।
শামীম চৌধুরী ও আবীর আলমগীরের যৌথ সঞ্চালনায় উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে অন্যদের মধ্যে বক্তব্য দেন ভার্জিনিয়া স্টেট সিনেটর ড. গাজালা এফ হাশমী, ভার্জিনিয়া স্টেটের একমাত্র বাংলাদেশী সিনেটর সাদ্দাম আজলান সেলিম, আর্লিংটন কাউন্টি বোর্ডের সদস্য সুসান কুনিংহাম, রিজিওনাল ডাইরেক্টর তানিয়া ট্যালেন্টো, ইউএস সিনেটর মার্ক ওয়ার্নার। ফোবানা সম্মেলনের কোষাধক্ষ্য ড. প্রিয়লাল কর্মকার মূলধারার রাজনীতিবীদদের আমন্ত্রণ জানিয়ে তাদেরকে সম্মেলনে আসার জন্য সর্বদাই যোগাযোগ করেছেন বলে উল্লেখ করা হয়।
এছাড়াও অনুষ্ঠানে বক্তব্য ভয়েস অব আমেরিকার বাংলা বিভাগের সাবেক প্রধান রোকেয়া হায়দার, স্কটল্যান্ড থেকে আগত অতিথি স্কটিস পার্লালামেন্টের সদস্য ফয়সল চৌধুরী, ৩৮তম ফোবানা সম্মেলনের বর্তমান চেয়ারপারসন এটর্নি মোহাম্মদ আলমগীর, এক্সিকিউটিভ সেক্রেটারি আবীর আলমগীর, আহবায়ক রোকসানা পারভীন ও সদস্য সচিব আবু রুমি, প্রেসিডেন্ট নুরুল আমিন নূরু, নির্বাহী কমিটির সহ সভাপতি মাসুদ রব চৌধুরী, যুগ্ম এক্সিকিউটিভ সেক্রেটারি খালেদ রউফ, ইঞ্জিনিয়ার আবু বকর হানিফ প্রমুখ। অনুষ্ঠানের দ্বিতীয় পর্বে সঙ্গীত ও নৃত্য পরিবেশন করেন স্থানীয় বিভিন্ন সংগঠনের শিল্পীরা।
তিন দিনের ফোবানা সম্মেলনে রয়েছে: সেমিনার, সাহিত্য, কারিগরি শিক্ষার প্রভাব ও উন্নয়ন, আর্টিফিশিয়াল ইন্টেলিজেন্স ও সাইবার সিকিউরিটি, নারীর ক্ষমতায়ন, যুব উন্নয়ন, মূলধারায় নেতৃত্বের বিকাশ, ওয়াশিংটন মেট্রো এলাকার বাংলাদেশী মুক্তিযোদ্ধাদের সম্মাননা, আরবান ডেভেলপমেন্ট, ন্যানো টেকনোলজির এবং এর কার্যকারিতা, স্বাস্থ্যসেবা ক্ষেত্রে এআই এর প্রভাব, তরুণ মেধাবী ছাত্র ছাত্রীদের স্কলাশিপ অ্যাওয়ার্ড, তরুণ প্রজন্মের অংশগ্রহণে সংগীত ও নৃত্য প্রতিযোগিতা, ক্ষমতায়নে নারীর ভূমিকা, অর্জন এবং তাৎপর্য, কারুপণ্য শিল্পের প্রদর্শনী, বর্ণীল ফ্যাশন শো, সাহিত্যের উপর আলোকপাত এবং কাব্য জলসা, ফোবানা গ্রন্থমেলা, যুব ফোরাম ও নেটওয়ার্কিং, এনআরবি ব্যবসায়ী এবং ব্যবসা উদ্যোক্তাদের, নেটওয়ার্কিং, বিশ্ববিদ্যালয়গুলোর এলামনাই ফোরাম নিয়ে আলোচনা, আন্তঃধর্মীয় শান্তি আলোচনা, বাংলাদেশের স্বল্পদৈর্ঘ্য চলচ্চিত্র ও তথ্যচিত্র প্রদর্শিনী ইত্যাদি।
ভার্জিনিয়ার ফোবানা থেকে সংগৃহীত অর্থ যাবে বানবাসীদের কাছে
এদিকে উত্তর আমেরিকায় প্রবাসী বাংলাদেশীদের মিলনমেলা খ্যাত ভার্জিনিয়া ফোবানা সম্মেলন থেকে সংগৃহীত অর্থ পাঠানো হবে বাংলাদেশের বন্যা কবলিত এলাকায়। ইতোমধ্যে ৩৮তম ফোবানা সম্মেলনের কর্মকর্তারা একটি বিশেষ তহবিল গঠন করেছেন। সেখানে বেশ সাড়াও পেয়েছেন বলে জানিয়েছেন সম্মেলনের চেয়ারপারসন মোহাম্মদ আলমগীর ও এক্সিকিউটিভ সেক্রেটারী আবীর আলমগীর। তারা জানান, নির্বাহী কমিটির কর্তৃক সংগৃহীত অর্থের সঙ্গে যোগ করা হবে ৩৮তম ফোবানা সম্মেলন থেকে সংগৃহীত অর্থ। সম্মেলন থেকে প্রতিজন দর্শক-শ্রোতার প্রবেশ মূল্য থেকে ১ ডলার (বাংলাদেশী মুদ্রায় ১২০ টাকা) হারে বন্যার্তদের জন্য সাহায্যের উদ্যোগ নেয়া হয়েছে। এছাড়াও তাৎক্ষণিক সাহায্যের জন্য সম্মেলন স্থলের প্রবেশদ্বারে ও মঞ্চের পাশেও সাহায্যের জন্য বাক্স রাখা হবে। যারা সাহায্য প্রদানে ইচ্ছুক তারা সরাসরি উক্ত বাক্সে অর্থ প্রদান করে সাহায্য করতে পারবেন। বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন এই সম্মেলনের আহবায়ক রোকসানা পারভীন, সদস্য সচিব আবু রুমি ও প্রেসিডেন্ট নুরুল আমিন নুরু।
ফোবানা নেতৃবৃন্দ জানান, তারা জানান দেশের যে কোন দুর্যোগ মোকাবিলা করতে আমরা সব সময় সাহায্যের হাত বাড়িয়ে দিয়েছি। এবারও এর ব্যতিক্রম হবে না বলে তারা আশা প্রকাশ করেন।