হাসিনা সরকার পতনে ৭ নভেম্বরের চেতনায় আরেকটি বিপ্লব দরকার : অধ্যাপক দেলোয়ার-বাদল নেতৃত্বাধীন বিএনপি’র সভায় বক্তারা
- প্রকাশের সময় : ০৬:১৯:৩১ অপরাহ্ন, সোমবার, ৭ নভেম্বর ২০২২
- / ৫৪ বার পঠিত
হককথা রিপোর্ট: যুক্তরাষ্ট্র বিএনপি’র সাবেক সিনিয়র সহ সভাপতি অধ্যাপক দেলোয়ার হোসেন ও সাবেক যুগ্ম সম্পাদক আখতার হোসেন বাদল নেতৃত্বাধীন নিউইয়র্ক ষ্টেট বিএনপি’র সভায় বক্তারা বলেছেন, শেখ হাসিনা সরকার পতনে পচাত্তুরের ঐতিহাসিক ৭ নভেম্বরের চেতনায় আরেকটি বিপ্লব দরকার। এজন্য দেশ ও প্রবাসে স্বাধীনতার ঘোষক, শহীদ রাষ্ট্রপতি জিয়াউর রহমানের আদর্শের সকল নেতা-কর্মীকে ঐক্যবদ্ধ হতে হবে। বক্তারা বলেন, সাবেক প্রধানমন্ত্রী বেগম খালেদা জিয়া ও বিএনপি’র ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রাহমানের নেতৃত্বে বাংলাদেশের মানুষ জেগে উঠেছে। রাতের ভোটের হাসিনা সরকারের বাধাবিপত্তি রোধ করে বিএনপির বিভাগীয় সমাবেশগুলোতে মানুষের জনশ্রোতই প্রমাণ করছে দেশের মানুষ পরিবর্তন চায়, শেখ হাসিনা সরকারের বিদায় চায়। বক্তারা বলেন, সরকার পতনে দেশ ও প্রবাসে বিপ্লব শুরু হয়ে গেছে। বক্তারা যুক্তরাষ্ট্র বিএনপি’র কমিটি গঠন প্রসঙ্গে ‘যুক্তরাষ্ট্র বিএনপি’র ভার্চ্যুয়াল নয়, একচ্যুয়াল কমিটি দাবী’ করে বলেন, দলের দায়িত্বশীলদের বাস্তবতা বুঝে, মাঠের কর্মীদের মতামত নিয়ে কমিটি করতে হবে। বিদেশে বসে ভার্চ্যুয়াল সভা করে বা পকেট কমিটি ঘোষণা যুক্তরাষ্ট্র বিএনপির নেতা-কর্মীরা মেনে নেবে না।
বিএনপি’র ভাষায় ‘ঐতিহাসিক জাতীয় বিপ্লব ও সংহতি দিবস’ পালন উপলক্ষ্যে নিউইয়র্কে আয়োজিত আলোচনা সভায় বক্তারা উপরোক্ত কথা বলেন। রোববার সন্ধ্যায় সিটির ব্রæকলীলের রাধুনী রেষ্টুরেন্টে এই সভার আয়োজন করা হয়। সভার আগে স্থানীয় ‘লিটল বাংলাদেশ’ (চার্চ-ম্যাকডোনাল্ড ইন্টারসেকশন)-এ র্যালী অনুষ্ঠিত হয়। অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি ছিলেন যুক্তরাষ্ট্র বিএনপি’র সাবেক সিনিয়র সহ সভাপতি অধ্যাপক দেলোয়ার হোসেন, প্রধান বক্তা ছিলেন মূলধারার রাজনীতিক, বিশিস্ট ব্যবসায়ী ও যুক্তরাষ্ট্র বিএনপির সাবেক যুগ্ম সম্পাদক আখতার হোসেন বাদল, বিশেষ অতিথি ছিলেন গেটার ওয়াশিংটন জাতীয়তাবাদী ফোরামের সাধারণ সম্পাদক ড. ইঞ্জিনিয়ার জিয়া উদ্দিন আহমেদ, গেষ্ট অব অনার ছিলেন প্রধান সমন্বয়কারী ইঞ্জিনিয়ার আব্দুল খালেক এবং আমন্ত্রিত অতিথি ছিলেন নিউজার্সী ষ্টেট বিএনপি’র সভাপতি নূরুল ইসলাম ও সাধারণ সম্পাদক আবুল কালাম।
অধ্যাপক দেলোয়ার-বাদল নেতৃত্বাধীন যুক্তরাষ্ট্র বিএনপি ঘোষিত নিউইয়র্ক ষ্টেট বিএনপি’র আহŸায়ক সালেহ আহমেদ মানিকের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠিত সভার শুরুতে পবিত্র কোরআন থেকে তেলাওয় করেন তৈমুর রহমান। এরপর বাংলাদেশের জাতীয় সঙ্গীত ও দলীয় সঙ্গীত ‘প্রথম বাংলাদেশ আমার শেষ বাংলাদেশ, জীবন বাংলাদেশ আমার মরন বাংলাদেশ’ পরিবেশ করা হয়। অনুষ্ঠানে অতিথিদের ফুল দিয়ে বরণ করা হয়। আলোচনা সভা যৌথভাবে পরিচালনা করেন ষ্টেট বিবিএনপি’র সদস্য সচিব মোহাম্মদ দেলোয়ার হোসেন শিপন ও নিউইয়র্ক সিটি বিএনপি’র সাধারণ সম্পাদক মাহবুবুর রহমান। অনুষ্ঠানে নিউইয়র্কের বিভিন্ন বরো ছাড়াও নিউজার্সী থেকে বিএনপি’র বিপুল সংখ্যক নেতা-কর্মীরা যোগ দেন। বক্তব্যের মাঝে মাঝে তাদের শ্লোগানে অনুষ্ঠান স্থল মুখরিত হয়ে উঠে।
সভায় আমন্ত্রিত অতিথি ছাড়াও বক্তব্য রাখেন ‘জাতীয় বিপ্লব ও সংহতি দিবস’ উদযাপন কমিটির আহŸায়ক ও যুক্তরাষ্ট্র বিএনপি’র সাবেক সহ সাংগঠনিক সম্পাদক মোহাম্মদ হোসেন কচি, ব্রঙ্কস মুক্তিযোদ্ধা সংসদের ডেপুটি কমান্ডার আব্দস সালাম, নোয়খালী জেলা যুবদলের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক মোহাম্মদ মহিউদ্দিন, যুক্তরাষ্ট্র জাগপা’র সভাপতি মোহাম্মদ রহমত উল্লাহ ও সাধারণ সম্পাদক মোহাম্মদ নোমান সিদ্দিকী, যুক্তরাষ্ট্র বিএনপি’র সাবেক সাহিত্য ও প্রকাশনা সম্পাদক মোহাম্মদ আহসান উল্লাহ বাচ্চু, নিউইয়র্ক সিটি বিএনপি’র সভাপতি সাইফুল ইসলাম, যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক মোহাম্মদ জাহিদ হেসেন ও জেদ্দা বিএনপি’র সাবেক সহ সভাপতি মোহাম্মদ মীর হোসেন, নিউজার্সী ষ্টেট বিএনপি’র যুগ্ম সম্পাদক নাবীর হোসেন সহ বিএনপি নেতা মোহাম্মদ মোস্তফা কামাল মুকুল, গিয়াস উদ্দিন আহমেদ, মোহাম্মদ রিন্টু আলম, মোহাম্মদ ইউনুস, মোহাম্মদ মনির হোসেন, আশরাফুল হাসান, মোহাম্মদ স¤্রাট, মোহাম্মদ মহিন উদ্দিন প্রমুখ।
সভায় অধ্যাপক দেলোয়ার হোসেন বলেন, ১৯৭৫ পূর্ববর্তী বাংলাদেশ আর আজকের ২০২২ সালের বর্তমান বাংলাদেশের চিত্র একই অবস্থা। তাই ৭৫এর সাতই নভেম্বরের ঘটনায় জিয়ার নেতৃত্বে দেশ যেভাবে রক্ষা পেয়েছিলো, আজকের দিণে খালেদা জিয়া আর তারেক রহমানের নেতৃত্বে আবার বিপ্লবের মধ্য দিয়ে দেশকে রক্ষা করতে হবে। তিনি বলেন, আগামী ১০ ডিসেম্বর নয়, তার আগেই আওয়ামী সরকারের পতন হবে ইনশাল্লাহ। তিনি বলেন, সরকার নয়, দেশ বেগম খালেদা জিয়ার নেতৃত্বেই দেশ চলছে বলে বিএনপি সমাবেশ সরকার বন্ধ করতে পারছে না এবং এসব সমাবেশে লাখো জনতা পঙ্গপালের মতো ছুটে আসছে। আগামী দিনে খালেদা জিয়ার নেতৃত্বে বিএনপি নতুন করে বাংলাদেশকে নেতৃত্ব দেবে।
আখতার হোসেন বাদল বলেন, আমরা বাংলাদেশের স্বাধীনতার ঘোষক শহীদ রাষ্ট্রপতি জিয়াউর রহমানের আদর্শের রাজনীতি করি। আমাদের নেতা আপোষহীন নেত্রী, সাবেক প্রধানমন্ত্রী বেগম খালেদা জিয়া আর বিএনপি’র ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান। এর বাইরে আমাদের কোন নেতা নেই, আমরা সবাই বিএনপি কর্মী। দেশ আজ আওয়ামী দু:শাসনের কবলে। তাই দেশ, দেশের মানুষ বাঁচতে, দেশে গণতন্ত্র আর আইনের শাসন প্রতিষ্ঠা করতে আওয়ামী লীগের বিরুদ্ধে সংগ্রাম করা ছাড়া সামনে কোন পথ নেই। এজন্য দেশ ও প্রবাসে ‘হাসিনা সরকার হঠাও’ এক দফা আন্দোলন চাই। সেই সাথে দলের মধ্যে নেতৃত্বের কোন্দল নয়, যোগ্য ব্যক্তিকে যোগ্য পদে চাই। কোন ভার্চ্যুাল বা পকেট কমিটি নয়। আমরা একচ্যুয়াল কমিটি চাই, মাঠের নেতা-কর্মীদের মতামতের ভিত্তিতে যোগ্য নেতৃত্ব ও যুক্তরাষ্ট্র বিএনপি’র কমিটি চাই। তিনি বলেন, বেগম খালেদা জিয়ার মুক্তি আর বীরের বেশে তারেক রহমানকে দেশে ফিরিয়ে না নেওয়া পর্যন্ত আমাদের আন্দোলন চলবে। বলেন, বিএনপির রাজনীতিই আমার জীবনের শুরু ও শেষ রাজনীতি।
সভায় আখতার হোসেন বাদল তার মূল বক্তব্যের আগে নিউইয়র্ক ষ্টেট বিএনপি’র কমিটি ঘোষণা করেন। উপস্থিত দলীয় নেতা-কর্মীরা হাত তুলে এই কমিটির প্রতি সমর্থন জ্ঞাপন করেন।
ড. ইঞ্জিনিয়ার জিয়া উদ্দিন আহমেদ জিয়াউর রহমান বাংলাদেশী জাতীয়তাবাদের প্রতিষ্ঠা। আমাদের পাসপোর্টে পরিচয় আমরা ‘বাংলাদেশী’, ‘বাঙলী’ নই। তিনি বলেন, সময় আসছে সাবেক প্রধানমন্ত্রী খালেদা জিয়া ও তারেক রহমান সহ বিএনপি নেতা-কর্মীদের ওপর যেসকল নিপীড়ন-নির্যাতন, লাঞ্ছনা চালানো হয়েছে দেশের মানুষ তার পাই পাই হিসাব নেবে।
এম এ খালেক বলেন, আওয়ামী লীগ দাবী করে জিয়া বঙ্গবন্ধুর খুনি, থখন তো জিয়া ক্ষমতায় ছিলেন না। আর ৭৫ জিয়া ছিলেন অবিসংবাদিক একজন মেজর। যিনি সিপিাহী-বিপ্লবের মাধ্যমে দেশকে রক্ষা করেন।
মোহাম্মদ রহমত উল্লাহ বলেন, যে স্বপ্ন দিয়ে দেশের জনগণ বাংলাদেশ স্বাধীন করেছ্ েতা আজো পূরণ হয়নি। তিনি বলেন, আওয়ামী লীগ ষড়যন্ত্রকারী, দূর্নীতিবাজ, ফাসিস্ট।
মোহাম্মদ হোসেন কচি বলেন, বিএনপির নেতৃত্বে দেশে যে জন জাগরণ উঠেছে তা আওয়ামী লীগ চোখেও দেখছে, জাগরণের শব্দ কানেও শোনছে না। তাই আওয়ামী লীগের পতন ছাড়া তাদের কাছে আর কিছু চাওয়ার নেই।
মোহাম্মদ মহিউদ্দিন বলেন, ৭৫-এর সাতই নভেম্বর সিপাহী জনতার বিপ্লব না ঘটলে বাংলাদেশ অন্যরকম হতো। তিনি বলেন, আজ আমরা স্বাধীন দেশে বাসবাস করলেও মনে হয় আমরা স্বাধীন নই। তাই অগামী ১০ ডিসেম্বর আমাদের দেশটা নতুন করে স্বাধীণ করতে হবে। এজন্য প্রবাসীদের যার যার অবস্থান থেকে বিএনপি’র চলমান আন্দোলনকে সফল করতে সহযোগিতা করতে হবে।
সালেহ উদ্দিন আহমেদ মানিক তার বক্তব্যে অনুষ্ঠানটি সফল করায় সকলের প্রতি কৃতজ্ঞতা জ্যাপন করেন এবং তার উপর অর্পিত দায়িত্ব যথাযথভাবে পালনের অঙ্গীকারের পাশপাশি দলীয় নেতা-কর্মীদের ঐক্যবদ্ধ থেকে অধ্যাপক দেলোয়ার হোসেন ও আখতার হোসেন বাদলের হাতকে শক্তিশালী করার আহŸান জানান।
সভায় ঘোষিত নিউইয়র্ক ষ্টেট বিএনপি’র কমিটির কর্মকর্তারা হলেন: সভাপতি- সালেহ আহমদ মানিক, সিনিয়র সহ সভাপতি মোহাম্মদ মোস্তফা কামাল মুকুল, সহ সভাপতি- শামসুল হক, শরিফুল আলম, প্রফেসর আহসান উল্লাহ মিন্টু, মোহাম্মদ মনির হোসেন, মোহাম্মদ মুরাদ রহমান, মোহাম্মদ রফিকুল ইসলাম বাহার, মোহাম্মদ মোখলেসুর রহমান, মোহাম্মদ মাহফুজুল আলম, আবু নাছের ও মোহাম্মদ খায়রুল বাশার, সাধারণ সম্পাদক- মোহাম্মদ দেলোয়ার হোসেন শিপন, সিনিয়র যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক- মোহাম্মদ তাজুল ইসলাম, যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক- হোসাইন মোহাম্মদ মনির, মোহাম্মদ রিন্টু আলম, মোহাম্মদ স¤্রাট, মোহাম্মদ সানোয়ার হোসেন, মোহাম্মদ মীর হোসেন, মোহাম্মদ কামরুজ্জামান ফরহাদ, মোহাম্মদ মোহন পাটোয়ারী, ফয়সাল আহমদ পাটোয়ারী, সাংগঠনিক সম্পাদক- আশরাফুল আলম, সহ সাংগঠনিক সম্পাদক- কামরুজ্জামান লাবলু, মোহাম্মদ নাজমুল হুদা, মোহাম্মদ রিপন ও মাসুদ মিয়া, প্রচার সম্পাদক- তৈমুর রহমান এবং সদস্য যথাক্রমে মোহাম্মদ ইকবাল হোসেন, জাকির হোসেন, মোক্তার হোসেন, মাহবুবুর রহমান, মোহাম্মদ মোতায়ের হোসেন জয়, আব্দুল জলিল, আবুল খায়ের, মোহাম্মদ রিংকু, মোহাম্মদ জাহিদ হোসেন, মোহাম্মদ শাহেন শাহ, মোহাম্মদ ইমাম আলী, মোহাম্মদ সাদ্দাম হোসেন, মোহাম্মদ হায়দার আলী, মোহাম্মদ রাজু আহমদ ও মোহাম্মদ মাহবুবুর রহমান শিপন। উল্লেখ্য, আলোচনার ভিত্তিতে কোষাধ্যক্ষ পদ পরবর্তীতে পূরণ করা হবে।
এদিকে বিএনপি নেতা আখতার হোসেন বাদল জানান, গত ৩১ অক্টোবর কেন্দ্রীয় বিএনপি নেতা আব্দুস সালামের সাথে দলীয় নেতা-কর্মীদের সাথে মতবিনিময়ে পর তিনি (আব্দুস সালাম) আমাদেরকে ঐক্যবদ্ধভাবে কাজ করার আহŸান জানিয়েছেন। আমরা সেই লক্ষ্যেই কাজ করছি। যার শুরু হয়েছে ঐতিহাসিক বিপ্লব ও সংহতি দিবস পালনের মধ্য দিয়ে। জানা গেছে, আব্দুস সালামের সাথে অনিষ্ঠিত সভায় অধ্যাপক দেলেঅয়ার হোসেন, আখতার হোসেন বাদল, সালেহ আহমদ মানিক প্রমুখ উপস্থিত ছিলেন।