স্টিয়ারিং কমিটির সংবাদ সম্মেলন : প্রস্তুতি এগিয়ে চলছে : উপ কমিটি গঠিত
৩৯তম ফোবানা সম্মেলন নায়াগ্রা’র হোটেল শেরাটনে ২৯-৩১ আগষ্ট

- প্রকাশের সময় : ০১:৫৩:৪৬ অপরাহ্ন, শুক্রবার, ২০ জুন ২০২৫
- / ১১১ বার পঠিত
* প্রতিপাদ্য বিষয় ‘প্রবাসী নতুন প্রজন্মই হোক আগামী ফোবানার শক্তি’
* বিভক্ত সকল গ্রæপকে ঐক্যবদ্ধ হওয়ার আহŸান
নিউইয়র্ক (ইউএনএ): চলতি বছরের ফেডারেশন অব বাংলাদেশী এসোসিয়েশনস অব নর্থ আমেরিকা-‘ফোবানা’ এর ৩৯তম সম্মেলন আগামী ২৯-৩১ আগষ্ট লেবার ডে ইউকেন্ডে অনুষ্ঠিত হবে। এবারের সম্মেলনের প্রতিপাদ্য নির্ধারণ করা হয়েছে ‘প্রবাসী নতুন প্রজন্মই হোক আগামী ফোবানার শক্তি’। সম্মেলনের প্রস্তুতি এগিয়ে চলার পাশাপাশি ঐক্যবদ্ধ ফোবানা সম্মেলনের উদ্যোগ নেয়া হয়েছে। সোমবার (১৬ জুন) সন্ধ্যায় ফোবানা’র স্টিয়ারিং কমিটি আয়োজিত এক সংবাদ সম্মেলনে ফোবানা কর্মকর্তারা এসব তথ্য জানান।
নিউইয়র্ক সিটির জ্যাকসন হাইটসের নবান্ন পার্টি হলে আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে লিখিত বক্তব্য পাঠ করেন ফোবানা’র স্টিয়ারিং কমিটির চেয়ারম্যান এবং ৩৯তম ফোবানা সম্মেলনের চীফ এক্সিকিউটিভ শাহ নেওয়াজ। পরবর্তীতে শাহ নেওয়াজ সহ অন্যান্য কর্মকর্তার মধ্যে বক্তব্য রাখেন এবং সাংবাদিকদের বিভিন্ন প্রশ্নের উত্তর দেন ফোবানা’র স্টিয়ারিং কমিটির চেয়ারম্যান (এডমিন) গিয়াস আহমেদ, এক্সিকিউটিভ সেক্রেটারী ও সম্মেলনের কনভেনর কাজী সাখাওয়াত হোসেন আজম, সম্মেলনের মেম্বার সেক্রেটারী মইনুল হক চৌধুরী হেলাল এবং মোহাম্মদ হোসেন খান, আবু জোবায়ের দারা, হাসানুজ্জামান হাসান। এসময় মঞ্চে উপবিষ্ট ছিলেন আলী ইমান শিকদার, নিশান রহীম, খন্দকার ফরহাদ, ফাহাদ সোলায়মান, ওয়াহিদ কাজী এলিন এবং সাপ্তাহিক নবযুগ সম্পাদক শাহাব উদ্দিন সাগর। খবর ইউএনএ’র।
সংবাদ সম্মেলনে বলা হয়, এবারের সম্মেলন উত্তর আমেরিকায় বসবাসরত বাংলাদেশীদের জন্য একটি মিলনমেলা এবং নিজেদের সংস্কৃতি ও ঐতিহ্যকে নতুন প্রজন্মের কাছে তুলে ধরার ক্ষেত্রে নতুন ইতিহাসের জন্ম দেবে। বাংলাদেশের কৃষ্টি, কালচার, সাহিত্য-সংস্কৃতিতে সৃজনশীলতাকেও এবারের সম্মেলনে প্রাধান্য দেয়া হবে। প্রবাসীদের নিয়ে বিজনেস নেটওয়ার্ক তৈরি ও অভিজ্ঞতা বিনিময়, বিজনেস লাঞ্চ, বাংলাদেশের শিল্প, সাহিত্য, সাংস্কৃতিক, কৃষ্টি, ঐতিহ্য তুলে ধরে বিভিন্ন আসর, ইয়্যুথ গ্রæপের কার্যক্রম বৃদ্ধিসহ নানা বিষয়ের ওপর অগ্রাধিকার দেয়া হবে। এবারেও ফোবানার কার্যক্রম নিয়ে একটি ম্যাগাজিন বা স্মরণিকা প্রকাশ করা হবে। এছাড়া সম্মেলনের ‘প্রবাসী নতুন প্রজন্মই হোক আগামী ফোবানার শক্তি’ মূল প্রতিপাদ্যকে প্রাধান্য দিয়ে প্রবাসের নতুন প্রজন্মকে কিভাবে ফোবানার সঙ্গে নিবিড় সম্পর্ক তৈরি ও দায়িত্ব দেয়া যায় সে বিষয়ে প্রাধান্য থাকবে। এছাড়া বাংলাদেশ এবং প্রবাসের শিল্পীদের নিয়ে একটি নান্দনিক অনুষ্ঠান উপহার, ইস্যুভিত্তিক সেমিনারগুলোতে সংশ্লিষ্ট বিষয়ে বিশেষজ্ঞ পর্যায়ে ব্যক্তিবর্গকে আমন্ত্রণ জানানো হবে বলে জানানো হয়।
সংবাদ সম্মেলনে লিখিত বক্তব্যে শাহ নেওয়াজ বলেন, আপনারা অবগত আছেন যে ‘ফোবানা’ (ফেডারেশন অব বাংলাদেশী এসোসিয়েশনস অব নর্থ আমেরিকা) প্রবাসের একটি অত্যন্ত মর্যাদাপূর্ণ সংগঠন। ফোবানা উত্তর আমেরিকায় বসবাসরত বাংলাদেশী প্রবাসীদের বৃহত্তম একটি সংগঠন। এটি মূলত: যুক্তরাষ্ট্রের বিভিন্ন রাজ্য ও কানাডা থেকে পরিচালিত বাংলাদেশী সংগঠনগুলোর একটি সম্মিলিত প্ল্যাটফর্ম। ১৯৮৭ সালে ওয়াশিংটন ডিসিতে প্রথম সম্মেলন আয়োজনের মধ্য দিয়ে ফোবানার যাত্রা শুরু হয়। ফোবানার মূল লক্ষ্য ছিলো: যুক্তরাষ্ট্রে বসবাসরত বাংলাদেশীদেও মধ্যে ঐক্য ও সংহতি বৃদ্ধি, বাংলাদেশী সংস্কৃতি ও ঐতিহ্যকে তুলে ধরা এবং এর প্রচার ও প্রসার, বিভিন্ন সামাজিক, সাংস্কৃতিক এবং শিক্ষামূলক কার্যক্রমের মাধ্যমে প্রবাসীদের জীবনযাত্রার মান উন্নয়ন, যুক্তরাষ্ট্র ও বাংলাদেশের মধ্যে নানা ক্ষেত্রে সেতুবন্ধন রচনা করা। ফোবানা সৃষ্টির পর থেকে আমরা সে লক্ষেই কাজ করে আসছি। আমাদেও নির্ধারিত লক্ষ্যগুলোর সবক’টি সম্পূর্ণভাবে পূরণ করতে না পারলেও এ ক্ষেত্রে আমাদের চেষ্টার ত্রæটি ছিল না। আর তারই ফলশ্রæতিতে আমরা ইতোমধ্যে যুক্তরাষ্ট্রের বিভিন্ন রাজ্য ও পাশের দেশ কানাডায় মিলে ৩৮টি সফল সম্মেলন উপহার দিতে পেরেছি।
গিয়াস আহমেদ বলেন, গত দুই বছর আমাদের মধ্যে কিছু ভুল বোঝাবুঝির কারণে আমরা পৃথকভাবে সম্মেলন করেছিলাম। কিন্ত পৃথক সম্মেলন আয়োজন করলেও মন এবং মননে আমরা ফোবানার লক্ষ্য থেকে কখনো বিন্দুমাত্র বিচ্ছুত হয়নি। তাই আমাদের মধ্যকার সব ধরণের ভুল বোঝাবুঝির অবসান ঘটিয়ে এবারের সম্মেলন আমরা ঐক্যবদ্ধভাবে আয়োজন করছি। পাশাপাশি ফোবানার বিভক্ত সকল গ্রæপকে জাতীয় স্বার্থে দল মতের উর্ধ্বে ওঠে সব ধরনের ভেদাভেদ ভুলে গিয়ে এক ফোবানার পতাকা তলে ঐক্যবদ্ধ হয়ার জন্য তিনি সকলের প্রতি উদাত্ত আহবান জানান।
ঐক্যবদ্ধ ফোবানা সম্পর্কিত এক প্রশ্নের জবাবে শাহ নেওয়াজ বলেন, আমরা (শাহ নেওয়াজ-গিয়াস) ঐক্যবদ্ধই ছিলাম। কিন্তু সাংগঠনিক প্রক্রিয়ায় কিভাবে ঐক্যবদ্ধ হওয়া যায় তার জন্য একটু সময় লেগেছে। ঐক্যের বিষয়ে আমরা সমষ্টিগতভাবে একমত হয়েছি।
ফোবানায় নতুন প্রজন্মের অংশগ্রহণ প্রসঙ্গে ফোবানা’র সাবেক চেয়ারম্যান মোহাম্মদ হোসেন খান বলেন, ৪০তম ফোবানার দ্বারপ্রান্তে এসে আমরা উপলব্ধি করতে পেরেছি যে ফোবানার কর্মকান্ডে নতুন প্রজন্মের অংশগ্রহণ প্রয়োজন। এজন্যই এবারের ৩৯তম ফোবানা সম্মেলনে নতুন প্রজন্মের বিষয়টিকে প্রাধান্য দেয়া হয়েছে। এজন্য তাদের চাহিদা মোতাবেক কমূসূচী নেয়া হচ্ছে। এই উদ্যোগ সফল করতে ফোবানার সাবেক ও বর্তমান কর্মকর্তাদের স্কুল-কলেজ পড়ুয়া সন্তানদের ফোবানার সাথে সম্পৃক্ত করার আহবান জানান।
সম্পূরক এক প্রশ্নের উত্তরে শাহ নেওয়াজ বলেন, ফোবানার স্টিয়ারীং কমিটিতে নতুন প্রজন্মকে সম্পৃক্ত করতে ‘ফোবানার গঠনতন্ত্র’ পরিবর্তন করা হয়েছে। এছাড়াও ফোবানায় উপদেষ্টা পরিষদ গঠনের উদ্যোগ নেয়া হয়েছে। মোহাম্মদ হোসেন খান বলেন, ফোবানায় ক্রমে ক্রমে নতুন নতুম মুখ অন্তর্ভুক্ত হচ্ছে। তিনি বলেন, ফোনার স্টিয়ারিং কমিটি গঠনে ‘অভিজ্ঞতা সম্পন্ন ব্যক্তিবর্গ আর অংশগ্রহনকারী ব্যক্তিবর্গ’ সমন্বয়ে গঠনের বিষয় রয়েছে। আর এই বিষয়কে কেন্দ্র করেই ফোবানায় ড. নূরুন নবীদের সাথে আমাদের বিরোধ-বিভক্তি হয়েছে।
এ প্রসঙ্গে গিয়াস আহমেদ বলেন, আমি যখন ফোবানায় আসি, তখন নতুন প্রজন্ম হিসেবেই ফোবানায় যোগ দেই। তবে অবশ্যই নতুন প্রজন্মকে ফোবানায় সম্পৃক্ত করা সময়ের দাবী। প্রসঙ্গত তিনি বলেন, যুক্তরাষ্ট্রের মূলধারায় নতুন প্রজন্ম বিশেষ করে ‘শাহানা হানিফ-সোমা সাঈদ’ ভালো করলেও আমরা তাদের ফোবানায় সম্পৃক্ত করতে ব্যর্থ হয়েছি।
ফোবানার সাবেক চেয়ারম্যান আবু যুবায়ের দারা বলেন, নতুন প্রজন্মেও কথা ভেবেই আমরা ২০০০ সালের ফোবানায় ‘ট্যালেন্ট হান্ট’ কর্মসূচী গ্রহণ করেছিলাম। নতুন প্রজন্ম-কে ফোবানায় সম্পৃক্ত করতে আমরা নানাভাবে উদ্যোগ নিয়েছি, তবে আমরা ফেল করেছি। এবার আগামী ৩ জুলাই থেকে আবার ‘ট্যালেন্ট হান্ট’ কর্মসূচী চালু করা হবে। এজন্য তিনি সবার সহযোগিতা কামনা করেন।
চলতি বছর জর্জিয়ার আটলান্টা ও কানাডায় পৃথক আরো দুটি ফোবানা সম্মেলন সম্পর্কিত এক প্রশ্নের জবাবে শাহ নেওয়াজ বলেন, কানাডার ফোবানা কর্মকর্তাদের সাথে আমাদের কথা হয়েছে, তারা একসাথে কাজ করায় ঐক্যমত হয়েছেন এবং আশা করছি আগামী বছর সফল হবো।
অপর এক প্রশ্নের উত্তরে শাহ নেওয়াজ বলেন, এবারের ফোবানা’য় নানা দিক বিবেচনায় বাংলাদেশের আন্তর্বর্তী সরকার প্রধান ড. মুহাম্মদ ইউনূস-কে আমন্ত্রণ জানানোর বিষয়টি ভাবা হয়নি। মোহাম্মদ হোসেন খান বলেন, ড. ইউনূস-কে আমন্ত্রণ জানানোর চেষ্টা করেছি, কিন্তু দেশের পরিস্থিতিতে তিনি সময় দিতে পারছেন না বলেই আনুষ্ঠানিকভাবে আমন্ত্রণ জানানো হয়নি। তিনি বলেন, ফোবানা নির্দলীয় সংগঠন হিসেবে সব দিক বিবেচনায় ৩৯তম ফোবানা সম্মেলনে বাংলা একাডেমির সাহিত্য পুরস্কারপ্রাপ্ত বিশিষ্ট লেখক ও বুদ্ধিজীবী অধ্যাপক সলিমুল্লাহ খান-কে প্রধান অতিথি হিসেবে আমন্ত্রণ জানানো হয়েছে। তিনি আমন্ত্রণ গ্রহণ করেছেন। পাশাপাশি যুক্তরাষ্ট্রের বিভিন্ন রাজ্যে বাংলাদেশী-আমেরিকান জনপ্রতিনিধিদের অতিথি হিসেবে আমন্ত্রণ জানানোর উদ্যোগ অব্যাহত রয়েছে।
সংবাদ সম্মেলনে হাসানুজ্জামান হাসান ফোবানা সম্মেলনের সফলতা কামনা করেন এবং সম্মেলনের ‘কাব্য জলসা’ মরহুম আতিকুর রহমান সালু’র নামে করার প্রস্তাব রাখেন। সবশেষে ধন্যবাদ জ্ঞাপন করেন ৩৯ত ফোবানা’র মেম্বার সেক্রেটারী মইনুল হক চৌধুরী হেলাল।