নিউইয়র্ক ১০:৫২ অপরাহ্ন, শনিবার, ২১ ডিসেম্বর ২০২৪, ৭ পৌষ ১৪৩১ বঙ্গাব্দ
বিজ্ঞাপন :
মঙ্গলবারের পত্রিকা সাপ্তাহিক হককথা ও হককথা.কম এ আপনার প্রতিষ্ঠানের বিজ্ঞাপন দিতে যোগাযোগ করুন +1 (347) 848-3834

শীতের আগমনে জীবন যাত্রায় পরিবর্তন : নানা রূপে প্রকৃতি

রিপোর্ট:
  • প্রকাশের সময় : ১২:০৫:৩৬ পূর্বাহ্ন, মঙ্গলবার, ১৮ নভেম্বর ২০১৪
  • / ২০৮৭ বার পঠিত

যুক্তরাষ্ট্রের ঋতু পরিক্রমায় এখন শীতকাল। জমতে শুরু করেছে শীত। ফলে পরিবর্তন আসছে জীবন যাত্রায়। পরিবর্তন আসছে প্রকৃতিতেও। বৃক্ষাদির আবরণ ঝড়ে পড়ছে। সবুজ গাছগাছালী পাতা রাঙ্গিয়েছে নানা রঙ্গে। এদিকে প্রতিবছরের মতো এবছরও শীত মৌসুমে বিপুল সংখ্যক প্রবাসী বাংলাদেশী কন্সট্রাকশন ব্যবসায়ীরা দেশমুখী হচ্ছেন। কেননা, এই সময়ে শীতের তীব্রতার কারণে কন্সট্রাকশন কাজ করা সম্ভব হয় না। তবে বাসা-বাড়ী, অফিস-আদালতের ভিতরের কন্সট্রাকশন কাজ চলে। এই কাজের পরিমান শতকরা ২০ ভাগ। মূলত: ডিসেম্বর থেকে মার্চ মাসের মাঝামাঝি পর্যন্ত কন্সট্রাকশন ব্যবসায় অলিখিত ভ্যাকেশন থাকে। অপরদিকে ব্যবসা-বাণিজ্য গুটিয়ে নিতে শুরু করেছেন ফুটপাতের ভেন্ডারগণ। ভাবছেন শীত মৌসুমে বিকল্প ব্যবসা বা চাকুরীর। যেসকল বাংলাদেশী-আমেরিকানদের মূল পেশা কন্সট্রাকশন ব্যবসা তারা এই শীত মৌসুতেই দেশ ভ্রমণের সুযোগ নিয়ে থাকেন।
শীতের আগমে ফ্লু জ্বরের শিকার হচ্ছেন অনেকে। রোগবালাই থেকে মুক্ত থাকতে চলছে ফ্লু শট কর্মসূচী। পাশাপাশি চলছে শীত মোকাবেলায় প্রস্তুতি। নতুন করে কেনাকাটা শুরু হয়েছে শীত বস্ত্রের। ব্যবসা প্রতিষ্ঠানগুলোতেও শোভা পাচ্ছে শীতের পোশাক-পরিচ্ছদ। তবে এসব সামগ্রীর মূল্য গত বছরের তুলনায় খানিকটা বেশী বলে অনেকেই জানিয়েছেন। এদিকে শীতের আগমনে কমে যাচ্ছে কমিউনিটির অনুষ্ঠানাদি। হ্রাস পাচ্ছে হোটেল-রেস্তোরার চায়ের আড্ডা। কমে যাচ্ছে জ্যামাইকা, ব্রুকলীন, ব্রঙ্কস এলাকায় বসবাসকারী তরুণ বাংলাদেশীদের সন্ধ্যার পর ফুটপাত দখল করে আড্ডাও।
অনুসন্ধানে জানা গেছে, নিউইয়র্কের ব্রুকলীন, কুইন্স ও ব্রঙ্কস বরোতে বসবাসকারী ২০/২৫ হাজার বাংলাদেশী রয়েছেন যারা কন্সট্রাকশন ব্যবসার সাথে জড়িত। ব্যবসাটি স্বাধীন, রোজ-রোজগারও ভালো। আর জীবন ধারণের জন্য অত্যন্ত প্রয়োজনীয় বিধায় কন্সট্রাকশন ব্যবসায় অনেকেরই পছন্দ। তাছাড়া এই ব্যবসার সাথে জড়িতদের কর্মকান্ড মূলধারায় প্রশংসিত হওয়ায় নতুন নতুন অনেকেই কন্সট্রাকশন ব্যবসায় জড়িয়ে পড়ছেন।
IMG_7880এদিকে শীতের আগমনে প্রকৃতিতে আমুন পরিবর্তন আসছে। পাল্টে যাচ্ছে পুরো উত্তর আমেরিকার প্রকৃতির দৃশ্য। ঝড়ে পড়ছে গাছের পাতা। ফলে আব্রুহীন হয়ে পড়ছে সুদৃশ্য গাছপালা। অনেক গাছের পাতা সবুজ রং ছেড়ে হলুদ-লাল বর্ণ ধারণ করেছে। সব মিলিয়ে অন্য রকম রূপ ধারণ করেছে প্রকৃতি। পথের পর পথ জুড়ে এই ব্যতিক্রমী মনোরম দৃশ্য অনেকেরই মন কেড়ে নিচ্ছে।
বিশিষ্ট কন্সট্রাকশন ব্যবসায়ী সামসুদ্দীন আজাদ বলেন, নিউইয়র্কে বসবাসরত প্রবাসী বাঙালীদের মধ্যে অন্তত ২০ হাজার লোক এই ব্যবসার সাথে জড়িত। এরমধ্যে ৬০ ভাগ ব্যবসায়ীই হচ্ছেন ব্রুকলীনের চার্চ-ম্যাগডোনাল্ড এভিনিউ এলাকায় বসবাসকারী। তিনি বলেন, শীত মওসুমের কারণে ৭০ ভাগ কন্সট্রাকশন ব্যবসার কাজ কমে যায়। তবে বাসা-বাড়ী, ভবনগুলোর অভ্যন্তরীণ কাজ থাকে ৩০ ভাগের মতো। তাছাড়া শীতের সময়ে কাজ করাও কষ্টসাধ্য হয়ে উঠে। তিনি বলেন, এই সময়ে অনেকেই ‘ভ্যাকেশনে’ বাংলাদেশে বেড়াতে যান।
দীর্ঘ দিন ধরে কন্সট্রাকশন ব্যবসায় নিয়োজিত ব্রুকলীনের মোহাম্মদ হেলালউদ্দিন বলেন, স্বভাবত কারণেই গ্রীষ্মকালীন ব্যবসা হচ্ছে কন্সট্রাকশন ব্যবসা। সেই মনমানসিকতা নিয়েই আমরা বছরের পর বছর ধরে এই ব্যবসা করে আসছি। মোটামুটি পুঁজি, দায়িত্ব পালনে নিষ্ঠা আর মান সম্মত কাজ করতে পারলে এই ব্যবসায় লাভবান হওয়া যায়। তাছাড়া আমেরিকান মূলধারায় বাংলাদেশীদের কর্মকান্ড, সততা, নিষ্ঠা অনেকেরই মন কেড়ে নেয়ায় এই ব্যবসায় বিশ্বস্থতাও বেড়েছে। আমাদের অনেকে বাংলাদেশী ব্যবসায়ী আছেন যারা সিটি প্রশাসনের অনেক কাজ বিশেষ করে স্কুল, রাস্তা-ঘাট, ভবন নির্মাণ কাজও করছেন। প্রতিষ্ঠা পেয়েছেন মূলধারার ব্যবসায়ী হিসেবে।
হেলালউদ্দিন বলেন, শীত মৌসুমে কন্সট্রাকশন কাজের পরিমান কমে যাওয়ায় অনেকেই ছুটি কাটাতে দেশে যাচ্ছেন। আর যারা দেশে না যান তারা ইন্টারিয়র (অভ্যন্তরীন) কাজ করে থাকেন। তবে এই কাজের পরিমান বেশী নয়। মূলত: গ্রীষ্মকালীন সময়েই কন্সট্রাকশন কাজ-কর্ম হয়ে থাকে এবং তখন খুব ব্যস্ত সময় কাটাতে হয়। আবার অনেকে এই সময়ে অন্য কাজও করে থাকেন। তার ধারনায় নিউইয়র্কে ১৫/২০ হাজার বাংলাদেশী-আমেরিকান রয়েছেন যারা কন্সট্রাকশন ব্যবসায় জড়িত এবং তারা সফলতার সাথেই ব্যবসা করছেন।
দীর্ঘ এক যুগেরও বেশী সময় ধরে ভেন্ডার কাজে নিয়োজিত বাংলাদেশী কমিউনিটির পরিচিত মুখ আব্দুল করিম। তিনি জানান, শীতের সময়ে ভেন্ডারদের ভীষন কষ্টের মুখোমুখী হতে হয়। প্রচন্ড ঠান্ডা আর তুষারপাতে ফুটপাতে দাড়িয়ে ব্যবসা করা অসম্ভব হয়ে পড়ে। তাই অনেকে এই সময়ে সাময়িকভাবে অন্য পেশায় চলে যান। আর যাদের সামর্থ আছে তারা শীতকালটা পরিবার পরিজন নিয়ে সময় কাটাতে চলে যান দেশে। অপরদিকে যারা দেশে যেতে পারেন না বা আর কোন আয়-রোজগারের পথ থাকে না তাদের অনেককেই কষ্টের মধ্যে চলতে হয়।

Tag :

সোশ্যাল মিডিয়ায় খবরটি শেয়ার করুন

আপনার মন্তব্য লিখুন

About Author Information

শীতের আগমনে জীবন যাত্রায় পরিবর্তন : নানা রূপে প্রকৃতি

প্রকাশের সময় : ১২:০৫:৩৬ পূর্বাহ্ন, মঙ্গলবার, ১৮ নভেম্বর ২০১৪

যুক্তরাষ্ট্রের ঋতু পরিক্রমায় এখন শীতকাল। জমতে শুরু করেছে শীত। ফলে পরিবর্তন আসছে জীবন যাত্রায়। পরিবর্তন আসছে প্রকৃতিতেও। বৃক্ষাদির আবরণ ঝড়ে পড়ছে। সবুজ গাছগাছালী পাতা রাঙ্গিয়েছে নানা রঙ্গে। এদিকে প্রতিবছরের মতো এবছরও শীত মৌসুমে বিপুল সংখ্যক প্রবাসী বাংলাদেশী কন্সট্রাকশন ব্যবসায়ীরা দেশমুখী হচ্ছেন। কেননা, এই সময়ে শীতের তীব্রতার কারণে কন্সট্রাকশন কাজ করা সম্ভব হয় না। তবে বাসা-বাড়ী, অফিস-আদালতের ভিতরের কন্সট্রাকশন কাজ চলে। এই কাজের পরিমান শতকরা ২০ ভাগ। মূলত: ডিসেম্বর থেকে মার্চ মাসের মাঝামাঝি পর্যন্ত কন্সট্রাকশন ব্যবসায় অলিখিত ভ্যাকেশন থাকে। অপরদিকে ব্যবসা-বাণিজ্য গুটিয়ে নিতে শুরু করেছেন ফুটপাতের ভেন্ডারগণ। ভাবছেন শীত মৌসুমে বিকল্প ব্যবসা বা চাকুরীর। যেসকল বাংলাদেশী-আমেরিকানদের মূল পেশা কন্সট্রাকশন ব্যবসা তারা এই শীত মৌসুতেই দেশ ভ্রমণের সুযোগ নিয়ে থাকেন।
শীতের আগমে ফ্লু জ্বরের শিকার হচ্ছেন অনেকে। রোগবালাই থেকে মুক্ত থাকতে চলছে ফ্লু শট কর্মসূচী। পাশাপাশি চলছে শীত মোকাবেলায় প্রস্তুতি। নতুন করে কেনাকাটা শুরু হয়েছে শীত বস্ত্রের। ব্যবসা প্রতিষ্ঠানগুলোতেও শোভা পাচ্ছে শীতের পোশাক-পরিচ্ছদ। তবে এসব সামগ্রীর মূল্য গত বছরের তুলনায় খানিকটা বেশী বলে অনেকেই জানিয়েছেন। এদিকে শীতের আগমনে কমে যাচ্ছে কমিউনিটির অনুষ্ঠানাদি। হ্রাস পাচ্ছে হোটেল-রেস্তোরার চায়ের আড্ডা। কমে যাচ্ছে জ্যামাইকা, ব্রুকলীন, ব্রঙ্কস এলাকায় বসবাসকারী তরুণ বাংলাদেশীদের সন্ধ্যার পর ফুটপাত দখল করে আড্ডাও।
অনুসন্ধানে জানা গেছে, নিউইয়র্কের ব্রুকলীন, কুইন্স ও ব্রঙ্কস বরোতে বসবাসকারী ২০/২৫ হাজার বাংলাদেশী রয়েছেন যারা কন্সট্রাকশন ব্যবসার সাথে জড়িত। ব্যবসাটি স্বাধীন, রোজ-রোজগারও ভালো। আর জীবন ধারণের জন্য অত্যন্ত প্রয়োজনীয় বিধায় কন্সট্রাকশন ব্যবসায় অনেকেরই পছন্দ। তাছাড়া এই ব্যবসার সাথে জড়িতদের কর্মকান্ড মূলধারায় প্রশংসিত হওয়ায় নতুন নতুন অনেকেই কন্সট্রাকশন ব্যবসায় জড়িয়ে পড়ছেন।
IMG_7880এদিকে শীতের আগমনে প্রকৃতিতে আমুন পরিবর্তন আসছে। পাল্টে যাচ্ছে পুরো উত্তর আমেরিকার প্রকৃতির দৃশ্য। ঝড়ে পড়ছে গাছের পাতা। ফলে আব্রুহীন হয়ে পড়ছে সুদৃশ্য গাছপালা। অনেক গাছের পাতা সবুজ রং ছেড়ে হলুদ-লাল বর্ণ ধারণ করেছে। সব মিলিয়ে অন্য রকম রূপ ধারণ করেছে প্রকৃতি। পথের পর পথ জুড়ে এই ব্যতিক্রমী মনোরম দৃশ্য অনেকেরই মন কেড়ে নিচ্ছে।
বিশিষ্ট কন্সট্রাকশন ব্যবসায়ী সামসুদ্দীন আজাদ বলেন, নিউইয়র্কে বসবাসরত প্রবাসী বাঙালীদের মধ্যে অন্তত ২০ হাজার লোক এই ব্যবসার সাথে জড়িত। এরমধ্যে ৬০ ভাগ ব্যবসায়ীই হচ্ছেন ব্রুকলীনের চার্চ-ম্যাগডোনাল্ড এভিনিউ এলাকায় বসবাসকারী। তিনি বলেন, শীত মওসুমের কারণে ৭০ ভাগ কন্সট্রাকশন ব্যবসার কাজ কমে যায়। তবে বাসা-বাড়ী, ভবনগুলোর অভ্যন্তরীণ কাজ থাকে ৩০ ভাগের মতো। তাছাড়া শীতের সময়ে কাজ করাও কষ্টসাধ্য হয়ে উঠে। তিনি বলেন, এই সময়ে অনেকেই ‘ভ্যাকেশনে’ বাংলাদেশে বেড়াতে যান।
দীর্ঘ দিন ধরে কন্সট্রাকশন ব্যবসায় নিয়োজিত ব্রুকলীনের মোহাম্মদ হেলালউদ্দিন বলেন, স্বভাবত কারণেই গ্রীষ্মকালীন ব্যবসা হচ্ছে কন্সট্রাকশন ব্যবসা। সেই মনমানসিকতা নিয়েই আমরা বছরের পর বছর ধরে এই ব্যবসা করে আসছি। মোটামুটি পুঁজি, দায়িত্ব পালনে নিষ্ঠা আর মান সম্মত কাজ করতে পারলে এই ব্যবসায় লাভবান হওয়া যায়। তাছাড়া আমেরিকান মূলধারায় বাংলাদেশীদের কর্মকান্ড, সততা, নিষ্ঠা অনেকেরই মন কেড়ে নেয়ায় এই ব্যবসায় বিশ্বস্থতাও বেড়েছে। আমাদের অনেকে বাংলাদেশী ব্যবসায়ী আছেন যারা সিটি প্রশাসনের অনেক কাজ বিশেষ করে স্কুল, রাস্তা-ঘাট, ভবন নির্মাণ কাজও করছেন। প্রতিষ্ঠা পেয়েছেন মূলধারার ব্যবসায়ী হিসেবে।
হেলালউদ্দিন বলেন, শীত মৌসুমে কন্সট্রাকশন কাজের পরিমান কমে যাওয়ায় অনেকেই ছুটি কাটাতে দেশে যাচ্ছেন। আর যারা দেশে না যান তারা ইন্টারিয়র (অভ্যন্তরীন) কাজ করে থাকেন। তবে এই কাজের পরিমান বেশী নয়। মূলত: গ্রীষ্মকালীন সময়েই কন্সট্রাকশন কাজ-কর্ম হয়ে থাকে এবং তখন খুব ব্যস্ত সময় কাটাতে হয়। আবার অনেকে এই সময়ে অন্য কাজও করে থাকেন। তার ধারনায় নিউইয়র্কে ১৫/২০ হাজার বাংলাদেশী-আমেরিকান রয়েছেন যারা কন্সট্রাকশন ব্যবসায় জড়িত এবং তারা সফলতার সাথেই ব্যবসা করছেন।
দীর্ঘ এক যুগেরও বেশী সময় ধরে ভেন্ডার কাজে নিয়োজিত বাংলাদেশী কমিউনিটির পরিচিত মুখ আব্দুল করিম। তিনি জানান, শীতের সময়ে ভেন্ডারদের ভীষন কষ্টের মুখোমুখী হতে হয়। প্রচন্ড ঠান্ডা আর তুষারপাতে ফুটপাতে দাড়িয়ে ব্যবসা করা অসম্ভব হয়ে পড়ে। তাই অনেকে এই সময়ে সাময়িকভাবে অন্য পেশায় চলে যান। আর যাদের সামর্থ আছে তারা শীতকালটা পরিবার পরিজন নিয়ে সময় কাটাতে চলে যান দেশে। অপরদিকে যারা দেশে যেতে পারেন না বা আর কোন আয়-রোজগারের পথ থাকে না তাদের অনেককেই কষ্টের মধ্যে চলতে হয়।