নিউইয়র্ক ০১:৪৬ অপরাহ্ন, রবিবার, ০৬ জুলাই ২০২৫, ২২ আষাঢ় ১৪৩২ বঙ্গাব্দ
বিজ্ঞাপন :
মঙ্গলবারের পত্রিকা সাপ্তাহিক হককথা ও হককথা.কম এ আপনার প্রতিষ্ঠানের বিজ্ঞাপন দিতে যোগাযোগ করুন +1 (347) 848-3834

স্বজন হারানোর এক বছর : ঘরে ঘরে নিরব কান্না

রিপোর্ট:
  • প্রকাশের সময় : ১০:২১:১৬ অপরাহ্ন, সোমবার, ২৬ এপ্রিল ২০২১
  • / ২৭ বার পঠিত

সালাহউদ্দিন আহমেদ: মহামারী করোনাভাইরাসে বিশ্বব্যাপী একের পর একে সংক্রমণে বিপন্ন হয়ে পড়ছে জনজীবন, তছনছ হয়ে গেছে স্বাভাবিক জীবন যাত্রা। করোনায় আক্রান্ত হয়ে লাখ লাখ মানুষের প্রাণহানীতে বিশ্বজুড়ে ঘরে ঘরে চলছে নিরব কান্না। দেশের প্রেসিডেন্ট থেকে শুরু করে মন্ত্রী, এমপি, রাজনীতিক, ডাক্তার, ইঞ্জিনিয়ার, ব্যবসায়ী, ছাত্র-যুবক-কৃষক, শ্রমিক-মজুর, কামার-কুমার, জেলে-তাঁতী, সাধারণ নাগরিক কেউ বাদ পড়ছেন না করোনার ছোবল থেকে। এই ‘নিরব ঘাতক’-এর শেষ কোথাও তাও বলা যাচ্ছে না। করোনার ভ্যাকসিন আবিষ্কারের পর যুক্তরাষ্ট্র সহ কোন কোন দেশ এক স্বস্তির নি:শ্বাস ফেললেও বাংলাদেশ-ভারত সহ কোন কোন দেশে সঙ্কট বিরাজ করছে। বিশেষ করে ভারত চরম সঙ্কটে পড়েছে।
করোনাভাইরাসে আক্রান্ত হয়ে গেলো বছরের এই সময়ে অর্থাৎ ২০২০ সালের এপ্রিল মাসে যুক্তরাষ্ট্র প্রবাসী বাংলাদেশী অনেকেই মৃত্যুবরণ করেছেন। বিশেষ করে নিউইয়র্কের বিপুল সংখ্যক বাংলাদেশী নির্মম মৃত্যুা শিকার হয়েছেন। গত বছর এই সময় নিউইয়র্কে চলছিলো মৃত্যুর মিছিল। সকাল-সন্ধ্যা ফায়ার সার্ভিস আর অ্যাম্বুলেন্সের উচ্চস্বরে চলাচল, হাসাপাতালে চিকিৎসা সঙ্কট। সে এক ভয়াবহ অবস্থা। গত বছরের এপ্রিল মাসে করোনায় মৃত্যুবরনকারী কমিউনিটির কয়েকজনকে নিয়েই এই প্রতিবেদন।
মৌলভীবাজারের সাবেক এমপি
নিউইয়র্কে করোনাভাইরাসে আক্রান্ত হয়ে মৌলভীবাজার-১ আসনের সাবেক সংসদ সদস্য, মুক্তিযোদ্ধা মোহাম্মদ সিরাজুল ইসলাম ইন্তেকাল করেন। তিনি কুইন্সের এলমহার্স্ট হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় ৪ এপ্রিল, শনিবার স্থানীয় সময় সন্ধ্যা ৬টায় তিনি মৃত্যুবরণ করেন। মুত্যুকালে তিনি স্ত্রী, এক ছেলে, চার মেয়েসহ অসংখ্য গুনগ্রাহী রেখে যান।
বিশিষ্ট রাজনীতিক সিরাজুল ইসলাম মৌলভীবাজার-১ (বড়লেখা-জুড়ী) আসন থেকে দু’বার সংসদ সদস্য নির্বাচিত হয়েছিলেন। একবার উপজেলা চেয়ারম্যান হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন। শিক্ষকতা থেকে তিনি জনসেবার জন্য রাজনীতিতে আসেন।
এক ভাইয়ের মৃত্য আরেক ভাই হাসপাতালে
যুক্তরাষ্ট্র প্রবাসী টাঙ্গাইলবাসীদের সামাজিক সংগঠন টাঙ্গাইল জেলা সমিতি ইউএসএ’র সাবেক ক্রীড়া সম্পাদক মোহাম্মদ খান রাজেস-এর বড় ভাই সাইফুর হায়দার খান আজাদ (৪৭) ইন্তেকাল করেছেন। তিনি করোনা ভাইরাস-এ আক্রন্তি হয়ে ৪ এপ্রিল, শনিববার দিবাগত রাত ১টা ৩০ মিনিটে জ্যামাইকা হাসপাতালে মৃত্যুবরণ করেন। মৃত্যুকালে তিনি স্ত্রী, ২ ছেলে (৫ ও ৮ বছর), এক মেয়ে (১৬) সহ অরেক আতœীয়-স্বজন রেখে যান। তিনি দীর্ঘ ৫ বছর ধরে নিউইয়র্কের রীচমন্ড হিলে সপরিবারে বসবাস করছিলেন।
করোনা সংক্রমণে অসুস্থ্য হয়ে সাইফুর হায়দার খান আজাদ গত ২৯ মার্চ রোববার হাসপাতালে ভর্তি হন। সেখানে তার করোনা ভাইরাস পজেটিভ সনাক্ত হয়। পরবর্তীতে তার চিকিৎসা চললেও শেষ পর্যন্ত আর রক্ষা হয়নি। ৪ এপ্রিল, শনিববার দিবাগত রাত ১টা ৩০ মিনিটে জ্যামাইকা হাসপাতালে তিনি মৃত্যুবরণ করেন। তারা ৫ ভাই ও এক বোন নিউইয়র্কে বসবাস করতেন। তাদের অপর এক ভাই সফি হায়দার খান (৫৩) গত ৩০ মার্র্চ থেকে ম্যানহাটানের মাউন্টসিনাই হাসপাতালের আইসিউউতে চিকিৎসাধীন ছিলেন (পরবর্তীতে ইন্তেকাল করেন)। তিনি রিচমন্ডহীরে বসবাস করেন এবং বিগত ১০ বছর ধরে যুক্তরাষ্ট্রে বসবাস করছেন। তার স্ত্রী, এক ছেলে এক মেয়ে রয়েছে। তারা টাঙ্গাইল শহরের ছয়আনীবাজারের স্থায়ী বাসিন্দা।
কামাল আহমেদ-এর ইন্তেকাল
নিউইয়র্কে বাংলাদেশী কমিউনিটির অভিভাবক, সবার পরিচিতি মুখ, বাংলাদেশ সোসাইটির সভাপতি কামাল আহমেদ (৬৭) ৫ এপ্রিল, রোববার ভোর রাত ৪.৩০ মিনিট তিনি নিউইয়র্কের এলহামর্স্ট হাসপাতালে ইন্তেকাল করেন (ইন্নালিল্লাহি ওয়াইন্না ইলাইহি রাজিউন)। ২দিন ধরে তিনি এই হাসপাতালেই চিকিৎসাধীন ছিলেন। মৃত্যুকালে তিনি স্ত্রী, এক কন্যা, এক পুত্র, ৫ ভাই ও ৫ বোন সহ অসংখ্য আতœীয়-স্বজন ও শুভাকাঙ্খী রেখে যান। তার ইন্তেকলেল খবরে কমিউনিটিতে শোকের ছায়া নেমে আসে।
নিউইয়র্কর এলমহার্স্টে বসবাসকারী কামাল আহমেদ গত ৩০ মার্চ সোমবার অসুস্থবোধ করলে তাকে স্থানীয় এলহার্স্ট হাপাতালে ভর্তি করা হয়। সেখানে তার স্বাস্থ্য পরীক্ষার পর করোনা ভাইরাস পজেটিভ ধরা পড়লে তার চিকিৎসা চলতে থাকে। এরই মধ্যে তার কিডনী বিকল হয়ে যায় এবং তিনি হৃদরোগে আক্রান্ত হয়ে পড়েন। পরবর্তীতে চিকিৎসকদের সকল চেষ্টা ব্যর্থ করে তিনি ৫ এপ্রিল রোববার ভোরে না ফেরার দেশে চলে যান।
সিলেটের বিয়ানীবাজারের সন্তান কামাল আহমেদ দীর্ঘ প্রায় ৪০ বছর ধরে যুক্তরাষ্ট্র প্রবাসী। বসবাস করতেন নিউইয়র্কে। প্রবাসী জীবনে বিভিন্ন সামাজিক কর্মকান্ডের সাথে জড়িত ছিলেন। তিনি ছিলেন বাংলাদেশ বিয়ানীবাজার সামাজিক ও সাংস্কৃতিক সমিতি ইউএসএ, জালালাবাদ এসোসিয়েশন অব আমেরিকা’র নির্বাচিত সভাপতি। এছাড়াও যুক্তরাষ্ট্র প্রবাসী বাংলাদেশীদের আ¤্রলো সংগঠন হিসেবে পরিচিত ‘বাংলাদেশ সোসাইটি’র দু’বারের নির্বাচিত সভাপতির দায়িত্ব পালন করে চলেছিলেন।
ব্যক্তিগত জীবনে কামাল আহমেদ একজন স্বল্পভাষী, নিরহংকারী, বিনয়ী, ন¤্র-ভদ্র ও পরোপকারী মানুষ ছিলেন। তিনি ‘জাতির জনক’ বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের আদর্শের রাজনীতি আওয়ামী লীগ করতেন। ছিলেন নিউইয়র্ক ষ্টেট আওয়ামী লীগের অন্যতম সহ সভাপতি। তবে কমিউনটি সেবায় ছিলেন সকল রাজনীতির উর্ধ্বেও একজন সমাজকর্মী মানুষ।
আজাদ বাকিরও চলে গেলেন
নিউইয়র্কে বাংলাদেশী কমিউনিটির প্রিয়মুখ, যুক্তরাষ্ট্র প্রবাসী বাংলাদেশীদের ‘মাদার সংগঠন’ হিসেবে পরিচিত বাংলাদেশ সোসাইটির কার্যকরি কমিটির সদস্য, যুক্তরাষ্ট্র বিএনপির সাবেক যুগ্ম সম্পাদক আজাদ বাকিরও চলে গেলেন। ৬ এপ্রিল, সোমবার ভোর রাত ৩.৪০মিনিটে তিনি ইন্তেকাল করেন। তিনি করোনা ভাইরাসে আক্রান্ত হয়ে ৮দিন ধরে এলমহার্স্ট হাসপাতালে লাইফ সাপোর্টে ছিলেন।  করোনায় অসুস্থ হয়ে হাসপাতালে ভর্তি হওয়ার পর আজাদ বাকির করোনা ভাইরাসে আক্রান্তের বিষয়টি নিশ্চিত হয়। চলতে থাকে চিকিৎসা। এরই মধ্যে তার কিডনী সমস্যা দেখা দেয়। ফলে কিডনীর ডায়ালাইসি করতে হয় এবং লাইফ সাপোর্ট দেয়া হয়। কিন্তু চিকিৎসকদের সকল চেষ্টা ব্যর্থ করে তাকে চলেই যেতে হলো না ফেরার দেশে।
ব্র্রাক্ষণবাড়িয়ার সন্তান আজাদ বাকির যুক্তরাষ্ট্র যুবদলের সাবেক সহ-সভাপতি, ৮০/৯০ দশকে জাতীয়তাবাদী ছাত্রদলের সাবেক নেতৃবৃন্দের সংগঠন ‘বাংলাদেশী আমেরিকান জাতীয়তাবাদী ফোরাম ইউএসএ ইনক্’-এর সাধারণ সম্পাদক ছিলেন। এছাড়াও তিনি কুমিল্লা সমিতি ইউএসএ’র উপদেষ্টা ও বৃহত্তর কুমিল্লা সমিতির সাবেক সভাপতি ছিলেন। এক সময় তিনি সোনালী এক্সচেঞ্জ ইনক-এ কর্মরত ছিলেন।
ডা. রেজা চৌধুরীর ইন্তেকাল
বাংলাদেশী-আমেরিকান বিশিষ্ট চিকিৎসক ডা. রেজা চৌধুরী করোনাভাইরাসে আক্রান্ত হয়ে ইন্তেকাল করেন ৮ এপ্রিল, বুধবার রাত ১১.৩০ মিনিটে। করোনা ভাইরাসে আক্রান্ত হয়ে তিনি লং আইল্যান্ডের নর্থ শোর ইউনিভার্সিটি হাসপাতালে মারা যান। মৃত্যুকালে তিনি স্ত্রী, এক পুত্র ও এক কন্যা সহ বহু আতœীয়-স্বজন ও গুণগ্রাহী রেখে যান।
নিউইয়র্কে বাংলাদেশী অধ্যুষিত ব্রঙ্কসে বসবাসকারী প্রবাসীদের প্রিয় মুখ ডা. রেজার চেম্বার ছিল পার্কচেস্টার সাবওয়ে সংলগ্ন ১৯৫৭ ওয়েস্টচেস্টার এভিনিউতে। যার নাম ওয়েস্ট চেস্টার মেডিক্যাল হেলথ কেয়ার। জানা গেছে ডা. রেজা চৌধুরী এই দূর্যোগের সময়ও চেম্বারে নিয়মিত তার রোগীদের সেবা দিতেন। ধারনা করা হচ্ছে তাঁর কোন রোগী থেকেই তিনি করোনা ভাইরাসে সংক্রমিত হন এবং হাসপাতালে ভর্তি হওয়ার পর সেখানেই শেষ নি:শ্বাস ত্যাগ করেন।
এনওয়াইপিডি’র ডিটেকটিভ জামিলের পিতার করোনায় মৃত্যু
বৈশ্বিক মহামারীতে দায়িত্ব পালন করতে গিয়ে বিশ্বের অন্যতম সেরা আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী নিউইয়র্ক পুলিশ বিভাগের (এনওয়াইপিডি) ডিটেকটিভ জামিল সারোয়ার জনির শরীরে সংক্রমিত হয়েছিলো করোনাভাইরাস। পরীক্ষায় যখন পজিটিভ ধরা পড়লো ততক্ষণে সর্বনাশ যা হবার হয়ে গেছে। ঘরে আক্রান্ত হয়েছেন তার বাবা। আর বাবাকে সেবা দিচ্ছিলেন মা। মারাত্মক অসুস্থ অবস্থায় হাসপাতালে নেওয়ার পর স্থানীয় সময় ৮ এপ্রিল বুধবার দুপুরে বাবা অ্যাডভোকেট সারোয়ার হোসেন পৃথিবী থেকে বিদায় নেন।
লম্বা ছুটি কাটিয়ে স্ত্রী ও কন্যাকে বাংলাদেশে রেখে ইমিগ্র্যান্ট বাবা-মাকে সঙ্গে নিয়ে প্রায় এক মাস আগে নিউইয়র্কে ফিরে কর্মস্থলে যোগ দেন ডিটেকটিভ জামিল সারোয়ার জনি। নিউইয়র্ক পুলিশের ‘হিরো’ উপাধি পাওয়া জনি বর্তমানে ইন্টেলিজেন্স উইংয়ে কর্মরত। পেশাগত কারণে সাদা পোশাকে (আন্ডারকভার) অনেক জায়গায় যেতে হয় তাকে। পুরো নিউইয়র্ক যখন লকডাউন তখনো দায়িত্ব পালন করছিলেন তিনি। হঠাৎ একদিন বাসায় ফিরে অসুস্থবোধ করেন জনি। গলা ব্যথা ও তীব্র জ্বরের লক্ষণ শরীরে। একদিন সকালে নিজেই গাড়ি চালিয়ে কোভিড-১৯ এর পরীক্ষা করিয়ে আসেন। ফার্স্ট রেসপন্ডার হিসাবে দ্রæত জানতে পারেন তার শরীরে ঢুকে পড়েছে কোভিড-১৯ ভাইরাস। কিন্তু শরীরের ইমিউন সিস্টেমের সঙ্গে লড়াই করে প্রায় দু’সপ্তাহ পর সুস্থ হয়ে ওঠেন জনি।
অন্যদিকে ধীরে ধীরে অসুস্থ হয়ে পড়েন বাবা সারোয়ার হোসেন। হাসপাতালে নেওয়ারও পরিবেশ নেই। শরীরে কোভিড-১৯ ধরা পড়লেও সবাইকে হাসপাতালে ভর্তি করা হচ্ছিল না। বাসায় রেখেই চিকিৎসা চলছিল তার। এরইমধ্যে গত ৭ এপ্রিল মঙ্গলবার দুপুরে তীব্র শ্বাসকষ্ট শুরু হয়। দ্রæত অ্যাম্বুলেন্স কল করে সারোয়ার হোসেনকে নিয়ে যাওয়া হয় বাসার কাছের এলমহার্স্ট হাসপাতালে। এই হাসপাতালটি এখন অনেকটা মৃত্যুপুরী হিসাবে চিহ্নিত হয়ে যায়। নিউইয়র্ক সিটিতে সর্বোচ্চ মৃত্যুর রেকর্ড এই হাসপাতালেই।
অ্যাডভোকেট সারোয়ার হোসেন পিরোজপুর শহরের সিনিয়র আইনজীবী ছিলেন। তার সহধর্মিণী রেনু সুলতানা পিরোজপুর সরকারি মহিলা কলেজের অবসরপ্রাপ্ত অধ্যক্ষ। ছোট ছেলে জনির আবেদনে তারা যুক্তরাষ্ট্রে ইমিগ্র্যান্ট হয়েছেন। বাংলাদেশ ও যুক্তরাষ্ট্রে তারা আসা-যাওয়ার মধ্যে ছিলেন।
কৃষিবিদ শাহানা আহমেদ তালুকদার আঁখি ইন্তেকাল
করোনা ভাইরাসে আক্রান্ত হয়ে ৮ এপ্রিল, বুধবার বাংলাদেশী কৃষিবিদ শাহানা আহমেদ তালুকদার আঁখি ইন্তেকাল করেন। নিউইয়র্ক সময় বুধবার ভোর ৩টায় তিনি মারা যান। তিনি করোনায় আক্রান্ত হয়ে লং আইল্যান্ডের একটি হাসপাতালে গত ৪/৫ দিন ধরে চিকিৎসাধীন ছিলেন। কৃষিবিদ শাহানা আহমেদ তালুকদার আঁখি নিউইয়র্কের একটি ফার্মাসিউটিক্যাল কোম্পানিতে চাকরি করতেন। তাঁর দেশের বাড়ি নেত্রকোনায়। তিনি বাংলাদেশ কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়াশোনা করেছেন। তার স্বামীও একই বিশ্ববিদ্যালয়ে সহপাঠী ছিলেন। বছর দুয়েক আগে পারিবারিক অভিবাসন সূত্রে স্বামীকে নিয়ে নিউইয়র্কে পাড়ি জমান। ব্যক্তিগত জীবনে আখি অত্যন্ত হাসি-খুশি, সদালাপি ও বন্ধুবৎসল ছিলেন।
আলহাজ্ব গিয়াস উদ্দীনের ইন্তেকাল
নিউইয়র্কের বিশিষ্ট ব্যবসায়ী, ছাতক সমিতি ইউএসএ’র সাবেক সভাপতি, নিউইয়র্কের ব্রঙ্কসের স্টারলিং বাংলাবাজার বিজনেস এসোসিয়েশনের প্রেসিডেন্ট, বাংলা বাজার জামে মসজিদের সভাপতি, এ এ ডাবল ডিসকাউন্ট সহ বেশ কয়েকটি ব্যবসা প্রতিষ্ঠানের স্বত্বাধিকারী আলহাজ্ব গিয়াস উদ্দীন (৬২) করোনায় ইন্তেকাল করেন। তিনি ১০ এপ্রিল, শুক্রবার ভোর রাত ২.১৫ মিনিটে ব্রঙ্কসের আইনস্টাইন হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় শেষ নি:শ্বাস ত্যাগ করেন। তার ইন্তেকালে কমিউনিটিতে শোকের ছায়া নেমে এসেছে।
আলহাজ্ব গিয়াস উদ্দীন মৃত্যুকালে স্ত্রী, ২ ছেলে, ১ মেয়ে, ৪ ভাই ২ বোন সহ অসংখ্য আত্মীয় স্বজন রেখে গেছেন। তাঁর দেশের বাড়ী সিলেটের ছাতকে। তিনি করোনা ভাইরাসে আক্রান্ত হয়ে আইনস্টাইন হাসপাতালে ভর্তি ছিলেন। তিনি দীর্ঘ ৩৮ বছর যাবত প্রবাস জীবন যাপন করছিলেন। ১৯৭৮ সালে তিনি বাংলাদেশ থেকে পাড়ি জমান ইরানে। সেখান থেকে জার্মানীতে। তারপর ১৯৮২ সালে তিনি যুক্তরাষ্ট্রে অভিবাসী হন।
টাঙ্গাইলের তাজিনের মৃত্যু
যুক্তরাষ্ট্র প্রবাসী, নিউইয়র্কে বসবাসকারী টাঙ্গাইলের সন্তান বনিতা তাজিন (৩৪) ‘মরণঘাতী করোনা ভাইরাসে’ আক্রান্ত হয়ে ১১ এপ্রিল, শনিবার রাতে মৃত্যুবরণ করেন। তিনি টাঙ্গাইল জেলা শহরের কলেজ পাড়ার সুপরিচিত মরহুম এডভোকেট সেতাব আলী খানের নাতনি এবং মরহুম জহিরুল ইসলাম খান মজনু’র মেজ কন্যা। এছাড়াও তিনি টাঙ্গাইল জেলা সোসাইটি ইউএসএ’র সাবেক আহŸায়ক মোহাম্মদ শামসুজ্জামান খানের ভাতিজি। তাজিন মৃত্যুকালে স্বামী, এক ছেলে (৮), এক মেয়ে (সাড়ে ৩) সহ মা, দু’বোন, চাচা-চাচি সহ অসংখ্য আত্মীয় স্বজন ও গুণগ্রাহী রেখে গেছেন।
বনিতা তাজিনের শশুর ও মোহাম্মদ তারিক রাশেদ-এর বাবা টাঙ্গাইলের বিশিষ্ট আইনজীবি মোহাম্মদ হায়াত আলী আকন্দ গত ৩ এপ্রিল লং আইল্যান্ড জুইস (এলআইজি) হাসপাতালে ইন্তেকাল করেন। কিনডী জটিলতা সহ অন্যান্য শারীকি সমস্যায় ভুগছিলেন এবং কিডনী ডায়ালাইসি করতে গিয়ে করনায় আক্রান্ত হয়ে শেষ নি:শ্বাস ত্যাগ করেন। এডভোকেট হায়াত আলী এক সময় টাঙ্গাইলের গোপালপুরে শিক্ষকতা পেশার সাথে জড়িত ছিলেন।
কুইন্সের জ্যামাইকার ব্রয়ারউড এলাকায় বসবাসকারী বনিতা তাজিন সম্প্রতি করোনাভাইরাসে আক্রান্ত হন এবং সন্তানদের কথা চিন্তা করে তা কাউকে না জানিয়ে নিজে নিজেই চিকিৎসা নেন। এরমধ্যে ‘আর্জেন্ট কেয়ারে’-ও যোগাযোগ করে বাসায় অবস্থান করছিলেন। শনিবার দুপুরের খবারের পর স্বামী মোহাম্মদ তারিক রাশেদ-এর কাছ থেকে বিদায় নিয়ে ঘুমুতে যান। এদিকে তারিক রাশেদ দুই সন্তান নিয়ে সময় কাটাতে থাকেন। পরবর্তীতে রাত হয়ে গেলেও স্ত্রী তাজিনের কোন সাড়া-শব্দ না পেয়ে তারিক রাশেদ রাত সোয়া ১১টার দিকে খোঁজ নিতে গিয়ে দেখে তার স্ত্রী আর নেই। চলে গেছেন না ফেরার দেশে। সাথে সাথে তিনি ৯১১ এ কল করলে জরুরী কাজে নিয়োজিত স্বাস্থকর্মীরা এসে তার (তাজিন) মৃত্যু নিশ্চিত করেন। উল্লেখ্য, তারিক রাশেদ নিজেও অসুস্থ এবং কয়েকদিন আগে হাসপাতাল থেকে বাসায় ফিরেছেন। বনিতা তাজিন ৪/৫ বছর আগে যুক্তরাষ্ট্রের অভিবাসী হয়ে নিউইয়র্কে বসবাস করছিলেন।
সাংকৃতিক সংগঠক রওশন আরা ফেরদৌসের মৃত্যু
কিশোরগঞ্জের মুক্তিযাদ্ধা এএসএম ফেরদৌসের সহধর্মিনী, সাংকৃতিক সংগঠক রওশন আরা ফেরদৌস (৬১) করোনা ভাইরাসে আক্রান্ত হয়ে মৃত্বুরণ করেন। মৃত্যুকালে তিনি স্বামী, দুই পুত্র, এক মেয়ে, ছয় নাতিসহ বহু আতœীয়-স্বজন ও গুণগ্রাহী রেখে গেছেন। মরহুমার দেশের বাড়ীও কিশোরগঞ্জ। ফেরদৌস-রওশন দম্পতি নিউইয়র্কের উডসাইড এলাকায় বসবাস করতেন। রওশন আরা ফেরদৌস গত ১১ এপ্রিল শনিবার ভোর ৪:১৯ মিনিট নিউইয়কের মাউন্টসিনাই হাসপাতালে শেষ নি:শ্বাস ত্যাগ করেন।
মুক্তিযোদ্ধা মনির হোসেনের স্ত্রীর মৃত্যু
বীর মুক্তিযোদ্ধা, জ্যামাইকা বাংলাদেশ ফ্রেন্ডস সোসাইটির প্রাক্তন সভাপতি ও বর্তমান উপদেষ্টা, রূপসী চাঁদপুর ফাউন্ডেশন ইউএসএ’র উপদেষ্টা এবং নিউইয়র্ক ষ্টেট আওয়ামী লীগের সহ সভাপতি মনির হোসেনের সহধর্মীনি পেয়ারা হোসেন বেবী, করোনায় আক্রান্ত হয়ে ১৩ এপ্রিল, সোমবার ইন্তেকাল করেন। করোনা ভাইরাসে আক্রান্ত হয়ে তিনি লং আইল্যান্ড জুইস হাসপাতালে ভর্তি হন। সেখানেই চিকিৎসাধীন থাকাবস্থায় সোমবার বিকাল সাড়ে তিনটার দিকে ইন্তেকাল করেন। তার মৃত্যুতে নিউইয়র্কের বাংলাদেশী কমিউনিটিতে বিশেষ করে জ্যামাইকা এলাকায় শোকের ছায়া নেমে এসেছে। মৃত্যুকালে পেয়ারা হোসেন বেবী স্বামী, ২ পুত্র, ৩ কন্যা ওনাতি-নাতনী সহ বহু আতœীয়-স্বজন রেখে যান।
সঙ্গীত শিল্পী বীণা মজুমদারের মৃত্যু
নিউইয়র্কে করোনায় ভাইরাসে আক্রান্ত হয়ে মৃত্যুবরণ করেন বিটিভি ও রেডিও’র লোক সঙ্গীত শিল্পী বীণা মজুমদার। ১৪ এপ্রিল, মঙ্গলবার সকাল আটটায় তিনি স্থানীয় জ্যামাইকা হাসপাতালে শেষ নি:শ্বাস ত্যাগ করেন। ফরিদপুর জেলার নগরকান্দা উপজেলার জগদিয়ার সন্তান বীণা মজুমদার তিনি দীর্ঘদিন ধরে ক্যান্সারে ভুগছিলেন। মরহুমা বীণা মজুমদারের নামাজে জানাজা ও দাফন ১৫ এপ্রিল, বুধবার সম্পন্ন হয়। তার মরদেহ এদিন দুপুরে নিউজার্সীর মার্লবরো মুসলিম কবর স্থানে বাংলাদেশ সোসাইটির কবরে দাফন হয়।
কমিউনিটি নেতা ফখরুল ইসলাম দেলোয়ারের শশুরের ইন্তেকাল
প্রবাসে বাংলাদেশী কমিউনিটির পরিচিত মুখ, বিশিষ্ট সমাজকর্মী, জ্যামাইকা বাংলাদেশ ফ্রেন্ডস সোসাইটির সভাপতি মোহাম্মদ ফখরুল ইসলাম দেলোয়ারের শশুর আব্দুস সালাম খান (৭৬) ইন্তেকাল করেন। তিনি ২১ এপ্রিল, মঙ্গলবার বেলা ৩টার দিকে লং আইল্যান্ডের নর্থশোর হাসপাতালে শেষ নি:শ্বাস ত্যাগ করেন। মৃত্যুকালে তিনি স্ত্রী, ২ পুত্র ও ৫ কন্যা এবং নাতি-নাতনি সহ বহু আতœীয়-স্বজন রেখে গেছেন। মরহুমের দেশে বাড়ী সিলেট জেলার বিয়ানীবাজার উপজেলার কুড়ার বাজার ইউনিয়নের আঙ্গারজুর।
আব্দুস সালাম খান অসুস্থ হলে ১৩ এপ্রিল সোমবার তাকে নর্থশোর হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। সেখানে তার করোনাভাইরাস সহ শারীরিক অসুস্থতাজনিত অন্যান্য চিকিৎসা চলছিলো। হাসপাতালে চিকিৎসাধীন থাকাবস্থায় ৮দিন পর মঙ্গলবার বেলা ৩টার দিকে তিনি শেষ নি:শ্বাস ত্যাগ করেন। উল্লেখ্য, মরহুম আব্দুস সালাম খান বিয়ানীবাজার সামাজিক ও সাংস্কৃতিক সমিতি ইউএসএ’র সাবেক সভাপতি মাসুকুল ইসলাম খানের মামা শশুর এবং সতিতির সাবেক সাংগঠনিক সম্পাদক ও নির্বাচন কমিশনার এবং বাংলাদেশ সোসাইটির প্রচার ও গণ সংযোগ সম্পাদক রিজু মোহাম্মদ-এর ফুপা শশুর।
বিদ্যুৎ দাসের মৃত্যু
মরণবাধী করোনাভাইরাসে আক্রান্ত হয়ে মৃত্যবরণ করেছেন হিন্দু-বৌদ্ধ-খৃীষ্টান ঐক্য পরিষদ ইউএসএ’র সাধারণ সম্পাদক ইঞ্জিনিয়ার বিদ্যুৎ দাস। তিনি ২১ এপ্রিল, মঙ্গলবার রাত ৮টা ৫মিনিটে নিউইয়র্কের ষ্ট্যাটেন আইল্যান্ডের একটি হাসপাতালে চিকিৎসাধীন থাকাবস্থায় পরলোকগমণ করেন। তার বয়স হয়েছিলো ৬০ বছর। তিনি ২৩ দিন ধরে করোনাভাইরাসের সাথে যুদ্ধ করছিলেন। মৃত্যুকালে তিনি স্ত্রী কেকা দাস, এক ছেলে আকাশ দাস ও এক কন্যা কুহু দাস সহ অনেক বন্ধু-বান্ধব ও শুকাঙ্খী রেখে যান। নিউইয়র্কের ষ্ট্যাটেন আইল্যান্ডে বসবাসকারী ইঞ্জিনিয়ার বিদ্যুৎ দাস চট্টগ্রাম জেলার স›দ্বীপ-এর মুছাপুর ইউনিয়নের মাস্টার সুভাষ দাসের সন্তান।
করোনা ট্রাজেডি : ছোট ভাইয়ের পর বড় ভাইও চলে গেলেন
মরণঘাতি করোনাভাইরাসে আক্রন্ত হয়ে ছোট ভাইয়ের পর এবার বড় ভাইও চলে গেলেন না ফেরার দেশে। প্রায় তিন সপ্তাহের ব্যাবধানে একই পরিবারের দু’জনের মৃত্যুতে শোকে পাথর হয়ে যান পরিবারের সদস্যরা। যুক্তরাষ্ট্র প্রবাসী টাঙ্গাইলবাসীদের সামাজিক সংগঠন টাঙ্গাইল জেলা সমিতি ইউএসএ’র সাবেক ক্রীড়া সম্পাদক মোহাম্মদ খান রাজেস-এর বড় ভাই সফি হায়দার খান (৫৪) মঙ্গলবার (২১ এপ্রিল) ইন্তেকাল করেন। তিনি করোনা ভাইরাস-এ আক্রান্ত হয়ে ৩০ মার্র্চ থেকে ম্যানহাটানের মাউন্টসিনাই হাসপাতালের আইসিসিইউতে চিকিৎসাধীন ছিলেন। তার ছোট ভাই সাইফুর হায়দার খান আজাদ (৪৭) করোনায় আক্রান্ত হয়ে গত ৪ এপ্রিল, শনিববার দিবাগত রাত ১টা ৩০ মিনিটে জ্যামাইকা হাসপাতালে মৃত্যুবরণ করেন।
করোনায় অসুস্থ্য হয়ে সফি হায়দার খান ২১ দিন ধরে ম্যানহাটানের মাউন্টসিনাই হাসপাতালে চিকিৎসাধীন ছিলেন। সেখানে তার করোনা ভাইরাস পজেটিভ সনাক্ত হওয়ার পর চিকিৎসা চললেও শেষ পর্যন্ত আর রক্ষা হয়নি। ২১ এপ্রিল, মঙ্গলবার সকাল ৯টার দিকে এই হাসপাতালেই তিনি শেষ নি:শ্বাস ত্যাগ করেন। মৃত্যুকালে তিনি স্ত্রী, এক ছেলে (২১) ও এক মেয়ে (১৩) সহ অরেক আতœীয়-স্বজন রেখে যান। তিনি দীর্ঘ ১০ বছর ধরে নিউইয়র্কের রীচমন্ড হিলে সপরিবারে বসবাস করছিলেন।
এদিকে মরহুম সফি হায়দার খানের স্ত্রী মাসুমা পারভীন এলি তার ছোট মেয়েকে নিয়ে বাংলাদেশে বেড়াতে গিয়ে আটকা পড়েন। পারিবারিক প্রয়োজনে তিনি দেশে যাওয়ার পর করোনা পরিস্থিতিতে তার নিউইয়র্ক ফেরা অনিশ্চিত হয়ে পড়ে। ফরে চরম অসুস্থতা এমনকি মৃত্যুর সময়ও স্বামীর পাশে থাকতে পারেনি স্ত্রী, বাবাকে দেখতে পেলো না আদরের কন্যা।
তারা ৫ ভাই ও এক বোন নিউইয়র্কে বসবাস করেতেন। করোনায় মৃত্যুবরণকরী দুই ভাই নিউইয়র্ক সিটির রিচমন্ডহীলে দুই ফ্যামিলির একই বাসায় বসবাস করতেন। তারা টাঙ্গাইল শহরের ছয়আনী বাজারের স্থায়ী বাসিন্দা এবং তাদের গ্রামের বাড়ী টাঙ্গাইল জেলার দেলদুয়ার উপজেলার চকতৈল।
চলে গেছেন বাবলী নেওয়াজ
নিউইয়র্কের সুপরিচিত সাংস্কৃতিক সংগঠন বাংলাদেশ ইনস্টিটিউট অব পারফর্মিং আর্টস-এর (বিপা)-এর সহ সভাপতি বাবলী নেওয়াজ করোনায় আক্রান্ত হয়ে গত ২৫ এপ্রিল ভোরে কুইন্সের একটি হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় ইন্তেকাল করেন।
ফরিদ আহমেদ ছাইদুল
নিউইয়র্ক প্রবাসী ফরিদ আহমেদ ছাইদুল ২৫ এপ্রিল ভোরে নিউইয়র্কের একটি হাসপাতালে ইন্তেকাল করেন। তার পারিবারের দাবী তিনি হার্ট এ্যাটাকে মৃত্যুবরণ করেছেন। মৃত্যুকালে তার বয়স হয়েছিলো ২৭ বছর।
মাওলানা আবদুন নুর
জাসাসের কেন্দ্রীয় সাধারণ সম্পাদক এবং বিএনপির কেন্দ্রীয় কমিটির অন্যতম সদস্য, চিত্রনায়ক হেলাল খানের পিতা মাওলানা আবদুন নুর ২৬ এপ্রিল, রোববার ভোর রাত দেয়টায় ইন্তেকাল করেছেন। নিউইয়র্কের লং আইল্যান্ডস্থ গুড সমরিতান হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় তিনি শেষ নি:শ্বাস ত্যাগ করেন। মৃত্যুকালে তার বয়স হয়েছিল ১০০ বছর।
জিয়াউল আহসান
মরহুম জিয়াউল আহসান চাঁদপুরের ভাষাসৈনিক মরহুম অ্যাডভোকেট এ এফ এম ফজলুল হকের পঞ্চম পুত্র। তিনি করোনায় আক্রান্ত হয়ে ২ এপ্রিল থেকে নিউইয়র্কের একটি হাসপাতালে চিকিৎসাধীন ছিলেন। ২৬ এপ্রিল, রোববার বাংলাদেশ সময় সকাল সাড়ে ১০টায় তিনি মারা যান। তার বয়স ছিল ৪৯ বছর। জিয়াউল আহসান চাঁদপুর গনি মডেল হাইস্কুলের এসএসসি ৮৫ ব্যাচের ছাত্র ছিলেন। চাঁদপুর সরকারি কলেজ থেকে এইচএসসি পাসের পর তিনি ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে ইংরেজি বিষয়ে অনার্সসহ মাস্টার্স ডিগ্র্র অর্জন করেন। ১৯৯৭ সালে তিনি যুক্তরাষ্ট্রে পাড়ি দেন। নিউইয়র্কে তিনি স্থায়ীভাবে বসবাসকরা অবস্থায় সিটি পুলিশের চাকরিতে যোগদান করেন।
রাশিদা আহমেদ ‘মুন’
নিউইয়র্কে বাংলাদেশী কমিউনিটির পরিচিত মুখ, যুক্তরাষ্ট্র বিএনপি’র সক্রিয় নেত্রী রাশিদা আহমেদ ‘মুন’ (৪৬) মরণঘাতি করোনাভাইরাসে আক্রান্ত হয়ে দীর্ঘ ২২দিন ধরে লং আইল্যান্ডের প্লেন ভিউ হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় ৩০ এপ্রিল, বৃহস্পতিবার দুপুর ১২টার দিকে মৃত্যুবরণ করেন। তার দেশের বাড়ী পাবনা জেলায় শালগাড়ীয়া। তিনি নিউইয়র্কের জ্যাকসন হাইটসে বসবাস করতেন। মুন ব্যক্তিগত জীবনে হাস্যজ্জল, বিনয়ী ও ভালো মনের মানুষ ছিলেন।
এছাড়াও এই এপ্রিল মাসে আরো যারা ইন্তেকাল করেছেন তাদের মধ্যে রয়েছেন- কমিনিটির পরিচিত মুখ এবং যুক্তরাষ্ট্র ছাত্রলীগের সাবেক সাধারণ সম্পাদক জাহাঙ্গীর এইচ মিয়ার পিতা মহিউদ্দিন। তিনি নিউইয়র্কের এলমহার্স্ট হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় ইন্তেকাল করেন। মৃত্যুকালে তার বয়স হয়েছিলো ৬০ বছর। মহিউদ্দিনের দেশের বাড়ি পাবনা।

সোশ্যাল মিডিয়ায় খবরটি শেয়ার করুন

স্বজন হারানোর এক বছর : ঘরে ঘরে নিরব কান্না

প্রকাশের সময় : ১০:২১:১৬ অপরাহ্ন, সোমবার, ২৬ এপ্রিল ২০২১

সালাহউদ্দিন আহমেদ: মহামারী করোনাভাইরাসে বিশ্বব্যাপী একের পর একে সংক্রমণে বিপন্ন হয়ে পড়ছে জনজীবন, তছনছ হয়ে গেছে স্বাভাবিক জীবন যাত্রা। করোনায় আক্রান্ত হয়ে লাখ লাখ মানুষের প্রাণহানীতে বিশ্বজুড়ে ঘরে ঘরে চলছে নিরব কান্না। দেশের প্রেসিডেন্ট থেকে শুরু করে মন্ত্রী, এমপি, রাজনীতিক, ডাক্তার, ইঞ্জিনিয়ার, ব্যবসায়ী, ছাত্র-যুবক-কৃষক, শ্রমিক-মজুর, কামার-কুমার, জেলে-তাঁতী, সাধারণ নাগরিক কেউ বাদ পড়ছেন না করোনার ছোবল থেকে। এই ‘নিরব ঘাতক’-এর শেষ কোথাও তাও বলা যাচ্ছে না। করোনার ভ্যাকসিন আবিষ্কারের পর যুক্তরাষ্ট্র সহ কোন কোন দেশ এক স্বস্তির নি:শ্বাস ফেললেও বাংলাদেশ-ভারত সহ কোন কোন দেশে সঙ্কট বিরাজ করছে। বিশেষ করে ভারত চরম সঙ্কটে পড়েছে।
করোনাভাইরাসে আক্রান্ত হয়ে গেলো বছরের এই সময়ে অর্থাৎ ২০২০ সালের এপ্রিল মাসে যুক্তরাষ্ট্র প্রবাসী বাংলাদেশী অনেকেই মৃত্যুবরণ করেছেন। বিশেষ করে নিউইয়র্কের বিপুল সংখ্যক বাংলাদেশী নির্মম মৃত্যুা শিকার হয়েছেন। গত বছর এই সময় নিউইয়র্কে চলছিলো মৃত্যুর মিছিল। সকাল-সন্ধ্যা ফায়ার সার্ভিস আর অ্যাম্বুলেন্সের উচ্চস্বরে চলাচল, হাসাপাতালে চিকিৎসা সঙ্কট। সে এক ভয়াবহ অবস্থা। গত বছরের এপ্রিল মাসে করোনায় মৃত্যুবরনকারী কমিউনিটির কয়েকজনকে নিয়েই এই প্রতিবেদন।
মৌলভীবাজারের সাবেক এমপি
নিউইয়র্কে করোনাভাইরাসে আক্রান্ত হয়ে মৌলভীবাজার-১ আসনের সাবেক সংসদ সদস্য, মুক্তিযোদ্ধা মোহাম্মদ সিরাজুল ইসলাম ইন্তেকাল করেন। তিনি কুইন্সের এলমহার্স্ট হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় ৪ এপ্রিল, শনিবার স্থানীয় সময় সন্ধ্যা ৬টায় তিনি মৃত্যুবরণ করেন। মুত্যুকালে তিনি স্ত্রী, এক ছেলে, চার মেয়েসহ অসংখ্য গুনগ্রাহী রেখে যান।
বিশিষ্ট রাজনীতিক সিরাজুল ইসলাম মৌলভীবাজার-১ (বড়লেখা-জুড়ী) আসন থেকে দু’বার সংসদ সদস্য নির্বাচিত হয়েছিলেন। একবার উপজেলা চেয়ারম্যান হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন। শিক্ষকতা থেকে তিনি জনসেবার জন্য রাজনীতিতে আসেন।
এক ভাইয়ের মৃত্য আরেক ভাই হাসপাতালে
যুক্তরাষ্ট্র প্রবাসী টাঙ্গাইলবাসীদের সামাজিক সংগঠন টাঙ্গাইল জেলা সমিতি ইউএসএ’র সাবেক ক্রীড়া সম্পাদক মোহাম্মদ খান রাজেস-এর বড় ভাই সাইফুর হায়দার খান আজাদ (৪৭) ইন্তেকাল করেছেন। তিনি করোনা ভাইরাস-এ আক্রন্তি হয়ে ৪ এপ্রিল, শনিববার দিবাগত রাত ১টা ৩০ মিনিটে জ্যামাইকা হাসপাতালে মৃত্যুবরণ করেন। মৃত্যুকালে তিনি স্ত্রী, ২ ছেলে (৫ ও ৮ বছর), এক মেয়ে (১৬) সহ অরেক আতœীয়-স্বজন রেখে যান। তিনি দীর্ঘ ৫ বছর ধরে নিউইয়র্কের রীচমন্ড হিলে সপরিবারে বসবাস করছিলেন।
করোনা সংক্রমণে অসুস্থ্য হয়ে সাইফুর হায়দার খান আজাদ গত ২৯ মার্চ রোববার হাসপাতালে ভর্তি হন। সেখানে তার করোনা ভাইরাস পজেটিভ সনাক্ত হয়। পরবর্তীতে তার চিকিৎসা চললেও শেষ পর্যন্ত আর রক্ষা হয়নি। ৪ এপ্রিল, শনিববার দিবাগত রাত ১টা ৩০ মিনিটে জ্যামাইকা হাসপাতালে তিনি মৃত্যুবরণ করেন। তারা ৫ ভাই ও এক বোন নিউইয়র্কে বসবাস করতেন। তাদের অপর এক ভাই সফি হায়দার খান (৫৩) গত ৩০ মার্র্চ থেকে ম্যানহাটানের মাউন্টসিনাই হাসপাতালের আইসিউউতে চিকিৎসাধীন ছিলেন (পরবর্তীতে ইন্তেকাল করেন)। তিনি রিচমন্ডহীরে বসবাস করেন এবং বিগত ১০ বছর ধরে যুক্তরাষ্ট্রে বসবাস করছেন। তার স্ত্রী, এক ছেলে এক মেয়ে রয়েছে। তারা টাঙ্গাইল শহরের ছয়আনীবাজারের স্থায়ী বাসিন্দা।
কামাল আহমেদ-এর ইন্তেকাল
নিউইয়র্কে বাংলাদেশী কমিউনিটির অভিভাবক, সবার পরিচিতি মুখ, বাংলাদেশ সোসাইটির সভাপতি কামাল আহমেদ (৬৭) ৫ এপ্রিল, রোববার ভোর রাত ৪.৩০ মিনিট তিনি নিউইয়র্কের এলহামর্স্ট হাসপাতালে ইন্তেকাল করেন (ইন্নালিল্লাহি ওয়াইন্না ইলাইহি রাজিউন)। ২দিন ধরে তিনি এই হাসপাতালেই চিকিৎসাধীন ছিলেন। মৃত্যুকালে তিনি স্ত্রী, এক কন্যা, এক পুত্র, ৫ ভাই ও ৫ বোন সহ অসংখ্য আতœীয়-স্বজন ও শুভাকাঙ্খী রেখে যান। তার ইন্তেকলেল খবরে কমিউনিটিতে শোকের ছায়া নেমে আসে।
নিউইয়র্কর এলমহার্স্টে বসবাসকারী কামাল আহমেদ গত ৩০ মার্চ সোমবার অসুস্থবোধ করলে তাকে স্থানীয় এলহার্স্ট হাপাতালে ভর্তি করা হয়। সেখানে তার স্বাস্থ্য পরীক্ষার পর করোনা ভাইরাস পজেটিভ ধরা পড়লে তার চিকিৎসা চলতে থাকে। এরই মধ্যে তার কিডনী বিকল হয়ে যায় এবং তিনি হৃদরোগে আক্রান্ত হয়ে পড়েন। পরবর্তীতে চিকিৎসকদের সকল চেষ্টা ব্যর্থ করে তিনি ৫ এপ্রিল রোববার ভোরে না ফেরার দেশে চলে যান।
সিলেটের বিয়ানীবাজারের সন্তান কামাল আহমেদ দীর্ঘ প্রায় ৪০ বছর ধরে যুক্তরাষ্ট্র প্রবাসী। বসবাস করতেন নিউইয়র্কে। প্রবাসী জীবনে বিভিন্ন সামাজিক কর্মকান্ডের সাথে জড়িত ছিলেন। তিনি ছিলেন বাংলাদেশ বিয়ানীবাজার সামাজিক ও সাংস্কৃতিক সমিতি ইউএসএ, জালালাবাদ এসোসিয়েশন অব আমেরিকা’র নির্বাচিত সভাপতি। এছাড়াও যুক্তরাষ্ট্র প্রবাসী বাংলাদেশীদের আ¤্রলো সংগঠন হিসেবে পরিচিত ‘বাংলাদেশ সোসাইটি’র দু’বারের নির্বাচিত সভাপতির দায়িত্ব পালন করে চলেছিলেন।
ব্যক্তিগত জীবনে কামাল আহমেদ একজন স্বল্পভাষী, নিরহংকারী, বিনয়ী, ন¤্র-ভদ্র ও পরোপকারী মানুষ ছিলেন। তিনি ‘জাতির জনক’ বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের আদর্শের রাজনীতি আওয়ামী লীগ করতেন। ছিলেন নিউইয়র্ক ষ্টেট আওয়ামী লীগের অন্যতম সহ সভাপতি। তবে কমিউনটি সেবায় ছিলেন সকল রাজনীতির উর্ধ্বেও একজন সমাজকর্মী মানুষ।
আজাদ বাকিরও চলে গেলেন
নিউইয়র্কে বাংলাদেশী কমিউনিটির প্রিয়মুখ, যুক্তরাষ্ট্র প্রবাসী বাংলাদেশীদের ‘মাদার সংগঠন’ হিসেবে পরিচিত বাংলাদেশ সোসাইটির কার্যকরি কমিটির সদস্য, যুক্তরাষ্ট্র বিএনপির সাবেক যুগ্ম সম্পাদক আজাদ বাকিরও চলে গেলেন। ৬ এপ্রিল, সোমবার ভোর রাত ৩.৪০মিনিটে তিনি ইন্তেকাল করেন। তিনি করোনা ভাইরাসে আক্রান্ত হয়ে ৮দিন ধরে এলমহার্স্ট হাসপাতালে লাইফ সাপোর্টে ছিলেন।  করোনায় অসুস্থ হয়ে হাসপাতালে ভর্তি হওয়ার পর আজাদ বাকির করোনা ভাইরাসে আক্রান্তের বিষয়টি নিশ্চিত হয়। চলতে থাকে চিকিৎসা। এরই মধ্যে তার কিডনী সমস্যা দেখা দেয়। ফলে কিডনীর ডায়ালাইসি করতে হয় এবং লাইফ সাপোর্ট দেয়া হয়। কিন্তু চিকিৎসকদের সকল চেষ্টা ব্যর্থ করে তাকে চলেই যেতে হলো না ফেরার দেশে।
ব্র্রাক্ষণবাড়িয়ার সন্তান আজাদ বাকির যুক্তরাষ্ট্র যুবদলের সাবেক সহ-সভাপতি, ৮০/৯০ দশকে জাতীয়তাবাদী ছাত্রদলের সাবেক নেতৃবৃন্দের সংগঠন ‘বাংলাদেশী আমেরিকান জাতীয়তাবাদী ফোরাম ইউএসএ ইনক্’-এর সাধারণ সম্পাদক ছিলেন। এছাড়াও তিনি কুমিল্লা সমিতি ইউএসএ’র উপদেষ্টা ও বৃহত্তর কুমিল্লা সমিতির সাবেক সভাপতি ছিলেন। এক সময় তিনি সোনালী এক্সচেঞ্জ ইনক-এ কর্মরত ছিলেন।
ডা. রেজা চৌধুরীর ইন্তেকাল
বাংলাদেশী-আমেরিকান বিশিষ্ট চিকিৎসক ডা. রেজা চৌধুরী করোনাভাইরাসে আক্রান্ত হয়ে ইন্তেকাল করেন ৮ এপ্রিল, বুধবার রাত ১১.৩০ মিনিটে। করোনা ভাইরাসে আক্রান্ত হয়ে তিনি লং আইল্যান্ডের নর্থ শোর ইউনিভার্সিটি হাসপাতালে মারা যান। মৃত্যুকালে তিনি স্ত্রী, এক পুত্র ও এক কন্যা সহ বহু আতœীয়-স্বজন ও গুণগ্রাহী রেখে যান।
নিউইয়র্কে বাংলাদেশী অধ্যুষিত ব্রঙ্কসে বসবাসকারী প্রবাসীদের প্রিয় মুখ ডা. রেজার চেম্বার ছিল পার্কচেস্টার সাবওয়ে সংলগ্ন ১৯৫৭ ওয়েস্টচেস্টার এভিনিউতে। যার নাম ওয়েস্ট চেস্টার মেডিক্যাল হেলথ কেয়ার। জানা গেছে ডা. রেজা চৌধুরী এই দূর্যোগের সময়ও চেম্বারে নিয়মিত তার রোগীদের সেবা দিতেন। ধারনা করা হচ্ছে তাঁর কোন রোগী থেকেই তিনি করোনা ভাইরাসে সংক্রমিত হন এবং হাসপাতালে ভর্তি হওয়ার পর সেখানেই শেষ নি:শ্বাস ত্যাগ করেন।
এনওয়াইপিডি’র ডিটেকটিভ জামিলের পিতার করোনায় মৃত্যু
বৈশ্বিক মহামারীতে দায়িত্ব পালন করতে গিয়ে বিশ্বের অন্যতম সেরা আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী নিউইয়র্ক পুলিশ বিভাগের (এনওয়াইপিডি) ডিটেকটিভ জামিল সারোয়ার জনির শরীরে সংক্রমিত হয়েছিলো করোনাভাইরাস। পরীক্ষায় যখন পজিটিভ ধরা পড়লো ততক্ষণে সর্বনাশ যা হবার হয়ে গেছে। ঘরে আক্রান্ত হয়েছেন তার বাবা। আর বাবাকে সেবা দিচ্ছিলেন মা। মারাত্মক অসুস্থ অবস্থায় হাসপাতালে নেওয়ার পর স্থানীয় সময় ৮ এপ্রিল বুধবার দুপুরে বাবা অ্যাডভোকেট সারোয়ার হোসেন পৃথিবী থেকে বিদায় নেন।
লম্বা ছুটি কাটিয়ে স্ত্রী ও কন্যাকে বাংলাদেশে রেখে ইমিগ্র্যান্ট বাবা-মাকে সঙ্গে নিয়ে প্রায় এক মাস আগে নিউইয়র্কে ফিরে কর্মস্থলে যোগ দেন ডিটেকটিভ জামিল সারোয়ার জনি। নিউইয়র্ক পুলিশের ‘হিরো’ উপাধি পাওয়া জনি বর্তমানে ইন্টেলিজেন্স উইংয়ে কর্মরত। পেশাগত কারণে সাদা পোশাকে (আন্ডারকভার) অনেক জায়গায় যেতে হয় তাকে। পুরো নিউইয়র্ক যখন লকডাউন তখনো দায়িত্ব পালন করছিলেন তিনি। হঠাৎ একদিন বাসায় ফিরে অসুস্থবোধ করেন জনি। গলা ব্যথা ও তীব্র জ্বরের লক্ষণ শরীরে। একদিন সকালে নিজেই গাড়ি চালিয়ে কোভিড-১৯ এর পরীক্ষা করিয়ে আসেন। ফার্স্ট রেসপন্ডার হিসাবে দ্রæত জানতে পারেন তার শরীরে ঢুকে পড়েছে কোভিড-১৯ ভাইরাস। কিন্তু শরীরের ইমিউন সিস্টেমের সঙ্গে লড়াই করে প্রায় দু’সপ্তাহ পর সুস্থ হয়ে ওঠেন জনি।
অন্যদিকে ধীরে ধীরে অসুস্থ হয়ে পড়েন বাবা সারোয়ার হোসেন। হাসপাতালে নেওয়ারও পরিবেশ নেই। শরীরে কোভিড-১৯ ধরা পড়লেও সবাইকে হাসপাতালে ভর্তি করা হচ্ছিল না। বাসায় রেখেই চিকিৎসা চলছিল তার। এরইমধ্যে গত ৭ এপ্রিল মঙ্গলবার দুপুরে তীব্র শ্বাসকষ্ট শুরু হয়। দ্রæত অ্যাম্বুলেন্স কল করে সারোয়ার হোসেনকে নিয়ে যাওয়া হয় বাসার কাছের এলমহার্স্ট হাসপাতালে। এই হাসপাতালটি এখন অনেকটা মৃত্যুপুরী হিসাবে চিহ্নিত হয়ে যায়। নিউইয়র্ক সিটিতে সর্বোচ্চ মৃত্যুর রেকর্ড এই হাসপাতালেই।
অ্যাডভোকেট সারোয়ার হোসেন পিরোজপুর শহরের সিনিয়র আইনজীবী ছিলেন। তার সহধর্মিণী রেনু সুলতানা পিরোজপুর সরকারি মহিলা কলেজের অবসরপ্রাপ্ত অধ্যক্ষ। ছোট ছেলে জনির আবেদনে তারা যুক্তরাষ্ট্রে ইমিগ্র্যান্ট হয়েছেন। বাংলাদেশ ও যুক্তরাষ্ট্রে তারা আসা-যাওয়ার মধ্যে ছিলেন।
কৃষিবিদ শাহানা আহমেদ তালুকদার আঁখি ইন্তেকাল
করোনা ভাইরাসে আক্রান্ত হয়ে ৮ এপ্রিল, বুধবার বাংলাদেশী কৃষিবিদ শাহানা আহমেদ তালুকদার আঁখি ইন্তেকাল করেন। নিউইয়র্ক সময় বুধবার ভোর ৩টায় তিনি মারা যান। তিনি করোনায় আক্রান্ত হয়ে লং আইল্যান্ডের একটি হাসপাতালে গত ৪/৫ দিন ধরে চিকিৎসাধীন ছিলেন। কৃষিবিদ শাহানা আহমেদ তালুকদার আঁখি নিউইয়র্কের একটি ফার্মাসিউটিক্যাল কোম্পানিতে চাকরি করতেন। তাঁর দেশের বাড়ি নেত্রকোনায়। তিনি বাংলাদেশ কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়াশোনা করেছেন। তার স্বামীও একই বিশ্ববিদ্যালয়ে সহপাঠী ছিলেন। বছর দুয়েক আগে পারিবারিক অভিবাসন সূত্রে স্বামীকে নিয়ে নিউইয়র্কে পাড়ি জমান। ব্যক্তিগত জীবনে আখি অত্যন্ত হাসি-খুশি, সদালাপি ও বন্ধুবৎসল ছিলেন।
আলহাজ্ব গিয়াস উদ্দীনের ইন্তেকাল
নিউইয়র্কের বিশিষ্ট ব্যবসায়ী, ছাতক সমিতি ইউএসএ’র সাবেক সভাপতি, নিউইয়র্কের ব্রঙ্কসের স্টারলিং বাংলাবাজার বিজনেস এসোসিয়েশনের প্রেসিডেন্ট, বাংলা বাজার জামে মসজিদের সভাপতি, এ এ ডাবল ডিসকাউন্ট সহ বেশ কয়েকটি ব্যবসা প্রতিষ্ঠানের স্বত্বাধিকারী আলহাজ্ব গিয়াস উদ্দীন (৬২) করোনায় ইন্তেকাল করেন। তিনি ১০ এপ্রিল, শুক্রবার ভোর রাত ২.১৫ মিনিটে ব্রঙ্কসের আইনস্টাইন হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় শেষ নি:শ্বাস ত্যাগ করেন। তার ইন্তেকালে কমিউনিটিতে শোকের ছায়া নেমে এসেছে।
আলহাজ্ব গিয়াস উদ্দীন মৃত্যুকালে স্ত্রী, ২ ছেলে, ১ মেয়ে, ৪ ভাই ২ বোন সহ অসংখ্য আত্মীয় স্বজন রেখে গেছেন। তাঁর দেশের বাড়ী সিলেটের ছাতকে। তিনি করোনা ভাইরাসে আক্রান্ত হয়ে আইনস্টাইন হাসপাতালে ভর্তি ছিলেন। তিনি দীর্ঘ ৩৮ বছর যাবত প্রবাস জীবন যাপন করছিলেন। ১৯৭৮ সালে তিনি বাংলাদেশ থেকে পাড়ি জমান ইরানে। সেখান থেকে জার্মানীতে। তারপর ১৯৮২ সালে তিনি যুক্তরাষ্ট্রে অভিবাসী হন।
টাঙ্গাইলের তাজিনের মৃত্যু
যুক্তরাষ্ট্র প্রবাসী, নিউইয়র্কে বসবাসকারী টাঙ্গাইলের সন্তান বনিতা তাজিন (৩৪) ‘মরণঘাতী করোনা ভাইরাসে’ আক্রান্ত হয়ে ১১ এপ্রিল, শনিবার রাতে মৃত্যুবরণ করেন। তিনি টাঙ্গাইল জেলা শহরের কলেজ পাড়ার সুপরিচিত মরহুম এডভোকেট সেতাব আলী খানের নাতনি এবং মরহুম জহিরুল ইসলাম খান মজনু’র মেজ কন্যা। এছাড়াও তিনি টাঙ্গাইল জেলা সোসাইটি ইউএসএ’র সাবেক আহŸায়ক মোহাম্মদ শামসুজ্জামান খানের ভাতিজি। তাজিন মৃত্যুকালে স্বামী, এক ছেলে (৮), এক মেয়ে (সাড়ে ৩) সহ মা, দু’বোন, চাচা-চাচি সহ অসংখ্য আত্মীয় স্বজন ও গুণগ্রাহী রেখে গেছেন।
বনিতা তাজিনের শশুর ও মোহাম্মদ তারিক রাশেদ-এর বাবা টাঙ্গাইলের বিশিষ্ট আইনজীবি মোহাম্মদ হায়াত আলী আকন্দ গত ৩ এপ্রিল লং আইল্যান্ড জুইস (এলআইজি) হাসপাতালে ইন্তেকাল করেন। কিনডী জটিলতা সহ অন্যান্য শারীকি সমস্যায় ভুগছিলেন এবং কিডনী ডায়ালাইসি করতে গিয়ে করনায় আক্রান্ত হয়ে শেষ নি:শ্বাস ত্যাগ করেন। এডভোকেট হায়াত আলী এক সময় টাঙ্গাইলের গোপালপুরে শিক্ষকতা পেশার সাথে জড়িত ছিলেন।
কুইন্সের জ্যামাইকার ব্রয়ারউড এলাকায় বসবাসকারী বনিতা তাজিন সম্প্রতি করোনাভাইরাসে আক্রান্ত হন এবং সন্তানদের কথা চিন্তা করে তা কাউকে না জানিয়ে নিজে নিজেই চিকিৎসা নেন। এরমধ্যে ‘আর্জেন্ট কেয়ারে’-ও যোগাযোগ করে বাসায় অবস্থান করছিলেন। শনিবার দুপুরের খবারের পর স্বামী মোহাম্মদ তারিক রাশেদ-এর কাছ থেকে বিদায় নিয়ে ঘুমুতে যান। এদিকে তারিক রাশেদ দুই সন্তান নিয়ে সময় কাটাতে থাকেন। পরবর্তীতে রাত হয়ে গেলেও স্ত্রী তাজিনের কোন সাড়া-শব্দ না পেয়ে তারিক রাশেদ রাত সোয়া ১১টার দিকে খোঁজ নিতে গিয়ে দেখে তার স্ত্রী আর নেই। চলে গেছেন না ফেরার দেশে। সাথে সাথে তিনি ৯১১ এ কল করলে জরুরী কাজে নিয়োজিত স্বাস্থকর্মীরা এসে তার (তাজিন) মৃত্যু নিশ্চিত করেন। উল্লেখ্য, তারিক রাশেদ নিজেও অসুস্থ এবং কয়েকদিন আগে হাসপাতাল থেকে বাসায় ফিরেছেন। বনিতা তাজিন ৪/৫ বছর আগে যুক্তরাষ্ট্রের অভিবাসী হয়ে নিউইয়র্কে বসবাস করছিলেন।
সাংকৃতিক সংগঠক রওশন আরা ফেরদৌসের মৃত্যু
কিশোরগঞ্জের মুক্তিযাদ্ধা এএসএম ফেরদৌসের সহধর্মিনী, সাংকৃতিক সংগঠক রওশন আরা ফেরদৌস (৬১) করোনা ভাইরাসে আক্রান্ত হয়ে মৃত্বুরণ করেন। মৃত্যুকালে তিনি স্বামী, দুই পুত্র, এক মেয়ে, ছয় নাতিসহ বহু আতœীয়-স্বজন ও গুণগ্রাহী রেখে গেছেন। মরহুমার দেশের বাড়ীও কিশোরগঞ্জ। ফেরদৌস-রওশন দম্পতি নিউইয়র্কের উডসাইড এলাকায় বসবাস করতেন। রওশন আরা ফেরদৌস গত ১১ এপ্রিল শনিবার ভোর ৪:১৯ মিনিট নিউইয়কের মাউন্টসিনাই হাসপাতালে শেষ নি:শ্বাস ত্যাগ করেন।
মুক্তিযোদ্ধা মনির হোসেনের স্ত্রীর মৃত্যু
বীর মুক্তিযোদ্ধা, জ্যামাইকা বাংলাদেশ ফ্রেন্ডস সোসাইটির প্রাক্তন সভাপতি ও বর্তমান উপদেষ্টা, রূপসী চাঁদপুর ফাউন্ডেশন ইউএসএ’র উপদেষ্টা এবং নিউইয়র্ক ষ্টেট আওয়ামী লীগের সহ সভাপতি মনির হোসেনের সহধর্মীনি পেয়ারা হোসেন বেবী, করোনায় আক্রান্ত হয়ে ১৩ এপ্রিল, সোমবার ইন্তেকাল করেন। করোনা ভাইরাসে আক্রান্ত হয়ে তিনি লং আইল্যান্ড জুইস হাসপাতালে ভর্তি হন। সেখানেই চিকিৎসাধীন থাকাবস্থায় সোমবার বিকাল সাড়ে তিনটার দিকে ইন্তেকাল করেন। তার মৃত্যুতে নিউইয়র্কের বাংলাদেশী কমিউনিটিতে বিশেষ করে জ্যামাইকা এলাকায় শোকের ছায়া নেমে এসেছে। মৃত্যুকালে পেয়ারা হোসেন বেবী স্বামী, ২ পুত্র, ৩ কন্যা ওনাতি-নাতনী সহ বহু আতœীয়-স্বজন রেখে যান।
সঙ্গীত শিল্পী বীণা মজুমদারের মৃত্যু
নিউইয়র্কে করোনায় ভাইরাসে আক্রান্ত হয়ে মৃত্যুবরণ করেন বিটিভি ও রেডিও’র লোক সঙ্গীত শিল্পী বীণা মজুমদার। ১৪ এপ্রিল, মঙ্গলবার সকাল আটটায় তিনি স্থানীয় জ্যামাইকা হাসপাতালে শেষ নি:শ্বাস ত্যাগ করেন। ফরিদপুর জেলার নগরকান্দা উপজেলার জগদিয়ার সন্তান বীণা মজুমদার তিনি দীর্ঘদিন ধরে ক্যান্সারে ভুগছিলেন। মরহুমা বীণা মজুমদারের নামাজে জানাজা ও দাফন ১৫ এপ্রিল, বুধবার সম্পন্ন হয়। তার মরদেহ এদিন দুপুরে নিউজার্সীর মার্লবরো মুসলিম কবর স্থানে বাংলাদেশ সোসাইটির কবরে দাফন হয়।
কমিউনিটি নেতা ফখরুল ইসলাম দেলোয়ারের শশুরের ইন্তেকাল
প্রবাসে বাংলাদেশী কমিউনিটির পরিচিত মুখ, বিশিষ্ট সমাজকর্মী, জ্যামাইকা বাংলাদেশ ফ্রেন্ডস সোসাইটির সভাপতি মোহাম্মদ ফখরুল ইসলাম দেলোয়ারের শশুর আব্দুস সালাম খান (৭৬) ইন্তেকাল করেন। তিনি ২১ এপ্রিল, মঙ্গলবার বেলা ৩টার দিকে লং আইল্যান্ডের নর্থশোর হাসপাতালে শেষ নি:শ্বাস ত্যাগ করেন। মৃত্যুকালে তিনি স্ত্রী, ২ পুত্র ও ৫ কন্যা এবং নাতি-নাতনি সহ বহু আতœীয়-স্বজন রেখে গেছেন। মরহুমের দেশে বাড়ী সিলেট জেলার বিয়ানীবাজার উপজেলার কুড়ার বাজার ইউনিয়নের আঙ্গারজুর।
আব্দুস সালাম খান অসুস্থ হলে ১৩ এপ্রিল সোমবার তাকে নর্থশোর হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। সেখানে তার করোনাভাইরাস সহ শারীরিক অসুস্থতাজনিত অন্যান্য চিকিৎসা চলছিলো। হাসপাতালে চিকিৎসাধীন থাকাবস্থায় ৮দিন পর মঙ্গলবার বেলা ৩টার দিকে তিনি শেষ নি:শ্বাস ত্যাগ করেন। উল্লেখ্য, মরহুম আব্দুস সালাম খান বিয়ানীবাজার সামাজিক ও সাংস্কৃতিক সমিতি ইউএসএ’র সাবেক সভাপতি মাসুকুল ইসলাম খানের মামা শশুর এবং সতিতির সাবেক সাংগঠনিক সম্পাদক ও নির্বাচন কমিশনার এবং বাংলাদেশ সোসাইটির প্রচার ও গণ সংযোগ সম্পাদক রিজু মোহাম্মদ-এর ফুপা শশুর।
বিদ্যুৎ দাসের মৃত্যু
মরণবাধী করোনাভাইরাসে আক্রান্ত হয়ে মৃত্যবরণ করেছেন হিন্দু-বৌদ্ধ-খৃীষ্টান ঐক্য পরিষদ ইউএসএ’র সাধারণ সম্পাদক ইঞ্জিনিয়ার বিদ্যুৎ দাস। তিনি ২১ এপ্রিল, মঙ্গলবার রাত ৮টা ৫মিনিটে নিউইয়র্কের ষ্ট্যাটেন আইল্যান্ডের একটি হাসপাতালে চিকিৎসাধীন থাকাবস্থায় পরলোকগমণ করেন। তার বয়স হয়েছিলো ৬০ বছর। তিনি ২৩ দিন ধরে করোনাভাইরাসের সাথে যুদ্ধ করছিলেন। মৃত্যুকালে তিনি স্ত্রী কেকা দাস, এক ছেলে আকাশ দাস ও এক কন্যা কুহু দাস সহ অনেক বন্ধু-বান্ধব ও শুকাঙ্খী রেখে যান। নিউইয়র্কের ষ্ট্যাটেন আইল্যান্ডে বসবাসকারী ইঞ্জিনিয়ার বিদ্যুৎ দাস চট্টগ্রাম জেলার স›দ্বীপ-এর মুছাপুর ইউনিয়নের মাস্টার সুভাষ দাসের সন্তান।
করোনা ট্রাজেডি : ছোট ভাইয়ের পর বড় ভাইও চলে গেলেন
মরণঘাতি করোনাভাইরাসে আক্রন্ত হয়ে ছোট ভাইয়ের পর এবার বড় ভাইও চলে গেলেন না ফেরার দেশে। প্রায় তিন সপ্তাহের ব্যাবধানে একই পরিবারের দু’জনের মৃত্যুতে শোকে পাথর হয়ে যান পরিবারের সদস্যরা। যুক্তরাষ্ট্র প্রবাসী টাঙ্গাইলবাসীদের সামাজিক সংগঠন টাঙ্গাইল জেলা সমিতি ইউএসএ’র সাবেক ক্রীড়া সম্পাদক মোহাম্মদ খান রাজেস-এর বড় ভাই সফি হায়দার খান (৫৪) মঙ্গলবার (২১ এপ্রিল) ইন্তেকাল করেন। তিনি করোনা ভাইরাস-এ আক্রান্ত হয়ে ৩০ মার্র্চ থেকে ম্যানহাটানের মাউন্টসিনাই হাসপাতালের আইসিসিইউতে চিকিৎসাধীন ছিলেন। তার ছোট ভাই সাইফুর হায়দার খান আজাদ (৪৭) করোনায় আক্রান্ত হয়ে গত ৪ এপ্রিল, শনিববার দিবাগত রাত ১টা ৩০ মিনিটে জ্যামাইকা হাসপাতালে মৃত্যুবরণ করেন।
করোনায় অসুস্থ্য হয়ে সফি হায়দার খান ২১ দিন ধরে ম্যানহাটানের মাউন্টসিনাই হাসপাতালে চিকিৎসাধীন ছিলেন। সেখানে তার করোনা ভাইরাস পজেটিভ সনাক্ত হওয়ার পর চিকিৎসা চললেও শেষ পর্যন্ত আর রক্ষা হয়নি। ২১ এপ্রিল, মঙ্গলবার সকাল ৯টার দিকে এই হাসপাতালেই তিনি শেষ নি:শ্বাস ত্যাগ করেন। মৃত্যুকালে তিনি স্ত্রী, এক ছেলে (২১) ও এক মেয়ে (১৩) সহ অরেক আতœীয়-স্বজন রেখে যান। তিনি দীর্ঘ ১০ বছর ধরে নিউইয়র্কের রীচমন্ড হিলে সপরিবারে বসবাস করছিলেন।
এদিকে মরহুম সফি হায়দার খানের স্ত্রী মাসুমা পারভীন এলি তার ছোট মেয়েকে নিয়ে বাংলাদেশে বেড়াতে গিয়ে আটকা পড়েন। পারিবারিক প্রয়োজনে তিনি দেশে যাওয়ার পর করোনা পরিস্থিতিতে তার নিউইয়র্ক ফেরা অনিশ্চিত হয়ে পড়ে। ফরে চরম অসুস্থতা এমনকি মৃত্যুর সময়ও স্বামীর পাশে থাকতে পারেনি স্ত্রী, বাবাকে দেখতে পেলো না আদরের কন্যা।
তারা ৫ ভাই ও এক বোন নিউইয়র্কে বসবাস করেতেন। করোনায় মৃত্যুবরণকরী দুই ভাই নিউইয়র্ক সিটির রিচমন্ডহীলে দুই ফ্যামিলির একই বাসায় বসবাস করতেন। তারা টাঙ্গাইল শহরের ছয়আনী বাজারের স্থায়ী বাসিন্দা এবং তাদের গ্রামের বাড়ী টাঙ্গাইল জেলার দেলদুয়ার উপজেলার চকতৈল।
চলে গেছেন বাবলী নেওয়াজ
নিউইয়র্কের সুপরিচিত সাংস্কৃতিক সংগঠন বাংলাদেশ ইনস্টিটিউট অব পারফর্মিং আর্টস-এর (বিপা)-এর সহ সভাপতি বাবলী নেওয়াজ করোনায় আক্রান্ত হয়ে গত ২৫ এপ্রিল ভোরে কুইন্সের একটি হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় ইন্তেকাল করেন।
ফরিদ আহমেদ ছাইদুল
নিউইয়র্ক প্রবাসী ফরিদ আহমেদ ছাইদুল ২৫ এপ্রিল ভোরে নিউইয়র্কের একটি হাসপাতালে ইন্তেকাল করেন। তার পারিবারের দাবী তিনি হার্ট এ্যাটাকে মৃত্যুবরণ করেছেন। মৃত্যুকালে তার বয়স হয়েছিলো ২৭ বছর।
মাওলানা আবদুন নুর
জাসাসের কেন্দ্রীয় সাধারণ সম্পাদক এবং বিএনপির কেন্দ্রীয় কমিটির অন্যতম সদস্য, চিত্রনায়ক হেলাল খানের পিতা মাওলানা আবদুন নুর ২৬ এপ্রিল, রোববার ভোর রাত দেয়টায় ইন্তেকাল করেছেন। নিউইয়র্কের লং আইল্যান্ডস্থ গুড সমরিতান হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় তিনি শেষ নি:শ্বাস ত্যাগ করেন। মৃত্যুকালে তার বয়স হয়েছিল ১০০ বছর।
জিয়াউল আহসান
মরহুম জিয়াউল আহসান চাঁদপুরের ভাষাসৈনিক মরহুম অ্যাডভোকেট এ এফ এম ফজলুল হকের পঞ্চম পুত্র। তিনি করোনায় আক্রান্ত হয়ে ২ এপ্রিল থেকে নিউইয়র্কের একটি হাসপাতালে চিকিৎসাধীন ছিলেন। ২৬ এপ্রিল, রোববার বাংলাদেশ সময় সকাল সাড়ে ১০টায় তিনি মারা যান। তার বয়স ছিল ৪৯ বছর। জিয়াউল আহসান চাঁদপুর গনি মডেল হাইস্কুলের এসএসসি ৮৫ ব্যাচের ছাত্র ছিলেন। চাঁদপুর সরকারি কলেজ থেকে এইচএসসি পাসের পর তিনি ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে ইংরেজি বিষয়ে অনার্সসহ মাস্টার্স ডিগ্র্র অর্জন করেন। ১৯৯৭ সালে তিনি যুক্তরাষ্ট্রে পাড়ি দেন। নিউইয়র্কে তিনি স্থায়ীভাবে বসবাসকরা অবস্থায় সিটি পুলিশের চাকরিতে যোগদান করেন।
রাশিদা আহমেদ ‘মুন’
নিউইয়র্কে বাংলাদেশী কমিউনিটির পরিচিত মুখ, যুক্তরাষ্ট্র বিএনপি’র সক্রিয় নেত্রী রাশিদা আহমেদ ‘মুন’ (৪৬) মরণঘাতি করোনাভাইরাসে আক্রান্ত হয়ে দীর্ঘ ২২দিন ধরে লং আইল্যান্ডের প্লেন ভিউ হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় ৩০ এপ্রিল, বৃহস্পতিবার দুপুর ১২টার দিকে মৃত্যুবরণ করেন। তার দেশের বাড়ী পাবনা জেলায় শালগাড়ীয়া। তিনি নিউইয়র্কের জ্যাকসন হাইটসে বসবাস করতেন। মুন ব্যক্তিগত জীবনে হাস্যজ্জল, বিনয়ী ও ভালো মনের মানুষ ছিলেন।
এছাড়াও এই এপ্রিল মাসে আরো যারা ইন্তেকাল করেছেন তাদের মধ্যে রয়েছেন- কমিনিটির পরিচিত মুখ এবং যুক্তরাষ্ট্র ছাত্রলীগের সাবেক সাধারণ সম্পাদক জাহাঙ্গীর এইচ মিয়ার পিতা মহিউদ্দিন। তিনি নিউইয়র্কের এলমহার্স্ট হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় ইন্তেকাল করেন। মৃত্যুকালে তার বয়স হয়েছিলো ৬০ বছর। মহিউদ্দিনের দেশের বাড়ি পাবনা।