নিউইয়র্ক ০২:৩৮ পূর্বাহ্ন, শনিবার, ০৮ মার্চ ২০২৫, ২৩ ফাল্গুন ১৪৩১ বঙ্গাব্দ
বিজ্ঞাপন :
মঙ্গলবারের পত্রিকা সাপ্তাহিক হককথা ও হককথা.কম এ আপনার প্রতিষ্ঠানের বিজ্ঞাপন দিতে যোগাযোগ করুন +1 (347) 848-3834

সাদেক হোসেন খোকার ইন্তেকাল : সোমবার (৪ নভম্বর) বাদ আসর (জেএমসি)-তে জানাজা

রিপোর্ট:
  • প্রকাশের সময় : ০৪:৩৬:১৬ পূর্বাহ্ন, সোমবার, ৪ নভেম্বর ২০১৯
  • / ৩২৩ বার পঠিত

নিউইয়র্ক (ইউএনএ): নিউইয়র্কের ম্যানহাটনের মেমোরিয়াল ¯েøায়ান ক্যাটারিং ক্যান্সার সেন্টারে নিবিড় পরিচর্যা কেন্দ্রে চিকিৎসাধীন অবিভক্ত ঢাকা সিটি কর্পোরেশনের নির্বাচিত সাবেক মেয়র, সাবেক মন্ত্রী ও বিএনপির ভাইস চেয়ারম্যান সাদেক হোসেন খোকা আর নেই। নিউইয়র্ক সময় সোমবার (৪ নভেম্বর) ভোর রাত ২টা ৫০ মিনিটে (বাংলাদেশ সময় দুপুর ১:৫০ মিনিটে) তিনি শেষ নি:শ্বাস ত্যাগ করেন (ইন্নালিল্লাহি ওয়া ইন্না ইলাইহি রাজেউন)। তার বয়স হয়েছিলো ৬৭ বছর।হাসপাতাল থেকে ফিরে খবরটি নিশ্চিত করেছেন সাপ্তাহিক বাংলাদেশ সম্পাদক ও নিউইয়র্ক বাংলাদেশ প্রেসক্লবের সভাপতি ডা. ওয়াজেদ এ খান। উল্লেখ্য, ক্যান্সার চিকিৎসার জন্য ২০১৪ সালের ১৪ মে সপরিবারে নিউইয়র্ক চলে আসেন খোকা। তারপর থেকে চিকিৎসকের পরামর্শ অনুযায়ী নিউইয়র্ক সিটির কুইন্সে একটি বাসায় দীর্ঘদিন ধরে বসবাস করে চিকিৎসা নিচ্ছিলেন তিনি। খবর ইউএনএ’র।

প্রায় চার সপ্তাহ আগে সাদেক হোসেন শারীরিক অবস্থার অবনতি ঘটলে ¯েøায়ান ক্যাটারিং ক্যানসার সেন্টারে ভর্তি করা হয় তাকে। গত ২৮ অক্টোবর সোমবার স্বাস্থ্যের আরও অবনতি ঘটলে তাকে হাসপাতালের আইসিইউতে নেওয়া হয়। জনাব খোকার মৃতুর সময় তার স্ত্রী ইসমত আরা সহ দুই পুত্র ও কন্যা হাসপাতেই ছিলেন বলে জানা গেছে।
এদিকে তাকে দেখতে যুক্তরাষ্ট্র বিএনপি’র নেতা-কর্মী সহ কমিউনটির বিশিষ্ট ব্যক্তিবর্গ প্রতিদিন হাসপাতালে ভীড় করেন। সর্বশেষ রোববার তাকে দেখতে যান যুক্তরাষ্ট্র আওয়ামী লীগের সভাপতি ড. সিদ্দিকুর রহমান। এসময় দলের সহ সভাপতি সৈয়দ বসারত আলী, ভারপ্রাপ্ত সাধারণ সম্পাদক আব্দুস সামাদ আজাদ, যুগ্ম সম্পাদক মহিউদ্দিন দেওয়ান প্রমুখ নেতৃবৃন্দ তার সাথে ছিলেন। এছাড়াও সাপ্তাহিক পরিচয় সম্পাদক নাজমুল আহসান তাদের সাথে ছিলেন।

সাদেক হোসেন খোকার জন্ম ১৯৫২ সালের ১২ মে। ১৯৭১ সালে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র থাকাকালীন তিনি মুক্তিযুদ্ধে অংশগগ্রহণ করেছিলেন। গেরিলা যোদ্ধা হিসেবে তার খ্যাতি রয়েছে।
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে মনোবিজ্ঞানে স্নাতকোত্তর করেন তিনি। আশির দশকে বামপন্থি রাজনীতি ছেড়ে আসেন বিএনপিতে। ওই সময় নয়াবাজার নবাব ইউসুফ মার্কেটে বিএনপির কার্যালয় থেকে এরশাদবিরোধী আন্দোলনের সূচনা করে সাতদলীয় জোটের নেতৃত্ব দেন বিএনপি চেয়ারপারসন বেগম খালেদা জিয়া। ওই অন্দোলনে ঢাকা মহানগর সংগ্রাম পরিষদের আহবায়কের দায়িত্ব পেয়েছিলেন খোকা। ১৯৯০ সালে বাবরি মসজিদ ভাঙাকে কেন্দ্র করে পুরান ঢাকায় হিন্দু সম্প্রদায়ের সুরক্ষায় গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রেখে পুরান ঢাকার মানুষের মনে আস্থার জায়গা করে নেন। ১৯৯১ সালের জাতীয় নির্বাচনে ঢাকা-৭ আসনে (সূত্রাপুর-কোতোয়ালি) শেখ হাসিনাকে পরাজিত করে প্রথমবারের মতো এমপি নির্বাচিত হয়ে আলোচনায় আসেন। এরপর তিনি বিএনপি সরকারের যুব ও ক্রীড়া মন্ত্রণালয়ের দায়িত্ব পান। ১৯৯৬ সালের নির্বাচনে ঢাকার আটটি আসনের মধ্যে সাতটিতে বিএনপি প্রার্থী পরাজিত হলেও একমাত্র খোকা নির্বাচিত হন। দিনে দিনে তার জনপ্রিয়তা বাড়তে থাকে। ঢাকার রাজনীতিতে খোকা ফ্যাক্টর হয়ে ওঠেন। পরে আওয়ামী লীগ সরকারবিরোধী আন্দোলনে প্রায় পাঁচ বছর একক নেতৃত্ব দিয়ে তিনি বিএনপির গুরুত্বপূর্ণ নেতায় পরিণত হন।
২০০১ সালের নির্বাচনে সংসদ সদস্য নির্বাচিত হয়ে তিনি মৎস্য ও পশুসম্পদমন্ত্রী হন। ওই সময় পুরান ঢাকায় বিএনপির রাজনীতিতে নিজস্ব বলয় তৈরির পাশাপাশি প্রতিটি থানা ও ওয়ার্ডে দলকে শক্তিশালী করার পেছনে তার গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা ছিল। এর আগে ১৯৯৪ সালে সিটি করপোরেশন নির্বাচনে আওয়ামী লীগ নেতা মোহাম্মদ হানিফের কাছে পরাজিত হন মির্জা আব্বাস। বিএনপি সরকারের বিরুদ্ধে আওয়ামী লীগসহ অন্যান্য বিরোধীদল কঠোর আন্দোলন শুরু করলে ঢাকায় বিএনপি কোণঠাসা হয়ে পড়ে। এ অবস্থায় খোকাকে ১৯৯৬ সালে মহানগর বিএনপির আহবায়কের দায়িত্ব দেয়া হয়। ২০০২ সালের ২৫ এপ্রিল অবিভক্ত ঢাকা সিটি করপোরেশন নির্বাচনে তিনি মেয়র নির্বাচিত হন। ২০১১ সালের ২৯ নভেম্বর পর্যন্ত তিনি ঢাকার মেয়র ছিলেন।

নামাজে জানাজা: সোমবার (৪ নভম্বর) বাদ আসর নিউইয়র্কের জামাইকা মুসলিম সেন্টার (জেএমসি)-তে মরহুম সাদেক হোসেন খোকার নামাজে জানাজা অনুষ্ঠিত হবে। এরপর পর যতদ্রæত সম্ভব তার মরদেহ ঢাকায় নিয়ে যাওয়া হবে। তাঁর শেষ ইচ্ছে মোতাবেক ঢাকার জুরাইনে তার মা-বাবার কবরের পাশে তাঁর মরদেহ দাফন করা হবে।

সোশ্যাল মিডিয়ায় খবরটি শেয়ার করুন

About Author Information

সাদেক হোসেন খোকার ইন্তেকাল : সোমবার (৪ নভম্বর) বাদ আসর (জেএমসি)-তে জানাজা

প্রকাশের সময় : ০৪:৩৬:১৬ পূর্বাহ্ন, সোমবার, ৪ নভেম্বর ২০১৯

নিউইয়র্ক (ইউএনএ): নিউইয়র্কের ম্যানহাটনের মেমোরিয়াল ¯েøায়ান ক্যাটারিং ক্যান্সার সেন্টারে নিবিড় পরিচর্যা কেন্দ্রে চিকিৎসাধীন অবিভক্ত ঢাকা সিটি কর্পোরেশনের নির্বাচিত সাবেক মেয়র, সাবেক মন্ত্রী ও বিএনপির ভাইস চেয়ারম্যান সাদেক হোসেন খোকা আর নেই। নিউইয়র্ক সময় সোমবার (৪ নভেম্বর) ভোর রাত ২টা ৫০ মিনিটে (বাংলাদেশ সময় দুপুর ১:৫০ মিনিটে) তিনি শেষ নি:শ্বাস ত্যাগ করেন (ইন্নালিল্লাহি ওয়া ইন্না ইলাইহি রাজেউন)। তার বয়স হয়েছিলো ৬৭ বছর।হাসপাতাল থেকে ফিরে খবরটি নিশ্চিত করেছেন সাপ্তাহিক বাংলাদেশ সম্পাদক ও নিউইয়র্ক বাংলাদেশ প্রেসক্লবের সভাপতি ডা. ওয়াজেদ এ খান। উল্লেখ্য, ক্যান্সার চিকিৎসার জন্য ২০১৪ সালের ১৪ মে সপরিবারে নিউইয়র্ক চলে আসেন খোকা। তারপর থেকে চিকিৎসকের পরামর্শ অনুযায়ী নিউইয়র্ক সিটির কুইন্সে একটি বাসায় দীর্ঘদিন ধরে বসবাস করে চিকিৎসা নিচ্ছিলেন তিনি। খবর ইউএনএ’র।

প্রায় চার সপ্তাহ আগে সাদেক হোসেন শারীরিক অবস্থার অবনতি ঘটলে ¯েøায়ান ক্যাটারিং ক্যানসার সেন্টারে ভর্তি করা হয় তাকে। গত ২৮ অক্টোবর সোমবার স্বাস্থ্যের আরও অবনতি ঘটলে তাকে হাসপাতালের আইসিইউতে নেওয়া হয়। জনাব খোকার মৃতুর সময় তার স্ত্রী ইসমত আরা সহ দুই পুত্র ও কন্যা হাসপাতেই ছিলেন বলে জানা গেছে।
এদিকে তাকে দেখতে যুক্তরাষ্ট্র বিএনপি’র নেতা-কর্মী সহ কমিউনটির বিশিষ্ট ব্যক্তিবর্গ প্রতিদিন হাসপাতালে ভীড় করেন। সর্বশেষ রোববার তাকে দেখতে যান যুক্তরাষ্ট্র আওয়ামী লীগের সভাপতি ড. সিদ্দিকুর রহমান। এসময় দলের সহ সভাপতি সৈয়দ বসারত আলী, ভারপ্রাপ্ত সাধারণ সম্পাদক আব্দুস সামাদ আজাদ, যুগ্ম সম্পাদক মহিউদ্দিন দেওয়ান প্রমুখ নেতৃবৃন্দ তার সাথে ছিলেন। এছাড়াও সাপ্তাহিক পরিচয় সম্পাদক নাজমুল আহসান তাদের সাথে ছিলেন।

সাদেক হোসেন খোকার জন্ম ১৯৫২ সালের ১২ মে। ১৯৭১ সালে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র থাকাকালীন তিনি মুক্তিযুদ্ধে অংশগগ্রহণ করেছিলেন। গেরিলা যোদ্ধা হিসেবে তার খ্যাতি রয়েছে।
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে মনোবিজ্ঞানে স্নাতকোত্তর করেন তিনি। আশির দশকে বামপন্থি রাজনীতি ছেড়ে আসেন বিএনপিতে। ওই সময় নয়াবাজার নবাব ইউসুফ মার্কেটে বিএনপির কার্যালয় থেকে এরশাদবিরোধী আন্দোলনের সূচনা করে সাতদলীয় জোটের নেতৃত্ব দেন বিএনপি চেয়ারপারসন বেগম খালেদা জিয়া। ওই অন্দোলনে ঢাকা মহানগর সংগ্রাম পরিষদের আহবায়কের দায়িত্ব পেয়েছিলেন খোকা। ১৯৯০ সালে বাবরি মসজিদ ভাঙাকে কেন্দ্র করে পুরান ঢাকায় হিন্দু সম্প্রদায়ের সুরক্ষায় গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রেখে পুরান ঢাকার মানুষের মনে আস্থার জায়গা করে নেন। ১৯৯১ সালের জাতীয় নির্বাচনে ঢাকা-৭ আসনে (সূত্রাপুর-কোতোয়ালি) শেখ হাসিনাকে পরাজিত করে প্রথমবারের মতো এমপি নির্বাচিত হয়ে আলোচনায় আসেন। এরপর তিনি বিএনপি সরকারের যুব ও ক্রীড়া মন্ত্রণালয়ের দায়িত্ব পান। ১৯৯৬ সালের নির্বাচনে ঢাকার আটটি আসনের মধ্যে সাতটিতে বিএনপি প্রার্থী পরাজিত হলেও একমাত্র খোকা নির্বাচিত হন। দিনে দিনে তার জনপ্রিয়তা বাড়তে থাকে। ঢাকার রাজনীতিতে খোকা ফ্যাক্টর হয়ে ওঠেন। পরে আওয়ামী লীগ সরকারবিরোধী আন্দোলনে প্রায় পাঁচ বছর একক নেতৃত্ব দিয়ে তিনি বিএনপির গুরুত্বপূর্ণ নেতায় পরিণত হন।
২০০১ সালের নির্বাচনে সংসদ সদস্য নির্বাচিত হয়ে তিনি মৎস্য ও পশুসম্পদমন্ত্রী হন। ওই সময় পুরান ঢাকায় বিএনপির রাজনীতিতে নিজস্ব বলয় তৈরির পাশাপাশি প্রতিটি থানা ও ওয়ার্ডে দলকে শক্তিশালী করার পেছনে তার গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা ছিল। এর আগে ১৯৯৪ সালে সিটি করপোরেশন নির্বাচনে আওয়ামী লীগ নেতা মোহাম্মদ হানিফের কাছে পরাজিত হন মির্জা আব্বাস। বিএনপি সরকারের বিরুদ্ধে আওয়ামী লীগসহ অন্যান্য বিরোধীদল কঠোর আন্দোলন শুরু করলে ঢাকায় বিএনপি কোণঠাসা হয়ে পড়ে। এ অবস্থায় খোকাকে ১৯৯৬ সালে মহানগর বিএনপির আহবায়কের দায়িত্ব দেয়া হয়। ২০০২ সালের ২৫ এপ্রিল অবিভক্ত ঢাকা সিটি করপোরেশন নির্বাচনে তিনি মেয়র নির্বাচিত হন। ২০১১ সালের ২৯ নভেম্বর পর্যন্ত তিনি ঢাকার মেয়র ছিলেন।

নামাজে জানাজা: সোমবার (৪ নভম্বর) বাদ আসর নিউইয়র্কের জামাইকা মুসলিম সেন্টার (জেএমসি)-তে মরহুম সাদেক হোসেন খোকার নামাজে জানাজা অনুষ্ঠিত হবে। এরপর পর যতদ্রæত সম্ভব তার মরদেহ ঢাকায় নিয়ে যাওয়া হবে। তাঁর শেষ ইচ্ছে মোতাবেক ঢাকার জুরাইনে তার মা-বাবার কবরের পাশে তাঁর মরদেহ দাফন করা হবে।