নিউইয়র্ক ০৩:৩৩ অপরাহ্ন, বুধবার, ০৯ জুলাই ২০২৫, ২৫ আষাঢ় ১৪৩২ বঙ্গাব্দ
বিজ্ঞাপন :
মঙ্গলবারের পত্রিকা সাপ্তাহিক হককথা ও হককথা.কম এ আপনার প্রতিষ্ঠানের বিজ্ঞাপন দিতে যোগাযোগ করুন +1 (347) 848-3834

‘হৃদয় নাচে বৈশাখী সাজে’ ফ্রেন্ডস সোসাইটি’র বৈশাখী মেলা’য় প্রবাসীদের ঢল : পান্তা-ইলিশ, ডাল-ভর্তা ভাত ভোজন ॥ প্যারেড ॥ মনোজ্ঞ অনুষ্ঠান

রিপোর্ট:
  • প্রকাশের সময় : ০৭:৩৭:৫৬ অপরাহ্ন, মঙ্গলবার, ১ মে ২০১৮
  • / ২০২২ বার পঠিত

নিউইয়র্ক (ইউএনএ): ‘হৃদয় নাচে বৈশাখী সাজে’ শ্লোগান নিয়ে বিপুল উৎসাহ-উদ্দীপনা আর ব্যাপক আয়োজনে প্রতি বছরের মতো এবছরও বাংলা বর্ষবরণ করেছে নিউইয়র্ক তথা উত্তর আমেরিকার স্বনামধন্য সামাজিক সংগঠন জ্যামাইকা বাংলাদেশ ফ্রেন্ডস সোসাইটি ইনক। ‘এনওয়াই ইন্স্যুরেন্স লোক উৎসব ও বৈশাখী মেলা-১৪২৫’ শিরোনামে বাংলা বর্ষবরণ উপলক্ষ্যে ফ্রেন্ডস সোসাইটির উদ্যোগে ২৮ এপ্রিল শনিবার দিনব্যাপী অনুষ্ঠানের আয়োজন করা হয়। অনুষ্ঠানমালার মধ্যে ছিলো বর্ণাঢ্য প্যারেড, খোলা পার্কে পান্তা-ইলিশ আর ডাল-ভর্তা ভাত ভোজন, আকর্ষনীয় মেলা, মনোজ্ঞ সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান, স্মরণিকা প্রকাশ প্রভৃতি। মেলার গ্র্যান্ড মার্শাল ছিলেন ডেমোক্রেটিক পার্টির কুইন্স ডিষ্ট্রিক্ট লার্জ লীডার এটর্ণী মঈন চৌধুরী, বিশেষ অতিথি ছিলেন সাবেক এমপি এম এম শাহীন, বাংলাদেশ সোসাইটি ইনক’র সভাপতি কামাল আহমেদ ও বিশিষ্ট রিয়েল এস্টেট ইনভেস্টর মোহাম্মদ আনোয়ার হোসেন। খবর ইউএনএ’র।
বর্ণাঢ্য প্যারেড: শনিবার বেলা দেড়টার দিকে জ্যামাইকার ক্যাপ্টেন টিলি পার্ক থেকে প্যারেড শুরু হয়। বাংলাদেশের গ্রাম বাংলার ঐতিহ্য পালকী, ঢাক-ঢোল পিটিয়ে যুক্তরাষ্ট্র ও বাংলাদেশের জাতীয় পতাকা আর বিভিন্ন প্লাকার্ড ও বৈশাখী পোষ্টার হাতে প্রবাসীরা ক্যাপ্টেন টিলি পার্ক  থেকে র‌্যালীতে অংশ নেন। র‌্যালীর অগ্রভাগে ছিলো বাংলাদেশ ও যুক্তরাষ্ট্রের পতাকা আর ব্যানার হাতে নতুন প্রজন্ম, অতিথি, সোসাইটির উপদেষ্টা ও কর্মকর্তাবৃন্দ। রং বে রং এর পোশাক পড়ে প্রবাসীরা র‌্যালীতে অংশ নেন। র‌্যালীটি ক্যাপ্টেন টিলি পার্ক থেকে বের হয়ে হ্যাইল্যান্ড এভিনিউ ধরে হিলসাইড এভিনিউ ক্রস করে ১৬৮ স্ট্রীট ধরে মেলার মূল অনুষ্ঠানস্থল জ্যামাইকার ডিএমভি ফাস্ট পার্কিং লটে এসে শেষ হয়। র‌্যালীটি হিলসাইড এভিনিউ ধরে আসার পথে রাস্তায় চলাচলকারী দেশী ও ভিনদেশীরাসহ আশপাশের বিভিন্ন এপার্টমেন্ট থেকে জানালা খুলে জ্যামাইকাবাসীরাও র‌্যালীটি উপভোগ করেন এবং হাত নেড়ে সাধুবাদ জানান। প্যারেডের উদ্বোধন করেন ফ্রেন্ডস সোসাইটির অন্যতম উপদেষ্টা রেজাউল করীম চৌধুরী।
উদ্বোধন: এরপর ডিএমভি পার্কিং লটে আনুষ্ঠানিকভাবে মেলার উদ্বোধন করেন ফ্রেন্ডস সোসাইটির উপদেষ্টা ‘এনওয়াই ইন্স্যুরেন্স প্রেসিডেন্ট শাহ নেওয়াজ। এরপর শুরু হয় ভোজন পর্ব। এই পর্বের উদ্বোধন করেন গ্র্যান্ড মার্শাল ও ডেমোক্রেটিক পার্টির কুইন্স ডিষ্ট্রিক্ট লার্জ লীডার এটর্ণী মঈন চৌধুরী। এতে সর্বস্তরের শত শত মানুষ লাইনে দাঁেিয় খাবার গ্রহণ করেন এবং তৃপ্তি সহকারে খান।
বাংলাদেশ ও যুক্তরাষ্ট্রের জাতীয় সঙ্গীত পরিবেশনের মধ্য দিয়ে মূল মঞ্চে অনুষ্ঠানের শুভ সূচনা করা হয়। এরপর পরিবেশিত হয় বৈশাখী গান। পরবর্তীতে ‘ব্ল্যাক ডায়মন্ড’ খ্যাত বাংলাদেশের জনপ্রিয় শিল্পী বেবী নাজনীন ও জনপ্রিয় গণ সঙ্গীত শিল্পী ফকির আলমগীর সহ দেশ ও প্রবাসের জনপ্রিয় শিল্পীরা সঙ্গীত ও নৃত্য পরিবেশেন করে। রাত সাড়ে ১০টা পর্যন্ত চলে সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান। অনুষ্ঠানের মাঝে মাঝে উল্লেীখত অতিথিগণ ছাড়াও  জাতিসংঘে বাংলাদেশের সাবেক স্থায়ী প্রতিনিধি ড. এম মোমেন, কংগ্রেসম্যান প্রার্থী মিজান চৌধুরী প্রমুখ শুভেচ্ছা বক্তব্য রাখেন।
অনুষ্ঠানে বক্তারা নিউইয়র্ক তথা উত্তর আমেরিকায় বাংলাদেশী কমিউনিটিকে অগ্রসরমান কমিউনিটি হিসেবে উল্লেখ এবং নিজেদের অধিকার অবস্থান শক্তিশালী আর অধিকার প্রতিষ্ঠায় মূলধারায় নিজেদের অংশগ্রহণ করার উপর গুরুত্বারোপ করেন। বক্তারা ফ্রেন্ডস সোসাইটির কর্মকান্ডের প্রশংসা করেন এবং এই সংগঠনের সকল কাজে সহযোগিতার আশ্বাস দেন।

পান্তা-ইলিশ আর ডাল-ভর্তা ভাত ভোজন: ফ্রেন্ডস সোসাইটির বাংলা বর্ষণ অনুষ্ঠানের অন্যতম প্রধান আকর্ষণ ছিলো পান্তা-ইলিশ আর ডাল-ভর্তা ভাত ভোজন। শনিবার দুপুরে জ্যামাইকার ডিএমভি ফাস্ট পার্কিং লটে এই ভোজন পর্বের আয়োজন করা হয়। বেলা দুইটা থেকে বিকেল সাড়ে তিনটা পর্যন্ত প্রবাসের সর্বস্তরের শত শত শিশু-কিশোর-কিশোরী, নারী-পুরুষ পান্তা-ইলিশ, আলু ও বেগুন ভর্তা আর ডাল-ভাত ভোজন করেন। এসময় ফ্রেন্ডস সোসাইটির প্রধান উপদেষ্টা এবিএম ওসমান গনি, উপদেষ্টা যথাক্রমে নাসির আলী খান পল, ডা. ওয়াজেদ এ খান, ছদরুন নূর, মনজুর আহমেদ চৌধুরী, ডা. টমাস দুলু রায়, এবিএম সালাহউদ্দিন আহমেদ, আবুল ফজল দিদারুল ইসলাম, মোহাম্মদ শাহ নেওয়াজ ও ফারুক হোসেন তালুকদার, মেলা কমিটির আহ্বায়ক ও ফ্রেন্ডস সোসাইটির প্রতিষ্ঠাতা সভাপতি মোহাম্মদ ফখরুল ইসলাম দেলোয়ার, সংগঠনের সাবেক সভাপতি ও মেলার সদস্য সচিব সাইফুল ইসলাম, মেলার প্রধান সমন্বয়কারী নাসির আলী খান পল, সিনিয়র নির্বাহী যুগ্ম আহ্বায়ক বিলাল চৌধুরী, সভাপতি শেখ হায়দার আলী, সাধারণ সম্পাদক ইফজাল আহমেদ চৌধুরী, উপদেষ্টা মনির হোসেন, সৈয়দ আতিকুর রহমান, সাবেক সাধারণ সম্পাদক এএফ মিসবাহউজ্জামান ও রেজাউল আজাদ ভূঁইয়া, যুগ্ম সদস্য সচিব এডভোকেট কামরুজ্জামান বাবু, সংগঠনের সাবেক সাংগঠনিক সম্পাদক রিজু মোহাম্মদ সহ সোসাইটির অন্যান্য কর্মকর্তা এবং কমিউনিটির বিশিষ্ট ব্যক্তিবর্গ উপস্থিত ছিলেন।
অনুষ্ঠানের অতিথিবৃন্দ সহ কমিউনিটির বিশিষ্ট ব্যক্তিবর্গ, বিভিন্ন মিডিয়ার সম্পাদক/পরিচালক, সাংবাদিক এবং সংগঠনের উপদেষ্টাবৃন্দ প্রবাসী বাংলাদেশীদের সাথে ভোজন পর্বে অংশ নেন। উল্লেখ্য, পান্তা-ইলিশ ভোজনের খাবার পরিবেশন করে জ্যামাইকার স্টার কাবাব রেষ্টুরেন্ট।
মূল অনুষ্ঠান: বর্ণাঢ্য র‌্যালী, পান্তা-ইলিশ, ডাল-ভর্তা ভোজন  শেষে বিকেল ৫টার দিকে শুরু হয় ‘এনওয়াই ইন্স্যুরেন্স লোক উৎসব ও বৈশাখী মেলা’র মূল অনুষ্ঠান। অনুষ্ঠানে ফ্রেন্ডস সোসাইটির উপদেষ্টাবৃন্দ ও কর্মকর্তাদের পরিচয় করিয়ে দেন মেলার আহ্বায়ক ফখরুল ইসলাম দেলোয়ার। স্বাগত বক্তব্য রাখেন ফ্রেন্ডস সোসাইটির সভাপতি শেখ হায়দার আলী। এই পর্ব পরিচালনা করেন সাধারণ সম্পাদক ইফজাল আহমেদ চৌধুরী। সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান উপস্থাপনায় ছিলেন টাইম টেলিভিশন-এর নিউজ প্রেজন্টোর দিমা নেফার  তিতি।
পদক ও অ্যাওয়ার্ড প্রদান: বিগত কয়েক বছরের ধারাবাহিতায় এবছরও ফ্রেন্ডস সোসাইটির পক্ষ থেকে ‘বৈশাখী পদক’ এবং কমিউনিটিতে বিশেষ অবদান রাখার জন্য কয়েকজন বিশিষ্ট ব্যক্তিকে সংগঠনের পক্ষ থেকে অ্যাওয়ার্ড প্রদান করা হয়। চলতি বছর অর্থাৎ ১৪২৫ বাংলা বছরের ‘বৈশাখী পদক’ প্রদান করা হয় বিশিষ্ট সমাজসেবী ও ব্যবসায়ী শাহ নেওয়াজকে। এছাড়াও প্ল্যাক পদান করা হয় সাপ্তাহিক বাংলাদেশ-এর সম্পাদক ডা. ওয়াজেদ এ খান, বিশিষ্ট ডেন্টিস্ট ডা. ওয়াহিদুর রহমান, অ্যাক্টিভিস্ট কমিউনিটি কাজী আজম, বিশিষ্ট রিয়েল এস্টেট ব্যবসায়ী মইনুল ইসলাম, বিশিষ্ট ব্যবসায়ী আমজাদ হোসেন সেলিম ও আব্দুল কাদের মিয়া, ফ্রেন্ডস সোসাইটির বিদায়ী সভাপতি সাইফুল ইসলাম ও রেজাউল আজাদ ভূইয়া সহ আরো কয়েকজনকে। এছাড়াও মরনোত্তর প্ল্যাক প্রদান করা হয় খানস টিউটোরিয়াল-এর ড. মনসুর খান ও মান্নান সুপার মার্কেটের অন্যতম সত্ত্বাধিকারী সাঈদ রহমান মান্নানকে।
সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান: মেলার মূল আকর্ষণ সাংস্কৃতিক পর্বে দেশ ও প্রবাসের জনপ্রিয় শিল্পীরা সঙ্গীত ও নৃত্য পরিবেশন করেন। মেলার অতিথিবৃন্দ সহ শত শত প্রবাসী প্রাণভরে অনুষ্ঠানটি উপভোগ করেন। সাংস্কৃতিক পর্বে বাংলাদেশ থেকে আগত শিল্পী বেবী নাজনীন ছাড়াও প্রবাসের জনপ্রিয় শিল্পীরা সঙ্গীত পরিবেশন করেন। সময়ের অভাবে শিল্পী ফকির আলমগীর একটি গান গেয়ে শুনান।
স্মরণিকা প্রকাশ: বাংলা বর্ষবরণ উপলক্ষ্যে প্রতিবছরের মতো এবছরও ‘হৃদয়ে বাংলা’ র্শীষক স্মরণিকা প্রকাশ করা হয়। এটি সম্পাদনা করেন সোসাইটির অন্যতম উপদেষ্টা সালাহউদ্দিন আহমেদ। প্রকাশনার সহযোগিতায় ছিলো ডিজাইন স্টুডিও।
‘এনওয়াই ইন্স্যুরেন্স লোক উৎসব ও বৈশাখী মেলা উপলক্ষে ডিএমভি ফাস্ট পার্কিং লটে খাবারের স্টলসহ শাড়ী-কাপড়-গহনার স্টল বসে। হাজার হাজার প্রবাসী সপরিবারে মেলাটি উপভোগ করেন। রাত সাড়ে ১০টা পর্যন্ত মেলার কর্মকান্ড চলে। বিপুল সংখ্যক প্রবাসীর উপস্থিতিতে মেলা প্রাঙ্গণ উৎসবমুখর হয়ে এক টুকরো বাংলাদেশে পরিণত হয়। সফলভাবে মেলা সম্পন্ন হওয়ায় ফ্রেন্ডস সোসাইটির সভাপতি শেখ হায়দার আলী সবার প্রতি কৃতজ্ঞতা জানিয়ে তার সমাপানী বক্তব্যের মধ্য দিয়ে ‘এনওয়াই ইন্স্যুরেন্স লোক উৎসব ও বৈশাখী মেলা’র সমাপ্তি ঘোষণা করেন। উল্লেখ্য, টাইম টেলিভিশন মেলার মূল পর্ব সরাসরি সম্প্রচার করে।
‘এনওয়াই ইন্স্যুরেন্স লোক উৎসব ও বৈশাখী মেলা’ সফল করতে উল্লেখযোগ্য ভূমিকা পালনকারীদের মধ্যে আরো সহযোগিতায় ছিলেন গোলাম মহিউদ্দিন মিঠু, সেবুল মিয়া, মুক্তার হোসেন, আলী কে কাকন, জুয়েল মিয়া, সফিকুল আলম শাহিদ, একেএম সফিকুল ইসলাম, হুমায়ুন কবীর, আব্দুল মন্নাফ তালুকদার, গিয়াস উদ্দিন মঞ্জু, কাজী এন ইসলাম, আব্দুল মজিদ আকন্দ, আফরোজা রোজী, সামিউর রহমান, হামিদুর রহমান, সুলতান খান, ইমাম জাকির, আলহাজ সাজ্জাদ হোসেন, সৈয়দ লিটন আলী, সৈয়দ রাব্বী, গোলাম আজম জাকি, সহদেব তালুকদার, মোহাম্মদ কবীর হোসেন মুন্সি, দেলোয়ার হোসেন মানিক প্রমুখ।

সোশ্যাল মিডিয়ায় খবরটি শেয়ার করুন

About Author Information

‘হৃদয় নাচে বৈশাখী সাজে’ ফ্রেন্ডস সোসাইটি’র বৈশাখী মেলা’য় প্রবাসীদের ঢল : পান্তা-ইলিশ, ডাল-ভর্তা ভাত ভোজন ॥ প্যারেড ॥ মনোজ্ঞ অনুষ্ঠান

প্রকাশের সময় : ০৭:৩৭:৫৬ অপরাহ্ন, মঙ্গলবার, ১ মে ২০১৮

নিউইয়র্ক (ইউএনএ): ‘হৃদয় নাচে বৈশাখী সাজে’ শ্লোগান নিয়ে বিপুল উৎসাহ-উদ্দীপনা আর ব্যাপক আয়োজনে প্রতি বছরের মতো এবছরও বাংলা বর্ষবরণ করেছে নিউইয়র্ক তথা উত্তর আমেরিকার স্বনামধন্য সামাজিক সংগঠন জ্যামাইকা বাংলাদেশ ফ্রেন্ডস সোসাইটি ইনক। ‘এনওয়াই ইন্স্যুরেন্স লোক উৎসব ও বৈশাখী মেলা-১৪২৫’ শিরোনামে বাংলা বর্ষবরণ উপলক্ষ্যে ফ্রেন্ডস সোসাইটির উদ্যোগে ২৮ এপ্রিল শনিবার দিনব্যাপী অনুষ্ঠানের আয়োজন করা হয়। অনুষ্ঠানমালার মধ্যে ছিলো বর্ণাঢ্য প্যারেড, খোলা পার্কে পান্তা-ইলিশ আর ডাল-ভর্তা ভাত ভোজন, আকর্ষনীয় মেলা, মনোজ্ঞ সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান, স্মরণিকা প্রকাশ প্রভৃতি। মেলার গ্র্যান্ড মার্শাল ছিলেন ডেমোক্রেটিক পার্টির কুইন্স ডিষ্ট্রিক্ট লার্জ লীডার এটর্ণী মঈন চৌধুরী, বিশেষ অতিথি ছিলেন সাবেক এমপি এম এম শাহীন, বাংলাদেশ সোসাইটি ইনক’র সভাপতি কামাল আহমেদ ও বিশিষ্ট রিয়েল এস্টেট ইনভেস্টর মোহাম্মদ আনোয়ার হোসেন। খবর ইউএনএ’র।
বর্ণাঢ্য প্যারেড: শনিবার বেলা দেড়টার দিকে জ্যামাইকার ক্যাপ্টেন টিলি পার্ক থেকে প্যারেড শুরু হয়। বাংলাদেশের গ্রাম বাংলার ঐতিহ্য পালকী, ঢাক-ঢোল পিটিয়ে যুক্তরাষ্ট্র ও বাংলাদেশের জাতীয় পতাকা আর বিভিন্ন প্লাকার্ড ও বৈশাখী পোষ্টার হাতে প্রবাসীরা ক্যাপ্টেন টিলি পার্ক  থেকে র‌্যালীতে অংশ নেন। র‌্যালীর অগ্রভাগে ছিলো বাংলাদেশ ও যুক্তরাষ্ট্রের পতাকা আর ব্যানার হাতে নতুন প্রজন্ম, অতিথি, সোসাইটির উপদেষ্টা ও কর্মকর্তাবৃন্দ। রং বে রং এর পোশাক পড়ে প্রবাসীরা র‌্যালীতে অংশ নেন। র‌্যালীটি ক্যাপ্টেন টিলি পার্ক থেকে বের হয়ে হ্যাইল্যান্ড এভিনিউ ধরে হিলসাইড এভিনিউ ক্রস করে ১৬৮ স্ট্রীট ধরে মেলার মূল অনুষ্ঠানস্থল জ্যামাইকার ডিএমভি ফাস্ট পার্কিং লটে এসে শেষ হয়। র‌্যালীটি হিলসাইড এভিনিউ ধরে আসার পথে রাস্তায় চলাচলকারী দেশী ও ভিনদেশীরাসহ আশপাশের বিভিন্ন এপার্টমেন্ট থেকে জানালা খুলে জ্যামাইকাবাসীরাও র‌্যালীটি উপভোগ করেন এবং হাত নেড়ে সাধুবাদ জানান। প্যারেডের উদ্বোধন করেন ফ্রেন্ডস সোসাইটির অন্যতম উপদেষ্টা রেজাউল করীম চৌধুরী।
উদ্বোধন: এরপর ডিএমভি পার্কিং লটে আনুষ্ঠানিকভাবে মেলার উদ্বোধন করেন ফ্রেন্ডস সোসাইটির উপদেষ্টা ‘এনওয়াই ইন্স্যুরেন্স প্রেসিডেন্ট শাহ নেওয়াজ। এরপর শুরু হয় ভোজন পর্ব। এই পর্বের উদ্বোধন করেন গ্র্যান্ড মার্শাল ও ডেমোক্রেটিক পার্টির কুইন্স ডিষ্ট্রিক্ট লার্জ লীডার এটর্ণী মঈন চৌধুরী। এতে সর্বস্তরের শত শত মানুষ লাইনে দাঁেিয় খাবার গ্রহণ করেন এবং তৃপ্তি সহকারে খান।
বাংলাদেশ ও যুক্তরাষ্ট্রের জাতীয় সঙ্গীত পরিবেশনের মধ্য দিয়ে মূল মঞ্চে অনুষ্ঠানের শুভ সূচনা করা হয়। এরপর পরিবেশিত হয় বৈশাখী গান। পরবর্তীতে ‘ব্ল্যাক ডায়মন্ড’ খ্যাত বাংলাদেশের জনপ্রিয় শিল্পী বেবী নাজনীন ও জনপ্রিয় গণ সঙ্গীত শিল্পী ফকির আলমগীর সহ দেশ ও প্রবাসের জনপ্রিয় শিল্পীরা সঙ্গীত ও নৃত্য পরিবেশেন করে। রাত সাড়ে ১০টা পর্যন্ত চলে সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান। অনুষ্ঠানের মাঝে মাঝে উল্লেীখত অতিথিগণ ছাড়াও  জাতিসংঘে বাংলাদেশের সাবেক স্থায়ী প্রতিনিধি ড. এম মোমেন, কংগ্রেসম্যান প্রার্থী মিজান চৌধুরী প্রমুখ শুভেচ্ছা বক্তব্য রাখেন।
অনুষ্ঠানে বক্তারা নিউইয়র্ক তথা উত্তর আমেরিকায় বাংলাদেশী কমিউনিটিকে অগ্রসরমান কমিউনিটি হিসেবে উল্লেখ এবং নিজেদের অধিকার অবস্থান শক্তিশালী আর অধিকার প্রতিষ্ঠায় মূলধারায় নিজেদের অংশগ্রহণ করার উপর গুরুত্বারোপ করেন। বক্তারা ফ্রেন্ডস সোসাইটির কর্মকান্ডের প্রশংসা করেন এবং এই সংগঠনের সকল কাজে সহযোগিতার আশ্বাস দেন।

পান্তা-ইলিশ আর ডাল-ভর্তা ভাত ভোজন: ফ্রেন্ডস সোসাইটির বাংলা বর্ষণ অনুষ্ঠানের অন্যতম প্রধান আকর্ষণ ছিলো পান্তা-ইলিশ আর ডাল-ভর্তা ভাত ভোজন। শনিবার দুপুরে জ্যামাইকার ডিএমভি ফাস্ট পার্কিং লটে এই ভোজন পর্বের আয়োজন করা হয়। বেলা দুইটা থেকে বিকেল সাড়ে তিনটা পর্যন্ত প্রবাসের সর্বস্তরের শত শত শিশু-কিশোর-কিশোরী, নারী-পুরুষ পান্তা-ইলিশ, আলু ও বেগুন ভর্তা আর ডাল-ভাত ভোজন করেন। এসময় ফ্রেন্ডস সোসাইটির প্রধান উপদেষ্টা এবিএম ওসমান গনি, উপদেষ্টা যথাক্রমে নাসির আলী খান পল, ডা. ওয়াজেদ এ খান, ছদরুন নূর, মনজুর আহমেদ চৌধুরী, ডা. টমাস দুলু রায়, এবিএম সালাহউদ্দিন আহমেদ, আবুল ফজল দিদারুল ইসলাম, মোহাম্মদ শাহ নেওয়াজ ও ফারুক হোসেন তালুকদার, মেলা কমিটির আহ্বায়ক ও ফ্রেন্ডস সোসাইটির প্রতিষ্ঠাতা সভাপতি মোহাম্মদ ফখরুল ইসলাম দেলোয়ার, সংগঠনের সাবেক সভাপতি ও মেলার সদস্য সচিব সাইফুল ইসলাম, মেলার প্রধান সমন্বয়কারী নাসির আলী খান পল, সিনিয়র নির্বাহী যুগ্ম আহ্বায়ক বিলাল চৌধুরী, সভাপতি শেখ হায়দার আলী, সাধারণ সম্পাদক ইফজাল আহমেদ চৌধুরী, উপদেষ্টা মনির হোসেন, সৈয়দ আতিকুর রহমান, সাবেক সাধারণ সম্পাদক এএফ মিসবাহউজ্জামান ও রেজাউল আজাদ ভূঁইয়া, যুগ্ম সদস্য সচিব এডভোকেট কামরুজ্জামান বাবু, সংগঠনের সাবেক সাংগঠনিক সম্পাদক রিজু মোহাম্মদ সহ সোসাইটির অন্যান্য কর্মকর্তা এবং কমিউনিটির বিশিষ্ট ব্যক্তিবর্গ উপস্থিত ছিলেন।
অনুষ্ঠানের অতিথিবৃন্দ সহ কমিউনিটির বিশিষ্ট ব্যক্তিবর্গ, বিভিন্ন মিডিয়ার সম্পাদক/পরিচালক, সাংবাদিক এবং সংগঠনের উপদেষ্টাবৃন্দ প্রবাসী বাংলাদেশীদের সাথে ভোজন পর্বে অংশ নেন। উল্লেখ্য, পান্তা-ইলিশ ভোজনের খাবার পরিবেশন করে জ্যামাইকার স্টার কাবাব রেষ্টুরেন্ট।
মূল অনুষ্ঠান: বর্ণাঢ্য র‌্যালী, পান্তা-ইলিশ, ডাল-ভর্তা ভোজন  শেষে বিকেল ৫টার দিকে শুরু হয় ‘এনওয়াই ইন্স্যুরেন্স লোক উৎসব ও বৈশাখী মেলা’র মূল অনুষ্ঠান। অনুষ্ঠানে ফ্রেন্ডস সোসাইটির উপদেষ্টাবৃন্দ ও কর্মকর্তাদের পরিচয় করিয়ে দেন মেলার আহ্বায়ক ফখরুল ইসলাম দেলোয়ার। স্বাগত বক্তব্য রাখেন ফ্রেন্ডস সোসাইটির সভাপতি শেখ হায়দার আলী। এই পর্ব পরিচালনা করেন সাধারণ সম্পাদক ইফজাল আহমেদ চৌধুরী। সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান উপস্থাপনায় ছিলেন টাইম টেলিভিশন-এর নিউজ প্রেজন্টোর দিমা নেফার  তিতি।
পদক ও অ্যাওয়ার্ড প্রদান: বিগত কয়েক বছরের ধারাবাহিতায় এবছরও ফ্রেন্ডস সোসাইটির পক্ষ থেকে ‘বৈশাখী পদক’ এবং কমিউনিটিতে বিশেষ অবদান রাখার জন্য কয়েকজন বিশিষ্ট ব্যক্তিকে সংগঠনের পক্ষ থেকে অ্যাওয়ার্ড প্রদান করা হয়। চলতি বছর অর্থাৎ ১৪২৫ বাংলা বছরের ‘বৈশাখী পদক’ প্রদান করা হয় বিশিষ্ট সমাজসেবী ও ব্যবসায়ী শাহ নেওয়াজকে। এছাড়াও প্ল্যাক পদান করা হয় সাপ্তাহিক বাংলাদেশ-এর সম্পাদক ডা. ওয়াজেদ এ খান, বিশিষ্ট ডেন্টিস্ট ডা. ওয়াহিদুর রহমান, অ্যাক্টিভিস্ট কমিউনিটি কাজী আজম, বিশিষ্ট রিয়েল এস্টেট ব্যবসায়ী মইনুল ইসলাম, বিশিষ্ট ব্যবসায়ী আমজাদ হোসেন সেলিম ও আব্দুল কাদের মিয়া, ফ্রেন্ডস সোসাইটির বিদায়ী সভাপতি সাইফুল ইসলাম ও রেজাউল আজাদ ভূইয়া সহ আরো কয়েকজনকে। এছাড়াও মরনোত্তর প্ল্যাক প্রদান করা হয় খানস টিউটোরিয়াল-এর ড. মনসুর খান ও মান্নান সুপার মার্কেটের অন্যতম সত্ত্বাধিকারী সাঈদ রহমান মান্নানকে।
সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান: মেলার মূল আকর্ষণ সাংস্কৃতিক পর্বে দেশ ও প্রবাসের জনপ্রিয় শিল্পীরা সঙ্গীত ও নৃত্য পরিবেশন করেন। মেলার অতিথিবৃন্দ সহ শত শত প্রবাসী প্রাণভরে অনুষ্ঠানটি উপভোগ করেন। সাংস্কৃতিক পর্বে বাংলাদেশ থেকে আগত শিল্পী বেবী নাজনীন ছাড়াও প্রবাসের জনপ্রিয় শিল্পীরা সঙ্গীত পরিবেশন করেন। সময়ের অভাবে শিল্পী ফকির আলমগীর একটি গান গেয়ে শুনান।
স্মরণিকা প্রকাশ: বাংলা বর্ষবরণ উপলক্ষ্যে প্রতিবছরের মতো এবছরও ‘হৃদয়ে বাংলা’ র্শীষক স্মরণিকা প্রকাশ করা হয়। এটি সম্পাদনা করেন সোসাইটির অন্যতম উপদেষ্টা সালাহউদ্দিন আহমেদ। প্রকাশনার সহযোগিতায় ছিলো ডিজাইন স্টুডিও।
‘এনওয়াই ইন্স্যুরেন্স লোক উৎসব ও বৈশাখী মেলা উপলক্ষে ডিএমভি ফাস্ট পার্কিং লটে খাবারের স্টলসহ শাড়ী-কাপড়-গহনার স্টল বসে। হাজার হাজার প্রবাসী সপরিবারে মেলাটি উপভোগ করেন। রাত সাড়ে ১০টা পর্যন্ত মেলার কর্মকান্ড চলে। বিপুল সংখ্যক প্রবাসীর উপস্থিতিতে মেলা প্রাঙ্গণ উৎসবমুখর হয়ে এক টুকরো বাংলাদেশে পরিণত হয়। সফলভাবে মেলা সম্পন্ন হওয়ায় ফ্রেন্ডস সোসাইটির সভাপতি শেখ হায়দার আলী সবার প্রতি কৃতজ্ঞতা জানিয়ে তার সমাপানী বক্তব্যের মধ্য দিয়ে ‘এনওয়াই ইন্স্যুরেন্স লোক উৎসব ও বৈশাখী মেলা’র সমাপ্তি ঘোষণা করেন। উল্লেখ্য, টাইম টেলিভিশন মেলার মূল পর্ব সরাসরি সম্প্রচার করে।
‘এনওয়াই ইন্স্যুরেন্স লোক উৎসব ও বৈশাখী মেলা’ সফল করতে উল্লেখযোগ্য ভূমিকা পালনকারীদের মধ্যে আরো সহযোগিতায় ছিলেন গোলাম মহিউদ্দিন মিঠু, সেবুল মিয়া, মুক্তার হোসেন, আলী কে কাকন, জুয়েল মিয়া, সফিকুল আলম শাহিদ, একেএম সফিকুল ইসলাম, হুমায়ুন কবীর, আব্দুল মন্নাফ তালুকদার, গিয়াস উদ্দিন মঞ্জু, কাজী এন ইসলাম, আব্দুল মজিদ আকন্দ, আফরোজা রোজী, সামিউর রহমান, হামিদুর রহমান, সুলতান খান, ইমাম জাকির, আলহাজ সাজ্জাদ হোসেন, সৈয়দ লিটন আলী, সৈয়দ রাব্বী, গোলাম আজম জাকি, সহদেব তালুকদার, মোহাম্মদ কবীর হোসেন মুন্সি, দেলোয়ার হোসেন মানিক প্রমুখ।